আমার লাশটাকে ঘিরে ছোটখাট একটা জটলা। আশপাশের মানুষগুলো আমার কত জনমের চেনা। ওদের সুন্দর মুখগুলো কেমন যেন শুকনো আর মলিন।
আমার মাকে কেউ সামলাতে পারছে না। মা খুব চিৎকার করে কাঁদছে আর বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। মার যে প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট। এমনভাবে কাঁদলে তো মাকে বাঁচানো যাবে না। মাকে থামানো দরকার। কিন্তু কার সে সাধ্য আছে?
আমি যখন মায়ের কোলজুড়ে আসি তখন কত বয়স হবে তার? বড়জোড় সতের-আঠের। সেই অল্পবয়সী সংসার না জানা মা একহাতে আমাকে সামলেছেন, অন্যহাতে সংসার। দুবছর বয়সে বাবা বিদেশে চলে গেলে মা যে আমাকে কত কষ্ট করে একা একা বড় করেছেন তা কি আর আমি জানি না। অথচ মাকে একটা দিনের জন্য শান্তি দিয়ে যেতে পারলাম না।
দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে বাবা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। বাবার চোখদুটো টকটকে লাল। বিদেশে খুব ভাল চাকরী ছেড়ে চলে এসেছিলেন শুধুমাত্র আমার জন্য। আমি যেন ভালভাবে পড়াশুনা করি, বিপথে না যাই। যখন যা আবদার করতাম তাই পেতাম। ধারদেনা করে হলেও বাবা সেটা পূরন করতেন।
বাবার স্বপ্নপূরনের পথে অনেকদূর এগিয়েছিলাম। আর মাত্র ছয়মাস পরে আমার পাশ করে বের হবার কথা। তারপর বড় চাকরী করব, বাবাকে আর কষ্ট করতে দেব না। বলবো, “তোমার এবার অবসর।” সেকথা বলা হল না।
আমার ছোট্ট ভাইটার মুখের দিকে তাকানো যায় না। ভীষন আঘাত পেয়েছে। ও যে বড্ড ভীতু। ও এখন কার সাথে ঘুমোবে? কে ওকে অংক করাবে? কত স্বপ্ন ছিল ছোট ভাইটাকে ডাক্তার বানাব। ও বলত, “ভাইয়া বিদেশী ডিগ্রী না থাকলে তো রোগী আসবে না।” আমি বলতাম, “যেমন করে হোক তোকে বিদেশে পড়তে পাঠাব। আমি খরচ যোগাড় করব।” সেইসব সুখের দিন দেখা হল না।
আমার নানী মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন নিঃশব্দে। ইনি আমার মায়ের খালা। নিজের নানীকে দেখিনি, তবে তার অভাব কোনদিন বুঝতে পারিনি। মনে পড়ে, ছোটবেলায় যখন আমি টাইফয়েডে পড়ে সাতদিন হাসপাতালে ছিলাম আমার অসহায় মাকে সঙ্গ দিয়েছিলেন তিনি।
নানীর দেড়তলা বিল্ডিংটা জুড়ে আমার কত শৈশব স্মৃতি। আশপাশের ছোটছোট ঘর এমনকি ফাঁকা জায়গাটাতেও চারতলা-ছয়তলা ফ্লাটবাড়ি উঠেছে। নানীকে যদি বলি বিল্ডিং ভেঙ্গে নতুন করে করতে তিনি বলেন, “তুই আমার নতুন বিল্ডিং এর ডিজাইন করে দিবি।” গণকযন্ত্রে পড়াশুনা করা এই আমি তাকে বোঝাতে পারিনা যে, দালানকোঠার ডিজাইন করা ইঞ্জিনিয়ার আমি না। বলি, “ঠিক আছে করে দেব।” কিন্তু করা হল না।
আমার দাদী গ্রামে আছেন। তাকে সম্ভবত আমার মৃত্যুর সংবাদ দেয়া হয়নি। অসুস্থ মানুষ তার অতি আদরের নাতিকে হারানোর ধাক্কা কিভাবে সামলাবেন? মাছের কাঁটা বেছে খেতে পারতাম না বলে দাদী কাঁটা বেছে কিমা ভেজ়ে দিতেন। মা রাগ করতেন, “এভাবে আহ্লাদ করলে ও তো কোনদিন কাঁটা বেছে খেতে পারবে না।”
দাদীর একটাই আফসোস, তাঁর ছয়ছেলে কেউ গ্রামে দালান করে দেয়নি। ঝড়ের সময় খুব ভয়ে থাকেন। আমি আশ্বাস দিতাম, “আমি আপনাকে পাকা দালান করে দিব আর সেই বাড়ি থাকবে আপনার সব সন্তানের নামে।” সেই স্বপ্নটাও বাকী থেকে গেল।
সাদা কাফনে মোড়ানো এই আমাকে এখন মাটির নিচে শুইয়ে দেয়া হবে। প্রিয় মুখগুলোকে ছেড়ে যেতে খুব খুব কষ্ট হচ্ছে। তবু চলেছি অজানার পথে।
কারো জন্য কোনকিছু থেমে থাকে না, সব চলতে থাকে তার আপন গতিতে। তবু মাঝে মাঝে ভাবি, কাছের মানুষগুলোর এত এত ভালোবাসা, আদর। দিনে দিনে জমছে ঋণের পাহাড়। কি করে শোধ দেব আমি? এই ছোট্ট জীবনে সবকিছু করে যেতে পারব তো?
মন্তব্য
এত তাড়াতাড়ি মরলে চলবে ক্যামনে? জয়িতা,জয়া,জামিলা এদের কি হবে?
......................................................
পতিত হাওয়া
লিস্টের নামগুলোতে এত 'জ' এর আধিক্য ক্যান ? 'স','ম','প' এইগুলা ভালো পাই।
-----------------------------------------
ভালবাসা তুমি - প্রেয়সীর ঠোঁটে প্রগাঢ় চুম্বন;
ভয়হীন তবু, দেখলে দেখুক না লোকজন।
-----------------------------------------
এই গল্প ভরা রাতে, কিছু স্বপ্ন মাখা নীল নীল হাতে
বেপরোয়া কিছু উচ্ছাস নিয়ে, তোমার অপেক্ষায় ...
খুবই ভালো লাগলো ...............
খুবই ভালো লাগলো ...............
-- স্বপ্নচারী ...
স্বপ্নচারী আপনাকে ধন্যবাদ
-----------------------------------------
ভালবাসা তুমি - প্রেয়সীর ঠোঁটে প্রগাঢ় চুম্বন;
ভয়হীন তবু, দেখলে দেখুক না লোকজন।
-----------------------------------------
এই গল্প ভরা রাতে, কিছু স্বপ্ন মাখা নীল নীল হাতে
বেপরোয়া কিছু উচ্ছাস নিয়ে, তোমার অপেক্ষায় ...
সকালে আমি এমনিতেই ঝিম মেরে থাকি অনেকখন। আপনি এবারে সেটাকেও টেনে আরোও অনেকখন বানাতে চাইছেন!!
.... ভালো থাকুন। স্বপ্ন বাস্তবায়নে সফল মানুষ হোন।
কেন যে লেখাটা লিখলাম আমি নিজেও জানি না।
লেখাটা পড়ার জন্য এবং শুভকামনার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকুন সবাইকে নিয়ে সবসময়।
-----------------------------------------
এই গল্প ভরা রাতে, কিছু স্বপ্ন মাখা নীল নীল হাতে
বেপরোয়া কিছু উচ্ছাস নিয়ে, তোমার অপেক্ষায় ...
হুম!!!!!!!!
এইসব চিন্তা করার মতো বয়স কি হয়েছে আপনার?
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আপু লিখতে গিয়ে আব্জাব লিখে ফেললাম। ছাত্রত্ব শেষ হয়ে আসল প্রায়। আর কন ছুডু
-----------------------------------------
এই গল্প ভরা রাতে, কিছু স্বপ্ন মাখা নীল নীল হাতে
বেপরোয়া কিছু উচ্ছাস নিয়ে, তোমার অপেক্ষায় ...
ভাইয়ের লেখাটা ভালো হইসে...
একই থিমে খুশবন্ত সিং-এর একটা গল্প আছে, সেটার কথা মনে পড়ে গেলো ...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
ধন্যবাদ ভাই।
খুশবন্ত সিং এর কৌতুকের কথাই শুধু শুনেছি, এই থিমে কি গল্প ছিল না কৌতুক?
-----------------------------------------
এই গল্প ভরা রাতে, কিছু স্বপ্ন মাখা নীল নীল হাতে
বেপরোয়া কিছু উচ্ছাস নিয়ে, তোমার অপেক্ষায় ...
লেখার হাত অসাধারন। শুরু করলে না থেমেই শেষ করতে হবে। আচ্ছা ঠিক আছে, জ অক্ষরের না অন্য অক্ষরের মেয়েই দেবো কিন্তু তবু মরা চলবে না বলছি হ্যা। সাথে পাঁচ খানা তারাও পড়ল।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
মন ছুয়ে গেলো.. :'(
[বিষন্ন বাউন্ডুলে]
নতুন মন্তব্য করুন