অলস সময় পেরোতে চায় না। বিছানায় শুয়ে ছাদের উপর টিকটিকির পথ চলা দেখতে দেখতে মনে পড়ল ফেলে আসা বন্ধুর কথা। স্মৃতি তুমি বেদনা-কথাটা সকল সময় সত্য নয়। মাঝে মাঝে স্মৃতি হাস্য রসের খোরাকও। হঠাত করে বন্ধুর কথা মনে পড়াতে উঠে বসলাম। মাস্টার্সে পড়ি। বন্ধুটি গেল বিসিএস পরীক্ষার ইন্টারভিউতে। হলে সবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে যথাসময়ে হাজির। বড্ডো নার্ভাস। চাকরি না হলে কি হবে? অনেক কিছুই নির্ভর করে চাকরিটার উপর। ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে কাঁপছে, কিছুটা ভয়, কিছুটা অনিশ্চয়তায় দোদুল্যমান। তার কাঁপুনি জাঁদরেল ইন্টারভিউ বোর্ডের চশমা এড়ালো না। বোর্ডের একজন তো জিগ্যেস করেই বসল: " আপনি কাঁপছেন কেন? কোন কোশ্চেন তো এখনও করিনি"? কাঁপতে কাঁপতে বন্ধুর জবাব: "স্যার কাঁপনের দেখছেন কি, কোশ্চেন কইরা দেখেন কাঁপন কারে কয়"? উত্তর শুনে সদাশয় ইন্টারভিউ বোর্ড সদয় হলো। বরফ ভেংগে কথার জবাব শুরু হলো কম্পমান বন্ধুর মুখ থেকে। যথেস্ট বিনোদিত হলেন সবাই। তারপর যা হবার তা ই হলো।
আজকাল কাঁপুনি দিয়ে বিনোদন দিতে হয় না। এমনিতেই জনগণ বিনোদিত। অদ্ভুত অনিশ্চিত সময়। গণতন্ত্রের ল্যাব ওয়ার্কে কাজ চলছে। নতুন কিছু একটার পয়দা হবে -সেই আশায় পাবলিক অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। শুদ্ধি অভিযান চলছে। আর যারা সকল শুদ্ধতার উর্ধ্বে বাস করে তাদের জন্য তৈরী হচ্ছে ট্রুথ কমিশনের সীলমোহর। বন্যা ও টর্নেডোতে বিপর্যস্ত দেশ। দ্রব্য মূল্যে দিশেহারা। তারপরও আমরা ধীর স্থির। সবকিছু সিস্টেমে আনা হচ্ছে। আমরা ধৈর্য সহকারে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইন দিয়ে রিলিফ নিতে পারি। রিলিফ নিতে গিয়ে ব্রীজ ভেংগে নীরবে আত্মাহুতি দিতে পারি। তারপরও আমরা নীরব। এই দেশ তো বহুবছর আগেই আন্জুমানে মফিদুল ইসলামের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। না হলে, কি বারো ভুতের চক্করে দেশ এভাবে চক্কর খায়? এক খাদকের হাত থেকে আরেক খাদকের কাছে হাত বদলায়। এভাবেই চলতে থাকে অভাগা দেশ। আমরা নির্বিকার বিনোদনভোগী জনগোষ্ঠী, যা পাই তাতে খুশী থাকি। না পাওয়ার হিসেব মেলাতে যাই না। তাই কস্টেও ভুগি না।
আমাদের কস্ট একান্ত আমাদের। এর ভাগ কেউ নিবে না। মাঝে মাঝে আমরা খবরের শিরোনাম হই। অবশ্য আমাদেরকে শিরোনাম কাড়তে অনেক প্রাণ দিতে হয়। এদেশে জিনিস পত্রের দাম বাড়লেও জীবনের দাম এখনও খুব সস্তা। সেজন্য একটি প্রাণ থেকে তিরিশ লাখের প্রাণের মূ্ল্য কোন হিসেবের নিক্তিতে উঠে না। প্রাণের মূ্ল্য থেকে শুরু করে জীবনমানের মূল্য সবই নিম্নমুখী। বাংলাদেশকে পরিচিত করতে বারবার বলতে হয়, জীবনমান দৈনিক দুই ডলারের নীচে। সেই দুই ডলারও চলে যায় আমলা-ব্যবসায়ী-সেনাপতিদের ভোগে। বাদবাকী যা থাকে তার ছিঁটেফোটা কখনও ত্রাণ শিবিরে আসলে আমরা চোখ বন্ধ করে উদ্বেলিত হয়ে থাকি। না পাওয়াতে এতো অভ্যস্ত জীবনে অনেক পাওয়ার কল্পনা কখনও ঠাঁই পায় না। এর মাঝে ছিটেফোঁটায় আমরা বিনোদিত থাকি। তাই বিনোদনের প্রত্যাশায় আগামী বছরের এসময় আরও অনেকের কাঁপন আমরা দেখব। মইন-মসুদ গংদের ভেল্কীবাজি শুরু হবে। সবার সাথে কথা বলা যায়। কিন্তু ভাশুরের নাম বলা যায় না। রাজনীতিবিদরা এতোই অপাংক্তেয় যে যাদের কাছে এক বছর পরে ক্ষমতা ছাড়তে হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সংকটকালে তাদের সাথে কথা বললে তত্বাবধায়ক সরকারের জাত যাবে বলে দুই জেনারেল ঘোষণা দিল। নির্বোধরা কি বুঝবে, দেশে যখন গণতন্ত্র নেই, তখন কথা বলার দরকার বেশী সকল মত ও দলের সাথে। অন্তত আস্থা ও পারস্করিক বিশ্বাস সৃস্টির জন্য হলেও। হায়রে বিচিত্র দেশ!! নির্বোধ হওয়ার অপরাধের চেয়ে নির্বুদ্ধিতার দায় না বুঝার অপরাধ অনেক গুরুতর। এটা বুঝার জন্য আইকিউ স্কোর মরনের চেয়ে একটু বেশী থাকতে হবে। তবে যাদের সম্মিলিত বুদ্ধি হাঁটুর নীচে বাস করে তাদেরকে এই আলোচনায় সম্পৃক্ত না করাই সমীচিন ও নিরাপদ হবে।
মন্তব্য
বেশ কদিন পর আড্ডাভাইয়ের দীর্ঘ লেখা পড়লাম ।
মৃত্যুই তো বিনোদন এবং বানিজ্য এই পোড়া দেশে ।
-----------------------------------------
ভালো নেই,ভালো থাকার কিছু নেই
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
কিছু বলার নাই। নিজের মুখে দুইটা জুতা মারতে পারি। তারপর আবার মুখ ধুইয়া আফটার শেভ লাগামু। ইহাই শাস্ত্রীয় রীতি।
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
এই একটা কথাই অনেক কথা বলে দেয়।
অসাধারণ লেখা লিখেছেন!
নতুন মন্তব্য করুন