সবকিছু ভুলে যাবার পরে যেটুকু মনে থাকে তাই শিক্ষা। বসে বসে ভাবছিলাম কি কি মনে আছে। সেই ১৯** সাল থেকে শুরু। মনে পড়লো প্রতিক্লাসে খান কতক কবিতা পড়তে হত। ছোটক্লাস গুলোতে সেই কবিতার প্রথম ১০ বা ১২ লাইন মুখস্ত লিখতে হত। আমাদের স্কুলটা ভালো ছিলো, প্রথম ১০-১২ লাইন পারলেই কাজ চলত। আমার ভাইয়ের স্কুলটা তেমন সুবিধার না, ওদেরকে মাঝে মাঝে কবিতার শেষ ১২ লাইন লিখতে দিত।
স্কুল এর নাম বলবো না, যারা জানার তারা তো জানেনই আর যারা জানেন না তারা ওনাদের থেকে জেনে নেবেন।
যেহেতু যেটুকু মনে আছে তাই শিক্ষা, পুরো লেখাটাই তাই স্মৃতিনির্ভর। একবারও বই না খুলে দেখি কতটুকু মনে করতে পারি। ধারাবাহিক ভাবে লিখবো ভেবেছিলাম, মানে ক্লাস ওয়ান এর পরে ক্লাস টু। একটা ভাবতে গিয়ে আরেকটা মাথায় চলে আসছে। তার চাইতে ধারাবাহিকতাকে ধুর্বাল জানিয়ে যেমন যেমন মনে আসে তেমন তেমন লিখে যাই।
কবিতার ইয়ে মারতে হলে তাকে পাঠ্যসূচিতে দিয়ে দিন। সাধারণত অযোগ্য শিক্ষকেরাই কবিতার পুটু মারায় প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকেন। যেটুকু বাকি থাকে সেটা আমরা ছাত্ররা নিজ দায়িত্বে করে থাকি।কবিতার প্রশ্নগুলো সাধারণত এরকম হত, আলোচ্য অংশে কবি কি বোঝাতে চেয়েছেন? প্রসংগ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা করো। অথবা কবিতার মূলভাব নিজের ভাষায় লেখো।
এত এত কবিতার মাঝে বারবার ‘কবর’ এর কথা মনে পড়ছে। নটরডেম কলেজে সোহেল আহমেদ পড়িয়েছিলেন। যিনি এসে বলেছিলেন আমার নাম সুহেল আহমেদ, আমি তোমাদের গুদ্যু-পুদ্যু পড়াব। আজ্ঞে না, বানান ভুল করি নাই, উনি ওভাবেই বলেছিলেন। আচ্ছা কবরে ফিরে যাই। সকলেই জানেন এবং মানেন যে প্রশ্নের উত্তরের ব্যাপ্তির সাথে প্রাপ্ত নম্বর এর সম্পর্ক সমানুপাতিক। তাই টানাটানি করে সব কবিতার ভাবকেই চার পাতায় নিতে হত। পাঁচ পাতা টানতে পারলে তো খুবই ভালো, উঁচু মানের কুলাঙ্গারেরাই কেবল ছয়ের অধিক পাতা লিখতে পারে, তাদের কথা আলাদা। কবর কবিতা ভালো লাগার কারণ, ওটা টানতে সুবিধা। এত অল্প পরিসরে এত লাশ আর কোনো কবি ফেলতে পারেন নাই। প্রতি লাশ এ এক পাতা করে লিখলে দেখতে দেখতে পাঁচ পাতা ভরানো যেত।
ঝামেলার শুরু নজরুলের কবিতা নিয়ে। কবি তারুণ্যের জয়গান গেয়েছেন, কবি যৌবনের বিজয়কেতন উড়িয়েছেন, বঞ্চিত মানবতা, সাম্যের বাণী এসব লিখে দুই পাতা যাবার পরে দম বেরিয়ে যেত। রবি ঠাকুর কে নিয়েও সমস্যা ছিলো, সোনার তরী কবিতায় নৌকার ধানের সাথে মানব জীবনের যে নিগূঢ় সম্পর্ক সে বড় জটিল ভাবনার বিষয়, অত অল্প সময়ে তা শেষ হবার নয়।
রচনার মাঝে কবিতা গুঁজে দিলে রচনা খোলতাই হয়। সেই করতে গিয়ে কিছু ভালো কবিতা মুখস্ত করেছিলাম। এখনো মনে আছে। কে বলে মুখস্ত বিদ্যা খারাপ। সময়ের মূল্য রচনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর,
“ যত বর্ষ বেঁচে আছি
তত বর্ষ মরে গেছি
মরিতেছি প্রতি পলে পলে
জীবন্ত মরণ মোরা
মরণের ঘরে থাকি
জানি না মরণ কারে বলে”
আরো একখানা কবিতা, এখানা নজরুলের, কোন রচনার জন্যে মাথায় আপলোড করেছিলাম মনে নেই, সময়ের মূল্য অথবা আমার প্রিয় কবি, যেকোনো একটা হবে। ‘বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি’ কবিতার অংশ
“তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু
আর আমি আর জাগিব না,
সারাদিনমান কোলাহল করি কারো ধ্যান আর ভাঙ্গিব না
নিশ্চল নিশ্চুপ
আপনার মনে পুড়িব একাকী, গন্ধবিধূর ধূপ।“
বড় হয়ে বা বুড়ো হয়ে সম্পূর্ণ কবিতাটা পড়লাম। তারপরে মনে গেঁথে গেলো এইদুটো লাইন,
“হয়তো তোমারে দেখিয়াছি তুমি যাহা নও তাই করে
ক্ষতি কি তোমার, যদি গো আমার, তাতেই হৃদয় ভরে?”
( পুরোটা স্মৃতি থেকে লেখার জেদ রাখতে গিয়ে কবিতাগুলো এদিক সেদিক হয়ে গিয়েছে, সেজন্যে ক্ষমাপ্রার্থী। লোকে যদি বেশি নিন্দামন্দ না করে তবে আরেক পর্ব লেখার সাহস করলেও করতে পারি।
করিতে পারি না কাজ,
সদা ভয় সদা লাজ
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে
পাছে লোকে কিছু বলে।)
মন্তব্য
এগিয়ে চলেন, সাথে আছি
চেষ্টা করব এগিয়ে যেতে, সাথে থাকার জন্যে ধন্যবাদ।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
লেখায়
অঃটঃ আপনার এইচ এস সি কত সাল??
ধন্যবাদ।
অফটপিকটা আপাতত অফ রাখতে চাইছি।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
লোকে কিছু বলবে না।
লিখতে থাকেন।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
লোকে যদি একেবারেই কিছু না বলে, সেও তো সমস্যা। ধন্যবাদ।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
পড়তে পড়তে একটা কবিতা মাথায় ঘুরতে লাগলো
বাস থেকে নামলেন
খানিকটা থামলেন
তারপর থেমে থেমে
চললেন তিনি।
এর আগে পরে কিছু মনে নাই। আরেকটা মনে আসছে, কি যেন একটা চড়ুইভাতি নিয়ে ছড়া। শুরুটা বোধ হয় এমন 'চড়ুইভাতির কাছেই নদীর কুল ছিল', আরেকটা রেডিও নিয়ে কি যেন।।। দুত্তোর ছাই একটাও মনে আসছেনা ঠিকঠাক।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
"বাস থেকে নামলেন" কবিতাটির শিরোনাম নিয়ে নিশ্চিত না, তবে তার লেখক আহসান হাবীব।
"চড়ুইভাতির পাশেই নদীর কূল ছিলো" কবিতাটির শিরোনাম "বনভোজন" বা "চড়ুইভাতি", লেখক আবদার রশীদ।
রেডিও নিয়ে কবিতাটি ছিলো "হেঁড়ে গলা ছেড়ে দিয়ে রেডিওটা গান গায়/ যেনো বড়ে ওস্তাদ গোলাম আলী হতে চায়/ তবলাটা তাল দিয়ে বাজে তাক-ধিনা-তিন/ সা-রে-গা-মা-পা-ধা-নি-সা/ নেই রাত, নেই দিন"। কবিতার শিরোনাম "রেডিও", লেখক সম্ভবত মাহফুজউল্লাহ্।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বাপরে, নিউরনের কি তেজ!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
পাণ্ডবদা, এই কবিতাগুলো আমাদের সময়ে পাঠ্যবইতে ছিলো না। যেমন কাজী নজরুল ইসলাম এর 'তোষামোদ' খুব সম্ভবত কবিতার নাম, আমি পুরনো পাঠ্যবইতে দেখেছি কিন্ত আমরা পাই নি।
নেট খুঁজে এটা পেলাম। সাহেব ও মোসাহেব
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
"চড়ুইভাতির পাশেই নদীর কূল ছিল
আনন্দে তাই সবার গলাই খুলছিল "
পুরো কবিতাটির সব লাইনের শেষ শব্দ "ছিল"
ষষ্ঠ শ্রেণীতে পাঠ্য ছিল আমাদের।
সবকিছু ভুলে যাবার পরে যেটুকু মনে থাকে তাই শিক্ষা। লাইনটা গেঁথে গেলো।
...........................
Every Picture Tells a Story
মুস্তাফিজ ভাই, কথাটা আমার না।
"Education is what remains after one has forgotten everything he learned in school. -- Einstein"
পাঠ্য বইয়ের কোন কবিতাটা আপনার এখনো মনে আছে? দু-চার লাইন বলেন না, অনুরোধ থাকলো। ভালো থাকবেন।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
ঝমেলা শুরু নজরুলের কবিতা দিয়ে?
তবে রে
লেখা ভালো লাগলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমার কথা বিশ্বাস না হইলে সৈয়দ দেলগীর ভাইরে জিগান, নজরুলের কবিতায় ঝামেলা আছে কি না।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
আমার এক বন্ধু রচনা লেখার জন্য এত কষ্ট করতনা। যেকোনো রচনা আসলেই শুরু করত, " কবির ভাষায়্, " তারপর নিজে নিজে কবিতা লিখত। টিচার এর সাধ্য কি এই কবিতা কার লেখা সেটা বের করা !
পড়াচোর।
আপনার বন্ধুটি প্রতিভাবান, অত প্রতিভা আমার নেই।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
লিখে যান।
সাথে আছি।
আমার আবার যে কোন বড় প্রশ্নের উত্তরটা শুরু হত অনেকটা এইভাবে
"সৃষ্টির সে কোন ঊষাকাল থেকে _ _ _ _ "
আসলে তাহলে এই করে দুটো প্যারা নামিয়ে দেওয়া যেত।
"সৃষ্টির সে কোন ঊষাকাল থেকে _ _ _ _ " তারপর? আরো খানিকটা লিখুন নাহয় কষ্ট করে। খানিকটা মিলিয়ে দেখতাম সর্বত্র চাপা মারার রেওয়াজটা একরকম কিনা। আপনাদের পাঠ্যসুচিতে কোন কোন কবির লেখা থাকতো? কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদদীন, গোলাম মোস্তফা এদের কবিতা ছিল কি?
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
আচ্ছা বলছেন যখন একটু বিশদে লিখি।
" সৃষ্টির সে কোন ঊষাকাল থেকে মানুষ লড়াই করে এসেছে তার পারিপার্শ্বিকতার সাথে। গুহাবাসী মানুষ যেদিন প্রথম আগুন জ্বালাতে শিখেছিল, সেদিন থেকে আমাদের পথ চলা শুরু। তারপর বহু সহস্রাব্দ পেরিয়ে আমরা আজকের দিনে এসে পৌঁছেছি। কিন্তু সেই সংগ্রাম চলছে নিয়ত। _ _ _ "
এরপর যে কবিতা তার সাথে ম্যাচ করে দেওয়া।
কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা তো অনেক অনেক ছিল।
জসীম উদদীনেরও ছিল। তুলনায় কম। এই মুহূর্তে একটা অসাধারন কবিতার নাম মনে পড়ছে। নকসী কাঁথার মাঠ। এটা আমি পরীক্ষাতে লিখতামই। চরিত্র দুটো বোধহয় ছিল রূপাই আর সাজু।
কিন্তু গোলাম মোস্তফা নামটা একটু অপরিচিত লাগছে। তবে তা আমার অজ্ঞতা বা স্মৃতির বিশ্বাসঘাতকতাও হতে পারে।
অনেক ধন্যবাদ, সময় নিয়ে লেখার জন্যে।
রূপাই আর সাজু, ঠিকই আছে।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
আমার বেশ কিছু ছড়া/ কবিতাই মনে আছে- চার পাশের পিচ্চিদের জন্য।
আমাদের ক্লাসে শিলা নামের একটি মেয়ে ছিলো সে দুনিয়ার বড় উত্তর লিখতো। তার লুজ পেইজ নেয়ার বহর দেখলে মনে হতো সে যেন ঝাপি ভর্তি খই নামাচ্ছে। স্কুল ছেড়ে আসার পরে জানি যে সে যা করতো, লেখার উপর মাঝে থেকে আবার প্রথম প্যারা সুরু করে দিতো একটি এদিক ওদিন করে। পুরোটা শেষ করে আবার কোথাও থেকে মাঝের অংশ টানতো।
অনেক শিক্ষক ছিলেন যারা পড়তেন না কিছুই কেবল খাতার সাইজ দেখে নম্বর দিতেন।
ছোটবেলায় আমার ধারনা ছিল আমি পড়াশুনা না হলেও বিখ্যাত হওয়ার মতোদের মতোন হবো আর এদের নম্বর পাওয়ার উপায় জেনেও আরো লেখা পড়ার থেকে পিঠটান দিয়েছিলাম - মুখ জিপ ইমো হবে।
লেখা চালিয়ে যান। এই সমস্ত ফেলে আসা স্মৃতি গুলোতে নাড়া পেতে ভালোই লাগে।
প্রথম কথাটা মিলে গেলো, চার পাশের পিচ্চিদের সুর করে কবিতা পড়া থেকে স্মৃতি ঝালিয়ে নেয়া সহজ।
আমার এক বন্ধু প্রতি পাতায় আট লাইনের বেশি লিখতোনা, এই করে এক পরীক্ষায় ২৮ খানা লুজ পেইজ নিলো । এর পরে যখন আর ২ মিনিট বাকি পরীক্ষার, স্যার বললেন আর দেয়া যাবে না, তখন শেষ পাতায় বাধ্য হয়ে ১২-১৪ লাইন লিখেছিলো, আর যেই স্যার খাতা দেখেছিলেন উনি ২-৩ নম্বর কেটে রেখেছিলেন এহেন অমিতব্যায়িতার জন্য।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
ছেলেবেলায় আমার কাব্যমোদী বন্ধুরা সবাই যখন রবীন্দ্রনাথ-নজরুলে মেতে, আমাদের বাংলা শিক্ষক জনাব সাইফুল ইসলাম হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন 'শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতা'। আমরা তাতে করেছিলাম 'রূপালী স্নান'।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
শামসুর রাহমান এর কবিতার মধ্যে 'স্বাধীনতা তুমি' এসএসসি তে পাঠ্য ছিলো। আর একটা পাঠ্য ছিলো আরেকটু বাচ্চা বয়সে,
' মেঘনা নদী দেবো পাড়ি
কল অলা এক নায়ে,
আবার আমি যাবো আমার
পাড়াতলী গায়ে।'
এটুকুই মনে আছে। 'রূপালী স্নান' নিয়ে আরেকটু লিখুন রোমেল ভাই, অন্তত ভালো লাগা কয়েকটি চরণ।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
নতুন মন্তব্য করুন