আলো আমার আলো ও গো
মেয়েটির জন্মের পর ওর মা-বাবা আর দশজন ছেলে সন্তানকামী মা-বাবার মত মুখকালো করে শোক করেননি। বরং আনন্দে মিষ্টি মুখ করিয়েছিলেন আত্মীয় পরিজনদের। 'এমন আনন্দ করছো যেন ছেলে হয়েছে তোমাদের!' এমন হীন কটাক্ষকে উপেক্ষা করে মেয়েটির নাম রাখা হয় 'জ্যোতি'। জ্যোতি মানে আলো। আলো মানে অন্ধকার হটে যায় যার উপস্হিতিতে। দরিদ্র হলেও জ্যোতির বাবা মায়ের মনে কোন দীনতা ছিল না। আর সেসব ছিল না বলেই তাঁরা তাদের মেয়েটিকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন সবটুকু দিয়েই। জমিজমা বিক্রি করে মেয়ের ডাক্তার হবার স্বপ্নকে এগিয়ে নিতে যথাসাধ্য করেন তাঁরা। ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে ইন্টার্নীকালীন সময়ে কিছু পাষণ্ড পশুর ভয়ংকর থাবার নীচে চাপা পড়ে যায় তার-তাঁদের সবার স্বপ্ন। বিরুদ্ধ অন্ধকারে যে সন্তান আলো হবে ভেবে বাবা মা নাম রেখেছিলেন 'জ্যোতি', জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও মেয়েটি তাঁদের সে আশাবাদ কে খাটো হতে দেয়নি। জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছে, সে জ্যোতি। আর জ্যাতি মানে আলো বিরুদ্ধ অন্ধকারের!
ঝড়ের কাছে রেখে গেলে তোমার ঠিকানা
২০১২'র ১৬ ডিসেম্বর দিল্লীতে জ্যোতির সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার তীব্রতায় শুধুমাত্র ভারত একাই কেঁপে ওঠেনি। পৃথিবীর অনেক দেশকে নাড়া দিয়েছিল সে ঘটনা। 'ধর্ষণ' নামের এমন ঘটনা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের জন্য আজকে শুধু না, কোনোকালেই নতুন কিছু না। তাহলে জ্যোতি'র ঘটনায় এতটা আলোড়নের কারণ কি? পরাজয় নিশ্চিত জেনেও যে লড়ে যায় তাকে সংশপ্তক বলে। জ্যোতি যে সংশপ্তক! আলো হয়ে যার ছড়িয়ে যাবার, ছড়িয়ে দেবার কথা ছিল। সে সহজে হার মেনে নেয় না। জ্যোতিও নেয়নি। শেষ পর্যন্ত সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে চেষ্টা করে গেছে। তার উপর ঘটে যাওয়া বীভৎস আচরণের বিচার দাবী করেছে। চলে যেতে যেতেও দেশ জুড়ে প্রতিবাদে ঘন হয়ে ওঠা ঝড়ের কাছে রেখে গেছে আলোর ঠিকানা। আমেরিকান সিভিল রাইটস মুভমেন্ট ইতিহাসে আমরা রোজা পার্কস এবং মার্টিন লুথার কিং এর কাহিনি পড়ে যদি ধারণা করে বসি যে, তাঁদের হাত ধরেই বুঝিবা আফ্রিকান আমেরিকান কালো মানুষগুলো তাদের জন্য অসহনীয় বৈরি সমাজ ব্যবস্হায় শেতাঙ্গদের পাশাপাশি নিজেদের সমান অধিকারের দাবী আদায়ে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে সেটা মারাত্মক ভুল হবে। সে অধিকার আদায়ের দীর্ঘ পথে হেঁটে গেছেন আইডা বি. ওয়েলস্( Ida B. Wells),এলা বেকার (Ella Baker), ডাব্লিউ. ই. বি দু' বয় (W.E.B.Du Bois) সেপ্টিমা পি ক্লার্কসহ(Septima P. Clark)সহ অগণিত মুক্তিকামী মানুষ। লক্ষ্যে পৌঁছানোর মন্ত্রে এঁরা ছিলেন একনিষ্ঠ, অবিচল একেকটা স্ফুলিঙ্গের মত। যার পরিণতি রোজা পার্কস এবং লুথার কিংয়ের মাধ্যমে অগ্নিকুণ্ডের চেহারা পায় এবং কালো মানুষদের জীবনে আসে সমতার আলো( যদিও তা সার্বিকভাবে এসেছে কিনা আজকের দিনেও সেটা প্রশ্নবিদ্ধ, তবে তা ভিন্ন প্রসঙ্গ)।
'৭০ দশকে পুলিশি হেফাজতে আদিবাসী কিশোরী মেয়ে মথুরা ধর্ষণ, কিংবা '৯০ এর ৩০ মে ইউনিসেফের কর্মকর্তাসহ পশ্চিম বাংলা স্বাস্হ্য অধিদপ্তরের দুজন কর্মকর্তা নির্মম গণধর্ষণের স্বীকার ও ইউনিসেফ কর্মীর মৃত্যু পরবর্তীতে ভারতীয় দণ্ডবিধিতে সামান্য পরিবর্তন ঘটেছিল ঠিকই কিন্ত তা সমাজ বদলের ক্ষেত্রে খুব একটা আলোড়ন তুলেনি। জ্যোতি'র দুঃখজনক পরিণতির সাথে প্রায় গোটা ভারতের যুবশক্তি, ভারতীয় নারীবাদী সংগঠনগুলোর দীর্ঘদিন ধরে চেয়ে আসা আইনী সংস্কারের দাবী দাওয়া এমন ভাবে সম্পৃক্ততা পায় যেকারণে আর দশটা 'ধর্ষণ' থেকে এটা ভিন্ন মাত্রা পায়। এমন জোরদার চাপের মুখে 'নারীর প্রতি সব ধরনের অসমতা এবং সহিংসতা প্রতিরোধ' বিলCEDAWএবং DEVAW স্বাক্ষর দানকারী এবং কার্যকরী ভারত তার বিচার ব্যবস্হা সংস্কারে বাধ্য হয়। ধর্ষণের সংজ্ঞাতেও আসে সামান্য পরিবর্তন।
ডানা ভাঙার পুরোনো ইতিহাস
একটা পাখির ডানা ভাঙলে পাখি আর উড়তে পারে না। নারী'র কি ভাঙলে সে ও ভুলে যায়
'আমার মুক্তি আলোয় আলোয়' গাইতে? সেটা হলো মনোবল। মনোবল ভাঙা একজন মানুষ ঠিক যেন ডানা ভাঙা পাখি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর চারপাশে বিধি নিষিধের গণ্ডী কাটতে কাটতে এগোয় আর পদে পদে নারীকে বোঝাতে চায় সে মোটেও পুরুষের সমকক্ষ না। তাকে হাসতে হবে মৃদু লয়ে, দাঁড়াতে হবে কাঁধ ঝুকিয়ে। অর্থাৎ কোনভাবেই যেন একজন নারীর মধ্যে ঋজুভাব না থাকে। কারণ তাতে কেবলই পুরুষের অধিকার। পুরুষ কে? সে মানুষ্যশ্রষ্ঠ, পুরুষ মানেই বীর, অন্নদাতা, নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার হর্তাকর্তা। তার আশ্রয়দাতা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর প্রতি ভাষার রাজনীতি থেকে শুরু করে জীবন ধারণের প্রত্যেকটা বাঁকে বাধা তুলেই সন্তুষ্ট থাকে না। নারী নামের জীবটির ডানা মটকে ভাঙার মোক্ষম আঘাতটি হানে 'ধর্ষণ' নামের নিষ্ঠুরতা দিয়ে। কারণ কিছু পুরুষ ভেবেই নেন নারীর সম্ভ্রম কেড়ে নিয়ে তাকে অসহনীয় একটা জীবন দিতে পারলেই কেল্লা ফতে! খুব একটা ট্যাঁ ফ্যা হয় না তাতে। জ্যোতি'র ছয় ধর্ষকের একজন মুকেশ নামের অমানুষটার মত এ কাজে সক্রিয় যে কোনো পুরুষ তার পৌরুষত্বের প্রতীকটি অসহায় যোনি পথে এগিয়ে নিতে নিতে মুকেশের মত করেই ভাবে '...Just be silent and allow the rape'. কারণ পৃথিবীর সব ধর্ষক এক্ষেত্রে একই ধর্ম মানে। এখানে জাত পাতের বালাই একদমই থাকে না।
নারী মাত্রই ভোগ্য পণ্য, উত্তরাধিকার বলেই পুরুষ নারীকে ভোগের অধিকার রাখে এমন ধারণা অতি পুরোনো। প্রচীন ধর্মগ্রন্থে নারী অপহরণ এবং তার প্রতি যৌন নির্যাতনের উল্লেখ আছে বলা হলেও এ সম্পর্কে তেমন প্রমাণসিদ্ধ তথ্য উপাত্ত না পাওয়ায় এটা তেমন গুরুত্বের দাবী রাখে কিনা তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। গ্রীক মিথিওলজিতে নারী/যুবা অপহরণ কিংবা তার প্রতি যৌনপীড়ন ভীষণ মামুলি বিষয় হিসেবে ওঠে এসেছে। দেবতা শ্রেষ্ঠ 'জিউস' এ কাজে ছিলেন অন্যান্যদের পথিকৃত। তিনি তার পৌরুষত্বের মহিমা সর্ব প্রথম প্রয়োগ করেন 'ইরোপা( Europa) এবং গ্যানিমেড (Ganymede) এর উপর। অনিন্দ্য সুন্দর গ্যানিমেড ছিলেন ট্রয় নগরের স্বর্গীয় বীর। যৌন রঙ্গ তামাশায় ব্যস্ত জিউসের সাত খুন মাফ হলেও থীবসের রাজা লেয়াস(Laius) গ্রীক মিথিওলজির সম্ভবত প্রথম ধরা খাওয়া পাবলিক। ক্রিসিপাস নামের ঈল নগরের স্বর্গীয় বীরের প্রতি পৌরুষত্ব দেখানোর ফলকে প্রথম অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই পাপের শাস্তি হিসেবে অমোঘ অভিশাপে তামা তামা হয়ে যায় লেয়াস তার সন্তান এডিপাস(Oedipus), স্ত্রী জোকস্টা(Jocasta), পৌত্রী এ্যান্তিগোনে (Antigone)সহ পুরো পরিবার। ক্ষমতার অপপ্রয়োগ আজকের সমাজেও সমান তালে ঘটে চলেছে। যে কারণে ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধ করেও পার পেয়ে যায় বিকৃত মনষ্ক অপরাধীরা।
প্রাচীন রোমে সর্বপ্রথম যৌনপীড়নের উদ্দেশ্যে জোরপূর্বক অপহরণকে অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয়। ৩য় খৃষ্টাব্দে একে অপরাধ হিসেবে নথিভূক্ত করা হয়; সম্ভবত জুলিয়াস সিজারের সময়কালে ধর্ষণকে নারী/যুবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যৌনপীড়ন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। হিন্দু মিথিওলজিতেও নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনপীড়নের অসংখ্য ঘটনার বর্ণনা আছে। তাছাড়া উপমহাদেশের 'বহু সমাজ ও সংস্কৃতির মধ্যেই মেয়েদের যৌন অত্যাচারের সম্ভাবনা রয়েছে। মেয়েদের চার দেয়ালের ভেতরে বন্দী রাখার রেওয়াজ পুরুষতান্ত্রিকতা হলেও তাতে মেয়েরা বাইরে বের হলে ধর্ষিতা হবে এমন একটা ভীতি কাজ করেছে বলে মনে করা হয়।' সভ্য হবার এতটা পথ উজিয়ে এসেও এম এল শর্মার মত মানুষদের ভাবনার জগতে তেমন একটা হেলদোল হয় না তাই 'A woman means immediately put the sex in his(man) eyes(হুবহু শর্মার ইংরেজি).' 'কুমারী মেয়েকে যৌনপীড়ন থেকে বাঁচাবার স্বস্তি দায়ক একটা পথ হিসেবে গৌরী দান ব্যবস্হার প্রচলন বলে ধারণা করা হয়। ব্রাহ্মনেরা বিয়ের রাতে পুজার নাম করে নববধূকে স্বামীর কাছে যাবার আগেই ধর্ষণ করতো। উনিশ শতকের শেষদিকে এই প্রথা বন্ধ করা হয়। দক্ষিণাঞ্চলের গরিব ঘরের সুন্দরী মেয়েদের ধর্ষণ অনিবার্য জেনেও মন্দিরের সেবাদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হতো। রাজস্হান ও উত্তরপ্রদেশের কিছু অঞ্চলে নট, রেডিয়া কুঞ্জর ইত্যাদি সম্প্রদায়ের মেয়েদের যৌনসম্ভোগ করার পূর্ণ অধিকার উঁচু জাতের পুরুষদের এখনো চলমান। এক্ষেত্রে মেয়েদের সম্মতি গ্রহণের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। নারীর প্রতি যৌন নিপীড়নের গল্প প্রায় প্রতি আঞ্চলিক সাহিত্যে রয়েছে। চম্বলের ডাকাতরানী ফুলনদেবীর জীবনী পড়লে যৌন অত্যাচারের গভীরতা সম্পর্কে আঁচ পাওয়া যায়।' তাছাড়া লালসালুর আড়ালে ফকির বাবাদের কেরামতিতে কত শত নারীর জীবন ছারখার হয়েছে তার হিসাব সময়ের ধূলোয় চাপা পড়লেও এর সত্যতা অস্বীকারের উপায় নাই।
দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি
ভারত পৃথিবীর একমাত্র দেশ না যেখানে ধর্ষণ বা গণধর্ষণ এর মত জঘন্য কাজটি সংঘটিত হয়-হচ্ছে। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রে এই অন্যায় চলে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। এমনও সমাজ আছে যেখানে ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না। আফ্রিকার কিছু দেশ সোমালিয়া, আইভরিকোস্ট ইত্যাদি অঞ্চলে মেয়েদের প্রাথমিকভাবে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর পুরুষের বীরত্ব চালিয়ে মেয়েটিকে বিয়ের জন্য রাজী করানো হয় বা তার পরিবারের সম্মতি আদায় করা হয়। কোনো কোনো সভ্য দেশের ধর্ষণের গড় মাত্রা রীতিমত চমকে যাওয়ার মত।
কিন্তু 'জ্যোতি'র ধর্ষণ একটা অভূতপূর্ব ঘটনার জন্ম দেয়। আলোর মত করেই যেন সবখানে ছড়িয়ে যায় তার সাহসী লড়াইয়ের কাহিনি। ভারতের সীমানা পেরিয়ে জ্যোতি সবার হয়ে ওঠে। গোটা ভারত জুড়ে আন্দোলন ঝড়ের ঝাপটা লাগে কমবেশি পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলেও। ভারতের মত একটা রক্ষণশীল সমাজে 'ধর্ষণের' মত আপাত নারীর একার সম্মান হারানোর লজ্জা লুকানোর মানসিকতায় না হেঁটে জ্যোতির কন্ঠ ছাড়বার জোরটা, তার হাতধরে ভারতের যুবসমাজের জ্বলে ওঠবার উদ্দাম এবং ফলশ্রুতিতে আইনে সংশোধনের ঘটনা ইসরাইলি বংশদ্ভূত বৃটিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা লেসলি উডউইন(Leslee Udwin)কেইণ্ডিয়া'স ডটার তৈরিতে আকৃষ্ট করে বলে ধারণা। এই তথ্যচিত্রটির মাধ্যমে তিনি মূলতঃ ধর্ষণকারী মুকেশসহ তাদের পক্ষের আইনজীবিদের চমকে যাবার মত মনোভাবটা সমাজকে জানাতে চেয়েছেন। নিজেদের সমাজ সংস্কৃতি কৃষ্টি নিয়ে বড়াইকারী কিছু মানুষ নারী সম্পর্কে আজো যে কতটা হীন ধারণা লালন করেন পরানের গহীন কোণে সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায় 'ইণ্ডিয়া'স ডটার'। মাটির মূর্তিকে মা মা করে হেঁদিয়ে মরা কিছু মানুষ রক্তমাংসের নারীর প্রতি সম্মান দেখাতে এতটাই অক্ষম যে তাদের বলতে বাধে না
We have the best culture. In our culture, there is no place for a woman'( এম এল.শর্মা)
'Women are more responsible for rape than men.'(মুকেশ সিং)
If my daughter or sister engaged in premarital activities and disgraced herself and allowed herself lose face and character by doing such thing, i would most certainly take this sort of daughter or sister to my farmhouse,
and in front of my entire family, i would put petrol on her and set her alight.(এপি সিং)
এই মন্তব্যগুলো কে কোনটা বলেছেন সেটা বলে না দিলে এমনটা মনে হয় না যে এগুলো একই ব্যক্তির মানসিক ভাবনার বহিঃপ্রকাশ? আরো একটু পড়ুন তবে:
Why was she out at 3 o'clock at night — that's too adventurous of her!
এ মন্তব্যটি দিল্লীর প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী Sheila Dixit এর।
অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে এমন মনোভাব পোষণ করা মানুষগুলো শিক্ষিত-অশিক্ষিত, উচ্চবিত্ত-নিম্নবিত্তের সীমারেখা মানেনা। এখানে তারা আশ্চর্যজনকভাবে সাম্যের গীত গায় একই সুরে। আর এ জাতীয় মনোভাব শুধুমাত্র ভারতীয় সমাজে বর্তমান তাও কিন্তু না। এ সুর পৃথিবীর প্রত্যেকটা সমাজে কমবেশি প্রতিধ্বণিত। যে কারণে তথ্যচিত্রটির দেশ পালটে দিলেও প্রায় প্রত্যেকটা দেশের নারী ধর্ষণের মানসিকতা, নির্যাতনের বাস্তবতা একই থেকে যায়। জাতি সংঘ পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে তুরস্কের ৩৩% পুলিশ অফিসার 'কিছু নারীর ধর্ষণ প্রাপ্য' এমন মতামতের সাথে সহমত পোষণ করেন। ৬৬% মনে করেন 'নারী তার চাল চলনের মাধ্যমেই পুরুষকে ধর্ষণে প্রলুব্ধ করে।' জাতিসংঘের আন্তঃদেশীয় জরিপে দেখা যায় বাংলাদেশের ৮২% গ্রামীণ পুরুষ এবং ৭৯% শহুরে পুরুষ এমন ধারণা পোষণ করেন উত্তরাধিকার বলেই একজন পুরুষ নারী ধর্ষণে আগ্রহী হয়। ৮৯.২% পুরুষ জোড়ালোভাবে মনে করেন যদি নারীটি ধর্ষণকালে প্রতিরোধে সক্ষম না হয়/না করে তবে সেটি 'ধর্ষণ' নয়। এমন মনেভাবের সাথে কোথায় যেন মুকেশের ছায়া হেঁটে যায়,
While rape she shouldn't fight back.
যে ভারতে প্রতি ২২ মিনিট অন্তর একটি করে ধর্ষণ সংঘটিত হয় সেখানে এর প্রতিকারের নিমিত্তে সরকার সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের তো উচিৎ ছিল তথ্যচিত্রটা সর্বসাধারণের সামনে তুলে ধরে সবার বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করা। রোগ লুকিয়ে বা গোপন করে তার প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব না। মহামারীর আশঙ্কা তাতে বাড়ে বৈ কমে না। এমন একটা তথ্যচিত্র তৈরি করে লেসলি উডউইন গোটা বিশ্বের সামনে ভারতকে খাটো করতে চেয়েছেন এমনটা মনে হয়নি। কারণ লেসলি যে সমাজে বাস করেন সেখানেও ধর্ষণ যথেষ্ট মাত্রায় বাস্তবতা। আমি নিজে তথ্যচিত্রটি দেখেছি এবং এটাও অনুভব করেছি যে, ভারতের মত বাংলাদেশের নারীদেরও ধর্ষণের শিকার হতে হয়। ঠিক এমনই চলন্তবাসে ধর্ষণের ঘটনা বাংলাদেশের মানিকগঞ্জে ঘটে যায় গত ২৪ জানুয়ারী ২০১৩তে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি আমরা সেভাবে প্রতিবাদের ঝড় তুলে দেশটাকে কাঁপিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছি। পারিনি আক্রান্তের জন্য প্রযোজ্য সেই বৃটিশ আমলের প্রচলিত 'টু ফিঙ্গার টেষ্ট' পরিবর্তনসহ অন্যান্য আইনী সংশোধনে সফলতা দেখাতে। এ ব্যর্থতা সত্যি পীড়াদায়ক। এখানে একটা প্রশ্ন জাগে মনে, ২০১৩'র আন্তির্জাতিক নারী দিবসে যখন যুক্তরাষ্ট্র র্নিভয়া অর্থাৎ জ্যোতি'র অসীম সাহসিকতার জন্য International Women of Courage Award এ ভূষিত করে তখন কি ভারত সরকার এর পেছনে আমেরিকার কোনো রকমের প্রচারণা, ষড়যন্ত্রের অজুহাতে সে সম্মান প্রত্যাখান করে?
নিকট অতীতে বাংলাদেশের একটি নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটে এবং ঘটনাকে ধামাচাপা দেবার জন্য উক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্রী সেটাকে 'মিউচ্যুয়াল সেক্স' বলে অভিহিত করায় অন্তর্জালসহ দেশজুরে যথেষ্ট প্রতিবাদ করার পরও সঠিকভাবে জানা যায় না উক্ত শিক্ষক তার যথাযথ শাস্তি পেয়েছেন কিনা। সভ্য দুনিয়ার আর কোথাও ধর্ষণের শতক হাঁকানোর মত ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটেছে বলে জানা নাই। কিন্তু বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কর্তৃক এমন নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে এবং অপরাধী দলীয় ক্ষমতার সুবিধা নিয়ে থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে! এহেন অপরাধের জন্য যে রাষ্ট্র দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্হা দিতে ব্যর্থ হয়, সে রাষ্ট্রের অবক্ষয় অনিবার্য। এমন একটা ঘুণে ধরা সমাজের একজন হিসেবে আমি তো লেসলি উডউইনকে স্বাগত জানাবো। নিজেদের দীনতা আড়াল করাতে গৌরব নেই। এমন সত্যকে পাশ কাটিয়ে সমাজে কখনোই নারী পুরুষের সমাধিকার ব্যবস্হাকে একটা সম্মান জনক শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করানো সম্ভব না। ২০১৫'তে এসে অন্তর্জালিক অঙ্গনে লক্ষণরেখা টানতে চাওয়াটা আমার কাছে ছেলেমানুষি জেদ বলে মনে হয়। এমন সিদ্ধান্ত যে কোনো সমাজের জন্য খুব ভালো দৃষ্টান্ত না কখনোই। লেসলি উডউইন যদি ভারত সরকারের অনুমতির শর্তভঙ্গ সহ তথ্যচিত্রের আসল ভিডিও ফুটেজ জমা না দিয়ে থাকেন কিংবা কোনোরকম মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আইনী ব্যবস্হার মাধ্যমেই তার মীমাংসা হওয়া বাঞ্ছনীয়। তথ্যচিত্র ব্যান করে এর সমাধান হবে না।
A rape victim is not an Indian's or British's daughter, but is a daughter who has been raped.
এই বাস্তবতা স্বীকার পূর্বক নারী পীড়নের বিরুদ্ধে আওয়াজ জোরদার করা না গেলে সমানে ঘোর অন্ধকার অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
মানুষ নয়, পারিবারিক-ধর্মীয় সম্মান যেখানে বড়
মানুষ সমাজবন্ধ প্রাণী। একটা সমাজ তখনই উন্নত হয় যখন সেখানে মানুষ হিসেবে সবার সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা যায়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্হায় অধিকাংশ সময়ে পুরুষ নিজেই আইন প্রণেতা, প্রয়োগকারীও সে নিজেই। যেকারণে কিছু কিছু সমাজ ব্যবস্হায় নারীদের অবস্হান দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের চেয়েও মানবেতর। পুরুষের বেঁধে দেয়া নিয়ম মেনেই জীবন পার করতে হয় এসব সমাজের নারীদের। পারিবারিক বা ধর্মীয় অনুশাসন ভঙ্গের অজুহাতে এমন সমাজে এক ধরনের কঠোর শাস্তির রীতি প্রচলিত, যা 'অনার কিলিং' বা সম্মান রক্ষার্থে হত্যা নামে আখ্যায়িত। ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় প্রাচীন পুরুষতান্ত্রিক রোমান সাম্রাজ্যে নারীর বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্কের সন্দেহ, ধর্মীয় অনুশাসন পালনে অবজ্ঞা, গোত্রীয় বিধিনিষেধ অমান্য করা ইত্যাদি পুরুষের ইচ্ছাধীন কারণে এই মৃত্যুদণ্ডের রীতি প্রচলিত ছিল। রোমান আইনে দোষী সাব্যস্ত নারী হত্যার বিষয়টা সিদ্ধ ছিল। সাধারণত পরিবার প্রধান হিসেবে স্বামী এ হত্যার দায়িত্ব পালন করতেন। চীনের চিং ডাইনেস্টিতেও এই রীতি চালু ছিল বলে জানা যায়। সেখানেও স্বামী বা বাবা এই হত্যা কাণ্ডের দায়িত্ব পালনে ভূমিকা রাখতেন। এছাড়া আমেরিণ্ডিয়ান, এ্যাজেটক, ইনকা ইত্যাদি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যেও এরকম হত্যা কাণ্ড বৈধ বলে বিবেচিত ছিল।
বর্তমানে মিশর, জর্দান, লেবানন,মরক্কো,পাকিস্তান, ইণ্ডিয়া ইরাক, ইরান, সৈদি আরব, সিরিয়া, তুরস্ক, ইয়েমেন,ভূমধ্য সাগর এবং গলফ সাগরীয় অঞ্চল, ইসরায়েল, আফগানিস্তান, ব্রাজিল, ইকুয়েডর, উগাণ্ডা, গ্রেটবৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মান, ইতালি, সুইডেন, কানাডা ইত্যাদি দেশে অনার কিলিংয়ের নামে নারীর বিরুদ্ধে সব রকমের অসমতা এবং সহিংস আচরণ প্রচলিত রয়েছে। দেশগুলোর অনেকেই CEDAW(Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination against Women) এবং DEVAW(Declaration on the Elimination of Violence against Women)
বিলে স্বাক্ষরদানকারী দেশ। এইসব দেশে নারীর বিরুদ্ধে এমন হত্যাকাণ্ড কি জাতি সংঘের বিলে স্বাক্ষরের পরিপন্থী নয়? এমন বিলে গোটা পৃথিবী ঢেকে দিয়েই বা লাভ কি যদি নারী তার স্বাধীনতা ভোগ করতে না পারলো? নিরাপদ একটা জীবনের দাবীদার সমাজে কেবল মাত্র পুরুষরাই না, নারীরও তাতে সমান অধিকার।
চলতি মাসেই সৌদি আরবে এক নারী ধর্ষণের স্বীকার হলে তাকেই উল্টে দোষী সাবস্ত্য করে দণ্ড দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ধর্ষণের পর সাজা খেটে আসবার পর ভুক্তভুগী নারীর মানসিক অবস্হা বিবেচনায় না এনে ধর্ষণকারীকে বিবাহে বাধ্য করা হয়। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেয়া হয় একজন নারী সমাজের বেঁধে দেয়া অনুশাসনের বাইরে গিয়ে নিজের মত করে বাঁচতে চায়। এই চাওয়াটা কি খুব বড় পাপ? তার জন্য মৃত্যু দণ্ডের মত এমন কঠিন শাস্তির বিধান কেন? আর তা একা কেন নারীকেই ভোগ করতে হবে? পবিত্র কোরানে এমন শাস্তির বিধান ঠিক কোথায় বর্ণিত আছে একজন মুসলমান হিসেবে আমি জানতে আগ্রহী। জাতি সংঘ পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা যায় প্রতি বছর অনার কিলিং এর নামে গোটা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৫০০০ জনকে হত্যা করা হয়। দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার নারীবাদী সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী এই সংখ্যা প্রায় ২০.০০০। মানুষের জন্যই পৃথিবীময় এত সব আয়োজন। রাষ্ট্র, বলি, সমাজ বলি, সংসার কিংবা ধর্ম, সব। সেখানে যদি মানুষকে ছোটো করে আনুসাঙ্গিক বিষয় এবং অনুশাসনকে বড় করে তোলা হয় তবে তো বিপদের কথা।
শোবার ঘর থেকে আদালত প্রাঙ্গণ
ধর্ষণ সম্পর্কে উপমহাদেশীয় সমাজসহ আরো কিছু সমাজে যে ধারণাটি মোটামুটি প্রচলিত
তা হচ্ছে, ধর্ষিতা এবং ধর্ষণকারী এরা পরস্পরের সম্পূর্ণ অপরিচিত এবং ধর্ষণটি সংঘটিত হয় বাড়ির বাইরে। এই মাইণ্ডসেটের বাইরে গিয়ে কিছু মানুষ ভাবতে একদম নারাজ যে, স্বামীর হাতে নিজের শোবার ঘরেই একজন নারী ধর্ষিতা হতে পারেন।
যে কারণে বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই এখন পর্যন্ত দাম্পত্য ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়নি। 'বাংলাদেশ ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টারের হিসাব অনুযায়ী, যারা কাউন্সেলিংয়ের জন্য আসেন তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ ‘দাম্পত্য কনফ্লিক্ট’ বিষয়ে কথা বলেন। এককভাবে সমস্যাগুলোর কথা শুনলে যৌন আচরণগত সমস্যার বিষয় আসলেও সেটাকে দাম্পত্য ধর্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় না। দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩৭৫ ধারায় আইনের ভাষায় ধর্ষণের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তাতে ধর্ষকের ভূমিকায় স্বামীকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি (যদি মেয়েটির বয়স ১৩ বছরের নিচে না হয়)। অর্থাৎ স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করা স্বামীর জন্য কোনও অপরাধ নয়। যদিও আমাদের আইনে ১৮ বছরের নিচের কোনও মেয়ের বিয়েই আইনত বৈধ নয়।'
জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯ ও শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯ এর স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নারী ও শিশুর সমঅধিকার নিমিত্ত পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ, পারিবারিক সহিংসতা হতে নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের ধারা ৩ মতে, পারিবারিক সহিংসতা বলতে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে এমন কোনও ব্যক্তি কর্তৃক পরিবারের অপর কোনও নারী বা শিশু সদস্যের ওপর শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন অথবা আর্থিক ক্ষতিকে বোঝায়। সুতরাং, নারীকে শুধু শারীরিকভাবে নিপীড়ন নয়, বরং মানসিক অত্যাচার, যৌন নির্যাতন এবং আথির্কভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হলে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইনের অধীনে স্বামী এবং স্বামীর পরিবারের যে কেউ অভিযুক্ত হবেন।
আইসিডিডিআরবি এর এক সমীক্ষা বলছে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের ৩৭% নারী কোনো না কোনো সময়ে স্বামীর হাতে যৌনপীড়নের স্বীকার হয়েছেন। জরিপে মাত্র ১০% পুরুষ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন। পুরুষদের কাছে প্রশ্ন রাখা হয় যে তারা এমন আচরণ কেন করেন? ৮০% পুরুষই মনে করেন তাদের স্ত্রীদের উপর তাদের সীমাহীন যৌন অধিকার রয়েছে। জাতি সংঘ পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্বামী কর্তৃক স্ত্রী নির্যাতনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবচে' এগিয়ে থাকা দেশ। বাংলাদেশে ৪৭% , ভারতে ৩৪% নারী স্বামী দ্বারা নির্যাতিত হন। আফ্রিকার দেশ গিনিতে এমাত্রা আরো ভয়াবহ, ৭৩%। জাতি সংঘের এই সমীক্ষানুযায়ী ৪২ দেশের অর্ধেকের বেশি দেশে প্রতি ৩ জনে ১ জন করে নারী স্বামীর মাধ্যমে যৌন এবং মানসিক পীড়নের শিকার।
ভারতে জাতীয় অপরাধ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১২'র বিচারাধীন ৩৮.১৪৪টি ধর্ষণ অভিযোগের মধ্যে ১.৮% ধর্ষিতা ধর্ষণকারীকে চিনতেন না বলে জানান। অর্থাৎ সিংহভাগ অভিযোগের ক্ষেত্রেই ধর্ষণকারী ধর্ষিতার বিশ্বাসভাজন বা আত্মীয়। সঙ্গতভাবেই আঙ্গুলটি স্বামীর দিকেই যায়। এমন পরিস্হিতিতেও ভারতে কেন দাম্পত্য ধর্ষণের কোনো আইনী স্বীকৃতি নাই এমন প্রশ্নে বহুদিন থেকেই সোচ্চার সেখানকার নারীবাদী সংগঠনগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবমতে যেসব মহিলা ধর্ষণ বিষয়ে অভিযোগ করেন তাদের মাত্র ২% বলেন যে তারা অপরিচিত ব্যক্তি কৃর্তক ধর্ষিতা হয়েছেন। সহজেই অনুমান করা যায় এসব নারীরা তাদের ঘরের মানুষ দ্বারা ধর্ষিত হয়ে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম দাম্পত্য ধর্ষণকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়। এ ছাড়াও আরো অনেক দেশই দাম্পত্য ধর্ষণকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসবে গণ্য করে।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ বহুদেশে, মেয়েদের খুব কম বয়সে বিয়ে দিয়ে বরং তাদের দাম্পত্য ধর্ষণের দিকে ঠেলে দিয়ে আইনী স্বীকৃতি দেয়া হয়। এই মেয়েগুলোর কোনো রকমের সেক্সচুয়াল এডুকেশন তো দূরের বিষয়, সাধারণ শিক্ষাও অনেক ক্ষেত্রে থাকে না। শিক্ষা বিহীন এসব নারীই শুধু না শিক্ষিত নারীরাও স্বামী কর্তৃক ধর্ষিতা হয়েও লোক লজ্জার ভয়ে কিংবা সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবে এসব পীড়নের বিষয়টি গোপন করেন। যার পরিণতিতে এর মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ধর্মীয়ভাবে বাংলাদেশ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ট দেশ হওয়ায় দাম্পত্য ধর্ষণকে ধর্ষণ হিসেবে দণ্ডণীয় অপরাধের আইনী ছাড় দেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থাকলেও হালে এসব নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়া একটা ইতিবাচক মোড় হিসেবে ধরা যায়। এই আলোচনার পাশাপাশি নারী পুরুষ উভয়েরই সেক্স এডুকেশনের উপর জোর দেয়াটাও জরুরী। একজন পুরুষের যৌন আকাঙ্খার ধাঁচ একজন নারীর আকাঙ্খার চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। নারীর এক্ষেত্রে কিছু সময় প্রয়োজন হয়। এই বিষয়ে অজ্ঞ পুরুষটি সঠিক সময়ের তোয়াক্কা না করে স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজের চাহিদা পূরণে উদ্যোগ নিয়ে থাকেন। যা রীতিমত ধর্ষণ। এমন জোরপূর্বক যৌন চহিদা পূরণের আরো নানান কারণ থাকতে পারে। তাই, মনে করি এজন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নাই। সেক্স বিষয়ে ছ্যুৎমার্গ বা সেক্স সম্পর্কে কেন আমি প্রকাশ্যে আলোচনায় যাবো, অংশ নেবো, ইত্যাদি মনোভাব নিয়ে বসে থাকা আমরা ধর্ষণের শিকার নারীর রগরগে খবর লিখতে, পড়তে লজ্জা পাই না। যত লজ্জা এসে ঘিরে ধরে সেক্স এডুকেশনের ক্ষেত্রে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও দেখুন
দাম্পত্য ধর্ষণ কে পৃথিবীর কোনো কোনো দেশ দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। আবার অনেক দেশে একে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়না। একটি নমুনা চিত্র দেয়া হলো, যা দেখলে এ বিষয়ে কোন দেশ কতটা গুরুত্ব দেয় স্পষ্ট হবে। ছবি: সূত্র উইকি
এসো বজ্র হয়ে বিদ্ধ করি
ধর্ষণ যে কোনো সমাজ, রাষ্ট্রের জন্যই একটি পীড়াদায়ক বাস্তবতার নাম।পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে একটা সমাজ এধরনের বিকৃত নির্যাতনে কতটা আক্রান্ত
তার সঠিক চিত্রটা পাওয়া অনেক সময়ই কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ অনেক রাষ্ট্রেই নারীর জন্য নানামুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে এ বিষয়ে ভয় কিংবা লজ্জায় নির্যাতিতা নারী/মেয়ে/কিশোরী মুখ খুলতে চান না। সৌদি আরবসহ অনেক দেশের ধর্ষণের পরিসংখ্যান যে কারণে বেশ কম দেখায়। তবে সংখ্যা যাই হোক, বাস্তবতা হচ্ছে এই ঘটনা দেশে দেশে নিরন্তর ঘটে যাচ্ছে। জাতিসংঘের নারীর প্রতি সবধরনের অসমতা ও সহিংসতা প্রতিরোধ বিলে স্বাক্ষর দেবার পর কার্যত ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়া রাষ্ট্রগুলোতে নিরন্তর নারীর বিপক্ষে ঘটে যাওয়া সহিংসতা প্রতিরোধের ইচ্ছা নিয়ে বসে থাকলেই হবে না। তার প্রয়োগে আন্তরিকতা দেখতে চাই। চাই ধর্ষকের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির নিশ্চয়তা। ধর্ষণ পুরুষের একরকমের যৌন বিকারগ্রস্হতা যা প্লেগ, গুটি বসন্ত ইত্যাদি মহামারীর মত করে হয়ত পৃথিবীছাড়া করা সম্ভব হবে না। কিন্তু সেভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে এর মাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমবে বলে বিশ্বাস রাখি। কারণ এক্ষেত্রে অধিকাংশ শুভবুদ্ধি সম্পন্ন পুরুষই নারীকে তার চলার পথের সঙ্গী হিসেবে একজন মানুষ হিসেবেই ভাবেন, সম্মান করেন। এঁদের মত মানুষেরা আছেন বলেই পৃথিবী এখনো নারীর বাসযোগ্য স্হান। তাই ভরসা রাখি কিছু অসুস্হ মানুষ তাদের বীভৎস আচরণ দিয়ে সভ্যতার এই শতককে যতই টেনে হিঁচড়ে মধ্যযুগে নেবার চেষ্টা করুক না কেন, শুভ বুদ্ধির মানুষদের সাথে নিয়ে আমরা সে প্রচেষ্টাকে রুখতে সক্ষম হবো।
শেষের কথা
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত নারী সম্পর্কিত চিন্তা ভাবনায় যথেষ্ট অাধুনিক ছিলেন। এঁরা স্পষ্ট বুঝেছিলেন নারীর শিক্ষা একটা সমাজকে কতটা এগিয়ে নিতে সক্ষম। নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে তাঁদের ভাবনা আজকের দিনে যে কতটা সত্যি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে নারী সন্তান ধারণের মত একটা দীর্ঘ কষ্টকর প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে সক্ষম, তাঁকে দুর্বল ভাবাটা শুধু বোকামিই না অসম্মানজনক। একটা রাষ্ট্র, সমাজ, নারী পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই উন্নতির মহা সড়কে গিয়ে ওঠে। এই মহা সড়কে পৌঁছাবার জন্য নারী শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রতি আরো বেশি জোড় দেয়া জরুরী। নারীর নিজেরও নিজের শক্তির উপর আস্হাশীল হওয়া চাই। এই বিশ্বাসটা থাকা চাই, আজকের পৃথিবীতে শুধু পুরুষেরই না, নারীরও অসাধ্য কিছু নেই। নারীকে ভোগের বস্তু হিসেবে না ভেবে মানুষ হিসেবে দেখবার মানসিকতা বিকারগ্রস্হ পুরুষদের মগজের ভাঁজে ভাঁজে গেঁথে দেবার পথটা খুঁজে বের করা দরকার। আসুন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা 'মনুষ্যত্ব' বাঁচাতে সচেষ্ট হই।
-----------------
উৎসর্গ: বাবা, ছোটকু, ভাইয়া, প্রিয় বন্ধু ম্যাক্স, দিএকলহমা, হারুনভাই সহ তাঁদের সবাইকে, যাঁরা নারীকে মানুষ হিসেবে সম্মান করেন।
কৃতজ্ঞতা: সুলতানা সাদিয়া
----------------
তথ্যসূত্র:
১। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (বাংলাদেশ)
২। দাম্পত্য ধর্ষণ- বাংলা ট্রিবিউন
৩। History of sex -Wikipidia
৪।Criminal law Amendment Act 2013 - wikipedia
৫।Honor killing - wikipedia
৬। Marital rape(graphic image)-wikipedia
৭। 2012 Delhi gang rape-wikipedia
৮। Domestic violence in the Asian Indian context- Shamita Das Dasgupta
৯। rape statistics January-september 2013- Ain o Salish Kendra(ASK)
১০। UN study looks at high rate of rape
১১। rape statistics- wikipedia
১২। Nirbhaya documentary banned by ministry of home affairs
মন্তব্য
পোস্টে পাঁচতারা।
কৃতজ্ঞতার জন্য হাজার তারা।
আগে কাজের কথা বলে নেই,
তথ্যটি সংশোধন প্রয়োজন, আমাদের আইনটি এতখানি সুশীলও নয়, আমার জানামতে দণ্ডবিধির সর্বশেষ সংশোধনী মতে, এই বয়সসীমা তের বছর, দণ্ডবিধির এই ধারাতে ব্যতিক্রমে আছে,
তবে আশার কথা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধনী, ২০০৩) এ এই মাসের মধ্যেই একটি সংশোধনী প্রস্তাব আনবার কথা, যেখানে আশা করি দাম্পত্য ধর্ষণ অন্তর্ভুক্ত হবে (এখানে সম্ভবত বয়স ১৬ হতে পারে তের’র স্থলে, এর চেয়ে বেশি কিছু হবে না, হেহেহে)।
আয়নামতি, তুমি এত কষ্ট করেছো! দারুণ! পোস্টটা পড়ে, এর পরিধি দেখে আমারেএত ভাল লাগছে। ভিডিওটা দেখে মজা পাইলাম। আলোয় ভরে উঠুক পৃথিবী। ভালো থেকো।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
পেজগি লেগেছে আপু(শিরোনামে ভুল ছিল কিন্তু )! ছাগল দিয়ে কি আর হাল চাষ হয়। তোমরা বিজ্ঞজনেরা লিখবে না।
তাই আমি পালোয়ান ছায়ার সাথে কুস্তি লড়েছি হয়ত। বয়সের ওটা ঠিক করেছি। ভুলভাল পাবে আরো।
কালকে ঠিক করে দিবো ভুল গুলো। আপাতত তোমাকে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা, ভালুবাসা সব কিছু জানিয়ে গেলাম।
ঘুমাই গিয়ে এখন।
এরকম একটা পরিশ্রমী লেখা সার্থকতা না পেয়ে যায় না। আপনাকে অনেক সাধুবাদ। আমরা নারীরা ঘরে বাইরে চিরকাল ভোগের বস্তু হয়েই থেকে গেলাম। দাম্পত্য ধর্ষনের মত একটা ইস্যু এদেশে আগে কেউ আনেনি। ভুক্তভোগি ছারা আর কেহ বুঝবে না এর মরম যাতনা।
ইনডিয়া ডটার নিয়ে দুটো কথা। নারীর প্রতি সহিংসতাকে পুঁজি করে সিনেমাটি বানানো হয়েছে। কিন্তু সহিংসতার পক্ষের মানুষদের বক্তব্য প্রাধান্য পাবার কারনটা কি ইচ্ছাকৃত কিনা বুঝা গেল না। জ্যোতির সেদিনের সংগি বন্ধুটিও সিনেমার উদ্দেশ্যকে ভালো চোখে দেখেনি। অবনীন্দ্র পান্ডে গত সপ্তাহে এক সাক্ষাতকারে ছবিটাকে ভুয়া বলে আখ্যায়িত করেছে। ব্যাপারটা একটু গোলমেলে মনে হয়েছে।
-স্বাতি
এই বিশাল লেখা যত্ন নিয়ে পড়েছেন এটা এ লেখার সার্থকতা বৈকি। নারীকে সম্পূর্ণ মানুষ ভাবতে পারার মধ্যেই সার্বিক সার্থকতা, এটা যদিও সোনার পাথর বাটি। তবে অধিকাংশ পুরুষ এমন ভাবনার শরিক হলে রূপার বাটি হওয়া খুব সম্ভব!
'সেদিন আর কতদূরে' জানা নেই স্বাতি। দাম্পত্য ধর্ষণের বিষয়টা আসলে কিছু লেখা/মুভি পড়ে/দেখেই ভাবনায় আসে।
ভুক্তভোগীরা যদি এ বিষয়ে ছাড় না দিয়ে সরব হন তবে কিন্তু কিছুটা হলেও কম হয় এসব।
-----
ইণ্ডিয়া'স ডটার নিয়ে নানান তর্ক বিতর্ক দেখে শুনে ক্লান্ত হয়ে গেছি। সহিংসতা যদি কোনো সমাজের বাস্তবতা হয় তাকে অস্বীকারে কোনো লাভ নাই, বরং ক্ষতির সম্ভাবনা। আজকে দেশে মৌলবাদ বলেন কিংবা জামাতী ক্ষমতায়ন বলেন সেগুলোর মূলেও আমাদের উন্নাসিকতাই দায়ী। কাজেই ইণ্ডিয়া'স ডটারে ধর্ষকদের গ্লোরিফাই করবার বিষয়টা সঠিক না বলেই মনে করি। ঐ ভদ্রলোকের খবরটা আমিও পড়েছি। যেহেতু আমার ফোকাস অন্যকিছু ছিল তাই ওসব এড়িয়ে গেছি।
এ বিষয়ে কয়েকজন সাংবাদিকসহ জাভেদ আখতারের বক্তব্যের সাথে আমি পুরোপুরি একমত। আপনি আগ্রহী হলে ইউ টিউবে দেখে নিতে পারেন। অনেক ধন্যবাদ স্বাতি।
দুর্দান্ত পোষ্ট ! এই বিপুল শ্রমসাধ্য কাজটি করার জন্যে আন্তরিক অভিবাদন জানিয়ে দিচ্ছি আয়নামতিকে!!
আইন করে ধর্ষন পুরোপুরি নির্মুল না করা গেলেও অন্তত তাতে রাশ টেনে ধরা যাবে বলে মনে হয়। আসল ব্যাপারটা হল ধর্ষনের মূল হোতা পুরুষদের মানসিক সংগঠনে ও সংবেদনে পরিবর্তন আনা। সেইটে করতে হলে শিক্ষার বিকল্প কিছু নেই।
শুভেচ্ছা অফুরান!!
এ বিষয়ক লিখালেখি ঠিক কষ্টের(পরিশ্রম অর্থে) না ভাইয়া, বরং বিষয়টা এড়িয়ে যাবার প্রবণতা কষ্টদায়ক(যাতনা অর্থে)।লিখে কিছু আসবে যাবে কিনা জানিনা। তবে নিজেদের স্বার্থেই লিখে যেতে হবে। দীর্ঘ বিরক্তিকর ঘ্যানঘ্যানে পোস্টটা আন্তরিকতার
সাথে পাঠ করবার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আপনাকে। শুভেচ্ছা ।
লেখায় ৫ তারা অবশ্যই। আরও যে কতকাল মেয়েদের এই পিশাচ-মানুষিক অত্যাচার সয়ে যেতে হবে কে জানে! হয়ত তিল তিল করে জমা এই রকম প্রতিবাদ-প্রতিরোধগুলোই আস্তে আস্তে শাসনযন্ত্রকে কাজে লাগাতে পারবে এই নৃশংসতার উপর লাগাম টানতে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
বানানের ভুলসহ কিছু বিষয় ধরিয়ে দেবার জন্য তোমাকেও হাজার তারা দাদাই!
তোমার প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নাই। যাদের জানা আছে তাদের বোধের ঘরে শুভবুদ্ধির জন্ম হোক।
এতদিন ডকুমেন্টারিটা দেখিনি কেবল খারাপ লাগবে বলে। কাল ইউটিউব খুঁজে পুরোটা না পেয়ে আলাদা করে এম এল শর্মা’র সাক্ষাৎকার দেখলাম। লোকটার আচরণ এমন জানোয়ারসুলভ কেন? খুব দুঃখিত এই ভাষার ব্যবহারে।... আর পোস্টটা খুব ভালো, তথ্য, উপস্থাপনা সব।
দেবদ্যুতি
শুধু খারাপ লাগা না; ঘেন্নায়-লজ্জায়- কান্নায়, মাখামাখি হয়ে পুরোটা দেখেছি।
যার যা প্রাপ্য তাকে তাই দেয়া দরকার। এতে কুণ্ঠিত হওয়ার কিছু নেই।
হাসিবভাই এটার লিংক দিয়েছিলেন। যদি মন শক্ত করতে পারেন তবে দেখতে পারেন।
ধন্যবাদ দেবদ্যুতি।
দুর্দান্ত একটি লেখা।
আসুন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা 'মনুষ্যত্ব' বাঁচাতে সচেষ্ট হই.........
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
ধন্যবাদ তাহসিন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
লেখাটার মন্তব্যের কলেবর এতই বৃহৎ হলো যে একটি পোস্টের সমানই দাড়িয়ে গেল। তাই ভাবছি ওটাকে ঘসে-মেজে একটা লেখাই নামিয়ে ফেলি।
হ্যাঁ, এই লেখাা কিন্তু দারুণ হয়েছে।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনা পোস্ট দেখেছি। সময় সুযোগ মত পড়ে ফেলবো।
অসাধারণ পোস্ট :-)
ধন্যবাদ জলছবি।
ডকুমেন্টারিটা একবারে দেখে শেষ করতে পারি নি, রাগে, ঘেন্নায়, কষ্টে। তার পরপরই খাগড়াছড়ির আদিবাসী মেয়ে, ঢাকার কাশ্মিরি মেয়েটার খবর চোখে পড়ল। কি বলব, নপুংশকের দল চারপাশে।
এমন পোস্ট আরো চাই দিদি।
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
কয়েকটা দিন একেবারেই সব কিছুর বাইরে থাকায় খাগড়াছড়ি কিংবা কাশ্মিরি মেয়ে'র ঘটনা জানা নাই বলে দুঃখ প্রকাশ করছি। কেমন আজব না? আমাদের চারপাশে কিছু মানুষ(!) আমার, কিংবা তোমার, অথবা অন্য কারো উপর ঝাপিয়ে পড়বে বলে ওৎ পেতে থাকে! কেমন অবশ লাগে এমন ভাবনায়।
----
এ বিষয়ে সবারই মুখরা হওয়া জরুরী । ধন্যবাদ গান্ধর্বী।
এমন একটা লেখা পড়ে আ্পনার প্রতি অভিবাদন জানালাম। অনেক তথ্যবহুল ও চমতকার একটি লেখা। ধর্ষন এমন একটি অস্ত্র যা শুধু নারীকে ধংসই করেই দেয় না, সমাজকে পঙ্গু করে দেয় ভেতর থেকে আর এই কাজটা কিন্তু আমরা পুরুষরাই করছি।
আসুন হাতে হাতে রেখে চলতে শিখি পরিবর্তনের অঙ্গীকারে।
----------
রাধাকান্ত
বিশাল পোস্টখানা খুঁজে পড়েছেন এবং সহৃদয় মন্তব্য করেছেন সেজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ নিন রাধাকান্ত।
নতুন মন্তব্য করুন