আজ পিকনিক হল, ধন্যবাদ হে মহামান্য...

নজমুল আলবাব এর ছবি
লিখেছেন নজমুল আলবাব (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৬/১২/২০০৭ - ২:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মাননীয় রাস্ট্রপতি আজ আপনি এসেছেন আমার পাশের ঘরে। পাশের ঘর মানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে আজ সমাবর্তন। সনদ বিতরনের অনুষ্ঠানে আপনি দেশ উদ্ধারের নানা কথা বল্লেন নিশ্চয়। সাথে এও নিশ্চয় বলেছেন রাজনীতি করাটা খুব খারাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করলে জেলে যেতে হবে। যদিও আপনি এই ধারার এক মহান পুরুষ ছিলেন বলে শুনেছি। সে যাই হোক, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এক গরিব এবং পশ্চাদপদ গ্রামের বাসিন্দা।

আপনি আসবেন বলে আজ সকাল থেকেই আমাদের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সকালে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো যখন শহরে যাবে বলে বেরিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের লাগোয়া সড়কে যেতেই তাদেরকে আটকে দেয়া হয়েছে। সঙ্গিন উচিয়ে আপনার নিরাপত্তায় নিয়োজিত রীরা বলেছে রাস্তা বন্ধ!

আমি ছাপোসা প্রেস ব্যবসায়ী। মানুষের এটা সেটা ছাপিয়ে জীবন ধারন করি। আমি জানতামনা আপনি আসবেন বলে রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়া হবে।। আমাকে কেউ বলেনি এ কথা। এটা হয়ত আমারই দোষ। এটা জেনে নেয়া উচিৎ ছিল আমার। আমি শহরে যেতে পারিনি। আমার ৯বাই৯ ফিটের অফিসটা আজ খোলা হলনা। এক স্কুলওয়ালা তার প্রসপেক্টাস ছাপাবেন বলে আজ আসবেন বলেছিলেন। আমি যেতে পারিনি বলে তার কাজটা করতে পারলামনা। মোবাইল ফোনে তাকে সমস্যাটার কথা বলেছিলাম। তার কণ্ঠ শুনে মনে হলনা তিনি আমার জন্য অপেক্ষা করবেন। কাজটা করলে আমি কয়েকশ টাকা পেতাম মাননীয় রাস্ট্রপতি। কিন্তু আপনার নিরাপত্তা বিঘিœত হবে এমন কাজতো আমি করতে পারিনা। তাই ঘর থেকে বেরিয়েও নিরাপত্তা বেস্টনি পর্যন্ত গিয়ে মাথা নিচু করে ফিরে আসতে হয়েছে।

আজকে ভোটার তালিকার জন্য এই গ্রামের মানুষের ছবি তোলার কথা ছিল। যাদের বয়েসটা খুব বেশিনা তারা অনেক রাস্তা ঘুরে পাহাড় ডিঙ্গিয়ে ছবি তুলতে গিয়েছে। আমার মা-বাবা কেউ যেতে পারেননি। এজন্য তারা আপনাকে কিছু বলেনি মাননীয়, তারা তাদের বয়েসকে দোষ দিয়েছেন। বলেছেন বয়েসটা কম হলে তারাও যেতে পারত জোড়া পাহাড় ডিঙ্গিয়ে...

আমার ছেলেটা অসুস্থ। তার প্রস্রাবের সমস্যা। তিন বছর হয়নি এখনও। তবু খাতনা করাতে হয়েছে। সকাল থেকে সে জুস খাবে বায়না ধরেছে। তার জন্য জুস আনতে পারিনি আমি। আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমার অসুস্থ ছেলের জুস খাওয়ার বায়না আমি মেটাতে পারলামনা।

এতকিছুর পরও আমরা আজ ঘরে হাফ পিকনিক করে কাটালাম! আপনি এলেন বলেইতো আজ আমার বউ অফিসে গেলনা। আমি গেলামনা। দাদাভাই গেলনা! বেশ একটা ছুটি ছুটি ভাব। কিন্তু এরশাদ চাচার দিনটা খুব বাজে গেল। আজ তিনি কাজে যেতে পারেননি। বেচারা। দশজন মানুষের সংসার।


মন্তব্য

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

............................................................................

সুমন চৌধুরী এর ছবি

তিনি এলেন...তিনি আসছেন...তিনি এসেই পড়েছেন..তিনি নাচছেন....তিনি দৌড়াচ্ছেন..নেচে নেচে..আমরা নাচছি ... মাড়াচ্ছি ঘরোয়া মহড়ার মোহরা...



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

কনফুসিয়াস এর ছবি

-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

কি যে বলেন! তিনি আমাদের সবার জন্যই তো এতসব কাজ করছেন। এটুকু ভোগান্তি সহ্য করতে না পারলে কি আর আমাদের দেশপ্রেম
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

হাসান মোরশেদ এর ছবি

তারা আপনাকে কিছু বলেনি মাননীয়, তারা তাদের বয়েসকে দোষ দিয়েছেন। বলেছেন বয়েসটা কম হলে তারাও যেতে পারত জোড়া পাহাড় ডিঙ্গিয়ে...

জন্ম যদি তব বঙ্গে!
-----------------------------------------
মৃত্যুতে ও থামেনা উৎসব
জীবন এমনই প্রকান্ড প্রচুর ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

উত্তীও এর ছবি

সারাদিন আটকে রাখার কালচার থেকে আমরা বেরুতে পারব না। ১৯৮৯, বৃহত্তর সিলেটে আসবেন আমাদের এরশাদ , আমি তখনও প্রাথমিক স্কুলে। ভোররাত থেকেই দাড়াতে হয়েছিল রাস্তায় ফুল হাতে , প্রেসিডেন্ট বলে কথা ! কড়া রোদে বন্ধু মানিক বমি করছিল , দেখেছিলাম প্রিয় শিক্ষকদের ছোটাছুটি , কি আর করার ছিল তাঁদের।
ঐদিন এ্যাম্বুলেন্সে সিলেট মেডিকেলে পাঠাতে বিলম্ব হওয়ায় পথেই মৃত্যু হয় শাহানা বেগমের।
জীবন থেমে নেই , একসময় আমরা দাঁড়াতাম এখন নতুন প্রজন্ম।

শতেক শতাব্দী ধরে নামে শিরে অসম্মানভার ,
মানুষের নারায়ণে তবুও কর না নমস্কার।
তবু নত করি আঁখি দেখিবারে পাও না কি
নেমেছে ধুলার তলে হীনপতিতের ভগবান।
অপমানে হতে হবে সেথা তোরে সবার সমান।।

বিশ্বাস হারানো নাকি পাপ তাই আমি আজো বিশ্বাস করে যাই।

সবজান্তা এর ছবি

জনদরদী সুশীল সরকারের আরো কত রূপ দেখবেন ... সবে তো কলির সন্ধ্যা দেঁতো হাসি
-----------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

দ্রোহী এর ছবি

অনাহারে নাহি খেদ
বেশী খেলে বাড়ে মেদ।
ভরপেট নাও খাই
নিরাপত্তা রক্ষা করা চাই।
যায় যাবে যাক প্রাণ
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ভগবান।


কি মাঝি? ডরাইলা?

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

যথারীতি প্রিয় পোস্টে।
ইনফ্যাক্ট, সকালে প্রথম প্যারাটা পড়েই যোগ করেছিলাম; এখন পুরোটা পড়ে বুঝলাম আপনি আসলেই একটু অন্য ধরনের লেখক।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আরেক মহামান্যের জন্মদিনে আমিও ছুটি কাটালাম হাসি
জয় হোক মানবেশ্বরদের!

নজমুল আলবাব এর ছবি

সবাইরে ধন্যবাদ। যারা পড়লেন এবং কমেন্টাইলেন। খুব ব্যস্ত থাকায় লগঅন করা হয়নি তাই সময়মত সবার জবাব দেয়া হলনা। থাকলে হয়ত এমন সমস্যা নিয়ে ভাল একটা আলোচনা কেউ করতেন। অন্তত ইন্টারএ্যাকশন থেকে ভাল কিছু কথা বেরিয়ে আসতই।

প্রকৃতিপ্রেমিক: আপনি আমাকে কৃতজ্ঞ করে রাখলেন ভাই। ধন্যবাদ।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

যা সত্যি তাই বললাম।

ঝরাপাতা এর ছবি

সুমনের হেলিকপ্টার গানটার কথা মনে পড়ছে। লেখাটা মন ছুঁয়ে গেলো।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

নজমুল আলবাব এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।