১.
অভাব মানে ঠিক ভাবের কমতি না, ভাব দেখাতে গেলে যে টাকা-পয়সা লাগে তার কমতি। অভাবী মানুষর মনে ভাব থাকলেও তা দেখানোর উপায় নেই। কিন্তু তা নিয়ে বাণিজ্য হতে সমস্যা কোথায়? যা কিছুর চাহিদা আছে তাই বিপণনযোগ্য।
কৃষ্ণা আর তৃষ্ণা জোড়শিশু- জন্মের পর থেকেই তাদের মাথা একসাথে যুক্ত। প্রথমত তাদের এই বিষজন্ম গরীব পরিবারে, তার উপর সংখ্যালঘু। বিষম হওয়ার জন্য সামাজিক পীড়ন আর ধর্মীয় সংস্কারের খড়গ তো আছেই।
খুলনার এই জোড়শিশুকে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে আসে একটা প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের বিষয়ের সাথে একশ একটা আইনি ফ্যাকড়া থাকে, তবু শেষ পর্যন্ত কিছু মানুষের চেষ্টায়, কয়েকজনের আর্থিক আনুকূল্যে সেটা সম্ভব হয়। এ ধরণের অপারেশনের অতীত সাফল্য খুব একটা ভাল না সে বিষয়টাও উদ্যোক্তাদের মাথায় ছিলো। অবশেষে গত মাসে জোড়শিশুকে আলাদা করা সম্ভব হয়েছে; এ সাফল্যের খবর বিশ্বজুড়ে প্রচারিত হয়েছে।
যা বলছিলাম তা হলো, কৃষ্ণা-তৃষ্ণার বাবা-মা নিতান্ত গরীব। অস্ট্রেলিয়া আসার মতো, থাকার মতো সামর্থ তাদের নেই (মিশনারিজ অফ চ্যারিটিজ-এ হস্তান্তর করেছিলেন আগেই; অভিভাবকত্বের দাবী ছেড়ে দিয়ে)। স্বভাবতই অপারেশনের সাফল্যে তারা খুশী। তাদের হাসিমাখা, পোজ-দেয়া ছবি নিয়ে প্রচ্ছদ ছেপেছে উইমেন'স উইকলি। এ ধরনের একটা ছবি প্রতিবেদন ছাপার জন্য এ দেশের পত্রিকাঅলারা কয়েক লাখ ডলার ছুড়ে দেয়। জানি না যদিও, আমার ধারণা কৃষ্ণা-তৃষ্ণার বাবা-মারা একেবারে বিনে পয়সায় মডেল হয়েছেন। এরকম মনে হওয়ার কারণ, পত্রিকার কাছে তাদের আর্তি মেয়ে দুটো যেন এদেশে থেকে যেতে পারে।
২.
ড. ইউনুস সাহেব বলেছিলেন ২০২০ সালে দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না। অল্প কিছু থাকবে জাদুঘরে সরক্ষণ করার জন্য। আমাদের ছেলেমেয়েরা পভার্টি কী বিষয় বুঝবে না। তাদের পভার্টি দেখানোর জন্য জাদুঘরে নিয়ে যেতে হবে। বুঝে না-বুঝে এ ধরনের রসিকতা আরো অনেকেই করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার এক প্রধানমন্ত্রী ৭৫ সালে বলেছিলেন ১০ না ১২ বছরের মধ্যে সব দারিদ্র্য চলে যাবে অস্ট্রেলিয়া থেকে। বাস্তবতা হলো, দারিদ্র্য এখনও যায়নি।
ইউনুস সাহেব না বুঝে কথা নিশ্চয়ই বলেননি। ক'দিন আগে বলেছেন দরিদ্র মানুষ শখ করে দরিদ্র নয় (নট বাই দেয়ার চয়েস); সম্পদ আর ক্ষমতায় তাদের প্রবেশাধিকার নেই বলেই তারা দরিদ্র। অতীব সত্য কথা। কপ১৫ এ তাই দেখা গেল। আমরা ডুবে যাব, আমাদের কৃতকর্মের জন্য নয়- অন্যের দোষে। চীন আর ভারত সবচেয়ে বেশী দুষণ করে, তারা কিছু করতে পারবে না আপাতত। আমেরিকার মানুষ দুনিয়ার সবচে বেশী শক্তি খরচ করে, তারাও আপাতত বাইন্ডিং কোন চুক্তিতে যেতে পারবে না।
ডুবে যাওয়া নিয়ে আমাদের মাথায় উদ্ধার পাওয়ার চিন্তা। আর কারো কারো মাথায় বাণিজ্যের। ইটিএস (ইমিশন ট্রেডিং স্কিম) করেছে ইউকে আর কে কে যেন। অস্ট্রেলিয়ায় লেবার সরকার সেটা করতে চাচ্ছে, বিরোধী লিবারেল তাতে বাধা দিচ্ছে। ঠিক বললাম না, লিবারেলের একটা অংশ বাধা দিচ্ছে- যারা জলবায়ুর যে একটা সমস্যা হচ্ছে সেটাই মানতে চায় না। এ নিয়ে এক সপ্তাহের মাথায় দু'দুবার নিজের পার্টিতে চ্যালেঞ্জ খেয়ে শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেন বিরোধী নেতা- তিনি ইটিএস করার সরকারী উদ্যোগকে কিছু শর্তের বিনিময়ে সমর্থন দিয়েছিলেন।
৩.
বিগত দুই মেয়াদে ক্ষমতায় ছিল লিবারেল পার্টি- নেতা ছিলেন জন হাওয়ার্ড। শিক্ষার দায়িত্বে (পরে ডিফেন্স) ছিলেন ব্র্যান্ডন নেলসন। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পশ্চাৎদেশ ফুটো করে দিয়েছেন এই ভদ্রলোক। সে অবস্থা এখনও কাটেনি; বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাসের গায়ে, বাসস্টপে, বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দেয় ভর্তি হওয়ার জন্য। নেলসন এবারও সিনেটর ছিলেন, কিন্তু লেবার সরকারের অফার পেয়ে (রাজনৈতিক পল্টিও বলা যেতে পারে) সিনেট পদ ছেড়ে দিয়ে ইউরোপে বিশেষ দূতের চাকরি নিয়ে চলে গেছেন। তার জায়গায় নতুন করে নির্বাচন হবে।
এ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী দেবে অস্ট্রেলিয়ান সেক্স পার্টি। এই পার্টি ঠিক সেক্স করার পার্টি না, যারা সেক্স বাণিজ্যের সাথে যুক্ত মূলত তাদের পার্টি। হু ডিজিউ ভুট ফর মাইট, লেবার অর লিবারেল? হুমমম, সেক্স ।
৪.
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পিণাক রঞ্জন চক্রবর্তী আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। টিপাইমুখ, সন্ত্রাস ইত্যাদি নিয়ে আমাদের প্রভূত জ্ঞান দান করেছেন। তার বিদায় লগ্নে চলুন একটা শিটকেক কাটি। বাংলাদেশ আর কোন দিন যেন এ ধরনের কূটনৈতিক প্রতিনিধি না পায়।
৫.
আমার মেয়েকে চেষ্টা করছি গানবাজনার দিকে আকৃষ্ট করাতে। কিছুদিন গাঁইগুই করার পর একটু একটু করে শিখে যাচ্ছে। এখানে তার গাওয়া একটা গান। এটা এ নিয়ে বড়জোর ৪/৫বার গেয়েছে মাত্র।
গানটা অস্ট্রেলিয়ায় প্রচলিত শিশুদের গান। ছোট গিটারের মতো দেখতে বাদ্যযন্ত্রটাকে প্রথম দেখেছিলাম ধুগোর পোস্ট করা ইসরায়েল কামাকাওয়ালের একটা গানে। প্রথমে মনে করেছিলাম খেলনা গিটার, পরে জানলাম এর আলাদা একটা নাম আছে: ইউকেলেলে, আর এটা খেলনাও নয়। তার থাকে চারটা; বাজাতে হয় গিটারের মতো কর্ড ধরে; তবে তুলনামূলকভাবে সহজ। ভিডিওটা মোবাইল দিয়ে তোলা, তাই মান তেমন সুবিধার না।
অপনার গাওয়া আরেকটা গান: রো রো রো ইওর বোট।
মন্তব্য
মাথা পুন:পরিষ্কার (refresh) করার মতন লেখা। আপনার জন্য অনেক শুভেচ্ছা ... আপনা-র জন্য, এবং আপনার জন্যও.
(সম্ভবত: অস্ট্রেলিয়ার আগামী নিবার্চন মেলবোর্ণ বসেই দেখবো... তখন আবার জেনে নেবো আপনি শেষ পর্যন্ত সেক্স পার্টিকেই ভোট দিলেন কী-না
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"
-----------
চর্যাপদ
থ্যাংকু, আসলে দেখা হলেও হতে পারে।
দুটা গানই সুন্দর হয়েছে, তবে প্রথমটা বেশি ভালো লেগেছে। কোকাবুরা পাখিটা কিন্তু খুবই সুন্দর।
আমার কাছেও তাই মনে হয়েছিল, পরে বিশ্বের চাপে দ্বিতীয়টাও আপলোড করে দিলাম
ভালো লাগলো লেখা। অনেক ধন্যবাদ।
শেখ নজরুল
শেখ নজরুল
আপনাকেও ধন্যবাদ।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
থ্যাঙ্কু।
আপনার গতানুগতিক লেখাগুলো সবসময়ই কিছু সময়ের জন্য অন্তত ভাবনায় ফেলে।
অপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
__________________________________
যাক না জীবন...যাচ্ছে যখন...নির্ভাবনার(!) নাটাই হাতে...
__________________________________
যাক না জীবন...যাচ্ছে যখন...নির্ভাবনার(!) নাটাই হাতে...
বেশী ভাবনায় ফেলে দিলাম নাকি?
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
- যখন আরও ছোট ছিলাম, ক্লাস ফোরে (কিংবা থ্রি'তে) পড়ি তখন আমার এক বন্ধু তার আগের রাতে দেখা এক খোয়াবের কথা বলছিলো স্কুলে যেতে যেতে। এখনও মনে গেঁথে আছে কেনো জানি না। খোয়াবটা ছিলো, ও হঠাৎ দেখে বঙ্গোপসাগরে সে উলটা সাঁতার (চিৎ হয়ে) দিছে। এবং তার হাতে আবার আমাকে ধরা।
কপ-এর ব্যাপারটায় আসলে কিছুই করার নেই আমাদের এক সাঁতার শেখা ছাড়া। খালি শিখলেই চলবে না, সাঁতরে ভেসে থাকতে শিখতে হবে। শিখতে হবে ঐ অবস্থাতেই ঘর-সংসার করার পদ্ধতি। চিৎ হয়ে সাঁতার দিতে দিতেই কোনো থ্রি-ফোর পড়ুয়া বালক তার বন্ধুকে আগের রাতে দেখা খোয়াবের কথা বলবে স্কুলে যেতে যেতে, "জানিস কালকে রাতে না আমি স্বপ্ন দেখছি সবুজ ধানের ক্ষেতের আইল ধরে দৌঁড়ে যেতে। মজার ব্যাপার হলো তুইও ছিলি আমার স্বপ্নে, দৌঁড়াচ্ছিলি হলুদ সরষে ক্ষেতের আইল ধরে!"
বাকি অধ্যায়গুলো তেমন নাড়াতে পারলো না কেবল এক ছাড়া।
অপনা মামনির জন্য অনেক অনেক শুভকামনা। ও বড় শিল্পী হবে, গীটার ধরা দেখেই বুঝা যায়।
দিলেন তো আবার আমাকে 'সামহোয়ার ওভার দ্য রেইনবো' মনে করিয়ে। এই গানটা আমি পারতপক্ষে শুনি না। শুনলে বধুয়া'র কথা মনে পড়ে, বিষণ্ণ হই!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
অপনার জন্য অনেক অনেক আদর ও শুভ কামনা ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
আসোলেই অপনা'র ইউকেলেলে ধরা খুব সুন্দর!
সবসময়কার মতোই অনেক আদর রইলো অপনা'র জন্য।
বস, আপনার গত্ মাথার এক্সিস্টিং যন্ত্রণাগুলারে আরো বাড়ায়া দেয়!
প্রশ্নগুলো সহজ, শুধু উত্তর অজানা।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
কিউট অপনাকে অনেক আদর রইল। লেখা ভাল্লাগছে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
বস,
অপনা'র গলা তো ভীষন মিস্টি!!!
আরো গান দিও তো---
নতুন মন্তব্য করুন