বাংলাদেশে সামরিক গোয়েন্দাদের নতুন ধান্ধা:

আড্ডাবাজ এর ছবি
লিখেছেন আড্ডাবাজ (তারিখ: শনি, ০১/০৯/২০০৭ - ১২:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সৌজন্যে: দেশীভয়েস ব্লগ

বাংলাদেশের সামরিক সরকারের হাঁটুর বুদ্ধি সত্যি সত্যি এবার গোড়ালীতে নেমে এসেছে। ডিজিএফআইয়ের পত্রিকা "আমাদের সময়" আর দৈনিক ইত্তেফাক এবার সামরিক বাহিনীর নতুন এজেন্ডায় জন্য নিত্য নতুন গল্প ছেপে যাচ্ছে। নতুন নতুন গল্প ফেঁদে লোকজনকে কি আর নিত্যদিন বোকা বানানো যায়? দৈনিক ইত্তেফাকের ৩১ আগস্টের লেখাটি পাঠকদের জন্য তুলে দেওয়া হলো। শাহরিয়ার কবির আর জয়নাল হাজারী এখন দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। ভারতীয় গোয়েন্দা আর সরকারী কর্তাব্যক্তিদের সাথে ডিজিএফআইয়ের আখড়ায় বসে নীলনকশা ফাঁদছে শাহরিয়ার কবির। দেশের সামরিক গোয়েন্দাদের অলস মস্তিস্কের সত্যি সত্যি জং ধরে গেছে। তাই, গণতন্ত্র আর রাজনৈতিক স্বাধীনতার দাবীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করাতে চাচ্ছ একজন শাহরিয়ার কবির, আর পলাতক জয়নাল হাজারীকে। নির্বোধ বোকাদের জন্য রসালো রম্য রচনা সহজ। তবে এধরণের গল্প সরকারকে আরও হাস্যকর করে দিচ্ছে। তাই, এধরণের ষড়যন্ত্রের গন্ধ না খুঁজে সামরিক সরকার গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক অধিকার ফেরত দিয়ে ব্যারাকে গেলে জনগণ স্বস্তিবোধ করবে আর আশ্বস্ত হবে। ফিরে আসবে শান্তি ও স্থিতি।

দৈনিক ইত্তেফাক ৩১ আগস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়:

"তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভ সৃষ্টির জন্য আওয়ামী লীগের গোপনে ইন্ধন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। কয়েকদিন আগে যে ছাত্র বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে তার পেছনেও আওয়ামী লীগের ইন্ধন কাজ করেছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বিশ্বস্ত বলে পরিচিত ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা শাহরিয়ার কবির সম্প্রতি দিল্লি সফরকালে সেদেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর দিক-নির্দেশনা নিয়ে আসার পর আওয়ামী লীগ রাজপথে সরকার বিরোধী বিক্ষোভের পেছনে ভূমিকা পালন করেছে। গোয়েন্দাদের অব্যাহত অনুসন্ধান ও তদন্তে এসব তথ্য তারা পেয়েছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই প্রেক্ষাপটে আগামীতে সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আবারো বিক্ষোভ আন্দোলন সৃষ্টির আশংকা করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নিজ দলের যাদের এতোদিন বিশ্বস্ত মনে করতেন তাদের ওপর থেকে তার আস্থা হারানোর পর থেকে শেখ হাসিনা শাহরিয়ার কবিরকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বস্ত মনে করছেন। বর্তমানে শেখ হাসিনা ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছেন শাহরিয়ার কবির। তারই অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার পক্ষে ভারতের সাহায্য আদায়ের জন্য আগস্টের প্রথম সপ্তাহে শাহরিয়ার কবির ভারত সফরে যান এবং আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির সাথে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে শাহরিয়ার কবির শেখ হাসিনার মুক্তি এবং দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের উপর ভারত চাপ সৃষ্টি না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে জানা যায়। জবাবে ভারতীয় মন্ত্রী পরোক্ষভাবে ভারত এ প্রশ্নে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে বলে তাকে আশ্বস্ত করেন। সাথে সাথে পরামর্শ দিয়ে বলেন, এজন্য রাজপথে আন্দোলন বিক্ষোভ সৃষ্টির কোন বিকল্প নেই। এরপরই ২০ আগস্ট থেকে ছাত্র বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পেছনে শাহরিয়ার কবির বিভিন্নভাবে ভূমিকা পালন করেছেন বলে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শাহরিয়ার কবির আওয়ামী লীগের নেতাদের বলেছেন, শেখ হাসিনার ওপর বর্তমানে ভারত নাখোশ। এ কারণেই ভারত হাসিনার মুক্তির ব্যাপারে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কোন চেষ্টা করছে না। একমাত্র ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ছাড়া আর কেউ আওয়ামী লীগকে সেভাবে সাহায্যে এগিয়ে আসছে না। ‘র’ প্রধান অশোক চতুর্বেদী ও বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসের উপ-হাইকমিশনার সর্বজিৎ চক্রবর্তী শাহরিয়ার কবিরকে জানান যে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা ‘আইএসআই’ আওয়ামী লীগ নেতা জাফরুল্লাহ ও সালমান এফ রহমানের মাধ্যমে হাসিনাকে নির্বাচনী ফান্ডের জন্য মোটা অংকের টাকা দেন। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে যখন আওয়ামী লীগ নিশ্চিত ক্ষমতায় যাচ্ছে-এমনটি মনে করার পরই ‘আইএসআই’ এ টাকা দেয়। ভারতীয় দূতাবাস কর্মকর্তা শাহরিয়ার কবিরকে বলেন, ‘আমরা শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করি না। তিনি ‘আইএসআই’ থেকে ২৫০ কোটি টাকা নিয়েছেন। আমরা তাকে ৩০০ কোটি টাকা দিতে পারি কিন্তু ‘আইএসআই’ যদি তাকে ৩৫০ কোটি টাকা দিতে চায় তাহলে তিনি যে আমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন না তার নিশ্চয়তা কোথায়।’

সূত্রগুলো বলছে ‘র’ ও ভারত সরকার বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজ্জাক, তোফায়েল, আমু ও সুরঞ্জিতকে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব পরিবর্তনের লক্ষ্যে পুরোপুরি সমর্থন দিয়ে আসছে। তারা হাসিনাকে পুরোপুরি সরিয়ে দেয়ার পক্ষে।

গোয়েন্দা তথ্যমতে, শাহরিয়ার কবির বর্তমানে শেখ হাসিনার সাথে রয়েছেন। তার বিশ্বাস হাসিনাকে ছাড়া আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়ে যাবে। সেজন্যই তিনি চতুর্বেদী ও চক্রবর্তীকে শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেয়া এবং তাকে মুক্ত করার জন্য সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করার অনুরোধ করেন। তবে বর্তমানে একমাত্র প্রণব মুখার্জি ছাড়া আর সকল ভারতীয় নেতা, গোয়েন্দা সংস্থা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে হাসিনার অপসারণ চায়। কারণ তিনি তাদের আস্থা হারিয়েছেন বলে বলা হচ্ছে।

শাহরিয়ার কবিরের সাথে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সম্পর্ক বর্তমানে ভালো যাচ্ছে না বলে একটি সূত্রে বলা হচ্ছে। ওই সূত্র মতে, শাহরিয়ার কবিরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিকে ‘র’ ১৯৯৮ সাল থেকে ফান্ড দিয়ে আসছিল যা চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির লাইব্রেরী স্থাপনসহ ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন’-এর নামে গৃহীত অন্যান্য কর্মসূচি বাস্তবায়নে ‘র’ এসব অর্থ দিয়েছে। কিন্তু ‘র’-এর নতুন প্রধান অশোক চতুর্বেদী দায়িত্ব নেয়ার পর সেই ফান্ড দেয়া বন্ধ করে দেন। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি একটি অতি ক্ষুদ্র ও পকেট সংগঠন। সারাদেশে এই সংগঠনের উল্লেখযোগ্য কোন সমর্থক নেই। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে ‘র’ তাদের ফান্ড বন্ধ করে দেয়। শাহরিয়ার কবির এ ব্যাপারে প্রণব মুখার্জির সাথে যোগাযোগ করেন। প্রণব মুখার্জি আগে থেকেই শাহরিয়ার কবিরকে নানাভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তার সাথে যোগাযোগ করেও ‘র’-এর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করাতে পারেননি। সর্বশেষ শাহরিয়ার কবির নিজেই আবার কলকাতা হয়ে দিল্লি সফরে যান। তিনি প্রণব মুখার্জির সাথে বৈঠকের পাশাপাশি কয়েকজন বাম নেতার সাথেও সাক্ষাৎ করেন যারা শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করার পর বাংলাদেশ সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি তার সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাজেট থেকে ফান্ড পাওয়ার চেষ্টা করেন"।


এধরণের গল্প ফেঁদে কি সামরিক বাহিনী উতক্রান্তি পাবে? দেশের জনগণ চায় গণতন্ত্র। চায় রাজনৈতিক অধিকার। চায় মুক্ত ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন। বিএনপি জামাত জোট সরকারের পাঁচ বছরের দু:শাসনে তারা প্রতিবাদমূখর ছিল। তাদের আন্দোলনের মুখে ফখরুদ্দীনের নতুন তত্বাবধায়ক সরকার আসলেও সামরিক বাহিনী এখন তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। দেশে গনতন্ত্রের জন্য ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে জনতার আন্দোলনের সাথে সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে পাঠাবার দাবী ক্রমশ:ই জোরদার হচ্ছে। জেনারেল মঈন হয়তো পাকিস্তানের পারভেজ মোশাররফের পরিণতি দেখে আশঙ্কিত তবে সেখান থেকে যে শিক্ষা নিচ্ছেন না তা বড্ডই স্পস্ট। তাই, দেশের চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে "ষড়যন্ত্রের ধুম্রজালে" আবৃত করে নিবৃতির ফন্দি আঁটতে পারেন। তবে এধরণের ধান্ধাবাজিতে খুব একটা কাজ হয় না। গণজাগরণ আর বিস্ফোরণ কি আর একজন শাহরিয়ার কবির আর একজন জয়নাল হাজারীর ইঙ্গিতে হয়? এটা বুঝার জন্য গোড়ালীতে নেমে আসা বুদ্ধিকে অন্তত মস্তিস্কে প্রতিস্থাপন করতে হবে।


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আড্ডাবাজ ভাই উপরের সৌজন্যে দেশীভয়েস কথাটা বিজ্ঞাপনের মতো দেখায় না! অনুরোধ করি পোস্টের শেষে দিতে। অথবা "একই সাথে প্রকাশিত" এই ধরনের ফ্রেইজও ব্যবহার করতে পারেন।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

দুঃখের খবর, কিন্তু খুবই হাসি পেয়ে গেছিলো। আমাদের সময় আমি নিয়মিত পড়তাম, কিন্তু ঝাঁকি খেলাম আজকের খবর পড়ে। আর যাব না...

কেমিকেল আলী এর ছবি

ইত্তেফাক আর আমাদের সময় এখন দিনকালেরও নিচেই নেমে গেছে।

আর ১ম শ্রেণীর ১ম হওয়া দালাল ১ম আলোতো আছেই।

অতিথি এর ছবি

মইনুল আর মঞ্জু - মানিক মিয়ার দুই ছেলে। এটাই তাদের বড় পরিচয়। দুজনের মুখ দেখাদেখি নেই, কিন্তু প্রতি সন্ধ্যাতে বাড়ী ফেরার আগে ক্যাশিয়ারের কাছ থেকে পালা করে বিজ্ঞাপনের জন্য পাওয়া নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা করে পকেটে গুঁজে নিয়ে যেতেন। সমান ভাগটা ঠিক হয় দু-পক্ষের সন্ত্রাসীরা এসে গোলাগুলি করে প্রেসের এক নিরীহ কর্মচারীকে মেরে ফেলার পরে। আয় কর আবার কি ! এখন কি চমৎকার ভাবে মোলায়েম গলাতে সেই মইনুল আবার রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির গল্প বলেন, বেশ আয়েশী ভঙ্গীতে। স্যাম চাচা বাবার বন্ধু ছিলেন, দুই ভাইয়েরও। নাই, নাই ভয়। যে সরকার পরে আসবে, লাইন মতই হবে। সেটা নিশ্চিত করতেই তো এই দীর্ঘমেয়াদী পথ-নকশা।

এস্কিমো এর ছবি

বড়ই দূর্বল গল্প!

লেখতে চাই ..কিন্তু কি লিখবো?

অতিথি এর ছবি

মোবাইল কোম্পানীর বিজ্ঞাপনে দেখেছিলামঃ এক শিশু মোবাইলের সস্তা রেইটের বন্ধু বাছাইয়ের সময়ে বলছেঃ "and you, and you , and you".
লক্ষ করেছেন কি ঃ আমাদের বর্তমান শাসক বন্ধুদের মধ্যে (প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ) আছেনঃ ইউ মঈন, ইউ মাসুদ, ইউ ইয়াজ, ইউ-নুস (নেপথ্যে) এবং ইউ ফকর। শেষেরটি ইংরেজী উচ্চারণে হবে, কারণ, প্রিন্সটনের এই পি,এইচ, ডি জীবনের অধিকাংশ সময় ইংরেজীভাষীদের সাথেই কাটিয়েছেন।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ভাল বলেছেন হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।