গ্রামীণ ফোনের মালিকানা হস্তান্তরে টেলিনর চুক্তি মানছে না এমন অভিযোগ করেছেন ড. ইউনুস। একই সাথে খবরের কাগজের ভাষ্যমতে তিনি মামলার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি। গ্রামীণফোনের ৬২% মালিকানা নরওয়ের টেলিনরের যেখানে নরওয়ে সরকারেরও শেয়ার আছে। বাকী ৩৮% গ্রামীণ টেলিকম (যার বোর্ডের চেয়াম্যান ড. ইউনুস)ও অন্যান্য গ্রামীণ সংস্থার। সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখে টেলিনরের সাথে মিটিং শেষে অসলোতে এক সাংবাদিক সমাবেশে ড. ইউনুস বিশেষ কিছু সুস্পষ্ট অভিযোগ আনেন টেলিনরের বিরুদ্ধে। সাথে এও বলেন এসব বিষয় নরওয়ের ঐতিহ্যের সাথে যায় না।
ড. ইউনুসের মূল অভিযোগগুলো হলো:
১. ১৯৯২ সালে যখন টেলিনরের সাথে চুক্তি হয় তখন চুক্তির শর্ত ছিল ৬ বৎসর পর কোম্পানির সব ভার স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে যাবে। টেলিনর এখন বলছে চুক্তির সে শর্ত মানা বাধ্যতামূলক না। গ্রামীণ পুরো মালিকানা পেলে গরীব মহিলাদের ভাগ্যের আরো পরিবর্তন হবে।
২. টেলিনরের "ব্যবসায়িক নীতি ও কর্পোরেট সংস্কৃতি" (business ethics and corporate governance) খারাপ এবং তা গ্রামীণের সাথে ঠিক যায় না। এর পক্ষে তিনি বলেছেন, গ্রামীণের সাপ্লায়াররা শিশুশ্রমিক খাটায়- টেলিনর সেটা সমাধান করেনি; টেলিনর যেনতেন উপায়ে মুনাফা করার জন্য অবৈধ ভিওআইপির সুযোগ করে দিয়েছে- এখন ধরা পরে বাংলাদেশ সরকারকে ৬০মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিয়েছে। টেলিনরের আরেক সংস্থা মালয়েশিয়া ভিত্তিক ডিজিটেল অবৈধ অর্থ লেনদেনে জড়িত- এমন রিপোর্ট পেয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের কাছ থেকে। এসব ঘটনা তার ব্যক্তিগত সুনাম ক্ষুণ্ণ করছে, পাশাপাশি গ্রামীণের সব অর্জন চাপা পড়ে যাচ্ছে।
৩. টেলিনর তাকে ঠিক কী হচ্ছে তা জানায় না।
এ বক্তব্যের পর পরই টেলিনর তাদের কথা প্রকাশ করে। এতে তারা ১ ও ২ সম্পর্কে বস্তুত কিছুই না বলে ৩ নং সম্পর্কে জানায় যে সব কিছুই তাকে সঠিক সময়ে জানানো হয়েছে, এবং গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সেসব অনুমোদনও করেছে। দিনে মিটিং এ ড. ইউনুসকে সন্তুষ্ট দেখে ঠিক সন্ধায় আবার এসব অভিযোগ করায় টেলিনর বরং উল্টো অবাক হয়েছে।
গ্রামীণ টেলিকমের সাথে টেলিনরের চুক্তিতে ঠিক কী আছে তা বলা মুশকিল। তেমনি মুশকিল গ্রামীণ টেলিকমের সাথে গ্রামীণ ব্যাংকের সম্পর্ক নিয়েও। তবে এই সম্পর্কটাই ড. ইউনুস গ্রামীণ ফোনের বিজ্ঞাপন হিসাবে ব্যবহার করেছেন; গ্রামীণ ফোন গরীবের ভাগ্য বদলে দিচ্ছে এরকম কাহিনী গ্রাহকরা বিশ্বাস করেছে। গ্রামীণ ফোন লাভজনক হওয়ার আগে পর্যন্ত ড. ইউনুস কিছু চাননি, কেবল নোবেল পাবার পর পরই জোর দিয়ে বলছেন যে টেলিনর গরীবের সব টাকা নিয়ে নিচ্ছে।
গ্রামীণ গ্রুপের যে ব্যবসায়িক নৈতিকতার কথা ড. ইউনুস বলছেন তাতে কিছুটা অসততা আছে। প্রথমত, গ্রামীণ ব্যাংকের উচ্চসুদ আর ঋণ আদায়ের জন্য পীড়নের অভিযোগ পুরোনো। গ্রামীণ সেসব অভিযোগের কোন জবাব দিতে পারেনি। গ্রামীণ ফোনের সাপ্লায়াররা শিশুশ্রমিক খাটায় এটা অনেক দূরের কথা। দ্বিতীয়ত ড. ইউনুস তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা থাকার সময় গ্রামীণের জন্য নিজে বেশ কিছু সুবিধা আদায় করে নেন। গ্রামীণের কোন যান-বাহন পুলিশ প্রশাসন রিকুইজিশন করতে পারবে না - এরকম ছোট একটা সুবিধা। তৃতীয়ত, গ্রামীণ সিটিসেলের সাথে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যায় মূলত আন্তজেলা ফাইবার যোগাযোগের জন্য। গ্রামীণ অনেকটা জলের দামে অন্যায্য চুক্তিতে রেলওয়ে থেকে সেটা বাগিয়ে নিয়েছে। বিনিময়ে গ্রামীণ রেলওয়ের সব কর্মকর্তাকে মাগনা ফোন দিয়েছে! এটা সম্ভবত এখনও চালু আছে। পরে সে ফাইবার অন্তত ২০গুণ দরে সাবলিজ দিয়েছে। ড. ইউনুস তখন সেটাকে অনৈতিক মনে করেননি। রেলওয়ের যেসব কর্মকর্তা গ্রামীণকে যারপরনাই 'সাহায্য' করেছে, তারা পরবর্তীতে গ্রামীণে যোগ দিয়েছে- উচ্চ বেতনে। কাজেই গ্রামীণ সব সময়, ড. ইউনুসের মতে 'উচ্চনীতিতে' চলেছে তা মানা যায় না।
আইটি বুমের সময়, এপটেক, এনএনআইটির মতো তারাও গ্রামীণ-স্টার খুলে বেকার লোকজনের পকেট কেটেছে। তাই ড. ইউনুসের দাবীমতো গ্রামীণ যে সব সময় মানুষের জন্য অব্যবসায়িক, অমুনাফাকর, জনকল্যাণমূলক কাজ (তারা ব্যবসা বলতে নারাজ) করেছে তাও না।
৯২ এ কেউ যেটা ভাবতে পারেনি, কেউ বড় ধরনের ঝুঁকি নেয়ার সাহস করেনি; টেলিনর সেসময় বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে গ্রামীণ ফোনকে করে গড়ে তুলেছে। এখন গ্রামীণ ফোন সবচেয়ে বড় কর-দাতা, বাংলাদেশ মোবাইল ব্যবহারে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশ। ড. ইউনুস এটার দখল নিবেনই নিবেন।
মন্তব্য
আজ প্রথম আলোর শেষ পাতায় পড়লাম খবরটা। খুব বিশ্লেষণে না যেয়েও এটুকু বলা যায়, ড: ইউনুসের আনীত অভিযোগের শিশুশ্রমের বিষয়টা যদি আসলেই সত্য হয়, তাহলে সেটা অত্যন্ত গুরুতর। আর গ্রামীণফোনের ফাইবার-কীর্তি তো সবারই জানা। ওই একটি ঘটনার জন্য রাতারাতি দেশের এক নম্বর মোবাইল অপারেটর হতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি ওদের। কিন্তু এটাও বলতে হয়, যে কায়দা করে শীর্ষে উঠেছে ওরা, সেই স্থান এখন ধরে রাখতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। নেটওয়ার্কের মান অত্যন্ত খারাপ হয়েছে, কল ড্রপের হার তো মনে হয় সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে, ভযেস কোয়ালিটিও আগের চেয়ে অনেক খারাপ। এখনো ওদের সার্ভিস বা অফার খুব একটা আকর্ষণীয় মনে হয় না। এই সুযোগে বাংলালিংক এতো কম সময়ে এতোটা এগিয়ে যেতে পেরেছে। এটা ঠিক গ্রামীণফোন দেশের সর্বোচ্চ করদাতা। কিন্তু এটাও চিন্তা করার মতো বিষয়, ওরা তাহলে কত টাকা নিজের দেশে পাঠায়! একাধিকবার ধরা পড়ার পরও অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা কিন্তু বন্ধ করেনি ওরা।
যাই হোক, আপনার লেখায় ড: ইউনুস ও গ্রামীণ ব্যাংকের কিছু বিষয় জানলাম। সর্বোপরি লেখাটা ভালো লেগেছে বেশ।
(২য় প্যারায় "ভোআইপি" আর ৪র্থ প্যারায় "মুলকিল" বানান দুটো শুধরে নিতে পারেন)
গ্রামীণের সাথে টেলেনরের কি চুক্তি হয়েছিল সেটা জানতে পারলে ভালো হতো। বাইরের দেশের একটা কোম্পানি তৃতীয় বিশ্বের একটা দেশে যেখানে তখনো মোবাইল কালচারটা তখনো অজনপ্রিয় এরকম দেশে টাকা ইনভেস্ট করার সময় মাত্র ৬বছরে মালিকানা হস্তান্তরের চুক্তিতে যাবে - এটা ঠিক বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। খরচের কারণে মোবাইল ফোন শুধু হাতে গোণা অল্প কিছু ব্যাবসায়ী মানুষের পকেটস্থ - এরকম সময়ে এতখানি রিস্ক ফ্যাক্টরে মাত্র ৬বছরে যথেষ্ট লাভ তুলে মালিকানা হস্তান্তর করে দেবে এরকম চুক্তি টেলেনর করে থাকলে তাদের ব্যবসায়ী বুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন জাগছে। (টেলেনরকে ডিফেন্ড করছি না, চুক্তির কথা যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে গ্রামীণের পক্ষ থেকে তার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি।)
তবে গ্রামীন ফোনের ভয়েস কোয়ালিটি জঘন্য। এ নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
যেখানে সারাদেশের "খোঁজ-খবর" রাখা সব জনগন জানতো যে, দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল কোম্পানীগুলির সবাই - গ্রামীন,একটেল,সিটিসেল সবাই অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় জড়িত, সেখানে ইউনুস সাহেব দাবি করছেন তিনি কিছুই জানেন না ?
নাকি লাভের গুড় মিষ্ট লাগে দেখে সেটা খেয়েছেন, এখন জরিমানার তিতা অংশটুকু খাবেন না ? মনে তো হয় ইউনুস সাহেবেরই মামার বাড়ি।
উনি কি ভাবছেন নোবেল প্রাইজ পাওয়ার সাথে সাথে উনি একটা সত্যবাদিতার সার্টিফিকেটও পেয়ে গিয়েছেন, যে উনি যা বলবেন তাই আমরা মেনে নিবো ?
উনার মুখটা একটু সামলানো উচিত, আর কারো জন্য না হোক, নোবেল প্রাইজের মান সম্মানের জন্য।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আপনার তথ্যগুলিতে ভুল আছে। গ্রামীণফোনের স্বপ্নদ্রষ্ট্রা এবং প্রতিষ্ঠাতা বর্তমানে এমআইটির শিক্ষক ইকবাল কাদির। তিনিই টেলিনর, জাপানের মারুবেনী ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করে 'গ্রামীনফোন' প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রামীন ব্যাংককেও কাদির এ প্রজেক্টে যুক্ত করেন গ্রামীনের টাইটেল ব্যবহার করার জন্য বিশেষ করে গ্রামীনের মহিলা সদস্যদের কাছে ফোন সুবিধা পৌঁছে দেয়ার জন্য। রেলওয়ের ফাইবার অপটিক কেনার ব্যাপারেও সম্ভবত তিনিই ভূমিকা রাখেন। মারুবেনী ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পরবর্তীতে টেলিনরের কাছে শেয়ার বেচে চলে যায়। ফলশ্রুতিতে টেলিনর গ্রামীনফোনের ৬২ ভাগ মালিকানা এবং গ্রামীন ব্যাংক ৩৮ ভাগ মালিকানা পায়। কর্পোরেশনের নিয়মানুযায়ী যাদের হাতে মালিকানা বেশি থাকে তারাই প্রতিষ্ঠানের সব ডিসিশান নেয়। ফলে গ্রামীনফোনের ম্যানেজমেন্টে কর্মচারী নিয়োগ থেকে শুরু করে লাভের টাকা নরওয়েতে পাঠানো সবই মূলত টেলিনর নিয়ন্ত্রণ করে। ১৯৯৬ সালে ইউনুসের সাথে চুক্তি অনুযায়ী ৬ বছর পরে টেলিনর তাদের কিছু শেয়ার গ্রামীন ব্যাংকে বেচার মাধ্যমে এই কোম্পানীর নিয়ন্ত্রণ গ্রামীন টেলিকমকে দেয়ার কথা। গ্রামীন টেলিকম সম্পূর্ণ বাংলাদেশী মালিকানাধীন গ্রামীন ব্যাংকের একটি সাবসিডিয়ারি যারা পল্লী এলাকায় কাজ করে। এটা হলে গ্রামীণফোনের ম্যানেজমেন্টে বাংলাদেশী নাগরিক নিয়োগ থেকে শুরু করে গ্রামীণফোন যে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা নরওয়েতে পাঠায় সেটা বাংলাদেশেই থাকত। আর ইউনুস ব্যক্তিগতভাবে গ্রামীনফোনের বা গ্রামীণব্যাংকের কোন শেয়ারের মালিক না (গ্রামীণব্যাংকের শেয়ারের মালিক ব্যাংকের সব সদস্যরা)। কাজেই মালিক নরওয়ের বা বাংলাদেশের হলে আসলে ওনার কিছু আসে যায় না। বাংলাদেশের স্বার্থের জন্যই গ্রামীনফোনের মালিকানা বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানের হাতে হস্তান্তরের জন্য তিনি বলছেন। নিজেদের স্বার্থ বুঝে নিতেও দেখি আমাদের আপত্তি!
(এই পোস্টে আর কোন মন্তব্য করব না। ইউনুস নিয়ে দুই দিন পরপর ব্লগে ভ্যাজর ভ্যাজর করতে ভাল্লাগে না)
= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।
কোন তথ্যে কী ভুল আছে সেটা তো বললেন না। আমি উইকি পেজ লিখছি না যে আগাগোড়া সব কাহিনী লিখতে হবে। বা, কাহিনী না লিখলেই তথ্য ভুল হয়ে যাবে।
কত কোটি টাকা টেলিনর বিনিয়োগ করেছে আর কত কোটি টাকা নিয়ে গেছে তার একটা হিসাব দিন না। পৃথিবীর অন্য যে কোন দেশে সেটা করলে কি তারা রিটার্নটা পেত না?
তারপরও উইকি লিংক নিয়ে হাজির হয়েছেন সেজন্য ধন্যবাদ।
ড.ইউনূসের নাম নিয়েই অনেকে যে কটু মন্তব্যগুলো করা শুরু করেন, তখনই সন্দেহ হয়, আদৌ তাঁরা গ্রামীণ সম্পর্কে কতটুকু জানেন। অনেক কিছুই ভালোভাবে যাচাই না করে এরকম গড়পড়তা মন্তব্য করার ক্ষেত্রে অনেকেরই ঝোঁক দেখা যায়। এটা একটা খারাপ নজির।
তানভিরের মন্তব্য এখানে অত্যন্ত সৎ ও গুরুত্বপূর্ণ মনে হযেছে।
লেখক পোস্টে কোন্ নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এ মন্তব্যটি করলেন বুঝলাম না:
খুব সম্ভবত অভিযোগকারীর (এখানে অভিযোগকারী কারা সেটাও গুরুত্বপূর্ণ) অভিযোগটাই সবাই মনে রাখেন, উত্তরগুলো কেউ খোঁজেন না। বিখ্যাত ব্যক্তিদের বিরোধিতা করাই বিখ্যাত হবার সহজ পথ, এটা সৈয়দ মুজতবা আলীর কথা। আমাদের দেশের চরিত্রহীন রাজনীতির ধারক ও বাহক হিসেবে যারা মাঝে মাঝে উদ্দেশ্যমূলক ঠাউয়া মন্তব্য করেন, তাদের মন্তব্যে অনেকেই না বুঝে না শুনে প্রভাবিত হয়ে নিজেরাও সে পথে পা বাড়ান।
কেউ কি একটু হিসাব করে দেখাবেন, গ্রামীণের সুদ নিয়ে যে এতো কথা হচ্ছে, আসলে তা কী ? কীভাবে তা উচ্চসুদ হয়েছে ? পাশাপাশি অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বাস্তব অবস্থাটা কী ?
এটা যাচাই না করলে মন্তব্যের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অত্যন্ত স্বাভাবিক। ধারণার উপর মন্তব্য করার চেয়ে মন্তব্য না করাটাই বোধ হয় উত্তম। এতে অন্যান্য প্রাসঙ্গিকতাগুলোও অযথা প্রশ্নের সম্মুখীন হয় ।
একজন সচেতন নাগরিকের কৌতুহল থেকে তৈরিকৃত পোস্টের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি। তবে পোস্টের অভ্যন্তরস্ত মন্তব্যের যথার্থতা ও অস্পষ্টতাকেও এড়িয়ে যেতে পারছি না। ধন্যবাদ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
কটু কথা আমি আমার মন্তব্যে একটা বলছি।
আমি গ্রামীন ব্যাংকের সুদ নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমি শুধু বলতে চাই উনার করা দাবিটা নিয়ে।
যেখানে সারা বাংলাদেশের প্রচুর লোক জানেন যে মোবাইল কোম্পানীগুলি ভিওআইপি করে অঢেল অর্থ কামাচ্ছে, সেখানে উনি দাবি করতে চান উনি এ ব্যাপারে একদম অন্ধকারে ছিলেন ?
যে হাজার হাজার কোটি টাকা ইলিগ্যাল ভয়েস বিজনেসে লোপাট হলো, তার দায়দায়িত্ব কি তিনি এড়াতে পারেন ? ( অবশ্য "আমি তো জানতাম না" টাইপ উত্তর দিলে উনারে আর কিছু বলার থাকে না )
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আমাদের রাষ্ট্র বা সরকারের কিন্তু অনেক বিভাগ, অধিদপ্তর, গোয়েন্দা সংস্থা ইত্যাদি ইত্যাদি রয়েছে। যখন এসব ইলিগ্যাল ব্যবসাগুলো হচ্ছিলো, সরকার কি তখনি জানতে পেরেছে ? পরে জেনেছে তদন্তসাপেক্ষে এবং এজন্য জরিমানা আদায় করেছে। চুরি হয়ে গেলেই বিষয়টা নজরে আসে। না কি চোর জানান দিয়ে চুরি করতে আসে ?
ব্যক্তি ইউনূস চুরির সময়েই তা জেনে যাবেন এটা এভাবে ভাবছি কেন আমরা ? তিনি একজন বোর্ড মেম্বার। যেখানে যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ টেলিনরের হাতে এবং চুরিতে ধরা খেয়েছে বলেই এবার বোর্ড মিটিংএর সূচিতে তা স্থান পেয়েছে হয়তো। নইলে কি তা বোর্ড মিটিংএ উঠতো ? আর মিটিংএ হয়তো প্রফেসর ইউনূসের এতৎবিষয়ক কোন এজেন্ডাকে টেলিনর সংখ্যাগরিষ্টতার জোরে এড়িয়ে গেছে যা তাঁর সুনামের বিরুদ্ধে গেছে। এবং তিনি দেশ ও জাতির স্বার্থে বিষয়টাকে মিডিয়ায় তুলে ধরেছেন। আমরা কি এভাবে ভাবতে পারি না ? যেহেতু এইসব ব্যবসায় বা মালিকানার শেয়ারে ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের বিষয় জড়িত নয়, তাতে তাঁকে যেভাবে ব্যক্তিগত স্বার্থসংশ্লিষ্টতায় জড়িয়ে মন্তব্য করা হয, তা যে কেন করা হয় এটাই আমার কাছে খুবই কৌতূহল উদ্দীপক বিষয়।
হয়তো এগুলো একসময় বেরিয়ে আসবে। সময়ের অপেক্ষা। তখন এসব স্বেচ্ছাকৃত মন্তব্যের জন্য আমাদেরকে আবার ভৌতিক আত্মগ্লানিতে পুড়তে হয় কিনা কে জানে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
বসুদাদা,
একটু বা হাত ঢুকাই।
এই কথা কি সত্য?
(এইটা সম্ভবত পোস্টের মূল ফোকাসের বহির্ভূত। কিন্তু জানার ইচ্ছা থেকে ...)
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বলাইদা,
বাঁ হাত ডান হাত সব ঢুকিয়ে দিতে পারেন, কোন সমস্যা নেই।
যে উদ্ধৃতিটাকে ফোকাস বহির্ভূত বলছেন, আসলে ওটাও ফোকাস বহির্ভূত না। বিষয়টার সত্য অসত্য বিশ্লেষণে না গিয়েও সত্য ধরেই আমার বক্তব্যের মূল সুরটা ছিলো, এইসব যাকিছু ঘটনা, এতে ড.ইউনূসের ব্যক্তিগত লাভালাভের বিষয় কতোটা জড়িত ?
গ্রামীণ টেলিকম হচ্ছে গ্রামীণের একটা সংস্থা যা গ্রামীণ ফোনের মালিকানা শর্তে টেলিনরের সাথে গ্রামীণের প্রতিনিধিত্ব করে। আর গ্রামীণের মালিকানা শর্তে বর্তমানে সরকার সাত শতাংশ এবং গ্রামীণের গরীব সদস্যরা বাকী অংশের মালিক। এখানে ড.ইউনূসের ব্যক্তিগত কোন লাভালাভ জড়িত নয়। বরং তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন একজন বেতনভোগী হিসেবে। গ্রামীণের পরিচালনা বোর্ডে গরীব সদস্যদের মধ্য থেকে নয়জন সদস্য এবং তিনজন সরকার নিয়োজিত সদস্য রয়েছেন যাদের একজন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অনেকেই এমন কি মিডিয়াতেও ভুল করে ড. ইউনূসকেই চেয়ারম্যান হিসেবে কখনো কখনো উল্লেখ করা হয়ে থাকে। যাক্ বিষয়টা উত্থাপন করলাম আমার বক্তব্যটা পরিষ্কার করতে যে, যে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা প্রকৃতই ভূমিহীন বিত্তহীন দরিদ্রমানুষগুলোর, তাঁদের কল্যাণার্থে যদি সরকার থেকে বৈধ কোন সুবিধা যদি সহজশর্তে গ্রহণ করেও থাকেন, এটাকে আমরা এপ্রিসিয়েট করতে পারছি না কেন ?
কিছুসংখ্যক সুযোগসন্ধানী এবং ধর্মীয় মৌলবাদীদের স্বার্থসংশ্লিষ্টতাকে পোয়াবারো করতে গিয়ে যারা তাঁকে ভুলভাবে মিডিয়ায় উপস্থাপন করেছে, তারাও হয়তো ভাবতে পারে নাই যে এর প্রভাব এতোটা বিস্তৃত হয়ে দেখা দেবে।
রাষ্ট্রের সহায়সম্পদ যখন একশ্রেণীর চোর চোট্টা ঠগ বাটপাড় প্রতারক দুবৃত্তেরা লুটপাট করে নিচ্ছে, সেখানে গরীব মানুষদের জন্য কিছু বৈধসুবিধা গ্রহণকে আমরা যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিশ্লেষণে এগিয়ে এসেছি, তাতে করে আদতে এর লাভ কার পক্ষে যাবে বা যাচ্ছে তা কি আমরা কখনো তলিয়ে দেখেছি ?
যে কোন কিছু বিশ্লেষণ করতে মনে হয় প্রথমে আমাদেরকে চিহ্ণিত করতে হবে, এখানে উদ্দেশ্যটা কী, এর সুবিধা কার পক্ষে যাচ্ছে বা যাবে এবং কার পক্ষে যাওয়া উচিৎ।
ব্যক্তি ইউনূসের সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে, তিনি এ যাবৎ নিজের বা পরিবার পরিজন কারো নামে বেনামেও কোন জায়গা জমি বিত্তবেসাত অর্জনে মনোযোগ না দিয়ে বনের মোষ তাড়াতে ব্রতি হয়েছেন। যে রাষ্ট্রিয় সংস্কৃতির উত্তরাধিকার তিনি, তার কাজের সাথে এমন কি ব্যক্তিগত জীবনাচরণে এর কোন সঙ্গতি চোখে পড়ে না । ফলে আমরা কেউ বিশ্বাসই করতে পারি না যে এ কী করে সম্ভব ! অতএব তাঁকে যে জীবনকালে মোষের গুঁতো খেতে হবে এটা তিনি জানতেন কিনা জানি না। তবে গড়পড়তা বাঙালি চরিত্রে তিনি বেমানান বৈ কি !
শতাধিক বছর আগেই তো বিদ্যাসাগর বাঙালি চরিত বিশ্লেষণ করে গেছেন। 'আমি কি তার কোন উপকার করেছিলম ! সে কেন আমাকে গালাগালি করছে ?'
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
বসুদাদা,
আপনার চমৎকার উত্তরের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্তু গরীব লোকের স্পেশাল সুবিধার ব্যাখ্যাটা মানতে পারলাম না। বাংলাদেশে 'গরীব লোক' হলো ব্যবসায়ের একটা অন্যতম মাধ্যম। গ্রামীণও এরকম একটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, এটা কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠান নয়, ইউনুস সাহেবের নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কিছু যোগ হলো কিনা, সেটা গৌণ বিষয়।
সরকারের পরামর্শদাতা হিসেবে দরিদ্র মানুষের ডেফিনিশনে তিনি যে পক্ষপাতিত্ব করেছেন - গ্রামীণ সংশ্লিষ্টরাই দরিদ্র মানুষের সুবিধাটা পাচ্ছে - সেটা দৃষ্টিকটু।
ইউনুস সাবকে সম্ভবত আমিও গালাগালি করি। কারণ, তার এই অতি ভালোমানুষীতা। বলতে পারেন, এটা আমারও বাঙালি-স্বভাব। কিন্তু নিজের কোনো লাভ ছাড়াই তিনি পাবলিকের জন্য এতকিছু করে যাবেন, এটা একেবারেই 'অসম্ভব'। আর আমি হলাম শার্লক হোমসের ভক্ত। শার্লক হোমসের মতে, অসম্ভবকে বাদ দিয়ে যা অবশিষ্ট থাকে, তা যতোই অবাস্তব মনে হোক, সত্য হতে বাধ্য। এখানেই হিসেবের গন্ডগোলটা বাধে।
ইউনুস সাব যখন পলিটিক্সে আসতে চাইছিলেন, তখন ব্যাপারটার সত্যাসত্য যাচাইয়ের একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিলো। দুর্ভাগ্যবশত, তিনি পিছিয়ে যান। তার পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে আমি একজন ব্যবসায়ীর চুলচেরা লাভ-ক্ষতির হিসেব হিসেবে দেখেছি। ইমেডিয়েট সাফল্যের অনিশ্চয়তায় তিনি নিজেকে বিনিয়োগ করতে চান নি। এই চরিত্রটা দরিদ্র মানুষের জন্য নিজেকে উজাড় করা মানুষের সাথে যায় না, একেবারেই যায় না।
তাই তার সমস্ত কর্মকান্ড যখন স্রেফ জনসেবা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা চলে, তখন খুব সন্দেহ জাগে-'অসম্ভব' বাস্তব হওয়া সম্ভব নয় বলে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আপনি ঠিক কতটুকু অবগত এই চোরাই ব্যবসার ব্যাপারে আমি জানি না। বিটিআরসি - বিটিটিবি র প্রতিটা চেয়ার টেবিল পর্যন্ত জানে দেশে এই ব্যবসা হয়। এগুলো নিয়ে পেপারে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। প্রথমে রাস্তাটা দেখিয়েছিলো আওয়ামী মন্ত্রী নাসিম, পরবর্তীতে যুবরাজ এবং তার বন্ধুরা কমিশনের বিনিময়ে এ ব্যবসা চালিয়েছে। এসব সত্যের আরেক নামই ওপেন সিক্রেট।
আপনি কি এর পরও দাবী করেন যে ইউনুস সাহেব জানতেন না যে গ্রামীন ফোন এইসব কাজ করে ? সেক্ষেত্রে গ্রামীন ফোন দিয়ে এস এম এস করা যায় কি না, সেটাও বোধহয় তিনি জানতেন না।
আগেই তো বললাম, জেগে জেগে ঘুমালে কেউ তো জাগাতে পারবে না। কিন্তু ইউনুস সাহেব জানতেন কি না, এটা বোঝার জন্য মনে হয় নোবেল পাওয়ার দরকার নেই, সামান্য চিন্তা করলেই এর উত্তর আমরা পেয়ে যাবো।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
দাদা
যুক্তির অভাবে কেউ কথার প্যাঁচ দিলে ভাল লাগে না।
গ্রামীণের কো-ল্যাটারাল লোনের পদ্ধতিই অনৈতিক। সুদের ইফেক্টিভ হার কত তা আপনি ভাল জানেন।
উনুচ সাব মধ্যপ্রাচ্যে জন্মাইলে নিশ্চিত নবীরসুল হইতেন। বাঙালিই তার কদর বুঝলো না।
টেলিনরের সাথে এই ঘটনাগুলো যতো প্রকাশিত হয়, ততোই মঙ্গল। পাবলিক এগুলো সম্পর্কে কিছুই জানে না। মাঝখানে বিদেশী বিনিয়োগের মুলা ঝুলিয়ে দেশের জনগণের পকেট কেটে উন্নত বিশ্বে টাকা পাচার হয়। এই পাচারে সহযোগিতা করেন আমাদের নবীরসুলরা।
উনুচ সাব ব্যবসায়টা ভালো বুঝেন। তত্ত্ব সরকারের পরামর্শদাতা থাকা অবস্থায়ও তিনি নিজের বিজনেসের জন্য আখের গুছিয়েছেন। ব্রাভো!
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
কারো সম্পর্কে ধারণার উপর ভিত্তি করে মন্তব্য করতে চাইনা। নিজের যুক্তি অনেকসময় শক্ত মনে হলেও সেখানে খাঁদ থাকতে পারে। আর সামগ্রিক বিষয় সম্পর্কে জানা না থাকলে অনেকের সম্পর্কেই অনেককিছু বলা যায়।
ধরে নেই ড. ইউনুস আগে থেকেই এসব জানতেন এবং নীরবে সায় দিয়ে গেছেন আর এখন ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করছেন।
তাই যদি হবে তাহলে আমার মাথায় আসেনা উনি কি এতটাই বোকা যে মানুষ তার এই ভালোমানুষি সাজার চেষ্টা ধরতে পারবেনা?
এতোটা বোকা না চালাক, সেটা তো আমার পক্ষে বলা সম্ভব না।
যেখানে অনেকেই জানতেন যে, দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল কোম্পানীগুলির যোগসাজশে এই ব্যবসা হয়, উনি কি সেই গুজবটুকু শুনতে পান নি ? উনি খোঁজ নেননি, উনি যে কোম্পানীর সাথে সংশ্লিষ্ট, তারা এর সাথে জড়িত কি না ? নাকি খোঁজ নেওয়ার পরও উনার মাপের মানুষ সত্যটা জানতে পারেননি ? সে সত্য উনি জেনেছেন এই দেশের দ্বিতীয় সারির মাথার গোয়েন্দা পুলিশের অনুসন্ধানের পর ?
বলুন, আপনি নিজে কি এটা বিশ্বাস করতে পারেন ?
তবে তিনি যদি সত্যিই নৈতিকতার তাড়নায় ভিওআইপির বিরুদ্ধে বলে থাকেন, তবে তা কেন আজ থেকে পাঁচ-ছয় বছর আগে বললেন না ?
লাভের অংশ শেষ হওয়ার পর অন্যায়ের প্রতিবাদ কিন্তু আমরা সবাই করতে পারি
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
গ্রামীণ প্রথমে বলেছিল তারা সেবা প্রতিষ্ঠান। এখন ব্যবসাটা ভালই দেখা যাচ্ছে। ক্ষুদ্রঋণ রাজনৈতিকভাবে গ্রামাঞ্চলে উৎপাদন বিকাশের প্রধান কর্মসূচি ভূমিসংস্কারের কর্মসূচি ও দাবিকে হঠিয়ে দিতে পেরেছে। বিদ্যমান মালিকানা ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রেখে গ্রামাঞ্চলে পুঁজির বিস্তার ঘটানোয় এর কার্যকারিতা মোক্ষম। অথচ ভূমি সংস্কার ছাড়া উন্নতি করেছে এমন একটা দৃষ্ঠান্ত পৃথিবীতে নেই।
যেখানে ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি মধ্যবিত্তদের ১১/১২ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়ে থাকে, সেখানে একজন কৃষক বা ভূমিহীনকে কেন কমপক্ষে ২০ শতাংশ সুদ দিতে হবে। কী কারণে একে গরিববিদ্বেষী ব্যাংকিং বলা হবে না?
গ্রামীণ/প্রশিকা প্রভৃতিরা সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংক, পিকেএস এবং আইএমএফের ভ্রাতা আইএফসি প্রভৃতি ঋণদানকারী সংস্থা এবং বিভিন্ন বিদেশি সরকারের কাছ থেকে প্রায় বিনাসুদে বা ১/২ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে থাকে। সেটাই আবার সে চক্রবৃদ্ধি হারে গরিব মানুষের মধ্যে খাটায় ২০-৩০ শতাংশ হারে। বিষয়টা কি সরাসরি অন্যায় ও শোষণ নয়?
এ বিষয়ে একটি গবেষণার সারংক্ষেপ পাবেন এখানে । এছাড়া sarah djerdingএর micro credit নামের গবেষণাটিও গুগুল থেকে খুঁজে দেখতে পারেন।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
কিছুক্ষণ আগে ফারুক ওয়াসিফ ভাই আপনার পোস্টে নীচের মন্তব্যটাই করে এসেছি @
উদ্ধৃতি
গ্রামীণ/প্রশিকা প্রভৃতিরা সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংক, পিকেএস এবং আইএমএফের ভ্রাতা আইএফসি প্রভৃতি ঋণদানকারী সংস্থা এবং বিভিন্ন বিদেশি সরকারের কাছ থেকে প্রায় বিনাসুদে বা ১/২ শতাংশ সুদে ঋণ পেয়ে থাকে। সেটাই আবার তারা চক্রবৃদ্ধি হারে গরিব মানুষের মধ্যে ২০-৩০ শতাংশ হারে খাটায় । বিষয়টা কি সরাসরি অন্যায় ও শোষণ নয়?
ফারুক ভাই, আপনার উদ্ধৃত মন্তব্যের সূত্র ধরে কিঞ্চিৎ মন্তব্য করছি।
মাওলা ব্রাদার্স থেকে জুন ২০০৫ এ প্রকাশিত 'গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার জীবন' নামের (ফরাসি ভাষায় রচিত VERS UN MONDE SANS PAUVRETE- এর ইলা লাহিড়ী ও জয়ন্ত লাহিড়ীর বঙ্গানুবাদকৃত মুহাম্মদ ইউনূসের আত্মজীবনী) যে বইটি বেরিয়েছে তার বাংলাদেশ সংস্করণের ভূমিকায় মুহাম্মদ ইউনূসের জবানীতে বলা হয়েছে যে, 'গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৯৫ সাল থেকে নতুনভাবে বিদেশি কোনও সাহায্য নেয়নি। যে সাহায্য পাইপ লাইনে ছিল তা ১৯৯৮ সনে শেষ হযেছে। গ্রামীণ ব্যাংক আমানত এবং নিজস্ব সম্পদের ওপর ভিত্তি করেই তার কার্যক্রম চালায়। ভবিষ্যতে আর কোনওদিন তাকে কোন দেশি বা বিদেশি ঋণ গ্রহণ করতে হবে না।' সে প্রেক্ষিতে পিকেএসএফ বা আইএমএফ থেকে গ্রামীণের ঋণ নেয়ার বিষয়টা কি ঠিক ?
গ্রামীণ ব্যাংক সর্বসাধারণ থেকে আমানত সংগ্রহ করে থাকে। এসব আমানত সুবিধার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৮.৫০শতাংশ প্রদেয় সুদে সঞ্চয়ী আমানত হিসাব, ১০ থেকে ১২ শতাংশ হারে মেয়াদী আমানত হিসাব এবং ৭ বছরে দ্বিগুণ মেয়াদী আমানত হিসাব। এ ছাড়া ব্যাংকের দরিদ্র সদস্যদের জন্য আরেকটি প্রদত্ত সুবিধা হলো জিপিএস বা গ্রামীণ পেনশন স্কীম।
বইটির ভূমিকায় কিছু স্ট্যাটিসটিক্যাল ডাটাও দেয়া আছে। আমানত জমার পরিমাণ, ঋণ বিতরণের পরিমান ইত্যাদি। কিন্তু উল্লেখযোগ্য একটি বাক্যে দৃষ্টি আটকে যায়- 'গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার সরকারি ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের সুদের চাইতে কম।'
সরকারি ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে সুদের হার কত আমার জানা নেই। তবে গ্রামীণ ব্যাংকে সহজ ঋণের ক্ষেত্রে এই হার ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতিতে ২০ শতাংশ সরল সুদ। অর্থাৎ ১০০০ টাকা ঋণ নিয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধ করলে বছর শেষে সুদ হয় ১০০ টাকা। এ ছাড়া ৮ শতাংশ সরল সুদে গৃহঋণ। এবং ৫ শতাংশ সরল সুদে শিক্ষা ঋণ, যা শিক্ষা সমাপ্তির পর থেকে কাউণ্ট হয় ; শিক্ষাচলাকালীন এই হার শূণ্য শতাংশ। এক্ষেত্রে আপনার চক্রবৃদ্ধি হারের মন্তব্যটির সাথে আমার অভিজ্ঞতা কণ্ট্রাডিক্ট করছে।
দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ক্ষুদ্রঋণের একচ্ছত্র প্রভাব রয়েছে এমন কথা নিশ্চয়ই ড.ইউনূসও বলেন না। তাঁর বক্তব্য, এটা দারিদ্র্য বিমোচনে অন্যতম হাতিয়ার।
কেবল হাতিয়ার থাকলেই যুদ্ধ জয় করা যায় না নিশ্চয়ই। এর জন্য আরো যে সব শর্ত আবশ্যক সেগুলোও যদি গ্রামীণ ব্যাংক বা এনজিও গুলোকেই পূরণ করতে হয়, তাহলে আর রাষ্ট্রের প্রয়োজন কী ? এটা ওদের হাতে ছেড়ে দিলেই হয়।
রাষ্ট্র যেখানে সামর্থহীন দরিদ্র জনগোষ্টীকে বিনাজামানতে ব্যাংকিং সুবিধা দিতে অক্ষম, সেখানে এরা এটা করছে। এখানে রাষ্ট্রের কি কোনো দায়িত্ব নেই ? ওই গরীব মানুষগুলো কি বানের জলে ভেসে এসেছে ? এরা কি রাষ্ট্রের নাগরিক নয় ?
এ বিষয়গুলো অবশ্যই ব্যাপক আলোচনায় আসা প্রয়োজন।
অনেক ধন্যবাদ, এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় নিয়ে আসার জন্য। আসলে বিষয়টার বিস্তৃতি এতোই ব্যাপক যে সংক্ষেপে বা মন্তব্য আকারে তা খোলাশা করা সম্ভব নয়।
আর হাঁ, গ্রামীণ ব্যাংক কিন্তু এনজিও নয়। ১৯৮৩সালের সংসদীয় অধ্যাদেশ বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাধীন একটা বিশেষায়িত ব্যাংক। আলোচনা করতে গেলে এ বিষয়টাও আমাদের মনে রাখা জরুরি।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
স্রেফ কয়েক মুহুর্তের জন্য "ড: ইউনুস, গ্রামীণ ব্যাংকের 'চড়া' সুদ, লাভের গুড় খাওয়া", এইসব ভুলে গিয়ে আমরা কেন এটুকু চিন্তা করছি না, টেলিনর চুক্তিমোতাবেক তার শেয়ার হস্তান্তর করলে আমাদের দেশের কি লাভ হবে!
_________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
টেলিনর হস্তান্তর করবে মানে? গ্রামীণের মুরোদ থাকলে সেই ৬২% মালিকানা কিনে নিতে হবে। সেটা টাকার অংকে কত এবং গ্রামীণ টেলিকমের সেই টাকা আছে কিনা, না থাকলে কোথা থেকে ঋণ আসবে, সেই ঋণের সুদ আবার কে দিবে? এত বড় প্রতিষ্ঠান লাভজনকভাবে কে চালাতে পারবে?
সবশেষে কার কী অর্জন হবে?
উঁহু, আলমগীর ভাই, সমস্যা বাকি ১৩% শেয়ার নিয়ে। খুব সম্ভবত ওটাই কথা ছিলো যে নির্দিষ্ট সময় পরে টেলিনর টেলিকমকে সংখ্যাগড়িষ্টতায় মোট ৫১% শেয়ারের মালিকানা হস্তান্তর করবে। এরা জেণ্টলম্যান এগ্রিম্যাণ্ট ভঙ্গ করেছে। বহুজাতিক বেনিয়া না এরা ! মুনাফার বাইরে এরা কিছুই বুঝে না।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রণদীপ দা
আমরা মনে হয় শেয়ার (share) আর অংশীদারিত্ব/মালিকানা (stake) এক করে ফেলছি। গ্রামীণ ফোন স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত কোন পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি না।
বেনিয়ারা তো বাণিজ্য বুঝবেই, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
গ্রামীণ (এই শব্দটা গুরুত্বপূর্ণ), ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আদালত, ডাব্লিউপিপিএফ, আমেরিকা ইত্যাদি ডামাডোলে একটা জিনিস হারিয়ে গেছে, এবং চিরতরেই হারিয়ে গেছে। এজন্য দেশ-বিদেশের পূজারী এবং পূজার প্রসাদ গ্রহণকারীরা ধন্যবাদ পেতেই পারেন।
সেই সাথে বিষয়টা কিছুটা অবাক করেছে। আমি আশা করেছিলাম কোন না কোন পত্রিকায় একটা সিরিজ লেখা আসবে। (মজার কিছু ব্যাপার আছে, যেমন, স্বপ্নদ্রষ্টা এবং ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার ইকবাল কাদির ১৯৯৪তে থেকেই কাজ শুরু করে, তখন টেলিনর ছিলনা, মূল পার্টানার ছিল সুইডিশ টেলিয়া, সিটিলেস এক্লুসিভ রাইটের জন্য দুবছরের জন্য ইঞ্জাংকশন নিয়ে আসে। টেলিয়া চলে যায়। পরে আওয়ামীলীগের আমলে লাইসেন্স পায় গ্রামীণ।
লাইসেন্স পাওয়ার মূল সেলিং পয়েন্ট ছিল – টেলিফোন প্রতিষ্ঠান গরীবদের মালিকানা।
একটা কথা, গ্রামীণ-টেলিকমে (গ্রামীণ ফোনের ৩৮ শতাংশের মালিক), গ্রামীন ব্যংকের কোন মালিকানা নেই (নন-স্টক, নন প্রফিট লিমিটেড বাই গ্যারান্ট)। গ্রামীণ-টেলিকমে ইনভেস্টের টাকা ৠণ এবং এইড থেকে এসেছে – গ্যারান্টর গ্রামীণ ব্যাঙ্ক। মূল কনসেপ্ট পল্লীফোনের গ্রস আয়ের ৫০% গ্রামীন টেলিকম পেত এবং পায়। কথা ছিল, এই গ্রামীণ টেলিকমকে কনভার্ট করে ~গরীব লোকদের মালিকানা~ নিশ্চিত করা।
ইকবাল কাদির তাঁর স্বপ্ন ব্যাখ্যা করছেন
উপরে লেখাটাতে তানভীরের মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তিনিও অনেক অন্তর্জাতিক সংস্থার মত গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এবং গ্রামীণ টেলিকমকে ইন্টারচেঞ্জিবলি ব্যবহার করেছেন। আবার সাবসিডিয়ারীও বলেছেন (যার অর্থ ৫০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ মালিকানা [হোললি ওউনড সাবসিডিয়ারি]
গরীব লোকজনের মালিকান…।
আচ্ছা, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নবেল ভাষণের একটা প্যারা দেখি,
…. Grameen Phone is a joint-venture company owned by Telenor of Norway and Grameen Telecom of Bangladesh. Telenor owns 62 per cent share of the company, Grameen Telecom owns 38 per cent. Our vision was to ultimately convert this company into a social business by giving majority ownership to the poor women of Grameen Bank. We are working towards that goal. Someday Grameen Phone will become another example of a big enterprise owned by the poor.
সূত্র
সিএনএন মানির একটা রিপোর্ট দেখি
…. While in Oslo, Yunus says he intends to point out the irony that the country that is awarding him the Nobel Prize for his pioneering work on microcredit is also home to a state-controlled company, Telenor, which he says refuses to honor an agreement to allow Yunus's nonprofit Grameen Bank to take majority control of their joint mobile-phone venture.
…. Its 2005 revenues of $433 million, up 50 percent over the previous year, are forecast to increase again to $580 million this year.
Grameen Phone was created in 1996 as a joint venture between Telenor, Grameen Bank and two minor partners, which have since been bought out. Telenor now holds a 62 percent share of the company, with Grameen Telecom, a unit of Grameen Bank, holding the remaining 38 percent.
সূত্র
রয়টারের ২০০৮ এর একটা রিপোর্ট দেখি
Yunus, who won the 2006 Nobel Peace Prize with his Grameen Bank for lifting millions out of poverty, says a 1996 agreement with Telenor stipulates that control of Grameenphone must eventually be handed over to the poor of Bangladesh, meaning Grameen Telecom. (Reporting by John Acher; editing by John Wallace)
সূত্র
নতুন মন্তব্য করুন