ধনী-গরীবের বিষয়টা খুব ছোট বেলাতেই ধরা যায়। যেমন সহজে মাথায় আসে কাকে তুই, তুমি আর আপনি বলা হবে। ঈদের আর পূজার সময় ধর্ম বিষয়টা মাথায় ঢুকে। কেউ একজন লাল পিপড়া কালো পিপড়ার শিক্ষাটাও দিয়ে দেয়। এটা আমাদের আর ওটা তোমাদের, ভাগের সময় জিততে হলে একটু বেশী নেয়া চাই। চাচাত জেঠাত ভাইয়েরা মিলে ওপাড়ার কাউকে পিটিয়ে আসি, আমরা তখন সংখ্যাগুরুর দলে।
মেট্রিক পরীক্ষার সময়, সরকারী স্কুলের সিট হয় একটা বেসরকারী স্কুলে আর তাদের ব্যবস্থা হয় আমাদের স্কুলে। ওই স্কুলের টিচাররা খুব টাইট দেয়, আমরা ভাল রেজাল্ট করি তাই হিংসা করে, পরীক্ষার সময় পানি খেতে চাইলে দেয় না, লুজ শীট দিতে দেরি করে। হয়ে যাই সংখ্যালঘু।
ফুফাত ভাই চরে থাকে। জীবনে টিভি-ভিসিআরের নাম শুনে নি; তার মুখে ভিসিআরকে বেসিয়ার শুনে চৌরা মগ সম্বোধন দিয়ে ফেলি। স্কুলে আবার শহরের ছেলেগুলোর সাথে কথা বলাই কঠিন। ওরা ডাকে বাবা-মা, আর আমাদের জন্য আব্বা-আম্মা- কেমন যেন ক্ষ্যাত ক্ষ্যাত লাগে।
আবুইদ্যা হগলের লগে মাত কিতা। সিলেটে পড়তে গিয়ে উপলব্ধি করি দেশের ভেতর দেশ। শুদ্ধ বললে হই আবাদি, আর সিলেটি বলার চেষ্টা করলে, যেতা মাততাই ফারতা নায় অতা মাততায় যাও খ্যানে। সয়ে যায় একসময়। এরা দলের, ওরা লীগের। ওই ব্যাটা তো জাদরেল শিবির। আরে লালনের পাল্লায় পড়লে জাতীয় ছাত্রদল করায়া ছাড়বে। কাদের কী নীতি, কী বিষয়? সবাই তো দেখি ভাল কথাই বলে। বিএনপি ক্ষমতায় তো লীগ হলছাড়া, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তো দল হলছাড়া। রাতারাতি সংখ্যার খেলা।
ঢাবি থেকে আসা শিক্ষক বলেন, তোমরা কেমনে ৮০ পাবা আমি নিজেই পাই নাই। বুয়েট থেকে আসা ড. ইঞ্জিনিয়ার প্রফেসর ... বলেন শাহজালালের পোলাপান কিচ্ছু পারে না। এদের দিয়ে বুয়েটে বারান্দা ঝাড়ু দিলেও কিছুটা ফল হবে। কেবলামুখী কথাবার্তা।
পড়াশেষে কর্মজীবন। কোন লোকাল ছেলেপেলে নাই? সব বাইরের নিতে হবে? আরে, এবার আমাদের নিজেদের ছেলেরা পাশ করেছে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেয়ার কি দরকার? আর কয়েন না, এক্সটারনাল একজন সাথে করে নিয়া আসছে, তার কথা না রাখলে ডিসেন্ট নোটের হুমকি দেয়। বাংলা নামের কাউকে কার্ডই পাঠানোর দরকার নাই। শিক্ষক হলাম। বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারদের এক গ্রুপ, পাক্ষিক মিটিং করে, ক্যান্টিনে অন্য কারো সাথে টেবিলে বসে না। শাহজালাল থেকে পাস করে মাস্টার হওয়া আবালদের কারো কারো সহ্য হয় না। আওয়ামী সরকার আসে তো আবার সব বাংলা নামে ভরে যায়। খালি করলে ভরবে এই নিয়ম। যে 'সিনিয়র' শিক্ষকরা আবাল শিক্ষদের পোছত না, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে তারাই দেখি পিঠে হাত দিয়ে কথা বলেন। আমরা 'স্বপক্ষের; আর আমরা 'ধর্মীয় মুল্যবোধের' ধারক। কত ধরনের বিভাজন হতে পারে!
বিয়ে করব। বন্ধুর সূত্রে একজনের বৃন্তান্ত শুনে উপযোগী মনে হল। নোয়াখাইল্যা বিয়া করবা? কোথায় যাব? শেষমেশ বিয়ে হয়েই যায়। প্রবাসে আসি। গায়ের রঙ হয়ত লুকানো যায়, কিন্তু ভাষা রপ্ত করা কঠিন। তার চেয়ে কঠিন কোনটা রুড আর কোনটা গ্রহণযোগ্য সেটা বুঝতে। সেটাও একসময় আয়ত্বে আসে। প্লেনে চড়ে কোথাও যেতে হবে: এক্সকিউজ মি স্যার, উই আর ডুইং এ রেন্ডম টেস্ট....। মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী একটা পার্কে যায়। সাদা মহিলা তার সন্তানদের সামলে সরিয়ে রাখেন। কী কথা!
তোমার নাম কী? মোহাম্মদ ....। ও ...এন্ড ইউ আর ফ্রম ..। হোয়ার আর ইউ অরিজিনালি ফ্রম?
গো ব্যাক টু হোয়ার ইউ কেম ফ্রম।
আমরা কে কোথা থেকে এসেছি, কোথায় ফেরত যাব?
মন্তব্য
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
হোয়ার আর ইউ অরিজিনালি ফ্রম?
এই প্রশ্ন উল্টা তারে করলে সে কি জবাব দিবে? বা দিতে পারবে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
সেটার কমন উত্তর হয়: আই বিলঙ হিয়ার।
অনেক কঠিন হয়ে গেছে জীবন এখন তাই না?
ফাইন লেখছেন, ভাল লাগলো
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
এই কথাটার বাংলা জানি
যাও বাড়ি গিয়া হালচাষ করো। এইখানে মরতে আইছ কোন দুঃখে?
হালচাষ কি ভাইয়া?
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
খুবই ভাল লাগলো লেখাটা। আমাদের অনেকের জীবনের গল্পগুলো বলে দিলেন এক লেখায়।
অল্পকথায় অনেক জীবন। বেশ ভাল্লাগলো।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
ভাল লাগল।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
হুমম আসলেই এই রেসিজম বেপারটা সব জাগাতেই, দেশে বলেন আর বিদেশেই বলেন, ভাল লিখেছেন
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
যখন ছোট ছিলাম লাল পিপড়া দেখলে পিষে মারতাম হিন্দু বলে _ হুজুরের কথামতো আর কালো পিপড়েকে বহু কসরত করে পানি থেকেও উদ্ধার করতাম মুসলমান পিপড়ে বলে--------- ভাগাভাগির সংস্কৃতির মুক্তির পথতো সংস্কৃতিবান মানুষও অনেকসময় জানেন না জিনগত কারণে হয়তো ---------তাই---------
টিকে থাকুন --------- এটুকুই জায়গা নেবার জন্য যথেষ্ঠ!
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
অসাধারণ একটা লেখা।
মনে নাড়া দিয়ে যাবার মতো।
এই যে ছোটবেলায় ব্রেইন ওয়াশের শুরু, লাল পিঁপড়া-কালো পিঁপড়া, গরু-শূকর, পড়াশুনায় ভালো করলে গুড বয়- না করলে ব্যাড বয়, এইসবেরই পরিণতি বড়বেলার আম্বালীগ-বিনপি, সাদাদল-নীলদল, শাহজালাল-বুয়েট।
আমার তো মনে হয়, সবই এক সূত্রে গাঁথা।
শুরুটাই যতো নষ্টের মূলে। যে পরিবেশে বড় হয়েছি, তার আলো-বাতাসই সবকিছুর পেছনে।
আহ ঈশ্বর, আমাদের ক্ষোভ কি তোমাকে স্পর্শ করে?
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
-- প্রথমবার লেখাটা পড়ে শেষ লাইনটায় এসে যা মনে পড়লো তা হলো হোয়াট দ্য ব্লীপ ডু উই নো ছবির একটা ট্র্যাক, 'হোয়ার উই গো ফ্রম হিয়ার"।
পরেরবার পড়ে হাফেজী হুজুরের বট গাছ মার্কার কথা মনে পড়লো!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন