এই ুত...নিগুলা বাচ্চাদের পড়াতে আসে কেনো?

নজমুল আলবাব এর ছবি
লিখেছেন নজমুল আলবাব (তারিখ: বুধ, ০৬/০৫/২০০৯ - ৪:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাবাইর স্কুল ছুটির দশ মিনিট পর আমি গেটের ভেতর যাই। এর আগে গেলে সে রাগ করে, কারণ আমি গেলে তার খেলা হয় না। আজও সেইমতোই গেলাম। ছোট্ট কঙক্রিটের উঠোনে তারে খুজি। দৌড়াদৌড়িতে নাই। চোখ মেলে মেলে ধরি শেষে। এককোনায় দাড়িয়ে আছে। আমি এগিয়ে যাই। অন্যদিন আমাকে দেখেই ছোট্ট শরীরটা উড়িয়ে নিয়ে আসে। লাফ দিয়ে কোলে চড়ে। বাবা বলে চিৎকার করে। আজ সেসব কেছুই নাই! আমি বুঝি কিছু একটা হয়েছে। হাটুমুড়ে বসি সামনে, কি বাবা কি হয়েছে? সে মাথা নাড়ে, কিছু হয়নি তার। বলি বন্ধুরা মেরেছে? ক্যাপ নিয়ে গেছে? সেটাও নয়। তার পাশ থেকে একজন বলে, ‌মিস তারে পানিশমেন্ট দিয়েছে'। আমি বলি কি করেছো বাবা তুমি? বাবাই আমার বুকে ঢুকে গেছে ততক্ষণে। সেই একজনই বলে, বোর্ড এর লেখা মুছে দিয়েছিলো... আমার মাথাটা চিড়িক দিয়ে উঠে। বলি কি করেছেন মিস? এবার আর বাবাইকে প্রশ্ন করি না, করি সেইজনকেই। বলে কান ধরে উঠবস করিয়েছে। এটাও সে বলতে পারে না। জিনিসটা সে বুঝেই না। দেখিয়ে দেয় কিভাবে শাস্তিটা দেয়া হয়েছে। সিলেট শহরটা কাপে কিনা জানি না। আমি কেপে উঠি... বাবাইকে বুকে ধরে প্রিন্সিপালের রুমের দিকে হাটা দিলে, বাবাই কাকুতি করে বলে, বাবা ওইদিকে না। বাসায় চলো, আমি বলি না, প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে আসি। মনে মনে গালি দিতে থাকি বাবাইরে, হারামজাদা মিনমিনামি করবি না। তুই অপুর ছেলে, শক্ত হতে শিখ ভুদাইর বাচ্চা...

প্রিন্সিপাল আমাকে বুঝ দেন, বলেন, আপনি মার খান নাই? আমি বলি আমি সাত বছর বয়েসে স্কুলে গেছি। বিস্তর মার খেয়েছি। কিন্তু এই ছেলের বয়েস মাত্র ৪ বছর তিন মাস। তিনি আমাকে নানান কথা বলেন। তবু আমার মাথা ঠান্ডা হয় না। বলি, স্যার এই ছেলের বয়েস দশ হোক, তারপর তারে পিটান...

স্কুলের চেয়ারম্যানও মাথা ঠান্ডা করতে বলেন, পূর্বপরিচয়ের সূত্রে বলি, আমি কি ঠান্ডা নই? হাসি দিয়ে পরিবেশ হালকা করেন। প্রিন্সিপাল কোলে নিয়ে বাবাইকে নানান কথা বলেন। সে হাসে। অনেকক্ষণ পরে বাবাই আমার হাসে...

এই চুতমারানিরা মাস্টারি করতে আসে কেনো? শিশুদের মন বুঝে না যে সব ছাগুরা তাদেরকে কে আনে এইসবে? একটা বাচ্চা বোর্ডের লেখা মুছে দিয়েছে বলে তাকে শাস্তি দিতে হবে? কি এমন মহাকাব্য লিখেছিলো সে আমার জানতে মন চায়। আমি বড়ো বিক্ষিপ্ত মন নিয়া এই লেখাটা লিখতে বসছি। সবচে বড়ো কথা মেরেছেতো মেরেছে, বাচ্চাটার মন ভালো করে দেয়নি সে। এর উপর কতোটা মানষিক চাপ দিয়েছে সে সেই চিন্তাও তার নাই। এই বরাহ নন্দীনিরে আমার বড়ো চাবকাইতে মন চাইছে।

এইসব সময়ে আমার খুব গালি আসে। যা ইচ্ছা তাই গাইল দেই। আপনারা ক্ষমা করে দিয়েন প্লিজ।


মন্তব্য

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আপনার কষ্টটা ছুঁয়ে গেলো। বৃটিশ শুয়োরের বাচ্চারা এইসব মনোবৃত্তির জন্ম দিছে। "জাস্ট এনাদার ব্রিক ইন দ্যা ওয়ল"

কষ্ট পাইয়েন না, বাবাইকে নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসেন, ওর জন্য আজকের দিনটা প্রচন্ড প্রিয় কিছু মজার কাজ করে ভরিয়ে দিন। হয়তো ও ভুলে যাবে স্কুলের কথাটা।

বাবাইকে এই ঘটনার কথা বিস্মৃত করাটা কিন্তু জরুরী। আপনে সেইটাই করেন।
___________________________
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ

মামুন হক এর ছবি

আপনার কষ্টটা আমারেও ছুয়ে গেলো।
ক্লাস টু তে থাকতে একবার পিচ্চি ( সাড়ে তিন বছরের) ভাইটাকে শখ করে স্কুলে নিয়ে গেলাম আমার পাশে বসে থাকতে। তার মাথায় টুপি নাই ( সে তো আর ছাত্র না) দেখে, কিছু না জিজ্ঞেষ করেই আরবী আপা তার মাথায় ডাস্টার দিয়ে বাড়ি দিল। ভয়ে পিচ্চি ভাইটার চোখ গোল্লা গোল্লা হয়ে গেছিল
আজ পচিশ বছর পরেও মহিলাকে ক্ষমা করিনি।

এনকিদু এর ছবি

এই সমস্ত কুৎসিত লোকজনের শিক্ষকতা দেখতে দেখতে ( শৈশবে নিজের চোখে এবং পরে আশেপাশের অন্যদেরো ) বিরক্ত হয়ে একদিন ঠিক করলাম আমি নিজেই বড় হয়ে একটা স্কুল দিব । সেই চিন্তা এখনো মাথার মধ্যে আছে । দেখা যাক ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ছোটবেলায় খাওয়া শাস্তিগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। মনে আছে, বড় ওয়ানে পড়া অবস্থায় একবার এক গৃহশিক্ষক আমারে বেশ মেরেছিলেন। সেবার কী, না তারপরে ঠিক মনে নেই, ঢিল মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলাম তার। হয়ত কাজটা ঠিক হয় নাই। কিন্তু সে সময়ে ছোট মনে তার প্রতি তীব্র বিরাগ জন্মেছিল, সেটাই হয়তো আমাকে অমন কাজ করিয়ে নিয়েছিল।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আহা। কী আর বলব। এই মানসিকতার পরিবর্তন কবে যে হবে। আপনি ওকে একটা সুন্দর দেখে সাইকেল অথবা সাইকেল থাকলে অন্যকিছু কিনে দেন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বাচ্চাদের পড়ানো-শেখানো একটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এর জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষন। শিক্ষক প্রশিক্ষন কোর্সে কখনোই বাচ্চাদের শাস্তি দেবার কথা বলা হয়না। কিন্তু এ'দেশে হরহামেশাই বাচ্চাদের শাস্তি দেয়া হয়, আর আমরা সেটাকেই নর্ম বলে মনে করি। তাই কথিত প্রিন্সিপাল আলবাবকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, "আপনি মার খান নাই"? ঐ প্রিন্সিপালের কোন প্রশিক্ষন থাকলেও শিক্ষক প্রশিক্ষনের শিক্ষা তার মগজে ঢোকেনি।

আমাদের দেশের অধিকাংশ স্কুলে ও-লেভেল/এ-লেভেল/এস এস সি/এইচ এস সি পাশদের দিয়ে বাচ্চাদের পড়ানো হয়। প্রশিক্ষিত সিনিয়র শিক্ষকেরা অল্পবয়সী বাচ্চাদের পড়ানোটাকে তাদের জন্য সম্মানহানিকর বলে মনে করেন।

মূলতঃ স্কুল পর্যায়ের কোন ক্লাশেই অপ্রশিক্ষিতদের দিয়ে শিক্ষা দেয়া উচিত না। অথচ এখানে তাই করা হয়। তাই এমন নারকীয় ঘটনা আমাদের প্রতি নিয়ত দেখতে হয়, শুনতে হয়। আলবাব, আপনি যদি অনুসন্ধান করেন তাহলে ঠিক দেখতে পাবেন ঐ শিক্ষিকার (!) কোন প্রশিক্ষন নেই।

শিশুশিক্ষার মত হাইলি টেকনিক্যাল বিষয়কে যতদিন এইসব আগাছা-পরগাছাদের দিয়ে করানো হবে, আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতি ততদিন পর্যন্ত হবেনা।

আমি নিজেও কিণ্ডারগার্টেনে পড়ুয়া ছেলের বাবা, তাই আলবাবের কষ্টটা আমি বুঝতে পারি। আমার জিজ্ঞাস্য, ঐসমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কি অমন বয়সী ছেলে-মেয়ে নেই বা ছিল না?!



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এনকিদু এর ছবি

প্রশিক্ষিত সিনিয়র শিক্ষকেরা অল্পবয়সী বাচ্চাদের পড়ানোটাকে তাদের জন্য সম্মানহানিকর বলে মনে করেন।

সবাই না । নিজে থেকেই পিচ্চিদের ক্লাস নিতে চায় এরকম আগ্রহী শিক্ষক / শিক্ষিকাও আছেন । তবে তারা সংখ্যায় এবং পরিমানে নগন্য ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

শান্ত [অতিথি] এর ছবি

বাবাইর মতো ছেলেকে মানুষ শাস্তি দিতে পারে?

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

ছোটবেলায় আমার এক স্যার মাইর দিছিলো, তখন বয়স ছিল আট, ক্লাস ছিল ৩। মাইর দেয়ার পর বলছিল "ফিডার উফর ওষুধ নাই"; আর খ্যাক খ্যাক হাসি। ঐ স্যারের সাথে আমার পরে অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল, আমাকে অনেক পষন্দ ও করতেন, কিন্তু আজো তাঁর প্রতি আমার জড়তা কাটেনাই। বাবাইয়ের মন্টা এখন ভালোই মালুম হয়, কারন আমি বাসায় যেয়ে ঝাড়ি খাইছিলাম আব্বুর হাতে, আর বাবাইয়ের বাপ ঝাড়ি মার্ছে প্রিন্সিপালরে! বাপ্রে!
**************
শাহেনশাহ সিমন

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

রানা মেহের এর ছবি

বাবাই কোন স্কুলে পড়ে রে?
মাসুদ ভাইয়ের স্কুলে?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সাইফ এর ছবি

আপনে ওই বেটিরে ধরেন নাই এখনো? আমার মেয়ের বয়স ৩, ডে কেয়ারে যায়, প্রচন্ড দুস্ট, তাই বলে তাকে শাসন করার কোনো অধিকার তার নাই, শাস্তি দিলে ভাইজে খেয়ে ফেলব্, তাদের কমপ্লেইন থাকলে আপনাকে বলবে, শিশু মনে এসব ত্রাসের সৃস্টি করার মানে কি? আপনে ওই বেটিরে ধরেন, প্রিন্সিপালের পিছনে লুকায় উনি যা খুশি করবে, আর আপনাদের মেনে নিতে হবে?? আমি নিজে খুব ডানপিটে ছিলাম, কিন্তু আমি স্কুল শুরু করেছি ক্লাস ২ থেকে। ওই মহিলা একা কথা বলতে ভয় পাইলে প্রিনসিপালের সামনে বসে কথা বলেন। ছাইড়া দিয়েন না, নাহলে নতুন উদ্দমে উনি একাজ আবার করবে।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

খুব দুঃখজনক।
শিক্ষক সম্প্রদায় আর পুরো জাতির জন্য খুবই লজ্জাজনক।
হ্যাঁ, বছর কয়েক আগে পত্রিকায় পড়েছিলাম একটা এক্সট্রিম খবর-
কোন্ এলাকায় মনে নেই, বাংলাদেশেরই কোনো এক স্কুলশিক্ষিকা তার ছাত্রকে শাস্তি দিতে গিয়ে নাভির মধ্যে বেত ঢুকিয়ে ঘুরাচ্ছিলেন, তার সাধ মিটছিলা না কোনোমতে, এবং সেখানে নাভি থেকে রক্তক্ষরণ হতে হতে সেই অভাগা ছাত্রটা মারাই গ্যাছে।
সেই শিক্ষিকার কী হয়েছে পরে, এমন আর কোনো ফলো-আপ-ই পাইনি অবশ্য।
কী পরিমাণ অমানুষদের কাছে আমাদের ভাইবোন-ভাগ্নে-ভাস্তেরা বিদ্যা শেখে, সেটা ভেবে শিহরিত হয়েছি বারবার।
আজকেও বাবাইয়ের এই ঘটনায় কেমন লাগছে- বলে বুঝাতে পারবো না এইগুলা কখনও।
না, ওই নন্দিনী বুঝবে না কোনোদিনই অপু ভাই।
বুঝলে তো এইটা করতেই পারতো না সে।
মন খারাপ

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

মারামারি যে শিশু শাসন করার কোন উপায় নয় সেটা এখনও বুঝতে শেখেনি বাঙ্গালী। আপনি মাথা ঠান্ডা করেন। গালি দিলে আপনার সাথে ওই শিক্ষয়িত্রীর পার্থক্য কোথায়?

বাচ্চা শাসন করতে হলে যে মার দেয়া ছাড়াও আরও পদ্ধতি আছে সেটা নিয়ে পড়া শোনা করেন। তারপর প্রিন্সিপালের কাছে গিয়ে বুঝিয়ে বলুন আপনার যুক্তি এবং পদ্ধতিগুলো। একটা সময় নেন প্রিন্সিপালের কাছে থেকে, যাতে ভদ্রমহিলাকে বিষয়গুলো জানাতে পারেন।

যে পদ্ধতিটা বললাম সেটা এক্সিকিউট করা সবচে শক্ত কাজ। কিন্তু এক্সিকিউট করতে পারলে সবচেয়ে এফেক্টিভ হবে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
এই একাউন্টটি কোন মডারেটরের নয়। এই একাউন্ট থেকে মডারেশন করা হয়না, কিংবা এই একাউন্টের কর্মকান্ডের দায়ভার সচলায়তন নেবে না।

রেনেট এর ছবি

বলতে ইচ্ছে করছে অনেক কিছুই, বেশীরভাগই ছাপার যোগ্য না।
---------------------------------------------------------------------------
No one can save me
The damage is done

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

জি.এম.তানিম এর ছবি

বাবা মা এর বদলির চাকরির সুবাদে অনেকগুলো স্কুলে পড়া হয়েছে। সরকারি বেসরকারি সবরকম স্কুলেই পড়েছি। ক্লাস এইটে একটা মিশনারি স্কুলে ভরতি হওয়ার পর বুঝতে পারলাম এর আগের স্কুল পর্যন্ত স্যাররা যে মারধোর করতেন সেইটা নাকি তারা করতে পারেন না। এনকিদুর মত আমারো একটা স্কুল দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। যেই ভয়ংকর নৃশংসতার সাথে শিশুকালে পরিচিত হতে হয়েছে তা যেন পরবর্তী প্রজন্মকে পেতে না হয়! প্রাইমারি শ্রেণী গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে মানবিকতাটা কি লক্ষ্যই করা হয় না?

চার বছরের বাচ্চাকে শাস্তি দেওয়া হল... মুখটাই তো তেতো হয়ে যায়...
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বাবাই সোনার জন্য খারাপ লাগল। এতটুকুন শিশুর সাথে যে এই ধরনের আচরণ করতে পারে, তাকে আর যা-ই বলা যাক, মনে হয় 'শিক্ষক' বলা যায় না।

মাশীদ এর ছবি

ছোটকালে স্কুলে প্রচুর শাস্তি-মার খেয়েছি। আমার ভাতিজাও যে খাবে নো ডাউট। কিন্তু তাই বলে এত্ত ছোট্টকালে? আশ্চর্য! এরা পারেও! এত্ত ছোট বাচ্চাদের এরকম শাস্তি দেয় কিভাবে! মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমি অবশ্য ৬ বছর বয়সে প্রথম মার খাই। ক্লাস টু। একবার বাড়ির কাজ না নেয়ার জন্য এক সহপাঠিনীকে স্যার বেত দিয়া হাতে ২ বাড়ি দিছে, কিছু পোলাপান ওইটা দেইখা হাততালি দেয়ায় তাদেরকেও মার শুরু হয়েছে। আমাকে এসে স্যার জিজ্ঞেস করছেন হাততালি দিয়েছি কিনা, আমি মনে করেছি বাড়ির কাজ দিয়েছি কিনা তাই জিগায়। হ্যাঁ বলতেই দুই হাতে দুই বাড়ি। হাসি

স্কুলে বাচ্চাদেরকে কঠিন কোনো শাস্তি দেয়া যেমন ঠিক না, একইভাবে কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক এই শিক্ষাটা খুব ভালোভাবে না দিলে পরবর্তী জীবনে তার প্রভাব খুব খারাপ হতে পারে। এই কাজটা শিক্ষকদের জন্য কঠিন - পিটানো যাবে না, ভয়ভীতি দেখানো যাবে না আবার শিক্ষাটাও দিতে হবে। সুতরাং শিক্ষক নেয়ার সময় এসব কোয়ালিটি আছে কিনা, তাও দেখা উচিত। অবশ্য আমাদের প্রাইমারিতে নিয়োগ হয় ঘুষ ও দলীয়করণের মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও অযোগ্য শিক্ষক ভুরিভুরি।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

হিমু এর ছবি

কোন সহীহ অপরাধের জন্য স্কুলে কখনো মাইর খাইনাই। যেগুলি খাইসি সেগুলি অন্যের অপরাধের দর্শক হিসাবে। ক্লাস ফোরে থাকতে স্বৈরাচারী এরশাদ বদমাইশটা গাড়ি চড়ে স্কুলের সামনে দিয়ে যাবে, আমাদের সারা দিন দাঁড়িয়ে থাকতে হলো স্কুলের সামনে, একটু পানি পর্যন্ত খাই নাই, অধৈর্য্য হয়ে ঘন্টা চারেক দাঁড়িয়ে থেকে বলে বসেছিলাম, "আসে না ক্যান?" হেডস্যার এসে দারুণ এক থাপ্পড় দিলেন। এরশাদকে কোনদিন সামনে পেলে জানি না কী করবো। পত্রিকায় দেখি নির্লজ্জ সাংসদেরা রোদের মধ্যে বাচ্চাদের দাঁড় করিয়ে রাখে, মনে হয় এদের কি সামান্যতম লজ্জাঘেন্না নাই, এরা কি সব ফকিরের হদ্দ ফকির যে এমপি হওয়ার পর কতগুলি বাচ্চারে রোদে ঝলসাইয়া তাগো থিকা সম্বর্ধনা লইয়া বড় সাজতে হইব? ক্লাস ফাইভে থাকতে একবার হেডস্যার আচমকা আমাকে আর সহপাঠী রাজাকে অঙ্ক করার মতো একটা ভালোমানুষি কাজের মাঝখানে একেবারে তুলার মতো ধুনলেন, কারণ কী আজও জানি না, সন্দেহ করি মিমি নামে এক সহপাঠিনীকে যে স্যারের কাছে অতীত কোন অপরাধ নিয়ে চুকলি কেটেছিলো। বাসায় গেলাম সারা শরীরে দাগ নিয়ে। হাই স্কুলে একবার মান্নান নামে এক শিক্ষক হেডস্যারের সাথে ঝগড়া করে এসে অকারণে আমাকে ভয়ঙ্কর একটা থাপ্পড় দিয়েছিলেন, আমার অপরাধ ছিলো তার দেয়া এক টাস্ক সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম। লোকটাকে এরপর আর শিক্ষকের মর্যাদা দিইনি মন থেকে।

সত্যিকারের অপরাধ করে অনেকবার তিরস্কৃত হয়েছি, তখন নিজের কাছেই নিজেকে ছোট মনে হয়েছিলো। কোন ছোট বাচ্চার গায়ে সারা জীবনে হাত তুলিনি, কাউকে তুলতে দেখলে মাথায় রক্ত উঠে যায়, মনে হয় বেল্ট খুলে চাবকাই।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

রণদীপম বসু এর ছবি

এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার মূলে আরো কিছু কারণ হয়তো আছে।
পাণ্ডব দা' যেমন বলেছে প্রশিক্ষিত সিনিয়র শিক্ষকরা ছোট ক্লাসে পড়াতে চান না, সেটা তো আছেই। এছাড়া আমাদের যথাযোগ্য মেধাবী বা যোগ্য লোকরা এই জটিল অথচ প্রাথমিক শিক্ষকতায় কেন আসতে চান না, তাও খুঁজে দেখা দরকার।
প্রকৃতই মানবিক ও যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার ভ্রুণক্ষেত্র এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকে কেন ভুলভাবে অযোগ্য কর্মস্থল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে ? আমাদের মূল্যবোধের সমস্যা নিশ্চয়ই। এ বিষয়টাই হয়তো ইফেক্ট করে শিক্ষকদের মধ্যে বেতন কাঠামোর বৈষম্য এবং শিক্ষাদান প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যকেও। এ থেকে সামাজিক বৈষম্যও তৈরি হয়। কেন যোগ্য লোকরা এটাকে কর্মস্থল হিসেবে বেছে নেবেন ?
বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেনগুলোয় যে শিক্ষকরা কর্মরত, এরাও সম্ভবত অন্যকোন বেটার চান্সের অপেক্ষাতেই পড়ে রয়েছেন।

পাত্র হিসেবে প্রাইমারি শিক্ষকের বাজারদর কত কেউ কি বলবেন ?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

পাত্র হিসেবে প্রাইমারি শিক্ষকের বাজারদর কত কেউ কি বলবেন ?

কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ভালো ছিলো। সরকারী চাকুরী। পেনশন আছে। চোখ টিপি
এখন হাইস্কুলগুলোতে শুনলাম পেনশন সিস্টেম চালু হচ্ছে। এটা হলে প্রাইমারি শিক্ষকরা অবশ্যই বিয়ের বাজারে মার খাবেন। প্রাইমারিতে শিক্ষক নিয়োগে নিযুক্ত কর্তাদেরও উপরি আয় কমে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সাইফ এর ছবি

শাস্তির ও প্রয়োজন আছে, কোনো সন্দেহ নাই, কিন্তু বয়স হতে হবে তো, আমি আজীবন সরকারী স্কুলে পড়েছি, মার খেয়েছিও অনেক, অনেক অমানুষ শিক্ষকও ছিলেন, কিন্তু ৩য় শ্রেনীর আগে কাওকে মার খেতে দেখি নাই। ৩-৪ বছর বয়সে বাচ্চাকে মারলে বা অন্য কোন শাস্তি দিলে সে কি বুঝবে? স্কুল ভীতি ছাড়া আর কোন কিছুই লাভ হবে না। আর আমি মনে করি আমি যথেষ্ট ভুদাই কিসিমের ছিলাম, মার খাওয়ার মাঝেও মজা পেতাম, এই বিবর্তনের যুগের বাচ্চারা আমার মত ভুদাই না, তারা অনেক sophisticated. আমার ইচ্ছা হইতেসে ও মহিলার পিন্ডি চটকাইতে। আলবাব ভাই, উনাকে সায়েস্তা করার পর আপডেট দিয়েন। আমার মেয়ে আবার ১ কাঠি সরেস, কোন কুকর্ম করার পর এসে বলবে, "বাবি, বকা ডাও, সামারা কে বকা দাও," আমার স্ত্রী আবার ভিডিও করে রেখেছে, লিংকটি এখানে দিলাম।

http://www.facebook.com/login.php#/video/video.php?v=36080420935

s-s এর ছবি

বাচ্চা দের নিয়ে একটা সময় কাজ করেছি , এবং মায়ের দীর্ঘ ৩০ বছর শিক্ষক প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা থেকে বলি, কোনো স্কুলেই শিক্ষকদের বেত নিয়ে যাবার নিয়ম নেই, কিন্তু এটি বাংলাদেশের সরকারী বা বেসরকারী কোনো স্কুলেই মানা হয়না। প্র্যাকটিস টিচিং এর সময় ভালো নম্বর পেতে শিক্ষকরা বেত ফেলে দেন, প্রশিক্ষক বিদায় হলেই আবার যেইকে সেই। শারীরিক শাস্তি দেওয়াও নিষেধ, বিশেষত: ক্লাস ফাইভের আগে। ক্লাস ফাইভ থেকে সর্বোচ্চ শারীরিক শাস্তি দাঁড় করিয়ে রাখা , তাও পাঁচ মিনিটের বেশি নয়, একশোবার "যা করেছি ভুল করেছি" টাইপ লেখা বা কাউন্সেলিং- কখনই শিক্ষার্থীকে শারীরিক ভাবে স্পর্শ করে নয়। পজিটিভ রিইনফোর্সমেন্ট, নেগেটিভ রিওয়ার্ড নয়- এটি প্রতিটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়েই শেখানো হয়, কিন্তু শিক্ষকরা সেটি প্রয়োগ করেন না। আরো বড় কথা, নিজেদের জীবনের অসাফল্য অনেক প্রাথমিক শিক্ষকই ছোট বাচ্চাটিকে মারার মধ্য দিয়ে ঢাকতে চান- ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স থেকে। বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশনের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মনোবিদদের গবেষণার লেখাগুলো পড়ুন, মন শান্ত হবে অনেক। দু:খের বিষয়, এর থেকে মুক্তির আপাতত: একটাই পথ, বাচ্চাকে দামী স্কুলে সামর্থ্য থাকলে দিন, যেখানে শিক্ষকরা অর্থনৈতিকভাবে একটু ভালো অবস্থায় থাকার কারণে বাচ্চাদের তাদের শত্রু বলে মনে করবে না। চিরত্যাগী পন্ডিতমশাইদের দিন আসলেই শেষ। মন খারাপ খারাপ লাগলো আপনার শিশুটির জন্য, সিক পাপিস এর পক্ষ থেকে ফ্রি হাগস ওর জন্য।

আদৌ কি পরিপাটি হয় কোনো ক্লেদ?ঋণ শুধু শরীরেরই, মন ঋণহীন??

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আমি জানি না কেনো, সেই ক্লাস ওয়ান থেকে আজ অবধি যে সকল স্যার আমাকে মেরেছেন, বকা দিয়েছেন, চিৎকার করেছেন; প্রতিটি ঘটনা আমার স্মৃতিকোষে জমা। ঋণ এবং কৃতজ্ঞতার শেষ নেই সকল স্যারের কাছে, তবুও - মনে পড়ে ,কারণ বরাবরই মনে হয় আমাকে মারাটা অতিরিক্ত শাস্তি ছিলো, বকা দেয়াটা অপরাধের তুলনায় গুরুদন্ড ছিলো। সবাই তো বলে - গুরুর মাইর মনে রাখতে নাই। আমি মনে রাখতে চাইনি, ভুলতে চাইনি। তবুও মনে পড়ে।
আমি চাই, বাবাই ভুলে যাক এ শাস্তির কথা। বড় হয়ে যেনো ওকে এরকম কোন শাস্তির অপমান/লজ্জা তাড়া না করে...।

এনকিদু এর ছবি

সবাই তো বলে - গুরুর মাইর মনে রাখতে নাই। আমি মনে রাখতে চাইনি, ভুলতে চাইনি। তবুও মনে পড়ে।

ওনারা গুরু ছিলেন না ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

নজমুল আলবাব এর ছবি

সবাইকে ধন্যবাদ। আশ্বস্থ হোন। আপনাদের প্রিয় বাবাই হাসছে। আজকে সে স্কুলে গিয়েছে। সে তার মিসকে অনেক অনেক গল্প শুনিয়েছে!!!

এই পোস্টের কমেন্টগুলো দেশের মাস্টারদের পড়াতে মন চাইছে খুব।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

গৌতম এর ছবি

বাচ্চাদের গায়ে হাত তোলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করা হউক- একবার ইউনিভার্সিটিতে ক্লাশে এই কথা বলে তুমুল হাততালি পেয়েছিলাম। পরে যখন প্র্যাকটিক্যাল করানোর জন্য ডিপার্টমেন্ট থেকে আমাকে ঢাকার একটি নামী স্কুলে পাঠানো হলো, সেখানে দেখেছি শিক্ষকরা কী নির্দয়ভাবে বাচ্চাদের পেটায়। প্রতিবাদ করেছি, লাভ হয় নি। আমি পড়াতাম অষ্টম শ্রেণীতে- সাধারণ বিজ্ঞান ও গণিত। নিজের ঢোল নিজেই পিটাচ্ছি- কিন্তু বলা দরকার- একটি বকাও কাউকে দিই নি; কিন্তু ওই বছর সবচেয়ে চমকপ্রদ রেজাল্ট করেছিলো অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরা যে শিক্ষার্থীকে 'গাধা' উপাধি দিয়েছিলেন, সেও বোধহয় ৫০%-এর উপরে মার্কস পেয়েছিলো।

আমার এহেন কর্মকাণ্ডে ওই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক আমার সুপারভাইজারের কাছে বিচার দেন। সুপারভাইজারকে আমি আমার যুক্তি দিই। তিনি শিক্ষকদের আমার পক্ষ থেকে মোকাবিলা করেন।

সুখস্মৃতি হলো, শেষ ক্লাশের দিন আমি বাচ্চাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম- যাওয়ার সময় তোমাদের আমি কিছু দিতে চাই। আমি দিতে পারবো এমন কী তোমরা আমার কাছে চাও?

ক্লাশের সবচেয়ে শয়তান হাসি ছেলেটি জানিয়েছিলো- জীবনে সে কোনো শিক্ষকের সাথে হ্যান্ডশেক করে নি। আমার সাথে হ্যান্ডশেক করতে চায়।

আমি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। আমার প্রতিটি বাচ্চাকে আমি জড়িয়ে ধরেছিলাম।

দুঃখিত, আপনার লেখাটি পড়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছি। বাচ্চাদের সাথে কাটানো এই সময়টি আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দিন।

বাবাইকে যে শিক্ষক মেরেছে, তাকে শিক্ষক হিসেবে ঘৃণা।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

এনকিদু এর ছবি

দারুন ! আপনারে তো আমি এমনি এমনি আমার স্কুলের হেডমাস্টার করি নাই দেঁতো হাসি


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

নজমুল আলবাব এর ছবি

সেই ইশকুলে মাস্টারদের উপ্রে লাঠি মারার এক্টা পোস্ট থাকতে হবে। সচলের মতো। লাল মডু সাদা মডুর উপ্রে যেমন সচলমডু আছে সেরাম। সেই লাঠি মারার পোস্টে আমি নিয়োগপ্রার্থী।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বাহ্ গৌতম, বাহ্; আনন্দে মনটা ভরে গেল।

আকতার আহমেদ এর ছবি

গৌতম হইতেসে মিনমিনা এক পাব্লিক.. ওর যে এত গুণ তা বুঝা মুশকিল।
আপনার কমেন্ট পড়ে মুগ্ধ হলাম, গৌতম!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

গৌতম দা'র মন্তব্য ছুঁয়ে গেল। আলবাব ভাইয়ের লেখাও।

তবে, আমি ভাই স্কুলে না খেলেও বাসায় মার খেয়েছি প্রচুর। স্কুলে মারধোর করা নিষেধ ছিল, বাসায় তেমন কিছু না। আমার বাবা-মা যথেষ্ট মেরেছে, এবং আমি বলি যে তার প্রয়োজন ছিল। প্রসঙ্গটা প্রহারের না, শাস্তির। আমার মত বেশরমের জন্য মার দরকার ছিল। আজ সেই শাসনের মূল্য বুঝি।

আমার বাবা-মা আরেক কাঠি সরেস ছিলেন। কখনও বড় কেউ শাসন করলে সেটা নিয়ে প্রশ্ন করতেন না; অন্তত আমাদের সামনে না। উদাহরণ স্বরূপ, এই যে আপনি বাবাইকে নিয়ে প্রিন্সিপালের ঘরে গেলেন, আমার বাবা এটা কখনই করতো না। তার দর্শন মতে, এতে গুরুজনের প্রতি ভক্তি কমে যায়, মাথায় এটা ঢুকে যায় যে আমার বাবা-মা আছে আমাকে উদ্ধার করে আনার জন্য। এ-জন্য এরকম কথোপকথনগুলো আমাদের আড়ালে হত সব সময়।

দেশে তো টুকটাক শাসন করতে পারেন। আমেরিকায় দেখি পোলাপান কী পরিমাণ বখে যায় খুব অল্পতে। বাবা-মা চাইলেও শাসন করতে পারে না। মানসিক অত্যাচার, ইত্যাদি বহুত ভারি ভারি কথা দিয়ে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। কষ্ট হবে, মায়া হবে, তবু প্রয়োজন পড়লে শাসন তো টুকটাক করতে হবে। সমস্যা হল, বেশির ভাগ মানুষই শাসনের নামে নির্যাতন করেন।

নজমুল আলবাব এর ছবি

আমিও কি কম মাইর খাইছি ইশতি? বাপ আমারে পুলিশে পর্যন্ত দিতে চাইছে।

বাবাইর বিষয়টা কিন্তু ভিন্ন। তার বয়েস মাত্র চার। এই বয়েসে আমি আমার ছেলেরে মাইর খাইতে কিঙবা সাজা খাইতে স্কুলে দেই নাই। তার স্কুলিং এর অভ্যাস গড়ার জন্যে দিয়েছি। সাজাটা দেয়ায় যতটা না রাগছি, তারচে বেশি রাগছি, সেই মহিলা বাচ্চাটারে পরে খুশি করে দেয়নি। সে তারে এমনই মনমরা করে দিয়েছে যে, যে বাচ্চা রোজ বাবা আগে আগে আনতে গেলে রাগ করে, সে খেলতে পারলো না বলে বাবাকে পচা বলে, সেদিন সেই ছেলেটা খেলেনি, মন খারাপ করে বসে ছিলো। আপনি চিন্তা করেন একবার, একটা বাপ স্কুলের ভেতর গিয়ে দেখলো তার ছেলে মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে, বাবাকে দেখে ছুটেআসছে না, কাছে গেলে, কোলে উঠে বলছে, বাবা চলো বাসায় যাই। তার বন্ধুরা তাকে ঘিরে চেচিয়ে বলছে, আজকে মিস পানিশমেন্ট দিছে ওরে... আমার মতো একটা লিস্টেড গোন্ডা, রাগচটা অভদ্র কি করতে পারে তখন? মাথাটা যথেষ্ঠ কার্যকর ছিলো ইশতি, অন্তত আমি তাই মনে করি, এজন্যই প্রিন্সিপালের রুমে গিয়েছিলাম। নয়ত...

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সাজাটা দেয়ায় যতটা না রাগছি, তারচে বেশি রাগছি, সেই মহিলা বাচ্চাটারে পরে খুশি করে দেয়নি।

এটা লাখ টাকা দামের কথা। শিশুমানসের এই সাধারণ ব্যাপারে হুঁশ না থাকলে শিক্ষক হওয়ার অধিকার নেই কারও। আর, আগে বলবেন না লিস্টেড গুণ্ডা টাইপ কথাগুলা?! চোখ টিপি

পোলাপানকে দিয়ে হাসিখুশি ভাবে কাজ আদায় করিয়ে নেওয়া মহা কষ্ট। আমি এক ছাত্রী পড়াই। ক্লাস ফোর-এ পড়ে। আমার বিরুদ্ধে তার অভিভাবকের প্রধান অভিযোগ, আমাকে নাকি ছাত্রী তার বন্ধু মনে করে। এই জন্যই সে পড়ালেখায় মনোযোগী না। আমি তো হুমকি-ধামকি কিছু দেইই। কেউই বেইল দিলো না... কপাল!

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

পুরানো পোস্টে অনেক দিন পরে মন্তব্য করছি... কী করবো, আমার সবতাতেই দেরী হয়ে যায়! মন খারাপ

লেখাটা পড়ে খারাপ লাগলো, আর গৌতমদার মন্তব্য পড়ে লাগলো ভালো!

আর ইশতি ভাইয়ার মতো আমিও একটা ক্লাস ফোরের বাচ্চা পড়াতাম, যার সাথে পরিচয় তার ফাইনালের মাত্র একমাস আগে। এই একমাস তাকে পরাতে গিয়ে অসীম ধৈর্য্য দেখাতে হয়েছিল। আমি পুরো ভার্সিটি জীবনে কখনো বাচ্চা পড়াইনি, কিন্তু বাচ্চা-কাচ্চা ভালোবাসি দেখে অক্ষরপরিচয় করিয়েছি অনেক পিচ্চি ভাই-বোনের। বাচ্চাদের যেকোন ব্যাপারে আমার মনোযোগ আর ধৈর্য্য অনেক, অন্তত আমার জীবনে একটা বাচ্চাকে বকা দিয়েছি আমি একবার মাত্র, এবং ভুলটা আমার ছিলো বুঝতে পারার পরে ক্ষমা চেয়েছি, আদর করেছি, তারপরেও আমার পিচ্চি বোনটা ভয়ে আমার কাছে আসতে চায়নি পুরো একটা সপ্তাহ! এত কষ্ট পেয়েছিলাম যে তারপর থেকে শিক্ষা হয়ে গিয়েছে। বাচ্চাদের সাথে উঁচু গলায় কথা বলার মাঝেই আমি নেই। ক্লাস ফোরের সেই ছেলেটার মনোযোগ দখল করতে আমি করিনাই এমন কিছু নাই, ও ৫টা অঙ্ক ঠিক করতে পারায় পুরস্কার দিয়েছি, ওর সাথে পেনফাইট খেলেছি, ওর গল্প শুনেছি, আবার ও আমাকে বিদেশী চকোলেটও খাইয়েছে ওর সাথে কার্টুন দেখার জন্য। একদিনই কানদধরে উঠবস করিয়েছি দুবার, তারপরে বলেছি যে আমার মন খুব খারাপ হয়েছে, আমি ওকে শাস্তি দিতে চাইনা আর, এরপরে দুষ্টুমী করলে শুধু বলতাম, যে তাহলে আমি কিন্তু আর কাল থেকে আসবোনা, ব্যস! একটা বাচ্চাকে একটু মনোযোগ আর ভালোবাসা দিলে বাচ্চাটা আপনার জন্য অনেক কিছু করতে পারে। রেজাল্ট ভালো করায় আন্টি আমাকে ক্লাস ফাইভেও পড়াতে বলেছিলেন, কিন্তু জাবি যাওয়া আসা করে সম্ভব নয় দেখে তা করতে পারিনাই। ছোট্ট বাচ্চাগুলোর মাঝে এতো মায়া, এদের মারতে পারে কিকরে মানুষ এইটা বুঝিনা! মন খারাপ

-----------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

আমি এখানে স্কুল শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবকেই দায়ী করব। স্কুলে বলতে গেলে যাকে তাকে দিয়ে এসব কোমলমতি বাচ্চাদের পড়ানো হয় কিন্তু তাদের যে কতোটা ক্ষতি করে দেয়া হচ্ছে সেটা ভেবেও দেখেনা কেউ। অস্ট্রেলিয়ায় প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাদের পড়াতে চাইলে আলাদাভাবে ব্যাচেলর ডিগ্রি নিতে হয় এডুকেশনে। আর হাইস্কুলের বাচ্চাদের পড়াতে চাইলে সেটা আবার আলাদা ডিগ্রি। বাংলাদেশে এমন কিছু চালু করা উচিত যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার জন্য।
-------------------------------------

--------------------------------------------------------

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।