আজকাল লিখি না। পড়িও না। শুধু অপেক্ষা করি। অনেক দিন থেকেই মনে হচ্ছে শহর থেকে অনেক দূরে অন্ধকার সন্ধ্যায় ডিম লাইটের আলোতে একটি নির্জন ট্রেন স্টেশনে অপেক্ষা করছি শেষ ট্রেনটির জন্য। বারবার স্টেশন থেকে বেরিয়ে শুয়ে থাকা রেইল লাইনের দিকে তাকিয়ে দেখছি আর অপেক্ষা করছি, কখন লোকাল ট্রেনটা আসবে? অপেক্ষার সময় সচরাচর দীর্ঘ হয়। ফুরোতেও চায় না। তারপরও গন্তব্যে যেতে হবে বলে অপেক্ষার বিকল্প নেই।
অপেক্ষমান যাত্রীরা অবসরে বসে বসে মশা মাছি তাড়াচ্ছে। দু'চারজন যাত্রী এদিক সেদিক অলসভাবে হেঁটে বেড়াচ্ছে। অনবরত সিগ্রেট ফুঁকছে। এ রকম অসহ্য সময় অতিক্রম করার মধ্যে যাত্রীরা নিরুপায়, বড্ডো অসহায়। করুণার কাঙ্গাল। ট্রেনের অপেক্ষায় বসে থাকার অসহায় অনুভূতিটা প্রবলভাবে জেঁকে বসে পুরো মনটাকে এক আশ্চর্য বিষণ্ণতায় গ্রাস করে রেখেছে। হাত পা নেড়ে মশা-মাছি তাড়াবার জন্য ঝাঁকি মেরে যদি দীর্ঘ অপেক্ষার বিষণ্ণতাকে তাড়ানো যেত? নিজের একান্তে জিজ্ঞেস করে হেসে ফেলি, তা কি আর হয়?
একটি ট্রেনের জন্য অপেক্ষা? গন্তব্যে পৌঁছাবার জন্য অপেক্ষা? অপেক্ষায় প্রহর গুণতে গুণতে নিজের লাগেজের উপর ক্লান্ত মাথাটি রেখে ঘুমিয়ে পড়া। খুব পরিচিত চিত্র। আমার জন্ম থেকেই যেন এ ছবি দেখে আসছি। আমরা বোকা যাত্রী। সবসময়ই ট্রেনের অপেক্ষায় থাকি। ভাবি, এই শেষ ট্রেনটা আমাদের কাংখিত গন্তব্যে নিয়ে যাব। না, নেবে না। ট্রেনটা আসবে তীব্র গতিতে। হুইসেল বাজাতে বাজাতে গতি বাড়িয়ে স্টেশন অতিক্রম করে চলে যাবে। বোকা প্যাসেঞ্জাররা লাগেজের উপর মাথা রেখে রাত পার করে দেবে। এভাবে আমরা বারবার বোকা হচ্ছি। ট্রেনের জন্য। গন্তব্যের জন্য।
বারবার নির্বোধ যাত্রীদের মাথায় হাত বুলিয়ে আশ্বস্ত করা হচ্ছে, ট্রেন আসবে। একে একে সবাইকে ধারণ করতে। গন্তব্যে পৌঁছাতে। আবারও বোকা হবে অপেক্ষমান যাত্রীরা। দূর্নীতিবাজ, ধান্ধাবাজ, মৌলবাদী চক্র আবারও ট্রেনটি কব্জা করে নিয়ে যাবে নিজেদের ধান্ধার স্টেশনে। এই তো আয়োজন শুরু হয়েছে, আবারও শুরু হয়েছে মৌলবাদীদের আস্ফালন। তাদের পৃষ্ঠপোষক মাতা-পুত্র আবারও বিজয়ের বেশ নিয়ে বেরিয়ে আসবে। তাদের জাতীয়তাবাদী ধান্ধাবাজির নতুন ব্যবসাপাতি নিয়ে নির্বাচনে বসবে। এ ধরণের একটা পরিকল্পিত দৃশ্যপটের খুব দরকার ছিল মৌলবাদী-জাতীয়তাবাদী অক্ষের উৎক্রান্তির জন্য। তাদের নির্লজ্জ লজ্জাবোধ থেকে নিষ্কৃতি দিয়ে জাতীয় করুণা নিয়ে রাজনৈতিক ব্যবসাপাতি শুরু করার জন্য।
এ দেশে কিছুই বদলাবে না। একটা ব্যক্তিগত হতাশা নিজস্ব উপলদ্ধির পরিসীমা অতিক্রম করে পনের কোটি প্রাণকে অসহায়ভাবে আক্রান্ত করে রেখেছে। একটা দেশ বদলায় না যখন একটি ক্ষমতাবান গোষ্ঠী জাতির টুটির উপর চেপে বসে। পরিকল্পিতভাবে তারা দৃশ্যপট সাজায়। নতুন জাতীয় সরকার তৈরীর জন্য সুকৌশলে মঞ্চ সাজিয়ে ফেলে। এ দেশে যখনই উর্দি পড়ারা ছাউনি ছেড়ে বাইরে এসেছে ততোবারই তারা আর ছাউনিতে ফিরে যায় নি। ছলে বলে কৌশলে বাইরে স্থান করে নিয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। গত একবছরে সিভিল জব থেকে স্পোর্টস কাউন্সিল সর্বত্রই উর্দি পড়ারা একে একে কৌশলে শীর্ষ পদগুলো দখল করে নিয়েছে। তালিকাটা আরেকবার তাকিয়ে দেখতে পারেন। তালিকাটা ক্রমশ: দীর্ঘ হচ্ছে। সাথে সাথে দীর্ঘ হচ্ছে হতচ্ছারা দরিদ্রদের তালিকা। নস্টদের অধিকারে সব কিছু চলে যাবে এই কবিতার লাইন ক্রমশ: গ্রাস করছে পরিবর্তনের সকল সম্ভাবনাকে। শক্তিমানদের কাছে পণবন্দী একটি জাতীয় সত্বা গণতন্ত্রের শেষ ট্রেনটির জন্য অপেক্ষা করছে আবারও প্রতারিত হবার জন্য।
মন্তব্য
সব প্রস্তুতি আর রিহার্সাল সমাপ্ত। এখন শুধু মূল প্রদর্শনীর অপেক্ষা।
২৭. বেহেস্ত যাওনের খায়েশ হগ্গলের, আপত্তি শুধু মরনে
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
রঙ্গমঞ্চ প্রস্তুত। নাটক মঞ্চায়িত হওয়ার খুব একটা বাকি নেই!
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
হ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কোন ব্যাপার না। ফুলবাড়ির প্রজেক্ট আবার এশিয়া এনার্জি পাইবো, পিছে থাকবো টাটা, চট্টগ্রাম যাইবোগা সাহেব গো পকেটে এইরকম আরো যত ধরণের বেসিক হোগামারা সম্ভব মানুষরে সেগুলা মাইরা তারপর লুরমা অর্থনীতি চালাইতে আবারো কয়দিন নির্বাচিত সরকার দিয়া নতুন প্রজন্মের কিছু সুশীল বানানো হইবো। এরা হইবো পরবর্তী জলপাইদের সাপোর্ট বেইজ।
আপনারা বোঝেন না ক্যান! পৃথিবীর সব সম্পদ আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে ভাগ হইয়া গেছে। এখন আর আলাদা কইরা কেউ অভ্যন্তরীন অর্থনীতির অবকাঠামো বানানোর খোঁয়াব দেখা হারাম। গরিব দেশে নির্বাচন করতে দিলে ভোটারগো মধ্যে সেই আশাটা থাইকা যায়। তখন নানা রকম ক্যাচাল হয়। এই জন্য যেইটা জরুরি সেইটা হইল বাংলাদেশের মতো ফকিন্নির পুত দেশের মানুষরে দ্রুত অ্যাপলিকাইড করা। তাদের সমাজে রামছাগলের চাষ করা। একদিকে মাদ্রাসা-ক্যান্টনমেন্ট-ইংলিশ ম্যাডাম-পেরাইভেট ইউনিভার্সিটি আরেক দিকে উন্নয়ন তত্ত্ব চোদা এঞ্জিও। গত প্রায় পঁচিশ তিরিশ বছরে একটু একটু কইরা তারা লোক জোগাড় করতাছে, তয় তারা সংখ্যায় এখনো যথেষ্ট না। এই সংখ্যাটা বাড়াইতে হবে। নাইলে এরা খালি ভ্যাজাল করে। বিশ্ব অর্থনীতি "লাইন মতো" চলে না।
সুতরাং বেশ্যায়নের স্বার্থে আমাগো আশু কর্তব্য, যত দ্রুত সম্ভব ছাগলায়ন প্রক্রিয়ায় সামিল হওয়া।
খোয়াব উড়ে
মিচকা ঘোড়ার কানপাখাতে
মাইট্যা খোলের
বুকের ভিতর শুকনা তাঁতে
ডিগবাজী খায়
খর-বিচালির আস্তাবলে
রাস্তা প্যাচায়
দমভরসার চিমনি জ্বলে
গড়ি দালানকোঠা ফেলে দিয়ে শ্মশাণে বৈঠকখানা
গডো আসেনা ...
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-সেইটাই।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
আমাদের অসহায়ত্ব কি কোনদিন ঘুচবে না!!!
অনেকদিন পড়ে লিখলেন, কেমন আছেন?
কল্পনা আক্তার
.......................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা
পরাজয় নিশ্চিত জানিয়াও বাঁচিয়া থাকে যে-মানুষ সেই নপুংসক = আমি। আমরাও কি?
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
---------------------------------------
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
চমৎকার লাগল বিশ্লেষণটি!
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
মন্তব্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। অনিয়মিত হওয়ার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। ভাল থাকুন। আনন্দে থাকুন সবাই।
অন্ধকারের উতস হতে উতসারিত আলো
অন্ধকারের উতস হতে উতসারিত আলো
আসলেই........... আমরা কি নপুংসক? সব কিছু দেখে শোনেও কিছু করতে পারি না।
তারপরও আমি আশাবাদী। সেই ট্রেন আসবে, কোন একদিন আসবে আমাদেরকে গন্তেব্য নিয়ে যেতে।
চমৎকার লেখা অনেক ভালো keep it up
নাগ্রী----phychoo.perth@gmail.com
নতুন মন্তব্য করুন