বাগানের নির্জনে পেয়ারা গাছটার জন্ম; আমাদের সবার অগোচরে। গাছটা যেদিন প্রথম ফুল দিল, তার মাস দু-এক আগে মা এটা আবিস্কার করেছিলেন।
আসলে মা নয়। পাশের বাড়ির করম আলী চাচাকে আনা হয়েছিল আমাদের বাড়ির জঙ্গল সাফ করার জন্য। তিনিই মাকে দেখিয়েছেন গাছটা। কিন্তু আমরা করম আলী চাচার কথা বলিনা। বলি মায়ের কথা। আর মাও সেটা নির্দ্বিধায় স্বীকার করেন সেটা।
ভাইয়া তার কম্পিউটারে একটা গেম তৈরি করছে। ও প্রোগ্রামার নয়। কম্পিউটারের কাজ যে খুব জানে তাও নয়। তবে চেস্টা করছে। ... ভাইয়ার সিনিয়ার ফ্রেন্ড আশফাক ভাই। ফিজিক্স নিয়ে মাস্টার্স করছেন। আশফাক ভাইরা আমাদের মত নয়। কস্ট করে লেখাপড়া করছে। কম্পিউটারে ওর আনেক কাজ। কিন্তু নিজের কম্পিউটার নেই। তাই ভাইয়াকে বলে সপ্তাহে দু-তিনদিন নিজের কাজ করে নেয়। আশফাক ভাই যেদিনই আসে ভাইয়া কথার ফাঁকে হঠাৎ বলে, ‘আশফাক ভাই আমার গেমটা একটু দেখে দিননা।’ আশফাক ভাই বাধ্য ছেলের মত দেখতে বসে। তখন ভুরি ভুরি ভুল বেরোয়। তিনি তখন গেমটা নতুন করে তৈরি করতে বসেন। এভাবে পুরো গেমটাই তৈরি হচ্ছে। আমি, আমরা জানি ভাইয়া কিছুই পারছেনা; তবু সেটা কাউকে বলিনা। আমার বন্ধু মীরু। যে ভাইয়ার জন্য পাগল। তার কাছে গেম তৈরির সব কথা বলি। সে আরও পাগল হয়। কিন্তু আমি ভুলেও আশফাক ভাইয়ের নাম উচ্চারণ করিনা।
আমাদের বাড়ির ঠিক দু’বাড়ি পরে থাকে সিপ্রাদিরা। সিপ্রাদি খুব ভাল পায়েস বানাতে পারে। বাবার বন্ধু সোবহান চাচার ছেলে শুভ ইংল্যান্ডে থাকে। দেশে এসে ও যেদিন আমাদের বাড়িতে এল প্রথম, মা সেদিন সিপ্রাদিকে এনে পায়েস রান্না করালেন। আর বিকেলে শুভকে দেবার সময় কেমন ঠোঁট উল্টে বল্লেন সেটা নাকি আমি তৈরি করেছি! ও আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো তাতেই বুঝলাম আমার দাম শুভর কাছে অনেক বেড়ে গেল। বাড়বেনাইবা কেন? এত মজার পায়েস যে বানাতে পারে সেতো কত গুনের মেয়ে! আমার বিয়ের ব্যাপারটা আরও পোক্ত হলো। আগামী বছর যখন শুভ আসবে তখনই বিয়ে। কিন্তু সিপ্রাদি, যে সত্যি সত্যি ভাল পায়েস বানাতে পারে তার কেন বিয়ে হয়না?
বাবা বেতন পান দশ হাজার টাকা। আগে আরো কম পেতেন। তবু আমাদের দু’তলা বাড়ি হয়েছে। রিপন আমার বন্ধু। যেদিনই আসে, বলে- ‘আহারে কি বাড়ি! একেবারে টেলিভিশনের বাড়ি!! নিচে খাও, উপরে ঘুমাও!!!’ বলেই হাসতে থাকে। আমি জানি রিপন কেন হাসে। আমাদের বাড়ি, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর সবকিছুর জন্ম রহস্য রিপন জানে। আমি ওকে বলিনি, তবু জানে। আসলে কিছু মানুষ আছে যাদেরকে কিছু বলতে হয়না। সব বুঝতে পারে এরা। জেনে যায় সবকিছু। যেমন মা। ছোট চাচার ঘরে রাত বিরেতে যেত জরিনা, আমরা কিছু বুঝিনি তখন, মা বুঝলেন ঠিকই। একদিন ওকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। জরিনাকে আর কখনও দেখিনি আমরা।
কয়েকমাস পর আমার বিয়ে। শুভ আর আমার জন্য সুখের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। কিন্তু মীরু সেদিন আসবেনা। আসবেনা আশফাক ভাই। অনেক কিছু জেনে যান আমার মা। মীরুর মন জানতে পারেন। জানতে পারেন আশফাক ভাইয়ের মনও। আমিতো তার মেয়ে। সন্তানের মন নাকি মায়েরা বুঝেন সবচে সহজে!
মন্তব্য
এই গল্পটা সহবাস ২য় সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল। হিসাব করলে বয়েস হয়ে গেছে ১০ বছর! তুলে রাখলাম ব্লগে। সংরক্ষনের পাশাপাশি নতুন পাঠক পাওয়ার লোভও আছে।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
বাজে গল্প।
এই লোকটা বাজে গল্প লেখে।
এই লোকটা মন খারাপ করা গল্প লেখে। এই লোকটা মস্তিষ্কে স্পন্দন তৈরি করা গল্প লেখে।
এই লোকটার গল্প আমি পড়ি না।
-
নতুন পাঠক
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
অভিযোগ মাথা পাইতা নিলাম...
নতুন পাঠকরে স্বাগতম।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আমি আরেকজন নতুন পাঠক এই গল্পের। খুব ভালো এগোচ্ছিলো, আচমকা শেষ হলো যেন!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
ভাল্লাগ্লো
---------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
ধন্যবাদ জুবায়ের ভাই এবং সবজান্তা।
এই গল্পটা যখন লিখি তখন ভেতরে ছিল অনেক হুলস্তুল ( এখন যে নাই সেটা কিন্তু বলছিনা )। সবকিছুই দ্রুত বলে দিতে মন চাইত। সবকিছু দ্রত শেষ করে দিতে মন চাইত।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
হুলুস্থুল থাকবেই, নাহলে জীবনের আর মানে কি? এইসবের মধ্যেই কাজের কাজটা করে নিতে হয়, যতোটা ভালো করে সম্ভব।
একটা ঝিম-ধরানো গদ্য আপনার হাতে আছে, আপনার আগের গল্পগুলিতেও লক্ষ্য করেছি। অস্থিরতায় এর অপচয় সহ্য হবে না।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
অপচয় কীনা জানিনা জুবায়ের ভাই। তবে এভাবে আর কোন সিনিয়ার কোনদিন কথাটা বলেননি। ধন্যবাদ আপনাকে।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
জুনিয়ররা বারবার বলে। কিন্তু আলবাব ভাই শোনে না।
দশ বছরে নতুন ফর্মে আসুক না, একই গল্প। পাঠক হিসেবে আছিই তো!
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
রিরাইট করুন।খুব ভাল একটা গল্প হবে।
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
ধন্যবাদ। দেখি চেস্টা করে।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ধন্যবাদ দুলামিয়া
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
সাধু সাধু
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
ভুলিনি জনাব
----------------------------------------
সঙ্গ প্রিয় করি,সংঘে অবিশ্বাস
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
অসম্ভব ভালো লাগলো গল্পটা।
নায়িকার শুভ পরিণয়ে সুখবোধের চেয়ে ছোটো চরিত্রদের নিয়ে পাঠকের দুঃখবোধে আক্রান্ত করতে এর আগে আর কাউকে দেখিনি।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
গল্পটি গতি নিয়ে এগিয়েছে ।
--- ফকির ইলিয়াস
দারুন লেগেছে। অল্প কথায় মনের ভাব বলে দেয়া এত সহজ কাজ নয়।
শুধু, শেষের প্যারাটা পুনর্লিখনের অপেক্ষায় আছে বলে মনে হলো। ( পরামর্শের ধৃষ্টতা দেখাচ্ছি না, বলতে পারেন আম-পাঠকের পাঠ প্রতিক্রিয়া। )
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
এইসব কি ভুলা যায় মামু? সে যত ক্ষুদ্রই হোক আর যতই হোক গৌণ? @ হাসান মোরশেদ
ধন্যবাদ বদ্দা, ফারুক এবং ফকির ইলিয়াস ভাই।
কনফু: ছুরিচিকিৎসা আমার কখনই খারাপ লাগেনা। বরং প্রাণীত হই। এই লেখাটা নিতান্তই এক অপরিণত বালকের পেচাল।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
প্রিয় আলবাব , ''সিলেট প্রতিদিন'' এর খবর কি ? আপনি কি ওটাতে
আছেন ? - -- ফকির ইলিয়াস
ওইটা মরে গেছে ইলিয়াস ভাই। নিজের হাতে তারে কবর দিয়ে আমি এখন ঝাড়া হাত পা...
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
এত ছোট হলে হবে না। আর এভাবে শেষ করলেও তা মানবনা। এই গল্পটা যেন শেষ না হয়। এগিয়ে নিন।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আরও এক নতুন মুগ্ধ পাঠক পেয়ে গেলেন।
খুব্ভাল্লাগ্লো।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
শুনে খুব খারাপ লাগলো। আমি জানতাম না।
জীবন চালাতেই হবে , প্রিয় আলবাব।
থেমে থাকলে চলবে না।--- ফকির ইলিয়াস
ধন্যবাদ সন্ন্যাসী দাদা
ধন্যবাদ ইলিয়াস ভাই। ভাল থাকবেন আপনি।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
কয়বার যে পড়লাম এই গল্পটা।
এই লোকটা এইরকম গল্প ক্যামনে লেখে!
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
এরকম ছোট্ট বা অনুগল্প আরও পড়তে ইচ্ছে করছে।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
অসাধারণ বললে কম বলা হবে নজমুল ভাই।
আমি আপনার নতুন পাঠক। সচলেও নতুন। তাই পড়তে দেরী হলো। তবে এখন থেকে যে এখানে আমাকে খুব ঘণ ঘণ আসতে হবে সেটাতে সন্দেহ নেই।
গল্পটা পড়ে যতো ভালো লাগলো সবটা আপনাকে উৎসর্গ করলাম!
আপনার দীর্ঘ লেখকজীবন কামনা করছি।
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
- হুমম... মিতভাষণ। বল্লাম না কিছুই কিন্তু অব্যক্তও থাকলো না কিছুই।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কি অসাধারণ একটা গল্প যেন হঠাৎ করে থেমে গেছে!
কি মাঝি? ডরাইলা?
ধন্যবাদ দ্রোহী, ধুসর এবং আরেফীনকে। প্রিয় তিন পাঠক এবং লেখক।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নতুন মন্তব্য করুন