শেকড়ের কাছে ফিরে আসা

আড্ডাবাজ এর ছবি
লিখেছেন আড্ডাবাজ (তারিখ: শনি, ২৭/০২/২০১০ - ১:২৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঠিক দিনক্ষণ গুণে ফিরে আসিনি। তবে এখানে শেষ লেখার দিকে তাকিয়ে মনে হলো গত এক বছরে এদিকে আসা হয়নি কোন লেখা নিয়ে। নতুন করে আসলে ফাঁদতে হয় নতুন কোন অজুহাত বা গল্প। সেরকম প্রথাচারিতার অনুশীলন করে একটা গল্প শেয়ার করতে চাই। বেশ ক'মাস আগে এক অনুষ্ঠানে দেখা হলো প্রজন্ম একাত্তরের এক জনের সাথে। বিজনেস কার্ড হাতে ধরিয়ে বললেন, "ভাইয়া, একদিন আসুন না, আপনার সাথে একটু আলাপ করি"। আমি একজন অতি সাধারণ মানুষ, অসাধারণদের স্পর্শ পেলে নিজেকেও অসাধারণ ভাবতে থাকি। তাই একদিন ফোন করে নিজেই যেচে তার বিজনেস অফিসে গেলাম।

আধা ঘন্টা অফিসে অপেক্ষা করার পর যখন অন্দরমহলে ডাক পড়ল তখন একরৈখিকভাবে আলাপ শুরু হলো কোন বিজনেস নিয়ে নয়। একাত্তর নিয়ে। মুখোমুখি হয়েছি প্রজন্ম একাত্তরের একজন যার বাবা শহীদ হয়েছেন। কি ভাবনা তার? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কি ভাবছেন? প্রজন্ম একাত্তরের আবেদন অনেক বেশী। নবীন ও তরুণদেরকে তারা অনেক বেশী প্রেরণা দিতে পারবেন - এ বিশ্বাস আমার প্রবল। আলাপকালে কথা উঠল ব্লগানো নিয়ে। ইয়াহু গ্রুপে এক্টিভিজম আর ৭১'এর এডভোকেসী নিয়ে। কিন্তু আলাপ সচল হয় না। বারবার থমকে দাঁড়ায়। তার আলাপে আশাবাদ ব্যক্ত হয়, কোন প্রতিশ্রুতি প্রকাশ পায় না।

বারবার ঘুরে ফিরে ব্যক্তিগত বিজনেসের আলাপ উঠে আসে যার প্রতি আমার বিন্দুমাত্রও আগ্রহ নেই। কিন্তু আমি নাছোর বান্দা মানুষ। আমি ইনিয়ে বিনিয়ে বিষয়টি আবারও একাত্তরের কাছে নিয়ে আসি। এক পর্যায়ে সে নিজেই বলে উঠে, "জানেন ভাইয়া, আমার বয়স হয়েছে। আজকে বয়স যদি কম থাকতো, তাহলে অনেক কিছুই করতে পারতাম..."। দেয়ালে ঝুলে থাকা তার বাবার ছবিটার দিকে তাকিয়ে নিষ্পলক দৃস্টিতে ভাবতে থাকি এই নির্লিপ্ততা তার বাবার মতো লক্ষ লক্ষ শহীদদের জন্য কতোটা বেদনাদায়ক। এই নির্লিপ্ততা কি প্রজন্মগত শূণ্যতা? হতাশা, অবিশ্বাস অথবা অস্পস্টতার বিশুদ্ধতম প্রকাশ? অথবা পরিকল্পিতভাবে ৭১ নিয়ে বিস্মৃতি ও বিকৃতির বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে এই অসংবেদনশীলতার প্রকাশ? এজন্যই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নিয়ে নতুনভাবে একটি মোমেন্টাম তৈরীর খুব দরকার।

৭১'এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একটি অমীমাংসিত বাস্তবতা। বর্তমান মহাজোট সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। গত ছয় মাস ধরেই তারা জায়গা আর জনবল ঠিক করে যাচ্ছে। কিন্তু প্রক্রিয়াটা এখনও বড্ডো ঝাপসা আর অস্পস্ট। মার্চ মাসে যুদ্ধাপরাধের কাজ শুরু হবে, শেষ হবে কবে? এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন আর বিগ ব্রাদার্সরা ওয়াচ করছেন, তারাও এখন স্বচ্ছতা খুঁজছেন। ৭৫'এর পর এখনই সবচেয়ে বেশী স্বচ্ছতার দরকার!!

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে রাজাকার-জামাতী ও তাদের জাতীয়তাবাদী ব্রাদাররা দেশে বিদেশে নেটওয়ার্কিং শুরু করছেন প্রবলভাবে। গত বছর হলো বিডিআর বিদ্রোহ। এবারে একই সময়ে কাকতালীয়ভাবে শুরু হয়েছে পাহাড়ী-বাঙ্গালী যুদ্ধ। দেশ দ্রুত হাঁটছে অনিশ্চয়তার দিকে। স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি বসে নেই। তারা নীরবে নিভৃতে কাজ করছে। টেইলারের দোকানে মুজিব কোর্টের অর্ডার একটু বেশী পড়বে তা কোন মৌসুমী পূর্বাভাস নয়। যুদ্ধাপরাধী বর্ণচোরারা চিরকালই লেবাস বদলাতে বড্ডো সিদ্ধহস্ত। তার খোলসেই চলবে নতুন করে ধান্ধাবাজি। তাই, ৭১ নিয়ে আলোচনা আর মতামত অগ্রসর করার খুব দরকার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে দরকার এর সপক্ষে জনমত প্রবলতর করার। দরকার শেকড়ের কাছে ফিরে আসার।


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আড্ডাবাজের ব্যান চাই! এরকম ডুব মারা চলবে না।



অজ্ঞাতবাস

আড্ডাবাজ এর ছবি

হা দাদা, ঠিকই বলেছেন। এক বছর লাগল ব্লগে একটা ডিম পাড়তে।

অন্ধকারের উতস হতে উতসারিত আলো

আলমগীর এর ছবি

আরেকটা ব্লগে একই নিক দেখে মনে হয়েছিল আপনি কোন কারণে চলেই গেছেন মন খারাপ

আড্ডাবাজ এর ছবি

নাহ, নিক একটাই। সামু ছাড়া আর কোথাও আমার এই নিক নেই। যাব কোথায়?

অন্ধকারের উতস হতে উতসারিত আলো

অমিত এর ছবি

অনেক দিন পর

আড্ডাবাজ এর ছবি

কথা সত্যি। অনেক দিন পর ঘরে ফিরলাম। ধন্যবাদ। অন্ধকারের উতস হতে উতসারিত আলো

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আর ডুবাডুবি নাই। এবার লেগে থাকুন বড় ভাই।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হাসিব এর ছবি

বহুদ্দিন পরে । এ্যালা রেগুলার লেগে থাকেন ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।