জেনারেল মইন চ্যানেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রার এক বিশেষ আয়োজনে উপস্থাপক জিল্লুর রহমানকে একান্ত সাক্ষাতকার দেন যা কিছুক্ষণ আগে প্রচারিত হয়। বাংলাদেশের বর্তমান তত্বাবধায়ক সরকার সরাসরি সামরিক বাহিনীর সমর্থনে ও তত্বাবধানে আগত। গত বছরের জানুয়ারীতে সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের পর ঘুরে ফিরে একটা প্রশ্নই বারবাবর এসেছে সামরিক বাহিনী কি ব্যারাকে ফিরবে? জেনারেল মইন কি ক্ষমতা নেবেন?
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সামরিক বাহিনীর ভূমিকায় গণমনে সন্দেহ প্রকটতর হতে থাক। বের হয়ে আসা সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে পাঠানো কোনকালেই সহজ হয়নি। অতীতে যতোবারই তারা ব্যারাক থেকে বেরিয়েছে ততোবারই বন্দুকের নল প্রসব করেছে নতুন রাজনৈতিক দল। কিন্তু এবারকার সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল মইন বারবারই দৃঢ়ভাবে বলে আসছেন তাঁর কোন রাজনৈতিক অভিসন্ধি নেই। এটা তাঁর ব্যক্তিগত অবস্থান, না সামরিক বাহিনীর অভিন্ন ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তা এখনও স্পস্ট নয়। বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়ে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নিয়ে নিচ্ছে বলে চলমান তত্বটি এখনকার সময়ের একটি দু:খজনক বাস্তবতা। গণতন্ত্রের প্রত্যাশা সামরিক উর্দির আবরণে বিলুপ্ত হচ্ছে। মিলিটারী সিভিলিয়ান পার্টনারশীপ উন্নয়নশীল বিশ্বে গণতন্ত্রের নতুন নকশা। তাই, যাবতীয় উপসর্গ দেখে সাধারণ জনগণ আশ্বস্ত বোধ করে না।
দেখুন জেনারেল মইনের প্রায় এক ঘন্টার একান্ত সাক্ষাতকার:
জানুয়ারী মাস জেনারেল মইনের ব্যক্তিগত আর ক্যারিয়ারের জন্য স্মরণীয় মাস। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারীর ১১ তারিখে তিঁনি সামরিক বাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। আর জানুয়ারীর ২১ তারিখে জেনারেল মইনের জন্ম চট্রগ্রামে। শুভ জন্মদিন জেনারেল। কমিশন পাওয়ার ৩২ বছর পর ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনে তার নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। নস্যাত করে দেয় বিএনপি জামাতের পাতানো নির্বাচনী খেলা। তবে জাতীয় সংকট থেকে মুক্তি দিলেও রাজনৈতিক গতিপথ নিয়ন্ত্রণের সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ ভূমিকা মোটামুটি ওপেন সিক্রেট । দলে মুখ বদল আর নতুন দলগুলোর ভীঁড় গ্রাস করতে থাকে স্বচ্ছতা। তার পাশাপাশি চলে সিভিল সরকারের সামরিকীকরণ। বাংলাদেশে তত্বাবধায়ক সরকার থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয়,ক্রীড়া পরিষদ আর সরকারের অসংখ্য বিভাগগুলোতে সামরিক বাহিনীর ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি ও নিয়োগ বাণিজ্য স্মরণ করিয়ে দেয় ডেমোক্রেসী ইন ইউনিফর্ম। ছাত্র-শিক্ষকদের অন্যায় আর মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে অন্তরীণ করে রাখার মধ্যে সামরিক বাহিনীর ঔদ্ধত্য ও একগুঁয়ে মনোভাব তাদের স্বৈরাচারী মুখোশ উন্মোচন করে দেয়। সামরিক উর্দির খোলসে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে খুব একটা স্বস্তিবোধ করার যে উপায় নেই তা দু:খজনক হলেও সত্য।
জেনারেল মইন সামরিক বাহিনীর প্রধান। তার রাজনৈতিক এমবিশন আছে কি না তা জানে ভবিষ্যত। কিন্তু তাই বলে তাঁর ভক্তের সংখ্যা কিন্ত নিতান্ত কম নয়। গত বছর হার্ভাডে যাওয়ার পথে জেনারেল মইন লন্ডনে তার ভক্ত জাগো বাংলাদেশের একান্ত সান্নিধ্য উপভোগ করেন। আমেরিকায় প্রবাসীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত স্ট্যান্ড ফর বাংলাদেশ তাঁকে লাস্ট মোহিকান বলেই আখ্যায়িত করে। এর পাশাপাশি গত বছর ট্রাস্ট ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে তার ভাই আর তার ব্যক্তিগত ঋণ নিয়ে অনেক কথা বেরিয়ে আসে এবং যার তীব্র প্রতিবাদ তিনি করেন ভয়েস অব আমেরিকার সাথে এক সাক্ষাতকারে (পর্ব এক ও পর্ব দুইয়ে)। অনেকে বলেন প্রায় পাচজন সিনিয়রকে টপকে তাঁকে প্রমোশন দেওয়া হয়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ভাই সাইদ ইসকান্দরের ব্যাচমেট তিনি। দূর্নীতির অপরাধে অভিযুক্ত সাইদ ইসকান্দার অবশ্য নিরাপদে দেশত্যাগ করে এখন সপরিবারে লন্ডনে অবস্থান করছেন।
জেনারেল মইন সম্পর্কে যতোই প্রচার প্রচারণা থাকুক না কেন আজকের পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে সামরিক বাহিনী যে তার ভূমিকা নির্ধারণ করছে তা সহজেই অনুমেয়। হতদরিদ্র বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ব্যর্থতার সাথে সাথে সামরিক বাহিনীর ঘনঘন হস্তক্ষেপ যে গণতন্ত্রের সম্ভাবনাকে সুদূর পরাহত করবে তা নিশ্চিত। দেশে একটি যোগ্য নেতৃত্বের জন্য জেনারেল মইনের মতো সাধারণ জনগণও উতকন্ঠার সাথে অপেক্ষা করছে। তবে জনগণ এখন অপেক্ষা করছে নাটকের শেষ পালা দেখার জন্য। অপেক্ষা করেছ সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা, ও জবাবদিহিতার জন্য। জনগণের প্রত্যাশা কতোটুকু পূরণ হবে তা দেখতে হবে আজকের বাস্তবতার আলোকে। প্রাইম টাইমে সাক্ষাতকার দিয়ে যদি জনমনে বিশ্বাসযোগ্য সম্ভাবনার বীজ বপন করা যায়, তা হলে মন্দ কি?
মন্তব্য
ইয়া মইন...ইয়া মইন...
--------------------------------------------------------
শেষ কথা যা হোলো না...বুঝে নিও নিছক কল্পনা...
---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
I felt like MUA said a lot of things without saying much.
The person seemed afraid of asking questions to MUA, although I am sure the questions were pre-screened and fixed. We need to remember that MUA wanted to do the same at Harvard last year and they denied him.
So he got to speak in a class room instead of a seminar hall.
তৃতীয় মাত্রার তৃতীয় ব্যক্তি কোথায়?
বেসামরিক পয়সায় সামরিক হাসপাতাল (সি এম এইচ), আর্মির মেডিক্যাল কলেজ, নতুন "আর্মির বিশ্ববিদ্যালয়" চালানো, আর্মির অফিসার কর্তৃক আদিবাসীদের উপর নির্বিচারে বর্বর অত্যাচার-হত্যাযজ্ঞ চালানো, এসব কথা না তুলে বিশ্ব-অর্থনীতি বিষয়ে অপ্রাসঙ্ গিক অবান্তর লেকচার শোনাবার জন্য এই তামাশার কি দরকার কি ছিল?
hey moin tumi more a korecho mohan....
---------------------------------------------------------
শেষ কথা যা হোলো না...বুঝে নিও নিছক কল্পনা...
---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
জাতির বিবেক!
লেখতে চাই ..কিন্তু কি লিখবো?
নতুন মন্তব্য করুন