একাধারে তিনি কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিকার, চিত্রনাট্যলেখক, নাটক রচয়িতা, প্রবন্ধকার, কলামিস্ট। মানুষটির অনেকগুলো পরিচয়। যেকারণে তাঁকে সব্যসাচী লেখক হিসেবে অভিহিত করা হয়। কিন্তু তিনি নিজে ঠিক কোন পরিচয়ে স্বস্তিবোধ করেন? উত্তরটা সৈয়দ শামসুল হক নামের সব্যসাচীর মুখেই শুনে নেয়া যাক "কবিতা হচ্ছে ভাষার সর্বোত্তম, সর্বোচ্চ, সবচে' সাংকেতিক প্রকাশ। কাজেই যিনি কবিতা লিখেন তাঁকে কবি-ই বলতে হবে, এবং তাঁর অন্য সব লেখা ঐ কবি কাঠামো থেকেই ওঠে আসে।" আগাগোড়া কবিতায় মগ্ন সৈয়দ হকের স্বগোতক্তি," আমাকে যদি আরেকটা জীবন দেয়া হয় আমি শুধু কবিতাই লিখতাম" বোঝা যাচ্ছে, তিনি নিজেকে একজন কবি হিসেবে ভাবতে সবচে' স্বস্তিবোধ করেন। আর স্বস্তি যেখানে, সুখের মতো সৃষ্টিশীলতাও সেখানে বসত গড়ে। দু'হাতে তাই লিখে গেছেন সৈয়দ হক 'সৃষ্টি সুখে উল্লাসে', অজস্র অজস্র কবিতা। চিত্রকল্পের দৃশ্যগত ও ইন্দ্রিয়গম্য দুটি ধারা সৈয়দ হকের কবিতাকে পাঠকের কাছে করে তোলে হৃদয়গ্রাহী, জীবন্ত।
"জামার ভিতর থিকা যাদুমন্ত্রে বারায় ডাহুক,
চুলের ভিতর থিকা আকবর বাদশার মোহর,
মানুষ বেকুব চুপ,হাটবারে সকলে দেখুক
কেমন মোচড় দিয়া টাকা নিয়া যায় বাজিকর ৷
চক্ষের ভিতর থিকা সোহাগের পাখিরে উড়াও,
বুকের ভিতর থিকা পিরীতের পূর্ণিমার চান,
নিজেই তাজ্জব তুমি – একদিকে যাইবার চাও
অথচ আরেক দিকে খুব জোরে দেয় কেউ টান৷
সে তোমার পাওনার এতটুকু পরোয়া করে না,
খেলা যে দেখায় তার দ্যাখানের ইচ্ছায় দেখায়,
ডাহুক উড়ায়া দিয়া তারপর আবার ধরে না,
সোনার মোহর তার পড়া থাকে পথের ধূলায় ৷
এ বড় দারুণ বাজি, তারে কই বড় বাজিকর
যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর ৷"
(কবিতা: 'পরাণের গহীন ভিতর-১')
চিত্রকল্পের কী চমৎকার জীবন্ত খেলা খেলতে জানেন সৈয়দ হক তাঁর শব্দের কারিকুরিতে। বাজিকর যেভাবে রুমালের ধাঁধায় মাত করেন দর্শকহৃদয়। সেভাবে আমাদের এই শব্দবাজিকর পরাণের গহীন কোণে আলোড়ন তুলে যান শব্দবাজির অসাধারণ নৈপুণ্যে। সার্থক কবিতা তো একেই বলে। আপ্লুত পাঠক হৃদয়ে কবির জন্য মুগ্ধতা জমা হয়। আরেকটি কবিতা পড়ে নেয়া যাক:
"এখনও পরায় মনে পরাগের মতো রাত নেমে এলে বাংলার প্রান্তরে
সেই দূর কবেকার মেয়েদের দীর্ঘ কালো চুল।
পাখির চিৎকার শুনে এখনও তো করে উঠি ভুল-
বুঝি সেই! সেই তারা! এখনও মেলার দিনে ডাকে যেন কেউ
আমারই এ ভুলে যাওয়া ডাকনাম ধরে।
তখন ভেতর থেকে কবেকার ধানগন্ধ জেগে ওঠে গাঢ়-
শাড়ির সবুজ ভেজা দুপুর রোদ্দুর,
শালিকের ওড়াউড়ি, চঞ্চল চড়ুই ঝাঁক
দেখা যায় দু‘চোখে যদ্দুর।
জলের ছবির মতো ভেসে ওঠে কুটিরের রোদ-সোনা খড়,
ফিসফাস বলে যেন কেউ কানে : পায়ের খড়ম কবি এইবার ছাড়ো।
তবে! কী ভালোই হতো যদি দেখা দিতো পুনরায়
প্রেমিকের বেশে
আমার যৌবনপোড়া মরাকাঠ এই দেহখানি!
তবে আজ হাহাকার ঠেলে আমি দাঁড়াতাম এই প্রত্ন গ্রামটিতে এসে,
বলতাম- ভাষা দাও ওলো দয়াবতী বীণাপানি।
বলতাম- ফিরে দাও আমার চোখের পাখি
আমার সে মেয়েটি আবার
চুলে যার রোদ্দুরেও নেমে আসে বাসরের ধূপগন্ধী গাঢ় অন্ধকার।"
(কবিতা: তবুও বেঁচে থাকা অপরূপ)
নিবিষ্ট পাঠক এ কবিতার সূত্রে অতীতচারী হতে চাইবেন। কেউ কেউ তীব্রভাবে আক্রান্ত হবেন অতীতগন্ধী নস্টালজিয়ায়! নানান বিষয়ে এমন অজস্র মনকাড়া কবিতার স্রষ্টা সৈয়দ শামসুল হক।
নিজের লেখালেখি নিয়ে সৈয়দ হক বলেন, " লেখা আমার কাছে প্রেমে পড়ার চেয়েও অনেক বেশি উত্তেজক ও ব্যক্তিগত, দূরাভিলাষী ও উড্ডয়নশীল।" বলাই বাহুল্য তাঁর এই দূরাভিলাষীতা ও উড্ডয়নশীলতায় বাংলা সাহিত্যের নানান শাখা প্রাণ প্রাচুর্যে সমৃদ্ধ হয়েছে। কবিতার উল্লেখ তো মাত্রই করেছি। গল্প, কাব্যনাট্য, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদির যেটিতেই তিনি হাত দিয়েছেন সোনা ফলেছে। সৈয়দ শামসুল হক রচিত বেশ কিছু মঞ্চ নাটক(কাব্যনাট্য) দর্শক নন্দিতই শুধু না, বাংলা সাহিত্যের জন্য অমূল্য সম্পদও বটে। এর মধ্যে বিখ্যাত হলো 'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়' 'ঈর্ষা' 'এখানে এখন' 'নুরুলদীনের সারা জীবন' ইত্যাদি। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, তিনি যদি শুধুমাত্র 'নুরুলদীনের সারা জীবন' নাটকটি লিখে চুপচাপ বসেও থাকতেন বাংলা সাহিত্যে তাঁর এই অসাধারণ সৃষ্টির জন্য তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হতো। 'নুরলদীনের সারা জীবন' নাটকের পটভূমি হলো মোটামুটি এরকম : ১৭৮৩ সালে ঈস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর গভর্ণর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস ও তার তাবেদার ইজারাদার দেবী সিংহের নির্লজ্জ শোষণ আর উৎপীড়নে রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া রংপুর জনপদের নুরলদীন তখন এই অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। ইস্পাত কাঠিন্যে গলা তুলে ডাক ছাড়েন : 'জাগো বাহে কুন্ঠে সবায়?' যদিও নুরুলদীন সেই বিদ্রোহে জয়ী হতে পারেনি, কিন্তু ইতিহাসে তাঁর সেই প্রতিবাদের স্মৃতি শ্রদ্ধাভরেই লিখা আছে। ইংরেজকে এই বিদ্রোহ দমনে বেশ বেগ পেতে হয়। দেবী সিংহকে পালিয়ে বাঁচতে হয় এই জনপদ থেকে। আজও দেশের যে কোনও ক্রান্তিলগ্নে বাংলার তারুণ্য প্রতিবাদে সোচ্চার হবার জন্য যেন শুনতে পায় নুরলদীনের সুতীব্র আহ্বান।
আমরা তাঁর সৃষ্টির মাঝে তাঁর কবি কাঠামো থেকে ওঠে আসবার লক্ষণ স্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ করি, এবং স্বভাবতই তা আমাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুগ্ধতায় বেধে ফেলে। তা সে প্রবন্ধের মত কাঠখোট্টা বিষয় হোক না কেন। এরকম একটি উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ হচ্ছে 'মার্জিনে মন্তব্য'। এমন অসাধারণ প্রবন্ধ তাঁর পক্ষেই লিখে ফেলা সম্ভব। এই চমৎকার বইটির আনন্দপাঠে পাঠকমাত্রই মুগ্ধ হবেন। সুন্দর কিছু, ভালোলাগার কিছু, পাঠক বন্ধুদের সাথে ভাগ করে নেবার মতো আনন্দের আর হতে পারে না। তাই মার্জিনে মন্তব্যের কিছু পাতা ছুঁয়ে আসি পাঠক, চলুন। "লেখা শেখার বই এটি কোনো অর্থেই নয়। বরং একে লেখার কলাকৌশলের দিকে আমাদের চোখ ফেরাবার বই বলা যেতে পারে। আমি কিছু সংকেত ও ভাবনা উপস্থিত করছি। আশা এই, এ থেকে একজন নবীন লেখক উদ্বুদ্ধ হবেন আরও অনেক গভীরে ভাবতে এবং নিজের কলমের দিকে নতুন করে তাকাতে। তারপরও একটি কথা না বললেই নয়। সৃষ্টিশীল লেখক তাকান ভবিষ্যতের দিকে; ভবিষ্যতই তাঁর অবলম্বন। আর, লেখা সম্পর্কে যাবত আলোচনাই অতীত নিয়ে, যা লেখা হয়ে গেছে সে-সকল নিয়ে। লেখা শেখার আলোচনাও এক অর্থে অতীত কলাকৌশলেরই আলোচনা। এই দুই বিপরীত কালের ভেতরে সংঘর্ষ তো একটা হতেই পারে। সৃষ্টিশীল লেখক তাঁর ভবিষ্যতমুখী কলমকে তিনি চালাতেই পারেন পুরোপুরি নিজের উদ্ভাবনায়। ....লেখা আমার কাছে প্রেমে পড়ার চেয়েও অনেক বেশি উত্তেজক ও ব্যক্তিগত, দূরাভিলাষী ও উড্ডয়নশীল। আমার এই বিশেষ প্রেমটির ইঙ্গিত ও ইতিহাস পাওয়া যাবে এ বইয়ে।" (মার্জিনে মন্তব্যের ভূমিকা)। নবীন লেখকদের জন্য প্রবন্ধের এই বইটি, 'বাঁশ বনে ডোম কানা' অবস্হা থেকে উত্তরণে পথ দেখাবে সন্দেহ নাই। পড়ে মনে হয় না, আহা আরেকটু হলে মন্দ হতো না? আফসোস জমিয়ে লাভ কী! হয়ে যাক বরং আরেক পশলা 'মার্জিনে মন্তব্য' :
"আমার দীর্ঘদিনের চিত্রকর বন্ধু কাইয়ুম চৌধুরী একবার একটি কথা বলেছিলেন – আমরা মিস্তিরি মানুষ; এ বাড়িতে পোষালো না, র্যাঁদা – করাত – বাটালি চটের থলেতে পুরে আরেক গেরস্তের বাড়ি যাবো। কাইয়ুম আর আমি একসঙ্গে বহু পত্রপত্রিকা আর প্রকাশকের বাড়িতে কাজ করেছি; কাজ নিয়ে একবার একজনের সঙ্গে খটাখটি লাগলে, আমি মন খারাপ করলে, ঐ কথাটি তিনি বলেছিলেন। সত্যি বৈকি – খাঁটি সত্যি কথা। শিল্পের গাড়ি নিছক প্রেরণার চাকায় চলে না। তিনি গায়ক হোন, লেখক হোন কি চিত্রকর, তাঁর ভেতরে নিদ্রাহীন দুই পুরুষ – প্রতিভাবান শিল্পী আর নিপুণ মিস্তিরি। মিস্তিরির দিকটা বুদ্ধি নির্ভর, আর শিল্পীর দিক দৃষ্টি নির্ভর। দৃষ্টি আর বুদ্ধি, এ দু’য়ের রসায়নে হয় একটি ছবির জন্ম, কি একটি কবিতার। দৃষ্টি দিয়ে যা আয়ত্ব করলাম বুদ্ধি দিয়ে তা পৌঁছে দিলাম। অধিকাংশ শিল্পচেষ্টাই যে শেষপর্যন্ত পৌঁছোয় না তার পিছনে আমি মনে করি, ঐ মিস্তিরির অভাব। একটি উপমা আমি প্রায়ই দিয়ে থাকি – চেয়ারের চারটে পা যদি মেঝেতে ঠিকমতো না-ই বসলো তো সে চেয়ার দেখতে যতই মনোহর হোক আমার তাতে কাজ নেই। চেয়ার বসবার জন্যে। মেঝের উপর জুত্ মতো সেটি বসতে হবে, তার পা চারটে স্থির মতো থাকতে হবে, কোথাও এতটুকু টলমল করবে না – তবে সে চেয়ারে আমি বসবো। বসে তারপর দেখব আসন কতটা আরামদায়ক, পিঠ কতটা সুখপ্রদ। সে সব হলো তো দেখব চেয়ারটির নকশা কেমন, পালিশ কেমন, সবশেষে যাচাই করব টেকসই কতদূর। তবেই সে চেয়ার হবে আমার চেয়ার। লেখা সম্পর্কেও আমার একই দাবী। লেখাটি মিস্তিরির হাতে ঐ চেয়ারের মতো পাকাপোক্ত হতে হবে।
........ মিস্তিরি শিল্পী নন, কিন্তু প্রতিটি শিল্পীই নিপুণ মিস্তিরি। যে চেয়ারের পা টলমল করছে, পিঠ খোঁচা দিচ্ছে, তার নকশা যত নতুন হোক, ঘরে দিন দুয়েক রাখবার পর গৃহস্ত তাকে বারান্দায়, বারান্দা থেকে চাতালে, অবশেষে বিস্মৃতির গুদামে ফেলে রাখবেন। মহাকাল নির্মম এক গৃহস্থ; তিনি এইসব আপাত মনোহর আসবাব জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।"
জাদুবস্তবতা বা ম্যাজিক রিয়েলিজম নিয়ে সৈয়দ হকের বক্তব্য বেশ স্পষ্ট। আমাদের অনেকেরই ধারণা, জাদু বাস্তবতার প্রভাব ল্যাটিন আমেরিকান সাহিত্যে বিশেষভবে দেখা যায়, এবং তা দ্বারা আমাদের সাহিত্যও প্রভাবিত। সন্দেহ নাই, এই রীতিতে সবচে' সাবলীল উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হচ্ছেন গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ। জাদু বাস্তবতা তাঁর অধীনস্হ দাসানুদাস ছিল যেন! এ বিষয়ে সৈয়দ হকও দ্বিমত পোষণ করেন না। কিন্তু ল্যাটিন আমেরিকান সাহিত্য হতেই 'জাদু বাস্তবতা' রীতিটি বাংলা সাহিত্যে প্রতিস্হাপিত হয়েছে, এটি মানতে তিনি নারাজ। সৈয়দ হকের বেশ কিছু লেখায় (দূরত্ব উপন্যাস) জাদু বাস্তবতার উপস্হিতি আছে। এই বিষয়টি তাঁর মধ্যে কিভাবে সঞ্চারিত হয়? সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন "জাদু বাস্তবতার প্রভাব ল্যাটিন আমেরিকান সাহিত্যেই দেখা যায় এমন বক্তব্যে তাঁর আপত্তি। বাংলাদেশে যাঁরা তরুণ বা কিছুটা বয়স্ক লেখক তাঁরা বোধ হয় খুব বেশিটা পেছনের খোঁজ খবর নিয়ে দেখেন না বা তাকান না। যার জন্য মনে হয় যেন ল্যাটিন আমেরিকা থেকেই আমরা জাদু বাস্তবতা পেয়েছি। জাদু বাস্তবতা আমাদের দেশের রূপকথায় রয়েছে। পূর্ববঙ্গ গীতিকায় রয়েছে। একবার চিন্তা করে দেখুন, 'স্বামী বাণিজ্যে গেছে। স্ত্রীর বর্ণনা লেখা হচ্ছে(পূর্ববঙ্গ গীতিকা) নদীর চরে দাঁড়িয়ে আছে বারো বছর পথের দিকে তাকিয়ে কখন স্বামী ফিরবে।' আমি তো উপন্যাসে, আজকের দিনে লিখতে গেলে তিনবার চিন্তা করবো, যে বারো বছর দাঁড়িয়ে আছে, কেউ তাকে ধরছে না, কেউ তাকে অপহরণ করছে না। সে কী খাচ্ছে, কোথায় ঘুমোচ্ছে? এটা হচ্ছে এক ধরনের জাদু। বর্ণনার জাদু। এটা আমাদেরই ভেতরে আছে।"
শিল্পের ক্ষেত্রে লেখকের স্বাধীনতায় ছিলেন প্রচণ্ড বিশ্বাসী। তাঁর উপন্যাস বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ সৈয়দ হক পুর্ণমার্জন পূর্বক দ্বিতীয়বার লিখেন। যা নিয়ে কিছু পাঠকের আক্ষেপের(পরিমার্জিত লেখাটি অনেক পাঠকের প্রথমটির মতো না লাগায় প্রশ্ন ছিল আপনি কী মনে করেন এটা ঠিক করেছেন?) পরিপ্রেক্ষিতে সৈয়দ হক যা মনে করেন, "হ্যাঁ নিশ্চয়ই ঠিক করেছি। নইলে তো আমি পরিমার্জনা করতাম না। নতুন করে লিখেছি। কারণ ঐ উপন্যাসটি দুটি খণ্ডে বেরিয়ে ছিল, এবং বেরুবার পর আমি পড়ে দেখি যে, আমি ব্যাপারটিকে ঠিকমত গোছাতে পারিনি। এখানে কারো কোনো হাত নেই। শিল্পের ক্ষেত্রে, ঐ একটা ক্ষেত্রেই স্বৈরাচারিতা চলে, সেটা হচ্ছে শিল্পের ক্ষেত্রে। আমি আমার কর্তা।"
ভাষা নিয়ে নিরীক্ষায় সৈয়দ হকের আগ্রহ ছিল। ভাষা নিয়ে নিরীক্ষা বা চর্চার দিকটি কী তিনি তরুণ লেখকদের মধ্যে দেখতে পান? এমন প্রশ্নে সব্যসাচীর উত্তর: "হ্যাঁ, অনেকের ভেতরেই দেখতে পাই, আবার অনেকের ভেতরে পাই ও না! সার্বিকভাবে বাংলা ভাষা সম্পর্কে চেতনার অভাব, মনোযোগের অভাব আমি লক্ষ্য করি। এটা শুধু সাহিত্যে নয়। জনজীবনেও, প্রতিদিনের জীবনেও লক্ষ্য করি। যে ভাষার জন্য রক্ত ঝরেছে। সে ভাষার জন্য যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা পর্যন্ত এই বাংলাদেশ উত্তীর্ণ হয়েছে। সেই ভাষার প্রতি অবহেলা এবং এটার কারণও আছে। কারণ হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা। মূল্যবোধের প্রতি আঘাত। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে জেনারেল জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতায় আসেন তিনি প্রথম বাংলাভাষা কে পদাঘাত করেন। সেটা হচ্ছে, আমাদের সংবিধান বাংলায় রচিত, বিশ্বের একটা সেরা সংবিধান, বাহাত্তরের(১৯৭২) সংবিধান। সেই সংবিধানে জিয়াউর রহমান একটি সংশোধনী আনেন যে, যদি সংবিধানের কোনো অংশ, কোনো বিধি বিধান নিয়ে অস্পষ্টতা আছে বলে মনে হয় বা তর্ক বির্তক হয়। সেক্ষেত্রে, বাংলা নয়, ইংরেজি অনুবাদকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, এবং ইংরেজি অনুবাদ অবলম্বনেই নিষ্পত্তি করতে হবে। ভাবা যায়! এই বাংলা ভাষার জন্য বাঙ্গালি রক্ত দিয়েছে! তো এভাবে বাংলাকে পদাঘাত করেই চলেছে, করেই চলেছে।"
নিজেকে সৈয়দ হক চিকিৎসার অতীত আশাবাদী হিসেবে ভাবতে ভালোবাসতেন। তাঁর কথা হচ্ছে, বাঙালি কখনও পড়ে থাকবার নয়, বাঙালি তরুণেরা কখনই পড়ে থাকেনি। ৫২, ৬২,৬৬, ৬৯, ৭০, ৭১ সালগুলোর উল্লেখপূর্বক তিনি জাতীয় জীবনে তরুণদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন, “উত্তরাধিকার সূত্রেই বাঙালি তারুণ্য ভেতরে ভেতরে এই জাগরণের বীজটি বহন করে চলেছে। কাজেই দেশ, সমাজের যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে বাঙালি তরুণ এগিয়ে আসবে।” মুক্তিযুদ্ধ ৯ মাসে শেষ না হয়ে বরং বছর তিনেক চলা উচিৎ ছিল বলে ভাবেন সৈয়দ হক। তাঁর এই মতামত নিয়ে তর্ক বির্তক চলতেই পারে। কিন্তু তিনি যা বলেছেন সেটাও ফেলে দেবার মতো নয়। "আমি মনে করি, ইতিহাস তো আর ফেরাতে পারবো না। কিন্তু মনে করি ৯ মাসের জায়গায় যদি বছর তিনেক যুদ্ধ হতো, তাহলে এই জাতি পোড় খেয়ে, এই জাতি আগুন, লুন্ঠন, ধর্ষণ, হত্যা, গণহত্যা, পৃথিবীর ইতিহাসে একটি বৃহত্তম জঘন্যতম গণহত্যা এর ভেতর দিয়ে এই জাতি যখন জেগে উঠতো, আমরা যদি জাগতাম। আমরা যদি ঐ আগুনের ভেতর আরো কিছুদিন দগ্ধ হতে পারতাম, ঐ হত্যার ভেতরে দিয়ে, ঐ রক্তের ভেতর দিয়ে আরো কিছুদিন পার করতে পারতাম, তাহলে পরবর্তীকালে বার বার গণতন্ত্র বিপর্যস্ত হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লাথি মারা হয়েছে, ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে বহু আগেই জেগে উঠতো দেশ।(শাহবাগের আগেই)।"
দেশ-সমাজ সচেতন শামসুল হক শিল্প কিংবা রাজনৈতিক, ক্ষেত্রে যা ই হোক না কেন নিজের মতামতটা তিনি বরাবরই স্পষ্টভাবে দিতে পছন্দ করতেন। তাঁর কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে হয়ত তর্ক বির্তক বা সমালোচনা চলতে পারে। কিন্তু সে ভিন্ন প্রসঙ্গ।
সুদীর্ঘ একটা সময় ধরে সৈয়দ শামসুল হক তাঁর বিপুল কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য তথা আমাদের সমৃদ্ধ করে গেছেন। মৃত্যুর পর তিনি একজন বাঙ্গালি হিসেবে, বাঙ্গালির মনে বেঁচে থাকতে চেয়েছেন, সন্দেহ নাই তিনি তাঁর সৃষ্টির হাত ধরে বাঙালি হিসেবে, বাঙালির মনে বহুদিন বেঁচে থাকবেন। বাংলা সাহিত্যের পাঠকের পরাণের গহীন ভিতর নেড়ে যাবেন তাঁর আশ্চর্য জাদুকরী শব্দের রুমাল।
এলোমেলো ভাবে এই যে এতক্ষণ বাংলা সাহিত্যের একজন তুখোড় বাজিরের কথা বলে গেলাম, সেটি আসলে তাঁর প্রতিভা ব্যাখানের জন্য না যতটা, তারচে' ঢেরবেশি তাঁকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানাবার ছুতো। ২৭ তারিখটা বুঝি তাঁর জন্য বিশেষ ভাবে বরাদ্দ ছিল! এই তারিখেই পৃথিবীতে প্রবেশের ছাড়পত্র নিয়ে আসেন তিনি। সাল ১৯৩৫, ২৭ ডিসেম্বর। দিক শূন্যপুরে রওনার জন্য আবার এই তারিখটাই বরাদ্দ হয় তাঁর জন্য! ২০১৬'র ২৭ সেপ্টেম্বর, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক তাঁর কবিতার খাতা ফেলে, যাবতীয় সৃষ্টির মায়া ত্যাগ করে চির ঘুমের দেশে পাড়ি জামান। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।
------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র/কৃতজ্ঞতা
১. সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা
২. মার্জিনে মন্তব্য
৩.টেলিভিশন সাক্ষাৎকার
মন্তব্য
মনে ভালো করে দিলে গো দিদি। এই লেখা পড়ার সুবাদে কবির একগুচ্ছ কবিতা এখান ওখান থেকে পড়ে এলাম। মধুর বিষণ্ণতায় কেটে গেলে বিতৃষ্ণ বিষণ্ণতা।
"সার্বিকভাবে বাংলা ভাষা সম্পর্কে চেতনার অভাব, মনোযোগের অভাব" নিয়ে ওনার বক্তব্য আমার একেবারে মনের কথা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে কত ধরণের কত গভীরে যে ছুরি বসানো হয়েছে!
"প্রতিটি শিল্পীই নিপুণ মিস্তিরি" - মিস্তিরির বড় অভাব!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
পোস্টের ছুতোয় সৈয়দ হকের কবিতা তোমার বিষন্নতাকে দূরে হটিয়েছে, এটা বড় পাওনা।
তুমি কী কবিতা লেখা- আবৃত্তি করা ছেড়েই দিলে! এখানেও ইদানিং তোমার পোস্ট দেখিনা, নতুন কিছু দাও না বাপু।
অনেক অনেক ধন্যবাদ জেনো দাদাই।
আপনি মনে হয় আসল পয়েন্টটাতে ক্লিক করিলেন ভ্রাত। উত্তম জাঝা। লেখাটা নিয়ে নিজের ভেতর বিরক্তি ছিল। কেন সেটা ঠিক স্পষ্ট বুঝতে পারিনি।আপনার মন্তব্যে পরিস্কার হলো। সচলে লেখলে এগুলো বাড়তি পাওনা হিসেবে জুটে যায়। সে জন্য এখানে লেখেটেখে আশা করি, কেউ তো বলুক(বলেন) ওহে লেখায় এমন হলে ভালো হতো।ওটা না হলেও পারতো ইত্যাদি।
যাক একখানা প্রেমময় কাহিনির নেপথ্য ঘটনা জানা হইল পোস্টের কারণে বিপ্লব ইয়ে থুড়ি, প্রেম দীর্ঘজীবী হোক। ১৯৩৫ সালের পর আপনার মন্তব্য পাইয়া বড়ই আনন্দিত হলেম। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনার মন্তব্যগুলো ঠিক জায়গাতে থাকছে না। প্রতিটি মন্তব্য লেখার পর সামান্য সময় নিয়ে পরের মন্তব্য লিখলে বা রিফ্রেশ করে নিলে হয়তো সমস্যাটা কমতে পারে। এরকম অনেক আগে হতো সচলে। মাঝে একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার কেন শুরু হলো কে জানে!
আশীর্বাদের জন্য ধন্যবাদ।
অনেক লেখাই পড়া হয়, কিন্তু মন্তব্য করা হয়ে ওঠেনা প্রায়ই। বদভ্যাস। ত্যাগ করতে হবে।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
সেটাই দেখছি। বাট মানে কিন্তু, হোয়াই মী! সম্পাদনার বাটন আপনার মন্তব্যের নীচে নেই যে 'সংশোধন বা কাটাকুটি' চালাবো। যাইহোক, ব্যাপারটা পরবর্তীতে খেয়ালে রাখবো। বদভ্যাস ত্যাগ করে সচল হোন, সচল থাকুন। ধন্যবাদ
লেখাটা সুন্দর। কিন্তু আমার কাছে বেশ কেতাবি-ভাবের মনে হলো। অবশ্য আপনি কীভাবে লিখবেন সে আপনার ইচ্ছে/অভ্যেস।
যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর, এই লাইনটার মতো প্রেমের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণের আর কোন বাক্য আমার জানা নেই! এক বালিকাকে উপহার দেয়ার জন্য "পরাণের গহীন ভিতর" বইটা ছাড়া আর কিছু খুঁজে পাইনি একদিন! সেই হিসেবে সৈয়দ হকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ! মনে করায় দিলেন। অনেক ধন্যবাদ।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
সৈয়দ হকের কবিতার সাথে আমার পরিচয় খুবই কম। তাই কেউ যদি উপরের লাইনগুলো দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করতো কবির নাম কী - আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিতাম জীবনানন্দ দাশ। তোমার এই পোস্টের সুবাদে তাঁর কবিতার প্রতি নতুন করে আকর্ষণ বোধ করছি।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
'পরাণের গহীন ভিতর' আর 'বৃষ্টি ও জলের কবিতা(ঠিক বললাম কি নামটা?)' সামান্য পড়া, এর বাইরে খুব বেশি আমিও পড়িনি। জীবনানন্দ দাশ অনেক কবিকেই আবিষ্ট করেছেন। সৈয়দ হকও হয়ত সেই বৃত্তে পড়েন। আকর্ষণ বোধ করা মানেই কিছুমিছু সৈয়দ হক তো পড়ে ফেলার সম্ভাবনা। এটাকে পোস্ট লেখার প্রাপ্তি হিসেবে নিলাম। পোস্ট পড়বার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ভাইয়া
লাফাং
কখনও কখনও মনে হয়, সৈয়দ হক নোবেল পেতে পারতেন- তার যে কৃতি- তাতে তিনি বিবেচিত হওয়ার মতোই ছিলেন। তিনি বিবেচিত হলেন না, তার জন্য তিনি নিজেই দায়ি। তিনি বাংলা ভাষার কবি হতে চেয়েছেন, যে কারণে তার রচনার ইংরেজি প্রকাশে তিনি নিরুৎসাহী ছিলেন। সত্যিই, কোন নবীন সাহিতিকের প্রস্তৃতির জন্য রবীন্দ্রনাথের পর সৈয়দ হকই সবচেয়ে ভালো- কারণ লেখার যে মন তার জন্ম রহস্য আর কোন সমকালীন লেখক উন্মোচন করে যান নি।
নোবেল প্রাপ্তির নিশ্চয়ই বড়সড় গুরুত্ব আছে। বিশেষ করে আজকের দিনে ভিন্নভাষার লেখকের নোবেল প্রাপ্তিতে পৃথিবীর নানা প্রান্তের অনেক আগ্রহী পাঠকই সংশ্লিষ্ট লেখকের সৃষ্টি সম্পর্কে বাড়তি আগ্রহী হন। তাতে করে লেখককে জানার সুযোগ ঘটে। নোবেলের জন্য না হলেও সৈয়দ হকের লেখা অনুবাদ হলে অন্য প্রান্তের অনেক পাঠকই তাঁর অসাধারণ সৃষ্টিশীলতার সাথে পরিচিত হতে পারতেন। এই দিক থেকে বাংলা ভাষার বৃত্তে না থেকে তিনি অনুবাদমুখী হতেই পারতেন। তাঁর অসীম মাতৃভাষা প্রীতি তাঁকে সেদিকে আগ্রহী করেনি নাকি অন্য কোনো কারণে তিনি সে পথে হাঁটেননি এটা জানা নাই। তবে আবদুল গাফফার চৌধুরীর সাথে তাঁর শেষ সাক্ষাতকারে তার অভিব্যক্তিতে এটা স্পষ্ট, এসব নিয়ে তাঁর তেমন মাথাব্যথা ছিল না। ছিল না বলেই হয়ত আবার বাঙালি হয়েই জন্মানোর আগ্রহ দেখিয়েছেন।... কি জানি! পৃথিবীর অন্যান্য পাঠকের কাছে তিনি পৌঁছাতে পারলেন না(এখন পর্যন্ত) এ ক্ষেদটা পাঠক হিসেবে আপনার মতো আরো অনেককেই ব্যথিত করবে। মেলা বাজে বকলাম ভাইয়া। পোস্ট পড়বার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
অনেকদিন থেকেই পড়বো পড়বো করছি কিন্তু সময়ই মেলেনা। অফিসে বসে পড়ার এই এক ঝক্কি। কিন্তু লোকটা যে সৈয়দ শামসুল হক না পড়ে যাই কোথাই। ভালো লাগলো আয়না মতি, হৃদয়ের অনেক গুলো তারে আবার সেই ঝঙ্কার। পরাণের গহীন ভেতর বইটা এখনও আবিষ্ট করে রাখে।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
আপনারে মিস করেছি বাপ। যাক ছলেবলেকলেকৌশলে, পড়ে ফেলেছেন তাতে খুশি ...আসলেই ভাই, বহু বছর উজিয়েও সৈয়দ হকের এই কবিতা বহু পাঠকের মনের তারে টুংটাং বাজতে বাধ্য। লেখনীটাই এমন যে! আপনাকে দেখিয়া ব্যাপক খুশি হলেম। মন্তব্য পাইয়া ততোধিক। আন্তরিক ধন্যবাদ জানিবেন ভ্রাত।
এক বন্ধু তার প্রিয় কবিতা টুকে দিত ফোরামে, সেইখানে এই কবিতা প্রথম পড়ি। কবির নামও সেইখানেই প্রথম জানি। কিন্তু ওই লাইনটা, "তারে কই বড় বাজিকর/ যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর।" পড়ামাত্রই অবশ হয়ে গেলাম। এমন একটা লাইনের জন্য অপেক্ষা করে থাকা যায় শত বৎসর। অপূর্ব!!!
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
সেদিক থেকে আমরা ভাগ্যবান বলতে হয়, এমন লাইন পড়ে ফেলবার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরেছি। এই চমৎকার কবিতা বুকে ঘাই মেরেছে অনেকের মতো আমারও। অথচ কী জানো, সৈয়দ হক আমার প্রিয় কবি নন। প্রিয় কবি হিসেবে যিনি বুকের কাছাকাছি থাকেন, তিনি আবুল হাসান। সৈয়দ হকের গল্প বা উপন্যাস পড়বার অভিজ্ঞতা না থাকলে, পড়ে দেখতে পারো, ভালো লাগবে আশা করি। অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে দিদি।
নতুন মন্তব্য করুন