সর্তক বাণী: এটি একটি প্রচণ্ড রকমের এলোমেলো এবং বেশ বড় পোস্ট! অযথা পাঠকের সময় নষ্ট হইলে পোস্টদাতা কোনো ভাবেই দায়ী থাকবে না।
বাড়িতে পাঁজা পাঁজা বই ছিল। ছিল না এটা পড়ো না,ওটা পড়ো না’র শতেক বারণ। যে বাড়ির কর্তা-গিন্নি বইপাগল,তাঁদের ছানাপোনারা সেইরকম বই আসক্ত হবে এ আর বিচিত্র কি! নতুন নতুন রহস্যের দরজা হাট করে খুলে দেবার অপেক্ষায় বইয়ের আলমিরাগুলো মুখিয়ে আমাদের চোখের সামনে। আমরা ভাইবোনেরা যে যার পছন্দ মত বই নিয়ে তাতেই মুখ গুঁজে দিয়েছি।
ছোট্ট গোলরুটি'র মত গুটি গুটি পায়ে পড়ে যাই জসিমউদ্দিনের "বাঙ্গালির হাসির গল্প" রবীন্দ্রনাথের "খাপছাড়া" "সে",সুকুমার রায়ের "আবোল তাবোল" সুব্রত সরকারের "পাপুর বই" অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "কানকাটা রাজার দেশ"। পাশাপাশি "তিন গোয়েন্দা" সিরিজ পড়ে কখনো হাসছি,কখনো দমবন্ধ উত্তেজনায় আঙ্গুলের নখ কাটছি নিজেরই অজান্তে। টিনটিন তো মরুভূমিতে জলবিন্দুর মতই শুষে নেয়া হয় পাওয়া মাত্রই। পটলডাঙার টেনিদা নিয়ে নিজেদের মধ্যে হয়ে যায় সেইরকম আনন্দ হট্টোগোল। বিভূতিভূষণের "পথের পাঁচালি" পড়া হয়েছে কোরাসে। সে এক ভারী আনন্দ পাঠের স্মৃতি!
রুশ সাহিত্যের একটা বিরাট সংগ্রহ ছিল আমাদের, মনোরম মলাটের বইগুলো হাতে নিলেই মনটা কেমন ভালো হয়ে যেতো। শৈশবের পছন্দের কিছু রুশ বইয়ের মধ্যে এ মুহূর্তে "রূপের ডালি" "উভচর মানুষ" "বুদ্ধিমতি মাশা" "আর ইউ মাই মাদার" (এটি অবশ্য রাশান বই নয়,আমেরিকান) নামগুলো মনে আসছে। আসলে এটা কোনোভাবেই –‘এই দেখো আমি কত্তো বই পড়েছি’, এমন গপ্পো ফেঁদে বসার ইচ্ছায় লেখা নয়। বরং অন্য এক ভালোলাগার গপ্পো শোনানো এ লেখার আসল উদ্দেশ্য।
তো...এভাবে যখন পড়ার বইয়ের বাইরের পড়াশোনা চলছিল। তখন একদিন,"বীর পুরুষ" "লিচুচোর" "নদীর স্বপ্ন" ইত্যাদির গণ্ডি পেরিয়ে বালিকার মন আটকে গেল এক কবিতার বইতে। বলা ভালো বিশেষ এক কবিতার পাতায়। এর আগে একবার জীবনানন্দের শ্রেষ্ঠ কবিতার বই পড়বার চেষ্টা করে দারুণ ভাবে ব্যর্থ হয় সে। আজো তিনি মেয়েটির বোঝা-না-বোঝার চৌহদ্দিতেই থেকে গেছেন। তাই একটা ভয় ছিল হয়ত কবিতা তার পাতের খাদ্য নয়। কিন্তু যে কবিতার কথা বলা হচ্ছে,ওটা এমন একটা সহজিয়া লেখা যে প্রথম দেখাতেই বার দুয়েক পড়ে ফেলা হলো। আজো তা মেয়েটির প্রিয় কবিতার তালিকায় ড্যাব ড্যাবিয়ে চেয়ে থাকে। আসুন প্রিয় কবিতার কয়েক ছত্র পড়ে নেয়া যাক :
গলির মোড়ে একটা গাছ দাঁড়িয়েগাছ না গাছের প্রেতচ্ছায়া
আঁকাবাঁকা কতকগুলো কাঠির কঙ্কাল
শূন্যের দিকে এলোমেলো তুলে দেওয়া,
রুক্ষ রুষ্ট রিক্ত জীর্ণ
লতা নেই পাতা নেই ছায়া নেই ছাল-বাকল নেই
নেই কোথাও এক আঁচড় সবুজের প্রতিশ্রুতি
এক বিন্দু সরসের সম্ভাবনা
ঐ পথ দিয়ে
জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি ক'রে।
ড্রাইভার বললে, ওদিকে যাব না।
দেখছেন না ছন্নছারা ক'টা বেকার ছোকরা
রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে
চোঙা প্যান্ট, চোখা জুতো, রোখা মেজাজ, ঠোকা কপাল
ওদিক দিয়ে গেলেই গাড়ি থামিয়ে লিফট চাইবে,
বলবে হাওয়া খাওয়ান। .........
("ছন্নছাড়া", কবি: অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত)
বিশাল কবিতার পুরোটা দেয়া যাচ্ছে না পোস্টের মেদভূঁড়ি বেড়ে যাবার আশঙ্কায়। কিন্তু পুরোটা না পড়লে এই অসাধারণ মানবিক কবিতার কিছু বোঝাও যাবে না। তাই আগ্রহী পাঠকের জন্য পুরো কবিতার লিংক।
বলতে গেলে এই "ছন্নছাড়া"ই মেয়েটির ভেতর বাড়িতে সিঁদকাটা শুরু করে। সেই শুরু কবিতার পিছু নেয়া, সাধ্যমত তার পায়ে পায়ে ঘোরা। তারপর যা হবার তাই হতে থাকে। বেনোজলের মত হু হু করে ঢুকে পড়ে কবি কিংবা কবিতা মেয়েটির মাথা চিবিয়ে খাওয়া শুরু করে দেয়। মেয়েটি কিন্তু কোনোভাবেই কবিতা বুঝিয়ে সমঝদার নয়। ‘ভালোলাগে তাই ভালোবেসে যাই' অবস্হার এক নিরুপায় উদাহরণ বলা যায় হয়ত। তাই যখন সদ্য বাচ্চাকাল উত্তীর্ণ কিশোরীটি "ঈশ্বর আর প্রেমিকের সংলাপ" পড়ে ফেলে তখন এক অপার্থিব ভালোলাগায় হৃদয় তাহার নাচিয়া উঠিল যেন। আরে কী দারুণ পড়তে!
‘
সে যদি তোমাকে অগ্নিতে ফেলে মারে?’বিনা চেষ্টায় মরে যাব একেবারে
— ‘সে যদি তোমাকে মেঘে দেয় উত্থান?’
বৃষ্টিতে, আমি বৃষ্টিতে খানখান— ‘সে যদি তোমাকে পিষে করে ধুলোবালি?’
পথ থেকে পথে উড়ে উড়ে যাব খালি— ‘উড়বে?– আচ্ছা, ছিঁড়ে দেয় যদি পাখা?’
পড়তে পড়তে ধরে নেব ওর শাখা— ‘যদি শাখা থেকে নীচে ফেলে দেয় তোকে?’
কী আর করব? জড়িয়ে ধরব ওকেইবলো কী বলব, আদালত, কিছু বলবে কি এরপরও?
— ‘যাও, আজীবন অশান্তি ভোগ করো!
("ঈশ্বর আর প্রেমিকের সংলাপ" কবি/ জয় গোস্বামী)
যেচে যে অশান্তিকে ডাকে তাকে স্বয়ং ঈশ্বরও মুখ ভেংচান। কিন্তু যিনি কবি, তিনি কোথাও ঈশ্বরও তো বটে! তাই যেন কবিতার গড়ন বদলে যায় :
এসো শান্তি, পিড়ি দিলাম
আজন্মের মত থিতু হয়ে বসো শান্তি
এতো ভারী মজার জগৎ হে! শান্তি অশান্তিতে কেমন চাঁদের হাট জমিয়ে বসেছে। সবটা না বলে অল্পকথার চাদরে কেমন বিস্ময় ঢেকে রাখার জগৎ এই কবিতা! শঙ্খ ঘোষের ভাষায়,
কবিতার একটা নিজস্ব আবরণ আছে। তার ভেতরে আচ্ছন্ন রেখে অনেক কথা বলে নেওয়া যায়, অনেক আত্মপ্রসঙ্গ, কত বলেছিও হয়ত। কিন্তু গদ্যে নিজের বিষয়ে লিখতে ভয় হয়, গদ্য এত সরাসরি কথা বলে, এত জানিয়ে দেয়।
("কবিতার মুহূর্ত" /শঙ্খ ঘোষ)
কবিতার এই পৃথিবীটা অন্য এক অদেখা জীবন যেন। যে জীবন আমার নয়,কিন্তু হতেও তো পারতো! যে জীবন ফড়িংয়ের দোয়েলের মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা। হতে না পারা’র, দেখা না হওয়া’র আক্ষেপ যতটা,তারচে'বেশি বুঝি আকর্ষণ। সে আকর্ষণের ঘোরে কেমন জড়িয়ে মড়িয়ে যেতে থাকে মেয়েটি। মুগ্ধ হয়ে খেয়াল করে কবিরা কতটা অনায়াসে অন্যের ভেতর বাড়িতে হানা দিয়ে জেনে নিতে জানেন তাদের গোপন গহীনকে!
অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত শোভা,অত স্বাধীনতা!
চেয়েছিল আরো কিছু কম,আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিল
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত হৈ রৈ লোক, অত ভীড়, অত সমাগম!
চেয়েছিল আরো কিছু কম!একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল
একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!
("নিঃসঙ্গতা" কবি/আবুল হাসান)
এমন করে যখন কবিতার শব্দগুলো অন্যের গোপন কথা ফিসফিসিয়ে কয়ে ওঠে তখন কেমন চমকে যেতে হয়! এই একান্ত নিজস্ব অনুভূতির সন্ধান পেয়ে যে কবি বলে দেন অকপটে তাঁকে ভালো না বেসে উপায় থাকে নাকি! ‘জলের মত ঘুরে ঘুরে' কত শত কবিতাই না কথা কয়ে যায় মেয়েটির মনের ভেতর। তার মধ্যে অনেকেই তলিয়ে গেছে বিস্মৃতির অতলে। হঠাৎ হঠাৎ তাদের কারো সাথে দেখাও হয়ে যায় বৈকি! তখন পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার অনুভূতি পাওয়া হয়। মানুষের মত ক্ষত সৃষ্টি কিংবা ক্ষোভ ঝাড়ায় একদমই পটু না নির্বাক কবিতারা। তাই বুঝি বিনা বাক্য ব্যয়ে আশ্রয় পাওয়া যায় কবিতায় কিংবা বইয়ের পাতায়।
প্রেম ভালোবাসা জিনিসটা আজীবন অশান্তি ভোগের মত ব্যাপার স্যাপার যেন "ঈশ্বর আর প্রেমিকের সংলাপ" পড়ে কিশোরির তা জানা হলেও যুবতীটি বেমালুম ভুলে বসে থাকে। আসলে প্রেম যদি হুড়মুড়িয়ে ঘাড়ে এসে পড়ে তাকে রুখে এমন সাধ্য কার!
সময়ের সাথে সাথে ‘তিনি’ এলেন। সে বালক আবার কবিতা লিখিয়ে। ‘হা রে রে রে রে রে, আমায় রাখিস বেঁধে কে রে'র উচ্ছ্বাসে তার পায়ে লুটিয়ে পড়া বাকি মাত্র। পড়া গেল না,কারণ তারা দুই ভূবনের দুই বাসিন্দা। তিনি ওপারে,মেয়েটি এপারে। আন্তর্জালে কথা/কবিতা চালাচালিই ভরসা মম এহেন দূরত্বে। বালক তাকে শোনায়:
তোমায় আমি দেখেছিলাম বলে
তুমি আমার পদ্মপাতা হলে;
শিশিরকণার মতন শূন্যে ঘুরে
শুনেছিলাম পদ্মপত্র আছে অনেক দূরে,
খুঁজে খুঁজে পেলাম তাকে শেষে।
("তোমায় আমি" কবি/জীবনানন্দ দাশ)
মেয়েটির ডাকাবুকো উত্তর উড়ে যায় ওপারে:
তোমাকে শুধু তোমাকে চাই,পাবো?
পাই বা না পাই এক জীবনে তোমার কাছেই যাবো।
ইচ্ছে হলে দেখতে দিয়ো,দেখো
হাত বাড়িয়ে হাত চেয়েছি রাখতে দিয়ো,রেখো।
(‘অমীমাংসিত সন্ধ’ কবি/হেলাল হাফিজ)
তারপর- দুই মন একে অন্যকে যেন শুধায়:
-ওটা কি আঁকলে? ওটা তো একটা হৃদয়।-হ্যাঁ,এটা হৃদয়। যেখানে তুমি আছো অসীম
মমতায়,চিরন্তন ভালোবাসায়।
এবার বলো আর কি চাই তোমার?
-সারাজীবন শুধু ওখানে থাকতে চাই
("কথোপকথন -১" কবি/পূর্ণেন্দু পত্রী)
সময়ের রোদে প্রেমের শিশির শুকিয়ে যেতেও সময় লাগে না। সোনার হরিণ ধরবে বলে একদিন বালক কবি চলে যায় তার নিজস্ব পথে। কিন্তু মেয়েটি সেই ভালোবাসার ঘোরেই ডুবে থাকে। কেমন এক আক্ষেপে মনে মনে আওড়ায়:
অতল,তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে
হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে
("হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে" কবি/জয় গোস্বামী)
কিছু বাঁধন আছে যা আপাত ছিন্ন মনে হলেও সত্ত্বার সাথে জুড়ে থাকে আজীবন:
চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়
চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা।
("চলে যাওয়া মানে প্রস্হান নয়" কবি/রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ)
জীবনের রাস্তা এঁকেবেঁকে কিংবা সোজা চলে। মেয়েটিও চলে সেভাবেই। হঠাৎ কোনো চিলতে অবসরের সুযোগে মেয়েটির মন একটা কোণে দাঁড়িয়ে ভাবে:
এ ভ্রমণ আর কিছু নয়,কেবল তোমার কাছে যাওয়া
তোমার ওখানে যাবো,তোমার ভিতরে এক অসম্পূর্ণ যাতনা আছেন,
তিনি যদি আমাকে বলেন,তুই শুদ্ধ হ'-শুদ্ধ হবো
কালিমা রাখবো না!
("তোমার চিবুক ছোঁবো, কালিমা ছোঁবো না" কবি/আবুল হাসান)
ঈশ্বরের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে আজীবন অশান্তি ভোগের অভিশাপ মাথা পেতে নেবার পরও মাঝে মধ্যে আলটপকা অভিমান এসে ধরাশায়ী করে ফেলতে চায় প্রায়। অভিমানী মন অস্ফূটে বলে ওঠে:
একটি কথা বাকি রইলো থেকেই যাবে
মন ভোলালো ছদ্মবেশী মায়া
আর একটু দূর গেলেই ছিল স্বর্গ নদী
দূরের মধ্যে দূরত্ব বোধ কে সরাবে।
("একটি কথা" কবি/সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)
কেউ চলে যেতে চাইলে তাকে আটকে রাখা যায় না। চলে গেলেও মানুষ পেছনে রেখে যায় স্মৃতি। ‘সে চলে গেছে বলে কী গো স্মৃতি ও হায় যায় ভোলা'মেয়েটির ক্ষেত্রে এ বড় সত্যি। স্মৃতি আকড়ে থাকা তার নাছোড় মন তাই বলে:
সে ভুলে ভুলুক,কোটি মন্বন্তরে
আমি ভুলিব না,আমি কভু ভুলিব না।
("শাশ্বতী" কবি/সুধীন্দ্রনাথ দত্ত)
বাস্তবতা এসে যখন চোখ রাঙায় মেয়েটির তখন আড়মোড়া ভাঙে। সামনে খোলা বইয়ের পাতার অক্ষরগুলো ভর্ৎসনা করে ওঠে। নিজের ভাবেই আচ্ছন্ন মেয়েটি কুন্ঠিত পায়ে কাজে ডুবে যেতে চায়। কাজের ফাঁকে আন্তর্জালিক সংবাদপত্র খুঁড়ে স্বার্থপরতাকে সাথে নিয়েই বেছে নেয় নিজের স্বদেশ। দূরের বিষন্ন স্বদেশের ভালো না থাকার কথা জেনে মেয়েটি কী কষ্ট পায়? নাকি অপরাধবোধে ভোগে ঠিক স্পষ্ট হয় না। অসহায় প্রার্থনায় ঝুঁকে আসতে চায় শরীর। তখন স্বজন আর স্বদেশ ভাবনায় বুকে ব্যথা জেগে ওঠে:
স্বদেশ তুমি বিষন্নতার বুকের কাছে আর ঘেঁসো না।চতুর্দিকের নষ্ট জলে আর ভেসো না,
স্বদেশ তুমি ঘরে থাকো,
বাইরে গেলে অনেক বিপদ ঘরে থাকো।
("নিজের স্বদেশ" কবি/আবুল হাসান)
ভিনদেশী আকাশ কালো করে ভোর বেলাতে বৃষ্টি হলে দেশের সোঁদা মাটির গন্ধ পাবার জন্য মেয়েটির মন কেমন কেমন করে! নিশ্চিন্ত সুখের জীবন কাটাবে বলে পরিবারের সবাই এই প্রবাসে ডেরা বেঁধেছে। মাটি থেকে উপড়ে নেয়া গাছ যেমন দ্বিতীয় জীবন পায় বদ্ধ টবে। মেয়েটি একে উদ্বাস্তু জীবন বলে। ‘সুতো কাটা কাঙ্গাল ঘুড়ির মতই যেন বৈরি আকাশে তার ওড়া উড়ি’। অন্যেরা হয়ত মুখ টিপে হাসে, ভাবে এ তার সুখের দুঃখ বিলাস। কে যেন জানতে চায়:
যে পথ দিয়ে চলে এলি সে পথ এখন ভুলে গেলি
কেমন করে ফিরবি তাহার দ্বারে মন,মন রে আমার।
আশৈশবের প্রিয় শহর,বন্ধু-স্বজন,পরিচিত পাড়া,হাতের তালুর মত চেনা পথঘাট,চেনা আকাশের জন্য মনটা বড় উচাটন হয়। বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে দূরালাপনীর মাধ্যমে মেয়েটি যেন বাংলাদেশের কাছে চলে যেতে চায়। ঈদ,পহেলা বৈশাখ,বিজয় দিবস অথবা অমর একুশের জমজমাট বইমেলার খবর জানতে চাইলে বন্ধু স্বজনের আনন্দ ধ্বনি যখন দূরালাপনী ফুঁড়ে কানে আসে মেয়েটি কেমন এক অযাচিত ঈর্ষায় আক্রান্ত হয়। তখন সম্পূর্ণ ভিন্ন সময়ের পরিচিত একটা কবিতার লাইন এসে তাকে ঈর্ষাতুরা করে দেয়:
ঈর্ষাতুর নই,তবু আমি
তোমাদের আজ বড় ঈর্ষা করি। তোমরা সুন্দর
জামা পরো, পার্কের বেঞ্চিতে বসে আলাপ জমাও,
কখনো সেজন্যে নয়। ভালো খাও দাও,
ফুর্তি করো সবান্ধব
সেজন্যেও নয়।
("বন্দী শিবির থেকে" কবি/ শামসুর রাহমান)
জীবন বড় অদ্ভূত। কেবলি আলো ছায়ার লুকোচুরি চলে এর ভাঁজে ভাঁজে। ঈর্ষাতুরা মেয়েটি সেই অদ্ভূত চক্রে পড়ে অন্য রকম হয়ে ওঠে। বহুদূরের দেশ কোন প্রাপ্তির আনন্দে ভাসছে হয়ত। মেয়েটির মনও নেচে ওঠে তার ছন্দে। বাতাসে ভাসিয়ে দেয় মনের কথা:
"তোমার আনন্দে আমার জেগে ওঠা"
কিংবা বন্ধুদের নানান কর্মসূচী, কার্যক্রমে সশরীরে না থাকতে পারার অক্ষেপ দীর্ঘশ্বাস হয়ে ছুঁতে চায় স্বদেশের মাটি:
"দাসেরে করিও ক্ষমা"
দ্রোহ কিংবা ভালোবাসায়,আনন্দ অথবা বিষন্নতায় সবতেই মেয়েটি কবিতার কাছে আশ্রয় পেতে চায়, পায়ও। আকাঠ মেয়েটির যদিও জানা নেই কবিতার সঠিক সংজ্ঞা। জানা নেই কবিতা সংক্রান্ত অ্যারিস্টটলের বিখ্যাত প্রস্তাব আর তার উত্তরে শিষ্য প্লেটোর উগ্র উষ্মার উত্তর। সে কেবল মনের আনন্দেই কবিতা পড়ে। ফুল শুঁকে গন্ধ নেবার মত করেই সে কবিতাকে অনুভব করতে চায়। কবিতা কাকে বলে? যতটা মেধায় একজন কবি কবিতা লিখেন,সেটার পাঠক হিসেবে কতটা মেধা ধারণ করতে হয়? ইত্যাদি ইতং বিতং এ মেয়েটি নেই। তবে রাজশেখরের "কাব্যমীমাংসায়" কবিতার জন্ম রহস্যের মজার বিবরণটি জেনে মেয়েটি হেসেই বাঁচে না! একটু বলার লোভ সংবরণ করা যাচ্ছে না কিছুতেই:
পুরাকালে সরস্বতী পুত্র কামনা করিয়া হিমালয় পবর্তে তপস্যা করিয়াছিলেন। সন্তুষ্ট মনে ব্রহ্মা তাঁহাকে বলিলেন, 'আমি তোমার পুত্র সৃষ্টি করিতেছি' তাহার পর সরস্বতী কাব্যপুরুষ কে প্রসব করিলেন।
মেয়েটি ভাবে,একজন কবি যতক্ষণ একটা কবিতার জন্ম দিতে থাকেন ততক্ষণ সেটি একান্তই কবির নিজস্ব সম্পদ। যে মাত্র তিনি তা পাঠকের সামনে তুলে ধরলেন, তখন আর সেটি কেবল মাত্র কবির সম্পদ থাকে না। তা পাঠকের হয়ে যায়। যা ছিল কবির অত্যন্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার,নিজস্ব অনুভূতির প্রকাশ,তা পাঠকের সামনে আসা মাত্রই কবি তার ব্যক্তিগত সম্পদের অধিকার হারান। কবিতার একদম নিগূঢ় গল্পটা হয়ত কেবল মাত্র কবিই জানেন। কিন্তু তাতে পাঠকের খুব বেশি যায় আসে না। পাঠক তখন যার যার মত করেই একটা গল্প ভেবে নেন। কবিতার মজা এখানেই।
তবে সব কবিতার ক্ষেত্রে এমনটা প্রযোজ্য হয় না। কবি যখন বলে ওঠেন,
কাঁদো কাঁদো তুমি,কাঁদো ঈশ্বর
কেঁদেছিলো মাটি,কেঁদেছিলো ঘর
কেঁদেছিলো শাখা চিৎকার করে
মানুষই তো দেশ তাই মনে করে।
একবার শুধু কাঁদো তুমি আর
যেনো কেঁদে ওঠে ঐ কাঁটাতার,
সীমান্ত নেই দু'চোখের জলে
("দেশ" কবি/সৈকত কুণ্ডু)
দেশভাগের ব্যথা বহন করতে না হলেও একটা সার্বজনীন বেদনাবোধ অনেকের মতই মেয়েটির মনকেও আর্দ্র করে। দেশ ছাড়বার কষ্টটা বুঝি বা পথ পেয়ে কেঁদে ওঠতে চায়। কী জানি!
কিংবা সুবোধ সরকারে "রূপম" কবিতার কথাও মনে পড়ে। যেখানে পাঠককে নিজের মত করে নতুন কিছু ভেবে নিতে হয় না। কারণ তা আমাদের অনেকেরই খুব চেনা গল্প। যা কিছুটা সার্বজনীনও বটে। আসুন দুয়েক ছত্র পড়ে নেয়া যাক "রূপম" থেকে:
রূপমকে একটা চাকরি দিন—এম. এ পাস, বাবা নেই
আছে প্রেমিকা সে আর দু’-এক মাস দেখবে, তারপর
নদীর এপার থেকে নদীর ওপারে গিয়ে বলবে, রূপম
আজ চলি
তোমাকে মনে থাকবে চিরদিন
রূপমকে একটা চাকরি দিন, যে কোন কাজ
পিওনের কাজ হলেও চলবে।
অরাজক সময় পৃথিবীর অনেক দেশকেই কোনো না কোনো ভাবে বইতে হয়/হয়েছে। সময়ের পৃক্ষাপটে কিছু কিছু কবিতা বড় সত্যি হয়ে ওঠে দেশ কালের সীমানা ছাড়িয়ে:
সে বড় সুখের সময় নয়,
সে বড় আনন্দের সময় নয় তখনই
পা থেকে মাথা পর্যন্ত টলমল করে,
দেয়ালে দেয়াল কার্নিশে কার্নিশ
ফুটপাথ বদল হয় মধ্যরাতে
বাড়ি ফেরার সময়, বাড়ির ভেতরে বাড়ি, পায়ের ভেতরে পা,
বুকের ভিতরে বুক
আর কিছু নয়.....
("সে বড় সুখের সময় নয়" কবি/শক্তি চট্টোপাধ্যায়)
যেকোনো দেশের সাধারণ মানুষ চায় শান্তিপূর্ণ নিরুপদ্রব একটা জীবন। ক্ষমতায় থাকা মানুষগুলো সেসব পূর্ণের আশা জাগিয়ে জনগণের ম্যাণ্ডেটে ক্ষমতায় গিয়ে তাদের সে বাগাম্বড়কে অসারই করে তোলে না শুধু; সময়ে সময়ে বরং জনগণের জীবনকে এমন একটা দুর্বিষহ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয় যখন সাধারণ জনগণের পিঠ দেয়ালে গিয়ে ঠেকে। আর কে না জানে,এমন মানুষের বুকে দ্রোহের আগুন কতটা বিদ্বেষ নিয়ে জ্বলে ওঠে! কবিতা তখন সেইসব জনগণের হয়ে জানান দেয়:
বুকের ভিতর লুকিয়ে আছে তীব্র আগুন
পুড়িয়ে দেবো,পুড়িয়ে দেবো,সতর্ক হও।রুপেল পালক গুটাও এখন
কৃত্রিমতার নীল কারুকাজ
জঠর জ্বালায় পুড়িয়ে দেবো,সতর্ক হও।স্বপ্ন-বিলাস ছড়িয়ে আছো চতুর্দিকে,
ফসল ক্ষেতে খেলছে তোমার সোনার মৃগ,
অবক্ষয়ের ধুসর পোশাক অঙ্গে আমার
অন্ধকারের বিরাট পাখায় আড়াল-করা গেরস্হালি,
উঠোন জুড়ে উজান হাওয়ার দীর্ঘনিঃশ্বাস।সাপের ফনায় হাত রেখেছো
হাত রেখেছো বাঘের গায়ে-
ঘরে তোমার লালিত সুখ,আজম্ম সাধ
পুড়িয়ে দিবো,পুড়িয়ে দিবো,সতর্ক হও।
("পুড়িয়ে দেবো নীল কারুকাজ" কবি/রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ)
নিরুপায় অসহায় মানুষের অধিকার রক্ষায় দুনিয়া জুড়ে কতসব সংঘ গড়ে উঠেছে। কিন্তু হাস্যকর ভাবে অনেক সময় দেখা যায় সেসব সংঘ মজলুমের পাশে নেই। গিয়ে দাঁড়িয়েছে জালিমের পাশে। মানুষের শুভ অশুভের বোধ যখন হারিয়ে যায় তখন পৃথিবীর কোনো সংঘই পারে না আসলে মনুষ্যত্ব রক্ষার ঠিকেদারী নিতে। মেয়েটি ভাবে,এ কথা কবির মত অকপটে আর কে বলার সাহস রাখেন?
মৃত্যু আমাকে নেবে,জাতিসংঘ আমাকে নেবেনা,
আমি তাই নিরপেক্ষ মানুষের কাছে, কবিদের সুধী সমাবেশে
আমার মৃত্যুর আগে বোলে যেতে চাই,সুধীবৃন্দ ক্ষান্ত হোন, গোলাপ ফুলের মতো শান্ত হোন
কী লাভ যুদ্ধ কোরে ? শত্রুতায় কী লাভ বলুন ?
আধিপত্যে এত লোভ ? পত্রিকা তো কেবলি আপনাদের
ক্ষয়ক্ষতি, ধ্বংস আর বিনাশের সংবাদে ভরপুর…মানুষ চাঁদে গেল,আমি ভালোবাসা পেলুম
পৃথিবীতে তবু হানাহানি থামলোনা !
("জন্ম মৃত্যু জীবনযাপন" কবি/আবুল হাসান)
জীবনের প্রতি কোনো বৈরাগ্য নেই মেয়েটির,বরং বাঁচতে চায় সে বাঁচার আনন্দেই। তারপরও মৃত্যু নিয়ে তার রয়েছে ভীষণ রোমান্টিকতা। ‘রোমান্টিক(romantic fool) ফুল' ভাবে অনেকেই সে কারণে। কিন্তু তাতে তার কিছুই যায় আসে না। অলটাইম ফেবারিট দাড়িওয়ালা বুড়োর প্রভাবেই কি তার এই রোমান্টিকতা? কি জানি! মাত্র ষোল বছর বয়সে মৃত্যু নিয়ে ভানুসিংহের পদাবলীতে সে কবি লিখেছিলেন:
"মরন রে তুঁ হুঁ মম শ্যাম সমান"
তারুণ্য কিংবা যৌবনের দারুণ দাপুটে সময়েও তিনি তার চিরসখা মৃত্যুর কথা ভুলে থাকেন না। জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষণেই তাকে স্মরণ করেছেন, সময় দিচ্ছেন কবিতার খাতাকে। লিখছেন:
একদা নামিবে সন্ধ্যা বাজিবে আরতি শঙ্খঅদূরে মন্দিরে,
বিহঙ্গ নীরব হবে উঠিবে ঝিল্লির ধ্বনি
অরণ্য গভীরে,
সমাপ্ত হইবে কর্ম সংসার সংগ্রাম শেষ
জয় পরাজয়
আসিবে তন্দ্রার ঘোর পান্থের নয়ন পরে
ক্লান্ত অতিশয়।
তো? মেয়েটির খুব রাগ হয়। তিনি বিখ্যাত লোক বলেই মৃত্যু নিয়ে কবিতা লিখবার স্বাধীনতা পেয়ে যান। নিজের ভাবনা অন্যকে জানান দেন। আর মেয়েটি অতি সামান্য একজন বলে তারটা ‘আদিখ্যেতা,দুঃখবিলাস কিংবা ‘ছ্যাকা খাইছোস!'জাতীয় কথার তোড়ে ভাসান দিতে হবে! মামদো বাজি যেন! মেয়েটি অভিমান মুছে নিজের রোমান্টিকতা আঁকড়ে থাকে। পরিবারের সবাইকে পই পই করে বলা আছে। পটাং করে যদি মরে যায় সে,তবে যেন তাকে দেশের মাটিতেই ঘুমোতে দেয়া হয়। যদিও মৃত্যর পর তাকে জাগতিক কোনো কিছুই আর ছুঁতে পারবে না। তারপরও ভারী আনন্দ দেয় এই ভাবনাটা একদিন সে ফিরে যাবে স্বদেশের মাটিতে, মাতৃজঠরের নিরাপদ অন্ধকারে। গিয়ে বলবে:
আমি আবার ফিরে এলাম, আমাকে নাও
ভেজা মাটির বৃষ্টি তুমি আমাকে গ্রহণ করো আমাকে নাও, আমাকে নাও!
("প্রত্যাবর্তনের সময়" কবি/আবুল হাসান)
‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে' তারপরও মানুষের মত করে বেঁচে থাকার আনন্দ উদযাপন করতে আর কেউ পারে কী? কেউ পারে না। মানুষের আছে ভালোবাসবার আশ্চর্য এক ক্ষমতা। ভালোবাসাহীন মনুষ্য জীবন কিছুতেই তাই যেন সে কাটাতে চায় না।
আমার জীবন ভালোবাসাহীন গেলে
কলঙ্ক হবে কলঙ্ক হবে তোর...
("হৃদয়ের ঋণ" কবি/হেলাল হাফিজ)
তবে শুধু মানুষের প্রতি প্রেমই জীবনের অংশ না। তার ভালোবাসার জন্য আছে বিপুল বিশাল পৃথিবীর যাবতীয় সব। তুচ্ছের প্রতিও তাই সে দেখাতে পারে অপার বিস্ময়, মুগ্ধ ভালোবাসা।
আমি ভালোবাসি মেঘ... চলিষ্ণু মেঘ...ঐ উঁচুতে...ঐ উঁচুতেআমি ভালোবাসি আশ্চর্য মেঘদল!
("রহস্যময় মানুষ" মূল কবি/বোদলেয়ার, অনুবাদ: বদ্ধুদেব বসু)
মেয়েটি এমন ভালোবাসায় মত্ত থাকতে ভালোবাসে। তাই কোনো অচেনা সবুজ মাঠের কাছে রেখে আসে অকপট মুগ্ধতা। সে জানে গানের ভেতরে ডুবে গিয়ে আনন্দ কুড়িয়ে আনতে। সেলুলয়েডের ফিতার মাঝে ভালোলাগা সঁপে দিতে। তার আছে নিজস্ব ভালোবাসার, ভালোলাগার জগৎ। কাজের পরিশ্রম শেষে ডুবে যাবার জন্য তার রয়েছে কল্পনার রাজ্য,পাঁজা খানেক বই আর কবিতার অপার্থিব এক জগৎ। যে জগতে সে বার বার ফিরে ফিরে আসতে এতটুকুও ক্লান্তিবোধ করে না। তাই কবিতা বুঝুক আর নাই বুঝুক,কবি/কবিতার প্রেমে সে বার বারই পড়বে। বিশেষ করে জয় গোস্বামী আর আবুল হাসানের প্রেমে। বললেও শুনবে না
পোড়ারমুখী দু'চোখের বিষফের তুই প্রেমে পড়েছিস?
মেয়েটি ভাবে এভাবে আনন্দ কুড়িয়েই কাটিয়ে দেবে জীবন। কারণ সে মনে করে বার বার কবিতার প্রেমে পড়া এবং মরা তার জন্মগত অধিকার। সেটা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। এমন কি ঈশ্বর, এমন কি কবি, এমন কি তাঁহাদের কবিতাও না! এমন এক ভূবণ ডাঙ্গার মত অবাধ জগত না থাকলে মেয়েটি দমবন্ধ হয়ে মারাই পড়তো হয়ত!
কবিতা যদি নদী হয় মেয়েটি সেই নদীতে পালহীন নৌকা, স্রোতের টানে ভেসে যায় নৌকা। মেয়েটি ভাসতে ভাসতে গন্তব্যহীন যাত্রার আনন্দ নিয়ে ভীষণ ভাবে বেঁচে থাকতে চায় নদী পথের বৈচিত্রে।
আমি কি জানি না,এই বৈরি-পৃথিবীতে
শুধু তুমি ছাড়া কতটা দুর্লভ ছিল সুখ?
আমি কি জানি না,এই নিস্তরঙ্গ অকূল পাথারে
তুমি ছাড়া কতটা অসহ্য ছিল বাঁচা!
(নির্মলেন্দু গুণ)
কৃতজ্ঞতা: পোস্টে ব্যবহৃত সকল কবি এবং লেখকের প্রতি।
মন্তব্য
কবিতা পড়ে ফাগলে। কথা শেষ!
নাও, ছবিটা দেখো : Nostalogia..
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
Nostal
ogia > Nostalgia****************************************
আপনি যা বলবেন আফামণি
ছবি দেখলেম
আবোল-তাবোল দিয়ে শুরু হয়ে গাড়ি চলছেই। চলতে চলতে একদিন পূর্ণেন্দু পত্রীর ৫ খন্ড কথোপকথন হাতে গুঁজে দিয়ে নতুন গাড়িতে উঠে পড়লাম। আহা এরপর নিজেরাই কথোপকথন লেখা শুরু করলাম। কি সব কবিতাময় দিন ছিল তখন!! আর এখন, ছড়ায় ছন্দে দিন কাটে, আতা গাছে তোতা পাখি!
চমৎকার, অসাধারণ পোস্ট। বুকমার্ক করলাম। ফাঁক পেলে আবার মন দিবো।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
বেশ বলেছেন কিন্তু! ছড়ায় ছড়ায় নিজের চারপাশ চেনার শুরু। কবিতাকে সঙ্গে নিয়ে জীবনের আরেক পর্বে পা রাখা।
তারপর আবারো ছড়ার পৃথিবীতে আত্মজা(বানানটা কি ঠিক )কে/দের সঙ্গে নিয়ে পরিভ্রমণ। পরিপূর্ণ একটা ভ্রমণ যেন!
চলুক এমন করেই ছন্দে আনন্দে। এই বিশাল এলোমেলো পোস্ট পাঠ এবং তাহা পুনরায় পাঠের ইচ্ছা রাখবার জন্য আপনার ধৈর্য্যের প্রশংসা না করে পারছি না! ধন্যবাদ হে!
তোমার এই পোস্টে অনেক সময় নিয়ে বেশ বড়সড় একটা মন্তব্য করবার ইচ্ছে রাখি। হয়ত বহু দেরি হবে। হয়ত অযাচিতে আচমকা পেয়ে যাবে একদিন। পড়িনি, এমন পোস্ট অনেকটুকু নির্জনতা নিয়ে অলস গেঁয়োর মতো--ভোরের রোদের মতো--কার্তিকের ক্ষেতে মাথা রেখে শুয়ে থেকে পড়তে হয়!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
আপনার বড়সড় মন্তব্য পড়বার জন্য অনেক আগ্রহ নিয়ে প্রতিক্ষায় থাকলাম ভাইয়া।
পড়ে বিরক্ত বা হতাশ হবেন হয়ত, সে জন্য আগাম দুঃখ প্রকাশ করে নিলেম(সর্তক বাণী দেখেও কেনু পড়লেন )
ধন্যবাদ ভাইয়া
অনেকগুলা ভালোলাগা কবিতার দেখা পেলাম আপনার পোস্টে।শুভেচ্ছা জানবেন দিদি।
ভালোলাগার কবিতা দেখে বিরক্ত না হয়ে আনন্দ পেয়েছো জেনে আমিও আনন্দ পেলেম হে!
তোমাকেও শুভেচ্ছা, সাথে ফিরি ভালুবাসা। পুস্ট পাঠের জন্য ধন্যবাদ বন্দনা।
চমৎকার হৈচ্চে! পঞ্চ তারকা!
আয়না-দিদি, চলে আসো এদিকে। তারপর তুমি আমি দুজনে মিলি পড়ে ফেলি এই মন-কাড়া আলেখ্যটিকে। আন্তর্জালেও করে নেওয়া যায়। অনিকেত-কে যদি পাওয়া যায় সুরারোপের জন্য! আহা, উপভোগ্য কাজ হয়ে থাকবে একটা! (অঃ টঃ - আমার অবসাদ কেটে গ্যাছে, কয়েকদিন যাবৎ আবার সক্রিয়তায় ফিরতে শুরু করেছি।)
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
দেবেই যদি মাত্তর পাঁচটা কেনু? গোটা আকাশ খালি করে দেউনা কেনু দাদাই!
চলে তো যাওয়াই যায় যে কোনো দিন/কিংবা তোমরা এলে । কিন্তু এই এ্যাত্তো বড় লেখাটা পড়তে চাইছো শুনে হেঁচকি ওঠার জোগাড়! আমাকে সাথে নেবার রিস্ক কেন নিতে চাও হে(হিড়িম্বা কণ্ঠস্বরে এইসব চলে নাকি )! তুমার সাহসের তারিফ করি। তবে ইয়ে হইলে কিন্ত মন্দ হয় না দাদাই । এটা না হোক, অন্য কিছু কী কও?
তোমার আলস্য তার লাস্য ছাড়িয়াছে শুনিয়া প্রীত হলেম খুব। সক্রিয়তার পমান হিসেবে একটা পোস্ট দিয়ে দাও জলদি।
অনেক ধন্যবাদ রে দাদাই।
চারিদিকে দেখছি মন খারাপের মিছিল ।
শেকড়ের জন্যে পিছুটান, কবিতার সাথে আজন্ম প্রেম আর ভেঙ্গে যাওয়া অনেক স্মৃতির কথাই জানিয়ে দিলেন। এমন বর্ণনায় মুগ্ধ হয়েছি, এতগুলো অসাধারণ কবিতা এক পোষ্টে এত প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছিলো কবে? ভালোথাকুন আয়নাদি।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
মন খারাপ বুঝি মন খারাপকে টানে! কি জানি।
শেকড়ের জন্য পিছু টান নিয়ে কামাল চৌধুরীর একটা কবিতা মনে পড়ছে
ভাঙ্গা গড়া নিয়েই তো মনুষ্য জীবন। ব্যাপার না। এগিয়ে যাওয়া নিয়েই কথা। একটু বেশিই বলা হয়ে গেলু হে!
কবিতা নিয়ে সচলেই হয়ত ব্যাপক পোস্ট আছে, যা আমাদের চোখ এড়িয়ে আছে এখনো। আমি নিশ্চিত, তখন এই পোস্ট নিতান্তই আবজাব লাগিবে আপনার কাছে। তবুও এমন করে লেখাটারে মাথায় তোলার জন্য আনন্তরিক ধন্যবাদ।
আপনিও ভালো থাকবেন হে
প্রথম প্যারাটা মিলে গেল। দেইখেন, একদিন আমিও স্মৃতিকথা লিখুম।
আহা, আমি এখনও নীলক্ষেত গেলে খুঁজে খুঁজে রুশ বইগুলা কিনি। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে দুনিয়ার কি ক্ষতি-বৃদ্ধি হল জানিনা, কিন্তু আমাদের বুকশেলফে একটা এটম-বুমার বিস্ফোরণ হয়ে গেছে।
ইয়ে, "পেনসিল আর সর্বকর্মা" পড়েন নাই?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
পেনসিল আর সর্বকর্মার জবাব নাই
বিশেষ করে কেলেছোপকে আলাদা করে মনে আছে। আপনি 'গল্প আর ছবি' পড়েছেন তো? সেটা হচ্ছে সবার সেরা।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
আহ, কেলেছোপ, ভেনিয়া কাশকিন, ক্যাপ্টেন টগবগ, দস্যু সিঁধেল, তিমা, গালাইকর... এদের নিয়েই তো শৈশব। ভোলা মানে নিজেকেই অস্বীকার করা।
ইয়ে "গল্প আর ছবি" এই নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। "ছবিতে ছবিতে গল্প" নামে ইয়াবড় ছড়ানো একটা বই ছিল, প্রতি পাতায় দারুণ সব ছবি আর দু-এক লাইন লেখা। ওটার কথা বলছেন না তো?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হ অনেকের সাথেই মিলবে হয়ত। স্মৃতিকথা লেখার মত বয়স হয়নাই সত্যানন্দ।
'বড় হও দাদা ঠাকুর' তারপর অটোবায়োগ্রাফি হবে। খুব সত্যি কথা রে।
ওদের বইগুলো এত সুন্দর আর যত্ন নিয়ে করা হতো...হিংসা, হিংসাই খেলো, এই সুন্দর পিতিমিটারে
আবার জিগায়! বুড়ি হয়ে গেছি তো মনে থাকেনা সব এক জন্মদিনে ভাইয়ার কাছ থেকে পাওয়া হয়েছিল "পেন্সিল আর সর্বকর্মা" নামের আকাশি নীল মলাটের বইটা। সাথে আরো কিছু বই। কী স্মৃতি মনে করায়ে দিলেন মিয়া!
ধন্যবাদ পুস্ট দর্শনের জন্য
আমি পেয়েছিলাম আম্মার কপিগুলো, উত্তরাধিকার। তারপর তো বন্ধই হয়ে গেল। "বৃষ্টি আর নক্ষত্র" / "সার্কাসের ছেলে" এই দুটো বই এখনও নীলক্ষেতের ফুটপাথে খুঁজে বেড়াই। অনেক ছোটকালে পাশের বাসায় বেড়াতে গিয়ে পড়েছিলাম, তারপর কোথাও পাইনি।
আর আমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া "রুশদেশের উপকথা" তে শেষের আধখানা পাতা ছিল না। প্রায় ২ যুগ পরে কোনও এক বইমেলায় বইটার রিপ্রিন্ট দেখে এক নিঃশ্বাসে আগে শেষের পাতাটা পড়েছি। বেচারা দোকানদার বোঝেওনি যে আমি আসলে তার স্টলে দাঁড়িয়ে পুরো বইটা পড়ে শেষ করলাম।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
১। আমি খুব একটা কবিতা পাঠক নই, তবে সচলে কবিতাখোরদের কল্যাণে অনেক কবিতার কিছু কিছু পংক্তি চেনা চেনা লাগে। কাজেই এ লেখার পুরো নির্যাস পাব কি না বলা মুশকিল। সে অন্য কথা, যেটুক পড়েছি আমার মনে হল, এটা আপনার সেরা লেখা যদি না হয় সেরা পাঁচের মধ্যে অবশ্যই থাকবে।
২। এবং লেখাটা এখন পড়িনি, রেখে দিয়েছি। এ লেখাটা ব্যস্ত সময়ে পড়ার নয়।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
মর্ম কে অনেকদিন পর দেখে ভালো লাগলো কোনো লেখালিখি নাই কেনু তোমার?
১। সচলে কত যে গুণীর আনাগোনা! পোস্ট নিয়ে তেমন আশাবাদ না রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হে!
'কেবলি করেছি চয়ন' এছাড়া তেমন কিছু নেই এতে। মেদভূড়ি দেখেই পালোয়ান ঠাওড়ানো হলু বুঝি!
২। যেই বড় পোস্ট রে বাবা! পড়বার তালিকায় রেখেছো জেনে খুশি হলেম অনেক।
পড়ে সম্ভব হলে জানিও, ভুল, ত্রুটি ভালুটা মূলোটা কেমন?
ধন্যবাদ নেও
অনেকগুলি অতুলনীয় কবিতা একসাথে পেলাম এই পোস্টে!
মেয়েটির জীবন কাব্য সুখে ভরে উঠুক।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
অনেক ভালু ভালু কবিতাকে 'ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই' বলে তাড়িয়ে দিতে হয়েছে।
দোয়া রাখবেন আফামণি অনেক ধন্যবাদ শাব্দিক।
আয়নামতি,আপনাকে অনায়াসে কবিতাপিডিয়া খেতাব দেয়া যেতে পারে!
-গগন শিরীষ
শিরীষ, না হয় এট্টু মনের সুখে গোটা কতক কবিতা পিডাপিডিই করলেম।
তাই বলে এমনতরো খেতাব জুড়ে দিতে হবে
আপনি সচলে নতুন তো তাই জানেন না হয়ত, এখানে 'কবিতাপিডিয়া' হবার মত কতসব যোগ্য লোক আছেন। তাই আপনার কথায়
ধন্যবাদ থাকলো গগন শিরীষ
আয়নাকোবি বললে চলপে?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
তার আগে ঠিক করেন পিঠে ছালা বাঁধবেন নাকি কুলা?
কী সব্বনেশে পোস্টগো দিদি! সেই কবেকার হারিয়ে ফুরিয়ে যাওয়া স্মৃতি খুঁড়ে বেদনায় ডোবালে! তা প্রথম কবিতাটি কি আমার জন্য! বৃদ্ধ বয়সে যেমন হাড়ের রস শুকিয়ে খটখটা হয়ে যায় ঐ যে লোকে বলে বুড়ো হাড়, হালকা চোট লাগলেই মট করে ভেঙ্গে যায়! তেমনটাই হয়তো বুড়ো বয়সে জীবনবোধেও রসের স্বল্পতা। এই দেখ আমার [img] DSCN0617 by Kabir Ahmed 26, on Flickr[/img] অবস্থা। তার চেয়ে বরং গান শোনগো দিদি!
ধ্যাৎ! শুকনো ডালে জীবনের বান ডাকবার কথাটুকু গপ করে গিলে নেয়া হলু কেনু
শরীর বুড়োচ্ছে বলে মন্টাকেও বুড়িয়ে যেতে দেয়া কেনু রে বাপু!
যে বুড়োর চমৎকার গান্টা শুনতে দেয়া হলু তার এত ভূঁড়িভূঁড়ি উদাহরণ থাকতেও এমন কথা কেন বলা?
মরন নিয়ে এই বুড়ো এত ভেবেছেন কিন্তু কোথাও হতাশা নেই, আনন্দের পাশে বসে থাকা তাঁর কাছেই শিখতে হয় কিন্তু!
অনেক ধন্যবাদ চমৎকার গান্টা ফের শোনাবার জন্য। ধন্যবাদ পোস্ট পাঠের জন্যেও
এই গাছটার কাহিনী শোন। এটা আমার বাড়ির বারান্দার সামনে সিটি কর্পোরেশনের জায়গায় একটা কৃষ্ণচুড়া গাছ। এখানে একটা বহুতল ভবন নির্মানের সময় গাছটার ডালপালা ছেটে এমন অবস্থা করেছে। ফুল ফোঁটার মৌসুমে জোছনায় গভীর রাতে আমি বারান্দায় বসে গান শুনতাম। তা, দুটি মৌসুম আমায় বঞ্চিত করেছে। দেখ ভরা মৌসুমে গাছটা কেমন সুন্দর! [img] DSCN0024 by Kabir Ahmed 26, on Flickr[/img] সেই রাগেই,,,
তবুও রক্ষা যে পুরো গাছটাই কেটে ফেলা হয়নি। গাছটা যখন আছে তখন আবারো ওর ডালে ডালে জ্বলে উঠবে আগুনরঙা ফুল। ঠিক না? এখন তো ভোর হচ্ছে ওদিকটায়, ঘুমানো হয়নি নাকি ভাইয়া? অবশ্য রোজ রোজ এত ঘুমেরই কী আছে কৃষ্ণচূড়া আমার খুব পছন্দের। ফটুকটার জন্য ধন্যবাদ।
কি মন্তব্য লিখব ঠিক বুঝতে পারছি না। পড়ার সময় যতটা মুগ্ধ হয়েছি ঠিক ততটাই আশাহত হয়েছি পড়া শেষ করে। পড়েছি আর ভেবেছি, কবিতার সাথে যার এমন আত্নার আত্মীয়তা তিনি মনের আজান্তেই এক বড় কবি না হয়ে পারেন না। কোন কারণ ছাড়াই আশা করেছি, লেখার শেষাংশে আপনার নিদেন পক্ষে একটি কবিতা থাকবে। কিন্তু তা না পেয়ে নিরাশ হয়েছি। আশায় থাকব আপনার কবিতার পোস্ট পড়ার জন্যে।
- পামাআলে
আমি কিন্তু ভয়াবহ রকমের মিষ্টিখোর। এখন যদি সেজন্য আমাকে কেউ বলে মিষ্টি বানায়ে দেউ।
বিপদেই পড়ে যাবো! কবিতার ক্ষেত্রেও সেরকম আর কি। ভালুবাসা আছে প্রচণ্ড কিন্তু নিজের লিখবার সাধ্য নেই। সবার সব থাকা ভালুও না আসলে। কবিতা লিখে আনন্দদানে ব্যর্থ বলে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।
পোস্ট পাঠের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
লেখা পড়ে শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছে - শুধু কবিতার জন্য আমি অমরত্বকে অবহেলা করেছি (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)
____________________________
আর এই নিতান্ত সাধারণ পাঠকের কথা হলু
পড়িতে চাওয়া
অ:ট: প্রোফেসর আপনাকে মিস করেছি রে ভায়া! প্রবাসী জীবন কেমন যাচ্ছে? আপনি কী একাই এসেছেন এখন নাকি ভাবী বাচ্চাদেও সঙ্গে এনেছেন? বিস্তারিত জান্তে চাই। দরকারে পোস্ট লিখে জানান দেন ভাই। আপনার সুন্দর প্রবাস (মতান্তরে প্রবাঁশ) জীবন কামনা করছি
আপনার কবিতাপ্রীতি জেনে ভাল লাগল। আপনার তালিকার সাথে কিছু পছন্দ আমারও মিলে গেলো। কবিতা পড়লে ক্যানো যেন আমাকে বিষাদ ঘিরে ধরে। আমি আগে নিজেও কবিতা লিখতাম কিন্তু লিখলে বা পড়লে অই এক সমস্যা । সে যাই হোক, আমার দুইটা প্রিয় কবিতা শেয়ার করছি।
=====
অতন্দ্রিলা, ঘুমোওনি জানি
তাই চুপি চুপি গাঢ় রাত্রে শুয়ে বলি,
শোনো, সৌরতারা-ছাওয়া এই বিছানায় ---সূক্ষ্মজাল রাত্রির মশারি---
কত দীর্ঘ দুজনার গেলো সারাদিন, আলাদা নিশ্বাসে---
এতক্ষণে ছায়া-ছায়া পাশে ছুঁই কী আশ্চর্য দু-জনে দু-জনা---
অতন্দ্রিলা, হঠাৎ কখন শুভ্র বিছানায় পড়ে জ্যোত্স্না, দেখি তুমি নেই ||
--- অমিয় চক্রবর্তী
======
[i]এত বেশি কথা বলো কেন? চুপ করো
শব্দহীন হও
শষ্পমূলে ঘিরে রাখো আদরের সম্পূর্ণ মর্মর
লেখো আয়ু লেখো আয়ু
ভেঙে পড়ে ঝাউ, বালির উত্থান, ওড়ে ঝড়
তোমার চোখের নিচে আমার চোখের চরাচর
ওঠে জেগে
স্রোতের ভিতরে ঘূর্ণি, ঘূর্ণির ভিতরে স্তব্ধ
আয়ু
লেখো আয়ু লেখো আয়ু
চুপ করো, শব্দহীন হও[/i]
--- চুপ করো, শব্দহীন হও – শঙ্খ ঘোষ
===
শুভকামনা রইলো।
অপর্ণা মিতু
অমিয় চক্রবর্তী খুব বেশি পড়িনি। তবে শঙ্খ ঘোষ অল্প সল্প চেনাজানা।
বিষে বিষ ক্ষয়ের ব্যাপারটা হয় আমার এ ক্ষেত্রে।
লিখুননা দু' একটা কবিতা। আমরা পড়ি
এই সুদীর্ঘ পোস্ট পড়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন সেজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ অপর্ণা।
চমৎকার লেখা, আয়নামতি; চমৎকার সব কবিতা। এর মধ্যে বেশকিছু পড়িনি অবশ্য........... আমার নিজের কথা বলি, এক সময়ের কবিতাপাগল মেয়েটা আর কবিতাই পড়ে না আজকাল। বইমেলা থেকে সৈয়দ হকের ‘বিরতিহীন উৎসব’ কিনলাম সেদিন, আজ অব্দি খোলা হল না। কেমন যেন হয়ে গেছি, কেমন যেন। অলটাইম ফেবারিট দাড়িওলা বুড়ো থেকে শুরু করে নন্দিনী-শুভঙ্করের স্রষ্টা পর্যন্ত কেমন পর হয়ে গেছে আমার। আপনি এমনই থাকুন-কবিতায় ডুবুন, ভাসুন; ভালো থাকুন, খারাপ থাকুন, সবটা থাকুন। ভালোবাসা আপনার জন্য........ রোখে, প্রেক্ষাপট, ভুবনডাঙ্গা, ভীষণভাবে, নদীপথের, বৈচিত্র্যে-শব্দগুলো আরেকবার দেখবেন? মানে এই শব্দগুলোর বানানগুলো আপনি অন্যভাবে লিখেছেন। ‘রুখে’ অবশ্য বানানের দিক থেকে ঠিক কিন্তু বাক্যের প্রয়োগে এখানে বোধহয় ‘রোখে’ হতে পারে....... আর অনেকদিন পর কবিতা পড়লাম আজ,
দেবদ্যুতি
বাহ্! কেমন যত্ন করে মন্তব্য লিখে গেছেন দেবদ্যুতি! নিশ্চয়ই বানানগুলো ঠিক করে নেবো।
আন্তরিক সাধুবাদ নিন এ জন্য। আপনার কবিতা প্রেম নিয়ে ভীষণ আগ্রহ হচ্ছে।
লিখুন না নিজের সেসব দিনের কথা। বলা যায় না, হয়ত লিখতে গিয়ে আবার পুরোনো প্রেম ঘুম ভেঙে জেগে ওঠবে।
'রোখে' বানানটা বুড়োর লেখাসহ দু'একজনের লেখায় পেয়েছি বলেই না পটাং করে ব্যবহার করেছি।
অনেক ধন্যবাদ আবারও
তোমার খবরটবর নাই ক্যান, হে? ভীষণ মিস করছি তো।
দেবদ্যুতি
নতুন মন্তব্য করুন