স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে বাঙ্গালী জাতি এতোটা জাতীয় ঐক্য ও সংকল্প আগে আর কখনও দেখায়নি। ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে রাজাকার জামাতী যুদ্ধাপরাধীরা সামরিক নেতা জিয়ার আনুকূল্যে যেভাবে পূনর্বাসিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সময়ের প্রবাহে তাদের শেকড় সিভিল-সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনাগুলোর অনেক গভীরে প্রবেশ করেছে। এছাড়া, জামাতের রাজনৈতিক কাঠামোয় সবচেয়ে বড়ো সুবিধে হচ্ছে এর অর্থনেতিক ও বাণিজ্যিক প্রাতিষ্ঠানিক স্থাপনাগুলো। যদিও বর্তমান সরকার দাবী করছে যে তারা জঙ্গীদের অর্থায়নে যেসব এনজিও জামাতী পৃষ্ঠপোষকতায় অনুমোদিত হয়েছিল তার খতিয়ান করে দেখছে। কিন্তু এসব বর্ণচোরাদের ধরা বেশ কঠিন ও জটিল। সরকার এ ব্যাপারে কতোটা সফল হবে তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। বিশেষ করে, প্রগতিশীল ও মৌলবাদবিরোধী শক্তিরা যদি একত্রিত হয়ে এগিয়ে না আসে তাহলে একা আওয়ামী লীগ সরকার খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না।
সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে জামাতীরা তাদের আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অর্থ ও দলিলপত্র সরাতে শুরু করেছে। বিশেষভাবে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় যে দৈনিক সংগ্রাম তার অন-লাইন প্রকাশনা থেকে এখন বিরত রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কানাঘুষাও শুরু হয়েছে যে জামাতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম আর্থিক দৈন্যদশায় পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের তেলের পয়সা দিয়ে যাদের আর্থিক ভিত্তি তৈরী তাদের অর্থের টান পড়েছে, কথাটা বাজারে ছড়ালেও তা বেশ হাস্যকর মনে হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সমকালের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যায়, শুধু চট্রগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের আর্থিক লেনদেনের হিসাবপত্র। জামাত-জোট সরকার যে পরিমাণ অর্থ লুন্ঠন করেছে তার হিসেব তো এখন জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে-সেসম্পর্কে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
এই মুহুর্ত্বে আত্মতৃপ্তি খোঁজার কোন কারণ নেই। বিশেষ করে অনেকেই আশান্বিত হচ্ছেন যে, আগামী মাস থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হবে। প্রায় দু'হাজারের মতো তালিকাবদ্ধ যুদ্ধাপরাধীরা নজরবন্দী হয়ে আছেন। তাদের অনেকে আবার কোর্ট থেকে নাজেহাল না করার হুকুম নিয়ে আসছেন। ধীরে ধীরে এরা পর্দার অন্তরালে যেতে শুরু করেছে, যাকে লো প্রফাইল মেইনটেইন বলে। খুব খেয়াল করে দেখতে হবে, দৃশ্যমান জামাতীদের চেয়ে ছুপা জামাতীরা অনেক বেশী বিপজ্জনক। তার আলামত ইতিমধ্যে আমরা দেখতে শুরু করেছি। কাজেই, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আইনগত প্রক্রিয়ার পাশাপাশি বিচার, তদন্তকারী সংস্থা, স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে প্রসিকিউটরদের ব্যাপারে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। সর্ষের মধ্যে ভুত কিন্তু ইতিমধ্যেই দেখা শুরু হয়েছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার বেশ কিছু সফল ষড়যন্ত্র আমরা দেখেছিও। এগুলো শুধু শুরু। তার মধ্য থেকে ছুপা জামাতীরা প্রগতিশীলতার মুখোশে বেরিয়ে আসবে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার প্রথম পাঁচ বছরে তা প্রত্যক্ষ করেছে। তাদের পদধ্বনি হয়তো আবারও আমরা শুনব।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর এই ঐতিহাসিক মূহুর্ত্বে আশা করি জামাতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামকে নিষিদ্ধ করা হোক। এর সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ তহবিলে দান করা হোক। স্বাধীন বাংলাদেশ পাকিস্তানের পদলেহী দৈনিক সংগ্রাম যাতে আর কখনও প্রকাশিত না হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধে দৈনিক সংগ্রামের ভূমিকা কি ছিল তা নতুন করে বলার দরকার নেই। যারা আবার নতুন করে জানতে চান, তাদেরকে আলী আকবর টালীর লেখা "মুক্তিযুদ্ধে দৈনিক সংগ্রামের ভূমিকা"(১৯৯২) বইটি আবারও পড়তে বলব। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীর পাশাপাশি দৈনিক সংগ্রাম নিষিদ্ধ করার দাবী শুরু করুন। আশা করি, আপনারা আমার সাথে যোগ দিবেন এই দাবীতে। স্বাধীন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী ও তাদের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রাম যাতে আর কখনও জনসমক্ষে আসতে না পারে। শুধু ঘৃণা নয়, এই নোংরা রাজাকার জামাতী প্যারাসাইটদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে। মার্চের প্রজ্জ্বলিত শিখায় অঙ্গীকারাবদ্ধ বীর বাঙ্গালী এপ্রিলের প্রথম দিনে এই দাবীকে নিয়ে এগিয়ে যাবে -এই প্রত্যাশা আমাদের সবার।
মন্তব্য
ক-তো-দি-ন পরে ফিরলেন, ভাই!
নিয়মিত চাই...
***************
শাহেনশাহ সিমন
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী ও দৈনিক সংগ্রামের ভূমিকা আমি আগে জানতাম না। শুধু জানতাম- এগুলো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলো, যুদ্ধাপরাদের সাথে যুক্ত ছিলো। কিন্তু আলী আকবর টাবীর বইটি পড়ার পর প্রথমবারের মতো সত্যিকার অর্থেই অনুভব করি, কতো ভয়ংকর ছিলো এরা।
মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হলে, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ও দৈনিক সংগ্রামের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে হলে আলী আকবর টাবীর বইটি পড়তেই হবে। এর অন্যথা নেই।
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
পুনশ্চ. আপনার সাথে এই দাবিতে আমি যোগ দিলাম। যদিও নিষিদ্ধ করা শব্দটির প্রতি আমার প্রবল অ্যালার্জি আছে, কিন্তু তারপরও যোগ দিলাম।
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!
আমার ভয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষে এক বিষাদময় প্রহসনে পরিণত না হয় আবার ।
এরা ধীরে ধীরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্মন্ধ গড়েছে । লক্ষ্য করেছেন কিনা জানি না -- এরা দুই দলের সাথেই নিজেদের ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছে । বিচার কিছুদূর এগুলেই দুই দলই আভ্যন্তরীণ চাপের সম্মুখীন হবে ।
আমাদেরকে অসম্ভব শক্ত হতে হবে । ভাবাবেগ বা মাত্রাতিরিক্ততা দূরে রেখে এগুতে হবে। কোন ধরণের ভুল পুরো প্রক্রিয়াকে বিনষ্ট করে দিতে পারে।
কতদিন পরে আসলেন ভাইজান? কই থাকেন আর কই ডুব দেন? নিয়মিত লিখুন দাদা।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী অত্যন্ত সংগত এবং যুক্তিযুক্ত। কিন্তু কথা হইল এইটা বাস্তবে করে দেখানোর মত মেরুদন্ড বা বুকের পাটা আমাদের রাস্ট্রনেতাদের আছে কিনা। অথবা যতটা আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়া বকবকাই তার ছিটে ফোটা সাধারন বাংলাদেশীদের মধ্যে আবশিষ্ট আছে কিনা। আমার মনে হয়না গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষেরা এই সব নিয়া আর মাথা ঘামায়। তারা নুন আনতে পান্তা ফুরানো প রিস্থিতি সামলাতে ব্যস্ত। আমরা যারা এসির হাওয়া খাই , বা মিনারেল জল ছাড়া পান করিনা তারাই এইসব নিয়া বকবক করি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করতে পারিনা। আপনারা সুশীল সমাজ যে পদ্ধতিতে রাজাকার হারামজাদাদের বিচার করতে চান তাতে ঐ মাদারচোদদের মরণোত্তর বিচার ছাড়া আর কিছু আশা করা যায়না। ওদের বিচার প্রচলিত পদ্ধতিতে করতে হবে সেইটা কোন হাদিসে লেখা আছে। ওরা যখন আমাদের আত্নীয় পরিজনদের বিনা বিচারে হত্যা করছে, মা বোনদের গনীমতের মাল ঘোষনা করে রেপ করছে, ঘর বাড়ী জালাইয়া দিছে তখন তারা তো কোন আইনের পরোয়ানা করে নাই। মানবিক আইনে মানুষের বিচার হয়, দানবের হয়না, হওয়া স ম্ভবওনা। যেই দেশে পঞ্চাশ টাকা দিলে মানুষ খুন করা যায় সেখানে এত আবোল তাবোল প্যাচালের দরকার কি? কাটা দিয়াই তো কাটা তোলা যায়। সবাই মিলা চান্দা তুইলা কিছু বীরযবান নওজোয়ানের হাতে একটা হিট লিস্ট তুলে দিলেই তো হয়, এরকম আগেও আনেক হইছে, এখন ও হচ্ছে, আজাইরা মিঠা কথা বইলা পত্রিকা নিশিদ্ধ করিয়া কাহারো কেশাগ্র স্পরষ করা যাইবেনা।
ওদের হয়তো জানে মারো নয়তো ছাড়িয়া দাও, দ য়া ক রিয়া বিচারের নামে পাতানো খেলা খেলিয়া আমাদের টিকেটের পয়সা ঘোলা জলে নিক্ষেপ করিওনা, সুশীল জেলি ফিশ কাটলেট সমাজের কাছে এইটাই আমার সবিনয় নিবেদন।
বিচার শুধু জামাতীদের না আরো অনেকের হওয়া দরকার।
বংগবন্ধুর বিচার হওয়া দরকার সময় ও সুযোগ থাকা অবস্থায় রাজাকারদের কোতল না করে নিজে বেকুবের মত বাঙ্গালীদের উপর ভরসা করে সপরিবারে খুন হয়ে যাওয়ার জন্য।
জিয়াউর রহমানের কোরট মারশাল হওয়া উচিত জামাতীদের পুনরবাসনের আপরাধে।
এরশাদ চাচারে শূলে চড়ানো দরকার আরবী টাকার লোভে আল নাহিয়ানের সাথে চুমোচুমিতে ব্যস্ত থাকিয়া ডগ ডগাইয়া জামাতী ডগ গুলারে ক্যান্সারের মত সবস্তরে ছড়াইয়া পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
শেখ হাসিনার গালে জুতা মারা দরকার ক্ষমতার লোভে জামাতীদের সাথে আপোষ করার জঘন্য আপরাধে।
খালেদা বিবির কি বিচার হওয়া দরকার তাহা ভাবিয়া পাইতেছিনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পাপোষ বানাইবার মত দুঃসাহস তাহার মত আর কেহই এত সুচারুভাবে করিয়া দেখাইতে পারে নাই।
এমনকি ফখ্রুদ্দিনের পশ্চাতদেশেও বেত্রাঘাত করা উচিত ছোটবড় অনেকগুলা হারামখোরকে জেলে ঢুকাইলেও জামাতীদের ব্যাপক মাত্রায় ছাড় দেয়ার জন্য।
সবশেষে আমারো কান ধরে হাজার বার উঠবস করা দরকার জামাতীদের বিচারের দাবীতে আমরণ অনশন না করিয়া সৌভাগ্যের লোভে দেশ ছাড়িয়া ভাগার জন্য।
আমি কান ধরে দাড়াইয়া আছি, আপনারা বসতে বললে বসব।
আপনার জানাতে একটু ভুল আছে। জামাতিদের সংগ্রাম বন্ধ হয়নি। তবে .কমের পরিবর্তে .নেট হয়েছে। ওদের টাকার মনে হয় অভাব হবে না।
জার্নালিস্ট,
ধন্যবাদ ভুলটি শুধরে দেয়ার জন্য। দৈনিক সংগ্রাম সুন্দর ঝকঝকে সাইট শুরু করেছে।
অন্ধকারের উতস হতে উতসারিত আলো
অন্ধকারের উতস হতে উতসারিত আলো
ঘৃনিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
নিশ্চয়ই অদৃশ্য ও ছদ্মবেশী যুদ্ধাপরাধীগন অনেক বেশী ভয়ংকর ও সংগঠিত। আমরা কতটা সতর্ক তাদের ব্যাপারে?
অবশ্যই বিচার হওয়া দরকার । কিন্তু ভয় এটা বাংলাদেশ এখানে বিচার পাল্টাতে সময় লাগে না । আর জামাতিরা যেভাবে আগাচ্ছে তাতে তাদের শেকর শুদ্ধ উপড়ে না ফেললে শুধু বিচার করে লাভ হবে না ।
নাগ্রী-----phychoo.perth@gmail.com
নতুন মন্তব্য করুন