কাঁদতে পারিনি আমি

আহমেদুর রশীদ এর ছবি
লিখেছেন আহমেদুর রশীদ (তারিখ: মঙ্গল, ১৬/০৯/২০০৮ - ৫:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার প্রথম স্মৃতিঅবস্থা থেকেই আব্বাকে বুড়া বেশে দেখে এসেছি।দাড়ি-টুপি-পান্জাবি,কখনো পাজামা-বেশির ভাগ সময় লুঙ্গি-এই ছিল আব্বার বেশ।আর মাথার চুল শেভার দিয়ে ন্যাড়া করা।শেষ কয়েকদিন ছাড়া পাঁচবার মসজিদে যেতে তাঁর কখনো ব্যতয় হয়নি।
এই ছিল বাইরে থেকে দেখা আব্বার চেহারা।অথচ এই আব্বা একসময় নাটক করেছেন,কানে রিং পরেছেন।সেইসবের কোনকিছুই অবশ্য আমার দেখা হয়ে উঠেনি। তবে কানের ফুটোটা শেষ অবধি তাঁর সাথে ছিল।
যত বয়স বাড়ছিল আব্বার সাথে দুরত্ব ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল।শেষের দিকে যখন মাঝেমধ্যে আব্বাকে দেখতে যেতাম-সালাম করার পর আব্বার চোখ দিয়ে শুধু পানি পরতে দেখতাম।আমার বুক ভেঙ্গে যেতো কিন্তু কান্নাটা চোখে আসতো না।
ছোটবেলা আব্বা ঈদের সময় কাপড় কিনতে যাওয়ার সময় আমার সাথে লুকোচুরি খেলতেন।আমাকে রেডী করে লুকিয়ে যেতেন।তারপর শুরু হতো আমার ভ্যা ভ্যা করে কান্না।বিয়ের পরেও বেশ কিছুদিন আমি ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে পারতাম।দিল্লীতে এক জটিল অপারেশনের পর ডাক্তারদের প্রত্যাশার আগেই আমার জ্ঞান ফিরে আসলে-আমি ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে শুরু করি।ডাক্তাররা বিরক্ত হয়ে কমেন্ট করেছিল-বাংলাদেশী রুনা লায়লা গানা গাতা হ্যায়।
ছোট থেকেই দেখতাম আব্বা সারাক্ষন কি যেন লেখেন।পরে বুঝেছি, তিনি মানুষের কুষ্টি ইতিহাস সন্ধান করেন আর তা লিখে রাখেন। আব্বা ডায়রী লিখতেন।১৯৭৫থেকে লেখা ডায়রী আমি দেখেছি।ডায়রীতে দৈনন্দিন হিসাবই মূলত লেখা থাকতো।আর থাকতো পরিচতজনদের জন্ম-মৃত্যু-বিবাহের উল্লেখ।এছাড়া খুব গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ঘটনা এবং কোথাও আসলে গেলে তা লিখে রাখতেন।
আমার লেখালেখির শুরুটা হয়েছিল ৮৪ সালের দিকে।তখনকার কাঁচা হাতের লেখা হারিয়ে যাওয়া কয়েকটা কবিতার জন্য আমার মন পুড়ছিল কয়েকদিন ধরে।কোথাও খুঁজে পাবার আশা আর ছিল না।
আব্বা চলে যাবার পরে তাঁর পুরনো কাগজ-পত্র ঘাটছিলাম।একটা প্যাড পেলাম।প্যাড উল্টাতেই দেখি আমার সেই হারিয়ে যাওয়া তিনটা কবিতা আব্বা যত্ন করে লিখে রেখেছেন।
আমার আবারো হু হু করে কাঁদতে ইচ্ছে হলো।কান্নাটা এখনো বুকের ভেতরে জমাট বেঁধে আছে।


মন্তব্য

নিঝুম এর ছবি

কি লেখার আছে ভাই??? আপনার দুঃখে একাকার হয়ে রইলাম । আপনার ভালো হোক, মঙ্গল হোক ।
--------------------------------------------------------
... বাড়িতে বউ ছেলেমেয়ের গালি খাবেন, 'কীসের মুক্তিযোদ্ধা তুমি, কী দিয়েছ আমাদের'? তিনি তখন আবারো বাড়ির বাইরে যাবেন, আবারো কান পাতবেন, মা জননী কি ডাক দিল?

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

মন খারাপ করা লেখা, কবিতা গুলো পোষ্ট করা উচিত নয় কি ?
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

পরিবর্তনশীল এর ছবি

এসব লেখা পড়লে কিছু বলা যায় না।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

মাহবুব লীলেন এর ছবি

...

আকতার আহমেদ এর ছবি

কাকা ভাল থাকুন । ভাল থাকুন আপনারা !

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ভাষা নেই...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

ঝরাপাতা এর ছবি

বাবা কতোদিন কতোদিন দেখিনা তোমায় . . .


যে রাতে গুঁজেছো চুলে বেগুনি রিবন বাঁধা ভাট,
সে রাতে নরকও ছিলো প্রেমের তল্লাট।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . (আবু হাসান শাহরিয়ার)


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

কাব্য এর ছবি

''যত বয়স বাড়ছিল আব্বার সাথে দুরত্ব ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল।''
লেখাটি মনের কোথায় যেন আঘাত দিল..........

কাব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

জনাব আহমেদুর রশীদ,
আপনার লেখাটা পড়ে বাবা-মার স্মৃতিতে তন্ময় হয়ে রইলাম অনেকক্ষণ।।
-তাপু শিকদার

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

উদ্ধৃতি

কান্নাটা এখনো বুকের ভেতরে জমাট বেঁধে আছে।

-এ কান্নাটা কখনোই হয়তো তরল হয়ে বেরিয়ে আসতে পারে না। সবার জীবনেই হয়তো থেকে যায় এমন কিছু জমাট কান্না।

আপনার সহনশীলতা আরো দৃঢ় হোক- প্রত্যাশায়।

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

অনিন্দিতা এর ছবি

ভাল থাকবেন।

মুশফিকা মুমু এর ছবি

কিছু বলতে পারছিনা :'(
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

(দীর্ঘশ্বাস)

রানা মেহের এর ছবি

বাবা মা গুলো এমন বাজেই হয়
সারাজীবনের জন্য কষ্ট জমা রেখে যায়
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।