মামা, পাবলিক ঘুমায় কেন?

আড্ডাবাজ এর ছবি
লিখেছেন আড্ডাবাজ (তারিখ: শনি, ০৪/০৮/২০০৭ - ৮:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যারা আমার ভাগ্নেকে চেনেন না, তাদেরকে বলছি আমার সবে ধন নীল মনি ভাগ্নে আমার বাসার সবচেয়ে সচল মানুষ। কথার খই তার মুখে ফুটবে দিন রাত। মাঝে মাঝে ভাবি, রাতে কি সে ঘুমায়? ঘুমেও বোধ হয় কথা বলে। ছুটির দিনে সকাল সকাল ঘূম থেকে তুলে দিয়ে তার দিনের যাত্রা শুরু করলো। রুমে হুটহাট করে ঢুকেই বলে উঠল, পাবলিক এতো ঘুমায় কেন? আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম, "এই বেকুব বাজে তো সকাল সাতটা। ছুটির দিন একটু ঘুমাই"। এই বার বলে উঠল, "না মামা, তোমাকে বলছি না। তুমি তো ২৪ ঘন্টাই জেগে থাক, বলছি পাবলিককে"। পাবলিক নিয়ে তার অতি উৎসাহ দেখে বললাম, "পাবলিক কি করবে? এমনিতেই ঝড় ঝঞ্চা চলছে, যতো ঘুমায় ততই ভাল"। না, মামা। তুমি কিছুই বুঝ না, ভাগ্নের বোদ্ধা উত্তর। গতকাল গেলাম র‌্যাংগস ভবন ভাংগা দেখতে। পাবলিকের ভীঁড় নেই। বন্যা আসল। লোকজন ত্রাণ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করবে, তারও কোন খবর নেই। পাড়ায় পাড়ায় চান্দা নিবে, না কোন আওয়াজ নেই। এমনকি স্বয়ং সেনাবাহিনী একদিনের বেতন নিয়ে হাজির হলো, তাতেও দেখি পাবলিকের ঘুম ভাংগে না"।

এবার একটু নড়চড়ে উঠে বিছানায় বসলাম। ভাগ্নে আমার স্মার্ট। হাতে এক কাপ চা। আহা, তাজা এক কাপ চা। বেড টি। এরকম ভাগ্নে যার আছে তার যে কি সৌভাগ্য। শুধু হাতের কাছে ডাক্ট টেপ রাখার দরকার। যখন বেশী কথা উতরায়, তখন খালি মুখে মেরে দিলেই হবে। হাতে চা নিয়ে চুমুক দিয়ে ভাগ্নের সহাস্য বদনের দিকে তাকালাম। ভাগ্নে জানে, মামাকে কি দিয়ে কাইত করা যায়। মনে মনে বলি, অনেক বড়ো হও মামা। এবার আমি ভাগ্নের দিকে তাকিয়ে বললাম, মামা র‌্যাংগস ভবন তড়িঘড়ি করে ভেংগে কড়িৎকর্মা সরকার দেখাল, "তারা পারে"। র‌্যাংগস ভবন ২৪ ঘন্টার কম সময়ে ভেংগে তার প্রমান করলো, বিলম্বেই বিপদ। এছাড়া মানুষের মন, কখন কোন দিকে যায়? ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি আবার ম্যানেজ করে ২২ তলা দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে লজ্জা না? তাই, সরকার সেই চান্স নিতে চাইল না। এছাড়া, মানুষের জিনিস পত্র সরিয়ে নিতে আরেকটু সময় দিলে তো নাটক জমে না। হনুমানের বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। ২২ তলা পাহাড় মাথায় নিয়ে পাবলিকের মুখে হাসি ফুটাতে চাইল। কিন্তু তারপরও পাবলিক ঘুমায় কেন?

মামা, "বন্যার কি হবে"? ভাগ্নের উৎকন্ঠা। পাবলিক যদি ঘুমায় তা হলে কেমনে কি হবে? আরে বেকুব, পাবলিক কি করবে। পাবলিকরে নেতারা শিখিয়েছে, আল্লাহর জিনিস আল্লাহ নিবে। এটা নিয়ে বলার কি আছে? তাই, পাবলিক দেখছে, আল্লাহর রহমতের পানি দিয়েছে। পুরো দেশের আধেকটা রহমতে ভাসছে। বাকী অর্ধেকটা ছুই ছুই করছে। এসব উপরওয়ালার ইচ্ছা। উপরওয়ালা বলল, "হায়রে হনুমান, দেশ সেবা করবি। নে, বানের পানি দিলাম। এবার পাবলিকের সেবা কর"। আর পাবলিক বলে, এই দেশের জন্মের ৫ বছর থেকেই তো সেবা করে আসছে খাকীর দল। পরিণতি জানা। তাই, যা করার করো। বন্দুকের নল দিয়ে দেশ রক্ষা করা যায়, দেশ স্বাধীন করা যায়, শত্রুকে দমন করা যায়। কিন্তু মানুষের মন জয় করা যায় না। এই সহজ কথা কি আর হনুমানের দল বুঝে? তাই, পাবলিক এখন ঘুমায়।

ভাগ্নে আমার লেকচারে বিরক্ত। বলল, "মামা, তুমি কিছুই জান না। আমার কলেজের সুমনার দিকে তাকানোই যায় না"। র‌্যাংগস ভবন, বন্যা, তারপর সুমনা? কিছুই বুঝলাম না। সব তালগোল পাকিয়ে গেল? অবাক হয়ে বললাম, "সুমনার আবার কি হলো"? আহা, মামা বড়োই দু:খের কথা। সুমনা কলেজে নতুন নতুন মডেলের গাড়ী নিয়ে আসতো। কতো ফুটানি দেখাতো। এখন সুমনার বাসে করে আসারও জো নেই। সর্বস্ব খুইয়েছে দুদকের কাছে। বাবা ফেরারি। গাড়ী থানায়। চোখ থাকে ছলছল। খুব মায়া লাগে। আমি ভাগ্নের দিকে হাতজোড় করে বললম, "দয়া করে মায়া দেখিয়ে সুমনাকে আমার বাড়ীতে নিয়ে এসো না। শেষে দুদক আমার পেছনে লাগবে"। ভাগ্নের ধান্ধার হিসেব কি তা বুঝার চেস্টা করলাম।

সুমনার ব্যাপারটা নিয়ে নাড়াচাড়া না করে বললাম, "পাবলিকের টাকা কই? সব একাউন্ট ফ্রীজ করে রাখা হয়েছে"। তাই, পাবলিক টাকার থলি নিয়ে এখন আর ফখরু চাচার কাছে যাবে কিভাবে? রাজনৈতিক নেতারা আপন প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত। "সেই দিন কি আর আছে? দিন বদলাইছে না"- তাই পাবলিক কাঁথা বালিশ নিয়ে ঘুমায় আর বায়োস্কোপ দেখে। আর হনুমানের দল ভাবছে, "স্যার এভরিথিং আন্ডার কন্ট্রোল"। তবে বানভাসি লোকজন যখন আশ্রয়ের সন্ধানে শহরের দিকে ছুটবে তখন কি ক্যান্টনমেন্টে তাবু খাটাবার মতো জায়গা থাকবে তো?


মন্তব্য

সৌরভ এর ছবি

ভেঁড়াব্লিকে (ভেঁড়া+পাব্লিক) তার সব এনার্জি খরচ করে ফেলছে ওই এক ইয়াজুদ্দিনের লীলাখেলায়। তারপর থেকে ট্যাঁ-ফোঁ বন্ধ হয়ে গেছে ভেঁড়াসাধারণের।

------ooo0------
বিবর্ণ আকাশ এবং আমি ...


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

এইটা কি ছুটির দিনের রগড় নাকি?
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

আড্ডাবাজ এর ছবি

সৌরভ,
পাব্লিক এখন ঝিম মেরে আছে। একটু আগে জেনারেল মঈন ঝিম মারা পাব্লিককে ভৎসনা করলেন।
ধন্যবাদ।

শোহেইল, রগড় হবে কেন? ভাগ্নেরে নিয়ে খুব ঝামেলায় আছি। দেখি লন্ডনে পাঠিয়ে দেব আপনার ঠিকানায়। হাসি

ঝরাপাতা এর ছবি

বানভাসি লোকজন যখন আশ্রয়ের সন্ধানে শহরের দিকে ছুটবে তখন কি ক্যান্টনমেন্টে তাবু খাটাবার মতো জায়গা থাকবে তো?

প্রশ্নটা আমারো।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

আড্ডাবাজ এর ছবি

উত্তর না পেলেও প্রশ্ন করতে তো কোন সমস্যা নেই। চলুক প্রশ্নপর্ব।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।