উৎপলকুমার বসু, জীবনানন্দ পরবর্তী মধ্য পঞ্চাশের কবি। হঠাৎ মজা করে লিখতে শুরু করা এই কবি এখন কবিদেরো কবি। নিজের একটা পাণ্ডুলিপি পুন:পাঠ করতে করতে মনে হলো, নতুনতো কিছুই এখানে নেই। আসলেই নেই। তবে আর কেন, এইসব পুনরাবৃত্তির প্রকাশ। তারচেয়ে উৎপলকুমার বসু থেকে কয়েকছত্র পাঠ করা যাক। এই কবি দুই বছর আগে নিজ দেশে পরদেশের নাগরিক হয়ে বেড়াতে এসেছিলেন।
সলমা-জরির কাজ
৭.
বন্ধু, তোমার হাতের উপর হাত রাখলেই আমি টের পাই তোমার বাজারে অনেক দেনা,
ছেলেটা উচ্ছন্নে গেছে, মেয়ে রাত করে বাড়ি ফেরে, আজ যা-বলার আছে তুমি আমাকেই
বলো, স্ত্রীর মুখরতার কথা বলো, সহকর্মীদের শটতার কথা বলো, রাতে ঘুম হয় না সেই
কথা বলো, আর যদি কাঁদতেই হয় তবে এই কাঁধে মাথা রেখে কাঁদো, বন্ধু।
১০.
শ্বাসকষ্ট উঠলেই বুঝতে পারি ফুলডুঙরি পাহাড় আর বেশি দূরে নয়
নইলে এমন হাঁপাচ্ছি কেন? কেন ওসুধে সারে না?
ঐ পাহাড়ের মাথায় উঠলে এ-বছর কী দেখব কে জানে-
যে-পাথরে আমরা সবাই নাম লিখিয়েছিলাম সেটি হয়ত
নিচে গড়িয়ে পড়ে গেছে,
যে-জলস্রোত লাফিয়ে পার হয়েছিলাম তাকে ঘুরি
চাষজমির দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল-
যদি তাই হয়ে থাকে তবেআর তাকে আমি খুঁজে পাবো না,
এইসব ভাবি আর হাসপাতালের বিছানা শুকনো ডালপালায়,
ছেঁড়া কাগজে আর পরিত্যক্ত সাপের খোলসে ভরে োঠে-
এত জঞ্জাল সরাবে কে? আমি কি সময় করে উঠতে পারবো?
আমি তো ফুলডুঙরি পাহাড়ে প্রায় পৌঁছে গেছি।
চেপারামের ঘরটা
এখান থেকে দেখা যাচ্ছে। আরেকটু পা চালিয়ে
উঠে গেলেই হয়।
চৈত্রে রচিত কবিতা
উৎসর্গ
দয়িতা, তোমার প্রেম আমাদের সাক্ষ্য মানে নাকি?
সূর্য-ডোবা শেষ হল কেননা সূর্যের যাত্রা বহুদূর।
নক্ষত্র ফোটার আগে আমি একা মৃত্তিকার পরিত্যক্ত,বাকি
আঙুর, ফলের ঘ্রাণ, গম, যব, তরল মধু-র
রৌদ্রসমুজ্জল স্নান শেষ করি। এখন আকাশতলে সিন্ধুসমাজের
ভাঙা উতরোল স্বর শোনা যায় গুঞ্জনের মতো-
দয়িতা, তোমার প্রেম অন্ধকারে শুধু প্রবাসের
আরেক সমাজযাত্রা। আমাদেরই বাহুবল বিচূর্ণ, আহত
সেই সব সাক্ষ্যগুলি জেগে ওঠে। মনে হল
প্রতিশ্রুত দিন হতে ক্রমাগত, ধীরে ধীরে, গোধুলিনির্ভর
সূর্যের যাত্রার পথ। তবু কেন ষোলো
অথবা সতের-এই খেতের উৎসব শেষে, ফল হাতে, শস্যের বাজারে
আমাদের ডেকেছিলে সাক্ষ্য দিতে? তুমুল, সত্বর,
পরস্পরাহীন সাক্ষ্য সমাপন হতে হতে ক্রমান্বয়ে বাড়ে।
মন্তব্য
দিনটাকে সুন্দর করে দিলেন টুটুল ভাই । এতোগুলো প্রিয় কবিতা ! ধন্যবাদ আপনাকে ।
উৎপলকুমার বসু, জীবনানন্দ পরবর্তী মধ্য পঞ্চাশের কবি
সাহস করে বলি, উৎপলকুমার বসু, জীবনানন্দ, বিনয়ের পর সবচেয়ে প্রভাববিস্তারকারী বাঙালী কবি । নয় ?
অথবা সতের-এই খেতের উৎসব শেষে, ফল হাতে, শস্যের বাজারে
আমাদের ডেকেছিলে সাক্ষ্য দিতে? তুমুল, সত্বর,
পরস্পরাহীন সাক্ষ্য সমাপন হতে হতে ক্রমান্বয়ে বাড়ে।
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
প্রিয় কবিতা আর প্রিয় শব্দমালা চোখের সামনে দুলিয়ে দিয়ে কত যে ধন্যবাদার্হ হলেন সে বলতে পারি না।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নই উত্থানপতনে কোনো ভ্রষ্ট রাজা- গির্জার আঁধার-
তবুও আঙুল কেন উন্মাদক? কেন আঙুলে অক্ষর?
কেন আমার ক্ষমতা নেই বিশাল ধ্বংস হয়ে জন্মিয়ে ওঠার?
কেন নেই ভয়?
আহা... মাঝরাত্তিরে উত্পল মনে করালেন। ভালোই করলেন, সকালে সিলেট সফরের জন্য ব্যাগ গোছাবো এখন। সঙ্গে কবিতার বই একটা রাখা অভ্যেস, কোনটা ব্যাগে ভরবো ভাবছিলাম। এখন আর ভাবতে হবে না...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ভাল লাগল। ভাল লাগল।
ভালো লাগলো। আগে পড়া হয় নি এই কবিকে! ধন্যবাদ সে সুযোগটা করে দেয়ার জন্য।
----------------------------------------
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
----------------------------------------
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
সাত নম্বরটা খুব ভালো লাগলো টুটুলদা।
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
'মন মানে না বৃষ্টি হলো এত....
সমস্ত রাত ডুবো-নদীর পারে,
আমি তোমার স্বপ্নে-পাওয়া আঙুল--
স্পর্শ করি জলের অধিকারে।
এখন এক ঢেউ দোলানো ফুলে....
ভাবনাহীন বৃত্ত ঘিরে রাখে-
স্রোতের মতো স্রোতস্বিনী তুমি
যা-কিছু টানো প্রবল দুর্বিপাকে!
তাদের জয় শঙ্কাহীন এত, মন মানে না সহজ কোনো জলে
চিরদিনের নদী চলুক, পাখি।
একটি নৌকো পারাবারের ছলে, স্পর্শ করে অন্য নানা ফুল
অন্য দেশ, অন্য কোনো রাজার, তোমার গ্রামে, রেলব্রিজের তলে,
ভোরবেলার রৌদ্রে বসে বাজার।'
#নবধারাজলে : উৎপলকুমার বসু
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন