ছুটির দিনের কড়চা: পর্ব ০১

আড্ডাবাজ এর ছবি
লিখেছেন আড্ডাবাজ (তারিখ: শুক্র, ২৫/০১/২০০৮ - ১১:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ফিরে এলাম। ছুটির দিনে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তার মোড় পর্যন্ত গিয়ে ফিরে এলাম আবার ঘরে। ছুটির দিন। কিন্তু কেন জানি সব কিছু ছুটি পায় না। হঠাত করেই মনটা বিগড়ে উঠল। বাজারের ব্যাগটা হাতে নিয়েই খালি হাতে ফিরলাম। বাজার করতে মন চাচ্ছে না। বেরোতে মন চাচ্ছে না। তাহলে....? না, ব্লগাতে মন চাচ্ছে? ঠিক তাও না। কোন সাজানো স্ক্রিপ্ট থাকবে না। লেখার কোন উদ্দেশ্য থাকবে না। জীবনের কোন গন্তব্য থাকবে না। জীবন বয়ে নেব নিরুদ্দেশ যাত্রায়। এধরণের ছন্নছাড়া ভাবনা সম্বল করে হাতে এক কাপ চা নিয়ে ফিরলাম কম্পিউটারের কাছে। ছন্নছাড়া ভাবনার বিপত্তি অনেক বেশী। বিপত্তির মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে নামলে ঘরের দরজা সজোরে বন্ধ করে সর্বোচ্চ ভলিউমে হিন্দী গান বাজিয়ে দেওয়ার মধ্যে একধরণের ছেলেমানুষী কাজ করে। বয়স বাড়লেই যে বয়স্ক হতে হবে এমন কোন লিখিত সাংবিধানিক নিয়ম হিউম্যান বায়োলজীতে কি লেখা আছে? জানি না। তবে শুনি অনেক কথা।

যেমন এখন বাজারে যাচ্ছি না বলে আষাঢ়ের মেঘের মতো বাক্যবর্ষন শুরু হবে তা প্রতিরোধে কি ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা ভাবছি।

  • প্রথম অপশন: মাথা ব্যথা। না, লাভ নেই। আপত্তি আসবে, "তাহলে কম্পিউটারের সামনে থাকা চলবে না"।
  • দ্বিতীয় অপশন: চলো বাইরে খেয়ে আসি। তাতেও লাভ নেই। ছুটির দিনে বাজার না করলে সপ্তাহ ধরে কি ব্যবস্থা হবে?
  • এজতমাতে চলে যাই। তাহলে ৩ দিনের জন্য মুক্তি। সম্ভব না। অফিসে অনেক ঝামেলা। আর ঠান্ডাও বেশী। কমজোর ঈমান অতো ঠান্ডা সহ্য করতে পারবে না।
  • বাজার আর শপিংএর মুলা দিয়ে বউকে ঘরের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া। না, তাহলে আবার বাড়তি পয়সা খরচ হবে। প্র্যাকটিসটা আর্থিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
  • মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে কথা বলার ভান করতে থাকি। বলব, বস ফোন করেছে। কাজে লাগবে না। শেষবার ধরা খেয়েছি যখন একটু পরেই বস সত্যি সত্যি ফোন করে বউয়ের সাথে কথা বলল।
  • পুরনো দোস্ত একবার বলেছিল, বউ বাজার করতে বললে পচা মাছ আর বাসি তরকারি নিয়ে আসবি। তাহলে বউ আর কখনো বাজার করতে বলবে না।
  • মাথায় কিছুই আসছে না। তারচেয়ে বাথরুমে বসে আধা ঘন্টা পার করে একেবারে জুময়ার নামাজ পড়ার জন্য রেডী হয়ে আসি।

ভাবতে ভাবতে সময় পেরিয়ে গেল। এখনও কেউ তাড়া দেয়নি দেখে নিজেই অবাক হয়ে পড়লাম। আজকাল কেউ বকা না দিলে আর রাগ না করলে নিজের ইম্পর্টেন্স হারিয়ে ফেলি। চুপিচুপি তাকিয়ে দেখি ড্রইং রুমে বসে সবাই টিভিতে চ্যানেল আইতে মুক্তির উতসব ২০০৮-এর লাইভ স্টেজ শো দেখছে। আশ্বস্তবোধ করলাম। মুক্তিযুদ্ধ ড্রইং রুমে, ব্লগে আর স্টেজে সবাইকে ধরে রেখেছে। মুক্তিযুদ্ধকে ভুলাবার জন্য এতো আয়োজনের মাঝেও ফিরে দাঁড়াচ্ছে এক দল নতুন যোদ্ধা। এরাই বদলাবে আগামীর দিনগুলো নতুন অঙ্গীকারে নতুন শতাব্দীর গানে।
"...আরেকটি যুদ্ধের জন্যে
মনে-মনে তৈরি হয় মুক্তির সৈনিক..."


মন্তব্য

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

মুক্তির কথা মরে না, হয়তো ঘুমায়, নতুন করে শক্তিসঞ্চয়ের জন্যই।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সুমন চৌধুরী এর ছবি

বাজার আর শপিংএর মুলা দিয়ে বউকে ঘরের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া। না, তাহলে আবার বাড়তি পয়সা খরচ হবে। প্র্যাকটিসটা আর্থিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

হে হে



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

খুবই কুতুব মানের লেখা হয়েছে।

বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মুক্তিযুদ্ধকে ভুলাবার জন্য এতো আয়োজনের মাঝেও ফিরে দাঁড়াচ্ছে এক দল নতুন যোদ্ধা। এরাই বদলাবে আগামীর দিনগুলো নতুন অঙ্গীকারে নতুন শতাব্দীর গানে।
দারুণ ফিনিশিং !

মুজিব মেহদী এর ছবি

পড়ে মজা পেলাম। আশাও।
..................................................................................
অপরিপক্কতা সবসময় একরোখা হয়, আর পরিপক্কতা হচ্ছে সর্বগ্রাহী
-সেলিম আল দীন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।