মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা লিপিবদ্ধে যে কোন বিভ্রান্তি ইতিহাসঘাতী হতে পারে

আয়নামতি এর ছবি
লিখেছেন আয়নামতি [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ২১/০৪/২০১৫ - ১২:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। ইতিহাসে তাই এই সালটিই শুধু নয় এর সাথে জড়িত ছোটো বড় সব ঘটনারই রয়েছে এক স্মরণীয় ভূমিকা। এর বিরুদ্ধ পক্ষের জন্য আমাদের চরম ঘৃণার পাশাপাশি পক্ষে থাকা মানুষদের জন্য অপরিসীম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানানোটাই শেষ কথা না। বরং তাঁদের সবার ভূমিকা, তা যত গৌণই হোক না কেন লিপিবদ্ধ করার ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরী ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় এক্ষেত্রে যতটা সচেতনতা প্রকাশের প্রয়োজন ছিল তা কার্যত দেখানো হয়নি। যেকারণে মুক্তিযুদ্ধের অনেক মূল্যবান দলিল হবার যোগ্য ঘটনার পাশাপাশি অনেক অকুতভয় মানুষের কাহিনি তাঁদের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেছি।

এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ক্ষেত্রে শুধু নয়, আগামী প্রজন্মের জন্যও বিরাট ক্ষতি। এই ক্ষতি অপূরণীয়। তাই বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের যেসব ঘটনা/কাহিনি জানা সম্ভব, তা যত গৌণই হোক, সেগুলো যথাযথভাবে সর্তকতার সাথে লিখে ফেলা আমাদের লক্ষ্য হওয়া দরকার। একই ব্যক্তির কাহিনি লিপিবদ্ধ করবার ক্ষেত্রে যেন নানা ঋষির নানা মতের বিভ্রান্তি ঘটে না যায়, সে বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন থাকা বাঞ্ছনীয়। মনে রাখা প্রয়োজন, সংশ্লিষ্ট ঘটনা, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কিংবা ব্যক্তির নিজের যুদ্ধের বর্ণনা কোনো রাম শ্যাম যদু কিংবা মধুর 'কেরাসিন ফুরাইয়া গেছে বউ কইলো কিনন্যা আনো' জাতীয় গালগপ্পো না। এটি মুক্তিযুদ্ধের মতো অবিস্মরণীয় ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত সময়ের ঘটনা। গল্প উপন্যাস হলেও এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনার বিকৃতি না ঘটানোই কাম্য।

খুব সম্প্রতি এক সাহসী মুক্তিযোদ্ধা নারীর কাহিনি পড়তে গিয়ে আমার এরকম কিছু বিভ্রান্তির অভিজ্ঞতা হওয়ায় এ বিষয়ে কিছু লিখবার প্রয়োজন বোধ করছি। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া মানুষদের যথেষ্ট বয়স হয়েছে, স্মৃতি তাঁদের সাথে প্রতারণা করতেই পারে। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় তা উল্লেখপূর্বক ঘটনার বর্ণনা লিপিবদ্ধ করলে পাঠক বিভ্রান্তি এড়াতে পারেন। আমাকে এ বিষয়ে কী ধরনের বিভ্রান্তির মুখে পড়তে হয় আসুন দেখা যাক।

নাম নিয়ে বিভ্রান্তি:

নাম দিয়ে একটা মানুষকে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় এই মুক্তিযোদ্ধা নারীর নাম নানান ভাবে লেখা হয়েছে।

১. সেলিনা হোসেনের "ঘরগেরস্হির রাজনীতি(প্রথম প্রকাশ:২০০৮)", গবেষণা ধাঁচের বই "আমি নারী আমি মুক্তিযোদ্ধা"(সেলিনা হোসেন সম্পাদিত, প্রকাশ:২০০৪) রোকেয়া কবীর ও মুজিব মেহদী'র "মুক্তিযুদ্ধ ও নারী(প্রথম প্রকাশ:২০০৬)" বইগুলোতে এই মুক্তিযোদ্ধা নারীর নাম 'সখিনা বেগম' হিসেবে উল্লেখ আছে।

২. মালেকা বেগমের লেখা 'মুক্তিযুদ্ধে নারী' আমাদের কিশোরগঞ্জ২০১১, ৫ ডিসেম্বর
দৈনিক ইত্তেফাক ২০১৪,১৫ ডিসেম্বর পত্রিকাসহ আরো কয়েকটি পত্রিকার কলামে তাঁকে 'সখিনা খাতুন' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

৩. দ্য রিপোর্ট টোয়েন্টি ফোর ২০১৪, ১৬ ডিসেম্বর ডটকমের রিপোর্টার মুহম্মদ আকবর তাঁর নাম 'সখিনা বিবি' বলে উল্লেখ করেছেন। এখন কিভাবে বিচার করবো সঠিক নাম কোনটি?
যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার নাম সংক্রান্ত একটা ত্যানা প্যাচানির উদাহরণ এসব ক্ষেত্রে ঠিক হবে না হয়তো, তবু ‘হোয়াটস ইন অ্যা নেইমে’র ভাবালুতা এসব ক্ষেত্রে থাকা উচিৎ না বলেই মনে করি।

মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের তথ্যে ভিন্নতা:

সখিনা বেগম/খাতুন/বিবি'র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়ে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।

১. সেলিনা হোসেন রচিত "ঘরগেরস্হির রাজনীতি" বইতে সখিনা বেগমের যুদ্ধে অংশ গ্রহণের বিষয়টা এসেছে এভাবে,

তিনি(সখিনা বেগম) কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলি থানার গুড়ুই গ্রামের অধিবাসী। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের অত্যাচারে যখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্মগ্রাম, তখন তিনি একটি দা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে তাঁর স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে সখিনা একবস্ত্রে সেই সংসার ত্যাগ করে বেড়িয়ে আসেন।"

২. "মুক্তিযুদ্ধ ও নারী" বইটিতেও সখিনা বেগমের যুদ্ধে যোগাদানের বিষয় কিছুটা এমনই।

৩."আমি নারী আমি মুক্তিযোদ্ধা" কিন্তু একটু অন্যভাবে বলছে সে ঘটনা,

সখিনার কৈশোর কেটেছে পাকশাসকদের শোষণ আর নির্যাতনের কথা শুনতে শুনতে। তিনি শুনেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে ঢাকা রাজপথ রঞ্জিত করেছেন এদেশের যুবকেরা। যুবতীরা তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, আগলে রেখেছেন ছায়ার মতো। গ্রামের সরল কিশোরীর মনে ঘৃণার বীজ রোপিত হয় পাকিস্তানী শাসনের বিরুদ্ধে। পাকজান্তাদের বিষদাঁত ভেঙে দেবার অদম্য প্রত্যয়ে যুদ্ধ শুরুর সাথে সাথেই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। পাকসেনা আর এদেশের দালালদের অত্যাচারে বিপন্ন হয়ে পড়ে সখিনার চিরচেনা জনপদ। প্রত্যয়দীপ্ত সখিনা শরণার্থী হিসেবে আসামে চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের চেষ্টা করেন। আসামে সুযোগ না পেয়ে তিনি ফিরে আসেন নিকলীতে। স্হানীয় বসুবাহিনীর অধীনে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কাজ শুরু করেন।"

৪. 'আমাদের কিশোরগঞ্জ' পত্রিকার কলামে বর্ণিত হয়েছে এভাবে

" আমি মুক্তিযুদ্ধে যাই মতির জন্য। মতি আমার বুকের ধন। আমার বইনের ছেলে। মতি, মানে মতিউর তখন ২৫ বছরের যুবক। আমাদের এলাকার কমান্ডার বসু এসে মতিউরকে বলল, 'পাক বাহিনী আইসে পড়ছে। যুদ্ধে যাইতে হইব।' এই কথা শুনে আমার বুকের ভেতরডায় মোচড় দিয়া উঠল। কন কী! বইনের একমাত্র ছেলে। যুদ্ধ করতে গিয়া যদি মইরা যায়! তখন কী হইব! আমরা বাঁচমু কেমনে! এইডা ভাবতে ভাবতে আমার মনের মইধ্যে কেমন য্যান দিশাহারা লাগতাছিল। কী করমু ভাইবা পাইতেছি না। কিছু না ভাইবাই আমি কমান্ডাররে গিয়া কইলাম, মতি না, আমি যুদ্ধে যামু। তিনি বললেন, 'তুমি মাইয়া মানুষ, যুদ্ধে গিয়া কী করবা!' আমি কইলাম, 'আপনারা যা কন তা-ই করমু। নইলে গোয়েন্দাগিরি করমু।' কমান্ডার বললেন, 'তুমি পারবা? আমার চোখের মইধ্যে মতির মুখডা ভাইসা উঠলো। মতিরে বাঁচাইতে হইব। আমি কইলাম, 'পারমু না ক্যান! না পারার তো কিছু নাই।' এইভাবে জড়ালাম মুক্তিযুদ্ধে।"

মুক্তিযুদ্ধে সখিনা বেগম/খাতুন/বিবি'র ব্যবহৃত 'দা' যা বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রাখা আছে। দা'টিতে নামফলক হিসেবে 'সখিনা বিবি' লেখা রয়েছে বলে আকবর মুহম্মদ উল্লেখ করেন, এমনটা হয়ে থাকলে নাম নিয়ে বিভ্রান্তির কোন অবকাশ থাকবার কথা না, তবু হয়েছে - কেন?

এই দা'টি নিয়েও বিভ্রান্তি আছে খানিক।

১. সেলিনা হোসেনের রচনা "ঘরগেরস্হির রাজনীতি" পড়ে জানতে পারি সখিনা বেগম বাড়ি থেকে 'দা' সঙ্গে নিয়েই যুদ্ধে বেরিয়ে পড়েন।"

২. “আমি নারী আমি মুক্তিযোদ্ধা" বইতেও দা' টিকে তাঁর নিজেরই বলা হয়েছে।

৩. কিন্তু দ্য রিপোর্ট টোয়েন্টি ফোর ডটকমের রিপোর্টার মুহম্মদ আকবর জানাচ্ছেন সখিনা বেগম/খাতুন/বিবি পাকিস্তানী ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসবার সময় সেখান থেকে একটি দা নিয়ে আসেন।

কোন ভাষ্যটিকে সঠিক বলে ধরে নেবো এখন? এক্ষেত্রে দুটি সম্ভাব্যতা দাঁড় করানো যায়।

১ম সম্ভাব্যতা: স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কারণে যে নারী ভবিষ্যতের ভাবনা না করে একবস্ত্রে বাড়ি ছাড়েন, তিনি নিঃসন্দেহে সেসময়ের প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট মানসিক মনোবলের অধিকারী। এমন একজন সাহসী মানুষের পক্ষে নারী হওয়ার জন্য সমাজ কিংবা ধর্মের নামে চালু থাকা ট্যাবুগুলো ভেঙে যুদ্ধে যোগদান সেভাবে বাঁধা হতে পারে না। সখিনা বেগমের ক্ষেত্রেও হয়নি। নিম্নবর্গীয় সমাজে উচ্চবর্গীয়দের তুলনায় এসব ট্যাবু হয়ত কম ছিল, তারপরও কিছু তো ছিলই। স্বামীর কারণে সংসার ত্যাগ করায় বোঝা যায় চারিত্রিক দিক থেকে তিনি বেশ তেজদীপ্ত এবং আত্মনির্ভর ছিলেন। এমন একজনের পক্ষে একটি দা সর্বক্ষণ নিজের কাছে রাখা অসম্ভব কিছু না। যেহেতু সময়টা যুদ্ধকালীন সময় এবং দেশীয় রাজাকার-পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নির্মম অত্যাচার বিশেষ করে নারীদের উপর অকথ্য নির্যাতনের কথা তাঁর নিশ্চয়ই অজানা ছিল না। নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি দা'টি সর্বক্ষণই সাথে রাখতেন। বাঙ্গালি নারীর পরিধানের বারোহাতের শাড়িটি এক্ষেত্রে দা'টিকে আড়ালে রাখতে সাহায্য করে বলে ধারণা করা যায়। যেহেতু তিনি গ্রামীণ পরিবেশের মানুষ সেক্ষেত্রে বাঙলা ঢংয়ে ঘোমটা দিয়ে অনায়াসেই শাড়ির আড়ালে দা'টিকে লুকানো সম্ভব। পাকবাহিনীর দ্বারা যদি তার দেহ তল্লাশি করা না হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে দাটি তিনি সাথে নিয়েই ক্যাম্পে গিয়েছিলেন এবং সময় সুযোগ মত সেটি দিয়ে ৫জনকে কুপিয়ে হত্যা করেন।

২য় সম্ভাব্যতা: ধরে নিচ্ছি একটি দা নিয়ে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। কিন্তু সেটিকে সর্বক্ষণ সাথে রাখা বিশেষ করে পাকসেনাদের হাতে যখন তিনি ধরা পড়েন তখন তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সেটিকে লুকিয়ে রাখা কতটুকু সম্ভব! ছুরির মত ছোটো তো নয় দা, যা অনায়াসে কোমরে কারো চোখ ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে রাখা সম্ভব? ঘটনাটি কি এমন হতে পারে যে সখিনা যে দাটি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন সেটি ঘটনাক্রমে হারিয়ে যায়। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, এই নারীটি যুদ্ধে অংশ নেবার জন্য উদগ্রীব ছিলেন এবং প্রশিক্ষণ নেবার জন্য আসাম পর্যন্ত পাড়ি দিয়েছিলেন। দীর্ঘ পথের ছুটোছুটিতে সঙ্গের দা টি হারিয়ে ফেলা অসম্ভব কিছু না। যেহেতু তিনি শত্রুশিবিরের খবরাখবর আনা ও রেকির মত দুঃসাহসিক কাজে পারদর্শী ছিলেন, এক্ষেত্রে পাকিদের ক্যাম্প থেকে দা'টি নিয়ে পালিয়ে আসবার সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

তবে এই দাটি ব্যবহার করে তিনি ৫জন(মতান্তরে ৪জন সূত্র: "মুক্তিযুদ্ধ ও নারী") রাজাকার নাকি পাকসেনা হত্যা করেছিলেন সেটি নিয়েও তথ্যের বিভ্রাট দেখা যায়।

১. সেলিনা হোসেনের "ঘরগেরস্হির রাজনীতি" বইতে বলা হয়েছে ৫জন পাকসেনা হত্যা করেন সখিনা বেগম। এখানে আরো উল্লেখ আছে যে এই সাহসিকতার জন্য সখিনা বেগম কে স্বাধীনতার পরে একটি প্রশংসা পত্র দেয়া হয়। নিকলি অপারেশনে তাঁর সাহসী ভূমিকার কথা ৫ নম্বর সেক্টরের বড়ছড়া সাব-সেক্টরের কোবরা কোম্পানির সহকারি কোম্পানি কমান্ডার রিয়াজুল ইসলাম খান বাচ্চু তাঁর স্বাক্ষরিত প্রশংসাপত্রে উল্লেখ করেছেন যে, সখিনা বেগম ৫ জন পাকসেনাকে হত্যা এবং বিভিন্ন রণাঙ্গনে পুরুষোচিত সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।

অথচ " আমি নারী আমি মুক্তিযোদ্ধা" বইতে সখিনা বেগম ৫ জন কুখ্যাত রাজাকারকে হত্যা করেন বলে উল্লেখ করা হয়। লক্ষণীয় যে, একই বইতে একই প্যারায় রিয়াজুল ইসলাম খানের উল্লেখিত প্রশংসা পত্রের হুবহু উল্লেখ করা হয়েছে।

একটা দীর্ঘ সময়ের নীরাবতা পেরিয়ে যাবার পর মুক্তিযুদ্ধে নারীর অংশ গ্রহণের কথা বিশেষ করে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেবার বিষয়টা আলোর মুখ দেখে।
নারীও যে সশস্ত্র যুদ্ধে অতি সাহসের সাথে অংশ নিতে পারে এই সত্যি ঝাঁসির রানি লক্ষীবাঈ, মহারানি অবন্তী বাঈ লোধী, সদরপুরের জমিদার পিয়ারি সুন্দরী, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, সংগ্রামী মাতঙ্গিনী হাজরা, টঙ্ক বিদ্রোহী বীরকন্যা রাসমণি হাজং দিয়ে গেলেও পুরুষতান্তিক উন্নাসিকতায় কেন জানি নারীর সে ভূমিকাকে পাশ কাটিয়ে শুধু ধর্ষিতা কিংবা স্নেহময়ী সেবিকার ছাড়পত্রে নারীকে ইতিহাসে ঠাঁই দেবার আগ্রহ দেখা গেছে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিপুল সংখ্যক নারীর ধর্ষিতা হবার বিষয়টি যতটা আনা হয়েছে ততটা তার বীরত্বকে আনা হয়নি। ভুলে গেলে চলবে না, সেই ভয়াল সময়টা একজন নারীর জন্য যতটা নানামুখী প্রতিবন্ধকতা পেরোবার সময় ছিল একজন পুরুষের জন্য ততটা ছিল না। পুরুষকে জীবন হারানো ভিন্ন আর কোনো ভাবনায় আক্রান্ত হতে হয়নি। অথচ একজন নারীকে সমাজিক ধর্মীয় ট্যাবু ভাঙাসহ তার শরীর রক্ষার ভাবনাও ভাবতে হয়েছে। এতসব প্রতিবন্ধকতা ছাড়াও সশস্ত্র যুদ্ধে নারীর অংশ নেবার ব্যাপারে সেসময়ের নেতাদের উৎসাহহীন মনোভাবকেও যুযতে হয়েছে নারীকে। এতসব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে যে নারী দেশকে স্বাধীন করবার জন্য আক্ষরিক অর্থেই সর্বস্ব বাজি ধরে যুদ্ধে গিয়েছিলেন তাঁদের ইতিহাসে ঠাঁই দিতে কার্পূণ্য দেখানোটা শুধুই মানসিক দীনতা নয় রীতিমত ধৃষ্ঠতা।

জৈনধর্মে নারীর মর্যাদাহীন অবস্হানের অবসান এবং তাতে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিবাদী মলীবাঈয়ের ভাগ্যেও তাই জোটে ঐতিহাসিকদের উন্নাসিকতা। যে কারণে ইতিহাসে তিনি নিজ নামে স্হান পাননি। তাঁকে মলীনাথ হিসেবেই ইতিহাসে পরিচিত হতে হয়। আমাদের উন্নাসিকতার আড়ালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া কারোরই বীরত্ব গাঁথা যেন চাপা পড়ে না যায়, হোন তিনি পুরুষ কিংবা নারী, নিম্নবর্গীয় কি উচ্চবর্গীয়। সবার সবটুকু যেন নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই লিপিবদ্ধ করার যত্নটুকু শ্রদ্ধার সাথে পালন করা হয়। ইতিহাস তবেই সমৃদ্ধ হবে, অপূরণীয় ক্ষতির কিছুটা হলেও হয়ত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। মুক্তিযুদ্ধের সমৃদ্ধ ইতিহাসের হাত ধরে আগামির বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াবে সেটা আমাদের একান্ত কামনা।

--------

সূত্র:
১। "ঘরগেরস্হির রাজনীতি" সেলিনা হোসেন।
২। "আমি নারী আমি মুক্তিযোদ্ধা" (সম্পাদিত) সেলিনা হোসেন।
৩। "মুক্তিযুদ্ধ ও নারী" রোকেয়া কবীর-মুজিব মেহদী
৪। দ্য রিপোর্ট টোয়েন্টি ফোর ডটকম।
৫। আমাদের কিশোরগঞ্জ।
৬। দৈনিক ইত্তেফাক।


মন্তব্য

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

উল্লেখিত কোন বই-ই আমার পড়া হয়ে ওঠেনি। তবে মুক্তযুদ্ধভিত্তিক অনেকগুলো বই পড়েছি বটে। আমার সংগ্রহেও পাঁচ/সাতটি বই আছে। অন্তত সে সব বই পড়ে বুঝেছি, মুক্তিযুদ্ধের লিখিত ইতিহাসে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং নারীদেরকে তেমন গুরুত্ত্ব প্রদান করা হয়নি। বিভিন্ন সরকারের আমলে সরকারীভাবে কোটি কোটি টাকা খরচ করে লক্ষ পৃষ্ঠার ভলিউম ভলিউম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখা হয়েছে। সেখানেও এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অনুপস্থিত।

যুদ্ধ চলাকালীন যে সব মুক্তিযোদ্ধারা মৃত্যুবরন করেছিলেন তাঁদের কোন লিস্টি কি করা হয়েছে? বিভিন্ন ব্যক্তিদ্বারা লিখিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত লেখায় নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক সংখ্যা এবং তথ্য কি পাওয়া যায়? জানিনা।

লিখে যান, যতটুকু সম্ভব। এগুলোই হয়তো কোন এক সময়ে দলিল হিসাবে কাজে লাগবে! হাসি

আয়নামতি এর ছবি

যে বইগুলোর নাম উল্লেখ করেছি সবগুলো খুঁটিয়ে পড়েছি তা কিন্তু না। আসলে 'ঘরগেরস্হির রাজনীতি' বইটা পড়তে গিয়ে
সখিনা(বেগম/খাতুন/বিবি)র ঘটনা জেনে কৌতুহলী হয়ে বাকি বইগুলোতে বিষয়টা কেমন দেয়া আছে দেখার চেষ্টা করেছি।
তখনই ভজঘট আছে বুঝলাম। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এত বড় একটা কাজে(হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত)
কোনো মহিলা নিযুক্ত ছিলেন না। হয়ত সে কারণেও নারীদের প্রতি অবহেলাটা চোখে পড়ার মত হয়েছে। কী জানি!
মুক্তিযুদ্ধে মৃত নারীর সংখ্যা সেভাবে রেকর্ডের বিষয়টা আমার ঠিক জানা নেই ভাইয়া। থাকা তো উচিৎ।
মুক্তিযোদ্ধা নারীর সঠিক সংখ্যার বিষয়েও একই কথা। উদাসীনতার কারণে অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে চিরতরে।
---------
মলীবাঈ/মল্লিনাথের লাইনটা আমি হুবহু তুলে দিয়েছি "মুক্তিযুদ্ধ ও নারী" বই থেকে, এখানেও তো কিঞ্চিৎ ভজঘট দেখা যায়! তাঁর বিষয়ে জানার আগ্রহ ছিল, আপনার পোস্ট পড়ে কিছু জানা যাবে হয়ত। সময় করে পড়ে নেবো।
পাঠ এবং মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আর হ্যাঁ, মলীবাঈ বা মল্লিনাথের বিষয়ে :

দিগম্বর সম্প্রদায়ের বিশ্বাসমতে নারীরা কখনও মোক্ষ লাভে সমর্থ নয়। তাঁদের মুক্তি বা মোক্ষ লাভের জন্য যে কোন জনমে পুরুষ হিসাবে জন্মগ্রহণ করেই তা অর্জন করতে হবে। কারন হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে নারীরা যথার্থরূপে একজন যোগীর জীবন যাপন করতে অসমর্থ কেননা সামাজীক কারনেই তাঁদেরকে বস্ত্র পরিধান করতে হয়, একজন নারীর নগ্ন অথবা বস্ত্রহীন থাকাটা সামাজীক কারনেই একটি অবাস্তব ধারনা। তাছাড়া বলা হয়ে থাকে, নারীরা স্বভাবজাত কারনেই অনিষ্টকর।

দিগম্বর সম্প্রদায়ের বিশ্বাসমতে একজন ভিক্ষু সর্বদাই নগ্ন অবস্থায় থাকেন। একজন প্রকৃত ভিক্ষু কখনই পার্থিব কোন বিষয়-সম্পত্তির অধিকারী হবেন না। তিঁনি জাগতিক কোন প্রকার আবেগ-অনুভূতি, যেমন লজ্জা ইত্যাদি, প্রদর্শন করবেন না। এমন কি একটি ভিক্ষাপাত্রও তাঁর অধিকারে রাখতে পারবেন না। তাঁরা, তাঁদের গণ্ডূষ ভরেই ভিক্ষাদ্রব্য, খাদ্য ইত্যাদি গ্রহণ করে থাকেন।

সচলে আমার একটি লেখা,
[url=http://www.sachalayatan.com/guest_writer/42163 ]ধর্মসার- (৩) বর্ধমান মহাবীর ও জৈনধর্ম[/url]

এক লহমা এর ছবি

ফেবু-মন্তব্যে নাবিলা যেমন বলেছেন সে ভাবে বেগম, খাতুন, বিবি এক-ই মানুষের পরিচয়জ্ঞাপক হতে পারে, সাংঘর্ষিক না হয়েই।

এ বিষয়ে দ্বিমত করার কোন জায়গা নেই যে ইতিহাসে নারীর অবদান স্বীকার করায় কার্পণ্যটা সারা দুনিয়া জুড়েই একটা সাধারণ লক্ষণ। তার সাথে আবার মুক্তিযুদ্ধের গোটা ইতিহাসটাকেই গুলিয়ে দেয়ার একটা বিস্তৃত ষড়যন্ত্র যখন চালু থাকে তখন সেই কার্পণ্যটা একটা লোপাট করার প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে ওঠে। এটার মোকাবিলায় একটানা দাবী জারি রাখার কোন বিকল্প নেই।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনায় একটা প্রবল অসুবিধার জায়গা হচ্ছে - নাঃ সে আলোচনার জায়গা এই লেখাটা না। থাক বরং।

আয়নাদিদি, এই লেখাটা বিষয়ের জন্য ত ভাল লেগেইছে, তার সাথে এটার কাঠামো, উপস্থাপনা এগুলোর কারণেও ভাল লেগেছে।

ঘরগেরস্থির (বা ঘরগেরস্তির), সম্ভাব্যতা ইত্যাদি টাইপোর পেজগিগুলো বোধ হয় নজর এড়িয়ে যাওয়ার কারণে ঘটে গেছে, তাই না?

যত তারা চাও, নিয়ে নাও। সাথে নূতন বছরের অপার শুভেচ্ছা-প্রীতি-ভালোবাসা - আমাদের পুরা পরিবারের। হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আয়নামতি এর ছবি

(প্রথমেই মন্তব্যের উত্তর দিতে দেরি করার জন্য দুঃখিত সবার কাছে, নতুন ফেবুতে ঢুকে দিশেহারা আছি এট্টু খাইছে )

১।যেহেতু সখিনা একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধে ব্যবহৃত তাঁর দাটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে নামফলক সহ সংরক্ষণ করা আছে সেকারণ মনে করি তাঁকে একটা নামেই পরিচিত দেয়া হোক। আমি আজকে আয়নামতি, কালকে আয়নাবিবি কী ক্ষেপি হলাম তাতে কিচ্ছু যায় আসে না কিন্তু ওঁদের নামের শতেক ব্যবহার বিভ্রান্ত করতে পারে বলেই ওটাকে এতটা গুরুত্ব দেয়া @ নাবিলা এবং একলহমা।

২। এ বিষয়ে যথেষ্ট কার্পণ্য, উদাসীনতা হয়ে গেছে এবং তাতে করে ক্ষতি আমাদেরই হয়েছে। এখনো সময় আছে যতটুকু সম্ভব সেটা উদ্ধার এবং সংরক্ষণের, সেটাতে যত্নবান হওয়াটা জরুরী।

৩।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনায় একটা প্রবল অসুবিধার জায়গা হচ্ছে - নাঃ সে আলোচনার জায়গা এই লেখাটা না। থাক বরং।

চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখা কোন মহত্ত্ব না(কপিরাইট রনদা) চিন্তাগুলো লিখে ফেলো জলদি এবং সচলে পোস্টাও।

৪। লইজ্জা লাগে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

৫। খাইছে অসংখ্য ধন্যবাদ দাদাই ঠিক করে নিচ্ছি।

৬। হাসি তোমাদের জন্যেও নববর্ষের অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা থাকলো।
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আমরা অনেক বই পড়ে দায়িত্ব শেষ করি। পঠিত বইয়ের সংখ্যা বাড়ে। কিন্তু সেই পড়ায় কোন ভুল থেকে যাচ্ছে কিনা অধিকাংশ ক্ষেত্রে খেয়াল করি না। বইতে পড়া তথ্যকেই সত্য বলে ধরে নেই। আপনি যদিও একটা ঘটনা নিয়ে লিখেছেন, কিন্তু এটা একটা গুরুতর উদাহরন। এরকম ঘটনা প্রচুর আছে ইতিহাস নিয়ে লিখিত বইপত্রে। আমি কিছু বিষয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে এই বিভ্রান্তির শিকার হয়ে সঠিক তথ্য জানার জন্য একের পর এক বই খুঁজে তারপর উদ্ধার করেছি সত্যটা। একটা দুটো ঘটনা হয়তো এরকম যাচাই করা সম্ভব। কিন্তু ভুলের সংখ্যা যদি ১% ও হয় তাতেই ইতিহাসের বিরাট একটা অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তথ্যভিত্তিক বইগুলো যে পরিমান যত্ন নিয়ে ছাপানোর কথা আজকাল সেরকম হচ্ছে না। ছাপার খুচরো ভুল আগেও ছিল, কিন্তু কম্পিউটার যুগ আসার পর এই ভুলগুলো পাইকারী হয়ে গেছে। বই ছাপা হয়ে গেলে আর শুদ্ধ করার কোন উপায় বা ব্যবস্থা নেই।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তথ্যবিভ্রাট বা তথ্যশুদ্ধি বিষয়ক আরো লেখা আসুক। কলম চলছে চলুক। লেখাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ পাওনা আছে আপনার। আমিও এরকম কিছু তথ্যশুদ্ধিকরণ কাজের কথা ভাবছিলাম কিছুদিন ধরে। চলুক

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

নীড় সন্ধানী, শুরু করুন। মন্তব্য আকারে কিছু আলোচনা করা যাবে বৈকি! চলুক

আয়নামতি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
নীড়সন্ধানী, আপনি শুরু করেন ভাইয়া।
মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত বেশি বই পড়া মানুষদের এসব বিষয়ে বলা/লেখা উচিৎ বলে মনে করি।
আমি খুব বেশি বই পড়িনি মুক্তিযুদ্ধের উপরে; ঘটনা অজানা থাকলে তো অনেক সময়ই বোঝা সম্ভব হয়না ভুল কী ঠিক।
তাই আপনাদের এবিষয়ে বেশি বেশি জানানো দরকার।
-----
ছোট্ট একটা অনুরোধ আমাকে তুমি করে বলবেন দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান বলতে কেবল সম্ভ্রমহানীর বিষয়টিই উঠে আসে। বিভিন্ন বক্তৃতা বিবৃতিতে গলা কাঁপিয়ে আমরা কেবল এই বিষয়টিই বলি। কী সাহিত্য, চিত্রকলা, ইতিহাস, চলচ্চিত্র সবখানে মুক্তিযুদ্ধে নারীর উপস্থিতি অভিন্ন। এ বিষয়টি নিয়ে আরো লেখা আসা জরুরি।

অনেক ধন্যবাদ এমন একটি লেখার জন্য।

স্বয়ম

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান নয় বরং অংশগ্রহণের ইতিহাস সামনে আসা প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমরা খুব কমই জানি। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কথাই বিশেষভাবে উঠে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধে কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অর্থাৎ বাংলার কৃষক, মজুর, জেলে তাঁতি এই শ্রেণীর মানুষের অংশগ্রহণ ছিল ব্যপক। ইতিহাসে কিন্তু এইসব প্রান্তিক মানুষের পরিচয় তেমন করে উঠে আসেনি।

অতিথি লেখক এর ছবি

হ্যাঁ, অংশগ্রহণের ইতিহাসটাই সামনে আসা জরুরি। ইতিহাসে নারী বরাবরই প্রান্তিকের চেয়েও প্রান্তিক। একেবারে অনুল্লেখ্য বলা যায়। তাই এখানটাতে সর্বাধিক যত্ন থাকাটা জরুরি।

স্বয়ম

আয়নামতি এর ছবি

আপনার সাথে সহমত স্বয়ম। কামরুল হাসান ভূঁইয়ার "একাত্তরের কন্যা জায়া জননীরা" নিয়ে
নিজের একটা আবজাব ভাবনা লিখেছিলাম গুডরিডসে বইটাতেও নারীদের কথা এসেছে, কিন্তু সেটা ঐ মমতাময়ী হিসেবেই বেশি।
অনেক দেরিতে হলেও নারীদের নিয়ে লেখা হচ্ছে এটা মন্দের ভালো। মন্তব্য এবং পাঠের জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

নীড় সন্ধানীর কথায় অপরাধবোধ হচ্ছে,

আমরা অনেক বই পড়ে দায়িত্ব শেষ করি। পঠিত বইয়ের সংখ্যা বাড়ে। কিন্তু সেই পড়ায় কোন ভুল থেকে যাচ্ছে কিনা অধিকাংশ ক্ষেত্রে খেয়াল করি না। বইতে পড়া তথ্যকেই সত্য বলে ধরে নেই।

নিজের দায়িত্ব ভুলতেই বসেছিলাম। আয়নামতি, পড়েছি আগেই কিন্তু মন্তব্য করা হয়নি। খুব ভাল কাজ করেছো। তোমাকে স্যালুট। আমি এমন কোনো লেখা আজও লিখতে পারিনি।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

আয়নামতি এর ছবি

অপরাধবোধ থেকে বাঁচতে হলে বেশি বেশি লিখুন আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
আয়হায়! ছোট্টমোট্ট কিছু ভুল নিয়ে লিখলাম বলে স্যালুট ইয়ে, মানে...
লজ্জায় মাটির ভেতর সত্যিই সেঁধিয়ে(?) যাইতে মন করে তু!
হ তুমি মন্তব্য দেও নাই বলে মন্তব্যের উত্তর করিনাই এতদিন দেঁতো হাসি
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

আমাদের উন্নাসিকতার আড়ালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া কারোরই বীরত্ব গাঁথা যেন চাপা পড়ে না যায়, হোন তিনি পুরুষ কিংবা নারী, নিম্নবর্গীয় কি উচ্চবর্গীয়। সবার সবটুকু যেন নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই লিপিবদ্ধ করার যত্নটুকু শ্রদ্ধার সাথে পালন করা হয়। ইতিহাস তবেই সমৃদ্ধ হবে, অপূরণীয় ক্ষতির কিছুটা হলেও হয়ত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। মুক্তিযুদ্ধের সমৃদ্ধ ইতিহাসের হাত ধরে আগামির বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াবে সেটা আমাদের একান্ত কামনা।

নাম প্রসঙ্গে একটা কথা মনে এলো; আমাদের এলাকায় অবিবাহিত মুসলিম মেয়েরা নিজেদের নামের শেষ অংশে খাতুন বা আক্তার ব্যবহার করে কিন্তু বিয়ের পর অবধারিতভাবে তারা ‘বেগম’ এবং কখনও বিধবা হলে ‘বেওয়া’ ব্যবহার করে। যারা পড়ালেখা করছে, তাদের সার্টিফিকেটে আগের নামটাই রয়ে গেলেও অন্যান্য প্রায় সব ক্ষেত্রেই পরিবর্তিত নামটাই ব্যবহার করে। অবশ্য অনেক সময় তারা নিজেরাও একেক জায়গায় একেক নাম বলে ফেলে অ্যাঁ এক্ষেত্রেও তেমনটা হয়ে থাকতে পারে তবে সখিনা বিবি/বেগম/খাতুন যেহেতু একজন মুক্তিযোদ্ধা, তাই বিভিন্ন লেখালেখিতে একই নাম ব্যবহার করাই কাম্য।

দেবদ্যুতি

আয়নামতি এর ছবি

আমারও সেই কথা দেবদ্যুতি।
যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে তাঁর ব্যবহৃত দাটি নামফলক সহ আছে কাজেই সেই নামটা সবক্ষেত্রে ব্যবহার করাটা যুক্তিযুক্ত না? মনটা খারাপ হলো ওঁদের কথা জেনে মন খারাপ
পাঠ এবং মন্তব্যের জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।