পুর্বকথাঃ
তিস্তা বাংলাদেশের একটি বড় নদী, কিন্তু যাদের জানা নেই, তাঁরা জেনে আশ্চর্য হবেন যে ১৭৮৭ সালের আগে বাংলাদেশে তিস্তা নামে কোন বড় নদী ছিল না। তিস্তা তখন সিকিম থেকে হিমালয়ের বুক চিরে নেমে এসে পৌরাণিক কাহিনীতে উল্লেখিত ত্রিস্রোতা নামক তিনটি বড় ধারায় বিভক্ত হয়ে উত্তর ও মধ্য বাংলা এবং বরেন্দ্রের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে করে তুলত সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা। সেই বড় তিনটি প্রবাহ ছিল করতোয়া, আত্রাই এবং পুনর্ভবা। করতোয়ার একটি শাখা নদী লালমনিরহাট কুড়িগ্রামের মধ্য দিয়ে ব্রহ্মপুত্রে গিয়ে মিশত, সে ছোট্ট নদীটির নাম তিস্তা। ১৭৮৭ সালের ভুমিকম্প বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতিতে একটি বড়সড় পরিবর্তন নিয়ে আসলো। ব্রহ্মপুত্র তার গতিপথ পরিবর্তন করে ময়মনসিং থেকে গোয়ালন্দের দিকে সরে এলো, আর ত্রিস্রোতা তার অবিভক্ত সকল জলরাশি নিয়ে তিস্তা নামের সেই ছোট দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিলমারি বন্দরের কাছে ব্রম্মপুত্রে গিয়ে মিশতে থাকলো। ফলে বাংলাদেশে ত্রিস্রোতার পানির প্রধান প্রবাহ হয়ে উঠলো তিস্তা এবং করতোয়া, আত্রাই এবং পুনর্ভবা ধীরে ধীরে ছোট ছোট নদীতে পরিণত হয়ে গেল। ফলে ত্রিস্রোতার জলরাশি থেকে বঞ্চিত হয়ে উত্তরবঙ্গ এবং বরেন্দ্রের বিস্তীর্ণ অঞ্চল স্বাভাবিক জলপ্লাবন থেকে বঞ্চিত হয়ে খরাপ্রবন এলাকায় পরিণত হতে থাকে। গত শতকের চল্লিশের দশকে বৃটিশ সরকার এই মর্মে সিদ্ধান্তে আসে যে তিস্তার জলে ব্রহ্মপুত্রের তেমন কোন প্রয়োজন নেই, বরং তিস্তার পানিপ্রবাহকে যদি উত্তরবঙ্গ ও বরেন্দ্রের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা য়ায়, তাহলে এ অঞ্চলটিও পূর্ব বঙ্গের মত সুজলা সুফলা একটি অঞ্চলে পরিণত হতে পারে। সময়ের অভাবে বৃটিশ আমলে ভাবনাটি আর আলোর মুখ দেখে নি, তবে ভারত বিভাগের পর দু দেশেই এ নিয়ে নতুন করে চিন্তা ভাবনা শুরু হয়।
স্বাভাবিক প্রবাহে প্রমত্তা তিস্তা
তিস্তা প্রকল্প বাংলাদেশঃ
পাকিস্তান আমলে গত শতাব্দীতে কিছু জরিপ এবং তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষনের কাজ হয়, কিন্তু কাজের কাজ খুব একটা এগোয় নি। স্বাধীনতার পর তিস্তা বহুমুখী প্রকল্পের আওতায় সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে ১৯৭৯ সালে এরশাদ চাচার আমলে(!) লালমনিরহাটের দোয়ানী-ডালিয়াতে একটি ব্যারেজ নির্মানের প্রকল্প গ্রহন করা হয় এবং অনেকগুলি ক্যানেল খননের কাজ শুরু করা হয়। ১৯৯৮ সালে প্রকল্পটির প্রথম ফেজের কাজ শেষ হয়, ব্যায় হয় সর্বমোট ৯৮৫ কোটি টাকা। এ পর্যায়ে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার দশটি উপজেলার মোট ১১১,৪০৬ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসে। মজার ব্যাপার হলো তিস্তা প্রকল্প কিন্তু একটি বর্ষাকালীন সেচ প্রকল্প, অর্থাৎ তিস্তার জলরাশি বর্ষা মৌসুমে ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়ে তিস্তা প্রজেক্টের নির্মাণ শুরু করা হয়। অনেকেই হয়ত এটা ভেবে খানিকটা অবাক হতে পারেন যে, খরা মৌসুমের জন্য না করে বর্ষাকালের জন্য সেচ ব্যবস্থা কেন গড়ে তোলা হল কেন। তিস্তা প্রকল্প থেকে খরা মৌসুমে কোন সেচ সুবিধা আদৌ কখনো পাওয়া যাবে কিনা তা বলা মুস্কিল, কারন সারা বছর জুড়ে তিস্তার পানিপ্রবাহ সুষম নয়, বর্ষায় ৫০০০০ থেকে ৭০০০০ কিংবা লক্ষাধিক কিউসেক পানি প্রবাহিত হলেও খরা মৌসুমে তা কমে এসে মাত্র ৪-৫ হাজার কিউসেকে এসে দাঁড়ায়।। যদি খরা মৌসুমে প্রবাহিত সমুদয় পানিও বাংলাদেশকে দিয়ে দেওয়া হয়, তবুও বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পের গ্রীষ্মকালীন পানির চাহিদা এতে মিটবে না। তবে তিস্তা প্রজেক্টের বর্ষাকালীন সেচ প্রকল্প থেকে এ যাবতকালের প্রাপ্তি এক কথায় অসাধারন। প্রকল্পের আওতাধীন এলাকায় শুধুমাত্র ফসলের উৎপাদনই বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। এছাড়া গ্রীষ্মে তাপমাত্রার হ্রাস এবং শীতে তাপমাত্রার বৃদ্ধি, ভূ-গর্ভস্থ পানির পরিমান বৃদ্ধি, বিপুল পরিমান কর্মসংস্থান, এ জাতীয় সুফলের পরিমানও অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক। প্রকল্পের দ্বিতীয় ফেজ সম্পূর্ন হলে সেচের আওতায় যুক্ত হবে মোট প্রায় সারে পাঁচ লাখ হেক্টর চাষযোগ্য জমি, শুকনো মৌশুমে তিস্তায় পানি যাই পাওয়া যাক না কেন, বর্ষাকালীন সেচ সুবিধাটুকু ঠিকমত কাজে লাগালে এ প্রকল্প থেকে বিপুলভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। উত্তরবঙ্গের ভূ-প্রকৃতি একটু আলাদা রকমের, মাটিতে বালির পরিমান বেশী, তুলনামূলকভাবে শুস্কতা বেশী। অধিকাংশ চাষযোগ্য ভুমি ছিল একফসলী, সাধারনতঃ বর্ষা মৌসুম টার্গেট করে রোপা আমন বপন করা হতো। কোন কোন ক্ষেত্রে আমন ঘরে ওঠার পর কোন রবি শস্য। আমনের উৎপাদন নির্ভর করতো বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টির উপরে। বৃষ্টির আগমন প্রায়ই দিন তারিখ মেনে হয় না, যখন কোন এলাকায় বৃষ্টির আগমন বিলম্বে ঘটতো, সে এলাকার ফসল উৎপাদন আশানুরুপ হতো না, বেশী বিলম্ব হলে রীতিমত ফসলহানি হয়ে দুর্ভিক্ষাবস্থার সৃষ্টি হতো। তিস্তা প্রজেক্টের বর্ষাকালীন পানিপ্রবাহ বৃষ্টি তথা প্রকৃতিনির্ভরতার অবসান ঘটিয়েছে। শুধু তাই নয়, পানির নিশ্চয়তা থাকায়(বর্ষায়) সনাতন রোপা আমনের বদলে আধুনিক উচ্চ ফলনশীল ধান উৎপাদনের প্রচলন ঘটেছে, ফলে ফসলের সামগ্রীক উৎপাদন বহুগুণ বেড়েছে। অবশ্য সেচই তিস্তা প্রকল্পের একমাত্র সুবিধা নয়, তিস্তা প্রকল্পে বন্যা নিয়ন্ত্রনের জন্য বাঁধও নির্মিত হয়েছে। বন্যার কারনেও আগে বর্ষাকালে ব্যাপক ফসলহানি ঘটতো।
তিস্তা প্রকল্প পশ্চিম বাংলাঃ
অপরপক্ষে ভারত সরকার তিস্তা প্রকল্প নামে এক মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ৯০ কিলোমিটার উজানে জলপাইগুড়ির গজলডোবায় একটি ব্যারেজ নির্মানে হাত দেয় ১৯৭৬ সালে, ১৯৯৬ সালে ব্যারেজটির নির্মানকাজ সমাপ্ত হয়। মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী তিস্তার জল ক্যানেলের মাধ্যমে মহানন্দা এবং ডাউক নদীর সাথে সমন্বয় করে বলতে গেলে পশ্চিম বাংলার উত্তরের কয়েকটি জেলা বরাবর নতুন একটি নদী সৃষ্টি করা হবে। সেই কৃত্রিম নদীতে ছোট ছোট কয়েকটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ছাড়াও অসংখ্য সেচখালের মাধ্যমে প্রায় সারে নয় লাখ হেক্টর জমিকে সেচের আওতায় নিয়ে আসা হবে। মজার ব্যাপার হল পশ্চিম বাংলার তিস্তা মহা প্রকল্পটিও মূলত একটি বর্ষাকালীন সেচ প্রকল্প। এই সেচ প্রকল্প থেকেও বর্ষা তথা খরিপ মৌসুমে ব্যাপকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব,তবে খরা মৌসুমে তিস্তায় প্রবাহিত সমুদয় জলরাশিও যদি ভারতীয় তিস্তা মহা প্রকল্পের কাল দিয়ে প্রবাহিত করা হয়, তবুও তাদের মোট চাহিদার সামান্যই তাতে পূরণ হবে। এত অল্প পানি দিয়ে খরা মৌসুমে তাদের সেই বিশাল কৃত্রিম নদীটিতে পর্যাপ্ত পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, তার উপর সিকিম রাজ্য সরকার তাদের এলাকায় তিস্তা নদীতে বাঁধ দিয়ে বড় বড় কয়েকটি জলবিদ্যুৎ নির্মান করেছে/করছে, সে কারনেও পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিতরুপে কিছুটা কমবে। তার উপর এ পর্যন্ত এই বিশাল ও ব্যায়বহুল প্রকল্পের কাজও সমাপ্ত হয়েছে অতি সামান্যই। যদি এই প্রকল্পের বর্ষাকালীন সেচ সুবিধাটুকুও পুরোপুরি কাজে লাগাতে হয়, তবুও যেতে হবে আরও বহু দূর।
শুকনো মৌসুমে গজলডোবা ব্যারেজের ভাটিতে শীর্ন তিস্তা
তিস্তা নিয়ে রাজনীতি- ভারতেঃ প্রাক মমতা যুগে ভারতীয় তিস্তা মহা প্রকল্প ছিল একটি খরিপ বা বর্ষা মৌসুম ভিত্তিক কৃষি সেচ প্রকল্প। মমতা একে মোটামুটি খরা তথা শুষ্ক মৌসুম ভিত্তিক সেচ প্রকল্পরুপে তো বটেই, তার সাথে খাবার পানি, বিদ্যুৎ উৎপাদন মিলে এমন এক মেগা প্রকল্প রুপে জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, পশ্চিম দিনাজপুর, মালদা ও মুর্শিদাবাদের মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন, বাস্তবে যে প্রকল্পে পানির জোগান দেয়া অসম্ভব। এ সব অঞ্চলের মানুষ ভাবছে গজলডোবার ব্যারেজের কল্যাণে শুকনো মৌসুমেও তাদের ফসলের ক্ষেতে সেচের পানির অভাব হবে না। এটা যে অসম্ভব, তা মমতা নিশ্চয় জানেন, কিন্তু তিনি নিজে সে প্রকল্প থেকে সরে আসতে পারছেন না। কারন এই তিস্তা মহা প্রকল্পের মুলো দেখিয়েই তিনি এই সমস্ত এলাকায় বিপুল বিজয় লাভ করে প্রথমবারের মত পশ্চিম বাংলার ক্ষমতায় আসীন হয়েছিলেন। এ জেলাগুলোর মানুষ এখনও মমতার দেখানো দিবাস্বপ্নেই বিভোর হয়ে আছে বলা যায়। সুতরাং বাংলাদেশের সাথে পানি ভাগাভাগি চুক্তিতে সম্মতি দিয়ে মমতা সেই স্বপ্ন ভাঙ্গার মত কোন কাজ করে নিজের পায়ে কুড়াল মারতে পারেন না। সম্ভবত মমতা চাইছেন বাংলাদেশের সাথে পানি বন্টন চুক্তিটি বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকার তাদের ক্ষমতা বলে এককভাবেই করুক, তাহলে উত্তরের জেলাগুলো তথা পশ্চিম বাংলায় অতি দ্রুত বর্ধনশীল বিজেপি'র প্রভাব তিনি আগামী নির্বাচনে ইনিয়ে বিনিয়ে নরমে গরমে ঠেকিয়ে দিতে পারবেন। বিজেপি'ও ঠিক একই কারনে দায়(?)টি একক ভাবে নিজের ঘাড়ে না নিয়ে মমতার দিকে ঠেলে দেয়ার কৌশল অবলম্বন করছে। আবার এই বিশাল প্রকল্পে কেন্দ্র থেকে অর্থ বরাদ্দেও রয়েছে নানা রাজনৈতিক প্যাঁচ। তৃণমূল শাসিত পশ্চিমবঙ্গের এই ব্যায়বহুল প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ দিয়ে বিজেপি'র কি লাভ, তার চেয়ে দেখা যাক বিজেপি নিজেই ক্ষমতায় এসে সেটা বাস্তবায়িত করা যায় কি না।
তিস্তাকে খুন করে পশ্চিমবঙ্গে এই কৃত্রিম নদীটি সৃষ্টির উদ্যোগ চলছে।
তিস্তা নিয়ে রাজনীতি- বাংলাদেশেঃ বর্ষায় যে নদীতে লক্ষাধিক কিউসেক পানি প্রবাহিত হয়, শুকনো মৌসুমে যদি সেখানে ৪-৫ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হয়, তাহলে আধুনিক তথ্য প্রবাহের দৃশ্যমানতার যুগে সেটা একটা বিপর্যয়কর ব্যাপার বলে মনে হতে পারে। তার উপর গজলডোবায় ব্যারাজ নির্মাণ করে যদি সমুদয় পানি ভিন্ন খাতে সরিয়ে নেয়া হয়, তাহলে রাজনীতির আর কোন প্রয়োজন হয় না। দৃশ্যত হাসিনা সরকার শুকনো মৌসুমে তিস্তার দু-তিন হাজার কিউসেক পানির জন্য যার পর নাই মরিয়া হয়ে উঠেছে, যার জেরে হাসিনা সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী তাঁর পদ হারিয়েছেন বলে কথিত, কিন্তু মমতা এ ক্ষেত্রে চক্ষুলজ্জা টুকুও বিসর্জন দিয়ে বসায় এ ক্ষেত্রে কোন অগ্রগতিই হচ্ছে না। যতদূর মনে হচ্ছে বিজেপি সরকার আগামী লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত তিস্তা চুক্তিটি ঠেকিয়ে রাখবে, তারপর নির্বাচনে জিতে চুক্তিটি করবে। এমনিতে শুকনা মৌসুমে দু-আড়াই হাজার কিউসেক পানি পেলে বাংলাদেশ যে খুব লাভবান হবে তা নয়, আবার এই পরিমান পানি না পেলে যে বাংলাদেশের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে তাও নয়। তবে ক্ষতি একটা নিশ্চিতভাবেই হবে, তা হল বাংলাদেশে তিস্তা একটি অদ্ভুত ধরনের নদী হয়ে উঠবে, সেটা হবে একটি বর্ষাকালীন ডাম্পিং ড্রেন। তা ছাড়া তিস্তা নিয়ে আমাদের এখানে এত কথা হয়েছে যে, সবার মনেই এমন একটা ধারনার সৃষ্টি হয়েছে যেন তিস্তা চুক্তিটির উপরেই নির্ভর করছে বাংলাদেশের জীবন মরন। এই চুক্তিটি হয়ে গেলেই মোটামুটি সব সমস্যার একটা সমাধান হয়ে যায়। সুতরাং আওয়ামী বিরোধী গোষ্ঠীর জন্য আরও কিছুদিন বেশ মুখরোচক একটা ইস্যু বোধ হয় রয়েই গেল।
সবশেষ অবস্থাঃ মমতা একটা বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন- তিস্তায় তো পানি নাই, কিভাবে দেব, সুতরাং উত্তরবঙ্গের আরও যে কয়েকটি নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করছে,যেমন- তোর্সা, রায়ডাক, ধরলা, দুধকুমার, এই নদীগুলির পানিপ্রবাহ নিয়ে তথ্য আদান প্রদান করা হোক, দরকার পড়লে সেখান থেকে বাংলাদেশ পানি নিক। তিস্তায় পানি যদি নাই থাকে, তাহলে গজলডোবায় এত খরচ করে একটা ব্যারেজ নির্মাণ করেছেন কেন? সেখান থেকে পানি প্রত্যাহার করে বিভিন্ন খালে তা পাঠাচ্ছেন কি ভাবে, পানি যদি না ই থাকে? যদি কারো দু কান কাটা থাকে, এবং সেই তিনি যদি জেগে জেগেই ঘুমাতে থাকেন, তাহলে কার সাধ্য যে তাঁর চেতনার উন্মেষ ঘটান।
মন্তব্য
তিস্তায় যদি শুকনো মৌসুমে একশো কিউসেক পানিও প্রবাহিত হয়, সেটার ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশকে দিতে হবে। তিস্তার পানি সরিয়ে নেওয়ার অধিকার পশ্চিমবঙ্গ সরকার বা ভারত সরকারের নেই।
তিস্তা অববাহিকায় ধানের পরিবর্তে গম চাষ করলে কি পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে? যতোদূর জানি গম চাষে ধানের তুলনায় কম পানি লাগে। বর্ষাকালে তিস্তার উদ্বৃত্ত পানি বড় এলাকা জুড়ে ভূগর্ভস্থ জলবাহে (অ্যাকুইফারে) সঞ্চয় করে রাখা গেলে হয়তো সীমিত পাম্পিং খরচে শুকনো মৌসুমে চাষের কাজে লাগানো যাবে।
নিশ্চয়ই, যুক্তিসম্মত ও ন্যায্য অভিমত এটাই। কিন্তু রাজনৈতিক কুটকৌশলের অংশ হিসেবে মমতা এই ন্যায্যতার ধার ধারছেন না। রাজ্য সরকারের আপত্তি সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার এককভাবে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য রাজ্যসভায় একটি বিল এনে সেটি পাস করিয়ে নিতে পারে। এতদিন সমস্যা ছিল, মনমোহনের সময় থেকে কখনই রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের কোন বিল করিয়ে নেয়ার মত সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল না। ফলে মমতার সম্মতি না থাকলে রাজ্যসভায় সেটি পাস করানো অসম্ভব ছিল। কিন্তু উত্তর প্রদেশের সাম্প্রতিক ভূমিধ্বস বিজয়ের ফলে বিজেপি রাজ্যসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। এখন ইচ্ছা করলে মোদী সরকার এ সংক্রান্ত কোন বিল রাজ্যসভায় পাশ করিয়ে নিতে পারে। বাতাসে খবর ভাসছে, মোদী সরকারের তরফ থেকে বাংলাদেশকে সেরকম আশ্বাসই দেয়া হয়েছে।
শুধু তিস্তা অববাহিকায়ই নয়, এটা যে কোন স্থানের জন্যই প্রযোজ্য। ইরি ও বোরো ধানের আবাদে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়, সংশ্লিট মহলে ইতিমধ্যেই আমাদের ফসলের আবাদ বহুমুখীকরণের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছে বলে শুনেছি।
এই লাভ ক্ষতির হিসাবটা কীভাবে হয় আসলে? তিস্তার গতিপথ জুড়ে ইকোসিস্টেম ছিল একটা। সেটা নষ্ট হবার দাম কি ধরা হয়েছে এখানে?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
না, ইকোসিস্টেম নষ্ট হবার হিসাব এখানে করা হয় নি। ভাইরে, ইকোসিস্টেম তো অনেক উচ্চমার্গীয় ব্যাপার স্যাপার। যে হিসাবটা একেবারে জলবৎ তরলং, সেটাই তো বুঝতে চাইছেন না আমাদের মমতাময়ী দিদি।
তিস্তার পানির উৎস মূল ধারাটিকে ভারতের অভ্যন্তরে তিনবার খুন করার পর বাংলাদেশে ভাগে জলপানি খাবার মতো পানি যে এখনো অবশিষ্ট আছে সেটাই আশ্চর্যের। গজলডোবায় যে পরিমান পানি প্রত্যাহার করা হয়েছে তার চেয়ে অনেকগুন বেশী করা হয়েছে তার মাত্র বিশ কিলোমিটার উত্তরের দুটি বাঁধ দিয়ে। এই দুটো বাঁধের অবস্থান পশ্চিমবঙ্গের সীমানাতেই, কালিম্পং এর খুব কাছে। আমি পানি বিশেষজ্ঞ নই, কিন্তু স্যাটেলাইট ছবি থেকেই বোঝা সম্ভব তিস্তার মূল ধারা কিভাবে ক্রমশ সরু হয়ে ভাটির দিকে নেমেছে। সেই সরু ধারার অবশিষ্ট পানিকে গজলডোবার মাধ্যমে একটা ফিডার ক্যানেল দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলকে সেচের আওতায় আনা হয়েছে অনেককাল আগেই।
নীচের ছবিতে দেখুন, ড্যাম-১, ড্যাম-২ চিহ্নিত বাঁধ দুটো গজলডোবার মাত্র বিশ কিলোমিটার উত্তরে।
ওই বাঁধ দুটির আরেকটু পরিষ্কার ছবি দেখি এখানে।
প্রথম ছবিতে যেটা ড্যাম-১ বলেছি এটা সেই বাঁধ।
প্রথম ছবিতে যেটা ড্যাম-২ বলেছি এটা সেই বাঁধ।
এখানে এসে গজলডোবায় যে অবশিষ্ট পানিটুকু আসে তার বড় একটা অংশ চলে যাচ্ছে ফিডার ক্যানেল দিয়ে
ওই দুটি বাধে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে যেটুকু জল গজলডোবায় আসে সেটাও ফিডার ক্যানেলে চলে যাচ্ছে ভারতের অন্য অঞ্চলে। মোটামুটি তিন ভাগ খাওয়ার পর আমাদের জন্য যেটুকু অবশিষ্ট আছে সেটা নিয়ে কতটুকু দরাদরি করার অবকাশ আছে জানি না। এটা আজকের ইস্যু না, আরো দুই দশক আগের ইস্যু। মাঝে মাঝে চাঙ্গা হয়, দুদিন বাদে চাপা পড়ে অন্য ইস্যুর তলে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আপনার ছবির লিঙ্কগুলো বোধ হয় সঠিকভাবে স্থাপন করা হয় নি। ইমগুর থেকে ডাইরেক্ট লিঙ্কটি কপি করে সচলে ইমেজ যুক্ত করার বাটনে ক্লিক করার পর পেস্ট করে দিলে কাজ হবে বলে মনে হয়।
না। সরাসরি সংযোগেই ঝামেলা আছে। ছবিটাকে জুম করে ডান মাউস বাটনে ক্লিক করলে ইমেজ অ্যাড্রেস কপি করার অপশন পাবেন, সেই ঠিকানাটা কপি করে এনে ব্যবহার করতে হবে।
যদি ঠিকানার শেষে .jpg, .png, .gif ইত্যাদি না থাকে, তাহলে বুঝবেন ঝামেলা হবে।
এখন মনে হয় ঠিক হয়েছে। আমার ব্রাউজার থেকে দেখা যাচ্ছে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আপনার দেয়া ড্যামগুলো সম্ভবত তিস্তা নদীতে নির্মিত হাইড্রো-ইলেকট্রিক পাওয়ার প্লান্টের জন্য নির্মিত ড্যাম, ব্যারেজ এবং ড্যামের ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে বোধ হয়। সাধারণত এ ধরনের ড্যাম থেকে কোন পানি ডাইভার্ট করা হয় না, পাওয়ার প্লান্টের টারবাইন ঘোরানোর পর পানি সেই নদী বেয়েই ভাটির দিকে চলে যায়। ছবি থেকেও মনে হচ্ছে না যে সেখান থেকে পানি ডাইভার্ট করা হচ্ছে, যেখানে গজলডোবা ব্য়ারেজের ক্ষেত্রে পানি ডাইভার্টের ব্যাপারটা একেবারে স্পষ্ট। সিকিম থেকে শিলিগুড়ির কাছাকাছি অবধি এরকম ড্যাম বেশ কয়েকটি আছে, এ সবের কারনে তিস্তায় পানির তেমন একটা ঘাটতি হওয়ার সুযোগ নেই। যদিও মমতা এই ড্যামগুলির দোহাই দিয়ে বলছেন উজানেই তো জলবিদ্যুতের জন্য বাঁধ দিয়ে সব জল শেষ করে ফেলা হয়েছে।
আমাদের দেশে কাপ্তাইয়ে যেটা আছে, সেটা হল ড্যাম। এর কারনে ভাটিতে কর্ণফুলী নদীতে পানির কোন ঘাটতি দেখা দেয় না। আবার আমাদের দেশে ডালিয়ায় যেটা আছে, সেটা হল ব্যারেজ। এখান থেকে পানি ডাইভার্ট করে তিস্তা প্রকল্পের খালগুলিতে নিয়ে যাওয়া হয়, ফলে ডালিয়ার ভাটিতে শুকনো মৌসুমের তিস্তা পুরোপুরি বালুচর।
জলবিদ্যুতের বাঁধ দিলে সাধারণত যেটা হয়, নদীর প্রবাহ ঐ প্রকল্পের টারবাইনের বহিপ্রবাহসমষ্টিতে পরিণত হয় (টারবাইন পাশ কাটিয়ে বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার আরো কিছু উপায় আছে, যেমন স্পিলওয়ে, ফিশ পাস, সেগুলো সক্রিয় থাকলে আরো কিছু যোগ হয়)। পানি তখন অন্যত্র সরানো হয় না ঠিকই, কিন্তু বাঁধের ওপারে আটকা থাকে। এটাকেও এক ধরনের ডাইভারশন ধরে নেওয়া যায়। তিস্তার আদিপ্রবাহের সাথে বাঁধের ডিসচার্জ সারা বছরের জন্যে তুলনা করে দেখলে বোঝা যাবে কতোটুকু পানি এভাবে "সরানো" হলো।
বাঁধের উজানে কতটুকু পানি আটকা থাকবে তা নির্ভর করে সে প্রজেক্টের ক্যাচমেন্ট এড়িয়া কত বড়। আমাদের কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় নদীর প্রবাহ সমতলের কাছাকাছি বিধায় পানির প্রেসার বৃদ্ধির জন্য ক্যাচমেন্ট এড়িয়া বিশাল। তুলনায় তিস্তার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো নদীর পার্বত্য প্রবাহের মধ্যে বলে সেখানে এমনিতেই পানির প্রেসার অনেক বেশী, তাই বড় ক্যাচমেন্ট এড়িয়ার প্রয়োজন হয়ত সেখানে নেই। গুগুল আর্থে বিশাল ক্যাচমেন্ট এড়িয়া দৃশ্যমান নয়। আর সে সংক্রান্ত তথ্য উপাত্তও খুব একটা পাওয়া যায় না, শোনা যায় মমতার নির্দেশে সংশ্লিষ্ট সবাই মুখে কুলূপ এঁটে বসে আছে। তবে আমার ব্যাক্তিগত ধারনা, গজলডোবার উজানে তিস্তার পানি খুব একটা প্রত্যাহার হয় না।
যেহেতু হাতে কোন পরিসংখ্যানগত তথ্য নেই, তাই পাখির চোখে দেখা দৃশ্যপটের ভিত্তিতে আনুমানিক আলোচনা করছি।
ব্যারেজের মতো জলবিদ্যুতের বাঁধে তত বেশী পানি প্রত্যাহার হয় না এটা ঠিক। আবার এটাও ঠিক যে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ উজানে বারবার বাধাপ্রাপ্ত হবার ফলে ভাটিতে জলপ্রবাহ কমে যেতে বাধ্য। অন্ততঃ একটা জিনিস এই ছবিগুলো থেকে অনুমান করা যায় যে ভাটির দিকে নদীটা স্বাভাবিক চেহারায় নাই। নদীর যে গতিপথ দেখা যাচ্ছে সেখানে বিশাল বালির চর পড়ে আছে সমস্ত নদীপথ জুড়ে। এত বিশাল এলাকা জুড়ে বালির চর বর্তমান থাকার অর্থ সেখানে একসময় একটা স্বাভাবিক নদী ছিল। ফারাক্কার ভাটিতে বাংলাদেশ অংশে পদ্মার যে রূপ, এখানেও তিস্তার চেহারা ওরকমই মনে হয়।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
একটা নদীতে বাঁধ দিয়ে জলাধার নির্মাণ করে জল ধরে রাখলে তার ব্যাপক ঋণাত্বক প্রভাব পরে প্রথমত, ভাটির জলপ্রবাহে ও ভাটির জলপ্রবাহের ওপর নির্ভরশীল জীবনচক্র ও পরিবেশে; দ্বিতীয়ত, উজানের জীবনচক্র ও পরিবেশে। আর ধরে রাখা জল যদি কোন প্রকার খাল বা অন্য কোন উপায়ে প্রত্যাহার করা হয় তাহলে উপরোক্ত দুটো ক্ষতির সাথে বাঁধের পরবর্তী অংশে নদীটি শুকিয়ে মারা যাবার ক্ষতিটিও যুক্ত হয়। এই তিনটি ক্ষতির জন্য কেবল বাঁধের ভাটি অঞ্চলের মানুষ ও পরিবেশ বিপদগ্রস্থ হয় না, সাথে সাথে উজানের মানুষ ও পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বাঁধের উজান যদি সমতলভূমি এবং জনবসতিপূর্ণ হয় তাহলে ক্ষতির সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পায়।
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এই যে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বা কৃষিকাজের জন্য সেচ বা অন্য কোন নদীর নাব্যতা রক্ষার জন্য বাঁধ দিয়ে লোকে যে লাভ করতে চায় তা করার সময় এই ক্ষতির হিসেবগুলো বিশেষ করে বলে মনে হয় না। যদি করতো তাহলে ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে সবার আগে আন্দোলন করতো মালদা-মুর্শিদাবাদের লোকজন। গত ৪২ বছরে এই দুই জেলায় ফারাক্কার প্রভাবে শুধু নদী ভাঙনের জন্য ক্ষতির বস্তুগত পরিমাণ প্রায় ৭ বিলিয়ন রূপী, এবং ভারত সরকার আজ পর্যন্ত এই বাবদে কোন ক্ষতিপূরণ দেয়নি। ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে প্রত্যাহৃত জল দিয়ে হুগলী অববাহিকায় ব্যাপক চাষবাস বা কলকাতা বন্দরের সচলত্ব বজায় রাখা্র কোনটা সম্ভব হয়েছে? বস্তুত গঙ্গার উপর ভীমগোড়া, নারোরা, বিদর্ভ/হৃষিকেশ'র মতো ব্যারাজগুলো বানিয়ে যে বিপুল পরিমাণ জল উজানে প্রত্যাহার করা হয়েছে সেটার মন্দ প্রভাব কিছুটা হ্রাস করার জন্য ফারাক্কার মতো বাঁধ দরকার হয়েছে। একই প্রেসক্রিপশনে এখন রাজবাড়ীর পাংশায় পদ্মা বাঁধ দেবার কথা বলা হচ্ছে।
ফারাক্কার জল উত্তরবঙ্গবাসীদের কপালে জোটেনি ফলে তিস্তার উপর গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে জল প্রত্যাহার করে উত্তরবঙ্গের সেচ প্রকল্পে জল সরবরাহ করা হচ্ছে। গজলডোবার কারণে জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারকে মালদা-মুর্শিদাবাদের মতো ভোগ করতে হবে। সীমান্তের অপর পাড়ে ডালিয়া-দোয়ানীতে তিস্তা বাঁধ দিয়ে আগেই জলাধার নির্মাণ করে রাখার ফলে জলপাইগুড়ি-কোচবিহারের ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কম হলেও ক্ষতি ঠেকানো যাবে না। গঙ্গাতে একের পর এক বাঁধ দিয়ে জল আটকানো ও প্রত্যাহারের ফলে গোটা গঙ্গা অববাহিকা যে নিরব ও বিপুল ক্ষতি গত অর্ধ শতাব্দী ধরে স্বীকার করে যাচ্ছে যত দিন যাবে তার পরিমাণ গুণোত্তর হারে বাড়তে থাকবে। একই পরিণতি অপেক্ষা করছে তিস্তা অববাহিকার জন্য, এবং ব্রহ্মপুত্রের জন্যও।
নদীর মতো বিশাল ও গভীর বিষয়টি যখন অশিক্ষিত, অবিমৃষ্যকারী, অদূরদর্শী, লোভী, মেরুদণ্ডহীন, বাকসর্বস্ব রাজনীতিবিদদের হাতে পড়ে তখন তার অববাহিকার মানুষদের কপাল পোড়ে, সাথে সাথে ঐ অঞ্চলের পরিবেশেরও বারোটা বাজে। ক্ষুদ্র স্বার্থ, চটজলদি লাভ ইত্যাদির লোভে গতকাল গঙ্গা পড়েছিল, আজ তিস্তা পড়েছে। পরিবেশতো আর র্যাডক্লিফের ছুরির হিসেব করে চলে না, তার বিপর্যয় ঘটলে পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই সে সীমান্ত পার হয়ে অপর পাড়ের পরিবেশেরও ভবলীলা সাঙ্গ করবে।
পানির চেয়েতো নদীতে রাজনীতিই বেশি মনে হচ্ছে।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
'প্রেমে জল হয়ে যাও গলে' কওয়া হইলেও রাজনীতিতে ক্ষমতার পেম যে জলকেও জমাট করে দেয় এগুলো তারই নজির।
*
দিল্লিতে যে কেন্দ্রিয় সরকার আর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আমলাদের বৈঠক হলো তার ফলাফলও কী সেই না ঘরকা না ঘাটকায় গিয়ে দাঁড়ালো?
*
১৭৮৭ সালে হওয়া ভূমিকম্প কী এককভাবে সেসময়ে নদ নদীর বিশেষ করে ত্রিস্রোতার গতিপথ বদলের কারণ ছিল? নাকি ১৮৪৫'র দিকে তিনদফা ভূমিকম্প, ১৮৪৬ সালে, ১৮৮৫'র বেঙ্গল আর্থকোয়েক, বা ১৮৮৭'র গ্রেট ইন্ডিয়া আর্থকোয়েক' এই সবগুলোর সমষ্টিগত ফলাফল ছিল এর পেছনে?
এরপর, সস্তা-রাজনীতি চর্চার ফলে ভুগছে বাংলাদেশ। দক্ষ কূটনৈতিক তৎপরতার বদলে আবেগময় জামদানি-ইলিশের খোশ আলাপে তুষ্ট থাকার সুযোগ নাই, ভারত উল্টো অন্যান্য আরও ৫টি নদীর হিস্যা চাইছে। এখন বাংলাদেশ তিস্তা থেকে অনেক দূরে।
নতুন মন্তব্য করুন