একজন আয়নাঅলার জন্য শুভ কামনা

আলমগীর এর ছবি
লিখেছেন আলমগীর (তারিখ: শনি, ০৫/০৩/২০১১ - ৫:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভূমিকা:
কোন একটি হিন্দি ছায়াছবিতে নানা পাটেকার অভিনীত চরিত্রটি খুন না করেও খুনের দায়ে জেলে যায়। জেলে একজনের সঙ্গে কথোপকথনে তার সংলাপটি এরকম- ‘আমি অন্ধের কাছে আয়না বিক্রি করি, তারপর তাদের দেখতে শেখাই’। বলছি ড. ইউনূসের কথা, যিনি গ্রামীণ ব্যাংক নামক একটি প্রতিষ্ঠান গড়েছেন, খ্যাতি ও সমালোচনা কুড়িয়েছেন, দেশের জন্য সম্মান এনেছেন। এক সময় সামরিক সরকারের আনুকূল্যে রাজনীতি করতে চেয়েছেন, এবং অবশেষে খুব অপমানজনকভাবে তাঁরই গড়া প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নিচ্ছেন।

ড. ইউনূস ও তাঁর গ্রামীণ ব্যাংক:
ড. ইউনূসের জন্ম ব্যবসায়ী পরিবারে হলেও তাঁর মেধার, যোগ্যতার কোনও ঘাটতি ছিলো না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকা অবস্থায় তাঁর মাথায় আসে ক্ষুদ্র-ঋণের ধারণা। দরিদ্র মানুষ কেন দরিদ্র তার তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা আছে, কিন্তু কিসে দারিদ্র্যের মুক্তি তা স্পষ্ট নয়। ড. ইউনুস বলেন, দরিদ্র মানুষ নিজেদের পছন্দে দরিদ্র না (not by their choice), তাদের অবস্থার পরিবর্তনের সুযোগ দেয়া/পাওয়া উচিত। সে সুযোগ দিতে হলে তাদের আর্থিক সক্ষমতার প্রশ্নটি প্রথমে আসে। সমস্যা হলো, পৃথিবীর কোন দেশেই কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিনা জামানতে কিংবা বিনা বন্ধকে কোন ঋণ দেয় না। ড. ইউনূস দুঃস্থদের ঋণ দেন। তাদের কোন সম্পদ থাকে না বলে, অপরাপর দুঃস্থ মানুষরাই জামানত হিসাবে কাজ করে। এ ধরণের ঋণের ঝুঁকি বেশি, তাই ঋণ ফেরত পাবার সম্ভাবনা খুব কম। কিন্তু গ্রামীণের গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধ করেন; অন্তত গ্রামীণের পরিসংখ্যান তাই বলে। গ্রামীণের সাফল্যের পাশাপাশি ঋণ আদায়ের জন্য ঘরের টিন খুলে নেয়া, জোর-জবরদস্তি করা, অত্যধিক সুদ ধার্য করা- এসব সমালোচনাও শোনা যায়; পত্রিকায় রিপোর্ট দেখা যায়। বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়াও ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা উল্লেখযোগ্য ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী। এছাড়া আছে সরকারী সংস্থা পিকেএসএফ। এদের ঋণদান ব্যবস্থা এবং আদায়পদ্ধতিও অনেকটা গ্রামীণের মতোই।

অনানুষ্ঠিকভাবে যাত্রা শুরু হলেও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা ঘটে ১৯৮৩ সালে সরকার প্রণীত অধ্যাদেশের মাধ্যমে[১]। সে সময় ক্ষমতায় ছিলো স্বৈরশাসক এরশাদ। অবশ্য তারও আগে, ড. ইউনূস সোনালী ব্যাংকের অর্থ/অবকাঠামো ব্যবহার করে কিছুটা কার্যক্রম চালিয়েছিলেন। জয়েন্ট স্টকে ভুক্তির সময় গ্রামীণে রাষ্ট্রের শেয়ার ছিলো ২৫%; বাকীটা ঋণ-গ্রহীতাদের। পরিচালকদের মধ্যে ৩জন হবে সরকার নির্বাচিত, বাকী ৯জন গ্রামীণের ঋণ-গ্রাহকদের মধ্য থেকে (কী পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে সেট স্পষ্ট নয়।)। সরকার কখনো প্রয়োজন মনে করলে বিশেষ কোন সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করতে পারবে- এরূপ শর্তে “গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩”-এ ব্যাংকটিকে প্রচলিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। ড. ইউনূসের নিজের কোন শেয়ার গ্রামীণ ব্যাংকে ছিলো না।

প্রতিষ্ঠার পর দু’বার অধ্যাদেশে পরিবর্তন আসে, প্রথম ১৯৮৬ সালে যখন রাষ্ট্রের শেয়ার ৬০% এ উন্নীত করা হয়; সরকার-নিযুক্ত পরিচালকদের সংখ্যা করা হয় ৮। এটিকে আবার ১৯৯০ সালে সংশোধন করে শেয়ার ও পরিচালকের সংখ্যা আগের মতো করা হয়। একই সাথে ব্যাংকে সরকার-মনোনীত একজন চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্বাচনের ক্ষমতা দেয়া হয় পরিচালনা পরিষদকে, তবে নিয়োগের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেয়ার বিধান রাখা হয়।

আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করা হয় ১৯৯০ সালের সংশোধনীতে: বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে এবং অডিটর নিয়োগে সরকারের নির্দেশ দেয়ার, কিংবা অডিটর বাছাই করার ক্ষমতা খর্ব করা হয়। এ পরিবর্তনের ফলে গ্রামীণ ব্যাংকের আর্থিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতাকে সন্দেহ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। একইসঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংক মূল ক্ষুদ্র-ঋণের বাইরে লাভজনক ব্যবসায়ে বিনিয়োগের পথ পায়। বর্তমানে কমবেশি ২২টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ-যুক্ত।

ড. ইউনূসের কৃতিত্ব, সমালোচনা ও মামলা:
ড. ইউনূসের একাডেমিক রেকর্ড খুব উজ্জল। চালচলনে তাঁকে খুব ভোগবাদী মনে হয় না। যে ফতুয়া পরে তিনি টিভিতে মুখ দেখান তার দাম খালেদা-হাসিনার একটা শাড়ীর ২০০ভাগের একভাগের বেশি হবে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক বুদ্ধিজীবী যেখানে “পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ” করছেন, ইউনূস তখন মোটেই নির্লিপ্ত ছিলেন না। সরাসরি সমরে অংশ না নিলেও বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে তাঁর ভূমিকা ছিলো স্পষ্ট। তাঁর অর্থনৈতিক অবদানের জন্য (অর্থনীতি শাস্ত্রে অবদানের জন্য নয়), ক্ষুদ্রঋণের ধারণাকে সফলভাবে প্রয়োগ করার জন্য দেশে-বিদেশে প্রচুর পুরস্কার পেয়েছেন; তার মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাকর নোবেল (শান্তিতে) পান ২০০৬ সালে (গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে)। সে সময় নোবেল কমিটির একজন বলেছিলেন, পৃথিবীতে শান্তির প্রধান শত্রু দারিদ্র্য।

ক্ষুদ্রঋণ, গ্রামীণ ব্যাংক এবং ড. ইউনূসকে নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। এর মধ্যে পুরনো সমালোচক হলেন বদরুদ্দিন উমর[২]। এরপর যুক্ত হন আনু মুহাম্মদ[৩ক, ৩খ] ও আরো অনেকে[৪][৫]। দুজনের লেখাই আমার পড়ার সুযোগ হয়েছে। দু’জনেই ব্যক্তিগত দর্শনে পুঁজিবাদ বিরোধী, তাই তাঁদের আলোচনায় গ্রামীণ ব্যাংকে ভালো কিছু নেই। খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ একটি প্রবন্ধ লিখেছেন[৬], আরেকটি লেখা আছে ড. তারেক শামসুর রেহমান[৭]-এর, যেখানে গ্রামীণ সম্পর্কে কিছু নির্মোহ ভালো কথা দেখা যায়। খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন, ছিলেন বেসরকারী খাতের বৃহত্তম ব্যাংক পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও; বর্তমানে কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান। গ্রামীণ ব্যাংক কী পরিস্থিতে সৃষ্টি হয়, কী সুযোগ-সুবিধা-সীমাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করে সে সম্পর্কে জানা যায় উনার লেখা থেকে। তিনি মনে করিয়ে দেন, গ্রামীণের যখন জন্ম হয় গ্রামের লুঙ্গি-গেঞ্জি পরিহিত কৃষক যে শহুরে কোন ব্যাংকে ঢুকতে পারত না। রেহমান সোবহান[৮] ও মহিউদ্দিন আহমদ[৯] গ্রামীণের নেতিবাচক সমালোচনার কিছু জবাব দেন। আমি আরো দুটো কথা যোগ করি, সে সময় সরকারী কৃষি ব্যাংকের ১৫হাজার টাকার কৃষি ঋণ পেতে ৫হাজার টাকা ঘুষ দিতে হতো; ঋণ শোধ করতে না পারলে, কৃষককে হালের গরু হারাতে হতো। ভূমিহীনরা কখনোই ঋণ পায়নি।

এতদিন ড. ইউনূসের সমালোচনা হলেও তাঁর আসল বিপদ শুরু হয় নরওয়ের টেলিফোন কোম্পানি টেলিনরের সঙ্গে গ্রামীণফোনের মালিকানা দাবি করা নিয়ে। (গ্রামীণফোন পুরোদস্তুর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যারা আর দশটা কোম্পানির মতোই মুনাফার জন্য ব্যবসা করে। গ্রামীণ ব্যাংক তার কিছুটা অংশীদার মাত্র।) হয়তো এর জের ধরেই, নরওয়ের একজন ডকু-নির্মাতা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বিদেশি অর্থ-ব্যবহারে অস্বচ্ছতার অভিযোগ আনে। বিডিনিউজ২৪ মনে করে ‘সাইফনড ৭বিলিয়ন এইড ফর পুওর’- মানে ইউনূস আত্মসাৎ করেছেন[১০]। গ্রামীণ ব্যাংক এ বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা দেয়[১১ক, ১১খ]; পরে দাতাগোষ্ঠীর তদন্তেও তহবিল আত্মসাতের কোন প্রমাণ মেলে না[১২]। গ্রামীণ ব্যাংকের কর কমানোর জন্য কিছু টাকা অন্য প্রতিষ্ঠানে সরানো হয়েছিল, এবং সেটা পরবর্তীতে সমঝোতার মাধ্যমে শেষ হয়েছে[১৩]- এ সরল সত্যটুকু দেশের প্রায় সবগুলো পত্রিকা চেপে যায়। এমনকি বিডিনিউজ২৪-ও তাদের ভুল স্বীকার করে নি।

গত দু’বছরে ড. ইউনূসের নামে পাঁচটা মামলার খবর পত্রিকায় দেখা যায়[১৪][১৫]। ২০০৫ সালের জুলাই মাসে ‘বিশ্বাস ভঙ্গ ও প্রতারণার’ (breach of faith and fraud) দায়ে লোপা বেগম একটি মামলা দায়ের করেন যাতে তিনি গ্রামীণ টেলিকমের শর্তভঙ্গের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে দাবি করেন। এরপর, ২০১০ সালের মে মাসে গাজীপুরে লিব্রা ফার্মা জমি-সংক্রান্ত বিরোধে মামলা করেন। খবরের বিবরণে দেখা যায় জমির মালিক একই জমি লিব্রা ও গ্রামীণ টেলিকমের কাছে বিক্রি করেছে। এতেও ড. ইউনূস আসামী হন, গ্রামীণ টেলিকমের সাথে যুক্ত থাকার কারণে। আরেকটি মামলা হয় ২০১০ এর জুন মাসে ‘শক্তি ইয়োগার্টে’ ভেজাল থাকার অভিযোগে। শক্তি ইয়োগার্ট উৎপাদন ও বাজারজাত করে গ্রামীণ ড্যানোন ফুডস (গ্রামীণ ব্যাংকের সিস্টার কনসার্ন যার সাথে ড. ইউনূস সরাসরি জড়িত নন) । কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, এ মামলাটি করে সিটি কর্পোরেশনের একজন ফুড ইন্সপেক্টর, বিএসটিআই বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ নয়। এমনকি নোটিশ, জরিমানা, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ- কোন কিছু ছাড়াই সরাসরি মামলা করা হয়। পরের মামলাটি হয় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে, গ্রামীণ টেক্সটাইলের বিরুদ্ধে, বাদী সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। সবশেষ মামলাটি হয় হাস্যকর ৪২০ ধারায়, ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে: জনৈক আব্দুল মাজেদের স্ত্রীকে গ্রামীণ পল্লী ফোন ৭৬ হাজার টাকার বকেয়া বিল পাঠানোর দায়ে। মাজেদের দাবি, তারা সময়মতো সব বিল পরিশোধ করেছে।

পাঁচটি মামলার মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও জমি-সংক্রান্ত মামলাটি বাদে বাকীগুলোর উদ্দেশ্য এবং সারবত্তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ঘটনাগুলো আদতে মামলা পর্যন্ত গড়াতে পারে কিনা সে প্রশ্নও করা যায়। প্রতিটি মামলার ক্ষেত্রেই ড. ইউনূস কিংবা গ্রামীণ ব্যাংক সরাসরি জড়িত না হলেও তাঁকে আসামী করা হয়েছে।

গ্রামীণ ব্যাংক বনাম ড. ইউনূস বনাম সরকার:
‘গরীবের রক্ত চুষে খেলে ধরা খেতেই হবে’ এই রূঢ় কথাটি বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা[১৬]। সরকারের অপরাপর মন্ত্রীরাও যথেষ্ট কটু কথা বলেন। এসবই বলা হয় গত ডিসেম্বরে যখন নোরাডের দেয়া ফান্ড নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তোলে পত্রিকাগুলো। অর্থমন্ত্রী তদন্ত কমিটির ঘোষণা দেন, ড. ইউনূস স্বাগত জানান। গত ডিসেম্বরে ঘোষণা দিয়ে তিনি কেবল কমিটি বানিয়েছেন[১৭]।

ড. ইউনূসের নিয়োগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেয়া হয়নি, এটা জানিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ে প্রথম চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থমন্ত্রী জানান, ব্যাপারটি আইনগত বিষয়। বাংলাদেশ ব্যাংক চেয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিক, কিন্তু শেষমেষ তাদেরকেই চিঠি ইস্যু করতে হয়: ড. ইউনূস বৈধ ব্যবস্থাপনা পরিচালক নন। যে আইনে বাংলাদেশ ব্যাংক এ নির্দেশনা জারি করছে তা নিয়ে মামলা হয়েছে, খুব শীঘ্রই আমরা ফলাফল জানতে পারব।

ক্ষুদ্রঋণ, সুদ ইত্যাদির; এমনকি ড. ইউনূসেরও; কড়া সমালোচনা করলেও সরকার গ্রামীণ ব্যাংক বন্ধ করে দিতে চাইছে না, বরং আপাতদৃষ্টিতে তার নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে। প্রশিকা, আশা বিএনপি আমলে সরকারবিরোধী সমাবেশ করেছে, কাজেই স্পষ্টতই তারা বর্তমান সরকারের কৃপাদৃষ্টিতে আছে। এমনকি ডেসটিনি ২০০০, ইউনি২পের মতো কোম্পানিতেও সরকারের মন্ত্রীদের সম্পৃক্ততা আছে। শেয়ারবাজারের কথা এখানে না আনাই ভালো। দেশের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে; প্রধানমন্ত্রী সেটা জেনেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

সরকারের এ ধরণের কাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছে ‘ফ্রেন্ডস অফ গ্রামীণ’ এর ব্যানারে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের কিছু মানুষ[১৮]। আমাদের দেশে ১৩জন বিশিষ্ট ব্যক্তি অনুরোধ করেছেন ড. ইউনূসের সমালোচনায় শালীন হবার জন্য[১৯]। যদিও সে আহ্বান খুব একটা কাজে আসেনি। ইউ এস সহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ তাদের উদ্বেগের কথা জানায় বিভিন্ন সময়।

উপসংহার:
দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাতে চেয়েছিলেন ড. ইউনূস। সেটা হবার নয়। তবে দরিদ্র মানুষের ভাগ্যের কিছুটা পরিবর্তন নিশ্চয়ই করতে পেরেছেন; কতটুকু পেরেছেন সেটা ভবিষ্যৎ বিচার করবে। সরকার আইনের দোহাই দিয়ে একজন বুড়ো মানুষকে বিদায় দিচ্ছে। যে মন্ত্রী সেটা করছেন তিনি আরো বুড়ো কিন্তু মন্ত্রী হবার জন্য বয়স, শিক্ষা, যোগ্যতা কোন বিষয় নয়। প্রধানমন্ত্রীও তাঁর পূর্বপ্রতিশ্রুত অবসর গ্রহণের বয়স পার করেছেন। দেখা যাক কী হয়।

শেষ বিচারটা সবসময় জনগণই করবে। ড. ইউনূসের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।

==============================
তথ্যসূত্র:
[১] The Gramee Bank Ordinance 1983
[২] ডক্টর ইউনূসের দারিদ্র্য বাণিজ্য, বদরুদ্দীন উমর, প্রথম প্রকাশ মে ২০০৬, সংস্কৃতি প্রকাশনী (গ্রন্থভুক্ত ৫টি প্রবন্ধের মূল দুটি ১৯৯৩ সালের, বাকীগুলো ২০০৬ সালে রচিত)।
[৩ক] ক্ষুদ্র-ঋণের বৃহৎ বাণিজ্য: আনু মুহাম্মদ
[৩খ] গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষমতা ও একজন সম্পাদকের ক্ষমা প্রার্থনা প্রসঙ্গে: আনু মুহাম্মদ
[৪ক] দারিদ্র জাদুঘর: কল্লোল মোস্তফা।
[৫] ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা: পূঁজির নয়া রূপকার: টিটু দত্ত গুপ্ত।
[৬] ড. ইউনূস অর্থ আত্মসাৎ করেননি: খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।
[৭] ক্ষুদ্র-ঋণ ও বাংলাদেশের দারিদ্র্য: ড. তারেক শামসুর রেহমান।
[৮] আমরা কীভাবে আমাদের মান-মর্যাদা রক্ষা করব: রেহমান সোবহান।
[৯] ক্ষুদ্র-ঋণ: সমস্যা আছে, বিকল্প কী: মহিউদ্দিন আহমেদ।
[১০] Yunus 'siphoned Tk 7bn aid for poor' : বিডিনিউজ২৪
[১১ক] Grameen Bank's Response to Recent Press Reports: ইউনূস ফাউন্ডেশন
[১১খ] অর্থ স্থানান্তর: গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাখ্যা: গ্রামীণ ব্যাংক
[১২] Report on Norwegian assistance to Grameen Bank: নোরাড
[১৩] Grameen: Norway gives all-clear to Bangladesh bank: বিবিসি নিউজ
[১৪] বিডিনিউজ ২৪
[১৫] কালের কণ্ঠ
[১৬] গরীবের রক্ত চুষলে ধরা খেতেই হয়।
[১৭] গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়ে ৫সদস্যের তদন্ত কমিটি।
[১৮] ফ্রেন্ডস অফ গ্রামীণ।
[১৯] বিশিষ্টজনদের আহ্ববান।

২নংটি বাদে সবগুলো রেফারেন্স পাওয়া যাবে এখানে
২নং পুস্তকটির কপিস্বত্ত্ব থাকায় দেয়া সম্ভব হলো না।


মন্তব্য

আলমগীর এর ছবি

@মুর্শেদ
ফরম্যাটিংএ বিবিকোড, হেইচটিএমএল কোনটাই কাজ করে না।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমি তো দেখি কাজ করেছে! হাসি

আলমগীর এর ছবি

স্টেঞ্জ: কোডে দেখা যায় ট্যাগ আছে, কিন্তু বোল্ড রেন্ডার হচ্ছে না মন খারাপ
আমার পিসির সমস্যা হবে, দুঃখিত।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এরশাদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো কিভাবে তুলে নিচ্ছে সেটার দিকে তাকালে আইনগতভাবেই ইউনূসকে সরাচ্ছে-- সরকারের এই দাবী হাস্যকর হয়ে পড়ে। খালেদা-হাসিনা কবে যাবে সেই প্রশ্ন কি নি:শঙ্কভাবে এখন কেউ করতে পারে? গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য 'বুকের রক্ত' ঢেলে দেয়ার যারা দাবী করে তারা তো নিজেদের মধ্যেই সমঝোতার মাধ্যমে (নাকি প্রাণ হারানোর ভয়ে কেউ প্রতিদ্বন্দিতা করে না?) রাজতন্ত্র জারী রেখেছে। এদের মুখে অন্তত আইনের দোহাই দেয়া মানায় না।

ব্যক্তিগত হিংসা, ব্যর্থতা, দৌড়ঝাঁপ করেও ইউনূসের সমপর্যায়ের খ্যাতি বা সম্মান অর্জন করতে না পারা, এসবই হয়তো মূল কারণ। অর্থমন্ত্রীর আব্দুল মাল মুহিতের শ‌্যাম না রাখি না কুল রাখি অবস্থা দেখে মায়াই লাগছে।

হিমু এর ছবি

গ্রামীণ ব্যাঙ্ককে দরিদ্রদের ব্যাঙ্ক হিসেবে সামনে রেখে ক্রমশ "গ্রামীণ" তকমাআঁটা অন্যান প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর সাথে গ্রামের দরিদ্র মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু দরিদ্র মানুষের জীবনের মান উন্নয়নের মিথের সুবিধা নেয়ার সুযোগ আছে, বেড়ে উঠছে। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের রক্তপান করে বেড়ে উঠছে এই সহোদরা প্রতিষ্ঠানগুলি [সূত্র]। মনে হচ্ছে, দরিদ্রসেবার মলাটের ভেতরে স্বচ্ছন্দে চলছে নিরেট বাণিজ্য। এই বাণিজ্যের শিখণ্ডী ড. ইউনূসকে কোনো প্রশ্ন করা হলেই মলাট দেখিয়ে আমাদের বলা হচ্ছে, ইনি নোবেলজয়ী জাতির ত্রাতা এবং গরীবের উদ্ধারকর্তা, এনাকে কোনো প্রশ্ন করা মানেই দেশ ও জাতির বিরাট অবমাননা।

আজকে ড. ইউনূসকে যারা "হেনস্থা" করছে, তাদের কাউকেই পাবলিক সাধু মনে করে না, কিন্তু ইউনূসকে যে প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি করা হয়েছে বা হচ্ছে, সেগুলোর মেরিট নিয়ে আমাদের ভাবা প্রয়োজন।

আলমগীর এর ছবি

ইউনূস দরিদ্রসেবা করেন তেমনটি মনে করি না। যতক্ষণ না আমি জানতে পারছি সে সব সহদোর প্রতিষ্ঠানগুলোর লাভের টাকা ইউনূসের পকটে যাচ্ছে ততক্ষণ আমি তাকে রক্তচোষক, মহাজন ইত্যাদি বলতে নারাজ। এ ডিল ক্যান্ট বি উইন-উইন, যতক্ষণ ডিলের দু-পক্ষই খুশী ততক্ষণ তৃতীয় কারো কোন সমস্যা থাকার কথা না। গ্রামীণ যদি গরীব মানুষকে বেকায়দায় ফেলে রক্ত চুষে তবে সরকার তার প্রতিকার সহজেই করতে পারে। সরকারের হাতে গ্রামীণের অর্ডিন্যান্স বদলাবার ক্ষমতা আছে। ইউনূসকে রক্তচোষা বলে গ্রামীণকে কব্জা করা কাম্য হতে পারে না। আমি পুঁজিবাদী, তাই বাণিজ্যে সমস্যা দেখি না যতক্ষণ আইন মেনে করা হচ্ছে, সরকার ঠিকঠিক প্রাপ্য পাচ্ছে।

বাই দি ওয়ে, পরিশ্রমী পোস্ট বল্লেন না যে চোখ টিপি

হিমু এর ছবি

ইউনূসকে রক্তচোষা বলাটা বাড়াবাড়ি তো বটেই। কিন্তু ইউনূস দুনিয়ার সব ব্যাঙ্কারের মতোই একজন মহাজন। আর ইউনূস ঠিক নগদ টাকার জন্যে এসব করেন, সেটাও মনে হয় না। তিনি প্রতিপত্তি পছন্দ করেন বলে আমার কাছে মনে হয়েছে, আর বিপুল মূলধনের মালিক এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটির পরিচালনা পর্ষদের শীর্ষে তিনি রয়েছেন বলে যথেষ্ট প্রতিপত্তি তিনি অর্জন করেছেনও। যে ব্যাপারটা আমরা পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি তা হচ্ছে, উনি একটা ব্যাঙ্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আর বয়সের সীমাটা তার জন্যেও প্রযোজ্য। উনি দশ বছর ধরে এই পদে বসে আছেন, এটা তো ওনার নিজের জন্যেই অসম্মানজনক। এই ধরনের আচরণ রাজনৈতিক দলের প্রধানদের মধ্যে দেখা যায়, কিন্তু উনি না নোবেল লরিয়েট?

আর গ্রামীণ ব্যাঙ্ক নিয়ে যে কোনো প্রশ্ন উঠলেই আমরা শুনি, এটা গরীবের ব্যাঙ্ক, গরীবরাই এর মালিক, ইউনূস বেতনভোগী কর্মকর্তা মাত্র। আজ দেখলাম [সূত্র] উনি মন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে নিজের পছন্দসই চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়ার অনুরোধ করেছিলেন এক বছর আগেই। যে দরিদ্র স্বল্পশিক্ষিত নারীদের পরিচালক ট্যাগ মেরে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শোকেসে সাজিয়ে রাখা হয়েছে, তারাই নাকি এর লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মালিকের প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের কোনো অংশগ্রহণ তো মওলার এই চেয়ারম্যান নিয়োগ সংক্রান্ত আলেকবাজিতে দেখা গেলো না। এই কারবার বহু দিন ধরেই নাকি চলমান। এখন উনি নোবেল জয় করে এসে কেন এই ধরনের আচরণ করেন, সেটাও ইউনূসসমর্থকরা ব্যাখ্যা করেন না। এই আচরণ যদি গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে সরকারের আচরণও গ্রহণযোগ্য। শঠে শাঠ্যং।

*পরিশ্রমী পোস্ট না, শ্রমসাধ্য পোস্ট। চলুক।

অতিথি লেখক এর ছবি

আচ্ছা? কমেন্টে তারা মারার কোন উপায় নাই???
আপনার কমেন্টে আমার লক্ষ তারা, একদম মনের কথা বলছেন।
আলমগীর ভাই ও টাইম মতো একটা পোস্ট দিসেন, ওটার কমেন্ট পরে করছি।
--
কালো ও সাদা

আলমগীর এর ছবি

পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি তা হচ্ছে, উনি একটা ব্যাঙ্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আর বয়সের সীমাটা তার জন্যেও প্রযোজ্য।

পুরোপুরি সঠিক না। ব্যাংক কোম্পানি আইন থেকে গ্রামীণকে স্পষ্টত অব্যহতি দেয়া হয়েছে অর্ডিন্যান্সে। ওই বয়সসীমা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিয়ন্ত্রনকৃত ব্যাংকের বেলাতেই প্রযোজ্য। গ্রামীণ নামে ব্যাংক হলেও চরিত্রে ব্যাংক নয়। গ্রামীণের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে পরিচালনা পর্যদকে। শর্ত দেয়া হয়েছে নিয়োগের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে, পর্যদ যেটা একবার করেছে। একই সাথে পর্যদকে অর্ডিন্যান্সের সাথে বিরোধমূলক নয় এমন নিয়ম তৈরি করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বিষয়টা সহজ না।

হেনস্থারে কমার মধ্যে দিলেন? শক্তি দইয়ে ভেজালের অভিযোগে যদি তাকে আদালতে দৌড়াতে হয় সেটা হেনস্থা মনে করেন না? এর মধ্যে অন্য কোন উদ্দেশ্য দেখতে পান না?

তাদের কোনো অংশগ্রহণ তো মওলার এই চেয়ারম্যান নিয়োগ সংক্রান্ত আলেকবাজিতে দেখা গেলো না। এই কারবার বহু দিন ধরেই নাকি চলমান।

আপনি কষ্ট করে অর্ডিন্যান্স পড়ে নেন (১নং সূত্র)। চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষমতা হলো সরকারের হাতে। ড. ইউনূস সুপারিশ করেছে মাত্র, এক্সিট প্লানের অংশ হিসাবে। নারীদের থেকে পরিচালক কীভাবে বাছাই করা হয়, কেবলমাত্র এ ব্যাপারটা অস্পষ্ট (লেখাতেই বলেছি।)

হিমু এর ছবি

কথা সত্য, শক্তি দইয়ের ভেজালের জন্য ইউনূসকে মামলায় ফাঁসানো হেনস্থাই বটে। আমি বলছিলাম গ্রামীণ ব্যাঙ্কের এম ডি পদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রসঙ্গে। মনে হয় বোঝাতে পারিনি ঠিকমতো।

গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে যদি কোনো বিশেষ নিয়ম খাটে, তাহলে আমরা কেন ইউনূসকে অপসারণের প্রসঙ্গে কোনো বিশেষ পন্থা দেখে মন খারাপ করছি? বিশেষ ব্যবস্থার সুবিধা নেবেন, অসুবিধাটা নেবেন না?

ড. ইউনূসের এই সুপারিশের বৈধতা নিয়ে আমি অভিযোগ করছি না, করছি নৈতিকতা নিয়ে। আমাদের দেখানো হচ্ছে, গরীবেরা এই ব্যাঙ্কের মালিক, এরাই পরিচালক, আর সেই মলাটের ভিতরে দেখতে পাচ্ছি যাবতীয় কলকাঠি নাড়ছেন আমাদের সবেধন নোবেলমণি ইউনূস সাহেব। গরীব মালিকের চামড়া গায়ে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক তো তাহলে শেষ বিচারে ইউনূসের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণেই রইলো। এই ব্যাপারটাকে ধামাচাপা দিয়ে গ্রামীণ ব্যাঙ্ককে প্রশ্নের মুখ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন ইউনূসপন্থীরা। সেটা কি নৈতিক? এককালে মহাজনেরা মূর্খ লোকের কাছ থেকে টিপসই নিয়ে জোতজমি ঘটিবাটি বন্ধক রাখতো, সেই দৃশ্যের সাথে এই নামকাওয়াস্তে গ্রামীণ নারী পরিচালকদের সামনে রেখে কায়কারবার চালানোর পার্থক্যটা কোথায়? আপনি মুখে বলবেন দরিদ্রের ক্ষমতায়ন, আর কাজে দেখাবেন ক্ষমতাবানের ভূমিকায় দরিদ্রের মূকাভিনয়, আবার অ্যাকাডেমিক রেকর্ডের ঔজ্জ্বল্য চোখে ফ্ল্যাশ করে নোবেলের ওজন চাপিয়ে দিবেন প্রশ্নকর্তার স্কন্ধে ... এইটা কি একেবারেই হাসিনাখালেদামার্কা কাজ হয়ে গেলো না? উনি না নোবেল লরিয়েট? বাংলাদেশকে না উনি একাই দুই হাজার ছয়ের অক্টোবরের তেরো তারিখে একেবারে জাতে তুলে ফেলেছেন? এই আচরণ কি ওনার কাছ থেকে কাম্য?

একজন ব্যবসায়ী নোবেল পেলেও ব্যবসায়ীই থেকে যান, পয়গম্বর তো আর হয়ে ওঠেন না। বায়ু-পিত্ত-কফ সারাতেও যদি আমরা নোবেলের কবিরাজি টোটকা দিতে থাকি, তাহলে তো সমস্যা। আজকে যদি ফুলবাড়ি নিয়ে কোনো টেবিলতলার ডিল হয়, আর আমাদের দুই নেত্রীর একজন যদি নোবেল বগলস্থ করেন, তখন ইউনূসের নোবেল পানিতে ভিজিয়ে যারা সকালে পান করছেন, তাদের প্রতিক্রিয়াটা কী হবে আসুন কল্পনা করি।

আলমগীর এর ছবি

গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে যদি কোনো বিশেষ নিয়ম খাটে, তাহলে আমরা কেন ইউনূসকে অপসারণের প্রসঙ্গে কোনো বিশেষ পন্থা দেখে মন খারাপ করছি? বিশেষ ব্যবস্থার সুবিধা নেবেন, অসুবিধাটা নেবেন না?

সোনালী, কৃষি বা ডাচ-বাংলা ব্যাংক অর্ডিন্যান্স দিয়ে হয়নি, এদের ক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পনি আইন প্রযোজ্য; বাংলাদেশ ব্যাংক(বিবি) তাদের কর্তা; বিবির সব নির্দেশ আইনত মানতে বাধ্য।
জিবি ব্যাংক কোম্পানি আইনের জুরিসডিকশনে পড়ে না, সেটা অর্ডিন্যান্সে স্পষ্টত বলা আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃত্বও জিবির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বোঝাতে পারলাম?

বিশেষ ব্যাবস্থা আর পন্থা তো এক হলো না। আজকে সংসদে বিল এনে অর্ডিন্যান্স সংশোধন করে দিলে কোন সমস্যা নেই। সরকার বিবির ঘাড়ে বন্দুক রেখে নিজেদের একটা ইচ্ছা পূরণ করলে আমার সমস্যা আছে।

চেয়ারম্যান সুপারিশে নৈতিকতার সমস্যাও আমি দেখি না। উনি বিদায় নেয়ার আগে কে কোন পদের জন্য উপযুক্ত হবে তা বলতে সমস্যা কোথায়? আবারো বলি, চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয় সরকার তার একক বিবেচনায়। সুপারিশটি পর্যদে আলোচনা হয়েছে সেটা আপনি-আমি কেউ জানি না।

আবার অ্যাকাডেমিক রেকর্ডের ঔজ্জ্বল্য চোখে ফ্ল্যাশ করে নোবেলের ওজন চাপিয়ে দিবেন প্রশ্নকর্তার স্কন্ধে ... এইটা কি একেবারেই হাসিনাখালেদামার্কা কাজ হয়ে গেলো না?

আপনি সেটা বলতে পারেন। আমার মনে হয়েছে ্একজনকে বিবেচনার সময় তার সবকিছু্ই ঘাঁটা দরকার আছে।

একজন ব্যবসায়ী নোবেল পেলেও ব্যবসায়ীই থেকে যান, পয়গম্বর তো আর হয়ে ওঠেন না। বায়ু-পিত্ত-কফ সারাতেও যদি আমরা নোবেলের কবিরাজি টোটকা দিতে থাকি, তাহলে তো সমস্যা।

ঠিক কথা। গ্রামীণ সম্পর্কে আমরা অনেকে না জেনে মন্তব্য করি। মূল লেখাতেও বলেছি, গ্রামীণের (ও তার সহদোর প্রতিষ্ঠানের) আর্থিক প্রতিবেদন পাওয়ার পরই জানা যাবে কে কোথায় কী করেছে।

আজকে যদি ফুলবাড়ি নিয়ে কোনো টেবিলতলার ডিল হয়, আর আমাদের দুই নেত্রীর একজন যদি নোবেল বগলস্থ করেন,

অসম্ভব কিছু না। আজকেই বিশ্বব্যাংক ১বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে।

হিমু এর ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃত্বও জিবির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বোঝাতে পারলাম?

না। এটা একটু কষ্ট করে যদি অধ্যাদেশের ধারা থেকে কোট করে বোঝাতেন, সুবিধা হতো। কারণ গ্রামীণ ব্যাঙ্ক অধ্যাদেশ ১৯৮৩তে নাকি বলা আছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের অনুমোদন প্রয়োজন। আপনি বলছেন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কর্তৃত্ব প্রযোজ্য নয়। হয় বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ সম্পর্কে ঠিকমতো জানে না, নয়তো আপনি অধ্যাদেশটি পড়তে ভুল করছেন। কোনটা সঠিক?

বিশেষ ব্যবস্থায় ইউনূস এই সত্তর বছর বয়সে একটা ব্যাঙ্কের (সেটা বিশেষায়িত হলেও একটা ব্যাঙ্ক, দাতব্য সংস্থা তো আর নয়) ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে যেতে চাইলে, বিশেষ ব্যবস্থায় তাকে অপসারণে সমস্যা কোথায়? অর্ডিন্যান্সে ত্রুটিটা কী যে সেটা সংসদে সংশোধন করতে হবে? একটু কোট করে বোঝান।

চেয়ারম্যান পদে ইউনূস নিজেকেই মনোনয়ন দিয়েছেন। সেটা সম্ভব না হলে ওনার তিনজন প্রিয়পাত্রদের একজন। এই মনোনয়নের ব্যাপারে পর্ষদে যদি আলোচনা হয়েই থাকবে, তাহলে কেন সকলের স্বাক্ষরিত একটি আনুষ্ঠানিক সুপারিশপত্র মন্ত্রীর কাছে না গিয়ে ইউনূস সাহেবের স্বহস্তে লেখা একটি চিঠি গোপনে মন্ত্রীর কাছে গেলো? এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারের দালিলিক উপস্থাপনা জরুরি, যতটুকু জানি। নাহলে তো এতগুলো পরিচালক দরকার হতো না, একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকই চোথা লিখে কাজ চালাতে পারতেন।

কে কোথায় কী করেছে তা নিয়ে একটা রিপোর্টের লিঙ্ক দিয়েছি। আশা করি মন্তব্য করবেন।

সেটাই। কপাল ভালো এরশাদ কিংবা সাকা নোবেল পায়নি। পেলে আমাদের যে কী হতো, ভাবতেই আতঙ্কে হাত পা ...

আলমগীর এর ছবি

[1] থেকে
সেকশন 4.3

Subject to sub-section (4), the Banking Companies Ordinance, 1962 (LVII of 1962), and any other law for the time being in force relating to banking companies shall not apply to the Bank.

[এখানে Bank মানে গ্রামীণ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে বিবির কর্তৃত মানতে হবে তা সংশ্লিষ্ট আইনে আছে] দেখা যাক, সাব-সেকশন (4) এ কী বলা আছে।
সেকশন 4.4

The Government may, by notification in the official Gazette, direct that specific provisions of the Banking Companies Ordinance, 1962 (LVII of 1962), or any other law for the time being in force relating to Banking companies shall be applicable to the Bank.

মানে দাঁড়াচ্ছে ব্যাংকিং অর্ডিন্যান্সের কোন ধারা গ্রামীণের ক্ষেত্রে সরকার প্রয়োগ করতে পারবে, তবে সেটা অফিসিয়াল গ্যাজেট নোটিফিকেশন করে।

বিবির কর্তৃত্ব যে নেই সেটা বিবির প্রথম চিঠিতেই স্পষ্ট ছিলো যেখানে মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছিল। আইনে কী দাঁড়ায় সেটা দেখার জন্য রোববার রায়ের অপেক্ষা করতে হবে।

চেয়ারম্যান পদে ইউনূস নিজেকেই মনোনয়ন দিয়েছেন। সেটা সম্ভব না হলে ওনার তিনজন প্রিয়পাত্রদের একজন। এই মনোনয়নের ব্যাপারে পর্ষদে যদি আলোচনা হয়েই থাকবে, তাহলে কেন সকলের স্বাক্ষরিত একটি আনুষ্ঠানিক সুপারিশপত্র মন্ত্রীর কাছে না গিয়ে ইউনূস সাহেবের স্বহস্তে লেখা একটি চিঠি গোপনে মন্ত্রীর কাছে গেলো?

পর্ষদে আলোচনা হয়েছে কিনা জানা নেই (আগের মন্তব্যে 'কিনা' বাদ পড়ে গিয়ে মনে হয় অন্য অর্থ দাড়িয়েছে)। সেটা গ্রামীণ কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে। ইউনূসের নিজে নিজের নাম মনোনয়ন নয়, প্রস্তাব বলা যেতে পারে। চেয়ারম্যান নিয়োগে সরকারের কারো কাছে মনোনয়ন নেয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। এ চিরকূট বরং প্রমাণ করে ড. ইউনূস ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ ছাড়তে চেয়েছিলেন; মাল মুহিত বরং আমাদের নির্জলা মিথ্যা কথা শুনিয়েছেন। তার স্যানিটি নিয়েই আমার সন্দেহ আছে।

আলমগীর এর ছবি

MD নিয়োগ:
সেকশন ১৪.১

There shall be a Managing Director of the Bank who shall be appointed by the Board with the prior approval of the Bangladesh Bank.

[জিবির ভাষ্যমতে তারা একবার অনুমোদন নিয়েছিলো।]
বোর্ডের নিয়ম তৈরির ক্ষমতা:
সেকশন ৩৬.১

The Board may, make regulations, not inconsistent with the provisions of this Ordinance and the rules, to provide for all matters for which provisions is necessary or expedient for the purpose of giving effect to the provisions of this Ordinance and efficient conduct of the affairs of the Bank.

[এখন তর্কের খাতিরে বলি, গ্রামীণ বোর্ড যদি MDএর চাকুরিনীতি বানায় সেটা কীভাবে এ অর্ডন্যান্সের বিরোধী হয়?]
আলীগের গত টার্মে অস্ত্রের মুখে UCBL ব্যাংক দখল করেছিলো এক আলীগ নেতা। ড. ইউনূসকে প্রায়ই একই পন্থায় তাড়ানো হচ্ছে।

হিমু এর ছবি

এখন তর্কের খাতিরে বলি, গ্রামীণ বোর্ড যদি MDএর চাকুরিনীতি বানায় সেটা কীভাবে এ অর্ডন্যান্সের বিরোধী হয়?

উত্তর তো আপনি নিজেই দিয়েছেন,

There shall be a Managing Director of the Bank who shall be appointed by the Board with the prior approval of the Bangladesh Bank.

গ্রামীণ ব্যাঙ্ক অনুমোদন নিয়েছিলো, কিন্তু কবে?

আলমগীর এর ছবি

এ খবরের ভিত্তিতে বলি (সর্বশেষ ডেভলেপমেন্ট নিয়ে যদিও আমি অত ভালো স্টাডি করিনি)

প্রকৃতপক্ষে অধ্যাদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিয়েই পরিচালনা পর্ষদ মুহাম্মদ ইউনূসকে এমডি পদে নিয়োগ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে অধ্যাদেশের কোনো লঙ্ঘন হয়নি। তা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বিষয়টি অনেকবার উল্লেখ করার কথাও সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৯৭ সালের স্থিতির ভিত্তিতে পরিদর্শন (নিরীক্ষা) কার্যক্রম শুরু করে এবং এর পর থেকে প্রায় প্রতিবছরের স্থিতির ভিত্তিতে পরিদর্শন কার্যক্রম চালিয়ে এসেছে। এর মধ্যে শুধু একবারই (১৯৯৯ সালের স্থিতির ভিত্তিতে) এমডি নিয়োগের ব্যাপারে পরিদর্শক দল আপত্তি তোলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে পরিপালন প্রতিবেদন প্রেরণ করে। এই পরিপালন প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক সন্তুষ্ট হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক কখনো গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ নিয়ে আর কোনো দিন কোনো প্রশ্ন তোলেনি।

প্রসঙ্গত, বিবি ড. ইউনূসের পদ অবৈধ ঘোষণা করে দ্বিতীয় চিঠিতে, অনেকটা কর্তায় ইচ্ছায় কর্ম স্টাইলে।
আমার ধারণা ঠিক কিনা তা দেখার জন্য আগামী কাল রায়ের অপেক্ষা করতে হবে।

গ্রামীণকে স্বেচ্ছাচারের (এবং সম্ভাব্য দুর্নীতির) ক্ষেত্র তৈরী করে দিয়েছে অডিট সংক্রান্ত ধারাগুলোতে সরকারের ক্ষমতা হ্রাস করে।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

অর্থনীতির অন্যান্য টার্মের মত ক্ষুদ্রঋণেরও ধনাত্মক-ঋণাত্মক দুটো দিকই আছে।
বিভিন্ন প্রশমন নীতির মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণের ঋণাত্মক দিকগুলো কমিয়ে ধনাত্মক দিকগুলো বেশি ফুটিয়ে তোলা যায়।
গ্রামীণ ব্যাংককে ধনাত্মক-ক্ষুদ্রঋণ-প্রকল্পের প্রকৃত ধারক বলা যায় না ঠিকই কিন্তু বর্তমানে ড: মুহম্মদ ইউনুসের সাথে যা হচ্ছে তা সর্ম্পূণ আওয়ামী দুষ্ট-রাজনীতির অংশ।

ঠাট্টার ছলে, বন্ধুমহলে প্রচলিত: হাজার হাজার ডিগ্রিধারী শেখ হাসিনাকে নোবেল না দেয়ায়, উনি নোবেল কমিটির কিছু করতে না পেরে অবশেষে ড: মুহম্মদ ইউনুসের পশ্চাদধাবন করছেন।
আরো একটা কথা প্রচলিত আছে, শেখ হাসিনার বাসায় কোন টিভি-রেডিও-নেট-ডিশ লাইন নাই। কারণ, উনি যেভাবে পাবলিক সভায় কথা বলেন যেন আমরা বাংলাদেশীরা স্বর্গে বাস করতেছি। উনি বর্তমান বাংলাদেশ সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞাত।

দ্রোহী এর ছবি

বাংলাদেশের গুণীজন বলে কথা। ভরসা পাওয়ার কোন যুক্তি নাই। মন খারাপ

অপছন্দনীয় এর ছবি

ধন্যবাদ লেখাটার জন্য।

রুমন_ এর ছবি

পরিসংখ্যান ব্যুরো জরিপ অনুযায়ী, ১৯৯৫ সালে ৩৫% মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করতো। ২০০৫ সালে বেড়ে হয়েছে ৪৮%-৪৯%। গ্রামীণ ব্যাংক কিভাবে চার কোটি মানুষের ভাগ্যউন্নয়নের সাথে যুক্ত (প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী), হিসাবটা নিশ্চিত হয় না।

ক্ষুদ্র ঋণ হিসেবে এখন পর্যন্ত গ্রামীণে ভর্তুকি এসেছে ৩.৫ লক্ষ কোটি টাকা, বাংলাদেশের বাৎসরিক বাজেটের তিনগুন। এই পরিমাণ টাকা দেশের বনজ-কৃষিজ-ফলজ-মৎসজ খাতে যদি ব্যয় করা হতো, দারিদ্র সত্যিকারভাবে মিউজিয়ামে যেতো। ৪৬৫ উপজেলায় ৬০০কোটি করে টাকা দিয়েও উদবৃত্ত থাকতো, শহরেই মানুষ পাওয়া যেতো না। বাংলাদেশ উর্বর মাটির দেশ, কাকের বিষ্ঠার সাথে বীজ মাটিতে পড়লেই বিভিন্ন জায়গায় গাছ জন্মে। এই খাতগুলোতে বিনিয়োগ করলে বছরখানেকের মধ্যেই রপ্তানী শীর্ষ দেশে বাংলাদেশ পরিণত হতো।

২০০৯ সালে ভারতে ১৭ হাজারেরও বেশী কৃষক আত্মহত্যা করেছে, শুধু মধ্যপ্রদেশেই হাজারের উপরে। গড় হিসাবে প্রতিদিন ৭জনেরও বেশী কৃষক আত্নহননের পথ বেছে নিয়েছিল, অন্যতম প্রধান একটি কারণ এই -'ক্ষুদ্রঋণ'। ঋণ সমস্যা যারা চিহ্নিত করেছে তারা ঠিকঠাকই বিরুদ্ধ চিৎকার করে (ড. ইউনুসের বন্ধুমহল)।

ব্যক্তি ড.ইউনুস সম্পর্কে বিষেদ্গার পোষণ করি না, কিন্তু আমি মুনাফা ব্যবসার বিরুদ্ধে। সমস্যা হলো, যে দুটি রাজনৈতিক দল ঘুরে-ফিরে প্রতিবার সরকার গঠন করে, তারা জনগনের জন্যে কল্যাণকামী নয়। তাই, 'গ্রামের লুঙ্গি-গেঞ্জি পরিহিত কৃষক শহুরে কোন ব্যাংকে ঢুকতে পারত না' -এটা নির্মম বাস্তবতা এবং ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসার অন্যতম মূলধন।

-রুমন

ফাহিম হাসান এর ছবি

জনাব রুমন,
যুক্তি হিসেবে কোন তথ্য ব্যবহার করলে সেই তথ্যের সূত্র উল্লেখ করাটা খুব দরকার। নাহলে যারা আলোচনা অনুসরণ করেন, তারা অনেক সময় বিভ্রান্ত হন।

পরিসংখ্যান ব্যুরো জরিপ অনুযায়ী, ১৯৯৫ সালে ৩৫% মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করতো। ২০০৫ সালে বেড়ে হয়েছে ৪৮%-৪৯%।

ভাই, এভাবে হঠাৎ একটা তথ্য উল্লেখ করলে কিছু বোঝা যায় না। ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ হল এক দশক। এর মাঝে জনসংখ্যা ফুলে ফেঁপে উঠেছে। নিচের ছবি দেখেন:

সূত্র: বাংলাপিডিয়া, উইকিপিডিয়া

এখন আপনি বলেন, রিসোর্স সেই তুলনায় কতটুকু বেড়েছে? ইনফ্রাস্ট্রাকচার কতটুকু উন্নত হয়েছে? বন্যা, ঝড় এ ধরনের সাপ্লাই শক এর কারণেও তো দারিদ্রতা বাড়ে-কমে। এত ছোট একটা তথ্য থেকে আপনি এত বড় উপসংহারে চলে গেলেন !!! অ্যাঁ

আমি Bangladesh Statistical Bureau (BBS) এর ইন্টারনেটে প্রকাশিত পাব্লিকেশানগুলো ঘাঁটলাম। 1995 সালেরটা অনলাইনে পেলাম না। আপনার জন্য BBS এর Household Income and Expenditure Survey 2000, 2005 এর কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরলাম। ক্রস রেফারেন্স পাবেন এখানে

দেখেন ২০০০ ও ২০০৫ এর মধ্যে উন্নতি -

HIES 1 Bangladesh

আরো দেখেন -

HIES2_Bangladesh

এখন বলেন তো কাহিনী কী? কাহিনী যেটা আপনি এড়িয়ে গেছেন -

Long term poverty trend

১৯৯৫ থেকে ২০০০ এ মাথাপিছু হিসাবে (Head Count measure) দরিদ্রতার হার বেড়েছে। কিন্তু ২০০০ থেকে ২০০৫ এ এই সূচক হয়েছে ঊর্ধ্মুখী।

তাহলে দশক বিচার আমরা কিভাবে করবো? এর জন্য আপনাকে অন্যান্য শক, ভ্যারিয়েবল constant রেখে/ control করে হিসাব করতে হবে। এর জন্য একটু সূক্ষ্ম statistical/econometrics tool ব্যবহার করতে হবে। দেখতে হবে এমন কী ঘটেছে (রাজনৈতিক, সামাজিক বা প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা) যার জন্য এই উঁচা-নিচা। অন্তত সাধারণ ট্রেন্ডটুকু দেখুন -

per capita GDP বাংলাদেশ

ঠিকই দেখেন ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ এ মাথাপিছু GDP বেড়েছে। এমন কী private consumption ও বেড়েছে।

এজন্য ভাই, ফ্যাক্টবুকে একটা ডেটা দেখে এমন উপসংহারে না আসাই শ্রেয়।

ফাহিম হাসান এর ছবি

কাহিনী এখানেই শেষ না -

Bangladesh Economic Review 2005, Chapter 13 (Download) খুলে দেখেন।

Poverty BD 1

urban ও rural দুইক্ষেত্রেই হিসাবটা দেখেন। FEI ও DCI দুইরকম হিসাবেই দরিদ্রতার হার কমেছে।

রুমন_ এর ছবি

ফাহিম ভাই,
আপনার বিভ্রান্তির জন্যে দুঃখিত। আলমগীর ভাইয়ের সরাসরি ছাত্র, তাই লিঙ্ক দেখে ক্যাজুয়ালি কমেন্ট করে গিয়েছি। অর্থনীতিও অত ভালো বুঝি না, বাংলা ভাষায় পড়ার চেষ্টা করি।

আপনি আমার মন্তব্যের প্রথম প্যারার উপরে কমেন্ট করেছেন; ১৯৯৫ সালের ডাটার জন্যে উইকি দেখুন- 'জিডিপি-খাতওয়ারী' দ্রষ্টব্য।

এখন আপনি বলেন, রিসোর্স সেই তুলনায় কতটুকু বেড়েছে? ইনফ্রাস্ট্রাকচার কতটুকু উন্নত হয়েছে? বন্যা, ঝড় এ ধরনের সাপ্লাই শক এর কারণেও তো দারিদ্রতা বাড়ে-কমে। এত ছোট একটা তথ্য থেকে আপনি এত বড় উপসংহারে চলে গেলেন !!! অ্যাঁ
...
১৯৯৫ থেকে ২০০০ এ মাথাপিছু হিসাবে (Head Count measure) দরিদ্রতার হার বেড়েছে। কিন্তু ২০০০ থেকে ২০০৫ এ এই সূচক হয়েছে ঊর্ধ্মুখী।

স্থিরমূল্যে ১৯৮৪-৮৫ থেকে ২০০০-২০০১ পর্যন্ত জিডিপি বেড়েছে শতকরা প্রায় ১০০ভাগ। এই একই সময়ে দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচিতে বরাদ্দও বেড়েছে শতকরা প্রায় ৭০০ভাগ। অথচ এই সময়কালে দারিদ্র অনুপাতের চেহারা দেখুন, ১৯৮৩-৮৪ সালে ক্যালোরি গ্রহনভিত্তিক দারিদ্র অনুপাত ছিল শতকরা ৬২.৬ ভাগ, ২০০০ সালে শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ। দারিদ্র বিমোচনের অনুপাত বছর প্রতি 'মাত্র' ০.৭২ ভাগ। মাঝে কিছুটা ভালো, ২০১০ সালের জন্যে গুগল করে দেখুন, দারিদ্র অনুপাত শতকরা ৫০ ভাগ পাবেন।

Head Count measure-র প্রবণতা পুরোপুরি একরৈখিক নয়। দারিদ্র হার ক্রমাগত কমছে না। নানা মাত্রার উঠা-নামা আছে। অথচ এই দশকেই দারিদ্র বিমোচনের নামে বৈদেশিক 'ভর্তুকি'/বরাদ্দ এসেছে সবচে' বেশী।

এটি দ্রুত কমেন্ট, বিভ্রান্ত হলে লিখবেন। রাতে আবার ঢুকবো।

-রুমন

হাসিব এর ছবি

আপনাদের আলোচনা থেকে ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ে উপসংহারটা কী?

অমিত এর ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকা অবস্থায় তাঁর মাথায় আসে ক্ষুদ্র-ঋণের ধারণা।

এই লাইন কি একটু মিসলিডিং ? ক্ষুদ্র-ঋণের ধারণা তো আগে থেকেই ছিল, উনি সেটার প্রয়োগ করেছেন মাত্র।

আলমগীর এর ছবি

মিসলিড করার কোন ইচ্ছে ছিল না, সেরকম মনে হলে অনিচ্ছাকৃত।
অনুগ্রহ করে সঠিক তথ্যটা জানিয়ে দিন, তাহলে কারো বিভ্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে না।

অমিত এর ছবি

ক্ষুদ্র-ঋণের ইতিহাস সম্পর্কে আমার দৌড় আপাতত উইকি পর্যন্ত

আলমগীর এর ছবি

উইকি সম্পর্ক দুষ্ট লোকেরা বলে, ইটস জাস্ট এনোদার ওপিনিয়ন হাসি

অমিত এর ছবি

অংক বাদে সবই ওপিনিয়ন হাসি
তবে ক্ষুদ্র ঋণ ডঃ ইউনুসের মস্তিষ্কপ্রসূত হলে অর্থনীতিতে উনাকে নোবেল না দেয়াটা খুবই অবাক হওয়ার মত একটা ব্যাপার হবে।

আলমগীর এর ছবি

যদ্দূর মনে পড়ে অ্যারিয়েল শ্যারন ও নবেল বিজয়ী (কিংবা একাধিকবার মনোনীত), সেটাও আবার শান্তিতে।
নোবেল নিয়া অবাক হওয়া নতুন কিছু না দেঁতো হাসি

আলমগীর এর ছবি

নাহ ভুল বলছি, ওইটা ছিলো শিমন পেরেজ। শ্যারন নাম আলোচিত হইছিল।

অমিত এর ছবি

নোবেল পিস প্রাইজ ক্যাটাগরি-টা অনেক সময়ই বিতর্কিত, বাকিগুলা না মনে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

একদম সাদাচোখে দেখেছি ড.ইউনুস আজাজিল ফেরেশতা থেকে ইবলিশের পথে যাত্রা করেছে বাংলাদেশের 'সাধু' রাজনীতিবিদদের 'অসাধু' বলে বিদেশী মিডিয়ায় সাক্ষাতকার দেবার পরেই। ২০০৬ সালেই বোধহয়।

তার কিছুদিন পর তাঁর নোবেল পাওয়ার ঘটনা ঘটলো যখন দেশে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা। সেই অস্থির সময়ে ড.ইউনুসের অস্পষ্ট ভুমিকাটা অনেকের মতো আমাকেও হতাশ করেছে। নোবেল নিতে যাবার সময় 'চালিয়ে যান' বলে ইয়াজুদ্দিনের পিঠ চাপড়ে দেয়াটা অভয় দেয়া মনে হয়েছে।

তারপর জামাত-বিএনপির সাজানো ইয়াজুদ্দিন সরকারকে যখন প্রায় ঘাড় ধরে বের করে দিল সেনাকর্তারা তখন ড.ইউনুস তার রাজনৈতিক দলের ঘোষনা নিয়ে মাঠে নামলেন সেনা ছত্রছায়ায়। তাঁর তখনকার বক্তব্যগুলো পদক্ষেপগুলো আসলেই ভারসাম্যহীন ছিল। নোবেল জিনিসটা সম্ভবতঃ তাঁকে অস্থির করে ফেলেছিল।

দেশের ক্রান্তিকালে অস্পষ্ট ভূমিকা এবং সেনাসরকারের নিরাপত্তায় রাজনৈতিক দল ঘোষণা তার প্রধানতম দুটি ভুল যা তাকে বাংলাদেশের প্রধান সকল রাজনৈতিক দলের শত্রু করে তোলে। অথচ তার আগের ২২ বছরে ড.ইউনুসের প্রতিপক্ষ ছিল কিছু ধর্মান্ধ মোল্লা এবং বামপন্থী বুদ্ধিজীবিগন। এর বাইরে যত সমালোচক সব ২০০৭ এর জানুয়ারীর পর সৃষ্ট। শেখ হাসিনা বা তার দলকে ১৯৮৩ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত কখনো টুঁ শব্দ করতে দেখিনি গ্রামীণের বিরুদ্ধে। (যদি সেরকম কোন সংবাদকাটিং কেউ দেখাতে পারেন, আমি ভুল শুধরে নেবো)

ড. ইউনুস যদি গরীবের রক্তচোষা হয় তা ১৯৮৩ সাল থেকেই হবার কথা। এটা কোন গোপন ব্যবসা নয়। কিন্তু তিনি হঠাৎ করে মহাজন সুদখোর হলেন ২০০৭ থেকে। কেন? সব ব্যাংকই প্রাতিষ্ঠানিক মহাজনী ব্যবসা। কিন্তু কেবল গ্রামীণ ব্যাংকই কেন মহাজনী অভিযোগ অভিযুক্ত হবে, আমি বুঝি না।

গ্রামীন ব্যাংকের সুদের হার বেশী বলা হয়, কিন্তু যারা বলেন তারা কি পিকেএসএফ এর সুদের হার জানেন? সুদের হার বেশী হলে সরকারের কি কোন দায় আছে? নাকি ইউনুস সাহেব চাইলে ইচ্ছেমতো সুদের হার নির্ধারন করতে পারেন? গ্রামীন ব্যাংক জোর করে কি কাউকে ঋন নিতে প্রলোভিত করে? সেই ঋন নিয়ে গ্রহীতা ক্ষতিগ্রস্থ হলে পরবর্তী গ্রাহক কি ব্যাংকের আশেপাশেও যাবে? গ্রামীন ব্যাংক এত খারাপ হয়েও এত লক্ষ মানুষকে টানতে পেরেছে কোন যাদুতে?

যারা সমালোচনা করছেন তাদের মধ্যে কেউ কখনো নিজে কথা বলে দেখেছেন কোন ঋনগ্রহীতার সাথে? পত্রিকার সংবাদের উদাহরন দেবেন না দয়া করে। আলু-কালু কখনোই উদ্দেশ্য স্বার্থ ছাড়া সংবাদ পরিবেশন করে না। আমি তত্ত্বের চেয়ে একজন মানুষের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার উপর বেশী আস্থা রাখি। আমার সেরকম প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে কয়েকটি। আপনারও যদি থাকে অন্ততঃ একটা অভিজ্ঞতার বিবরন দিন। তুলনা করতে পারবো আমার সাথে।

আমি ইউনুসের এপোলজিষ্ট নই। কিন্তু একটা মানুষ যতটুকু ভুল ততটুকুই ভুল বলতে চাই। কিন্তু আশেপাশে ডাকাতের সভাসদ নিয়ে কেউ যখন আরেকজনকে চোর বলে সব্যস্ত করে, তখন বিবমিষাই হয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

আলমগীর এর ছবি

এক সময় মোল্লারা ফতোয়া দিত, ঋণগ্রহীতা মারা গেলে সৎকার করত না। এখন মোল্লারা নতুন যুগের।

অতিথি লেখক এর ছবি

ক্ষুদ্রঋণের প্রবর্তক, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা আর শান্তিতে নোবেলজয়ী এইটুকু ছাড়া ডক্টর ইউনূস সম্বন্ধে তেমন কিছু আসলে জানতামনা। তাকে নিয়ে এত প্যাঁচাপেঁচি হয়েছে যে সেই প্যাঁচের ভয়েই তার বিষয়ে কখনও নাকগলানো হয়নি। কিন্তু এই পোস্ট পড়ে অনেক কিছু জানলাম আজ। কিন্তু এখনও সত্যটা পাইলামনা।

আসলে সমস্যা মনে হয় আমার নিজের মধ্যে মন খারাপ । ডক্টর ইউনূস কে নিয়ে যেদিকদিয়ে যাদের কথা শুনি, সেদিকটাই সত্যি মনে হয় চিন্তিত । ভালো হোক, খারাপ হোক যাইহোক না কেনো, কিন্তু আসলে একজন চরম বিভ্রান্তিকর লোক এইডা সত্যি। দেঁতো হাসি

ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি কেমন সেটা নাজানলেও ব্যাক্তিগত ও মানুষ হিসেবে তাকে আমার পরম শ্রদ্ধেয়ই মনে হয়। বাংলদেশের জন্যে তিনি যে সম্মান বয়ে এনেছেন, আমি বিশ্বাস করি সেটা তার যোগ্যতাতেই হয়েছে। কিন্তু তাকে যেভাবে সরকার নাচাচ্ছে, সেটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারেনা।

অতীত

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

‘ইউনূস ধর ইউনূস ভজ’ জাঁনরার ফরহাদ সংযোজন।

http://opinion.bdnews24.com/bangla/2011/03/04/ডক্টর-ইউনূস-রাজনৈতিক-সংস/

আলমগীর এর ছবি

লিংকের জন্য ধন্যবাদ। সবারই বাক-স্বাধীনতা আছে। আপনি সত্য-মিথ্যা আর জানার আগ্রহ মিশিয়ে পোস্ট দিতে পারলে ফরহাদ মজহার পারবে না কেন।

আমার এ লেখা নিয়ে কোন মন্তব্য নেই?

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনি সত্য-মিথ্যা আর জানার আগ্রহ মিশিয়ে পোস্ট দিতে পারলে ফরহাদ মজহার পারবে না কেন।

আমার পোস্টে মিথ্যা ছিল কই? আপনার লাইনে কথা বললে জামাতি মগবাজারকে আপনি ছাড় দিতে পারেন সহজেই। অনেকেই সেটা পারবেন না।

জাঁনরা'র নাম-ই তো বললাম। ইউনূস ধর ইউনূস ভজহাসি

আলমগীর এর ছবি

আপনার লাইনে কথা বললে জামাতি মগবাজারকে আপনি ছাড় দিতে পারেন সহজেই।

এটার । তীব্র আপত্তি জানালাম। আমার সব লেখা আনুন; উদাহরণ দিন; তারপর প্রমাণ করুন। প্রমাণ না করতে পারলে ক্ষমা চাইতে হবে আপনাকে।

আমার পোস্টে মিথ্যা ছিল কই?

সেটা আপানার পোস্টে গিয়ে বলে আসছি।

আলমগীর এর ছবি

শুভাষীশের জন্য স্ক্রিনশট যোগ করে দিলাম হাসি

আরেকটা

মুস্তাফিজ এর ছবি

বুঝি কম

...........................
Every Picture Tells a Story

যুধিষ্ঠির এর ছবি

আপনার পয়েণ্ট-অফ-ভিউ সমর্থন করি আলমগীর ভাই।

বাংলাদেশের গ্রামে আগে (হয়তো এখনও) সংস্কারবাদী স্কুল-মাস্টারদের শায়েস্তা করতো গ্রামের অশিক্ষিত মোড়লরা নানা ছলে কৌশলে - তাদের স্বার্থে যখন টান পড়ে যেত। আওয়ামি সরকার বা ড. শেখ হাসিনার প্রফেসর ইউনুসের প্রতি আচরণ দেখে আমার সেরকমটাই হচ্ছে বলে মনে হয়।

জানতে ইচ্ছা করে আইনের শৃংখলে অসহায়ভাবে বাঁধা সরকারের হাত পা গুলি ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের তাণ্ডবের সময় কী করে। ওহ, ওয়েইট, ওরা তো আসলে ড. ইউনুসকে গালাগালিতেও শীর্ষস্থানেই ছিলো!

শেষ বিচারটা সবসময় জনগণই করবে। ড. ইউনূসের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

বুঝি কম!

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অনিকেত এর ছবি

আলমগীর, অনেক ধন্যবাদ বস লেখাটার জন্যে।
অনেক কিছুই জানতাম না। তোমার লেখাটার বদৌলতে জানা হল। সরাসরি প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম।
ভাল থাকো সকল সময়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আলমগির ভাই, আমার কয়েকটা প্রশ্ন ছিল-
১। ডঃ ইউনুস যদি এতো সাক্রিফাইসিং মেন্টালিটির মানুষ ই হবেন তাহলে সরকার বারংবার অনুরোধের পরেও তিনি এতদিন সরে যান নি কেনো? অথবা কেনো তার সিংহাসন আঁকড়ে থাকার এতো মরিয়া হয়ে চেস্টা ? আর কেনোইবা তিনি এতদিনও তার কোনো উত্তরসূরি তৈরি করলেন না?
-- শুধু খালেদা হাসিনারে গাইল দিবেন যে , তারা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকতে চায় আর নিজের বেলায় আপনি নোবেল বিজয়ী কাজেই আপনার বেলায় অইসব নিয়ম খাটে না।
২। গ্রামিন ব্যাংকের যে টাকা গুলো ঋণ দেয়ার জন্য ব্যবহার হয় তার অধিকাংশ হল দাতাদের আর বাকিটা হল বাংলাদেশ সরকারের। এখন কথা হল বাংলাদেশ সরকার বা দাতারা কি চরা সুদে টাকা গুলো দিয়েছিলেন? নাকি নামমাত্র সুদে? নাকি অনুদান হিসেবে? বোধকরি দ্বিতীয় বা তৃতীয়টাই হবে- আরেকটা ব্যপার হলো বাংলাদেশের অন্যতম লাভজনক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ফোনের অন্যতম অংশীদার এই গ্রামীণ ব্যাংক-- তাহলে কথা হল গ্রামের মানুষের রক্ত চুষে চরা সুদে অই টাকা খাটানোর যৌক্তিকতা কি? আপনি বলবেন ওইটাই ব্যবসা- তাহলে এই মহাজনি ব্যবসাকে সমাজসেবা আর নোবেল এর ঢাল দিয়ে আড়াল করছেন কেনো? কেনো বলছেন না যে গ্রামিন ব্যাংক আর ৫ টা ব্যাংকের মতোই একটা ব্যাংক যেখানে মুনাফার পরিমান সাধারণ ব্যাংকের চাইতে অনেক বেশি।

৩।আরেকটা ব্যাপার এম এম আকাশকে কোট করছি-

প্রথমত, এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এটাকে কেন্দ্র করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বা ড. ইউনূসের বিদেশী বন্ধুরা বন্ধু হিসাবে মতামত দিতে পারেন কিন্তু এ নিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে Black mail করা উচিৎ হবে না। প্রথম আলোর সংবাদে বলা হয়েছে যে এই কারণে হিলারী ক্লিন্টন তার সফর বাতিল করবেন বা ওবামা শেখ হাসিনার সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকটি করবেন না–তা খুবই অন্যায় বলে মনে করি।

এই ধরনের ধৃষ্টতা দেখে আমি সত্যি অবাক। একজন মানুষ, হোক না তিনি নোবেল বিজয়ী -ডিরেক্ট বাংলাদেশ সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে প্রকাশ্যে বিদেশি প্রভুদের কাছে বিচার দিচ্ছে !!! ক্ষমতার লোভ এমনি এক জিনিষ যেখানে টান পরলেই মানুষের কুৎসিত চেহারাটা বের হয়ে পড়ে তা সে রাজনৈতিক নেত্রিই হোন বা নোবেল বিজয়ী ডঃ ইউনুস।

--
কালো ও সাদা

আলমগীর এর ছবি

১. আপনার এবং আমার চিন্তাধারায় পার্থক্য আছে, এটা থাকবেই। প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনি নিজেই খুঁজে নিতে পারবেন। তবে যেটা বলার তা হলো, আমি ড. ইউনূসকে স্যাক্রিফাইসিং মেন্টালিটির বলিনি, হাসিনা-খালেদাকে গালিও দিইনি। তুলনাটা করেছি তাদের লাইফস্টাইলের, যেটা সাধারণ পাবলিক দেখতে পায়।

২. ফান্ডের সোর্স আর ডিস্ট্রিবিউশনের রেটের মধ্যে পার্থক্য না থাকলে মুনাফা করার কোন উপায় থাকবে না। চড়া কিংবা নাম-মাত্র এ ধরনের শব্দ ব্যবহারের চাইতে সংখ্যা ব্যবহার করলে সুবিধা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক (বর্তমানে)নিয়ম বেঁধে দিয়েছে সঞ্চয়ের উপর সর্বোচ্চ সুদ দেয়া যাবে ১২%, আর ঋণের উপর সর্বোচ্চ নেয়া যাবে ১৩%। কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো বলেছে এই ১% পার্থক্য নিয়ে তারা লাভজনকভাবে চলতে পারবে না। কারন, ব্যাংকের অনেক ব্যয় আছে। গত সপ্তায়, বিশ্বব্যাংক যে ১বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে (বা দিচ্ছে) তার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো, সুদের হার ক্যাপ করা যাবে না। (বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বোচ্চ সুদের হার বেঁধে দিতে পারবে না।)

কোন ধরনের শর্ত ব্যাতিরেকে, সুদছাড়া কোন টাকা আসে কিনা আমার সন্দেহ আছে। তবে প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় ঘটলে হয়তো আসে। 'অনুদান' বলতে কী বোঝাচ্ছেন স্পষ্ট না। নোরাডের যে টাকা নিয়ে বিপত্তির শুরু সেটা ২% সুদের ভিত্তিতে এসছিলো। রক্ত-চোষা ধরনের শব্দও আমার কাছে অর্থহীন। ড. ইউনূস সমাজ সেবা করছেন এটা আমি মনে করি না (উপরে হিমুর মন্তব্যে আমার উত্তর দেখুন)। গ্রামীণ ব্যাংক আর ৫টা ব্যাংকের মতো ব্যাংক নয়- অন্তত চরিত্রে; ভিন্ন ধরনের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান মাত্র। যথেষ্ট সংখ্যক জনগণ যদি মনে করে কোন প্রতিষ্ঠান নিষ্ঠুর কাজ করছে, তবে সরকার সেটাকে বন্ধ করে দিলেই পারে।

৩. ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য কিছু কথা বলেছেন। মরিয়ার্টি কি সচিবালয়ে গিয়েছিলেন নাকি তাকে ডেকে নেয়া হয়েছিলো? যেটাই ঘটুক, এটা আমাদের জন্য লজ্জার।

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

এখন আর ইউনূসকে ঠিক সমর্থন করতে ইচ্ছে হয় না। গ্রামীণের কিছু উপকারভোগী নিজের চোখেই দেখেছি, কিন্তু, যৌক্তিকভাবে এটা দারিদ্র্য দূর করবে, সহজ বুদ্ধিতেই বুঝি এটা হয় না।

আমরা পশ্চিমাদের তালিতেও নাচি, গালিতেও নাচি। আর এর মধ্যে কেউ কেউ ঝোপ দেখে কোপটা মেরে দেয়। কিন্তু, গ্রামীণ থেকে ইউনূস সরে গেলে কি আসলেই অমঙ্গল হবে?

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

একজন পাঠক এর ছবি

রিট আবেদন তো খারিজ হয়ে গেল, তার মানে আইনত বাংলাদেশ ব্যাংক তো ঠিক স্বিদ্ধান্তই নিয়েছে মনে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।