আবার সকাল সকাল দরজায় কড়া নাড়ানাড়ি। ক'দিনের জন্য অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। কোন কারণ ছাড়াই। তাড়া নেই। তার মধ্যে ধাক্কাধাক্কি আর নাড়ানাড়ি দেখে প্রমাদ গুণলাম। কেইস কি? কলেজ পড়ুয়া ভাগ্নেকে নিয়ে একটু চিন্তায় থাকি। নিজের ছেলে মেয়ে গোল্লায় গেলে আপত্তি নেই। কিন্তু একমাত্র বোনের সুপুত্র ছেলেটি যদি কোন ধান্ধায় পড়ে গোল্লায় যায়, তাহলে উপায় কি? শরীর টেনে হেঁচড়ে বিছানা ছাড়ার আগেই সদর্পে রুমের মাঝখানে নাজিল হয়ে গেলেন আমার মুখসর্বস্ব ভাগ্নে। জিজ্ঞাসা: "মামা ঘুমাও না কি"? আজকাল বিরক্তি, রাগ, আর ঝাড়ি যতো কম করা যায় তার চেস্টায় থাকি। এছাড়া, ছুটির দিন রাগারাগি না করে একটা কোলাহলমুক্ত দিন কাটাতে চাই। আর কতো ক্যাঁচাল ভাল লাগে? তাই, ভাগ্নের দিকে সবগুলো দাঁত কেলিয়ে আদর মাখা স্বরে বললাম, কি ব্যাপার? আবার কি হলো? সহাস্যে বিজয়দর্পে হাফ ডজন সকালের পেপার আমার দিকে বাড়িয়ে বলল, মামা, পাবলিক এখন আর ঘুমায় না। যাক্ এতোদিন পর সবাই সজাগ হলো।
খবরের কাগজগুলো হাতে দিয়েই বলে উঠল: মামা ধান্ধা বুঝছ? আমার নিদ্রাজড়িত অলস মস্তিস্কে কোন ধান্ধা ঢুকে না। হঠাত ভাগ্নের ঝাঁকুনিতে আমার আলস্যজড়িত শরীরটা নড়ে উঠল। মামা, দেখেছ রাজাকার মুজাহিদের ঔদ্ধত্যের প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধ শক্তির সপক্ষে জনতার বজ্রধ্বনি। দেখেছ, আবার দেশটা গরম হয়ে গেছে। মনে হয়, এখনি জনতা মুজাহিদের বুকে পা দিয়ে এক টানে তার জিহবাটা ছিঁড়ে ফেলবে। মনে হয় না, অবস্থা এরকম হয়েছে? আমি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে সাড়া দিয়ে বললাম, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এমনটা হওয়াই তো স্বাভাবিক। দেশটা এখনও পুরোপুরি কবরস্থান হয় নাই। ভাগ্নে এবার ক্ষেপে গিয়ে বুড়ো আঙ্গুলটা তুলে বলল, "মামা, তুমি কচুও বুঝ নাই"।
আমার সকল বিরক্তি আর রাগ এসে পড়ল, জানালার দিকে? একটা ফেরীওয়ালা কর্কশ স্বরে চীতকার করে ডাকছে, "খাগজ, খাগজ" বলে। মনে হলো, পুরো দেশটাই মাথায় তুলে ফেরী করছে। হঠাত ভাগ্নে প্রসঙ্গ বদলে বলে উঠল, মামা তোমার মনে আছে নানী যখন জলপাই আচার বানাতো তখন প্রতিদিন দুপোর বেলা ছাদে এসে আচারো বয়ামটা ঝাঁকাতো। আমি বললাম, হ্যাঁ, তাতে কি হয়েছে? ভাগ্নে বলে উঠল, "মামা, কেইসটা তো এইখানে। এখন আচারের বয়ামে ঝাঁকাঝাঁকি চলছে। যে দেশে জরুরী আইনে মামার ইশারা ছাড়া একটা পাতাও নড়ে না, সেইখানে নেংটী মুজাহিদ আর হান্নান তিরিশ লাখ শহীদের লাশকে আরেকবার বেইজ্জতী কইরা গেল কোন ইশারা ছাড়াই?
আমি শান্ত কন্ঠে ভাগ্নেকে উত্তর দিলাম, আর্মীতে এলার্জি আছে বলে যা তা কথা বলে বেড়াও। ভাগ্নে আমার একগাল হাসি নিয়ে বলে, "না মামা, এতো সোজা না। এই মুহুর্ত্বে আমি টিভিতে বা পাবলিকের সামনে গিয়া মইন আর মাসুদের বাচ্চারে একটা গালি দিয়া আসি, তাহইলে শুধু আমারে না, তোমারেও এখন আন্ডারওয়ার পড়াইয়া ঢাকা শহরে কানে ধরাইয়া চক্কর মারাইব"। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর তিরিশ লাখ শহীদের ইজ্জততো অতো দামী না যে যৌথ বাহিনী এটা জিজ্ঞেস করতে মুজাহিদ হান্নানের পশম ধরব। তাই মুজাহিদ আর হান্নান এখনও তাকিয়াতে বইসা মুচকি মুচকি হাসে আর এদেশের পতাকাতে পানের পিক ফেলে। দেশটারে আরেকবার ন্যাংটা কইরা বেইজ্জতী করলো, কই সরকারের কাছ থেকে তো একটা রা-ও আসে নাই। যৌথ বাহিনী কি এখন ইয়াবা খাইয়া মউজ করতেছে?
আমার কলেজ পড়ুয়া ভাগ্নেকে নিয়ে আমি এবার শঙ্কিত হয়ে পড়ি। হঠাত করে আমার ভাগ্নে কানে কানে একটা কথা বলে: "মামা দেয়ালেরও কান আছে। তবে যা বলি তা খালি শুনে রাখো। দেশে আর্মী যোগ বিয়োগ কইরা খুব একটা সুবিধা করতে পারে নাই। এখন গুণ করা শুরু করছে। ৭১ নিয়া, স্বাধীনতা নিয়া গুণাগুণি শুরু হয়েছে। চলছে ইতিহাসের বয়াম ঝাঁকাঝাঁকি। এতে তৈরী হবে নতুন আচার, নতুন দল/বল। না, মামাগো হাঁটুতে বুদ্ধির কি ঘাটতি আছে? তা ছাড়া দেশের পাবলিকও নচ্ছার। মইনের হার্ভার্ডের দাওয়াত নিয়া আর ট্রাস্ট ব্যাংকের লোন লইয়া হুদা ক্যাঁচাল দিব। তার চেয়ে ৭১ নিয়া ক'দিন পাবলিক বিজি থাকল। ক্ষতি তো নাই। মুজাহিদ মুচকি হাসে। লিকলিকা হান্নান মিয়াও চোখ টিপে। টিভিতে টক শো দেইখা মইনেরও জ্বর নামে। পাবলিকরে যে বিজি রাখার দরকার আছে, এটা দেরীতে হইলেও মামারা বুঝতারছে...."।
"বাংলাদেশ, তুমি কি আমার সেই বাংলাদেশ - ?
কোথায় যাচ্ছ তুমি ধেই ধেই করে,
পাছার কাপড় তুলে?
কাপড় তুলেছ আর তালি দিতে দিতে
ছুটে যাচ্ছ - সবুজের বুক ভেঙ্গে - শুয়োরের পাল নিয়ে..."
--সৈয়দ শামসুল হক
মন্তব্য
হ ঠিক।
আমি ও এই রহমই ভাবতাছিলাম।
মামায় আত্খা এত্তোগুলা ইসু্ দিয়া বৈলো ক্যা ?!!!
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
মাথায় যে কী কী ঢুকিয়ে দ্যান আপনি মাঝে মাঝে! আমার অবাক লাগে...
বিপ্লব!
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
এমনটি ভাবার তেমন কারণ দেখিনা। তবে আপনার এই ভাবনা সাময়িক সত্যি হতে পারে। আমি ভাবছি আরো গভীরের কিছু। সেই ভাবনার কথা কয়েকদিন পরে লিখব।
নতুন মন্তব্য করুন