ভাগ হলো মাটি, ভাগ হলো জলভাগ হলো ছেঁড়া কাঁথা কম্বল,
ভাগ হয়ে গেলো মানুষের মাথা
কান্নার ধ্বণি চির স্তব্ধতা।
আরতির শাঁখে আযানের টান,
সাত নাড়ি ছিঁড়ে উঠে আসা গান
ভাগ হলো।
ক্ষমতা লিপ্সু রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষমতায় আসীন হবার তাড়াহুড়োয় রেডক্লিফের কলমের ধারালো অংশে কাটা পড়লো হাজার বছরের সন্নিবদ্ধ দেশ ভারতবর্ষ। রাতারাতি পালটে যায় কোটি মানুষের ভাগ্যরেখা। দেশের স্বাধীনতার নামে পরাধীন মানবিকতার এমন নজির মানব ইতিহাসে খুবই বিরল! এই বিপন্ন পরিস্থিতির ফাঁদে আটকে পড়া মানুষের হতাশা, ক্ষোভ কিংবা ভেসে যাওয়ার কাহিনির প্রতি ক্ষমতার রাজনীতিতে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা মানুষদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ থাকার কথা নয়। ধর্ম আর মানুষই যাদের ক্ষমতা হাসিলের দাবার ঘুটি তাদের কাছে এমন পরিস্থিতির সম্ভাবনার কথা উপেক্ষিত থাকারই কথা। বাস্তবে হয়েছিলও তাই। ১৭ আগস্ট ১৯৪৭, ভারত-পাকিস্তান বাউণ্ডারি কমিশনের চেয়ারম্যান সিরিল রেডক্লিফ(Cyril Radcliffe) সীমানা নির্ধারণ রেখা(রেডক্লিফ লাইন) প্রকাশের আগেই তড়িঘড়ি ভারত ছাড়েন। যাবার আগে তার সৎ ছেলের উদ্দেশ্যে এক চিঠিতে বলেন, "আট কোটি অসন্তুষ্ট মানুষ আমার সন্ধান করবে। আমি চাইনা তারা আমাকে খুজে পাক”(সূত্রঃ তের মাসের সূর্যকিরণ/লেখকঃ আজিজুল জলিল)। রেডক্লিফের নকশা অনুযায়ী দেশ ভাগ হলেও তাঁকে কতটা দায়ী করা যৌক্তিক আমরা নিশ্চিত নই। কেননা ১৭৫,০০০ বর্গমাইলের বিশাল একটা দেশকে ভাগ করার জন্য যথেষ্ট উপকরণ সরবরাহ না করে, তাকে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল মাত্র ৫ সপ্তাহ। ভূমিকে দু'টুকরো করে ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয় নেহেরু ও জিন্নাহর নেতৃত্বে। যে নেতৃত্ব ক্ষমতায় গিয়ে রাতারাতি উদ্বাস্তু হয়ে পড়া এসব সাধারণ মানুষের কথা মনে রাখার বিষয়ে না দেখিয়েছেন সততা, না সহমর্মিতা।
'পাকিস্তান কায়েম করার সময় ..নিম্নবিত্ত নিম্নবর্গ তথা নিম্নবর্ণের মানুষদের সমর্থনের জন্য মুসলিমলীগ এক অভিন্ন স্বার্থের কথা বলেছিল। লাঙ্গল যার জমি তার এমন 'নারা' লাগিয়েছিল' যা পরবর্তীতে বিস্মৃতির খপ্পরে চলে যায়। কোনো পক্ষের নেতারা বিশেষত মুসলিগপন্থীরা " This land is your land/This land is my land/ This land was made for you and me/You got to believe that." এমন উক্তিকে কাজে প্রতিষ্ঠা করে দেখাতে পারেননি। বলাই বাহুল্য দেশভাগের কুফল ভোগ করতে হয় অন্তত কোটিখানেক সাধারণ মানুষকে।
নিজের সাতপুরুষের ভিটেবাড়ি আর জন্মস্থানচ্যুতির সেই নির্মম ইতিহাস নিয়ে যেসব কাহিনি লেখা হয়েছে তার মধ্যে মিহির সেনগুপ্তের "বিষাদবৃক্ষ" যেন কিছুটা আলাদা। "আমাদের সাহিত্য এবং সমাজবিজ্ঞান এমন একখানা গ্রন্থের জন্য অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছিল"- বইয়ের ফ্ল্যাপে উদ্ধৃত এই কথাগুলোকে শুরুতে অত্যুক্তি মনে হবে হয়ত। কিন্তু বইটি পড়া শেষে পাঠক অনুভব করবেন কথাটা মর্মে মর্মে কতটাই সত্যি। যদিও ছক মেনে গুছিয়ে লেখক তাঁর চিন্তাভাবনা গুলোকে ধারাবাহিকভাবে হয়ত লিখেননি। পরের কথা আগে, আগের কথা পরে এসে গেছে। তবে এতে করে লেখার সাবলীলতা খুব একটা ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মনে হয়নি। অবশ্য লেখক নিজেও সেকথা স্বীকার করেছেন অকপটে। "পুরোনো কথা বলার এই মুশকিল, কথা ক্রমবিন্যাসে আসে না।" পুনারাবৃত্তিও হয়ত এই বইয়ের সামান্য একটি ত্রুটি, তবে বইটির গুরুত্ব বিবেচনায় এনে পাঠক চাইলেই তা আগ্রাহ্য করতে পারেন।
'বিষাদবৃক্ষ' মূলতঃ আত্মজৈবনিক লেখা। মিহির সেনগুপ্ত যাকে 'কালচারাল এনথ্রোপলজি বলার চেষ্টা' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বইটির পরিসর ১৯৫১/৫২ থেকে ১৯৬১/৬২ দশ বছর সময়কালে বিস্তৃত। শুরুতেই লেখক তাঁর জন্মস্হান বরিশালের ঝালকাঠির কেওড়া গ্রামের প্রান্ত বেয়ে বয়ে চলা খালটির সাথে পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেন। যাকে সেসময় স্হানীয় ভাষায় 'পিছারার খাল' নামে অভিহিত করা হতো। সেই পিছারার খাল দিয়ে দক্ষিণের মহাল থেকে আগত নৌকা এবং তার মাধ্যমে আনা সামগ্রীর বর্ণনায় জানা যায় মিহির ছিলেন সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী পরিবারের সন্তান। যে পরিবারের আভিজাত্য ছিল তৎকালীন আর দশটা ভূস্বামী পরিবারের আদল মাফিক আড়ম্বরপূর্ণ । লেখকের ভাষায়, "বাড়ির আভিজাত্য তখন তিনতলার ছাদ ছাড়িয়েও প্রায় বারো হাত উঁচু্।"
পিছারার খালের উপর দিয়ে সময় গড়িয়ে যাবার সাথে সাথে চারপাশে ঘটে যেতে থাকে নানান সামাজিক উত্থান পতনের ঘটনা। যার নীরব সাক্ষী খাল পাড়ের জোড়া রেইনট্রি। ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের জটিলতা আজীবন পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ বসবাস করা মানুষগুলোর বুকে কুটিলতার জন্ম দেয়। যার পরিণতিতে নগেন মশাইয়ের অবাধ উঠানে শৈশবের হাডুডু খেলার লোনতা ১, লোনতা ২ এর ডাকে সাড়া দেবার মুখগুলো ক্রমশঃ কমে যেতে থাকে। বলা হতে থাকে পাকিস্তান মুসলমানদের দেশ, হিন্দুদের জন্য হিন্দস্তান!
৫০ এর দাঙ্গা বরিশালে খুব বেশী প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও পরবর্তীতে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে হিন্দু সম্পত্তি দখল, সরাসরি হত্যায় না গিয়ে মেয়েদের সম্মানহানি সহ নানান বিভীষিকা ছড়িয়ে হিন্দুদের সম্পত্তি সস্তায় কিনে তাদের দেশ ছাড়া করার যে পরোক্ষ অজাচার শুরু হয় তার ভয়ে সম্পদের ভার মুসলমান তালুকদারদের হাতে গচ্ছিত রেখে রাতারাতি ভারত পাড়ি দেয়া বক্সিবাবুদের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকার মুখেও মিহিরের পরিবার সহ আরো কিছু পরিবার জন্মভূমির মাটি কামড়ে পড়ে থাকে। মিহিরের বুড়ি পিসিমায়ের দেখা 'সপপন্' যেন তাদের তখনো আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছিল, "...হিন্দুস্তান পাকিস্তান বেয়াক ভাগাভাগি মিডইয়া গেছে। বেয়াক কিছুই আবার আগের ল্যাহান। গোলায় ধান, পুহইরে মাছ, গাছে ফলফলাদি..."
এদিকে কোনো রকম পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না রেখে মধ্যস্বত্ব প্রথার বিলোপ, পরিবারের কর্তাদের বিশেষতঃ মিহিরের বাবার সংসার বিষয়ে নিদারুণ উদাসীনতা, জ্যাঠামশাইয়ের শঠতা ইত্যাদির সম্মিলিত আঘাতে মিহিরের পরিবারে নেমে আসে অশেষ দুর্গতি। যার বর্ণনা দিচ্ছেন লেখক এভাবে, " সামন্ত বিক্রমের নাভিশ্বাসের কারণে তাঁদের(পরিবারের কর্তাগণ) রুচিরও বিকৃতি ঘটতে শুরু করেছে। বাড়ির ছেলেমেয়েদের কোনও ব্যাপারেই তাঁদের চিন্তা ভাবনা নেই। শিক্ষা তো দূরস্থান। তাঁদের দুটো জিনিসই তখন আছে। একটি অতি প্রাচীন ধ্বংসোন্মুখ অট্টালিকা এবং সেই অট্টালিকার প্রতিটি ইটের খাঁজে সাজানো এক কিংবদন্তির আভিজাত্য। কত কঠিনভাবেই না সেই সময় আমরা এই মিথ্যে আভিজাত্যের মূল্য দিয়েছি, সে ইতিহাস বর্ণনা দুরুহ।"
দুরূহ সে ইতিহাস বর্ণনার চেষ্টায় মিহির যেন জোড়া রেইনট্রিতে বসে থাকা রূপকথার ব্যাঙমার মত এক বিষাদ পাখি। পরম মমতায় যিনি হৃদয় খুঁড়ে বেদনাময় অতীতকে পাঠকের সামনে হাজির করেছেন। সে অতীত কথনে ব্যক্তিগত সুখ দুঃখের পাশাপাশি উঠে এসেছে ক্রমশঃ পরিবর্তিত সমাজ, তার আচার আচরণ। রাজনৈতিক নেতাদের গোপন কলকাঠির যোগসাজশে সমাজে ঘটতে থাকা বিশৃঙ্খলতার উৎকট স্বরূপ। বাংলা ভাষা তথা সাহিত্যকে হিন্দুয়ানি মুক্ত করার একরোখামি যা থেকে খোদ কবি নজরুলও রক্ষা পাননি। নজরুলের কিছু কবিতার হিন্দুয়ানী শব্দও পাল্টে দেয়া হয়েছিল। তাছাড়া গ্রামীণ নানান পালা পার্বণ, আচার অনুষ্ঠানের বিলুপ্তি। ধর্মভিক্তিক নানান আনন্দ অনুষ্ঠানে অন্যধর্মের মানুষের অবাধ অংশগ্রহনের পথে বাধা দেবার প্রথা চালু ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে একজন সংবেদনশীল দর্শকের মতই মিহির বিস্তারিত বলার চেষ্টা করেছেন। যা বইটিকে সমৃ্দ্ধ করেছে।
বইটির সূচনাকালে হিন্দু মুসলমানদের মধ্যেকার পারস্পরিক সম্পর্কের যে সৌহার্দ্যরূপ দেখে মুগ্ধ হতে হয়, শেষের দিকে পৌঁছালে সম্পর্কটা এমন কুৎসিত অমানবিকতায় রূপ পায় তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না এদেশে সংখ্যালঘুদের জন্য কী কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তখন। এই যে সম্পর্কের অধঃপতন বা পরিবর্তন তার পেছনে কাজ করেছে পাকিস্তানের তৎকালীন রাজনৈতিক পটপরিবর্তন। কেননা বইয়ের সূচনাকাল ১৯৫২ দেশ ভাগের বেশ কয়েক বছর পরের ঘটনা হলেও তখনো সংখ্যালঘু হিন্দুদের বৃহৎ অংশ দেশত্যাগের কথা ভাবেনি, যেমন মিহিরের নিজের পরিবার। অতঃপর "পাকিস্তান শুধু মুসলমানের দেশ, হিন্দুদের হিন্দুস্থান" – এই মানসিকতা একটা রাজনৈতিক মহল থেকে সুকৌশলে প্রবেশ করানো হয়েছিল মুসলমানদের একটা অংশে। সেই সময় সুযোগসন্ধানী মুসলমানদের একটা অংশ নানানভাবে হিন্দুসম্পত্তি গ্রাস করার মানসিকতায় প্রতিবেশীদের সাথেও ঝামেলা পাকাতে থাকে। যেটাকে শুধু ঝামেলা বললে ঠিক বোঝানো যায় না। একটা পরিবারের সম্পদ গ্রাস প্রক্রিয়া শুরু হয় সম্ভ্রম লুণ্ঠনের মাধ্যমে। যে অঞ্চলের মানুষ শত বছর ধরে জমিজমার দাঙ্গা হাঙ্গামা কিংবা ডাকাতি রাহাজানিকে ভয় পায়নি, সেই এলাকার মানুষ সম্ভ্রম লুণ্ঠনের ভয়ে সাতপুরুষের ভিটে ছেড়ে পাড়ি দিতে শুরু করে অচেনা এক দেশে। যে দেশের সাথে ধর্ম ছাড়া আর কিছুর সাথে তার পরিচয় নেই।
বিষাদবৃক্ষ বিষয়ে, স্পষ্ট করে বলতে গেলে লেখক বিষয়ে আরেকটি কথা না বললেই নয়। একজন লেখককে ধর্মের উর্ধ্বে রেখেই সব সময় তাঁর সৃষ্টিকে উপভোগ করার চেষ্টা করি। সেখানে কে হিন্দু, কে মুসলিম বা খ্রিস্টান বাছবিচারের প্রশ্ন আসে না। তবুও এর আগে এ বিষয়ে যে দু'একটা বই পড়বার সুযোগ হয়েছে, সেখানে লেখককে কোন একটা পক্ষের বক্তার ভূমিকা পালন করতে দেখেছি। ‘বিষাদবৃক্ষ’ যেন এ থেকে অনেকটাই মুক্ত। এখানে লেখক অকপটে দুই ধর্মের মানুষ, তাদের আচার বিধি কর্মপদ্ধতির আলোচনা/ সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। ইসলাম ধর্মের আচার বিধি সম্পর্কে লেখকের জ্ঞান, আন্তরিকতা যেমন পাঠকের দৃষ্টি এড়াবে না, একইভাবে হিন্দু ধর্মের নানান দেখানেপনা, নিজ পরিবারের অন্তঃসারশূন্য বাগাড়ম্বর ইত্যাদি নিয়ে বলতে দ্বিধাগ্রস্থ হতে দেখা যায়না। দ্বিধাহীনভাবেই মিহির তাই লিখতে পারেন " ..দোষে গুণে আমরা উভয় সম্প্রদায়ই তুল্যমূল্য। কিন্তু মজার ব্যাপার এই যে, বরাবর আমরা একে অন্যকে দুষে আসছি। কেউই কখনও নিজেদের দোষের পসরা নিয়ে বলিনি, দেখ ভাই এই আমাদের দোষ, এগুলোকে তুচ্ছ করে এসো আমরা ভালোয় মন্দে বাঁচি, এবং এই দোষগুলোর সংশোধন করি। না, আমরা কদাপি এরকম সুবুদ্ধিতে পরিচালিত হইনি। না হিন্দুরা, না মুসলমানেরা।"
"বিষাদবৃক্ষ" ৪৭ পরবর্তী বরিশাল অঞ্চলের একটি খণ্ডিত স্মৃতিচিত্র হলেও এটি মূলত সেই সময়কার সমগ্র পূর্ববাংলার সামাজিক চিত্রের এক অসামান্য দলিল। পিছারার খাল, আর সেই খাল পাড়ের জোড়া রেইনট্রি বিষাদবৃক্ষে মিহিরের স্মৃতির হাত ধরে বার বার ফিরে এসেছে। প্রত্যেক মানুষই হয়ত আজীবন তার শৈশবকে খুঁজে ফিরে নানান ছুঁতোয়। মিহির সেনগুপ্ত একই সাথে তাঁর শৈশব এবং জন্মস্হানকে খুঁজে ফিরেছেন। যে দেশের আলো হাওয়ায় একজন মানুষের বেড়ে ওঠা, চাইলে তাকে হয়ত স্বভূমি ত্যাগে বাধ্য করা যায়। কিন্তু একজন জীবন্ত মানুষের বুকের ভেতর নিরন্তর বয়ে বেড়ানো স্মৃতির ভাণ্ডারে হাত দেবার সাধ্য পৃথিবীর কোন ক্ষমতাশালী শাসকই রাখেন না। মিহির তাই বার বার পিছারার খাল বেয়ে চলে আসতে চান তাঁর নাড়ীপোতা গ্রামে। রেইনট্রির শাখায় শাখায় আটকে থাকে তাঁর শৈশব কৈশোরের দুঃখ জাগানিয়া দিনরাত্রির গল্পগুলো। সেই পিছারার খাল কিংবা জোড়া রেইনট্রি হয়ত বা আজ আর নেই। কিন্তু লেখক মিহির সেনগুপ্তের বিষাদবৃক্ষে তাদের অক্ষয় তুমুল সহবাস।
----------
পোস্টে ব্যবহৃত কবিতার লাইনগুলো সৈকত কুন্ডুর 'দেশ' কবিতা থেকে নেয়া।
মন্তব্য
খুব ভালো লেগেছে। তারাগুলো সব কটা দিয়ে দিলাম।
রিফিউজীর সন্তান আমি। বুঝতেই পারছ, এইসব পোস্ট একেবারে বুকের ভিতরে নাড়া দিয়ে যায়।
অনেকদিন পর লেখা পেলাম রে দিদি, আছ কেমন?
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
কেন জানিনা এ বিষয়টা আমাকে টাচ্ করে খুব! জানি আমার পক্ষে মরে গেলেও সম্ভব না জন্মভূমি হারিয়ে ফেলার কষ্টটা ঠিক ঠিক বুঝতে পারা।......মরি নাই , মরি নাই, দিব্বি বেঁচে বর্তে আছি ভাবছিলাম তোমার সাথে চ্রম ঝগড়া বাঁধিয়ে বসবো। পরে ভাবলেম নাহ! দুই দিনের এই পিতিমিতে হুদাই ক্যাচালে লাভ নাই। তুমি কেমন আছে হে দাদাই? ভালো থেকো অনেককক।
ওহ! ধন্যবাদ দিতে ভুলে গেছিলাম তারাতুরা দেবার জন্য। যদিও ওগুলোর দাবীদার মিহির সেনগুপ্ত। তাঁর হয়ে আমিই নিলাম
ঝগড়াটা বাদ দিলে কেনে? শুরু করেই দাও না!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
বলছো?
চলুক তবে। নারদ! নারদ!!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ডিজিএম! কূটনা কুথাকার
বিষাদবৃক্ষ বইটা পড়ার পর অন্ততঃ দুইদিন বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম। নামকরনের এতটা সার্থকতা খুব বেশী বইতে পাইনি। দেশভাগ নিয়ে একদম মাটির গন্ধছোঁয়া একটি বই। রিভিউটা বেশ লাগলো। তবে বইটি যত বড় পরিসরে লেখা, তাতে রিভিউ আরো বড় হতে পারতো।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ঠিক, এতটা বিষাদ এক বইতেই এমনটা খুব কমই পড়েছি মনে হয়।
বজ্রমোহনে পড়ার সময় লেখক যখন তাঁর পরীক্ষার ফিস যোগাড় সংক্রান্ত জটিলতায় তার বন্ধুর সাথে
কাঁদছিলেন তখন নিজের ভ্যাঁ কে যে কত কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করেছি! এরকম কত সব ঘটনা আছে বইটায়!
সব ঘটনা টানলে পোস্ট বিশাল হয়ে যেতো ভাইয়া।
বড় লেখা সেরকম লেখক না হলে কেউ পড়েন না তু তাই আর কী...
পোস্ট পাঠ এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
- বহু বার, বহু জনের বলা এই কথাটা আবেগপ্রসূত - ইতিহাসপ্রসূত নয়। ভারতবর্ষ কোন কালে এক দেশ ছিল না। ভারতবর্ষ ঐতিহাসিকভাবে বহু দেশের সমষ্টি ছিল। 'সন্নিবদ্ধ' শব্দটার অর্থ যদি এভাবে বলি যে, দেশগুলো দৃঢ়রূপে আবদ্ধ ছিল তাহলে সেটাও ইতিহাসপ্রসূত নয়। দেশুগুলোর মধ্যে লাঠালাঠি, জবরদখল সব সময়ে বিদ্যমান ছিল। ১৯৪৭ সালের পর (আসলে ১৯৬৫ সালের পর) একটাই পরিবর্তন হয়েছে, সেটা পাসপোর্ট-ভিসার কড়াকড়ি।
- এই ঘটনাটা প্রতিনিয়ত ঘটছে - শিক্ষালাভের জন্য, কর্মোপলক্ষে, বৈবাহিকসূত্রে, পরিবেশ বিপর্যয়ের দরুণ। সেসব নিয়ে লোকের এত হাউকাউ নেই। তাহলে ১৯৪৭ নিয়ে এতো হাউকাউ কেন? ১৯৪৭-এর দেশভাগ নিয়ে হাউকাউ করার আগে নিজেরা নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করা উচিত দেশভাগের জন্য ভাগাভাগির নির্বাচনে কারা ভোট দিয়েছিল? ক্রিপস মিশনের কাছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যাবো না বলেও কারা গিয়েছিল? দুর্ভিক্ষে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ মরার পরও কারা সেগুলোকে গোনাগুনতিতে ধরেনি? পাকিস্তান আন্দোলন কারা করেছিল?
- ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি একটা ঐতিহাসিক 'পঙ্খীরাজ ঘোড়া', যার অস্তিত্ত্ব কেবল বইপুস্তকে আছে বাস্তবে কখনো ছিলনা। ১৯৪৭ সালে পূর্ববঙ্গের ধনী কিন্তু সংখ্যায় অল্প হিন্দু সম্প্রদায় দরিদ্র কিন্তু সংখ্যা বেশি মুসলিম সম্প্রদায়ের হাতে মার খাওয়ায় তাদের কান্নাকাটির রবটা বেশি। এই রবটা যতটা না আর্থিক লোকসানের জন্য তারচেয়ে বেশি এতোদিন তাদের জুতো বহনকরা শ্রেণীর হাতে অপমানিত হবার জন্য। একই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের দরিদ্র এবং সংখ্যায় অল্প মুসলিম সম্প্রদায় ধনী ও সংখ্যায় বেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের হাতে মার খেয়েছে। কিন্তু গরিব বলে তারা আজন্ম মার খাওয়াটাকে নির্বন্ধ বলে ধরে নিয়েছে, তাই তাদের কান্নাকাটির শব্দ শোনা যায় না। পূর্ববঙ্গের প্রচুর দরিদ্র হিন্দুও এই সময় উলুখাগড়ার পরিণতি বরণ করেছে, কিন্তু তারা দেশভাগের আগেও উলুখাগড়া ছিল বিধায় বিশেষ কান্নাকাটি না করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটা শক্তিশালী শ্রেণী হিসেবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। আর যারা থেকে যেতে বাধ্য হয়েছিল তাদের পরিণতি এখন প্রতিদিন পত্রিকায় পড়তে পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গের গুটিকয় ধনী মুসলিম পূর্ববঙ্গে এসেছিল, তবে তাদের মধ্যে বিশেষ কান্নাকাটি নেই। কারণ, তারা হিসেব-নিকেশ করেই পূর্ববঙ্গে এসেছিল।
মিহির সেনগুপ্ত, দেবেশ রায়, অসীম রায় - বাংলা দেশের এক একটা অংশের মানুষের ইতিহাস বর্ণনাকারী এক একজন চারণ কবি। স্থান-কাল-পাত্রের picturesque বর্ণনা, আত্মোপলদ্ধি, নিজস্ব বিশ্লেষণ তাঁদের রচনাকে এমন একটা মানে নিয়ে গেছে যে তাঁদের প্রত্যেকের লেখা ঢাউস সাইজের সব গদ্য পাঠক বুঁদ হয়ে পড়ে ফেলতে পারেন।
রিভিউ ভালো লেগেছে। আরও রিভিউ আসুক।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পাণ্ডবদা,
হাউকাউয়ের উপস্থিতির ফারাক বোধকরি "বেছে নেবার সুযোগ" এই চলকের সুবাদে নির্ধারিত।
আচ্ছা, তখনকার দেশ ভাগাভাগির "ভোট" সংক্রান্ত কোন পরিসংখ্যান জানা আছে কি আপনার?
এই পঙ্খীরাজ ঘোড়াটা নিয়ে টাইমলাইন সহ একটু বিস্তারিত লিখুন না।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
কিছু বিস্ময়, কিছু প্রশ্নঃ
"তাহলে ১৯৪৭ নিয়ে এতো হাউকাউ কেন?” - “হাউকাউ”!
“১৯৪৭ সালের পর (আসলে ১৯৬৫ সালের পর) একটাই পরিবর্তন হয়েছে, সেটা পাসপোর্ট-ভিসার কড়াকড়ি।" - তাই?
“দেশভাগের জন্য ভাগাভাগির নির্বাচনে কারা ভোট দিয়েছিল?" - ইতিহাসের নিবিড় পাঠক আপনি। অবশ্যই জানেন কারা ভোট দিয়েছিল, কি পরিস্থিতিতে দিয়েছিল। এই ভোট যে বিশ্বাসঘাতকতার প্রস্তুতি ছিল ভোটদানকারীরা সেই বিশ্বাসঘাতকতা এবং তঞ্চকতার সম্বন্ধে অবহিত থেকেই ভোট দিয়েছিল কি? আর, যারা ভোট দেয়নি তারা কোন অপরাধে, কার অপরাধে দেশভাগের শিকার হল? শিকারির সাথে সহাবস্থান করার অপরাধে, নিজেদেরই অপরাধে, তাই কি?
"পাকিস্তান আন্দোলন কারা করেছিল?” - ধরে নিলাম, পাকিস্তান থেকে স্বেচ্ছায় ভারতে চলে যাওয়ারা পাকিস্তান চেয়েছিল। যারা ভারত থেকে স্বেচ্ছায় পাকিস্তান-এ গিয়েছিল, তারাও। তারা দুই পক্ষই সবাই যদি না ও হয়, অনেকেই, বেশ। কিন্তু, যারা ভারত থেকে অনিচ্ছায়, কোন উপায় না খুঁজে পেয়ে পাকিস্তান-এ গিয়েছিল, তারাও কি বেশীর ভাগ লোক-ই পাকিস্তান আন্দোলন করেছিল? আর, যারা পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তু হয়ে, উৎখাত হয়ে ভারতে এল, তারাও কি বেশীর ভাগ লোক-ই পাকিস্তান আন্দোলন করেছিল? কাদের সংখ্যা সব থেকে বেশী ছিল?
“১৯৪৭ সালে পূর্ববঙ্গের ধনী কিন্তু সংখ্যায় অল্প হিন্দু সম্প্রদায় দরিদ্র কিন্তু সংখ্যা বেশি মুসলিম সম্প্রদায়ের হাতে মার খাওয়ায় তাদের কান্নাকাটির রবটা বেশি। এই রবটা যতটা না আর্থিক লোকসানের জন্য তারচেয়ে বেশি এতোদিন তাদের জুতো বহনকরা শ্রেণীর হাতে অপমানিত হবার জন্য। ” - কান্নাকাটি করা, গরীব নয়, এমন যে মানুষগুলি সর্বস্ব হারিয়ে, আহত, নিহত পরিজন ফেলে, বাস্তুচ্যূত হয়ে ‘রিফিউজি' হয়ে গেল, তার সব ঐ “ধনী কিন্তু সংখ্যায় অল্প” হিন্দু সম্প্রদায়-এর অন্তর্গত! আর তারা বেদনাকীর্ণ হয়েছে "আর্থিক লোকসানের জন্য" অথবা “এতোদিন তাদের জুতো বহনকরা শ্রেণীর হাতে অপমানিত হবার জন্য”! হয়ত আপনার কথা বুঝতে পারিনি। কি জানি!
“পূর্ববঙ্গের প্রচুর দরিদ্র হিন্দুও এই সময় উলুখাগড়ার পরিণতি বরণ করেছে, কিন্তু তারা দেশভাগের আগেও উলুখাগড়া ছিল বিধায় বিশেষ কান্নাকাটি না করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটা শক্তিশালী শ্রেণী হিসেবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে।" - মানে কি হল? যদি তারা কান্নাকাটি না করে যে ভূখণ্ডে আশ্রয় জুটেছে সেখানকার রাজনীতির ময়দানে লড়ে যায় সেটা ঠিক আছে, কিন্তু উৎখাত হওয়া নিয়ে বেদনা প্রকাশ করলে, যেই করুক, সে কান্না হয়ে যাবে “কান্নাকাটি”, “হাউকাউ”?
“পশ্চিমবঙ্গের গুটিকয় ধনী মুসলিম পূর্ববঙ্গে এসেছিল, তবে তাদের মধ্যে বিশেষ কান্নাকাটি নেই। কারণ, তারা হিসেব-নিকেশ করেই পূর্ববঙ্গে এসেছিল।" তারা ত বিষাদগাথা নামিয়ে দিল অন্যদের উপর। তারা ত স্বেচ্ছায় পরিত্যাজ্য দেশ থেকে প্রার্থিত দেশে গেল, তারা কেন কান্নাকাটি করবে? তারা কান্নাকাটি করেনি বলে বিষাদগাথার বিষাদ সামান্য হওয়ে যায় কি? আর সামান্য না হলে তার গুরুত্ব কি “পাঠক বুঁদ হয়ে পড়ে ফেলতে পারেন" এমন বইয়ের রসদ-এর বেশী আর কিছু নয়?
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
কী বলি( মাথা চুলকানির ইমু)। নিজের আধা খেচড়া বিদ্যা দিয়ে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করছি পাণ্ডবদা।
১.
বহুদেশের সমষ্টি ভারত ছিন্ন ভিন্ন হবার নানান ঐতিহাসিক বিষয় আশায় আছে। সেসব নিয়ে নানান ঐতিহাসিক/পণ্ডিতলোক তাঁদের মতামত দিয়েছেন। ৪৭ এ কেন স্বাধীনতা পাওয়ার পরও ভারত ভাঙতে হলো, এ বিষয়ে নিরপেক্ষ সেরকম কিছু পাওয়া বেশ কঠিন..যে যখন বলেছেন তখন তাঁর ভালোলাগার পক্ষকে আলগোছে আড়াল করে বিরোধীপক্ষের উপর দায় চাপানোর একটা প্রবণতা থেকে বলেছেন যেন। এতসব তালগোলে দুধ ছেঁকে সরটুকু তুলে নেবার ক্ষমতা সেভাবে হয়ত আমার হয়নি। কিন্তু সেগুলো এ বইয়ের আলোচ্য বিষয় না। এখানে রাজনীতি নিয়ে অতটা বলা হয়নি( তবে যেটুকু বলেছেন মোহহীন ভাবে বলার চেষ্টাটা তাতে আছে বলেই মনে হয়েছে আমার) যতটা বলা হয়েছে তার ঘায়ে ঘায়েল মানুষের সুখ দুঃখের কথা। বলা ভালো, মিহিরের নিজস্ব দুঃখের স্মৃতিই এখানে প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। '৬৫ পরবর্তী পাসপোর্ট ভিসার কড়াকড়ি সর্ম্পকে আমার সঠিক জানা নাই।
২.
দেশছাড়ার দুঃখে আমি সময় সুযোগ পেলেই হাউকাউ করি কিন্তু! দু' একটা লেখায় এসেছেও হয়ত। এ সংক্রান্ত অন্য অনেকের হাউকাউও পড়েছি কিছু কিছু। তবে আমাদের শখের দেশ ছাড়বার সাথে ৪৭ কে মিলানো মনে হয় সরলীকরণ হয়ে গেলো! তাই '৪৭ নিয়ে হাউকাউ' এভাবে দেখতে নারাজ আমি। বরং হাহাকার বলি। আর এটা হয়ত ভাষাগত মিল থাকবার কারণেই শুনতে পেয়েছি বেশি। নইলে সিদ্ধুও তো দেশভাগের খড়গের বলি হয়েছিল। তার সম্পর্কে তো সেরকম শুনিনা। কারণ হয়ত এক.সেভাবে কিছু লেখা হয়নি। দুই. ভাষাগত দূরত্ব। পশ্চিমবাংলার সাথে পূর্ববাংলার ভাষাগত মিলটা এই হাহাকারের সাথে একাত্ম হবার একটা কারণ হয়ত বা। যেমন করে বর্তমানে সিরিয়ান -ইরাকী উদ্বাস্তুদের ভীড়ে কোথাও যেন আমাদের একাত্তরের শরণার্থীদের মুখ দেখতে পাচ্ছি! আব্দুলাহ ভাই কিছুটা বলে দিয়েছেন আমার হয়ে। গুরুতর কিছু প্রশ্ন উপস্হিত করলেন পাণ্ডবদা। দেশভাগের অন্যান্য ইতিহাসের সঙ্গে মিলিয়ে পড়লে অনেক প্রশ্ন উঠেও আসে পাঠকের মনে। সব উত্তর না পেলেও প্রশ্নগুলোই কিন্তু বিরাট লাভ। ভবিষ্যতে এসব প্রশ্নের যথার্থ উত্তর খুঁজে পাবো হয়ত...তার জন্য চাই আরো পাঠ..পাঠ এবং পাঠ।
৩.
এটা মিহিরের পিসিমায়ের দেখা স্বপ্নের কথা। স্বপ্নে মানুষ কতো কিই তো দেখতে পারেন। হতে পারে তিনিও সেই 'পঙ্খিরাজ ঘোড়ার' সাওয়ারি হয়েছিলেন স্বপ্নে। 'নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে'ও প্রতিবেশিদের মাঝে সম্প্রীতির এই আভাসটা পেয়েছিলাম কিছুটা। মিথ হলেও এমন মিথে মন আস্হা রাখতে চায়। ..... তবে মিহির কিন্তু স্পষ্ট করেই বলেছেন 'ঐ সময়টাতে আমাদের ওখানের কোন হিন্দুই মনে করত না যে কোন মুসলমান দাঙ্গা বিরোধী .. হতে পারে ... । হিন্দুদের মুসলমানদের প্রতি অপ্রীতি আমি শিশুকাল থেকেই দেখেছি ... কি মুসলমান কি নম:শূদ্র সকলকেই উচ্চবর্ণীয় হিন্দুসমাজ সমবিচারে নিয়েছিল। আমাদের ওখানের মুসলমান এবং নিম্নবর্ণীয় মানুষ উচ্চবর্ণীয়দের কাছে কোনদিনই ভালো ব্যবহার পায় নি .. ' সেসময়ে কলকাতার দাপটে চিটিগাং মাথা তুলে যেন না দাঁড়াতে না পারে সেসব ইতিহাসে তো লিখাই আছে। তারপরও একটা মুখরক্ষা মূলক সৌজন্যতা তো ছিলই এসব মানুষদের মধ্যে, প্রতিবেশিদের মধ্যে। যেটা দেশভাগ,৫০ এর দাঙ্গা আর দুর্ভিক্ষের দৌরাত্বে খসে যায়।
দেবেশ রায়, অসীম রায়ের লেখাগুলোয় কতটা 'বুঁদ' হওয়া যায় সেটা দেখবার আকাঙ্খা থাকলো।
পোস্ট পাঠ এবং ভালো লাগার জন্য কৃতজ্ঞতা, আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ষষ্ঠপান্ডব ভাইয়ের সাথে একমত। ভাগ তো হয়েছিল বাংলা আর পাঞ্জাব। অখন্ড ভারত নামে কোন দেশ ব্রিটিশ শাসনের আগে ছিল কি??
ব্যাপারটা দুই বঙ্গে যে একই কায়দায় ঘটে নি, সে বিষয়টাও গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করা দরকার। নিপীড়নে মূলগত পার্থক্য কি, তার বর্ণনা এবং ব্যাখ্যা করতে গেলে আলোচনা বিশাল আকার ধারন করবে, কিন্তু সাদা চোখে ঘটনার ফলাফল দেখেই পরিস্কার বোঝা যায়- নিপীড়নে মূলগত ভাবে পার্থক্য ছিল। যে কারনে পূর্ব থেকে পশ্চিমে যেমন জনস্রোত প্রবাহিত হয়েছিল, তুলনায় পশ্চিম থেকে পূর্বে তার প্রকোপ ছিল লক্ষণীয় ভাবে কম।
মোটা দাগে পার্থক্যটা হল, নিপীড়ন দুই বঙ্গেই থাকলেও এক অংশে যেমন মনোভাব ছিল পাকিস্তান মুসলমানদের দেশ, হিন্দুদের এখানে স্থান নেই, অন্তত মর্যাদার সঙ্গে অবস্থানের অধিকার নেই। তাই মুসলমানের দেশটা সময়ের সাথে সাথে শুধুমাত্র পাক পবিত্র মুসলমানে ভরে ঊঠেছে, এবং আশ্চর্যের বিষয়- ইরাক, সিরিয়া, ইজিপ্ট, ইয়েমেন, লেবানন, সর্বত্র চিত্র একই রকম। অপর অংশে দেশটা হিন্দুদের ছিল বটে, তবে মুসলমানদেরও ছিল। অমর্যাদা যতটুকু ছিল, তাতে রাজনীতি কমই ছিল, যতটা ছিল জাতপাত এবং সামাজিক ভেদবুদ্ধি। সময়ের সাথে সাথে ধর্মীয় ভেদবুদ্ধি শিথিল হয়ে আসার কারনে এবং সামাজিক তিক্ততার অবসান ঘটায় মুসলমানেরা আলাদাভাবে সেখানে আর অপাংতেয় নয়।
সহজ হিসাব! আমি যদি অনুকূল পরিস্থিতিতে একটি নতুন বাড়ি বানিয়ে সেখানে গিয়ে উঠি, সেটা আমার জন্য আনন্দের বিষয়। আর নিগ্রহ করে, অপমান করে আমাকে গৃহত্যাগে বাধ্য করা হলে তা আমার জন্য মর্মবেদনার বিষয়।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এ ভালো, ও খারাপ। ও খারাপ কিন্তু সে আরেকটু বেশি খারাপ। দেশভাগ নিয়ে প্রায় সকল বিশ্লেষণই এই দোষ চাপাচাপিতেই সীমাবদ্ধ। জয়া চ্যাটার্জির বেংগল ডিভাইডেড এ কিছুটা আঁচ পাওয়া যায় আসল প্রেক্ষাপট টার। কৃষক প্রজা আন্দোলন কি করে মুসলিম লীগের পাকিস্তান আন্দোলন হলো তা বুঝতে কংগ্রেসিরা কিভাবে কাতারে কাতারে হিন্দু মহাসভায় ঝুঁকে গেলো সেটা না বিশ্লেষণ করার বিকল্প নেই। সুভাষ বসু কেন কিকড আউট হলেন আর শরতচন্দ্রের মতন বুদ্ধিজীবী সমাজরা কেন দুভাগের দিকেই রাজি হতে থাকলেন এগুলোর উপরে আলো ফেলার সময় এখন এসেছে। দেশভাগের আবেগ নিয়ে ব্যাখ্যান তো অনেকই হলো। কৃষক বনাম জমিদারের আন্দোলন কিভাবে মুসলমান বনাম হিন্দু দাংগায় শেষ হলো এটা না বিশ্লেষণ করলে যাবতীয় স্মৃতিচারণ শেষে এই ধর্মের লোক ভালো আর ওই ধর্মই খারাপ (লোকের কথা তো বাদই দিলাম) ধারার সমাপ্তিই হবে শুধু।
ধন্যবাদ অতিথি মহোদয়,
এই ব্লগের বিষয়বস্তু কিংবা আমার মন্তব্য, কোনটিই দেশভাগের কারন অনুসন্ধান কিংবা দায়ভাগের চাপাচাপিতে অবতীর্ণ হয় নি। ব্লগের বিষয়বস্তু হল দেশবিভাগের ফলে হৃদয়ের যে রক্তক্ষরণ, তারই এক বিষাদগাঁথার সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা, আমার মন্তব্যও সে আলোকেই প্রদত্ত। অনেকে মনে করেন এ দেশের হিন্দুদের যে পরিনতি, সেটাই যথার্থ এবং যুক্তিসঙ্গত, সুতরাং এই বিষাদ নিতান্তই অযৌক্তিক। জানি না এ বিষয়ে আপনার মনোভাব কি।
তবে অনেক কিছু বিশ্লেষণ করে, অনেক কিছুর উপর টর্চের আলো ফেলে, আপনি দেশবিভাগের তত্ত্ব তালাশের পরামর্শ দিয়েছেন। আপনার প্রদত্ত ইঙ্গিত থেকে অনুমান করা যায়- যথাযথ ভাবে সেসব করলেই প্রমানিত হয়ে যাবে যে দেশ বিভাগের মূল দায় কংগ্রেস তথা হিন্দু নেতৃবৃন্দের। আর সেটা প্রমানিত হলেই পরবর্তীতে এদেশ থেকে হিন্দু খেদাও কার্যক্রম বেশ জাস্টিফাইড হয়ে যাবে। সাধু! সাধু!!
এ্যাটলিস্ট আমার দেয়া বইটা নিয়ে একটু খোঁজখবর নিয়ে তারপরে এরকম আলপটকা মন্তব্য করলে ভাল হয় না? এধরণের ঢালাও মন্তব্য না করার জন্যই সেটা উল্লেখ করেছিলাম। ইতিহাস জানবেন না আর দেশভাগের সাম্প্রদায়িকততার 'মূলগত পার্থক্য' নিয়ে বিরাট মন্তব্য ফেঁদে বসলে হবে? যে পয়েন্টগুলোর কথা বললাম তা নিয়ে একটু ঘেঁটে দেখুন তারপরে নাহয় আলোচনা করা যাবে। শোকগাঁথার পুনরাবৃত্তি রোধে কারণ বিশ্লেষণ এর বিকল্প নেই। তাই আপনার মতন সাম্প্রদায়িকতার 'মূলগত পার্থক্য' (যেটা আরেকধরণের রেসিজম) আর জাস্টিফিকেশনে আমার বিশেষ রুচি নেই। আমার রুচি নির্মোহ বিশ্লেষণে। আর দোহাই লাগে অনুমানের ধান্দায় যাবেন না, সন্দেহ কাটাতে জিজ্ঞাসার বিকল্প নেই। যেমন বিকল্প নেই পড়াশুনার।
জনাব বেনামী অতিথি,
আমি আমার মন্তব্যে পরিস্কার করে বলেছিলাম যে এই ব্লগ এবং আমার মন্তব্য, দুটোই দেশবিভাগের ফলে হৃদয়ের যে রক্তক্ষরণ, তারই এক বিষাদগাঁথার আলোচনা পর্যালোচনা, দেশভাগের কারন অনুসন্ধান কিংবা দায়ভাগের তালুক সন্ধান নয়। আর তাতেই আপনি ধরে নিলেন দেশ বিভাগের ইতিহাস ভুগোল তাবৎ জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার জন্য আমার একটি বই পড়া অত্যন্ত জরুরী, এবং জ্ঞান দানে উৎসাহী হয়ে উঠলেন।
আর অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি আপনার দেয়া(?) বইটা এবং তার বাংলা ভার্সনটা আগে থেকেই আমার কাছে ছিল, অতএব আগেই পড়া ছিল। বলাইবাহুল্য তাতে করে আমার মন্তব্যের কোন হেরফের হওয়ার কোন কারন খুঁজে পেলাম না। আর একটা কথা, এই একটা মাত্র বই পড়েই আলোচ্য বিষয়ে মহাপণ্ডিত ইতিহাসবিদ হওয়া সম্ভব বলেও মনে করি না। আপনি জয়া চ্যাটার্জির বইয়ের নামটা অসম্পূর্ণ ভাবে উল্লেখ করেছেন, পুরো নামটা "বেংগল ডিভাইডেড- হিন্দু কম্যুনালিজম এন্ড পার্টিশন, ১৯৩২-১৯৪৭"। নাম থেকেই পরিস্কার, এতে প্রধানত হিন্দু সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক রুপ এবং তার আলোকে বাংলা ভাগ এর দিকটায় আলোকপাত করা হয়েছে। বাংলা ভাগের আরও বহু কারন রয়েছে, সে সব বিষয়ে যদি সম্যক ধারনা লাভ করতে চান, তা হলে আরও বহু বই এবং জীবনের নানা ক্ষেত্র থেকে তা আহরণ করার প্রয়োজন রয়েছে।
রিভিউ ভাল লেগেছে। পঞ্চতারকা।
অসংখ্য ধন্যবাদ হে ভাবনা দা।
১। ভারত ভাগের অশ্রুকণা (করুণাময় গোস্বামী) পড়েছেন?
২। ট্যাগের "হুদাই ফরফরানি" সরিয়ে দিন, ভাল লাগছে না।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
"ট্যাগের "হুদাই ফরফরানি" সরিয়ে দিন, ভাল লাগছে না।" - সহমত।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
১. না রে বাপ এটা পড়িনি। ভারত ভাগ নিয়ে আমার পড়াশোনা লজ্জাজনক ভাবে খুবই কম।
শুধু ভারত ভাগ না, আসলে সব বিষয়েই আমি খুবই কম পড়েছি
২. দুই জনের আপত্তির মুখে আনন্দের সহিত উহা সরায়ে দিলাম
১। ভয় নেই। আমিও পড়িনি। একসময় খুশবন্ত সিঙের "ট্রেন টু পাকিস্তান" আর কৃষণ চন্দরের "গাদ্দার" খুব নাড়া দিয়েছিল। দুটোই পাঞ্জাব ভাগের মানবিক উপাখ্যান। তারপর থেকে বাংলা ভাগের সাহিত্য খুঁজেছি। পাইনি। ওপারে কিছু আছে, এপারে একেবারেই নেই (বা চোখ এড়িয়ে গেছে)। এই বইটা কিনেছি এই বইমেলাতে, এখনও পড়িনি। বই একখানে, আমি আরেকখানে, মাঝে কাঁটাতার নেই যদিও...
২। হুমম... বহুদিন পর (নাকি প্রথমবারের মত?) একমত হবার জন্য ধন্যবাদ।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ভয় না রে। বিব্রত হই , লজ্জিতও বটে। বললাম না, আমার পড়াশোনা খুবই কম
এরকম ঘটনা আসেনি আগে। এখানে এসেছিল তাই ঘটেছে- সিম্পল! আপ্নেরেও ধইন্যবাদ
ইন্টারেস্টিং!
****************************************
আমার দাদুর মুখে শুনতাম তাঁর ফেলে আসা কলকাতার কথা, ফেলে আসা শৈশব, কৈশোর, তারুণ্যের কথা। সেইসব গল্প শুনতে শুনতে কখনো তাঁর মুখে বিষাদের ছায়া খুঁজিনি। আজকাল খুঁজে পাই। মৃত্যুর আগে তাঁর করুণ মিনতি আজো আমার কানে বাজে- "আমাকে একবার ওপারে নিয়ে চলো দাদু ভাই"।
বিষাদ বৃক্ষ বইটি পড়ব পড়ব করেও পড়া হয়নি। এই অসাধারণ রিভিউ পড়ে বইটি পড়তে শুরু করলাম।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
.....
বইটা নিয়ে তোমার অনুভূতি জানবার আগ্রহ থাকলো ভাইটু!
....আপনার অনুভূতি কেমন হয় বইটা পড়ে জানবার আগ্রহ থাকলো। কত কিছুই দেখিনি রে আপা! বইয়ের পাতার লেখাকে সম্বল করে তাই অনেক কিছু জানতে হয়। লিখুন না আপনার সেসব স্মৃতি নিয়ে। অনেক অনেক ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা পোস্ট পাঠ পূর্বক সহৃদ মন্তব্যের জন্য।
বইটি আমাকে কলকাতার এক বন্ধু উপহার দিয়েছে। পড়িনি এখনো। এখন যে বইটি পড়ছি সেটি শেষ হলেই পড়বো। রিভিউ খুব ভাল হয়েছে। কি করে যে এত ভাল লেখো। বাবার কাজের সূত্রে দেশের নানান শহরে কেটেছে আমার ছোট বেলা। আমরা কিন্তু তোমাদের চে অনেক বেশী দেখেছি হিন্দু মুসলমানের সম্প্রীতি। পূজোর খাবার আমাদের বাড়ী আসতো, কোরবানী ঈদেও বাবার হিন্দু কলিগরা আসতেন। পূজোর ঘর বা রান্না ঘরে ঢুকা নিষেধ হলেও অন্য কোন কিছুতে বাঁধা ছিল না। আমরা কিছু মনেও করতাম না। হালখাতা ছিল হিন্দু এবং মুসলমান দের মিলিত উৎসব। এখন কার বাংলাদেশ কে আর চিনতে পারিনা। সারাজীবন পাশাপাশি থেকেও শুধু ধরমের কারনে অপছন্দ করা মেনে নেয়া যায় না।
১৯৪৭ সালে যে প্রধান ঘটনাটা ঘটেছিল সেটা হচ্ছে সভ্যতার শুরু থেকে গড়ে ওঠা ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মূল চরিত্রটি পরিবর্তন করে এককেন্দ্রিক দুটো দেশ গঠন করা। ১৯০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনে ব্রিটিশরা যে কাজটি করেনি ১৯৪৭ থেকে পরবর্তী এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে সেটি করা হয়েছে। এর মূল নিয়ন্তা হিসেবে যদি কংগ্রেস আর মুসলিম লীগকে ধরলেও তাতে ভারতবর্ষের সাধারণ নাগরিকদের দায়টি হ্রাস পায় না। কংগ্রেস আর মুসলিম লীগের জন্ম যেভাবেই হয়ে থাকুক ১৯৪৭ সালে তাদের হর্তাকর্তাবিধাতা ভারতীয়রাই ছিল। সুতরাং উড়ে এসে বসা রেডক্লিফের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে পালাবার উপায় নেই। বর্তমান ভারত রাষ্ট্রটি যদি রাষ্ট্রব্যবস্থায় ভারতবর্ষের মূল চরিত্রটি ধরে রাখতো তাহলে দোষটা পাকিস্তান তথা মুসলিম লীগের ওপর চাপানো যেত। কিন্তু তাতো হয়নি। ফলে কয়েকশত দেশীয় রাষ্ট্র রাতারাতি ভারত আর পাকিস্তানে বিলীন হয়ে গেছে। এখন কেউ যদি এমনটা দাবী করেন যে তিনি ভেবেছিলেন ভাগাভাগির পরেও ভারত-পাকিস্তান ভারতবর্ষের মূল চরিত্রটি ধরে রাখবে তাহলে তিনি নিজের সাথেই নিজে মিথ্যাচার করছেন। ভাগাভাগির ভোটের আগেই কী হতে যাচ্ছে সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
উত্তর ভারত বা দক্ষিণ ভারতের অসংখ্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল যে মুসলিমদের রাষ্ট্র পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হতে পারবে না বা সিন্ধু-বেলুচিস্তান-পূর্ব বাংলার অসংখ্য হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল যে ভারতের অন্তর্ভূক্ত হতে পারবে না এই সত্যটা সবার কাছেই স্পষ্ট ছিল। তার পরেও ভাগাভাগির ভোট হয়েছে এবং ভারতবাসীরা সেখানে ভোট দিয়েছে। বিশ্বাসঘাতক হিসেবে কংগ্রেস বা মুসলিম লীগ নেতৃত্বকে দোষারোপ করার আগে তাদের সাথে নিজেদের যোগসূত্রটাও খতিয়ে দেখা উচিত। নিজেদের দায় এড়িয়ে অন্যদের ওপর দোষ চাপানোর এই প্রবণতা দেখে আমি ‘হাউকাউ’ এবং ‘কান্নাকাটি’ শব্দগুলো ব্যবহার করেছি।
বাংলার কথাই ধরুন। কেন শরৎ বোস আর আবুল হাশিমদের প্রচেষ্টা হালে পানি পায়নি সেটা ১৯৩৭ সাল পরবর্তী যুক্ত বাংলার সরকার গঠন ও তার কার্যক্রম থেকে স্পষ্ট। ঐ গোলমালগুলো কারা করেছিল? সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নামে নিজ অঞ্চলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরকে কারা কচুকাটা করেছিল? এইসব লোকজন বাইরে থেকে আসেনি। বিভেদের বীজ বহু আগেই বোনা ছিল। সেটা নিজেরাই বুনেছিল। সুতরাং আজ তার বীভৎস ফল দেখে অন্যকে দোষারোপ করলে নিজেদের পাপ স্খালন হয় না। যদি বলেন এরা সংখ্যা বেশি ছিল না, তবে এই সত্যটাও মানতে হবে যে সংখ্যাগরিষ্ঠরা এটাকে ঠেকানোর চেষ্টা না করে নিরব সম্মতি দেবার কাজটা করেছিল। ফলে ১৯০৫ সালে যারা বাংলা ভাগের বিপক্ষে লড়েছিল ১৯৩৭-এর পরে তারাই বাংলা ভাগ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। নদীয়া, দিনাজপুর বা সিলেটের কোন থানা, কোন ইউনিয়ন কার ভাগে পড়বে এটা ঠিক করা রেডক্লিফের মাথায় আসেনি। এই দুর্বুদ্ধি আমরাই যুগিয়েছি।
ভারত ভাগ (পড়ুন বাংলা ভাগ) নিয়ে বাংলা ভাষায় যা আফসোস্-কান্নাকাটি সেটা মূলত পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিতে বাধ্য হওয়া পূর্ববঙ্গের মানুষদের। তার বিপরীতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পূর্ববঙ্গে যারা আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তাদের লেখায় এমনটা প্রায় পাওয়াই যায় না। অথচ দেশত্যাগে বাধ্য করা, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের শিকার তারাও হয়েছিলেন। পরিমানে কম না বেশি এই প্রশ্নটাই অবান্তর। অন্যায় হয়েছে এটা অনস্বীকার্য।
উৎখাত হওয়া নিয়ে বেদনা প্রকাশ দোষের কিছু নয়। কিন্তু সেই বেদনা প্রকাশে অসমতা প্রকট হলে সেটার কারণ নিয়ে ভাবার অবকাশ থাকে। পূর্ববঙ্গের দরিদ্র বা নিম্নবর্ণের হিন্দুরা দেশ ভাগের আগেও শোষিত হয়েছেন, অত্যাচারিত হয়েছেন। দেশ ভাগের প্রাক্কালে তাদের আগের দুর্দশার সাথে হিন্দু হবার অপরাধে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের শিকার হয়ে উদ্বাস্তু হতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ দেশ ভাগের বেদনা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের রচনায় দেশ ভাগ পূর্ববর্তীকালে পূর্ববঙ্গে অত্যাচারিত-শোষিত হবার কথা প্রায় পাওয়াই যায় না। এখান থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় এই লেখকদের শ্রেণী চরিত্রটি কী। একইসাথে তাদের রচনায় যখন পশ্চিমবঙ্গ থেকে উৎখাত হওয়া মানুষদের কথা পুরোপুরি অনুল্লেখিত থাকে তখন তাদের বিচার-বিশ্লেষণ ক্ষমতাটিও স্পষ্ট হয়।
মিহির সেনগুপ্ত, দেবেশ রায়, অসীম রায় - বাংলা দেশের এক একটা অংশের মানুষের যে ইতিহাস বর্ণনা করেছেন সেটা শুধু দেশভাগে সীমাবদ্ধ নয়। এমনকি সেই ইতিহাসের লক্ষ্য দেশভাগকে তুলে ধরাও নয়। তাই তাঁদের রচনা স্বীয় কনটেন্ট, ফরম্যাট আর প্রেজেন্টেশনের জন্যই অবশ্যপাঠ্য হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
@ ষষ্ঠ পাণ্ডব
পাণ্ডব দা,
দুঃখিত, আপানার মনোভাবের সাথে আবারও একমত হতে পারলাম না। কেন পূর্ববাংলার ত্রিশ শতাংশ হিন্দু জনসংখ্যা কমতে কমতে দশ শতাংশের নীচে চলে এসেছে, আর কেন পশ্চিম বাংলার ১৫ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যা না কমে বেড়ে গিয়ে ত্রিশ শতাংশের কাছাকাছি চলে গিয়েছে, এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তরের মধ্যেই রয়েছে অনেক কিছু। সে উত্তর কিছু রয়েছে পূর্ববাংলার দেশত্যাগী লেখকদের লেখায়, কিন্তু তার চেয়েও বেশী রয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের যে সকল কোটি কোটি অলেখক মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে, এবং আরও কোটি কোটি যে সকল অলেখক মানুষ দেশত্যাগ করতে না পেরে এ দেশেই রয়ে গিয়েছেন, তাদের মর্মস্পর্শী দীর্ঘশ্বাসে। আপনি অনেকবার পশ্চিমবঙ্গে গিয়েছেন, আমিও। দেশত্যাগী পরিচিত, স্বল্প পরিচিত কিংবা অপরিচিত বহু মানুষের সাথে নানা সময়ে কথা হয়েছে, দেশেও তাদের খুব কাছ থেকে দেখে আসছি জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে, বিগত চল্লিশ বছর থেকে। আপনিও নিশ্চয় সেরকম ভাবেই তাদের দেখে আসছেন অনেক বছর থেকে। সে দেখায় আপনি আবেগবর্জিত নির্মোহ একটি অবস্থান গ্রহন করেছেন, কিন্তু আমার মতে অনেক কিছুই আপনার দৃষ্টির এবং অনুভবের বাইরে রয়ে গেছে।
ক্যবিনেট মিশনের কাছে পাকিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে তার বক্তব্য প্রদানকালে মিঃ জিন্নারও প্রধান যুক্তি ছিল এরকম- ভারতের অখণ্ডতা রূপকথা ছাড়া আর কিছু নয়, ভারত কখনও এক রাজ্য ছিল না। সভ্যতার শুরু থেকে ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মূল চরিত্রটি যে রকম, সারা বিশ্বেই তো সেই একই রকম চরিত্র। প্রাচীন কাল থেকে ভারত অনেক বারই এককেন্দ্রিক বিশাল ভারতে পরিণত হয়েছে, আবার অগণিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভাজিত হয়েছে, বিশ্বের বহু দেশই তেমন অবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। আধুনিক ইউরোপের প্রায় সকল দেশ, আরব জাহান, আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ, এশিয়ার অধিকাংশ দেশ, সবাই একই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। ইংরেজরা এ দেশে দখলী সত্ত্ব কায়েমের প্রাক্কালে জার্মান রাষ্ট্রও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল। তবে ১৭৫৭ সাল আর ১৯৪৭ সাল এক নয়। ১৭৫৭ সালে সত্যিকার অর্থে আধুনিক জাতীয়তাবাদী বোধ ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ছিল না, বাংলার সাধারন মানুষেরও কোন সমন্বিত জাতীয়তাবাদী চেতনা ছিল না। কিন্তু ১৯৪৭ সালে ভারতের সকল অঞ্চলের অধিকাংশ সাধারন মানুষের মনে ভারতীয় নতুবা পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদ আসন গেড়ে বসেছিল। আমার মনে হয় না, দেশীয় রাজ্যগুলোকে ভারত কিংবা পাকিস্তান রাষ্ট্রে অধিভুক্ত করে নেয়ায় সেসব রাজ্যের রাজা গজা ছাড়া সেখানের জনগণ কেউ অখুশী হয়েছে। তবে, আপনার সাথে একমত, বাংলা তথা ভারত ভাগের বিষয়ে র্যাকডক্লিফকে দোষী সাব্যস্ত করার কোন মানে হয় না।
ভাগাভাগির ভোট বলতে আপনি কোন ভোটটার কথা বলতে চাচ্ছেন ঠিক বুঝতে পারছি না, ১৯৪৬ সালের ভোট? যদিও এই ভোটে সারা ভারতে মুসলমান আসনগুলোর অধিকাংশ লাভ করে মুসলিম লীগ, কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলা ছাড়া আর কোন প্রদেশে মুসলিম লীগের অবস্থা আহামরি কিছু নয়। বাংলার বাইরে বোধ হয় সিন্ধুতেই তারা কোন রকমে সরকার গঠন করেছে, দক্ষিন ভারতে তো সে রকম কোন সম্ভাবনাও ছিল না। কিন্তু বাংলায় এই অভাবিত অবস্থা সৃষ্টির জন্য বহুদিন থেকে পূর্ব-বাংলায় হিন্দু জমিদার মহাজনদের নিপীড়ন একটা ফ্যাক্টর ছিল বটে, কিন্তু সিআর দাসের অকাল প্রয়ান, ফজলুল হকের অযথা মুসলিম লীগে যোগদান, সুভাষ বোসের দৃশ্যপটের বাইরে অবস্থিতি, আবুল হাশেম-সোহরাওয়ার্দীর অতি বিলম্বিত বোধোদয়, কংগ্রেসের উন্নাসিক এবং অপরিপক্ক আচরণ, মুসলিম লীগের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা, এসব ফ্যাক্টর ক্রিয়াশীল না থাকলে, এমনকি এর যে কোন একটি না ঘটলে বাংলায় মুসলিম লীগের পালে হাওয়া না লাগার সম্ভাবনাই বেশী ছিল। আর বাংলায় সেই অভাবিত অবস্থা সৃষ্টি না হলে পাকিস্তানের স্বপ্ন দিবাস্বপ্নই থেকে যেতে পারতো।
অন্যকে দোষারোপ না করলেও যারা এইসব দাঙ্গা ফ্যাসাদ সৃষ্টির জন্য মূল ভূমিকা পালন করেছিল, তাদের তো দোষারোপ করা যায়, তাই না? ১৯০৫ সালে যারা বাংলা ভাগের বিপক্ষে লড়েছিল, তারা হয়ত একটা খণ্ডিত দেশাত্ববোধ থেকে এটা করেছিল, হয়ত তাদের কাছে বাংলার অর্থনীতির প্রকৃত রূপটা পরিস্কার হয়ে ধরা দেয় নি, কিন্তু তবুও একটা পবিত্র বোধই সেখানে ছিল। আর ১৯৪৭ সালে তারা বাংলা ভাগ করতে চেয়েছে, কারন তারা পাকিস্তান নামক একটি মুসলিম দেশের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে বসবাস করতে চায় নি, যে দেশটির ঘোষিত নীতিই হল “পাকিস্তান মুসলমানদের দেশ”। কলকাতা ও বিহারের ভয়াবহ দাঙ্গার পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে বসবাসের বিপদ তারা ঠিকই অনুমান করতে পেরেছিল, যা পরবর্তীতে হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছিল পূর্ববাংলার সংখ্যালঘু জনগণ। পশ্চিম বাংলার সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ও একই রকম বিপদের আশঙ্কা নিয়ে জীবন শুরু করেছিল, কিন্তু তাদের জীবন কি একই রকম বিপদাপন্ন হয়েছিল?
এইখানেই আপনি একটা অতি সরলীকরণ করে যাচ্ছেন। পূর্ববাংলা থেকে বিতাড়িত লেখক যে পরিমান ছিলেন, পশ্চিম থেকে এই বাংলায় সেই পরিমান ছিলেন কি? কেন পশ্চিম থেকে অভিবাসনের সংখ্যা খুবই কম, সেটি কি বিবেচ্য বিষয় নয়? যে স্বল্পসংখ্যক লেখক অভিবাসন করেছিলেন, তাঁরাই বা কেন সেভাবে কিছু লিখলেন না? তাদের উপর পাকিস্তান সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছিল, নাকি লেখার খুব বেশী কিছু ছিল না, এটাও কি বিবেচ্য বিষয় নয়? আর যারা পশ্চিমে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাঁরা যদি দীর্ঘদিন ধরে তাদের জন্মভুমির প্রতি মায়া অনুভব করেন, সেটা কি তাদের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে?
পূর্ববঙ্গের দরিদ্র বা নিম্নবর্ণের হিন্দুরা দেশ ভাগের আগেও শোষিত হয়েছেন,অত্যাচারিত হয়েছেন। এইরকম শোষিত এবং অত্যাচারিত হবার বিষয়টি বাংলার সকল অংশের জন্য, ভারতেরও সকল অংশের জন্য, এমনকি সারা বিশ্বের জন্যই প্রযোজ্য। এমন নয় যে পূর্ববাংলা কিংবা পশ্চিম বাংলায় যে সকল মুসলমান ভূস্বামী ছিলেন, তারা তাদের রায়তদের সাথে একেবারে বিপরীত আচরণ করতেন। যখন দেশভাগ এবং দেশত্যাগের দুর্ভোগ কোন লেখনীর প্রধান উপজীব্য, তখন তার সাথে জাগতিক অন্যান্য সকল দুর্ভোগের বিষয়বস্তুও তুলে আনতেই হবে কেন, ঠিক বুঝলাম না।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
কত কিছু যে রয়ে গেল না পড়া! রিভিউ ভালো লেগেছে দিদি! বইটা পড়ার আগ্রহ বাড়িয়ে দিলেন।
আমার বাবা পূর্ববঙ্গ থেকে আসা মানুষ, সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ছয় ভাইয়ের পাঁচ ভাই-ই সপরিবারে চলে এসেছিলেন এপারে। তাই এ বিষয়টা আমাকে টানে আরো বেশি। ধন্যবাদ, জানানোর জন্য।
____________________________
সম্ভব হলে বইটা পড়ে ফেলুন প্রোফেসর, ভালো লাগবে।
পোস্ট পড়ে মন্তব্য করবার জন্য অনেক ধন্যবাদ
অনেক ভালো রিভিউ, আয়নামতি। তারা মেলা পেলে, আমি আর দিয়েই বা কি করব ভারত বিভাগ খুব নাড়া দেয়, তার কিছুদিন পরই আমার বড় পিসি শ্বশুরবাড়ির মানুষদের সাথে সেই যে ওপারে গেল, আজ । অবধি তার সাথে দেখা হল না।
ভালো থেক।
দেবদ্যুতি
তোমার তারার স্পেশাল বাত্তি তো বুঝো না কেনু সুইটি!
দেখোইনি তাঁকে? যেতে পারো তো ওঁর কাছে। কেমন না? আপন আত্মীয় অথচ মাঝে কাঁটাতারের বাধা।
পড়েছো দেখে খুব আনন্দ পেলাম। ধন্যবাদ জেনো।
রিভিউ ভাল লেগেছে, মন্তব্য আরো বেশি। চলুক।
বিশেষ কিছু মন্তব্য এই পোষ্টকে সমৃদ্ধ করেছে। সেজন্য একলহমাদা, পাণ্ডবদা এবং বিশেষভাবে আবদুল্লাহ ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমি যে কতো কম জানি এবং আমার পড়াশোনা কতো কম সেটা আপনাদের আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে।
পোস্ট পাঠ এবং মন্তব্যের জন্য স্যাম্ভাই কে অসংখ্য ধন্যবাদ।
বইটা পড়েছি। মিহির সেনগুপ্তের সব লেখাই গুরুত্বপূর্ণ। 'বিষাদবৃক্ষ' সে-অর্থে একটি এপিকগ্রন্থ।
আপনার লেখা ভালো লেগেছে।
(আনা)
আমি মিহির সেনগুপ্তের এটাই পড়লাম ভাই। অন্য লেখা পেলে পড়বার আগ্রহ আছে।
বিশেষ করে শরণার্থীর মুক্তিযুদ্ধ বইটা। আপনাকে ধন্যবাদ আনা।
পড়ার ইচ্ছে আছে অনেক দিনেরই, কিন্তু বেশি কষ্ট লাগে মানুষের এমন সব কাহিনী জানতে, শুনতে, পড়তে। তারপরও কোন একদিন পড়ব আশা করি-
facebook
নতুন মন্তব্য করুন