চর্বিত চর্বণ বা ক্যাশিং

আলমগীর এর ছবি
লিখেছেন আলমগীর (তারিখ: শুক্র, ২৪/১০/২০০৮ - ৬:৩৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক কথা বার বার শুনলে মেজাজ চড়ে যায়, ঘুরে-ফিরে এক জিনিস দেখতেও কারো ভাল লাগে না। ঘরে প্রতিদিন একই খাবার রান্না হলে খবরই আছে। এক রাস্তায় বেশী ঘোরাঘুরি করলে মুরব্বিরা সন্দেহ করেন। দৈনন্দিন জীবনে বৈচিত্র চাই, নিত্য দরকার নতুন কিছু।

নিত্যবৈচিত্রপিয়াসী এই আমরাই আবার কিছু কিছু বিষয়ে পছন্দ মেনে চলি। যেমন ধরুন, পছন্দের শার্টটা মাঝে-মধ্যেই পরি, প্রিয় একটা গান বারবার শুনি। আর প্রায় সবারই একটা, 'দুনিয়া জুড়া পচুর গিয়াঞ্জাম' ধরনের প্রিয় বাক্য থাকে। অনেক কবি-সাহিত্যিকদের আবার প্রিয় শব্দও থাকে যেগুলো তারা হর-হামেশা ব্যবহার করে থাকেন।

বাংলা অভিধানে যদি এক হাজার শব্দ থাকে, তবে তার ক্ষুদ্র একটা অংশ আমরা খুব বেশী ব্যবহার করি। একই কথা বর্ণমালার জন্য প্রযোজ্য: বিশেষ কয়েকটা বর্ণের প্রতি আমরা খুবই দুর্বল, আর কিছু আছে যাদের হয়ত ভুলেই গেছি।

কম্পিউটার প্রোগ্রামের বেলাতেও এরকম একটা ব্যাপার ঘটে। কোন একটা প্রোগ্রামের খুব ছোট্ট একটা অংশ ঘুরে-ফিরে বার-বার কাজ করে, আর বাকী অংশ তেমন কাজেই লাগে না। অ্যামডাল নামের একজনের একটা ভোঁতা সূত্রও আছে এ বিষয়ে।
"একটা প্রোগ্রামের মাত্র ১০ শতাংশ কোড ৯০ শতাংশ সময় জুড়ে কাজ করে"।

এটাকে সোজা বাংলায় ভেঙে বলা যায়, অভিধানের এক হাজার শব্দের মাত্র ১০%, অর্থাৎ ১০০ শব্দ আমরা আমাদের কথাবার্তার ৯০% সময় প্রয়োগ করি। বাকী ৯০০ শব্দের ভাগ্য খুবই খারাপ, কালে-ভদ্রে, মানে ১০% সময় তাদের ডাক পড়ে।

এই একই জিনিস/শব্দ বারবার ব্যবহারের বিষয়টাকে খুব কাজের কাজে লাগানো যায়। যেমন, যে শব্দগুলো খুব বেশী বলি সেগুলো একেবারে জিহ্বার আগায় রেখে দেয়া হাসি বা, যে জামা-জুতো অহরহ দরকার হয় তা একদম হাতের কাছে রাখা।

কম্পিউটার পরিভাষায় এটার নাম ক্যাশিং। কম্পউটারে, হার্ডডিস্ক, সাধারণ মেমরি ছাড়াও ক্যাশ মেমরি নামে দ্রুত গতির কিছু মেমরি থাকে (এখন এটা প্রসেসরের মধ্যেই থাকে)। প্রোগ্রামের সার্বিক গতি বাড়ানোর জন্য প্রোগ্রামের বহুল ব্যবহৃত অংশ ক্যাশেতে রাখা হয়। বাকী অংশ সাধারণ মেমরি, এমনকি হার্ডডিস্কেও থাকতে পারে।

ওয়েব সাইটের বেলাতেও সেই একই কচকচানি। যেমন, সচলায়তন ওয়েব সাইটে যে চাপ পড়ে তার ৮০% হলো কেবল পড়ার জন্য, বাকী ২০% লেখা/সম্পাদনা করার জন্য। আবার পড়ার সময়, নতুন লেখাগুলো সবাই যতটা পড়ি, পুরাতনগুলো তেমন একটা না। সাইটের কিছু বিষয় (যেমন টাইপ করার স্ক্রিপ্ট) আবার জন্মাবধি একই রয়ে গেছে।

সচলায়তনের (এবং বড় যেকোন সাইটের) সব ডেটা রক্ষিত হয় ডেটাবেসের মধ্যে। নামে ডেটাবেস হলেও আসলে সব কিছু আবার ডিস্কের মধ্যেই থাকে। মাইএসকুয়েল প্রোগ্রাম দরকার মতো সেসব ডাটার জোগান দেয়। সন্দেহ নেই, মাইএসকুয়েল এই জোগান দ্রুত করার জন্য বেশী চাহিদার ডাটাগুলো মেমরিতে রেখে ক্যাশিং করে।

ব্লগে লেখা ছাড়াও, আছে ছবি, দৃষ্টিনন্দন করার জন্য সিএসএস, টাইপ করার সুবিধার জন্য জাভাস্ক্রিপ্ট ইত্যাদি। যখন কেউ সচল সাইট খুলেন, ওয়েব সার্ভার প্রোগ্রাম ডিস্ক থেকে সেগুলো চাহিদামতো বিলিয়ে দেয়। এপাশি হচ্ছে বহুল ব্যবহৃত ওয়েব সার্ভার প্রোগ্রামের নাম। তবে সচলের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে এঞ্জিনেক্স নামে ভিন্ন একটা প্রোগ্রাম।

আমরা যে সব ছবি সমানে ক্লিক করি ওয়েব সার্ভার সেগুলোকে সরাসরি মেমরিতে রেখে ক্যাশে-নীতি চালু করতে পারত। এতে আমারা অনেক দ্রুত ছবি দেখতে পেতাম। কিন্তু এপাশি বা এঞ্জিনেক্স এ কাজটা করে না। সচল সাইটের জন্য এ কাজটা করা হয়েছে ভার্নিশ নামে একটা সফটওয়ার দিয়ে। সার্ভারে যেসব প্রোগ্রাম চলছে তার মধ্যে সবচেয়ে ভাল দক্ষতা দেখাচ্ছে এই ভার্নিশ আর এঞ্জিনেক্স। এর মধ্যে ভার্নিশ দুর্দান্ত। ছবিতে দেখুন। ভার্নিশের কীর্তি

ভার্নিশ আরো কার্যকরী হতে পারত যদি সচলে সাইট ডাইনামিক না হত। ভার্নিশ কেবল স্ট্যাটিক ডেটা/ফাইল ক্যাশ করতে পারে।

ডায়নামিক ডাটার/পিএইচপির ক্যাশিং করার জন্য দুটি ব্যবস্থা চালু আছে। একটি হচ্ছে অতিথি পাঠকদের জন্য ড্রুপালের নিজস্ব ক্যাশিং (যেটা ড্রুপাল নির্বোধের মতো আবার ডেটাবেসের মধ্যে রাখে), এবং পিএইচপির কোড ক্যাশিং। পিএইচপি কোডকে ক্যাশ করার জন্য এক্সকোড নামে একটি প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয়েছে। এক্সকোড বহুল ব্যবহৃত পিএইচপি কোডকে কম্পাইল করে বাইনারি করে রাখে। এতে দরকারের সময় কোড দ্রুত রান করে।

এত সব ব্যবস্থা নেয়ার দরুণ সচল সাইট এখন আগের যেকোন সময়ের চেয়ে ভাল চলছে। সার্ভারের নির্ভরযোগ্যতাও অনেক বেশী, কোন সমস্যা হলে বাড়তি কোন সমস্যা সৃষ্টি বা সাইট ডাউন করা ছাড়াই দ্রুত সমাধান করা যাচ্ছে।

তার মানে হচ্ছে ঘুরে-ফিরে আমরা সবাই যখন নতুন ব্লগগুলো বা মন্তব্যগুলো পড়ি, সচলের সার্ভার মনে মনে খুব খুশীই হয়।


এ লেখা সচলায়ন কর্তৃপক্ষের কোন বক্তব্য নয়। সচলের সার্ভার স্থাপনাকালে অর্জিত অভিজ্ঞতা নিয়ে আমার নিজস্ব মত।


মন্তব্য

রণদীপম বসু এর ছবি

আচ্ছা ছবি পোস্ট দেয়ার বিষয়টা কি নিষ্পত্তি হয়েছে ? না কি এখনো ফ্লিকার ভরসা করে চলতে হবে আরো ?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

আলমগীর এর ছবি

আমি তো দিলাম রণদা।
মাহবুব মুর্শেদ নিশ্চিত করতে পারবেন।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হু হয়েছে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

পরিবর্তনশীল এর ছবি

চলুক
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অনিকেত এর ছবি

বস, দারুন লাগল। খুব প্রাঞ্জল,নির্ভার লেখা।
খালি একটা জিনিসঃ

অভিধানের এক হাজার শব্দের মাত্র ১০%, অর্থাৎ ১০০ শব্দ আমরা আমাদের কথাবার্তার ৯০% সময় প্রয়োগ করি। বাকী ৯৯০০ শব্দের ভাগ্য খুবই খারাপ, কালে-ভদ্রে, মাসে ১০% সময় তাদের ডাক পড়ে।

মনে হয় ৯৯০০ হবে না---তাই না?

আলমগীর এর ছবি

৯০০.
৯০০+১০০=১০০০
ধন্যবাদ, গাঞ্জা টানতেছিলাম মনে হয়।

আপনে আমাকে বস ডাকেন ক্যান? আমি কোন চাকরি দিতে পারব না।

অনিকেত এর ছবি

হে হে হে

আমি সব্বাই রে 'বস' ডাকি, বস। উদ্দেশ্য খুব মহৎ----যাতে করে অন্যেরাও আমারে 'বস' ডাকে---হে হে হে ......।
এখন পর্যন্ত প্ল্যান ভালই কাজে দিচ্ছে।

হিমু এর ছবি

হে হে হে, আমার এক সহকর্মীও এমন করতো, পরে আমরা ওকে "ঐ পিচ্চি" ডাকা শুরু করলাম হাসি


হাঁটুপানির জলদস্যু

সবজান্তা এর ছবি

ভালো লাগলো। আসলে এই ধরণের প্রাঞ্জল টেকি লেখার দরকার আছে। মাঝে রাগিব ভাই সিকিউরিটি নিয়ে চমৎকার কিছু লেখা লিখেছিলেন, কিন্তু উনিও গায়েব।

আমার মনে হয় আপনি চাইলেই হোস্টিং সিলেকশন, সি প্যানেল এবং এই ধরণের জিনিশপত্রের উপর সহজ ভাষায় লিখতে পারেন, অনেকেই যারা হোস্টিং এর জগতে নতুন, তাঁদের বেশ উপকার হবে।


অলমিতি বিস্তারেণ

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

লেখা চমৎকার হইছে!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মুশফিকা মুমু এর ছবি

বাহ! হাসি আমি এঞ্জিনেক্সের নাম শুনিনি আগে। জানলাম
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

আলমগীর ভাই এত সোজা সরল করে লেখেন কি করে !!
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এইটা সোজা সরল লেখা হইলো?
আমি তো কিছুই বুঝলাম না... মন খারাপ
এর চেয়ে তো বঙ্কিমচন্দ্র পড়া ভালো... দেঁতো হাসি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- নজু ভাই, আমি আপনেরে একটা বুদ্ধি দেই। কঠিন মঠিন কোনো পোস্ট দেখলে আমার মতো শর্টকাট কমেন্ট মারবেন! খাটনি কম। দেঁতো হাসি .
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

লেখার প্রথমার্ধ পড়ে আরাম পেলাম ব্যাপক। ক্যাশিং-বিষয়ে আমার ঝাপসা আইডিয়ার কুয়াশা কেটে গেল। আর যেই টেকি-আলোচনা শুরু হলো, পালালাম লেজ তুলে হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
Life is what happens to you
While you're busy making other plans...
- JOHN LENNON

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চমৎকার লেখা... মাঝে মাঝে এমন টেকি লেখার খুব দরকার আছে...

রানা মেহের এর ছবি

বাঃ!
টেকি লেখাও ভালো হয়, আজ জানলাম
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

কীর্তিনাশা এর ছবি

ক্যাশিং সম্পর্কে সম্ম্যক জ্ঞান লাভ হলো।
ধন্যবাদ আলমগীর ভাই।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

শামীম এর ছবি

ভবিষ্যতে চাপাবাজি করতে কাজে লাগবে।
জাঝা
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

কোনো পোস্টে নতুন মন্তব্যের অথবা কোনও প্রতিমন্তব্যের নোটিফিকেশন চালু হবার অপেক্ষায় আছি।
আলমগীর ভাইয়ের লেখাটা পড়ে নতুন কিছু শিখলাম।

--------------------------------------------------------

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।