ভ্রমণ (আনন্দময়) হয়েছে... (শেষ)

নজমুল আলবাব এর ছবি
লিখেছেন নজমুল আলবাব (তারিখ: সোম, ০৯/১১/২০০৯ - ১১:৩৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১০.

সন্ধ্যার অন্ধকার গাঢ় হয় হয় এমন একটা সময়ে পৌঁছে গেলাম হিরণ পয়েন্টে। বিখ্যাত স্পট। বনবিভাগের বিশাল অফিস সেখানে। আছে নৌ-বাহিনী আর মংলা বন্দরের দুটো আস্তানা। আগেরবার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা সুন্দরবন নিয়ে কি একটা প্রজেক্ট আর রামসার এরিয়া ঘোষণার জন্যে সেখানে গিয়েছিলেন। বিশাল একটা ফলক লটকে আছে সেখানে। আছে এই এলাকার একমাত্র মিঠাপনির পুকুর। জেটিতে বোট বেঁধে আমাদেরকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো। যথেষ্ঠ মানুষের আনাগোনা সেখানে। তবু হরিণ দেখতে পেলাম। ঘুরছে রাতের আলোতে। শুনলাম বাঘও আছে আশেপাশে। বনকর্তা জানালেন একাধিক বাঘ নাকি সেখানে আছে। প্রচুর খাবার পাওয়া যায় বলেই হয়তো এটা ঘটেছে। কারণ এর আগে শুনেছি একটা নির্দিষ্ট এলাকায় কয়েকটা বাঘ সাধারণত থাকে না। খাবার পানির পুকুর পাড়ে বসে আছি। শান বাঁধানো ঘাট। বনবিভাগের এক অফিসার গল্প করছেন। নানান কিসিমের গল্প। এইবার আর মুস্তাফিজ ভাইকে বলতে হলো না। আমি নিজেই বুঝে গেলাম, চাপা... সবটা না হলেও অনেকটাই চাপা। (জেনারেল স্যার, আমি কি কিছু শিখলাম? চোখ টিপি )

টানা চারদিন কি দুদিনও আমি মাছ খেয়েছি কোন জনমে, এটা কেউ বল্লে, আমার মা বলবেন, আপনে ভুল করতেছেন। সে আমার ছেলে না, অন্যকেউ! কিন্তু ঘটনাটা ঠিকি ঘটেছে। টানা চারদিন মাছ খেয়েছি এই ভ্রমণে। এমনতরো নানা ঘটনাই আছে। মিহি মিহি সেইসব ঘটনা একটু একটু করে মনে পড়ে। বিচ্ছিন্নভাবে মনে পড়ে।

রাতে চাঁদ নেমে এসেছিলো হাতের তালুতে। হ্যাঁ, হাতের তালুতে, শরীরে জলের ধারার মতো টুপ টুপ করে পড়েছে চাঁদের আলো। নিলকমলের জেটিতে বসে ভিজতে ভিজতে আমাদের স্বাদ মেটে না। নৌকার ছাদে বসি। সেখানে আলোর সঙ্গে যোগ হয় কুয়াশা। আমরা ভিজতেই থাকি। যতক্ষণ না খলিল ভাতের গামলা ঠেলে দেয় ততক্ষণ চন্দ্রাহত হয়ে থাকি আমরা।

শেষ কবে নায়ে ঘুমিয়েছি ভুলে গেছি। বালক বেলার সেসব ঘটনা। আমাদের নানাবাড়ির টিলার মাঝখানে ছোট্ট একটা হাওরের মতো। পুব সিলেটের ভাষায় এরকম জায়গাকে গোল বলে। বর্ষায় সেসব গোলে পানি জমে। পাশের সুরমা নদীর সাথে মিশে যায় সেই পানি। আমরা শৈশবে সেই হাওরের মতো জলায় দাপাদাপি করতাম। সেই জলে কেউ কেউ নৌকা ভাসাতো। ছোট মামা রাত জেগে সেখানে মাছ ধরতো। তার সাথে এক দুবার আমি কিংবা আমরা গিয়েছি। সেই যাওয়ার সুবাদে রাত্রিযাপনও হয়েছে। হাতের আঙুল গুনে পায়েরও শেষ হয় তবু সেই পেছনের হিসাব করতে পারি না। আমি আবার নৌকায় ঘুমালাম। বাপ্পিদা যত্ন করে বানিয়েছেন তার এই বোট। আতিয়ার ভাই সেখানে বিছানা পেতে দেন। আমরা একজন আরেকজনের মাথায় মাথা লাগিয়ে শুয়ে পড়ি। জেনারেল থেকে আবার ভাইয়ে পরিণত হন বুড়াভাই। গল্প ঘুরতে থাকে সুন্দরবন থেকে স্পেন অব্দি। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি টেরও পাইনি।
পায়ের দিকের একটা জানালা খুলে রেখেছিলাম। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে সেই জানলা গলে আসা কোমল রূপালী আলোকে খেলতে দেখি আমারই পায়ে! আস্তে আস্তে উঠে বসি। দরোজা খুলে বেরিয়ে আসি। বায়ে তাকাই, ডানে তাকাই... শিরশিরে বাতাসে শরীর কাঁপে। বনের ঘ্রাণ পাই। নীলকমলের আশেপাশে হালকা পায়ে ঘুরে বেড়ায় হরিণ। আবছায়াতে তাদের দেখি আবার দেখি না। মাথার উপর উদার আকাশ... নিজেরে বড়ো ক্ষুদ্র, বড়ো বেশি তুচ্ছ মনে হয়... আমি ছৈয়ের ভেতর ফিরে আসি। গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ি...

১১.

শনিবার সকালটা একটু আগেই শুরু হলো অরূপ এর জন্যে! এম্নিতে ওরে দুপুর ১২টায়ও হাতি লাগিয়ে টেনে তুলতে হয়। হিরণ পয়েন্টে সেটা হয়নি। হলে ভালোই হতো। হরিণ দেখতে পারতাম আরো নিবিড় ভাবে। বেটা যে ভাবে থপ্ থপ্ করে হাঁটে... পাতার নড়াচড়াতেই যে প্রাণী দৌড়ে পালায়, সে এহেন থপথপে কি করতে পারে চিন্তা করেন।

কেওড়াশুটি খালের পাড় থেকে কাঠের একটা ব্রিজ চলে গেছে বনের ভেতর। সামনে এমদাদুল ভাই, পেছনে রেজাউল। রাইফেল হাতে সাবধানী হয়ে হাঁটছেন। মাঝখানে আমরা ফিস ফিস করে কথা বলছি। হাত দশেক এগিয়েছি হয়তো, ব্রিজের পাশ ঘেঁষে ভেজা মাটিতে ভেসে উঠা বাঘের পায়ের ছাপ চোখে পড়লো। সেই পায়ের ছাপ ধরে হাঁটতে থাকি, একেবারে টাটাকা স্পর্শ... একসময় দেখা যায় মামুজি ব্রিজেও চড়েছেন! রেলিং এর পিচ্চি ফাঁক দিয়ে কেমনে ঢুকিলো?? এমদাদ ভাই প্রশ্ন শুনে বলেন, বনের সবচে বড়বাঘটাও নাকি আধা ফুট উঁচু বনের ঝোপে নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে পারে!!!

আমরা আরো এগোই। সামনে থেকে হাত তুলে থামতে বলেন এমদাদুল। তার পর ব্রিজের একপাশে সরে দাঁড়ান... ব্রিজ শেষে যে হালকা উঁচু রাস্তার মতো আছে, সেখানে দাড়িয়ে আছে একটা চিত্রল হরিণ... ফটুরেদের ক্যামেরা সচল ছিলো প্রথম থেকেই। বাঘের পায়ের ছাপ তুলে রাখা হয়েছে, এবার ক্যামেরায় জায়গা করে নেয় হরিণ। কিন্তু সময় বড়ো অল্প। মিনিটেরও কম সময় আমাদের দিকে তাকিয়ে, দ্রুত সরে যায় তরুণী চিত্রল।

কেওড়াশুটির ছবি দিয়েছেন মুস্তাফিজ ভাই। তার ফ্লিকারে আরো ছবি আছে, অরূপও চমৎকার কিছু ছবি তুলেছে। সুন্দরবনের এই অংশটাকে আমার সাজানো গুছানো পরিপাটি বলে মনে হয়েছে। মনে হয়েছে আমার গ্রামের বাড়ির আধা ঘন জঙ্গলের মতো। গাছ, গাছের ফাঁকে-ফাঁকে বেশ বড়ো বড়ো খালি যায়গা। মাঝখানে মিঠাপনির একটা পুকুর মতো আছে। কিন্তু খুবি অল্প সময় সেখানে থেকেছি আমরা। আমার তৃপ্তি মেটেনি। কথা ছিলো পরে আরেকবার যাবো সেখানে, কিন্তু আর যাওয়া হয়নি। কেওড়াশুটি থেকে ফিরে হিরণ পয়েন্টেও আরো কিছুক্ষণ ঘোরা হলো। তারপর দুপুরের ভাটা শুরু হতেই আমাদের যাত্রা শুরু হলো। এবারের গন্তব্য দুবলার চর।

১২.

সুন্দরবনে এই মনে হয় একমাত্র চর, যেখানে ইচ্ছেমতো হাঁটা যায়। জেনারেল মুস্তাফিজ রুলিং দেন না, বা এমদাদুল রেজাউলরা বন্দুক নিয়ে পাহারা দেন না। অসম্ভব কর্মব্যস্ত একটা দ্বীপ। পাঁচ মাসের জন্যে জেলেরা এখানে থাকতে আসেন। তাই অস্থায়ী ছাপড়া ঘরে ঠাসা। আমরা যেদিন গেলাম, তার ১৫/২০ দিন আগে থেকে জেলেরা আসতে শুরু করেছেন। তখনও ঘরদোর তৈরির কাজ চলছে। এরিমাঝে ট্রলার ভর্তি করে আসছে মাছ। শিশু কিশোরদের বেশ বড় একটা অংশ সেখানে কাজ করে। তাদের মাঝে একজনের সাথে কথা হলো। আব্দুল আহাদ নাম। বাপ আর ভাই এর সাথে এসেছে চরে। খাতির হয়ে গেলো। ঘুরতে ঘুরতে তাদের ডেরায় গেলাম। তিন মাথাওয়ালা একটা লাঠি দিলো সে আমাকে। পরের দুদিন যেটা অনেক কাজে এসেছে।

আমরা হাঁটতে হাঁটতেই শুনলাম, একজনকে সাপে কেটেছে। তাকে ওঝা ঝাঁড়ফুক দিচ্ছে। দ্রুত সেখানে গেলাম আমরা। ২০/২২ বছরের এক তরুণ। আগের রাতে সাপে কেটেছে। এরপর থেকে চলছে টোটকার চিকিৎসা। দুবলার চরে বেশ কয়েকজন ডাক্তারের পতাকা দেখেছি! হ্যা পতাকা। নিজেদের নাম লিখে ডেরার সামনে লম্বা বাঁশে সেটা টাঙ্গিয়ে রেখেছেন তারা। দেখে ভারি মজা পেয়েছি। তাদেরই একজন বাক্স হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখানে। কিন্তু চান্স পাচ্ছিলেন না। মুস্তাফিজ ভাই এক প্রকার জোর করেই সেই ডাক্তারকে কাজে লাগালেন। বিষক্ষয়ের ইনেজকশন পুশ করা হলো। আমরা আবার ঘুরতে গেলাম। ফেরার সময় দেখি সেই লোক আরেকজনের গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছে। মুস্তাফিজ কবিরাজ কিছু পথ্য বাতলে দিলেন এইবার। হাসি

পূর্ণিমার আগের রাত, তাই সে রাতে চাঁদ আরো বেশি মোহনীয়তা নিয়ে জেগে ছিলো আমাদের সাথে। মধ্যরাত পর্যন্ত বোটের ছাদে আড্ডাবাজি হয়েছে। তবে গতভ্রমনের মতো আমরা কেউ কিছুই হারাইনি। সবার সবকিছু ঠিকমতোই ছিলো। হাসি

আগের রাতের মতো এ রাতেও ঘুম ভাঙলো। তবে মাঝরাতে নয়, শেষরাতে। জেগেই বুঝলাম, কেমন একটা অস্বাভাবিক অবস্থা। বাইরে বেরিয়ে দেখি ধারণা ঠিকি আছে। বাপ্পিদা সমানে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করছেন। আতিয়ার ভাই আর ওহাব ঠান্ডা কনকনে জলে দাপাদাপি করে সে গাল হজম করছে। ভাটির কারণে চরে উঠে পড়া বোট নিচে নামানোর চেষ্টা করছেন। অপূর্ব একটা চাঁদ আকাশে, তার আলো কুয়াশার চাদর মেখে আমাকে ডাকে। কিন্তু বাপ্পিদার চেচামেচির কারণে সে ডাকে সাড়া দেয়া হয় না।

সারারাত মাছ ধরে ভোরের আলোর সাথে সাথে ফিরে আসে সারি সারি ট্রলার। নির্জনতা খান খান হয়ে যায়। মানুষের কণ্ঠের নিচে চাপা পড়ে সমুদ্রের গম্ভীর গর্জণ। ফটুরেরা ফটুক তুলেই যাচ্ছেন। নিঃসঙ্গ আমি হাটতে থাকি সৈকত ধরে। আব্দুল আহাদকে খুঁজি। পাই না। হঠাৎ দেখি আতিয়ার ভাই লম্বা লম্বা পা ফেলে দ্বীপের ভেতরের দিকে যাচ্ছেন। আমি সৈকত ধরে তেরছাভাবে হেঁটে হেঁটে তাকে ধরার চেষ্টা করি। পেছন পেছন হেটে প্রায় ধরে ফেলি। লম্বা মানুষ, ছ'ফুটের ওপরে হবে উচ্চতা। চোখের লেবেল ধরে তাকালে আমি তার বুকটাই দেখি শুধু। সেদিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করি, কই যান...? উল্টা প্রশ্ন আসে,- 'কি দিয়া আইছেন? নৌকা না নঞ্চ?' ধাম করে আমার মাথা উপর দিকে উঠে যায়। ঘাড় উচিয়ে মুখটা দেখেই বলি, 'নৌকা'... আমার কথা তার কানে যায় বলে মনে হয় না। মেলায় যাইবেন? ঘাড় নাড়ি, তার সাথে যাবার কথা বলে... আমি পিছিয়ে আসি। ফিরে আসি পাড়ে। দেখি রিফাত-১ এর ছাদে বসে আছেন আতিয়ার ভাই!

ফটুরেরাও ফিরে আসেন। ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে আমরা দ্বীপের আরো ভেতরে ঢুকি খাল বেয়ে। মেজর জিয়া উদ্দিনের লিজ নেয়া অংশে যাই। সেখানে রাস উপলক্ষে মেলা বসেছে। দুর থেকেই দেখতে পাই কর্পোরেট দানব সেখানেও পৌঁছে গেছে। যে দ্বীপে ফোনের নেটওয়ার্ক নাই সেখান ফেস্টুনের মাধ্যমেই সেবা পৌছে দিচ্ছে মোবাইল ফোন কোম্পানি। মেলা ঘুরে দ্বীপের আরো ভেতরে চলে গেলাম। নিউমার্কেট নামের এক যায়গার কথা শুনছি তো শুনছিই। সেখানে যাওয়া হলো। হাঁটছি সবাই। ফটুক খিচা হচ্ছে। হঠাৎ দেখি আমার আতিয়ার ভাই শুয়ে আছেন এক দোকানে।

দুবলার চরের মেলা আমাকে হতাশ করেছে। এটা দেখে মনে হয়েছে,বাণিজ্য করার প্রাণান্তকর চেস্টা করছে কিছু মানুষ। তাই ফুলিয়ে ফাপিয়ে নানান কথা ছড়িয়ে দিচ্ছে মেলার ব্যাপারে। তবে রাশ উপলক্ষে হওয়া স্নানটা হয়তো অন্যরকই হবে। সেটা দেখিনি, তাই কিছু বলতে পারছি না। কারণ আমরা দুপুরেই ফিরে আসি দুবলার চর থেকে। আবার গন্তব্য হিরণ পয়েন্ট। যে বর্ণনা ইতিমধ্যে দিয়ে ফেলেছেন মুস্তাফিজ ভাই। আমি শুধু অরূপ কাগুর জন্যে একটু চোখের পানি ফেলি এখানে। বেচারা, এতো কাছে গিয়েও কিছুই দেখতে পেল না। শালার বস্তার মতো পেটই এইজন্যে দায়ী। এইটার জন্যেই এখন পর্যন্ত 'তোমরা বন বিড়ালের ডাক শুনে পালিয়ে এসেছো' এই কথা বলে মনে শান্তি পেতে চাইছে।

১৩.

রোববার রাতে হিরণ পয়েন্টে থেকে, মাঝরাতেই আমরা চলতে শুরু করেছি। জোয়ারের সাথে সাথে ডাঙ্গায় ফিরতে থাকে বাপ্পিদার বোট। কিন্তু চলতে যেনো তার সমস্যা হচ্ছিল। একসময় ঘড়ড়ড়ড়ড়ড়ড়ড়ড়ড়ড় করে অদ্ভুৎ এক ধাতব শব্দ করে থেমে গেলো ক্ষরস্রোতা নদীতে। ততক্ষণে ভাটা শুরু হয়ে গেছে। অসিত গেরাফি (নোঙর) ফেলেও বোট আটকাতে পারে না। এরিমাঝে শুনি বাপ্পিদা কাকে যেনো বলছে, ট্রলার নিয়ে আসতে। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি তার কানে মোবাইল, পকেট থেকে বের করি সবাই প্রায় একসাথে... আবার শুরু হয় তবে যন্ত্রের জীবন।

শোনা যায় বাঘে নিয়ে যাওয়া এক মানুষকে উদ্ধার করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে সেই ট্রলারের মাঝি, তাই আমাদের উদ্ধারে দেরি হচ্ছে। আমরা উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা আসছে বলে বাপ্পিদাকে ক্ষেপাই একদিকে, আরেকদিকে এমদাদ ভাই মোবাইল ফোনে জানা ঘটনা যখন বর্ণনা করে, তখন ঝিম মারি। এমন সময় দুরে খুব দুরে দেখা যায় একটা বিন্দু। আমাদের দিকেই তাক করা তার মুখ। দ্রুত সেই বিন্দুটা রূপ নেয় একটা স্পিডবোটে। বনবিভাগের এসিএফ রাজেশ চাকমা এসে স্পিডবোট ভেড়ান। আগের দিনে ধুবলার চলে তার সাথে পরিচয় হয়েছিলো। দুর থেকে মনে হয়েছে আমরা কোন সমস্যায় পড়েছি, তাই এসেছেন। রিফাত নামের বোটে শেষবার খাবার খেলাম আমরা। ইতিমধ্যে এসে পৌঁছেছে অন্য ট্রলার। বাঘের ফেলে যাওয়া মাংশের টুকরা লুংগিতে পেচিয়ে হতভাগ্য পরিবারের কাছে পৌছে দিয়েছেন বনপ্রহরীরা। তাদের কাছ থেকে সেই গল্প শুনেছি, মোবাইলে তোলা ভিডিও দেখেছি, কিন্তু সেসব বলার ইচ্ছা আমার একেবারেই নাই।

শেষ

এসিএফ আমাদেরকে শ্যামনগরে পৌছে দেবেন বল্লেন, তিনি থাকলেন বোটে। তার স্পিডবোট আমাদের নিয়ে ছুটলো। পেছনে ফেলে এলাম চমৎকার কিছু মানুষকে। একেবারেই অন্যরকম কয়েকটা জীবন। বড়ো সরল, বড়ো বিশাল তাদের মন। সুন্দরবনের বিশালতাকে আমি ছুতে পেরেছি হয়তো, এইসব মানুষের পারিনি। মানুষ এমনই মনে হয়। কাছে গেলেও যায় না চেনা, ছোয়ে দিলেও হয় না ছোঁয়া...


মন্তব্য

মুস্তাফিজ এর ছবি

কিছু কিছু মিস্‌ করছো, বিশেষ করে দুবলার চরে বাউল গানের জলসা

.........................................
I think what I think because that's how I am. You think what you think because that's how you are.

...........................
Every Picture Tells a Story

নজমুল আলবাব এর ছবি

আহা...

আসলে মেলা দেখে এতো বিরক্ত হইছি যে এই চমৎকার বিষয়টা ভুলে গেছি। আমি খুবি উপভোগ করেছি এই সময়টা। মিশে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। অসম্ভব ভালো একটা মূহুর্ত ছিলো সেটা।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

গোপাল ভাঁড় এর ছবি

খুব ভাল্লাগ্লো।

--------------------------------------------
<ঘ্যাচাত, ঘ্যাচাত, ঘ্যাচাত> - আমার সিগনেচার

--------------------------------------------
বানান ভুল হইতেই পারে........

নজমুল আলবাব এর ছবি
মুস্তাফিজ এর ছবি

বনবিভাগের এক অফিসার গল্প করছেন। নানান কিসিমের গল্প। এইবার আর মুস্তাফিজ ভাইকে বলতে হলো না। আমি নিজেই বুঝে গেলাম, চাপা...

বনে মানুষ একা থাকে, কথা বলার লোক পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। ওরা যখন কথাবলার মানুষ পায় নিজেকে উজাড় করে দেয়। ফরেস্ট অফিসার শিকদার সাহেবের বলা কথা গুলো সবই চাপা নয়, আমিত্ব চলে আসাতে কিছুটা অতিরঞ্জিত। এক্ষেত্রে উপদেশ হলো শুনে যাওয়া, কিছু মজার/শিহরণ জাগানো অভিজ্ঞতা হয় তাতে।

গতভ্রমনের মতো আমরা কেউ কিছুই হারাইনি। সবার সবকিছু ঠিকমতোই ছিলো। হাসি

হাসি

এই সেই বাউল
20091101_7773

নেচে নেচে গান গাচ্ছে বাউল, অপু তালি বাজাচ্ছে
20091101_7783

.........................................
I think what I think because that's how I am. You think what you think because that's how you are.

...........................
Every Picture Tells a Story

আলমগীর এর ছবি

হাতের তালুতে চাঁদ।
কী কমু! দেশে গেলে প্রথম কাজ হবে মুস্তাফিজ ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করা। সুন্দর বন যাওয়াই লাগবে।

নজমুল আলবাব এর ছবি

আমারে লগে নিবেন না? মন খারাপ

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

স্যার, আমিও যামু।

কল্পনা আক্তার এর ছবি

আপনাদের চোখে সুন্দরবন কে দেখালাম। নাহ্ সুন্দরবনে একবার যেতেই হবে......

লেখার কথা আর কি বলবো....খালি জানতে ইচ্ছে করে "এতো সাবলীল করে লিখেন কিভাবে ইয়ে, মানে... "

........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা


........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

নজমুল আলবাব এর ছবি

মহিলা সমাজ লেখা পড়ে যতই বলে, যামু যামু যামু... মূলত এইটা একটা ভ্রান্ত লাফালাফি।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

কল্পনা আক্তার এর ছবি

ঠিক আছে গিয়া দেখাইয়া দিমুনে (ক্ষেপান্তিস ইমো)

........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা


........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

নজমুল আলবাব এর ছবি

হ, আমি এই লেখারই প্রথম দিকে লেখছি, দেখিস একদিন আমরাও...
মনে আশা থাকা ভালো। দেঁতো হাসি

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অতিথি লেখক এর ছবি

সুন্দরবন সফরে গিয়েছিলাম সেই-ই বছর পাঁচেক আগে! মুস্তাফিজ ভাইয়ের ছবি আর আপনার লেখা পড়ে এহ্মুনি আবার দৌড় লাগাতে ইচ্ছে হচ্ছে....কি করে যে এতো ভালো লেখেন!!!! *তিথীডোর

নজমুল আলবাব এর ছবি

ধন্যবাদ পড়ার এবঙ প্রশংসার জন্যে।

দৌড় দেয়ার আগে একটু বলে কয়ে নিয়েন। আরো অনেকেই সাথে দৌড় দেবে। আর কলাগাছিয়া থেকে এমদাদুল ভাই, শ্যামনগর থেকে বাপ্পিদারে নিয়া নিয়েন। দরকার মনে করলে আমাদেরও ডাকতে পারেন। চোখ টিপি

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

মামুন হক এর ছবি

লেখা মচমচে চমচমের মতো হয়েছে।
সুন্দরবন যামুই! জেনারেল মুস্তাফিজ আমারে না নিলে একলাই যামু বাঘের লেজ দিয়া কান চুলকাইতে হাসি

নজমুল আলবাব এর ছবি

ভাইজান, ঘরে বিলাই আছে? আগে থেকে একটু প্র্যাকটিস করে নিয়েন। চোখ টিপি

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গতকালই আপনাদের সুন্দরবন ভ্রমণের অনেকগুলো ছবি দেখলাম ফেসবুকে...
আবারো হিংসা দিলাম...
লেখা (আনন্দময়) হয়েছে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নজমুল আলবাব এর ছবি

ধন্যবাদ।

লন আবার যাই।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

উজানগাঁ এর ছবি

পেছনে ফেলে এলাম চমৎকার কিছু মানুষকে। একেবারেই অন্যরকম কয়েকটা জীবন। বড়ো সরল, বড়ো বিশাল তাদের মন। সুন্দরবনের বিশালতাকে আমি ছুতে পেরেছি হয়তো, এইসব মানুষের পারিনি। মানুষ এমনই মনে হয়। কাছে গেলেও যায় না চেনা, ছোয়ে দিলেও হয় না ছোঁয়া...

অসম্ভব সুন্দ লাইনগুলো। একেবারে ভেতর পর্যন্ত নাড়িয়ে দিয়ে গেল। পুরো লেখাতে এরকম উদ্ধৃতি দেয়ার মতো অনেক লাইন আছে। অইগুলো নাই বা দিলাম। শুধু জেনে রাখেন লেখাটা ভালো লেগেছে। হাসি

নজমুল আলবাব এর ছবি

ভালো লিখিয়েদের প্রশংসা পেলেতো ফুলে যাবো হে...

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অতিথি লেখক এর ছবি

"মানুষ এমনই মনে হয়। কাছে গেলেও যায় না চেনা, ছোয়ে দিলেও হয় না ছোঁয়া"-----------সত্যিই তাই।
এস হোসাইন

---------------------------------
"মোর মনো মাঝে মায়ের মুখ।"

নজমুল আলবাব এর ছবি
আলমগীর এর ছবি

শিরোনামে (শেষ) আসল কই থ্যকা?

নজমুল আলবাব এর ছবি

শ্যামনগর থাইকা।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

খুব উপভোগ্য একটা ভ্রমণকাহিনী পড়লাম। দারুণ! পড়তে গিয়ে বারবার মনে হচ্ছিল, ওখানে আপনাদের সাথে তো আমিও থাকতে পারতাম! মুস্তাফিজ ভাই জানিয়েছিলেন। কিন্তু অফিসের কাজের চাপে, ছুটি ম্যানেজ না করতে পারায় এবং আরও কিছু সঙ্গীসাথী ঝরে পড়ায় আর যাওয়া হলো না এবার। তবে প্রতিজ্ঞা করলাম, অকালে না মরলে জীবনে অন্তত একবার সুন্দরবন যাবোই হাসি

এতো জীবন্ত একটা পোস্ট যে ফটোর অভাব বোধ করলাম না কোনও...

নজমুল আলবাব এর ছবি

আরে হবে হবে। একলগে হগলতে মিল্লা যামুনে আরেকবার।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

শান্ত [অতিথি] এর ছবি

আমার কথা মন রাখিও অপু ভাই। ইবার আর মিস অইতো নায়।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ঠিকাছে, আগে আপনে আসেন দেশে খাইছে

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- তখন সময় পাইবেন না মিয়া, (টাইম নাই, টাইম নাই) এখন থাইকাই কান্ধে ব্যাগ ঝুলাইয়া রাখেন, পরে আবার কইয়েন না জানি! চোখ টিপি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

নজমুল আলবাব এর ছবি

ব্যাগ কান্ধেই থাকে।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

যুধিষ্ঠির এর ছবি

অপরূপ সৌন্দর্য আর মায়ামাখা আপনার লেখা। দুটো পর্বই খুব ভালো লাগলো!

নজমুল আলবাব এর ছবি
ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আগেরটা পড়তা হ্যায়, এইটাও পড়তা হ্যায়, কিন্তু কমেন্ট নেহি করতা হ্যায়। খালি ঘুমে ধরে গো বাউল, খালি ঘুমে ধরে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

নজমুল আলবাব এর ছবি

দেশে আয়, ঠনঠনিয়ায় পাঠামুনে। ঘুম চলে যাবে।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

সাফি এর ছবি

প্রথম পর্বের মতনই উপভোগ্য হয়েছে হাসি

নজমুল আলবাব এর ছবি
খেকশিয়াল এর ছবি

সুন্দরবন যামু!!!

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

নজমুল আলবাব এর ছবি

শিয়ালের কি সেখানে যায়গা হবে। চিন্তিত

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

মাহবুব লীলেন এর ছবি


আমরাও যামু
আবার

নজমুল আলবাব এর ছবি

তাই? ঠিকাছে। তবে একটু সাবধানে যেও। গতবার নাকি কি একটা জটিল বস্তু হারায়া ফেলছিলা। চোখ টিপি

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

আহির ভৈরব এর ছবি

অনেক দেরিতে দেখলাম। খুব ভালো লাগলো। কখনও যাওয়া হয়নি সুন্দরবন, এবার দেখছি যেতেই হয়।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।

-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।

নজমুল আলবাব এর ছবি

দেরি কই? একদিন পরেই পড়লেন। আমি উত্তর দিলাম কতোদিনে সেইটা দেখেন। হাসি

আপনার ফিরিঙ্গিরেও নিয়া আসেন। আমরা লগে যামুনে। হাসি

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

হ, আমিও যামু, ফাশ্টো টাইম।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

নজমুল আলবাব এর ছবি

একটু রয়েসয়ে, আগে বাপ্পিদা স্টিলবডি ট্রলার জোগাড় করুক। এরপরে যাবিনে ভাইডু...

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

এর আগেরবার মুস্তাফিজ ভাই দাওয়াত দিছিলো, কাম-কাজের ঠ্যালায় লরার টাইমও পাই নাই। এখন তো খালি যাইতে মঞ্চায়।

বর্ণনা পুরাই চমেতকার।

------------------------------------------------------
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

নজমুল আলবাব এর ছবি

ধন্যবাদ।

ফটুয়ালদের জন্যতো সুন্দরবন তীর্থবৎ

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

মাশীদ এর ছবি

অসম্ভব ভাল লাগল ভাইজান।
এইভাবে লেখেন ক্যাম্নে?
সুন্দরবনের টুকরো টুকরো ছবির মতই চোখে ভেসে উঠল আপনার বালকবেলার ছেঁড়া স্মৃতি। দুটোই সমানভাবে মনে দাগ কাটল।

ভাল থাকবেন, সবসময়।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

নজমুল আলবাব এর ছবি

হাসি

তোমার কবিতাটাও কিন্তু বহুত ভালা হইছে।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।