অনেক আত্মীয় স্বজন আছেন যাদের সাথে কোন যোগাযোগই নেই আমার। কালেভদ্রে দেখা হয়। হাই হ্যালো পর্যন্ত সম্পর্ক। ঢাকায় গেলে হোটেল নয়ত বন্ধুর বাড়িতেই থাকতে অভ্যস্থ। কিন্তু এবার আম্মা সাথে। তাই অনেকের সাথেই দেখা হল। বারিধারার জনৈক অতি বড়লোক মামার বাড়িতে যেতে হল শুক্রবার রাতে।
বড়লোকদের বাড়িকি খুব ঠান্ডা হয়? আমার কেন যেন এইসব বাড়িকে অস্বাভাবিক শীতল মনে হয়। সারারাত প্রচন্ড শীতে আমি কাবু ছিলাম! তবে সকালটা বেশ ভাল লাগলো। সে বাড়িতে থাকা চমৎকার দুটো পিচ্চির সাথে দারুন সময় কাটলো।
দুপুর গড়িয়ে যাওয়ার সময়ে শুদ্ধস্বরের টুটুল ভাইকে (আহমেদুর রশীদ) ফোন করলাম। বল্লেন, তোমার বইতো এসে গেছে অপু। স্টলে দিয়ে দেবো? না করার প্রশ্নই উঠেনা। বল্লাম, অবশ্যই। একটু পরেই আরিফ ভাইয়ের ফোন। কিরে আজও মেলায় যাবিনা নাকি? বলি, হ্যা যাব। তুমি কখন যাবে? বিকালে শুনে, সেইসময় যাওয়াটা ঠিক করি। ফোন রেখে দেয়ার আগে প্রশ্ন করেন, তোর বইয়ের খবর কি? বল্লাম স্টলে চলে গেছে। আরিফ ভাই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ঝাড়ি দেয়। তুই এত পাষাণ হলি কবে? বই মেলায় এসে গেছে আর তুই এখনও মামুর বাসায়? জলদি মেলায় আয়। আমি যাচ্ছি...
আগেই বলেছি ঢাকায় আমি অন্ধ মানুষ। ড্রাইভাররা আমার সাদা ছড়ি। মামার ড্রাইভার মফিক মেলায় নামিয়ে দেবার দায়িত্ব নেয়। গাড়িতে বসেই খেয়াল হল, দেখিনা আরিফ ভাই এখন কোথায়। আমি কোথায় আছি জেনে তিনি বলেন, মহাখালির ওভারব্রিজ পেরিয়ে নেমে যা। কিন্তু নামব কিভাবে? বাবাই ততক্ষনে আমার কোলে চেপে বসেছে। ফোনে কথা বলা শুনেই বুঝে গেছে আমি নেমে যাব। তাই আগেই প্রোটেকশন! ছয়মাস আগেও এমন টান ছিলনা আমার জন্য। বেকার হয়ে যাওয়ার পর বাধ্য হয়েই ঘরে অনেক্ষন থাকতে হয়। তাই পিতা পুত্রের এখন বেশ খাতির। গাড়ি থেকে নামতে তাই যুদ্ধ করতে হল।
আরিফ ভাই কয়েক মিনিটের মধ্যেই এলেন। তার মাইক্রোতে চড়ে বই মেলা। গতবারের মেলার সাথে এবার বেশ পার্থক্য দেখলাম। লাইন ধরে ঢুকতে হলনা। মেলার মাঠে একেবারেই ধুলা নেই। প্রথম টার্গেট লিটল ম্যাগ কর্ণারের দিকে দ্রুত এগিয়ে গেলাম। কেমন একটা দুরু দুরু ভাব ছিল বুকের ভেতর। এইটারে মনে হয় শূন্যতাও বলা যায়। দুর থেকেই দেখলাম ছোট্ট বইটা শুয়ে আছে শুদ্ধস্বরের টেবিলে। সাদা মলাটটারে আমার সাদা টাওয়াল বলে মনে হল। তার ভেতর ছোট্ট একটা বাচ্চা! আরিফ ভাই গিয়েই হাতে নিলেন। একপ্রস্ত প্রশংসার পর হাতে দিয়ে বল্লেন, দে একটা অটোগ্রাফ দে! আমি আপ্লুত হই।
এই ফাঁকে ভাস্করদা আর মৌসুম এসে হাজির। দুজনেই প্রশংসা করেন। আমি ঠিক বুঝিনা, খুশি করার জন্য তারা বলছেন না সত্যিই ভাল লাগছে! তবু ভাল লাগে...
এরপর হাটা আর আড্ডা চলতেই থাকে। আমিও তাতে অংশ নেই। কিন্তু এখন আর কিছুই মনে করতে পারছিনা। শুধু মনে হচ্ছে আরিফ ভাইয়ের হাত থেকে বইটা হাতে নিয়ে একটু পর পর দেখছিলাম। ভাল লাগছিল। ঘোর লাগছিল। অখচ এমন হওয়ার কথা নয়। এই বইটার কোন কিছুই আমার কাছে নতুন নয়। প্রায় দশ বছর আগে থেকে শুরু করা ছোট কয়েক টুকরো গল্প। এইসব লেখার প্রকাশক পাওয়া যায়না। আমি সে চেস্টাও করিনি। যদিও আরিফ ভাই আর বন্ধু পলাশ দত্ত কিছু চেস্টা করেছিলেন। সে পর্যন্তই। আমি নিজের টাকায় বই ছাপার উদ্যোগ নিয়েছি। কেন নিয়েছি জানিনা। সে পর্যন্ত মনে হয় আবেগ ছিল। এরপর আর কিছু অনুভব করিনি। অন্য দশটা কাজের মতই এটাও একটা কাজ ছিল। বেশ খানিকটা কাজ হয়ে যাওয়ার পর আমার সহোদর এর টাকা যোগানদার হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। এর আগে আমার কৈশোরের এক বন্ধু প্রায় রোজ একবার করে টাকা দেয়ার চেস্টা করেছেন। আমি আসলে বেশ সৌভাগ্যবান। কেন যেন বন্ধুরা আর পরিবারের মানুষজন আমাকে একটু বেশিই ভালবাসে। প্রায় বাউন্ডুলে আমাকে নিয়ে তাদের অনেক চিন্তা। অনেক ভালবাসা।
সেই বইটা বেরিয়েছে। সাথে বন্ধু মাশার কবিতার বই 'এই মিছা কবি জীবন' । এই বইটা তিনি ঢাকা থেকেই বের করতে পারতেন। কিন্তু বন্ধু প্রকাশনা সংস্থা করছে, তাকে একটু সাহস দেয়া দরকার শুধুমাত্র এই বোধ থেকেই তিনি তার বইটা আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। জানিনা আমি তার বিশ্বাসের মূল্য দিতে পারলাম কীনা।
ওহহো কি বলতে কি বলা শুরু করলাম! বিয়ে বাড়ি থেকে ফোন আসতে শুরু করেছে। আরিফ ভাই বলে, আরে রাখ বিয়ে বাড়ি। তোর বই বড় না তালতো ভাইয়ের বিয়ে বড়। তবু যেতে হয়। বই মেলার গেট থেকে বিদায় নেন মৌসুম ভাস্কর দম্পতি। আমারা এগিয়ে যাই। এরি মাঝে ফোন। অমিত আহমেদ। তিনিও মেলায় এসেছেন। কিন্তু ততক্ষনে গাড়ি চলতে শুরু করেছে। পরদিন দেখা হবে এই ভরসায় আর মেলায় ফেরা হয়না।
ছবির হাটে থামি। পুরনো বন্ধুদের অনেকেই এখানে আড্ডা দেন। মেসবাহ য়াযাদ দেখেই হাউকাউ করে উঠেন। কিরে কবে আসলি, কোন যোগাযোগ নাই কেন। নানা অভিযোগ তার। গিয়াস ভাই এর কথা জিজ্ঞেস করি। হাত তুলে দেখিয়ে দেন। দৌড়ে যাই। ছোটখাটো গড়নের গিয়াস ভাই ফুটপাতে দাড়িয়ে কথা বলছেন আরেকজনের সাথে। সেই পুরনো ভঙ্গি। আমাদের প্রিয় গিয়াস ভাই। দেখেই জড়িয়ে ধরেন। কতদিন পর দেখা। দুজনের উপর দিয়েই এর মাঝে নানা ঝড়ঝাপ্টা গিয়েছে। মোবাইল ফোন ছিল বলে সব খবরই রাখা হয়। শুধু দেখা হয়না। একপ্রস্ত আড্ডা চলে। উঠতে ইচ্ছে করেনা। তবু ফোনের ধাতানিতে বসা যায়না। গাড়ি চলতে শুরু করে মিরপুরের দিকে।
মন্তব্য
এই পর্ব খুব আরামদায়ক হয়েছে।
প্রথম বই প্রকাশ, প্রথম সন্তান; এমন বলেন কেউ কেউ। আপনার উদাহরণটা তো আরো জীবন্ত। সাফল্য কামনা করছি। পরিবার আনন্দ কলকাকলিতে ভরা থাকুক।
ধন্যবাদ
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
বই প্রকাশের জন্য অভিনন্দন। দেশে থাকলে নি:সন্দেহে ক্রয় করিতাম এককপি।
-নির্বাসিত
খুব ভালো লাগছে পড়তে!
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
গ্রন্থমেলা সিরিজ কই? দুইদিনেই পেরেশান হয়ে গেলা?
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
অতি অসাধারণ!
বইয়ের নামটা জানাইতে বহুত গিড়মসি হচ্ছে। যা্কগে, লেখকের ইচ্ছা হলেই জানবো
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
ধন্যবাদ। সাথে দুঃখ প্রকাশ করছি বই এর নাম না বলায়। আসলে সচলের অনেকের সাথেই ব্যাক্তিগত যোগাযোগ থাকায় তারা সব কাহিনিই জানেন। তাই খেয়াল থাকেনা আলাদাভাবে নাম বলার কথা। বইটা হল গল্প সংগ্রহ। সচলে যেসব গল্প দিয়েছি সে গুলোই মলাটবদ্ধ করা হয়েছে। নাম বউ বাটা বলসাবান । প্রকাশ করেছি নিজের প্রকাশনা সংস্থা শস্যপর্ব থেকে।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আপনার লেখা গল্পগুলোর মধ্যে এটা আমার সবচেয়ে প্রিয় গল্প। নামটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
কি মাঝি? ডরাইলা?
ধন্যবাদ দ্রোহী।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ব্যাপার নাহ। আমার থেকে অন্ধ কেউ নাই ঢাকা শহরে।
আর ঢাকা গেলে আমি হোটেল-টোটেলে থাকি।
এমনই শেকড়হীন মানুষ।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
আমরা আসলে একি গোয়ালের গরুরে সৌরভ। আমগো কিচ্ছুই থাকেনা শেষ পর্যন্ত।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আমার কিছুটা অনুপ্রাসপ্রীতি আছে। আর তাই বউ বাটা বলসাবান নামটা খুবই মনে ধরলো।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
ধন্যবাদ। এই গল্পের নাম আমি দিয়েছিলাম বউ বাটা জেট। গিয়াস আহমেদ নামটা বদলে দেন, সেও এই অনুপ্রাস প্রিতির কারনেই।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
কনগ্রেরচুলাশনস
লেখক জীবন অমর হোক ।
ধন্যবাদ ফকির ইলিয়াস ভাই।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
কয়দিন আগেই না কে জানি দুঃখ করছিলো দিনলিপি লিখতে পারে না কইয়া?
এহন? এইটা কী?
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
দিনলিপি হইতাছে তাইলে? যাক পারতাছি
আসলেই পারিনা কনফু। লিখতে জুইত পাইতাছিনা এইটা কিন্তু অলরেডি বলে ফেলেছি একবার।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
- আমার বউ টাটা শালী ওয়েলকাম-এর গুরু দায়িত্বটা আপনেরেই দিমু ভাবতাছি। নিজের কথা কৈতে শরম করে, তারপরেও কই। শিমুলের লাইগা হাজারটা ফটুক পাঠাইলে আমারে অন্তত শ'খানেকই দিয়েন
তয় খিয়াল কইরা বাউল। ক্রস কানেকশন জানি না হইয়া যায় আবার। আমাগের আবার সমঝোতা অদ্যবধি ভালোই আছে কইলাম। ঐটারে নষ্ট করার ইরাদা নাই।
অনেস্টলী বলি, কেনো যেন এইবার বইমেলাটা খুব মিস করছি। মেলার মেঠো গালিচায় দাঁড়িয়ে লেখকের হাত থেকে তাঁর বইটা তুলে নেয়ার খুব লোভ হচ্ছে।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
যথারিতি ধুসরিয় কমেন্ট। এই উত্তরটা একাধিকবার দেয়া হয়েছে। কইন্যার কোন কমতি নাই দেশে। বাট পাইতে হলে দেশে আসতে হবে আগে। টেলি কনফারেন্সিং বিবাহের কোন চান্স নাই ডিয়ার গোধু।
পুরা দেশটাই ধুসররে মিস করছে। পুরা দেশ...
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
কী রে ভাই? এইখানেও শিমুলরে হিংসা!
শিমুল দুইহাজার ফটুক পাইলে একটা রাইখ্যা , বাকী এক হাজার ন'শ নিরানব্বইটা পানশী কইরা রাইন নদীর তীরে পাঠায়ে দিবে ; এতটুকু বিশ্বাস আপনার নাই? ক্রসকানেকশনরে ডরান কেনো?
আচ্ছা, আলাবামার মেম্বর সা'ব ইদানিং চুপচাপ। কারণ কি?
- বউয়ের পিডা খাইয়া একটু ঠান্ডা আছে। এই মন্তব্য লেখা পর্যন্ত বউয়ের সাড়ে তিন পশলা মাইর খাইয়া মাথায় টুপি আর হাতে তসবীহ্ নিয়া জায়নামাজে বইসা থাকার খবর পাওয়া গেছে।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বউ বাটা বলসাবান - নামটা ইউনিক লাগছে।
প্রথম সুযোগেই কিনে ফেলবো।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
যাক একটা কপির অন্তত গতি হবে
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
অভিনন্দন! সফল হোন!
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
ধন্যবাদ বিপ্লব ভাই
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
খুবই ভাল লাগলো। শুভেচ্ছা রইলো গ্রন্থপ্রকাশ উপলক্ষে। দেশে থাকলে বইও কিনতে পারতাম, মেলায় পরিচিত লেখক পাবার গর্বে ভাসতেও পারতাম। দুই জনেরই পোয়াবারো।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
অন্যরকম দিন চালু থাক। ঢাকা থেকে ফিরে যাওয়ার পরও।
বই প্রকাশে অভিনন্দন।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
http://www.somewhereinblog.net/blog/dollblog/28774024 রক্তজবা এক
http://www.somewhereinblog.net/blog/dollblog/28774027 রক্তজবা শেষপর্ব
লেখাটি এখন সা, ব্লগে আছে তাই এখানে দিচ্ছি না, আপাতত।
খুব বড় হয়ে গেল বোধ হয়। সময় পেলে পড়ার অনুরোধ রইল।
আপনার আগ্রহ, লেখাটি শেষ করতে খুব সাহায্য করেছে।
ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন।
বউ বাটা বল সাবান সা. ব্লগে পড়েছি খুব ভাল লেগেছে।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
নতুন মন্তব্য করুন