কেমন কাটল এবারের ঈদ? প্রশ্নটা কমন। ঈদের পরে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় অহরহ। উত্তর খুব শর্টকাট: অতি চমতকার!! তবে এবার আমার ঈদ কাটল এক মহা সংকটে। এতো বড়ো সংকটে আগে কখনও পড়িনি। তারই হালকা ফিরিস্তি দিতে এই পোস্টের অবতারণা। এর মধ্যেও রাজনীতির গন্ধ খুঁজে পেলে দু:খিত। ফুচকায় চটপটি, নকল মুক্ত লাচ্ছা সেমাই, হাতের সেমাই, দুধের লাউ সেমাই, ডিমের জর্দা, পাঁচ মিশালী ডালে তৈরী খিঁচড়ীর সাথে ঠাটারী বাজারের মান্নান কশাইয়ের দোকানের বুড়া মহিষের মাংসের ভুনা আর তার উপরে সাজানো আস্ত জলপাই আচারসমেত উপাদেয় খাবার দিয়ে আকন্ঠ খাবার খেয়ে মনে হলো মাসব্যাপী রোজার উপর চমতকার প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে। দিব্যি কাটতে চাই না। তবে রোজার শেষে ঈদে যদি এরকম খাওয়া জুটে তাহলে এক মাস অন্তর অন্তর এরকম রোজার ব্যবস্থা করলে মন্দ হয় না। ধর্মীয়ভাবে সম্ভব না হলেও জরুরী আইনের আওতায় এরকম আয়োজন করলে মন্দ হয় না। আইডিয়াটা আমার না। আমার একমাত্র কলেজ পড়ুয়া আঁতেল (বুদ্ধির ঢেঁকি) ভাগ্নের কাছ থেকে ধার করে নেওয়া। গত মাসে তার বার্থ ডে-তে এক জোড়া শার্ট দেওয়ার পর থেকেই তার আবদার, "মামা, জন্মদিন বছরে একবার না করে মাসে একবার করলে কেমন হয়"? আমিও সহাস্যে উত্তর দিলাম, "হ্যাঁ, মন্দ না। তবে তোমার বাবারে গিফটটা পাঠিয়ে দিতে বলো"। আমার উত্তরে ভাগ্নে চুপসে গেল। তার চুপসানো চেহারা সংস্কারবাদী "হায় হায় পার্টি"র চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না।
ঈদের গল্প বলতে গিয়ে এই হতচ্ছারা ভাগ্নের কথা বলে কথার মোড় ঘোরানোর জন্য ক্ষমা চাই। না, আমার এবারের ঈদ কেন যে ফ্লপ খেল সেই কথা বলতে গিয়েই এতো কথা। বেশ কিছুদিন থেকে মনে হচ্ছিল, কি যেন হারিয়ে যাচ্ছে? গরু খোঁজার মতো খুঁজেও পাই না। অথচ জিনিসটা গরুর মতো বিশালকায় হলে হারাবার ভয় ছিল না। কিন্তু সাইজে ছোট বলেই সমস্যা। খুঁজে পাই না। সমস্যাটা বন্ধুকে বলার পর সে আঁতকে বলে উঠল, "এ ধরণের অন্তর্বাস কে হরণ করবে"? মেজাজ চটকে গেল। "আরে ব্যাটা অন্তর্বাস কি? সমস্যা শুরু হয়েছে মোজা নিয়ে, তুই অন্তর্বাস বলে এটাকে ভাল্গার করে ফেললি"? কারে বলি দু:খের কথা। লোকজন আজকাল কানে তুলা দিয়ে হাঁটে। বললেও কানে যায় না। কেউ হাঁড়ির খবর ভাংতে নারাজ। গরু হারাক, মোজা হারাক, মোচ হারাক, ইজ্জত হারাক - কেউ আওয়াজ করে না। মানুষকে বলে লাভ কি? এদেশের মাথা মোটা নেতারা সবাই যখন শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা বন্ধক দিয়ে মুখে কুলুপ দিয়ে বসে আছে, তখন আমি কোন ছার? আমার দেশী বিদেশী ১৪ জোড়া মোজার এক পাটি করে হারিয়েছে এই কথা দুদকে নালিশ করে কি আমার সংকটের সুরাহা হবে?
বিছানার উপর হরেক কালারের আর ডিজাইনের এক পাটি করে মোজা আমার কস্ট তীব্র করে দিল। চাঁদতারা স্টাইলের পাকিস্তানী মোজা, সিঙ্গাপুর থেকে আনা জলপাই রঙের মোজা, কুচকুচে কালো র্যাবের কালারে ম্যাচিং করা সেটের মোজা- সব সঙ্গী হারিয়ে এক পাটি করে শুয়ে আছে আমার বিছানায়। মন চায়, মোজা চোরকে র্যাবের এনকাউন্টারে দিয়ে দিই। ক্রোধ জিনিসটা আগুনের মতো তীব্র আর খুব দাহ্য। মোজার শোক আমার এবারের ঈদ মাটি করে দিল। হাত নিশপিশ করছে। মেজাজ সপ্তমে। চোরকে পেলে টুটি চেপে ধরতাম। তবে সেয়ানা চোরদের কখনই ধরা যায় না। ব্যরিস্টার মঈনুল হোসেনের মতো গন্ধ শুঁকে বলতে মন চাইল, "গভীর ষড়যন্ত্র চলছে"। না হলে, চুরি করলে এক পাটি করে মোজা কে নেবে? কেন? পুরো জোড়াই তো সাবার করে দিতে পারে। করে না কেন? আমার বেডরুমে চেয়ারে বসে বিছানার উপর শুয়ে থাকা মোজাগুলোর দিকে তাকিয়ে মোজার শোকে মুহ্যমান আমি ভাবছি...।
হঠাৎ "মামা" ডাক শুনে সম্বিত ফিরে পেলাম। দেখি ঘরের মধ্যে আমার লিকলিকে ভাগ্নে সশরীরে হাজির। বলল, "মামা সময় নাই, চাঁদনী রাতের শপিং করতে যাচ্ছি? তোমার কিছু লাগবে"? পড়নে গেন্জী। হাফ প্যান্ট পড়া। পায়ে মোজা। বুঝলাম, বাইরে যাবার জন্য রেডী হচ্ছে। তবে ভাল করে পায়ের দিকে তাকাতেই আমার চক্ষু চড়ক গাছ। এক পায়ে আমার হারিয়ে যাওয়া চাঁদতারা মোজার একটি আর অন্য পায়ে জলপাই রঙের মোজার একটি শোভা পাচ্ছে। তার মুখে এক প্রস্থ হাসি। চোখ চকচক করছে আনন্দে। মনে হলো জাতীয় ঐক্যমত নিজের পায়ে ধারণ করে স্বয়ং ডা: বদরুদ্দোজা চোধুরী আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। বাইরে যাচ্ছেন চাঁদনী রাতের শপিং করার জন্য, হাতে গুরুজনদের আশীর্বাদ....।
মন্তব্য
- ধোলাই লাগান ভাগ্নারে। ডলার উপর কোন অষুধ নাই।
আর ঈদের কথা জিগাইয়েন না। কাশতে কাশতে যখন হুঁশ হইলো, ততক্ষণে দেখি ঈদের দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান মালা চলে আমাদের দেশের পেরাইভেট টিভি চ্যানেলে।
চ্যানেলের মালিকের ওয়াইফের হেরে গলায় ধেরে গান শুনে এতোটাই স্তব্ধা খাইয়া গেছি যে কাশতেও ভুইলা গেছি।
মাশাল্লাহ, কাশি আবার শুরু হইছে অদ্য প্রত্যুষ সাড়ে ১১ ঘটিনা হইতে।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
সর্বনাশ!
ধুসর গোধূলি সাথে একমত।
ডলা দেন।
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
মামু ভাগ্না যেখানে ....
গন্ধ পাইসি তো!
--তিথি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
নতুন মন্তব্য করুন