বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৩৬ বছরে হঠাত করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে যে তুমুল আবেদন আন্দোলন চলছে তা আমাদের স্মরণকালে বিরল। রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনে সংস্কারের সূত্র ধরেই যুদ্ধাপরাধী রাজাকার জামাতীদের বিচারের কথা প্রথম উঠে আসে। এখন তা জনপ্রিয় দাবী হিসেবে রুপ নিচ্ছে। এমন অভাবনীয় সাড়া প্রত্যক্ষ করেও সরকার বেশ অবিচল ও নির্বিকার ভাব নিয়ে আছে। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে সরকারীভাবে কোন বিবৃতি চোখে পড়েনি। তবে জামাতের মুখপাত্র ও আইন উপদেস্টা ব্যরিস্টার মঈনুল হোসেন এই দাবীর মধ্যে তত্বাবধায়ক সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার গভীর ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পেয়েছেন। অবশ্য ব্যরিস্টার মঈনুল গন্ধ খোঁজার ব্যাপারে পারদর্শিতা বারবারই দেখিয়েছেন যা আমাদেরকে অবাক করে না।
তবে আমাদেরকে অবাক করে যখন দেখি সরকার অনেক বিষয়ে ম্যান্ডেটের বাইরে কাজ করছেন, কিন্তু যখনই যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথা আসে তখনই তারা ম্যান্ডেটের বাইরে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন, মনে হয় রক্তচোষা জোঁকের মুখে লবণ পড়েছে। তাদের এই নির্বিকার ও নিরাসক্ত দৃস্টিভংগী দু:খজনক হলেও অস্বাভাবিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের নামে মিথ্যে মামলা ঠুকে সামরিক সরকার তাদের ক্ষমতার দম্ভ দেখাতে পারে, কিন্তু যুদ্ধাপরাধী রাজাকার জামাতীদের পশম স্পর্শ করতে লজ্জা পায়। তাহলে গোড়ায় গলদ কি?
সরকার নিজেই যুদ্ধাপরাধের বিষয় নিয়ে ডামাডোল বাজাতে যথেস্ট সাহায্য করছে। বিষয়টি যে রাজনৈতিক নয়, তা স্পস্ট হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক বিষয় হলে সরকার জরুরী আইনের আওতায় এই দাবীকে নিষিদ্ধে ঘোষণা করতেন। বিষয়টি যেহেতু অরাজনৈতিক, তাই রাস্ট্রকেই এর বিহিতের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে রাস্ট্র নির্বিকার কেন? বর্তমান সামরিক বাহিনী যে বেশ সুপরিকল্পিতভাবেই এগোচ্ছে তা ক্রমশ:ই স্পস্টতর হয়ে উঠছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে ডামাডোল যতো তীব্র হবে, তত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ততই ভাল ও নিরাপদ। সরকারের নির্বাচন নিয়ে যে ফন্দিবাজি করতে চাচ্ছে তা ডামাডোলের আড়ালে থাকলেই সবচেয়ে ভাল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে এই সরকার কোন উদ্যোগ নেবে না তা তাদের আচার-আচরণ ও বিবৃতিতে বোঝা যায়। তবে এ ব্যাপারে গণদাবী তীব্র হোক এটাও সরকার চায়। এতে মেরুকরণ সহজ হবে। তেলে জলে মেশানো সহজ হবে। স্বৈরাচারী এরশাদ পতনের দু'দিন আগে পুরনো ঢাকার মন্দিরে আগুন লাগিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনের মোড় ঘুরাতে চেয়েছিল। বর্তমান সরকার যদি যুদ্ধাপরাধের বিচারের ডামাডোল তীব্র করে নতুন কোন ফ্রন্ট নামাতে পারে তাতে মন্দ কি? এই দুরভিসন্ধি নস্যাত করার জন্য আমি বলব, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীর পাশাপাশি গণতন্ত্রে প্রত্যবর্তন তরান্বিত করার আন্দোলনও তীব্র করার খুব দরকার। যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে সামরিক গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন করতে সাহায্য করা সমীচিন হবে না। সরকার কৌশলে "জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ" গঠন করে গনতন্ত্রকে সুদূর পরাহত করার চক্রান্ত করছে। এ ব্যাপারে কিন্তু দেশের গণমাধ্যম রহস্যজনকভাবেই নীরব। একটি অনির্বাচিত সরকার নির্বাচনী ম্যান্ডেটের বাইরে যে সব অসাংবিধানিক উদ্যোগ-আয়োজন নিচ্ছে তা আগামী এক বছরে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার জন্য করছে না। একটি দীর্ঘমেয়াদী আয়োজনের আওতায় এটা করা হচ্ছে। সরকারের সেই ইচ্ছাও উপদেস্টাদের কথায় ইনিয়ে বিনিয়ে বেরিয়ে এসেছে। এখন শুধু সেই নাটকীয় ঘটনাগুলো জাতীয় দৃশ্যপটে আসার অপেক্ষায় আছে।
বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক অভিপ্রায় কখনও অপূর্ণ থাকেনি। আজকের বিশ্ব বাস্তবতায় সামরিক বাহিনী সরাসরি দৃশ্যপটে না আসলেও ঘুড়ির লাটাই যে তাদের হাতেই থাকবে তা নিশ্চিত। সামরিক বাহিনী থেকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা গত এক বছরে যে দীর্ঘ হয়েছে তা একটু খেয়াল করে দেখুন। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। একটি সামরিক সরকার যদি সিভিল পোশাকে বের করা যায় তাহলে মন্দ কি? যুদ্ধাপরাধের বিচারে সোচ্চার জনতাকে সামনে রেখে এই প্রক্রিয়া যদি সম্পন্ন করা যায়, তাহলে খারাপ কি? তবে সরকার ভুলে গেছে আগুন নিয়ে খেলা বিনোদনমূলক যতক্ষণ পর্যন্ত তা খেলোয়াড়কে পুড়িয়ে না দেয়। চ্যানেল আইয়ের সৌজন্যে রাস্ট্রপতি আয়োজিত বিজয় দিবস বর্জন নিয়ে খবরটা দেখুন। এতে যুদ্ধাপরাধ নিয়ে ক্ষোভ যতোটা প্রকট, তার চেয়ে বিশেষভাবে দ্রস্টব্য এই অনুষ্ঠানে আশ্বস্ত মুজাহিদ আর সাঈদীর উষ্ণ সম্বর্ধনার দৃশ্য।
মন্তব্য
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে এই লেখাটার জন্য।
পড়ে গেলাম।কিছু বলব না।
---------------------------------------------------------
জায়গায় খাইয়া, জায়গায় ব্রেক...
---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
আপনার লেখা পড়ে আর ভিডিওর প্রথম অংশ দেখে আগুন ধরে গেল রক্তে! শালাদের আস্পর্ধা কতো!
আর দ্বিতীয় পর্ব আশাবাদী করে তুললো আমাকে। ওরা নির্মূল হবেই একদিন!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
- পড়লাম এবং ভিডিওটা দেখলাম।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
পড়লাম।
বিশ্বের অন্য কোথাও দেশদ্রোহী যুদ্ধাপরাধীরা এত দাপটে নাই। আমরা আসলে একটা বেঈমান জাতি। যাদের আত্মত্যাগে স্বাধীন হলো বাংলা তাদেরকে পলে পলে আমরা অপমানই করে যাচ্ছি।
নতুন মন্তব্য করুন