সাড়ে তিনখান কথা

আলমগীর এর ছবি
লিখেছেন আলমগীর (তারিখ: বুধ, ২৯/১০/২০০৮ - ৯:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১. আহ সামার
কোন এক কালে, সুদূর কোন এক কালে বলা হত বাংলাদেশে গ্রীষ্মে আম কাঠাল ফলে। সেই কালে স্কুলে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বলেও একটা বিষয় ছিল। স্কুলের পরীক্ষায় আসন্ন গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা জানিয়ে বন্ধুর কাছে পত্র লিখতে বলা হত। সেই দিন আর নেই, আছে কী নেই সেই হিসাব করার সময়ও নেই।

অস্ট্রেলিয়ায় এখন সামার। সামার মানে লম্বা দিন। স্কুল-কাজ শেষ করে ঘুরে বেড়ানোর সময় মেলে। রাত ৮টা সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বেলা থাকে, যখন ডুবে হুট করে ডুবে যায়। ঝুম করে অন্ধকার।

২০০১ সালে যখন প্রথম এ দেশে আসি, এই রাত ৮টার আলো দেখে খুব অবাক হতাম। সারাদিন মাথাব্যথা ধরে থাকত বাড়তি আলো দেখতে দেখতে। এখন বছর ধরে সামারের অপেক্ষা করি।

২. ধরবি যদি ধর, না হয় দূরে গিয়া মর
সামারে অফিসের সব শীত-যন্ত্রগুলো আবার সক্রিয় হয়ে উঠে। সেইরকম কোন এক অতিসক্রিয় যন্ত্রের কবলে পড়ে কেমন যেন ঠাণ্ডা লেগে গেল। ঠিক আসেও না আবার পুরো যায়ও না। কদিন এই সাম্যাবস্থা কাটিয়ে আজকে পুরোদমে চলে এলো, সাথে বোনাস জ্বর। শরীর বড় কাহিল লাগে।

অনেক আগে, ফাইভ কি ফোরে পড়ার সময় টাইফয়েডে পড়েছিলাম। ছমাস শয্যাশায়ী। সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকতাম, মাথার উপর একটা কলসির ফুটো দিয়ে অবিরত পানি ঝরত। খুব ভুগেছিলাম সেবার। একদিন হবে কী আজরাইল চলেই এসেছিল। নাড়ী চলে যায়, আমার বাবা-মা জানা সব দোয়া কালাম পড়ে সেবার যমদূতকে ফেরত পাঠান।

টাইফয়েড হলে খুব বাজে প্রভাব রেখে যায়। চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়া তখন বেশ শোনা যাচ্ছিল। আমি কি অন্ধ হয়ে যাবে এই যখন ভাবতাম, তখন অন্ধ না হয়ে চুল আর শরীরের সব মাংস হারিয়ে ফেলি। হাড়ের কাঠামোতে কিছু চামড়া ঝুলে থাকে কেবল। প্যান্ট খুলে পড়ে যেত, দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেও কাজ হত না। লুংগি পড়ার চেষ্টা দেই, কিন্তু দাঁড়াতে পারতাম না। কেউ একজন গিট্টু দিয়ে দিত।

কখনো অসুখ হলে গভীর আগ্রহে ছোট মামার অপেক্ষা করতাম। তিনি যা সন্দেশ নিয়ে আসতেন না! এই সন্দেশের লোভে কতবার যে অসুখ চেয়েছি! আর ছিল বনরুটি, দুধে চুবিয়ে। কিন্তু জ্বরমুখে সব বিস্বাদ লাগত। অসুখ হলে আরেকটা বিষয় হতো, নিজেকে বড় অসহায় লাগত। আজও সে বোধটা পুরোপুরি আছে দেখে ভালই লাগছে।

৩. বিধাতার ভুলে
আজকে বিডিনিউজের এককোণে একটা ছোট্ট খবর দেখে খুব বিস্মিত হলাম। সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ঢাকায় অটিজমের উপর একটা অনুষ্ঠান হবে। উদ্যোগ নিয়েছে হ্যানস নামে স্কুল ছাত্র/ছাত্রীদের একটা গ্রুপ। ঢাকার পাঁচটি অটিস্টিক স্কুলের শিশুরা এতে অংশ নিবে। ফিতা কাটবেন ভূমি সচিব। অতিথি থাকবেন ড. জাফর ইকবাল আর আনিসুল হক। দেশে থাকতে পারল খুব ভাল হত।

৩.৫
দেশে নতুন বাণিজ্যের শুরু হয়েছে। ব্লগ বাণিজ্য। ছেলে বুড়ো সবাই এখন ব্লগ লেখার জন্য ঝাপিয়ে পড়ছে। তবে আবার ব্লগারদের নিয়ে টানাটানিও শুরু হয়েছে। সেই তালিকায় বাঘা বাঘা ব্লগাররাও তো আছেনই, আছেন তাদের মালিকরাও। নিক নিয়ে ব্ল্যাকমেইলিঙ হচ্ছে। নিকের কি 'কপিরাইট' হয় সেই বিতর্কও শুরু হয়েছে। হায়রে কপাল, উইকি এসে এখন সবাই আমরা সর্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞানের অধিকারী। কপিরাইট, পেটেন্ট, ট্রেডমার্ক, আর রেজিস্ট্রার্ড ট্রেডমার্কের পার্থক্য কয়জন বোঝে?

শরীর খারাপ নিয়ে রাত জাগতে নেই- এই কথা কোনদিন কেউ বলে থাকবে, তাই এখানেই ক্ষান্ত।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম টাইফয়েড নিয়ে। আমার বাবা আমাকে কোলে করে নিয়ে যেতেন, আবার নিয়ে আসতেন। তৃতীয় পরীক্ষা (সম্ভবত বাংলা প্রথম পত্র ছিলো) দেয়ার পর বললেন, ভালো না লাগলে পরের বছর দিও। আমি কল্পনায় দেখলাম, আমার সব বন্ধুরা কলেজে ভর্তি হয়ে গেছে, আর আমি তখনও স্কুলে। মাথা নেড়ে চালিয়ে গেলাম। এক একটা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার সময় মুখের ভেতরের পানিতে গুলুব করে শব্দ হতো, পরিষ্কার খেয়াল আছে, আর ওষুধ খাওয়ার কিছুক্ষণ পর সারা শরীরে একটা ঝাঁকি লাগতো। পরীক্ষার হলে বসে মনে হতো একটা নৌকোতে বসে আছি, সেটা সমানে দুলছে। তখন আমার সহপাঠীদের মধ্যে আবার শুরু হয়েছে বসন্তের প্রকোপ, তারা সবাই কেন্দ্রের এক বিশেষ হলে পরীক্ষা দেয়। এক পরীক্ষায় একজন হয়তো আমার পাশে বসেই পরীক্ষা দিলো, পরের পরীক্ষায় সে ট্র্যান্সফার হয়ে চলে গেলো সেই "বসন্ত মুখর আজি" হলে।

পরীক্ষার ফল আমাদের কারোই তেমন খারাপ হয়নি, কিন্তু বায়োলজিতে এক্সট্রা কাগজের ক্রমিক নম্বর মূল খাতায় তুলতে ভুলে গিয়েছিলাম বলে সেটাতে আশাতীত রকমের কম নাম্বার পেয়েছিলাম। সেই রাগে বায়োলজি ত্যাগ করি পরবর্তী জীবনে।

এরকম বিশ্রী রোগ আর একটাই হয়েছিলো, ম্যালেরিয়া, তবে সৌভাগ্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ টার্ম ফাইন্যালের পর।


হাঁটুপানির জলদস্যু

আলমগীর এর ছবি

ম্যালেরিয়া বা বসন্ত কোনটাই কখনও হয়নি। ভাগ্য ভালই বলতে হবে। তবে বহুদিন পরে অসুখে পড়ে মোটেই খারাপ লাগছে না হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

সেই বয়সেই আপনার মনের জোর দেখে সত্যিই মুগ্ধ হলাম... অসাধারণ! চলুক
এক বছর পড়ার পর, বায়োলজি আমিও বাদ দিয়েছিলাম দশম শ্রেণীতে... কারণ তখুনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর যাই হই না কেন, ডাক্তার হবো না জীবনেও...

পরিবর্তনশীল এর ছবি

আমার চিকেনপক্স হয়েছিল ছেলেদের বিশেষ জায়গায় বিশেষ ঘটনা ঘটানোর ঠিক পর পর। কেজি ওয়ানে পড়তাম। ঘুমাইতাম লুংগী পরে। ভাগ্য ভালো চিকেনপক্স নাকি জেবনে একবারই হয়। টাইফয়েড হয়নাই কোনদিন। তবে হারামী ম্যালেরিয়া এটাক করছিল।

ছেলেবেলার কথা যখন মনে করি- দুঃখের স্মৃতিগুলো বুকটা খালি করে দেয়- সুখের স্মৃতিগুলাও বুকটা খালি করে দেয়।

মনু। একি ঝামেলা!
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

আলমগীর এর ছবি

কন্যাপক্ষ যেন ভুলেও একথা না জানে চোখ টিপি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

হ্যান্স গ্রুপের উদ্যোগটা সত্যিই প্রশংসনীয়।

আপনার টাইফয়েডে ভোগার কাহিনী জেনে খুবই খারাপ লাগলো... জ্বর-টর নিয়ে ভাইবেন না... ঠিক হয়ে যাবে হাসি

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

শুভেচ্ছা রইলো, সুস্থ হয়ে উঠুন তাড়াতাড়ি
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

আলমগীর এর ছবি

দেবু দা, প্রহরী দা
ঘটনা সিরিকাস কিছু না। রঙ-চঙ দিয়া লিখছি আর কি চোখ টিপি ধন্যবাদ।

স্নিগ্ধা এর ছবি

আমার এক বন্ধুর ছেলে অটিস্টিক। বছর দশেক আগে যখন প্রথম ধরা পড়লো তখন নাকি এরকম কোন স্কুলই ছিলো না। কয়েকজন বাবা মা মিলে স্পেশাল স্কুলের জন্য অনেক চেষ্টা টেষ্টা করে বোধহয় একটা শুরু করাতে পেরেছিলো। খুব ভালো লাগলো হ্যানস স্কুলের এই উদ্যোগ!

সুস্থ হয়ে যান তাড়াতাড়ি হাসি

আলমগীর এর ছবি

সুস্থ্য হওয়ার তাড়াটা কিসের? আয়োজন আছে কোন খানাদানার?

অনিকেত এর ছবি

বাদশা আলমগীর ('বস' ডাকলে খ্যাক খ্যাক করে, তাই এখন অন্য নামে ডাকছি......)

চিন্তা কইরো না ---ভালো হইলে ঠিক হইয়া যাইবা...।
এই কয়টা দিন রেস্ট নাও।

আলমগীর এর ছবি

প্রোফাইলে বাতেল মার্কা ছবি বাদ দিয়া নায়ক মার্কা ছবি দিলেন কেন? খবর হইছে নি কোন?
বস ছাড়া কি কোন ডাক নাই? সম্রাট কইতে পারেন, গায়ক কইতে পারেন, না পারলে নায়ক কইতে পারেন।

কোনটাই না পারলে নিউইয়র্কে একই নামে আছে এক মাইগ্রেশন উকিল, দুই নাম্বারি করে জেলে গেছে, গুগলে সার্চ দিলেই যার নাম পয়লা আসে, তার দোস্ত কইতে পারেন।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ব্লগ যখন লেখছেন তার মানে আপনি সুস্থ হওয়ার পথে। বাকীটা তাড়াতাড়ি ঠিক হোক।

আলমগীর এর ছবি

জ্ব নিয়াই তো লেখলাম। সারাদিন ঘুমাইছি তাই ঘুম আসে না কি করুম। ভাল থাইকেন।

রানা মেহের এর ছবি

অটিজম নিয়ে কাজ করছেন যারা,
শুভকামনা - অভিনন্দন জানাই।
তাড়াটাড়ি ভালো হয়ে উঠুন।

টাইফয়েড ম্যালেরিয়া সব হবার পরও হিমু করে খাচ্ছে!!!!!!!
এতো দেখি হিমু মাছের প্রান!!

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আপনার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ভালো হয়ে উঠুন তাড়াতাড়ি।
(আগে খারাপ মানুষ আছিলেন এইরকম কথা কই নাই কিন্তু।) হাসি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

অসুখ হলে আরেকটা বিষয় হতো, নিজেকে বড় অসহায় লাগত। আজও সে বোধটা পুরোপুরি আছে দেখে ভালই লাগছে।

এটা কি ভালো লাগার মতো ব্যাপার? অ্যাঁ
না রে, ভাই, জলদি সুস্থ হয়ে উঠুন।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

আলমগীর এর ছবি

এটা কি ভালো লাগার মতো ব্যাপার?

এটা না বললে কি কনফু আর তিথি হালিম নিয়া দৌড়ে দেখতে আসত? দেঁতো হাসি

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হায় তাই নাকি, তারাতারি সুস্থ হয়ে উঠুন। তবে আমারো জ্বর হলে খুব খুশি লাগে, অনেক আদর পাওয়া যায় আম্মু আব্বুর দেঁতো হাসি । আমিও কয়েক সপ্তাহ আগে জ্বর থেকে উঠলাম। এখানে সিডনীর ট্রেনে এত ঠান্ডা, একদম মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়। সিটিরেইল একদম উলটা পালটা এয়ারকন চালায়। আর আভহাওয়ার কথা কি বলব, আজকে গ্রীস্ম তো কালকে বর্ষা, পরশু শীত, কোনও ঠিক নাই, যার জন্য মানুষ আরো অসুস্থ হয়ে যায়।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

আলমগীর এর ছবি

কার অসুখের কথা কন? ভাল হয়ে যাবে চোখ টিপি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আমি তো দেখা যাচ্ছে রোগ বালাইয়ে তাহলে প্রসিদ্ধ! চোখ টিপি

এইটে থাকতে ধরলো ম্যালেরিয়া। মানে ডাক্তার আমাকে জনা ছয়েক লোকবল নিয়োগোত্তর সংগৃহীত রক্ত পরীক্ষা করে জানালেন 'ম্যালেরিয়া'। মাইক্রোস্কোপে আমাকে টেনে নিয়ে দেখালেনও ম্যালেরিয়ার জীবানু। দেখলাম এবং সপ্তাদুয়েক ভোগান্তির দিনগুলোর সঙ্গে মনে রাখলাম জীবানুর সেই চেহারা। বহু পরে, কোনো একটা প্যারাসাইট বইয়ে যখন স্মৃতি থেকে তুলে আনা ইমেজ গুলো মিলাই, তখন বুঝতে পারি ঐশালা ডাক্তার আমাকে ভুল ইনফরমেশন দিয়েছিলো। জীবানুগুলো ছিলো আসলে টাইফয়েডের!

এসেসসি পরীক্ষার আগেই গ্রামের বড় হুজুরের কাছ থেকে কায়তন পড়া নিয়ে কব্জিতে বেঁধে রাখলাম জলবসন্তের ভয়ে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস স্কুল থেকে যেদিন এডমিটকার্ড দিবে, তার ঠিক দু'দিন আগে আমার পিঠের বাম দিকে আবিষ্কৃত হলো শালা জলবসন্তের গুঁটি। ক্রমে তা বাড়তে থাকলো। ঝাড়ফুঁকের জন্য আমাকে জোর করে শরণাপন্ন করা হলো শ্যামার মা'র। তিনি কী কী করলেন মনে নেই। আব্বা আমাকে এলাকার নামকরা হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমি কী চাই? বের হোক এটা চাই, নাকি বের না হোক ঐটা চাই! প্রয়োজনে তিনি 'আজি এ বসন্ত' হলে পরীক্ষা দেবার ব্যবস্থা তিনি করবেন!
আমি দুই হাত প্রচণ্ড জোরে নেড়ে বললাম, "আমার যাতে আর একটা গোঁটাও না বাইরায়। যদি আর একটা গোটাও বাইরায়, তাইলে আপনেরে খাইছি!"

তারপর বেশ কিছুদিন বিরতি। প্রথমবার প্রবাস থেকে দৈবের দেশে গিয়েছি। একদিন আমাদের কলপাড়ে গোসলের সময় ডান বাহুর পরে অপরূপ এক মশা দেখতে পেলাম। এতো সুন্দর মশা আমি আগে কখনো দেখিনি। ব্যস, কয়েকদিনের মধ্যেই জানা গেলো আমার ডেঙ্গু!

এবং তারপর বছর খানেকের মধ্যে আবার। মাথার পরে ডেডলাইনের খড়গ নিয়ে দিল্লী যেতে হয়েছিলো ভিসা সংক্রান্ত কিছু জটিলতার কারণে। ফেরার পথে বিদঘুটে রকম শরীর খারাপ। দেশে ফিরে অবস্থা কাহিল। পরে জানা গেলো সেটাও ডেঙ্গু ছিলো!

আর এখন, এখানে বছরে তো প্রায় নিয়ম করেই জ্বর টর আসে। না আসলে মনেহয় কী জানি কে এলো না! এই যেমন এই সময়টা। প্রতিবছরই এই সময়ে আমার একটু কোঁকানী-গোঁঙানীর নিয়ম। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে সুযোগটা এলোনা বলে কিঞ্চিৎ খাপছাড়াই লাগছে! তবে আশার কথা হলো, আবহাওয়া খারাপ করছে ধীরে ধীরে। আমার অধ্যবসায়ের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেই বলছি, "এযাত্রা আপনাদেরকে নিরাশ করবো না এনশাল্লাহ্।"
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

আলমগীর এর ছবি

এত কিছু হইল অথচ কোন কোমল হাতের পরশ মিলল না! এ জীবন রাখার কোন দরকার আছে দেখেন? যাই হোক, এবার আর নিরাশ কইরেন না দেঁতো হাসি

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ডেঙ্গুটা কীভাবে যেন মিস করে ফেলেছি আমি।

জন্ডিস হয়েছে জীবনে ৫ বার। চিকেন পক্স হয়েছে ছোট বেলায়। হামের জন্য চতুর্থ টিকা নিতে পারিনি। বুড়ো বয়সে এসে জার্মান মিসলস হয়েছে। ম্যালেরিয়া হয়নি, তবে ব্রিটিশ আমলের ভ্যারাইটির কলেরা হয়েছে। শরৎবাবুর উপন্যাসের স্টাইলের ভোগান্তি গেছে। সেটা সারার এক বছরের মাথায় টাইফয়েড। বিছানা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ইঞ্জেকশন দেওয়ার স্মৃতি আজও মনে আছে, আরও বেশি মনে আছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় ম্যাকগাইভার মিস করার কথা। দাঁত নেই সামনের দুটা। অ্যাডিনয়েড অপারেশনের সময় শ্বাসনালীর বদলে খাদ্যনালীতে অক্সিজেন দেওয়ায় মরতে বসেছিলাম ওটি'তে। ভুল রিপোর্টে ব্লাড ক্যান্সার হওয়ার কথা বলা হয়েছিল একবার। টনসিলে সমস্যার জন্য পেনিসিলিন ইঞ্জেকশনের উপর থাকতে হয়েছে কিছুদিন। গত এক বছর বাম পায়ের গোড়ালি মচকেছি ১০ বার। ডান পায়েরটা ৩ বার। দুই হাতের কব্জির লিগামেন্ট ছিড়েছিলাম ২০০৪ এর অগাস্টে। আজও পুরাপুরি সারেনি। ছবি তোলার বাতিক ছিল এককালে। শাটার স্পিড ৪ পর্যন্ত স্রেফ হাতেই ঝকঝকে ছবি তুলতে পারতাম, আজকে ক্যামেরা ধরলেই হাত কাঁপে।

কী, মন ভাল হল এবার? দেঁতো হাসি

আলমগীর এর ছবি

আপনার আর ধুগোর মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে, যে জিতবে তাকে শরীরের বিশেষ স্থানে পিয়াজ-রসুন দিয়ে সাতদিন জ্বরে ফেলে রাখা হবে দেঁতো হাসি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- জণ্ডিসের কথা বাদ পড়ছিলো। কলেজে ভর্তি হওয়ার মওসুমে। পুরা একমাস আমারে নানান 'অখাদ্য' খাইতে হইছে মায়ের জ্বালায়। ভোরবেলা ঘুম থেকে তুলে দিছে খালি পায়ে শিশিরে হেঁটে আসার জন্য। মা নিজে ঘাটে বসে থেকে আমাকে পুকুরের পানিতে নামিয়ে দিয়েছে 'ডুব' মারার জন্য। সেই সময়ে কেবল এই একটা জিনিষই উপভোগ করছি। কারণ পুকুরে বেশি সময় কাটানোর কারণে সারাজীবনই পিটনা খাইছি!

প্রথমবার হাম হইছিলো এক্কেরে গুঁড়া বেলায়। কিন্তু দ্বিতীয়বার যখন হইলো তখন আমি রীতিমতো বুইড়া! এই তো বছর কয়েক আগে। যারেই কই, বিশ্বাস করে না। কয়, বুইড়া বয়সে আবার হাম হয় নাকি হালায়?

টনসিলের সমস্যা দেখা দিছিলো সিক্সে থাকতে। জীবনে ঐ প্রথম (এবং আশাকরি শেষ) পেনিসিলিন ইঞ্জেকশন নিতে হইছে।

আমার মায়ের ধারণানুযায়ী, আমার রোগভোগের অন্যতম কারণ হলো আমার উদাসীনতা। এইসবের কিছুই এখন নাই। আমার মায়ের কথায় আমার গোপন সম্মতি থাকলেও যে জিনিষটা আমার হাতে নাই তা হলো, দেশের আবহাওয়ায় আমার সর্দির বাতিক। এটাকে নাকি ডাস্ট এলার্জী বলে। এই জিনিষ থেকে মুক্তি নাই আমার বাকী সব কিছু থেকে পালাতে পারলেও!

এইবার কন আলমগীর ভাই ক্যাডা জিতলো! হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

স্নিগ্ধা এর ছবি

ইশতিয়াক, ছোট্ট একটা প্রশ্ন ছিলো আমার - আপনি কি এখনও জীবিত আছেন????

আর, আমার জীবনের মটো অনুযায়ী বলি - আশা ছাড়বেন না, কায়মনোবাক্যে ডাকলে ডেঙ্গুও ধরা দেবেই দেবে দেঁতো হাসি

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

হেহ হেহ, তা বেঁচে আছি মনে হয় এখনও। তবে আমার মা'কে কম ভোগাই নাই আমি। একবার তো ডাক্তার জিজ্ঞেস করেই বসেছিল তাকে, "আপনার কি এই একটাই ছেলে, নাকি আরও আছে? এটার তো তেমন আশা দেখছি না।" শুনে আমার মা ফিট খেয়ে গেল পুরা। দেঁতো হাসি

দাদা, নানা, মামা, খালু ডাক্তার। এর পুরো সুবিধা (?) তুলেছি আমি। ওহ, একবার কী যেন একটা রোগ হয়েছিল যেটার রোগী দেশে কম পাওয়া যায়। মেডিকেলের ইন্টার্নি ডাক্তারের ভীড় পড়ে গেছিল বেডের বাইরে। আরেকবার তো টিভিতে রক্তের জন্য বিজ্ঞাপন গিয়েছিল। কারণ আমার রক্তের গ্রুপটাও সেই রকম -- ও নেগেটিভ।

ইদানিং "রোগ" এর চেয়ে "বালাই" এর ঝুঁকছি বেশি। টুকটাক কাটা-ছেঁড়ার উপর আছি।

আলমগীর ভাই কি আমার আর ধূগো দাদার 'গায়ে মশলা' অনুষ্ঠানের কথা বলছিলেন? তাহলে কিন্তু আমাদেরও হিমু ভাইয়ের মত ২ টা করে চাই! চোখ টিপি

আলমগীর এর ছবি

@রানা, পান্থ,শিমুল
উৎকণ্ঠ হবার মতো সিরিয়াস কিছু না। ঘরে বসে থাকার ছুতো খুঁজি আর কি। ধন্যবাদ ।

শামীম এর ছবি

ইশ্ ব্লগাইতে কি মজা! এই মজা যেন বেশি না থাকে .... সুস্থ হয়ে কাজে যান ....
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

আলমগীর এর ছবি

শামীম এর ছবি

নুনগুলো ব্যবহার করতে .... চোখ টিপি
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

নজমুল আলবাব এর ছবি

পরীক্ষা আইলেই আমার শইল খারাপ করতো। হাসি

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।