• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

আন্তঃআভ্যন্তরীণ রোদ জল

আহমেদুর রশীদ এর ছবি
লিখেছেন আহমেদুর রশীদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৩/০৭/২০০৯ - ৯:০৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শরতের তাঁতানো রোদের আড়ালে আর্টস বিল্ডিং-এর পাশের টিলার মতো উঁচু জায়গাটার ঢালে একটা বয়সী জারুল গাছের নিচে গোল হয়ে- ঠিক গোল নয় একদিক কমলালেবুর মতো আর অন্যদিক ডিমের একটু চোখা দিকের মতো করে বসে আছে ওরা-পিকু, রাহাত, শ্যামল, দ্বীপ আর শুভ। বসার আকৃতিটা ডিমের মতো হয়েছে শ্যামল আর দ্বীপের পা ছড়িয়ে বসার কারণে। বসে বসে লম্বা লম্বা ঘাসের ডগা ছিঁড়ছে আর যে যার মতো করে কেউ সুর ভাঙছে, কেউ আউড়াচ্ছে কবিতার পংক্তি। কলেজের করিডোরে দেখেছি... গলায় জোর দিয়ে গাইছিল দ্বীপ, এমন উদাস উদাস, সুখ-সুখ, উড়ুত ফুড়ুতু মুহূর্তে ‌'ভাইসব' বলে চিৎকার করে সবাইকে থামিয়ে দিল শ্যামল। তারপর খুব আস্তে করে বললো_ ‌'পেরেস্ত্রোইকা'। মানে?_ একসংগে এই প্রশ্ন প্রতিধ্বনিত হলো পিকু, শুভ আর রাহাতের কণ্ঠে। শ্যামল গলার স্বর আরো নামিয়ে বললো চারদিকে তাকিয়ে দেখো, কিছু বুঝা যায় কি?
ওরা যে জায়গাটাতে বসে আছে, তার সামনের রাস্তাটা নেমে গেছে ঢালু হয়ে। নেমে গিয়ে দৃষ্টির আড়ালে চলে গেছে, যেন হারিয়ে গেছে কোথাও। রাস্তাও বোধ হয় পথ হারায় কখনো সখনো। পেছনের আর্টস বিল্ডিংটা শত বছরের পুরনো। ক্লাস রুমে কাঠের গ্যালারিতে বসার ব্যবস্থা। গায়ে সাদা রং মেখে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তা। শ্যামলের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সবাই চারদিকে তাকিয়ে এসবই দেখছিল।
আজ এই পঞ্চ পাণ্ডবের কলেজে প্রথম দিন। ক্লাস শুরুর বেশ আগেই চলে এসেছে প্রথম কলেজ দিবস উদযাপনের উত্তেজনায়। ওরা প্রথমে বসতে চেয়েছিল-বিশাল দীঘির মতো পুকুরের বাঁধানো ঘাটে। কিন্তু ঘাটটা দখল হয়ে ছিল আগে থেকেই। ঘাটে-ক্যান্টিনে-গেইটে- অডিটোরিয়ামের সামনে দলবেঁধে যারা আড্ডা দিচ্ছে- তাদেরকে ঠিক এই কলেজের ছাত্র মনে হচ্ছে না। যদিও কলেজের কিছু বড় ভাই যারা ছাত্রনেতা হিসাবে পরিচিত তারা মোটর সাইকেলে করে কলেজের এমাথা ওমাথা চক্কর দিচ্ছিলো আর জটলার লোকজনদের সাথে কথা বলছিল।
শ্যামলের আকার-ইঙ্গিত আর কলেজের ভারি বাতাসের উৎকণ্ঠার মধ্যেও কলেজে আসার পথে পিকুর কাছে শোনা গল্পটার কথা ভাবছিল শুভ। পিকু গল্পটি শুনেছে গতকাল চুল কাটতে গিয়ে। চুল কাটতে কাটতে ফিসফাস করে গোপনে বলার ভঙ্গিতে সুবল পিকুকে বলেছিল গল্পটা মানে বাস্তব ঘটনাটা। কলেজের আরো দক্ষিণে যেখানে ঘন জঙ্গলের শুরু, সেই জঙ্গল থেকে কিছুদিন ধরে নাকি রাতের দ্বি-প্রহরে জ্বলজ্বলে নীল চোখের এক অপূর্ব সুন্দরী কিশোরী আলুথালু বেশে এলোকেশে বের হয়ে শহরের মূল সড়ক ধরে হেঁটে হেঁটে চলে যায় উত্তর দিকে। বিমানবন্দরে যাবার একটু আগে দুইশত বছরের পুরনো চা বাগানের বিপরীত দিকে ছোট ছোট পাহাড়ের বাঁক ধরে যে পায়ে চলা পথ চলে গিয়েছে-মেয়েটি সেই পথে ঢুকে হারিয়ে যায়। এমনটি ঘটছে বেশ কিছুদিন ধরে। তবে মেয়েটিকে নিজের চোখে দেখেছে এমন প্রত্যক্ষদর্শীর সন্ধান পিকু এখনো পায়নি।
বিশ্বের এখানে সেখানে পট পট করে ভেঙ্গে যাচ্ছে রাষ্ট্র, সরকার পদ্ধতি। পৃথিবীটা কেমন যেন এক কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। ধর্ম যদিও বলে, স্রষ্টার সাথে কাউকে শরিক না করতে। কিন্তু বর্তমান বাস্তব বিশ্বনিয়ন্তারা বলে-সবাই আমার সাথে শরিক হয়ে যাও। ভাবে ভব্যে আমার হয়ে যাও। অন্যথায় কালো পেট মোটা প্লেন থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে নেমে আসবে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র সজ্জিত ধবধবে সাদা ও উচুঁ সৈন্যদল। তারা তোমাদেরকে ডেমোক্রেসি শিক্ষা দিবে, ইচ্ছামতো হত্যা করবে এবং তোমাদের পূর্বতর ইতিহাস-ঐতিহ্য ও পূরাকীর্তি পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যে পরিণত করে দিবে। এসব ভেবে ভেবে কেমন গা গুলাচ্ছিল শুভর। শুভ পিকুকে বললো দ্যাখ দ্যাখ- ঐ সব জটলা থেকে কেমন যেন হিংস্র ধোঁয়া উড়ছে।
পিকু অবশ্য শুভর কথা না ধরে গতকাল শোনা গল্পের প্রসঙ্গটা আবারো উঠালো। পিকুর মাথায় বেশ ভালভাবেই ভর করেছে ব্যাপারটা। অবশ্য শুভও খুব আলোড়িত এই ঘটনায়। বেশ কিছু দিন ধরে রাতের শহর অবলোকনের জন্য পিকুকে টুশকী দিচ্ছিল শুভ। প্ল্যান প্রোগ্রাম করতে করতে এই নীলচক্ষু কিশোরীর কাহিনী শুনে দুইজনই খুব উজ্জীবিত। এখন তো আর দেরি করা চলে না। এমন অদৃশ্যপূর্ব নীল নয়নাকে না দেখলে-জীবনের আর থাকল কী, এমন অবস্থা। শেষ পর্যন্ত নৈশ অভিযানের সহযাত্রী হতে রাজি হলো রাহাতও। এর আগে অবশ্য রাহাত আর শুভ মিলে এক বিলুপ্তপ্রায় উপজাতির অনেক অজানা খোঁজখবর বের করে এনেছে-রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, ছাতার আড়ালে পাত্র রমণীর মুখ খুঁজে-খুঁজে।
আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘাসের আড্ডা ছাড়ল সবাই। ক্যান্টিনে গিয়ে দেখা গেল চপ-সিঙ্গারা সব শেষ। আছে শুধু বোয়ামের তলানীতে কিছু বিস্কুট আর চা। চা আর বিস্কুটেই কলেজের প্রথম দিনের টিফিন সারল ওরা। টিফিন সেরে ফিজিক্স বিল্ডিংএর সামনে গেল পাঁচজন। প্রথম ক্লাস ফিজিক্স। এই ফিজিক্স বিল্ডিং আবার আর্টস বিল্ডিং থেকে অনেক দূরে লাইব্রেরি, ক্যান্টিন ছাড়িয়ে কলেজেরে সীমান্ত ঘেঁষে যে ছোট ছড়াটা বয়ে গেছে তার লাগোয়া। সায়েন্সের ছাত্র হলেও পিকুর খুব ইচ্ছে ছিল প্রথম ক্লাসটা আর্টস বিল্ডিং-এর কাঠের গ্যালারিতে বসে করতে। কিন্তু তাতো আর হচ্ছে না।
ক্লাস শুরুর এখোনো কিছুটা সময় বাকি। অনার্সের কী একটা পরীক্ষা চলছে। ক্লাসের সামনের ভিড় ঠেলে শুভ গিয়ে দাঁড়ালো ছড়ার পাশে। পরিষ্কার পানির ছোট স্রোতটি হেলেদুলে চলে যাচ্ছে। স্রোতের পানিতে প্রতিফলিত শরতদুপুরের রোদ চিকচিক করছিল। শুভ খুব অবাক হয়ে দেখছিল এই রোদ জলের খেলা। যেন রোদ জলের সাথে লুকোচুরি খেলছে শুভর স্বপ্ন। এমন সময় একটা বিকট শব্দে রোদ জল আর স্বপ্নের খেলা থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসেব শুভ। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে দূরে পুকুরের ওই ঐপাড়ে অডিটোরিয়ামের সামনে ধোঁয়া আর ছুটাছুটি। ফিজিক্স বিল্ডিং-এর সামনের জটলাটা ভেঙ্গে গেছে। যে যেদিকে পারে ছুটছে। পিকু কোথায়? রাহাত, শ্যামল, দ্বীপ?... অনেকের সাথে পড়িমরি করে ছড়া পার হয়ে হাঁটতে হাঁটতে পিকু আর রাহাতকে খুঁজে পেল শুভ। ব্যাপার কী? কী হয়েছে বলতো? শুভ চিৎকার করে প্রশ্ন করলো পিকু আর রাহাতকে। পিকু খুব আস্তে শ্লেষের সাথে উচ্চারণ করলো... পেরোস্ত্রাইকা। মানে?-শুভর কণ্ঠে আবারো প্রশ্ন। মানে হলো... আধিপত্য প্রতিষ্ঠা। কলেজে পড়তে এসে যারা নেতৃত্বের তকমা এঁটেছেন বুকে পিঠে মাথায়, তারাই এমন সাজ সাজ রব করে সংঘর্ষ বাধিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে চাইছেন। এখন তো কলেজ বন্ধ হয়ে গেল। একটা ক্লাসও করা গেল না। বলতে বলতে শূন্যে মুঠি ছুড়ে ক্রোধ প্রকাশ করলো পিকু। আচ্ছা, আমরা বাড়ি যাব কীভাবে? একজন এসে জিজ্ঞেস করলো পিকুদেরকে। পিকু রাহাত শুভ ছাড়াও আরো ২০/২৫জন এই পথ দিয়েই বাড়ি যাবার পথ খুঁজছে। রাহাত বললো জঙ্গলের পর কয়েকটা টিলা আছে। সেই টিলা পার হলে পরে পাওয়া যাবে রাস্তা।
এই জঙ্গলটা খুব হালকা। বড়গাছ তেমন একটা নেই। বেশিরভাগই ছোট ছোট কাঁটার গাছ। পা বাঁচিয়ে পথ চলতে খুব কষ্ট। সামনের টিলাগুলি দু'হাত বাড়িয়ে কেমন যেন ডাকছে। টিলার বিস্তৃতি সোজা অনেক দূর পর্যন্ত। ডান দিকে ঘন জঙ্গল। শুভ ভাবছিল এই জঙ্গল থেকেই সেই নীল চোখ হরিণী বের হয়ে আসে কি-না।
হাঁটতে হাঁটতে ওরা টিলার কাছাকাছি চলে এসেছে। বাম দিক ধরে টিলাটা পার হলেই বাড়ি যাবার রাস্তা। সোজা টিলার বিস্তৃতি-জাদুজালের মতো কুহক- কেবলই হাতছানি দিয়ে ডাকে। পেছনের-অনেক দূরে হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নের কলেজ তাড়িয়ে দিয়েছে। ডানের জঙ্গলে কি সত্যি থাকে পরিবেদনার ভাষা নীল চোখের অপূর্ব কিশোরী! সাথের সবাই ততক্ষণে বাড়ি যাবার রাস্তায় উঠে রিক্সা খুঁজছে। টিলার প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে রাহাত, শুভ, পিকু- ঘোর লাগা, চাঁদে পাওয়া মানুষের মতো।


মন্তব্য

শামীম রুনা এর ছবি

ফেলে রাখা গল্পগুলি শেষ করলেই হয়। নইলে অসমাপ্ত গল্প সংকলন বের করতে হবে।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রিয় সচল-হাচল-অচলবৃন্দ, এই লোকটার কী শাস্তি হওয়া উচিত তা আপনারা নির্ধারণ করুন। নিয়মিত কবিতা দেয় না, পোস্ট দেয় না, পুরোনো লেখা পোস্টায়, অন্যের বই ছাপায় কিন্তু নিজের বই বের করে না। সেই বই মেলায় নিয়মিত পোস্ট দেবার পর আর খবর নেই। তার রুমমেট জনসমক্ষে অসমাপ্ত গল্প সংকলন প্রকাশের হুমকি দেয় তবু গল্পটা পর্যন্ত শেষ করেনা। কবিতা না লিখে একজন কবি বাঁচে কী করে আমি তা বুঝে উঠতে পারি না। আড্ডার সঞ্চালক হয়, ঢাকার সচলদের অঘোষিত আশ্রয় হয় তবু সচলের পাতায় আড্ডাবাজী করে না। এত দোষসম্পন্ন মানুষটাকে এক রাতে দশটা কবিতা পোস্ট করতে দেবার মত শাস্তি দেয়া হয় না কেন?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তানবীরা এর ছবি

রুমমেট !!!!! জাসা কইছেন
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মাইর দেন... ঠিক হয়া যাবে... মাইর দেওয়ার দায়িত্বটা আমরা সবাই মিলে নিতে পারি, আবার তার রুমমেটের কান্ধেও চাপাইতে পারি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

গল্পটা কেমন যেনো ... । শেষ হয়েছে কী ?? মাথার উপর দিয়ে চলে গেলো যে...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

অতিথি লেখক এর ছবি

তবুও তো গল্পেরা শেষ হয়। ষষ্ঠ পান্ডব এর দেয়া শাস্তির প্রতি আমিও পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি! - মারুফ

সুমন সুপান্থ এর ছবি

খুব পছন্দের গল্প এটা । শালুকয়েই পড়েছিলাম মনে হয় । সেই ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম আবার ।

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।