২০০৪ সালের এপ্রিলে শেষ দিন। ইখতিয়ার ভাই ফোন দিলেন। তিনি সিলেটে এসেছেন। দেখা করার জন্য বল্লেন। এক ঘন্টার নোটিশ। দ্রুত গেলাম। রাজা ম্যানশনে ভোরের কাগজের অফিস। সেখানে গিয়ে দেখি সঞ্জিবদা। সাথে অন্য আরেকজন। ইখতিয়ার ভাই পরিচয় করিয়ে দিলেন, আমিনুল এহসান, ডেমোক্রেসিওয়াচের মানুষ। দাদা’র সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলে বল্লেন, তারেত আমি চিনি, আমরার আরিফ’র ভাই নায়নি? তুমি আইলায় কোনদিনবা? আগের সপ্তাহেই মাসিক একটা পত্রিকার কাজের জন্য ঢাকা গিয়েছিলাম। শ্যামলদা’র সাইবার ক্যাফেতে দেখা হয়েছে। সাথে আরিফ ভাই ছিল। দাদা মিলিয়ে নিয়েছিলেন।
এর আগেও অনেকবার দেখা হয়েছে। ঢাকায়, সিলেটে। প্রথম পরিচয় প্রিয় প্রান্তিকে। স্বপনের চায়ের দোকানে। শেষ দেখাটা কবে হল এখন আর মনে পড়ছেনা। তবে বছর দেড়েক হবে এটা নিশ্চিত। তখন আমাদের সময়-এ কাজ করি। বলেছিলেন, ইন থাকি কিতা ওইব? নাইম ভাইয়ে টেকা দিতনায় জীবনে। এমনি আন্তরিক ছিলেন সঞ্জিবদা। অল্প পরিচিত এক তরুনকে নিয়েও তিনি ভাবতেন। গতবার সিলেটে একটা অনুষ্ঠানে হানিফ সংকেতকে আনার চেস্টা করেছিল আমার ভাই। সঞ্জিবদা শত ব্যাস্ততার মাঝেও সময় দিয়েছিলেন তাকে। হানিফ সংকেতের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন। এসবি আমার একান্ত ব্যাক্তিগত কথামালা। কিন্তু আমার মত আরও অনেক তরুনের সাথে মিলিয়ে নিলে দেখা যাবে সঞ্জিবদার কাছে যারাই যেতে পেরেছিল তারাই পেয়েছে এমন ছায়া আর স্নেহ।
সেই এপ্রিলের কথাই আজ বারবার মনে পড়ছে। দুদিন মনে হয় ছিলেন সেবার। যেদিন সকালের কথা বল্লাম সেই সকালেই তিনি অসুস্থ হয়েছিলেন। মির্জাজাঙ্গাল পয়েন্টের কাছে হঠাৎ করেই প্রচণ্ড ব্যাথায় কুকড়ে উঠেন। ধনুকের মত বাঁকা হয়ে যান। পাশেরই একটি ফার্মেসিতে বসায় সঙ্গে থাকা একজন। এই মুহূর্তে নামটা ঠিক মনে পড়ছেনা। সম্ভবত ভোরের কাগজের সিলেট প্রতিনিধি বিনায়ক শুভ’র ভাই ছিল। সে ফোন করে ইখতিয়ার ভাইকে। আমরা তখনও রাজা ম্যানশনে। সবাই দৌড়ে গেলাম। একটা বেবিটেক্সি ডেকে তাকে তোলা হল সেখানে। কিন্তু হাসপাতালে যাওয়া হবে শুনে দাদা’র তীব্র প্রতিবাদ। তবু নিয়ে যাওয়া হল। ওসমানী হাসপাতালের ডাক্তাররা দেখেই ভর্তি করে নিলেন। দাদার সেকি রাগ। তবু কয়েক ঘন্টা রাখা হয়েছিল। দুপুরের পরেই নিজ দায়িত্বে হাটেলে চলে এলেন। ডাক্তাররা বার বার অনুরোধ করলেন একটা দিন অন্তত থাকার জন্য। কে শুনে কার কথা।
পরদিন সকালে গেলাম দেখা করার জন্য। বসতে বলেই শুরু করলেন তার বয়ান, দেখতো কালকে এরা একটা কাজ করল? আমি বলি, কি দাদা? দাদা করুন গলায় বলেন, এইযে আমারে হাসপাতালে নিয়ে গেল। আমি কি বলব, তাকিয়ে থাকি তার মুখে। হঠাৎ করেই যেন তার মনে পড়ে আগের দিনের মুখ গুলো! রেগে গেলেন, আরে কালকেতো তুমিও ছিলে। ভাষা বদলে গেল- ‘মিয়া তোমরা খাইল ইতা কিতা খরলায়...’ ইত্যাদি, ইত্যাদি... ইখতিয়ার ভাই এসে আমাকে উদ্বার করেন...
হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে থাকা তরুন ডাক্তার বার বার বলছিলেন, দাদা একটু সাবধানে থাকবেন, রেস্ট নেবেন, আপনার শরিরটা বেশি ভালনা। সাড়ে তিন বছর আগের সেই কথাগুলো এখন খুব কানে বাজছে... দাদা একটু সাবধান হলে কি হত?
আর কানে বাজছে, গত সন্ধায় সেই রাজা ম্যানশনের সামনে দড়িয়ে তার এক চরম ভক্তের বলা কথাগুলো, অপু ভাই দেখবেন দাদা ঠিক ভাল হয়ে যাবেন... আবার গান গাইবেন... রুবেল তোর কথাটা সত্য হলনা কেনরে?
১৮ নভেম্বর ২০০৭। মধ্যরাত।
--------------------------------------------------
শিরোনাম কৃতজ্ঞতা: এস এম মাহবুব মুর্শেদ।
মন্তব্য
স্বাগতম।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ব্যক্তিগতভাবে ওনাকে চেনার সৌভাগ্য হল না কোনদিন। সবচেয়ে কাছাকাছি দেখা বুয়েটে দলছুটের একটা কনসার্টে, ২০০২-২০০৩ এর দিকে। কিন্তু আমারো কেন জানি মনে হচ্ছে এটা আমার পারসোনাল লস্। মনে হচ্ছে যেন স্বজন হারিয়েছি। রুবেলের মত আমিও খুব আশায় ছিলাম। ভাল্লাগছে না একদম!
ভাল আছি, ভাল থেকো।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
সঞ্জীবদার এইভাবে অকালে চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা। দুনিয়াতে ভালো মানুষদের জীবন কেন এত ক্ষণস্থায়ী?
কষ্ট।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
গতমাসে ইখতিয়ার মামার সাথে আমাদের বাসায় গেলেন। সাথে কিংবদন্তী আর ওর মা ।
আজ আম্মার সাথে কথা বলার সময় বারবার সঞ্জীব দার কথাই হচ্ছিলো । ভোরের কাগজ থেকে প্রথম আলো-সেই টালমাটাল ৯৮ এ সিলেট এসেছিলেন দাদা আমাদের কয়েকজন বুঝানোর জন্য । আমি,টুকু দা,রিপন,উজ্জ্বল-তুমুল তর্ক বিতর্ক আড্ডা হয়েছিলো । কিছু কথা বলেছিলেন যেগুলো ২০০৭ এ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি ।
-----------------------------------------
ভালো নেই,ভালো থাকার কিছু নেই
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
শ্রদ্ধা জানাই।
ওনার গানের সাথেই যেটুকু পরিচয়, ভালবাসা। কিছু ভাল লাগছে না এখন আর... ব্লগেও আসতে পারছি না নিয়মিত।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
নতুন মন্তব্য করুন