পথ চলতি গল্প আর আমি অথবা আমার পথচলা

নজমুল আলবাব এর ছবি
লিখেছেন নজমুল আলবাব (তারিখ: সোম, ০৫/০৫/২০০৮ - ১০:৩৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তবে কি বদলে যাচ্ছি? ভাব ধরা সময়টা পার হতে পেরেছি? মাঝে মাঝে মনে হয়, হ্যা বদল ঘটছে, মাঝে মাঝে মনে হয়, না, হচ্ছেনা।

গত সপ্তায় একটা বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে গেলাম। শিক্ষাবিদ প্রফেসর মো. আব্দুল আজিজ এর 'কালের যাত্রার ধ্বনি' গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান। স্মৃতিচারণ মূলক গ্রন্থ। স্যারের দীর্ঘ জীবনের নানা স্মৃতি উঠে এসেছে পারিপার্শ্বিকতাসহ। প্রায় ছয় মাস পরে এমন একটা অনুষ্ঠানে গেলাম যেখানে আমার সাবেক সহকর্মীরা আছেন। বুদ্ধিবৃত্তিক অনুষ্ঠানগুলো সচেতন ভাবেই বর্জন করছিলাম বেশ কয়েক মাস। তবু গেলাম। তুলির প্রচন্ড আগ্রহ, সাথে নিজেরও কিছু টান ছিল। এই গ্রন্থ শুরু হয়েছিল পত্রিকার পাতায়। আমি সেইসময় সেই পত্রিকার এইসব লেখালেখির বিভাগটা দেখতাম। টুকরো টুকরো লেখা জমে মলাটের ভেতর ঢুকেছে! আরামদায়ক বটে।

অনুষ্ঠানে সীমিত মানুষের উপস্থিতি। আয়োজকরা সবার নাম ঠিকানা লিখে নিচ্ছিলেন। আমার সামনে যখন স্বাক্ষরের কাগজটা এলো, পেশা লিখতে গিয়ে লিখলাম 'ব্যবসা'! আমার হাতটা কি একটু কাঁপলো? বুকের ভেতর কি টান পড়লো? এভাবে কি পরিচয় বদলে ফেলা যায়। রাস্ট্র কি এভাবেই নিয়ন্ত্রন করে মানুষের পছন্দ, জীবনের সরল রেখা?

২.
হিমন ছবি আঁকে। আমার বন্ধু শাহ আলমের ছাত্র। আরেক ছোটভাই ওসমান এর ভাই। সজল ছত্রী লিখে কবিতা। এরা এখন দিনমান ঘিরে রাখে আমাকে। তাদের স্বপ্ন গিলে খাই রোজ আমি।

দিনে চোদ্দহাজার বার ইলেকট্রিসিটি যায়। ভ্যাপসা গরমে রুমে বসা দায়। আমি তখন রাস্তায় হাটি। সাথে থাকে হিমন নয়ত সজল নয়ত তারা দুজনেই। আরও অনেকেই। এদের সাথে কোন কালেই সেভাবে কথা হয়নি। দেখা হতো মাঝে মাঝে, সালাম পেতাম। মাথা ঝুঁকিয়ে সাড়া দিতাম, কথা বলেছি হয়ত মাঝে মাঝে। আর এখন এই পাগলেরাই আমাকে ঘিরে রাখে। মনটা মৃত হতে হতে হয়না সজিব এই যুবকদের জন্য।

শহর সিলেটকে আমি আমার হাতের তালুর মত চিনি। রাস্তায় রাস্তায় হেঁটেছি, মোটর সাইকেল দাবড়িয়েছি অনেক বছর। একটা সময় আমার 'কমিন্দির' চোটে পরিচিতরা রাস্তায় পেলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। মুখে মুখে কাতুকুতু দেয়া আর খোঁচা দিয়ে কথা বলা ছিল অভ্যাস। রিক্সায় বসা কাউকে দেখলে মাঝে সাঝে চিৎকার দেয়া হতো। এসবই ভুলে গিয়েছিলাম...

জিন্দাবাজারে দাতের মাজন বিক্রি করে হেঁটে হেঁটে এক লোক। দশ বছর কিংবা তারও বছর দু এক আগের অপু জেগে উঠে। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়ায়। মাজনের দিকে সরু চোখে তাকায়। বিক্রেতা উৎসাহে মাজনের গুনাগুন শোনায়। বলে, দাতের সব দাগ মুছে দেবে, নিয়ে যান ভাই নিয়ে যান... অপু বিতলামি এক ভঙি করে দু পাটি দাত মেলে ধরে... সজল, হিমন হেসে উঠে হা...হা...হা... মাজনওয়ালাও হাসে। আগে, সজলের দশ বছর আগে হাসতো জাকির কিংবা রিয়াদ...

আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে বাণিজ্য মেলা শুরু হয়েছে। ৯৭ সালে মনে হয় প্রথম হয়েছিল। কুমারপাড়াবাসী আমাদের এক বান্ধবীর প্রেমে পড়ল এক বালক। বেচারা রোজ একবার করে আমাদের মেলায় ঢোকায়। টিকিটের কাটা অংশটাও দিয়ে দেয় লটারির জন্য। চটপটি খাওয়ায় আর বলে ইয়াসমিন আসবেনা অপু? আমি বলি রাজুরে ধর। সে রাজুর কাছে যায়। রাজু আশ্বাস দেয় আসবে আসবে। কিন্তু কি গরম পড়েছে দেখছ... সে দৌড়ে যায় আইসক্রিমের দোকানে...

মেলা শুরু হয়েছে এক সপ্তাহ হয়ে গেল। টান পাইনা মনে। রোজ সকাল বিকেল মাঠের পাশ দিয়ে যাওয়া আসা করি, মেলায় ঢোকা হয়না... বুড়া হয়ে গেলাম তবে?

না বুড়া হইনি। আজকে দুপুরে রাস্তায় হাটতে হাটতে আমি আচমকা গেয়ে উঠেছি, রূপভানে নাচে কোমর দুলাইয়া... হা...হা...হা... হিমন আমারে বলে অপু ভাই আপনে মিয়া বদ আছেন, আমাদের বলেন ফাউল আর আপনে এখন বেটির গান ধরেন!!! আমি হাসি, ঠা ঠা মারা হাসি... অনেক দিন এমন করে হাসতে পারিনা। আগে রোজ হাসতাম, হাসাতাম তারও বেশি।

আজ শাহ আলম এর জন্মদিন ছিল। দু সপ্তা পর বিয়ে বার্ষিকী তারও দুদিন পর মৃত্যু... এই লেখাটা তারে দিলাম।


মন্তব্য

নিঝুম এর ছবি

আমরা বদলে যাচ্ছি।প্রতিদিন।প্রতিনিয়ত।
---------------------------------------------------------
শেষ কথা যা হোলো না...বুঝে নিও নিছক কল্পনা...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

নজমুল আলবাব এর ছবি

হু। তবু মাঝে মাঝে মনে হয় থমকে গেলাম বুঝিবা।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

শেখ জলিল এর ছবি

নস্টালজিক। স্মৃতিকাতরতার পোস্ট। ভাল্লাগলো।
..লেখার উৎসর্গে চোখ আটকে রইলো কতোক্ষণ। দীর্ঘশ্বাস...

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

নজমুল আলবাব এর ছবি

ধন্যবাদ জলিল ভাই। সকালে হিমন হারামজাদাটা মনে করিয়ে দিল আলমের কথা। খুব বাজে একটা কাজ করেছে ছেলেটা। খুব বাজে।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

দ্রোহী এর ছবি

সবকিছু কেমন বদলে গেল। ভাল লাগে না আর.........................


কি মাঝি? ডরাইলা?

নজমুল আলবাব এর ছবি

তবু ভাল লাগাইতে হয়, এর চেয়ে কষ্টের আর কি আছে বলেন?

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

দ্রোহী এর ছবি

ভাল লাগানোর অভিনয় করতে করতে একদিন চলে যাব চির শান্তির দেশে। কি অদ্ভুত মানবজীবন !!!


কি মাঝি? ডরাইলা?

নজমুল আলবাব এর ছবি

সেইটা চির শান্তির দেশ এই কথা কে বল্ল আপনারে?
সেখানেও আমরা বিষন্নতার গান গাইব ভাইজান।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

দ্রোহী এর ছবি

সেইটাও একটা কথা। হুরপরীতেও একদিন বিরক্তি এসে যাবে। তখন কি হবে!!!!!!


কি মাঝি? ডরাইলা?

নজমুল আলবাব এর ছবি

আমরা আবার ব্লগিং শুরু করবো। হাসি

সৌরভ এর ছবি

কিছু বলতে ইচ্ছা করে না।


আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নজমুল আলবাব এর ছবি

এই কথা বলে কি পার পাওয়া যায় সৌরভ কুমার? যায় না।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আহা রে, পুরনো সব সুখস্মৃতিগুলো যদি বন্দী করে রাখা যেত কোনভাবে! অনন্তকাল! এখনই মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগে ফেলে আসা দিনগুলো, বন্ধুদের আর কখনো আগের মত করে পাওয়া হবে না ভেবে। আরো কয়েক বছর পর যে কি হবে! ভাবতেও চাই না এখন। আপনার লেখাটা খুব ছুঁয়ে দিল।

নজমুল আলবাব এর ছবি

যদি হাতের মুঠোয় পুরে রাখতে পারতাম সময়
তবে রোজ সন্ধায় তারে একবার করে খুলে দেখতাম
ইচ্ছেমতো ঘ্রাণ নিতাম আর সজিব হতাম হররোজ।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অনিন্দিতা এর ছবি

লেখাটা ভাল লাগল।
পারিপার্শ্বিকতার কারণে মানুষ অনেক কিছুর সথে খাপ খাইয়ে নেয়।
কিন্তু ভেতরের মানুষটা কখনোই বোধ হয় বদলায় না। না হলে কি স্মৃতিকাতরতা থাকতো?

নজমুল আলবাব এর ছবি

ধন্যবাদ অনিন্দিতা। এত ঝক্কি করে ভাল লাগা জানালেন! কৃতজ্ঞ আমি।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

তীরন্দাজ এর ছবি

এত দ্রুত আর এত বেশী পাল্টে যাচ্ছে সব! দ্রুততা বেড়েই চলেছে চক্রবৃদ্ধি হারে।

কেমন আছেন আলবাব?
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নজমুল আলবাব এর ছবি

মনে হয় ভালই আছি তীরুদা। তবে দ্রুত বদলে যাচ্ছে সব। তাল মেলাতে কষ্ট হচ্ছে।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

কনফুসিয়াস এর ছবি

আমিও ইদানীং এই কথাই ভাবি বারবার- বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

নজমুল আলবাব এর ছবি

পেট মোটা হয়ে যাচ্ছে।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

তারেক এর ছবি

সিলেট আমার খুব প্রিয় শহর হয়ে উঠছে... ছোটবেলায় সমরেশবেলায় জলপাইগুঁড়ি ছিল আমার স্বপ্নের শহর। কিন্তু সৌরভ ভাইয়ের অসুখ আপনারে ইদানিং খুব ঘন ঘন আছর করতেছে...
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

নজমুল আলবাব এর ছবি

ধন্যবাদ তারেক।
আমারে সৌরভের অসুখে আছর করল না তারে আমারটায়? তারেইক্যার উপরে কিসের আছর পড়ে মাঝে মাঝে?

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

সুরমার স্মৃতি নিয়ে কাতর হয়ে পড়লাম , প্রিয় আলবাব।

আপনারা ভালোই আছেন ।

নজমুল আলবাব এর ছবি

হ্যা ইলিয়াস ভাই, আমরা ভাল থাকি।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

পরিবর্তনশীল এর ছবি

আগে বৃষ্টি হলেই ছুটে যেতাম।
খোলা মাঠ। নরম হয়ে যাওয়া ফুল।
আমরা বৃষ্টির কাছে নিজেদের বিলিয়ে দিতাম।

এখনো বৃষ্টি হয়।
আগের মতন। সবুম মাঠকে জড়িয়ে ধরে।
এখন আমি বৃষ্টিদিনে নিজেকে বন্দী করে রাখি ঘরের ভেতর।

বৃষ্টি এখন। আমার কাছে।.।.।.
স্যাঁতসেতে কাদা ছাড়া।
আর কিছুই নয়।

( ক্যান লিখলাম জানি না। আলবাব ভাই, ক্ষমা করে দিয়েন)
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

নজমুল আলবাব এর ছবি

এটা মন্তব্যের ঘরে বেমানান। আলাদা পোস্ট হোক। ধন্যবাদ পরিবর্তনশীল।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

আরিফ জেবতিক এর ছবি

পড়েছি , মন্তব্য করিনি ।

----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

মাইলস টু গো, বিফোর স্লিপ... ।

কিছুই বলার নাই।

নজমুল আলবাব এর ছবি

শেষ দুইটা মন্তব্য আমিও পড়লাম।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অতিথি লেখক এর ছবি

সবার মন্তব্য পড়ে আর মন্তব্য করতে ভালো লাগছে না। মন খারাপ হয়েছে, আলবাব ভাই, আরও লিখুন।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।