ঘাসের ডগায় জমেছে শিশির
বন্ধু তোমরা বাঁচিয়ে রেখো ঘাস
রাত বাড়ে।
লোকালয় থেকে দূরে ঝি ঝি’রা তড়পায়।
আকাশ থেকে হারিয়ে যায় তারা।
ঘড়ির কাটা এগোয় দ্রুত।
মোচরাতে থাকে আমাদের হৃদয়।
একে একে পর্দা নামতে থাকে।
একে একে খালি হয়ে যায় টেবিল। শুন্য শেলফ্ গুলো গুমড়ে গুমড়ে কাঁদে।
এভাবেই,প্রতিবারের মতোই নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে দুই পা হেঁটে পুনারায় পেছন ফিরে তাকাই -তারপর সোজা হেঁটে বের হয়ে আসি। ভেতরে কী যেন ফেলে এসেছি। কে যেন ডাক দেয়-দাঁড়া। আবারো দাঁড়াই। মনে হয় নতুন বইয়ের গন্ধের কাছে ফেলে এসেছি প্রাণ-ভোমরা।
নৈমত্তিক চায়ের শেষ আসরটা বসে টিএসসির দেয়াল ঘেষে। নোনতা বিস্কুটের স্বাদটা আজ আর টের পাওয়া যায়না। বিস্বাদ লাগে চা,বিস্বাদ লাগে বেনসন।
উপচানো ভিড় আর ধুলার অত্যাচার অগ্রাহ্য করে পাঠকেরা আজ শুধু বইই খুঁজেছেন। বাংলা একাডেমীর হিসাব মতে এবারের বই মেলায় বই বিক্রি হয়েছে আঠারো কোটি টাকার।
অনেক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পার হলো এই বইমেলা। অনেক মানুষের চোখে নিজেকে চিনলাম নতুন করে। প্রতিদিন আয়নায় নিজেকে দেখার এমন সুযোগ আর কোনো প্রকাশকের হয়েছে কি?
অমিতকে ধন্যবাদ। এই বিষয়ে লেখার আইডিয়া দেবার জন্য। ধন্যবাদ শিমুলকে-আমার যা’তা লেখাকেও চালিয়ে যাবার ব্যাপারে উৎসাহ দেবার জন্য। প্রতিদিন সকালে অফিসে এসে লিখতে গিয়ে আমার গলদঘর্ম অবস্থা দেখে ছড়াকার আকতার বাসা থেকে লিখে আনার জন্য আমাকে একটা পেনড্রাইভ গিফট করেছে। আকতারকে এজন্য ধন্যবাদ দিলে-আমি জানি তাকে ছোটই করা হবে শুধু। কারণ এই টুসকিটুকু আমাকে আমার লেখার রিদমে কিছুটা হলেও ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। গত এক মাসে আমার তুচ্ছ লেখাগুলোতে যারা কমেন্ট করেছেন,যারা চোখ বুলিয়েছেন তাদের সবার প্রতি আমার অসীম কৃতজ্ঞতা।
জলিল ভাই একটা পোস্টে বলেছিলেন,ভালবাসা দেখা যায়। আমারও দেখার সৌভাগ্য হলো। পুরো একটি মাস শুদ্ধস্বর টইটম্বুর ছিলো সচলদের ভালবাসায়,উচ্ছাসে আর উল্লাসে। সারা জীবন যেন এই ভালবাসা আমি ছুঁয়ে থাকতে পারি।
বি:দ্র: বইমেলার ডিসকাউন্টে বই পেতে যোগাযোগ করুন: এ সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য।
মন্তব্য
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আপনার লেখার জন্য অপেক্ষা করতাম, কখন বইমেলার খানিক বিবরণ পাবো...। শেষে অনেক হতাশাবাদী পর্ব লিখলেও এইসব কালোদিক মুছে যাবে। ১৫ কোটি মানুষের দেশে একজন লেখকের ৫হাজার বই বিক্রি হবে আগামীতে, এমন স্বপ্নের বীজ রুয়ে আগামী একুশের অপেক্ষায়...।
অনেক অনেক ধন্যবাদ, টুটুল ভাই!
মেলা শেষে সবাই মিলে চা খাওয়ার পরে যখন বিদায় নিয়ে বাড়ি এলাম, তখনও এই বেদনা আমারে ছোঁয় নাই। ট্যাক্সিতে বসে খুব আমোদে ছিলাম দুপাশে নতুন কেনা বইয়ের ভীড় হাতড়িয়ে। বাড়ি এসে সেগুলো সাজিয়ে রাখতে রাখতেও টের পাইনি কিছু। রাতে নেটেও না। ঘুমাতে যাওয়ার সময় পড়তে পড়তেও না।
টেরটা পেলাম আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে...
মনে হলো আজ আমার কোথাও যাওয়ার নেই...
কেমন একটা শূণ্যতা জুড়ে রইলো পুরোটা জুড়ে।
এবারের মেলায় অনেক বই কিনে ফেলছি। পকেট খালি হলেও মনটা খুব ভরে আছে। সামনেই একটা টেবিলে সবগুলো থরে থরে সাজায়ে রেখেছি। সেদিকে তাকাই আর তাকাই কেবল।
একমাস জুড়ে প্রতিদিন সচলদের এই রমরমা আড্ডা... সে এক দারুণ...
আপনাকে অসম্ভব ধন্যবাদ।
এখন কয়দিন ঘরে বইসা বইসা ঘুমান... রোইদে পুইড়া কালো হয়ে গেছেন...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
মন খারাপ কইরেন না।
২০১০ সালের একুশের বইমেলা
আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গ বাণী
সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।
যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গ বাণী
সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।
অপেক্ষায় থাকব,
আবার নতুন করে পড়বার জন্য..
"বইমেলা প্রতিদিন ১
লিখেছেন আহমেদুর রশীদ (তারিখ : সোম, ২০১০-০২-০১)"
আপনাকে শুভেচ্ছা
আমি বইমেলায় যেতে পারিনি।
আমার সে দুঃখবোধটা অনেকটাই ঘুচিয়ে দিয়েছে আপনার এই নিয়মিত পোস্ট সহ অন্যান্য সচলের সচিত্র পোস্ট।
প্রতিদিন সকালে অফিসে এসেই একবার সচলে চোখ বুলাতাম আপনার বইমেলা প্রতিদিনআছে কিনা দেখতে। থাকলে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলতাম।
কোনটা মিস করিনি,হয়তো সবগুলোতে কমেন্ট করা হযনি।
মেলা নিয়ে প্রকাশনা নিয়ে আপনার স্বপ্নগুলো আমাকে ভীষণ ছুঁয়ে গেছে।
একদিন নিশ্চয়ই আপনার স্বপ্ন পূরণ হবে।
বইমেলা সব সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসবে।
ভাল থাকবেন।
এইটা কি শুনাইলেন !!! কবে স্বাদ নিলেন যে এরই মধ্যে বিস্বাদও লাগতাছে। এই দৃশ্য দেখতে পারলাম না, আহা।
শেষদিন আমিও গেছিলাম তলাটা চাটতে কিন্তু কাউরেই পাইলাম না। আসলে কোনদিনই ব্যাটে বলে হইল না। আগামিতে আরো নেট প্রাকটিস কইরা নামুম।
আপনার সিরিজ লেখার জন্য ধন্যবাদ। কয়েকজন সচলের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞ। আপনার প্রকাশনার উত্তোরোত্তর সমৃদ্ধি প্রত্যাশিত।
.................................................................................................................
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
অনেক ধন্যবাদ নিয়মিত লেখার কষ্টটুকু করার জন্যে। আমি জানি ব্যস্ত থাকা অবস্থায় লেখার সময় করা কি কঠিন।
আপনার লেখাগুলি দুরে থেকেও বইমেলার স্বাদ দিয়েছে প্রতিদিন। এজন্যে অশেষ কৃতজ্ঞতা। আপনার সাথে স্বল্প সময়ের পরিচয়ে বিস্তারিত কথা হলো না। আড্ডা দেয়ার ইচ্ছে ছিল অনেক। সেটি ভবিষ্যতের জন্যে তোলা রইল।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
বইমেলা ২০১০এ আবারো দেখা হবে ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সারা জীবন এই ভালবাসা আপনাকে ছুঁয়ে থাকুক, টুটুল ভাই।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ছুঁয়ে থাকবে। ছুঁয়ে থাকবো আমরা। সবাই মিলে মন জাগাবো।
হ বস। আগেও অন্য জায়গায় কইছি- আপ্নে ভালো কইরা রেস্ট লন কয়দিন।
দেখা হবে। ভালো থাইকেন টুটুল ভাই। কমেন্ট পইড়া দেখলাম- নজু ভাইয়ের চাইতে বেশি থ্যাংকস দেয়ার সাধ্যই হৈবো না আমার। তাই উনার ভাষায়ই বলি- অসম্ভব ধন্যবাদ, আপনাকেই।
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
সামনের বছর বইমেলায় আবার দেখা হবে আশা করি। এই সিরিজটা নিয়মিত পড়সি, কিন্তু সবগুলাতে মন্তব্য করা হয়নি। আপনি শত ব্যস্ততার মধ্যেও সময় করে যে এই পোস্টগুলা দিতেন, সেইটা একটা বিশাল ব্যাপার। ধন্যবাদ দিলেও কম হয়ে যায়।
তবে টুটুল ভাই, চা-সিগারেট বিস্বাদ তো লাগবেই, সেইদিন বইমেলায় গেলাম কিন্তু খাওয়াইলেন না! এতগুলা বই কিনলাম, একটাও ফ্রী দিলেন না!
বইমেলা শেষ তো কী, শুদ্ধস্বর তো আছে। আপনার জন্য ভালোবাসার অভাব হবে না কখনোই। ভালো থাকবেন।
টুটুল ভাই, কে বললো যে আপনার নিয়মিত লেখার বিষয় নাই ! আদৌ কি লিখেছেন কিছু এই ক'দিনে ? লেখার সময় তো ছিলো না তখন। এখন হয়েছে। এখন থেকে প্রতিদিন আপনার নিয়মিত বইমেলা কড়চা সিরিজ পড়তে চাই। আশা করছি এই সিরিজটাই জমবে এবার। আমরাও প্রাণখুলে জানবো আর মনখোলে বলবো।
তাহলে শুরু হোক এবার.........!!!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আমারও অবস্থা হইছে নজরুল ভাইয়ের মত। আমি সারাদিন ঘুমাই দুপুরে জাগি, ভাত খাই, অফিস তো আমার বাড়িতেই। বইমেলার দিনগুলাতে কোন কামই নেই নাই। দুপুরে উঠতাম, ভাত খাইয়া এক্কেরে বইমেলায়, শেষ যে কয়দিন গেছি আর কি। আজকে ভাত খাইয়া উইঠা দেখলাম যে যাবার জায়গা তো নাই, কই যাই। মেজাজ খারাপ কইরা দিলাম আরেক ঘুম, এই উঠলাম।
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
শেষ হয়ে গেলো প্রিয় একটি সিরিজ!
কী পরিমাণ মানসিক চাপে ছিলেন টুটুল ভাই পাশে থেকে কিছুটা হলেও বুঝেছি। তারপরও উপহার পেয়েছি প্রিয় সিরিজ 'বইমেলা প্রতিদিন'। এজন্য শুধু ধন্যবাদ নয় একেবারে অন্তরের গভীর থেকে রইলো ভালোবাসা।
বইমেলায় শুদ্ধস্বরের সামনের আড্ডা থেকে অনেক পেয়েছি। এখন একা হয়ে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি তা।
আগামী বইমেলায় এরকম প্রাণোচ্ছল আড্ডার জন্য বেঁচে থাকার আকুল আগ্রহ জাগছে মনে, প্রতিক্ষণে।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
"আগামী বইমেলায় এরকম প্রাণোচ্ছল আড্ডার জন্য বেঁচে থাকার আকুল আগ্রহ জাগছে মনে, প্রতিক্ষণে।"
বস, এটা কী ভাষা হল! এমন ভাষায় কথা বলেন কেন?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বছর শেষে দেশে আসলে বইগুলো সংগ্রহ করবার আশা রাখি। সচলায়তন সংকলন-১ এর কপি আর আছে কি? ১ এবং ২ দুইটাই সংগ্রহে রাখার ইচ্ছে আছে। দেখি ঢাকায় কাউকে দিয়ে কিনিয়ে রাখা যায় কিনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
ব্লগার লেখকদের অধিকাংশ বই-ই সংগ্রহ করতে (করাতে) পেরেছি, সচল সংকলন-১ আর জন্মযুদ্ধ পাওয়া যায় নাই। অবশ্য বইগুলো কবে হাতে এসে পৌঁছবে, সেজন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। অমিতকে থ্যাংক্স বইগুলোর লিস্ট এক পোস্টে দেয়ার জন্য।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ফেব্রুয়ারি মাসটিতে আপনার সমস্ত দৈনিক পোস্ট পড়েছি। দুস্বাঘোমেটাতে
আচ্ছা, সচলে এক মাসে এর চেয়ে বেশি পোস্ট লেখার রেকর্ড আছে নাকি অন্য কারুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
আমি প্রতিটা পর্বের জন্য বসে থাকতাম। আমার সময় রাত ১০ টার আশে-পাশে পোস্টাতেন। ঐ সময় হলে দাওয়াতের ফাঁকেও ল্যাপি খুলতাম। ঘোলও শেষ হয়ে গেল...
নিউজটা ইন্টারেস্টিং । দলিল হিসেবে সংরক্ষনের জন্য আহমেদুর রশীদের ব্লগটাকেই যোগ্য জায়গা মনে হলো । আশা করি উনি এতে কিছু মনে করবেন না ।
বইয়ের প্রকাশনা পাঁচ বছরে বেড়েছে দ্বিগুণ
মুক্তিযুদ্ধ ও শিশুতোষ বই সবার ওপরে
আজিজুল পারভেজ
একুশে বইমেলা উপলক্ষে নতুন বই প্রকাশের হার পাঁচ বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এ সময়ে মুক্তিযুদ্ব্দ ও শিশুতোষ বইয়ের প্রকাশনা বেড়েছে প্রায় ছয়গুণ। গবেষণা, ভ্রমণ, বিজ্ঞান, কবিতা, ইতিহাস, ছড়া, রাজনৈতিক ও অনুবাদ বিষয়ক বইয়ের প্রকাশনাও বেড়েছে। তবে বাড়েনি উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, জীবনী, নাটক ও চিকিৎসা বিষয়ক বইয়ের প্রকাশনা। আর প্রকাশনার হার কমেছে ধর্মীয়, কম্পিউটার ও সায়েন্স ফিকশন বিষয়ক বইয়ের। ২০০৫ সাল থেকে গত পাঁচ বছরে বইমেলায় প্রকাশিত নতুন বইয়ের তথ্য পর্যালোচনা করে এ ধারণা পাওয়া গেছে। বায়ান্নার ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বাংলা একাডেমী চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বইমেলা। বাংলাদেশের সৃজনশীল ও মননশীল বই ওই সময়েই প্রকাশিত হয়ে থাকে। বইমেলার তথ্যকেন্দ্রের তথ্য থেকেই এ পর্যালোচনা।
এ বছর নতুন বই বেরিয়েছে ২ হাজার ৭৪১টি। ২০০৫ সালে বেরিয়েছিল ১ হাজার ৩৯৫টি। বৃদ্ব্দির হার ১৯৬.৪৮ শতাংশ। অন্যান্য বছরের মধ্যে গত বছর বেরিয়েছিল ২ হাজার ৫৭৮টি, ২০০৭ সালে ১ হাজার ৯১৯টি এবং ২০০৬ সালে ২ হাজার ১০২টি । লক্ষণীয় যে, ২০০৭ সালে প্রকাশনা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বাধাগ্রস্থ হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই।
পাঁচ বছরে প্রকাশনার হার সর্বাধিক বেড়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের। ২০০৫ সালে যেখানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই প্রকাশিত হয়েছিল মাত্র ১১টি, সেখানে এ বছর বেরিয়েছে ৭৬টি। বৃদ্ধির হার ৫৯০.৯০ শতাংশ। শিশুতোষ বই প্রকাশনার হার বেড়েছে ৫৫৭.৮৯ শতাংশ। ২০০৫ সালে যেখানে প্রকাশিত হয়েছিল ৩৮টি শিশুতোষ বই, সেখানে এ বছর বেরিয়েছে ২১২টি। ভ্রমণ বিষয়ক বইয়ের প্রকাশনাও বেড়েছে ব্যাপক হারে। এ বিষয়ে ২০০৫ সালে যেখানে ১১টি বই ছিল, সেখানে এ বছর বেরিয়েছে ৫১টি। বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদদের আত্মজৈবনিক বই প্রকাশের হারও এ সময়ে ব্যাপক হারে বেড়েছে। যে ২২টি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয় তার মধ্যে আত্মজৈবনিক বইয়ের আলাদা তথ্য সংগ্রহ করা হয় না। প্রকাশনার হার বৃদ্ধির দিক দিয়ে পরেই রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের গবেষণামূলক বই। এ বিষয়ে ২০০৫ সালে ৩৭টি আর এ বছর ৮০টি নতুন বই বেরিয়েছে।
প্রকাশনার হার বৃদ্ধি পেয়ে পাঁচ বছরে বিজ্ঞান বিষয়ক বই ২৪ থেকে ৬৯টিতে, কবিতার বই ২৭৯ থেকে ৬৩৮টি, ইতিহাস বিষয়ক ১৮ থেকে ৪০টি, ছড়া ৪৮ থেকে ১০৪টি এবং রাজনীতি বিষয়ক বই ১৫ থেকে ৩২টিতে দাঁড়িয়েছে। এ বৃদ্ব্দির হার ২১৩.৩৩ থেকে ২৮৭.৫ শতাংশের মধ্যে।
পাঁচ বছরে প্রকাশনার হার তেমন না বাড়ার মধ্যে উপন্যাস ২০০৫-এ প্রকাশিত হয়েছিল ৩০৪টি আর এ বছর ৪৮০টি এবং গল্পের বই ২০০৫-এ ১৮২টি আর এ বছর ৩১৩টি।
প্রকাশনার হার হ্রাস পাওয়া বিষয়ের মধ্যে ধর্মীয় বই ২০০৬ সালে যেখানে প্রকাশিত হয়েছিল ৪৮টি, সেখানে এ বছর ২৯টি প্রকাশিত হয়েছে। সায়েন্স ফিকশন ২০০৬ সালে যেখানে বেরিয়েছে ৩২টি, এ বছর সেখানে ১৩টি। এ দুটি বিষয়ে ২০০৫ সালের হিসাব নেই। কম্পিউটার বিষয়ক বইয়ের প্রকাশনাও কমেছে। ২০০৫ সালে যেখানে বেরিয়েছিল ২৭টি, সেখানে এ বছর বেরিয়েছে ১৪টি নতুন বই।
বাংলা একাডেমীর তথ্যকেন্দ্রে নতুন বই জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে প্রচার চাইলে তথ্য ফরমের সঙ্গে অবশ্যই এক কপি বই জমা দিতে হয়, যা জমা দেওয়া হয় বাংলা একাডেমীর লাইব্রেরিতে। এ কারণে দেখা যায়, কোনো কোনো প্রকাশক তাদের দামি বইটি তথ্যকেন্দ্রে জমা দেন না। আবার অনেক প্রকাশক বইয়ের প্রচার নেওয়ার জন্য প্রতিটি পুনর্মুদ্রণের কপিও জমা দিয়ে থাকেন।
বিশিষ্ট প্রকাশক মফিদুল হকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান, দেশে কোন বিষয়ে কত বই প্রকাশিত হয়, তার শতভাগ তথ্য পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিটি বইয়ের কপি জাতীয় আর্কাইভ ও লাইব্রেরিতে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা অনেকেই করেন না। আবার দামি বইটি বাংলা একাডেমীর তথ্যকেন্দ্রেও জমা দেওয়া হয় না। তিনি বলেন, ‘সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশনা বেড়েছে, এটা বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্কেপ্পর একটি ভালো লক্ষণ। শিশুদের বইয়ের জন্যই আলাদা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠছে।’ তবে এগুলো আরো পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে হওয়া উচিত বলে তিনি অভিমত জানান।
ধর্মীয় বিষয়ক বইয়ের প্রকাশনা কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ইসলামী বইয়ের আলাদা বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, কম্পিউটার মেলাও আলাদাভাবে হয়। বিশেষায়িত মেলাগুলোতে সে বিষয়ক বইগুলো বিশেষ গুরুত্ব পাওয়ায় বাংলা একাডেমীর বইমেলায় এর প্রকৃত প্রতিফলন ঘটছে না বলেও তিনি জানান।
সূত্র: সমকাল
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
নতুন মন্তব্য করুন