তাহলে শুরু হোক আজকের সকাল

আড্ডাবাজ এর ছবি
লিখেছেন আড্ডাবাজ (তারিখ: শনি, ১২/০৭/২০০৮ - ৬:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রতিদিন সকাল বেলা টিভি চ্যানেলগুলো খবর পরিবেশন শুরু করার পর পরই চালিয়ে দেয় আজকের সকাল বেলার আলোচনা, আজকের গান। তার মধ্যে সবচেয়ে চমক লাগে সকাল সকাল নাচ দিয়ে দিন শুরু করার একটি টিভি চানেলের রেওয়াজ। বেঢপ সাইজের দ্রুত লয়ের নাচ-গান দিয়ে দেশের নাগরিক সাধারণ সকাল বেলা শুরু করবে এবং সারাদিন নাচতে নাচতে দিন শেষ করবে এই প্রত্যাশা আমাদের জাতীয় জীবনের চাহিদা ও বাস্তবতার সাথে অতি সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সকাল সকাল কারা টিভি দেখেন তা আমি জানি না। তবে ঢাকা শহরের যানজটের ভীঁড় ঠেলে অফিসগামী লোকদের সকাল সকাল নাচ গান দিয়ে দিন শুরু করার রেওয়াজটার মধ্যে যে মনস্তাত্বিক কারণ লুকিয়ে আছে তা বলাই বাহুল্য। এ দেশে এখন আমরা যা পাই তাতেই বাহবা দিতে থাকি। দেশের পনের কোটি মানুষের নৃত্যকলায় পারদর্শী হলে সকল অনুন্নয়নের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। আজ সকাল বেলা নাচ দেখতে দেখতে এই কথাটা মনে হচ্ছিল। দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার সাথে এই প্রাতকালীন নৃত্যের যৌক্তিকতা দেখে আমি বিনোদিত হতে থাকি।

একেবার ভেবে দেখুন তো সকাল বেলা এই নৃত্যশিল্পীদের দ্রুত ফিজিক্যাল স্টাইলের নাচ দেখতে দেখতে তাবৎ এনার্জী সঞ্চয় করে পাবলিক নাচতে নাচতে ভীঁড়ভাট্টা ঠেলে রুজি রোজগারের ধান্ধায় সকাল সকাল কাজে নামবে। সকাল বেলা নাচানাচি করতে গিয়ে ব্রেকফাস্টের কথা ভুলে যাবে। নাচতে নাচতে রাস্তায় নামবে। নাচতে নাচতে বাসে উঠবে। নাচতে নাচতে অফিসে ঢুকবে। অফিসে ঢুকেই আবার নাচতে থাকবে। এই রকম নাচানাচি করার ফলে অফিসের বড়ো বসের বিশাল বপুও কমতে থাকবে। পাবলিক ফিজিক্যালী ফিট হতে থাকবে। দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য ফিজিক্যাল ফিটনেসের খুব দরকার। এই কথা পাবলিক না বুঝলেও তত্বাবধায়ক সরকার হাঁড়ে হাঁড়ে টের করতে পারছে। কতোগুলো রাজনৈতিক রুগ্ন-মুমূর্ষ রুগীদের জেলের ভেতর ঢুকিয়ে মেডিক্যাল বিল দিতে দিতে আর চিকিৎসার হেঁশেল ঠেলতে ঠেলতে সরকার কাবু হয়ে উঠছে।

এজন্যেই ফিজিক্যাল ফিটনেসের খুব দরকার। সর্বক্ষেত্রেই দরকার। কথাটা আমার না। কথাটা পুরনো এক বন্ধুর। কথাটা আজ সকালে খুব মূল্যবান মনে হলো। এই দেশে মেন্টাল ফিটনেসের চেয়ে ফিজিক্যাল ফিটনেসের লোকজনরা কাজেকর্মে সচরাচর উন্নতির মুখ দেখেন। তারাই সবসময় আগাগোড়া দেশের দেখভাল করেন, রক্ষক ও ভক্ষক হিসেবে পাবলিকের কাছে জনপ্রিয়। তাই সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা তারকার সংখ্যা বাড়িয়ে নিয়ে তাদের ফিজিক্যাল ফিটনেসের গরিমা দেখাতে থাকেন।

ফিজিক্যাল ফিটনেসের ফেইস ভ্যালুর অর্থনৈতিক মূল্য কোনদিনও কমে না। তাই গ্রামীণ ব্যাংক থেকে শুরু করে টিভি চ্যানেলগুলো এর জন্য লগ্নী করতে থাকে। টিভি খুলে তাদের চেহারা দেখে আমরা জাতীয় শক্তি অনুভব করতে থাকি। সেই একই স্পিরিটে তত্বাবধায়ক সরকারও এই ফেইস ভ্যালুর জন্য রোড শোর আয়োজন করল। আজকে যখন সারা দেশে রোড শো শেষ করে রোড শো ঢাকায় ফিরবে তখন এই সরকারের মূখ আরো উজ্জ্বল হবে। সারাদেশ নাচিয়ে তারপর গাড়ী ঢাকায় ফিরল। জনতার মাঝে টানটান উত্তেজনার ফসল জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখবে।

এই যে শো-শা, এটার খুব দরকার। খালি কলস বাজে বেশী। ভঙ্গুর জিনিসও সুন্দর হয় বেশী। লোকজনের মনোযোগ কাড়েও বেশী। বিশাল বপুর বসের চেয়ে ফিজিক্যাল ফিটনেসের ভাইয়েরা অনেক বেশী গ্রহণযোগ্য ও নন্দিত। সে কারণে ভায়াগ্রার সুবাদে নব্বই বছরেও ফিজিক্যালি ফিট একজন লেজেহোমো প্রেসিডেন্ট হওয়ার লাস্ট স্বপ্ন দেখতে থাকেন। এতে মন্দ কি। আমরা এমনিতেই স্বপ্ন তাড়িত জাতি। স্বপ্ন দেখতে দেখতে আমরা জন্ম নেই। স্বপ্ন দেখতে দেখতে একখন্ড দেশ আর জাতীয় পতাকা পেয়ে যাই। স্বপ্ন দেখতে দেখতে জীবন কাটিয়ে দেই। এখন শুধু স্বপ্নের সাথে যোগ দিতে হবে প্রাতকালীন নৃত্যচর্চা।


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

রোড শো আজকে ঢাকায় আসলো নাকি? ইশ্... আগে জানলে রাস্তার মোড়ে খাড়ায়া একটু দেখতাম... স্বাগতম জানাইতাম।
ভালো লাগলো লেখাটা...

অনেকদিন পরে আপনার লেখা পড়লাম।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শ্যাজা এর ছবি

প্রাত:কালীন নাচা গানা আমরাও দেখি কিন্তু এভাবে তো ভাবি নাই! সত্যিই তো!! এভাবেই তো চলে আসবে সকল প্রকার ফিটনেস!!


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

স্বপ্ন দেখবো বলে এই মুদলাম আঁখি....
ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আড্ডাবাজ।

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

আড্ডাবাজ এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।