নাম বিভ্রাট!

আবু রেজা এর ছবি
লিখেছেন আবু রেজা [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৮/০৭/২০১০ - ১০:২৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নাম বিভ্রাট!
আবু রেজা

প্রাক কথন

সুকুমার রায় লিখেছেন, ‘গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা।’ এর প্যারোডি হতে পারে এরকম, ‘নামের আমি নামের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা।’ কিন্তু সত্যি কি নাম দিয়ে চেনা যায়?

অশীতিপর বৃদ্ধ, তার নাম শিশু মিয়া, এরকম কারো নাম ছাও মিয়া। নাম শুনে কি বুঝতে পারা যায়, তার বয়স কত? আর ছাও মিয়া শুনলেই মানুষটাকে কেমন পাখির বাচ্চা পাখির বাচ্চা মনে হয়। আবার কালো কুচকুচে কারো নাম ধলা মিয়া বা লাল মিয়া। নাম শুনে কি গায়ের রঙ বোঝার উপায় আছে? মানুষের নাম ডলার। নাম শুনলেই কেমন টাকা টাকা মনে হয়। এতেই শেষ নয়। আরো আছে হরেক অদ্ভুত নাম। যেমন, আমার এক বন্ধু আছে, ওর নাম রকেট। ওকে দেখলেই মনে হয় কাঁধে চেপে আকাশে উড়ি। আবার কোনো কোনো মানুষের এমন নাম রাখা হয় যা শুনে বোঝা যায় না সে পুরুষ না নারী। একারণে নাম নিয়ে ঘটে থাকে নানা বিপত্তি। যে সব ঘটনা লোকমুখে হাসির খোরাক জোটায়। আসুন এরকম কয়েকটি ঘটনা পড়া যাক।

এক.

চট্টগ্রামের এক ধনাঢ্য ব্যক্তি। নাম ইয়াকুব দোভাষ। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের ছেলে স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না। কারণ, স্কুলে সিটের অভাব। এটা শুনে ভাবলেন তিনি নিজেই যাবেন ভর্তির তদবীর করতে। খোঁজ নিয়ে জানলেন স্কুলের হেডমাস্টারের নাম জ্যোৎস্না বিশ্বাস। তিনি ভাবলেন, হেডমাস্টারের জন্য দুটো শাড়ি কিনে নেওয়া যাক। যথাপ্রস্তুতিপূর্বক স্কুলে হাজির হলেন। হেডমাস্টারের রুমের দরজার পর্দা উঠাতেই তার চক্ষু চড়কগাছ। চেয়ারে বসা দশাসই একজন পুরুষ। তিনি বলে ওঠলেন, আরে আপনি তো পুরুষ মানুষ! আমি ভাবছি মহিলা! না হয় তো বাসা থেকেই ফোন করে দিতাম।

ইয়াকুব দোভাষ বেকুব বনে যান! শাড়ি দুটোর দিকে তাকিয়ে ভাবেন, এখন শাড়ি দুটো কী করি!
(ঘটনাটি চট্টগ্রামের নাট্যজন কুমার প্রীতীশ বলের কাছে শোনা।)

দুই.

হাসানাত আবদুল হাই তখন চট্টগ্রামে। তাঁর সঙ্গে চট্টগ্রাম আর্ট কলেজের শিক্ষক হাসি চক্রবর্তীর সাক্ষাতের দিন ধার্য হয়েছে। যথাসময়ে হাসি চক্রবর্তী উপস্থিত হয়েছেন। হাসানাত আবদুল হাই এর একান্ত সহকারীর সঙ্গে কথা বলে হাসি চক্রবর্তী তাঁর রুমে ঢুকছেন। হাসানাত আবদুল হাই তাঁকে দেখে হতবাক হয়ে বললেন, আপনি? আমার সঙ্গে তো এখন হাসি চক্রবর্তীর এ্যাপয়েনমেন্ট। আপনার সঙ্গে এখন কথা বলতে পারব না। হাসি চক্রবর্তী ইতস্তত করে বললেন, জি, আমিই হাসি চক্রবর্তী?

একথা শুনে তো হাসনাত আবদুল হাইয়ের চোখ কপালে! তিনি পরিস্থিতি সামলে নিয়ে বললেন, ও আচ্ছা, বসুন বসুন।
(ঘটনাটি চট্টগ্রামের আলম পরিবারের সদস্যদের কাছে শোনা)

তিন.

ঘটনাটি গত শতকে নব্বইয়ের দশকে শোনা। ঢাকার একটি প্রাচীন স্কুল পোগোজ স্কুল। সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জুলফা মোহাম্মদ তাঁর জীবনের একটি ঘটনা শুনিয়েছিলেন।

জুলফা মোহাম্মদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে গিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে সব শিক্ষার্থীকে কোনো না কোনো হলের সঙ্গে এটাচ্ড থাকতে হয়। ইনস্টিটিউটের করনিক জুলফা নাম শুনেই শিক্ষার্থী মেয়ে মনে করে নামের পাশে রোকেয়া হল লিখে হলের আনুসঙ্গিক কাজ সারার জন্য কাগজপত্র দিয়ে দিলেন। এই কাগজপত্র পেয়ে তো তার অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি। রোকেয়া হল মেয়েদের হল। সেখানে তিনি কী করে যাবেন? তিনি ইনস্টিটিউটের সেকশন অফিসারের কাছে গিয়ে এই ঘটনা বললেন। তিনি তৎক্ষণাৎ কাগজপত্র শুধরে দিলেন।

চার.

আমার বন্ধু বিপাশ আনোয়ার। গল্প উপন্যাসের নিয়মিত পাঠক। একদিন আমাকে নিশাত চৌধুরীর একটি উপন্যাস দিয়ে বলল, পড়ে দেখ, মহিলা লিখেন ভালো। আমি বললাম, মহিলা পেলি কোথায়? নিশাত চৌধুরী তো পুরুষ!

বইয়ের জ্যাকেট খুলে দেখালাম। বিশাল গোঁফযুক্ত নিশাত চৌধুরীর ছবি দেখে তো ওর চোখ ছানাবড়া! লেখকের প্রকৃত নাম মোহাম্মদ গোলাম আলী। পল্লব পাবলিশার্সের স্বত্বাধিকারী। তিনি নিশাত চৌধুরী ছদ্মনামে লিখেন।

পাঁচ.

একজন জাপানি ভদ্রলোক। নাম তার ইশিকাওয়া। মাঝে মাঝে বাংলাদেশে আসেন। ঢাকায় এলে আমার এক কাজিনের বাড়িতে দু’একদিন বেড়িয়ে যান। আমার ভাগনে তাকে বলে ‘তৃতীয় কাওয়া’। আমাদের দেশে আছে দাড়কাওয়া আর পাতিকাওয়া। জাপানি ইশিকাওয়া হলো তিন নম্বর কাওয়া। উল্লেখ্য, আমাদের দেশে কোথাও কোথাও কাককে আঞ্চলিক ভাষায় কাওয়া বলা হয়।

ইশিকাওয়া প্রথমে বুঝতে পারেনি তাকে কী বলা হচ্ছে। পরে বুঝল কাওয়া বলতে কাক বোঝানো হচ্ছে। তখন হেসে বলত, হলো না, হলো না। ইশিকাওয়া ‘তিন নাম্বার কাওয়া’ হলো না। তোমাদের কাওয়া তো কালো আর জাপানি ইশিকাওয়া ফর্সা!

বিদেশীদের আরো অদ্ভুত অদ্ভুত নাম আছে। যেমন, মাইকেল ফক্স। নামের অর্থ কী দাঁড়ায় মাইকেল খেকশিয়াল! কারো নাম জন কিল বার্ড। এর অর্থ কি জন পাখি মারে? লিভিং স্টোন অর্থ করলে কি দাঁড়ায় জীবন্ত পাথর! কারো নাম আবার উড হাউজ। এর অর্থ কী করব? কাঠের বাড়ি না কাঠ বাড়ি? ছোট বেলায় এসব প্রশ্ন মাথায় কিলবিল করত, যা এখনো ভোলা যায় নি।

শেষ কথা

নাম নিয়ে আছে আরো নানান রসিকতা। এসব বলে শেষ করা যাবে না। তবে সবশেষে একটি কৌতুক বলে শেষ করব। কৌতুকটিতে একজন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম নিয়ে রসিকতা করা হয়েছে।

জনৈক ব্যক্তি একজন দুষ্টু বালককে জিজ্ঞেস করেছেন- তোমার নাম কী?

বালক- আমার নাম ওমর মুড়ি-কাঁঠাল।

জনৈক ব্যক্তি- ওমর মুড়ি-কাঁঠাল আবার নাম হলো না কি?

বালক- কেন? ওমর খৈ-আম (ওমর খৈয়াম) নাম হতে পারলে ওমর মুড়ি-কাঁঠাল নাম হবে না কেন?

এ প্রশ্নের উত্তরে আপনারা কী বলবেন?

(পুনশ্চ: এ লেখার উদ্দেশ্য কাউকে ছোট করার জন্য নয়, নিছক মজার জন্য।)


মন্তব্য

কৌস্তুভ এর ছবি

আরে ভাই, দুনিয়াজোড়া পচুর গিয়াঞ্জাম! নাম নিয়েই বা কম কি? ইংরিজি বানানে সুনন্দ আর সুনন্দা এক হয়ে যায়, তাই নিয়ে আমাদের কলেজে কত প্যাচাল। আবার যখন গেলেম আম্রিকা, তখন কেউই দেখি কৌস্তুভ বলতে পারেনা। একদল সুর করে ডাকে কুউউস্তুভ, শুনে মনে হয় লুকোচুরি খেলছে। তাও বা সই, যেদিন kostov বলে ডাক দিল সেদিন বিয়াপক ডরাইলাম, যে এই রে, রাশিয়ান নাম ধরাইছে ব্যাটারা আম্রিকায় বসে, কবে না মারধোর খেতে হয়। শেষে ডিপার্টমেন্টে একদিন স্টাফ নাম লিখল gustup। তখন বড় ভেঙে পড়েছিলাম।

অপরাজিতা [অতিথি] এর ছবি

লেখাটা পড়ে আমারও একটা দেখা ঘটনা শেয়ার করি। আমি তখন ২/২এর স্টুডেন্ট।ডিপার্টমেন্টাল ডে হবে,সেখানে সিনিয়রদের করা প্রজেক্টগুলোও ডিসপ্লে হবে।জুনিয়ররা সেখানে কামলা খাটবে।ক্লাসে ভাইয়া-আপুদের নামের লিষ্টি থেকে আমরা তখন কে..কার কামলা হবো..এই যুদ্ধে ব্যস্ত। লিয়ন প্রায় উড়ে এসে ঝড়ের বেগে '০২ব্যাচের "অভি" নামটিকে দখল করে নিলো।এরপর প্রজেক্ট ডিসপ্লের দিন শুনি, লিয়ন বেঁকে বসছে। সে কিছুতেই ঐ সিনিয়রের কামলা হবে না।আমরা সবাই তখন ওকে চেপে ধরলাম..."কামলা খাটবি না, তো তখন এতো লাফাচ্ছিলি ক্যান?"... লিয়নের সলজ্জ স্বীকারোক্তি.."আমি তো মনে করছি, এইটা ভাইয়া".....

অপরাজিতা [অতিথি] এর ছবি

হায় হায় আমিও তো অপরাজিতা নামেই মাঝে মাঝে ২/১ টা কমেন্ট করি। আপ্নিও কি বুয়েট?শুধু ডিপার্টমেন্ট আলাদা!আমি সিএসসি, ০২।
মনে তো হচ্ছে নামের শেষে এখন থেকে ডিপার্টমেন্ট দিতে হবে খাইছে
ভাবতেছি মালিকা হামিরা অথবা কেহেরমান নিক নিবো!

অপরাজিতা [অতিথি] এর ছবি

হুমম্..মুসিবত হয়ে গ্যালো আপু...আমার নিজের নামটাও মহা কমন টাইপ,এখন দেখি নিক টাও...যাই হোক, আপনি "অপরাজিতা"ই থাকেন..নেকস্ট টাইম আমি না হয় "পিচ্চি হান্নান" টাইপ কিছু হয়ে যাব..

রিক্তা এর ছবি

পিচ্চি হান্নান নাম টা বেশি কুল হয়ে যায়। আমি রীতিমত হিংসিত হয়ে আমার অচলনাম "রিক্তা" করে দিলাম।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সমাজসেবার চাকরি করতেন এক ভদ্রলোক। নাম রমণীমোহন। তার কলিগরা তাকে ডাকতো রমণী বাবু....

০২

নামের লিঙ্গের চেয়ে ভয়াবহ দাঁড়ায় টাইলগুলার অর্থ খুঁজলে। রাস্তায় ঘুমায় নাম তালুকদার। চুরিতে ধরা পড়ে নাম বলে কাজী...

বাউলিয়ানা এর ছবি

হা হা হা...চট্টগ্রামে আপনার উল্লেখিত একজন আমার আব্বার সাথে দেখা করতে এসেছেন। আর আম্মা ধরে নিয়েছেন উনি কোন মহিলা, তাই পর্দার আড়াল থেকে দেখার কৌতুহল সামলাতে পারেননি। পরে দেখেতো নিজেই অবাক হয়ে যান।

নামের বিড়ম্বনা নিয়ে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা মুভি ছিল "প্রাইভেট সেক্রেটারী" নাম বোধহয়। ওখানে তার নাম থাকে রমা গুপ্ত। বড়ই হাসির কাহিনী ছিল। ইউটিউবে পাচ্ছি না মন খারাপ

কৌস্তুভ এর ছবি

সিনেমাটার নাম ছিল 'পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন্ট'। ভানুর নাম ওখানে ছিল রমাপদ গুপ্ত, সংক্ষেপে বলত রমা গুপ্ত। তাই নিয়ে প্যাচাল।

বাউলিয়ানা এর ছবি

হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছেন।

আহ্‌ নামটা ভুল করলাম ক্যাম্নে বলেনতো!

বইখাতা এর ছবি

তিন নম্বরটার মত কাহিনী আরো দুই একটা আছে। হাসি

বোহেমিয়ান এর ছবি

পড়ার সময় বন্ধুদের নাম ভ্যাঙানোর কথা মনে পড়ে গেল!
সজিব নামের বন্ধুদের সবজি ডাকতাম!
আরও কত কী!
_________________________________________

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

 উত্তর ফাল্গুনী এর ছবি

আমার দোস্তের বর এর নামও সজিব..আমরা ওকে ক্ষ্যাপানোর জন্য "আজিব" ডাকতাম..হে..হে..হে!

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি নতুন একটা নাম বানাই?

"ওমর ভাতলিচু"!

--- থাবা বাবা!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।