আছি এখন দৌড়ের উপর

আলমগীর এর ছবি
লিখেছেন আলমগীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ৩১/০৭/২০০৮ - ৮:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১. মাঘের শীতে বামনে কাঁথা বেচে
এটা প্রবাদ, ছোট বেলায় শোনা। খুব শীত পড়লে একসময় সুন্দরবনের সব বাঘ মরে সাফা- এ কথাও ঠাট্টা করে বলতাম। এসব কথা মনে আসার কারণ মেলবোর্নে এবার বেজায় শীত। এ দেশে আছি প্রায় পাঁচ বছর, এত শীত কখনো পড়েনি। গত বছর, শহর থেকে ১০কিলোর মতো দূরে একদিন হঠাৎ করে তুষার পড়ে; এবার তেমনটি শোনা যায়নি। তবে ওভারনাইট তাপমাত্রা তিন-চারে নেমে যায় এটা জানি। গত দু'রাত ছিলো ঠাণ্ডার একশেষ। এদেশে বাড়ী-ঘর কাঠের তৈরি। তবু রাতে হিটার চালিয়ে ঘুমাই, তাই ততটা শীত টের পাইনা। কিন্তু সকালে মেয়েকে স্কুলে দিতে যাব, দেখি গাড়ীর ছাদে কুচি কুচি বরফ! আজ তুলনামূলক একটু আরাম।

শীতের মৌসুমে স্কি-রিসোর্টগুলো জমজমাট থাকে। বেশ কবার গিয়েছি, তবে রাতে থাকা হয়নি কখনো। একবার স্কি করার একটা চেষ্টাও দিয়েছিলাম। ওস্তাদ ছিলেন আমার সুপারভাইজার। এ ব্যাটা আসলেই ওস্তাদ। তার প্রধান শখ স্কি করা। গত দু-সপ্তাহ ধরে এক সপ্তাহ অন্তর সে চলে যাচ্ছে স্কি করতে। শনিবার সকালে যায়, পুরো এক সপ্তাহ কাটিয়ে পরের রোববার ফিরে আসে। এভাবে অন্তত আরো একমাস চলবে। এবার আমিও ভাবছিলাম একটু রাত্রিযাপন করা যায় কিনা। আমার বৌর ঠাণ্ডা বেশী ধরে, তাই কিছু বিশেষ কাপড়-চোপড়ও কিনলাম। কিন্তু রাতে থাকব এমন হোটেলের ভাড়া খুঁজতে গিয়ে টাসকি খেলাম। দুরাতের কম কোন প্যাকেজ নেই, ভাড়া $৭০০ থেকে শুরু। পুরো সপ্তাহ থাকলে গড়ে কিছু কম পড়ে। নাহ, এবারও আর রাত্রিযাপন হবে না। একদিন দিনে গিয়ে দিনে চলে আসব।

২. আছি দৌড়ের উপর
ঠিক সময়ে ঠিক কাজ করলে এখন আমার পিএইচডি শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু একবার সামার ব্রেকে আমার সুপারভাইজার গেলেন সুইডেন। আমি সে সুযোগে মেলবোর্নের সব ভ্যারেন্ডা ভেজে শেষ করে ফেললাম। তারপর গত বছর আবার গেলেন ৬মাসের জন্য। সেবারও আমি অফিসে বসে ঝিমাই, বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারি, হেন তেন, পড়াশোনা বাদে সব কাজ। এর মাঝে কিছু ব্যক্তিগত ঝামেলাও ছিল। এবছর জান যায় যায় অবস্থা। তবে আউটপুট ভাল। মে মাসে একটা পেপার দিয়েছিলাম, অ্যাকসেপ্ট হয়েছে। কনফারেন্স হবে আইসল্যান্ডের রেজাভেক। খোঁজ নিয়ে দেখলাম খুবই সুন্দর জায়গা। যাবার ইচ্ছা আধা-আধি। কারণ বিশদ। শেষ অবধি এক পোস্টডককে পাঠাতে হবে, অথর লিস্টে খামোখা তার নাম দিয়ে। ডিসেম্বরে গোল্ডকোস্টে আরেকটা কনফারেন্স আছে, সেটার জন্য পেপার লিখছি। জমার তারিখ আগামী ৫ অগাস্ট। আরো বেশ কিছু কাজ হয়ে আছে, শুধু লিখতে হবে।

৩. লেবুরা কী আসলেই বদ
সপ্তাহে একদিন ব্যাডমিন্টন খেলি, ইউনির হলে। নিয়মিত হয় না, এ আসে তো ও আসে না। গত মাসে একদিনের কথা। আমাদের আগে কিছু লেবানি ফুটবল খেলেছে। পুরো হলে তিনটা কোর্ট, আমরা দুটোতে নেট লাগিয়েছি। এক লেবু এসে বলে তারা ওই খালি কোর্টে ফুটবল খেলবে। আমাদের একজন যেই না করল তো দেখার মতো এক দৃশ্য হলো। গালাগালি করে যা বলল তার অর্থ হলো, আগামি দিন যখন তারা খেলবে তাদের সময় শেষ হওয়ার এক সেকেন্ড আগেও আমরা হলে ঢুকতে পারব না। বেশ, ফেয়ার এনাফ।

আজ খেলার শেষ দিকে দেখি সেই গ্রুপের লোকজন ভীড় করছে। আমাদের সময় শেষের তখনও মিনিট পাঁচেক বাকী, তাদের একজন একটা করে লাইট নিভিয়ে দিচ্ছে। ঘটনা কী? তাদের গোলপোস্ট সেট করার জন্য সময় দিতে হবে। কী করা, সংখ্যায় বেশী তাই তর্কে আর গেলাম না। ওয়াল্লাহ ব্রাদার, ওয়াল্লাহ।

৪. ফিসফাস, ঘুসঘাস (অনিকেত আর রেনেটের লেখায় অনুপ্রাণিত হয়ে)
আমার রুমে আমি ছাড়া আরো দুজন মালেশিয়ান, একজন মিশরিয়, আর তিনজন ভারতীয়। মালেশিয়ান দুজন সুন্নতের উপর চলে, কারো সাতে পাঁচে নেই। মিশরিয় জন কখন থাকে তার কোন দিশা নেই। ভারতীয় তিনজন রসুনের মতো লেগে থাকে। তার প্রধান কারণ, তিনজনই চুরুট টানে। এ কাজ করার জন্য এই শীতের মধ্যেও তাদের বিল্ডিংএর বাইরে যেতে হয়, তাই তারা সদলবলে যায়। তাদের সাথে অনেক সময় দুজন লেকচারারকেও দেখা যায়, আর দেখা যায় আন্ডারগ্রেডের এক মেয়েকে।

আমি ছাড়া প্রায় সবাই ৬টা মধ্যে ফিরে যায়। তিন ভারতীয়ের একজনের সাথে ওই মেয়ের বিশেষ ভাব। আমি রাতে যখন অফিস ছাড়ি তখন তাদেরকে রেখে আসি, অনেক সময় ভোর ৮টায় গিয়েও তাদেরকে আবিষ্কার করি। ভদ্রলোক কায়দা করে এক কোণায় বসেন, তাও আবার একটা সোফায়। ডেস্কের তিনদিক বোর্ড দিয়ে পার্টিশনও করা। পেপার লেখার চাপে আজ অনেক রাত অবধি ছিলাম। এদুজনের উসখুস আর শেষ হয় না। বার কয়েক চুরুট টানতে যায়। কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনি তাই অন্য কিছু কানে আসে না হাসি একসময় অনেকটা বিড়ম্বনা বোধ করে আমি চলেই আসি।

৫. সচলায়তন
কারণ যাই হোক, সচলের একটা খারাপ সময় গেছে। লেখার উপরও সেটা প্রভাব ফেলেছে। কুক্ষণ যে কেটে গেছে তা বোঝা যাচ্ছে গত কদিনে প্রচুর চমৎকার লেখা দেখে। আমি দৌড়ের উপর আছি, ব্লগ লেখার সময় নেই, তাই মন্তব্যের উপরে দিয়ে চলে যাচ্ছি। এর মধ্যে দুএকটা বিষয়ে তর্কেও জড়িয়েছি, কিন্তু সময়-টানে আগাতে পারলাম না। ইচ্ছা রাখি পরে কিছু লেখার।

শেষ কথা, কেউ খেয়াল করেছেন কিনা সচলায়তনের গুগল পেজ ড়্যাঙ্ক এখন ৫। বাংলা কোন সাইটের জন্য এটা অভাবিত।

আপডেট, অগাস্ট ১: আজ দেখছি পেজড়্যাঙ্ক ৬!


মন্তব্য

রায়হান আবীর এর ছবি

দিনপঞ্জি পড়তে আমার বেশ লাগে। এক জায়গায় বসে আরেক জায়গা থেকে ঘুরে আসা। সেটা করার সুযোগ করে দেবার জন্য আপনাকে পঞ্চ তারকা।

---------------------------------
জানিনা জানবোনা... কোন স্কেলে গাইছে কোকিল
গুনিনা আমি গুনিনা...কার গালে কটা আছে তিল

নিঝুম এর ছবি

রায়হানের সাথে একমত । পড়তে পড়তে আমিও যেন আপনার সাথে ঘুরে ফিরে গেছি...
--------------------------------------------------------
... বাড়িতে বউ ছেলেমেয়ের গালি খাবেন, 'কীসের মুক্তিযোদ্ধা তুমি, কী দিয়েছ আমাদের'? তিনি তখন আবারো বাড়ির বাইরে যাবেন, আবারো কান পাতবেন, মা জননী কি ডাক দিল?

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

অনিকেত এর ছবি

দারুন হয়েছে বস!

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বেশ লাগল। আরেকটু বড় হলে ক্ষতি ছিল না হাসি

দ্রোহী এর ছবি

চমৎকার ব্লগরব্লগর!!!!!!!!!!


কী ব্লগার? ডরাইলা?

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

লেবুটা কে বা কারা?

আলমগীর এর ছবি

Lebanese দের সাদারা নাম দিয়েছে Lebos, আমরা আদর করে বলি লেবু।

রাফি এর ছবি

রায়হান আবীরের সাথে সর্বাংশে একমত। শুধু পঞ্চতারকাটা দিতে পারলাম না সাধ্য নাই বলে।
দিনপঞ্জির সিরিজ করে ফেলুন একটা।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

মুশফিকা মুমু এর ছবি

পড়ে ভাল লাগল, আসলেই লেবুরা বেশির ভাগই এমনই রগচটা টাইপের। আমিও থ্রেডবো তে যাওয়ার প্ল্যান করছিলাম কিন্তু এবার মনেহয় যাওয়া হবেনা মন খারাপ আপনার থিসিসের জন্য গুডলাক হাসি
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

চমৎকার দিনপঞ্জি।
রিসার্চ পেপার লেখা কখনও মজার, কখনও বিরক্তিকর। আমি গত ২ সপ্তাহ ধরে একটা পেপার লেখার চেষ্টা করছি, কোনো মোটিভেশন পাচ্ছি না, কাজের কোয়ালিটি দেখে নিজেই বিরক্ত হচ্ছি, এদিকে কামলার কাজ জমে পাহাড় হয়ে যাচ্ছে।

লেবুদেরকে শরবত বানিয়ে খেয়ে ফেলা যেতে পারে। হাসি
ফিসকাসের ভারতীয় নায়ক কি অফিসেই ঘুমায়? নায়িকারও তো একটা বাসা থাকার কথা। এই ফ্রি দেশে অফিসেই ফিসফাস করে অন্যদের ঘুম ভাঙানোর দরকার কি?

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

তানবীরা এর ছবি

লেবু, নামটা খুবই কিউট, শুনলেই কচলাইতে ইচ্হে করে।

এ্যারাবীয়ানদের থেকে হারামী কোন জাতি আছে কিনা পৃথিবীতে, সন্দেহ।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমি ঘুমের উপর আছি, তাই দেরি হয়ে গেল পড়তে। ভাল লেগেছে লেখাটা যথারীতি। পেজ র‌্যাঙ্কের ব্যাপারটা খেয়াল করিনি।


রাজাকার রাজা কার?
এক ভাগ তুমি আর তিন ভাগ আমার!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।