কয়েক টুকরো দিন যাপন আর একটা আলোচনা

নজমুল আলবাব এর ছবি
লিখেছেন নজমুল আলবাব (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৭/১২/২০০৯ - ১২:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছোট শহরে থাকলে অনেক কিছুতেই সরাসরি অংশ গ্রহনের সুযোগ মিলে বা অনেক কিছুতেই জড়িয়ে পড়তে হয়। বুঝতে শেখার পর থেকে শহীদ মিনারে যাই। একটু বড়ো হয়ে রাতের প্রথম প্রহরে যেতে শুরু করেছি। তারপর কোন ফাঁকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের সহায়তাকারী হয়ে গেলাম। হিসাব করলে দেখি সেও ১২ বছরের অধিক। গ্রুপের কাজ থাকে। সেসব নিয়ে বিস্তর দৌঁড়ঝাপ দিতে হয়। তাই কয়েকদিন ধরে সেভাবে নেটেই বসা হয় না। রাতে কিছু সময়ের জন্যে বসে শুধু চোখ বুলিয়ে যাওয়া।

অনেক বিষয় আসে, সেসব নিয়ে পড়তে বা বলতে চাই, কিন্তু সময়ের কারণে তা কুলায় না। গত চার/ পাঁচদিনে সচলে এমন কয়েকটি বিষয় এসেছে, তা নিয়ে কথা বলার ছিলো। কিন্তু বলতে পারিনি।

ষষ্ঠ পাণ্ডব লিখেছেন, ব্লগে বা ভার্চুয়াল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা বা কারো কারো মতে লাফালাফি করা বিষয়ে। ব্লগ জীবনের শুরু থেকে এ বিষয়ে নসিহত পেয়ে আসছি। বন্ধুদেরকে, কমরেডদেরকে পেতে দেখেছি, আরো দেখবো, আরো উপদেশ পাবো সেটাই বলে রাখি। আমি মনে করি কান বন্ধ রেখে, নিজের কাজ করে যেতে হবে। মানে ব্লগে লাফাতে হবে। চিকা মারতে হবে, সময়মতো গদাম লাথিও মারতে হবে। শিকার করতে হবে। এবার আবার স্টিকার করবো আমরা। এ বিষয়ে কারো কোন উপদেশ (কেন এতো টাকা খরচ, কি হবে এসব করে... টাইপ) থাকলে দিতে পারেন। চোখ টিপি

স্টিকারের কথা যখন উঠলই তখন ফাঁকে এ নিয়ে কয়েকটা টুকরা ঘটনা বলি। আমার লেখার সাথে যারা টুকটাক পরিচিত তারাতো জানেনই আমি এক কথার ভেতরে আরেক কথা ঢুকিয়ে ফেলি। এটা তেমনই।

সচলদের করা স্টিকার নিয়ে এক বছরে নানান কাহিনী হয়েছে। গতমাসে সুন্দরবন থেকে ঢাকায় ফিরে বাস থেকে নেমেছি শ্যামলীতে। সেখানে বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখি তার দরজায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই দাবী নিয়ে করা কালো হলুদ স্টিকারটা সাটানো। কি আরাম লেগেছে চিন্তা করেন। সুজনদার ডিজাইন করা স্টিকারটা ছাপানোর পরেই প্রেস থেকে প্রায় হাজার খানেক স্টিকার নিয়ে যায় আমার এক ছোট ভাই। জুয়েল ওর নাম। খুবি বিরক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু গত সাত আট মাসে আমার সেই বিরক্তিভাব কেটে গেছে। শহরে এই ক'মাসে যতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়েছে সেখানেই গিয়েছে জুয়েল এবং অতি অবশ্যই স্টিকার বিলি করেছে। আজকে শহীদ মিনারের সামনে বিদ্যুতের খুটিতেও দেখি কয়েকটা সেটে রাখা। সম্ভবত জুয়েলেরই কাজ এটা। সেখানে লম্বা কালো হলুদ স্টিকারও দেখলাম দুইটা! কেমনে আসলো এক বছর পরে!

গতরাতে শহীদ মিনারে যখন গেলাম, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আফজাল ভাইর কাধে ঝুলানো ব্যাগে দেখি আনিস ভাই এর করা যুদ্ধ পাপীর শাস্তি চাই স্টিকার লাগানো। আমাকে দেখেই ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, তোমার স্টিকার লাগানো আছে। তারপর ব্যাগ থেকে কয়েকটা স্টিকার বের করে কয়েকজনকে দিয়ে বল্লেন, শেষ। আরো দিও। বল্লাম, আবার ছাপা হোক পাবেন।

০২.

গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারের মতো ভিড় দেখিনি। শহীদ মিনারে মধ্যরাতে মানুষের ঢল নেমেছিলো। দিনে দিনে নাট্যকর্মীর সংখ্যা কমছে। তাই ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। শান্ত রাতের কথা বলতে গিয়ে জুতা নিয়ে বলেছে। মারামারির কথা সে বলেনি। বেশ ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। আর এবার সম্ভবত নিয়ন্ত্রনটা আগের মতো রাখা যায়নি। ধাক্কাধাক্কির কারণে বেদী থেকে কর্মীদেরকে দু'বার তুলে আনতে হয়েছে। সবচে বেশি সমস্যা করেছেন সংবাদ কর্মীরা। ফটুরে সাংবাদিকরা কাজের কোন শৃংখলাই মেনে চলে না এখন। এরা ভেজাল পাকায় বেশি। কালও পাকিয়েছে।

০৩

বিজয় দিবসের সকালটা এখন একটু দেরিতেই শুরু হয়। আগে মাঝরাতে ঘরে এসেও ভোরে আবার বেরিয়ে যেতাম। এখন বেরুতে বেরুতে দশ এগারোটা বেজে যায়। বাবাই মহা উৎসাহে আমাদের সাথে চললো। পতাকা আঁকা টি-শার্ট কিনে দেয়া হলো তাকে। হাতে পতাকাও তুলে দিতে হলো। খুব খুশি। মায়ের সাথে ঢ্যাং ঢ্যাং করে চলে গেলো ইউনিভার্সিটিতে। আমি একটু ঘুরলাম শহরে। তারপর গিয়ে জিন্দাবাজারে এক দোকানে বসে বসে আড্ডা পিটালাম গ্রুপের তিন বড় ভাইয়ের সাথে। কথা বলছি আমরা, এমন সময় সেখানে হাজির হলেন বাবাইর স্কুলের প্রিন্সিপাল। জামাত-শিবির বিজয় দিবসের মিছিল করেছে। সেটা নিয়ে তিনি উত্তেজিত। কি বলবো ঠিক ভেবে পেলাম না। মফস্বলের বোকা মানুষের মাঝে অধিকতর বোকা হন স্কুলের মাস্টাররা। আর সেই মাস্টার যদি মুক্তিযোদ্ধা হন, তাহলে তার মতো বোকা আর কে হতে পারে? ভদ্রলোক গলার রগ ফুলিয়ে সব দায় নিজেদের কাঁধে টেনে নিলেন। তাকে কি সব বলেছিলাম সে সময়। এখন সেসব মনে পড়ছে না, বা করতে চাইছি না।

বিকালে রিহার্সাল ছিলো। তাই বাবাইকে তার নানার বাসায় নিয়ে গেলাম। সকাল থেকেই খেয়াল করছিলাম, অনেক রঙিন হয়ে উঠেছে দিনটি। সম্ভবত আগে এমন ছিলো না। তুলিকে বল্লাম, সেও স্বীকার করলো কথাটা। নিজেদের মাঝে কথা বলে বের করলাম, দশ-বারো বছর বয়েসে আমরা যখন রাস্তায় নামতে শুরু করেছি তখনও বিজয়ের সাথে দগদগে হয়ে থাকতো স্বজন হারানোর ব্যাথা। উনচল্লিশ বছর পরে সেই বেদনাবোধ সম্ভবত আর নাই। আমার পরিবারে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এমন দিনগুলোতে তাদেরকে প্রায়ই হারিয়ে যাওয়া সহযোদ্ধা বা শহীদ স্বজনের কথা মনে করতে দেখেছি। এখন আর সেটা হয় না। দিনে দিনে বেদনাটুকু ঝরে পড়েছে, আনন্দটাই স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে। আমরা বিজয় দিবসকে একটা পার্বন বা উৎসবেই পরিণত করছি। এই দিনের জন্যে নতুন কাপড় কেনা হচ্ছে। আমাদের প্রদর্শক পত্রিকা এমনকি খাবারেরও ডেকোরেশন করে পতাকার ডিজাইনে।

শহীদ মিনারের পাশে আগে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে অনুষ্ঠান করা হতো। এখন সেখানে স্থায়ী মঞ্চ করা হয়েছে। সন্ধ্যায় সেই মঞ্চে যাবার জন্যে ভীড় ঠেলতে ঠেলতে মনে হলো বড়ো বেশি অপরিসর হয়ে গেছে আমাদের শহীদ মিনার চত্বর। আরেকটু বড়ো যায়গা নিয়ে, আরো খোলামেলা শহীদ মিনার আমরা পেতে পারতাম। কিন্তু হবে না। এ শহরে প্রান্তিকের চত্বরে দেয়াল তুলে টুকরা টুকরা করে দেয়া হয়। এ শহরে শিরিষ বৃক্ষ কেটে বিশাল মসজিদের একশ হাত দুরে সুরম্য মসজিদ নির্মিত হয়। এ শহরে শুধু শহীদ মিনারের জন্যে কোন উদার প্রান্তর মেলে না... এই গল্প কি শুধুই এই শহরের? নাকি পুরোটা দেশেরই গল্প এটা?

০৪

অনুষ্ঠান শেষ করে ভিড় ঠেলে রাস্তায় উঠে এলে বাবাই বায়না ধরে রেষ্টুরেন্টে খাবে। এটা নতুন শিখেছে। বাইরে আসলেই রেষ্টুরেন্টে যাবার বায়না ধরে। খাবারের জন্যে গিয়ে দেখি রেষ্টুরেন্টময় ছড়িয়ে আছে থোকা থোকা উৎসব! পরিচিত অনেককেই পাওয়া যায় সেখানে। বাবাইকে নিয়ে বসেছি রেষ্টুরেন্টের ভেতরে। হঠাৎ রেষ্টুরেন্ট এর উঠোন থেকে উঠে এলেন আমার এক মামা। বল্লেন, একটু বাইরে আসো। গেলাম। বল্লেন, মাইকের আওয়াজ শুনছো? শহীদ মিনার থেকে ভেসে আসছে বিজয়ের অনুষ্ঠানের শব্দ। হ্যা বলতেই বল্লেন, এইমাত্র জাতীয় সংগীত গাওয়া হলো। এখানকার সবাই সেটা শুনেছে, কেউ দাঁড়ায়নি, সম্মান দেখায়নি। এটা কি ঠিক? কোন উত্তর দিতে পারলাম না। তিনি বল্লেন, সম্ভবত এটা ঠিক না। অনেকে বুঝবেই না দুর থেকে ভেসে আসা সুরে শ্রদ্ধা জানাতে হবে কী না। মাইক বন্ধ করে জাতীয় সংগীত গাওয়া উচিত মনে হয় । একবার বিষয়টা নিয়ে ভাবতে বল্লেন তিনি... এরপর থেকেই সেটা ভাবছি। আপনারা কি ভাবছেন বিষয়টা নিয়ে? একটু বলুন দেখি


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

আমরা বিজয় দিবসকে একটা পার্বন বা উৎসবেই পরিণত করছি।

একুশে ফেব্রুয়ারিতেও একই অবস্থা ।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

বিজয় দিবস কি উৎসব হওয়ারই কথা না? আমার কাছে তো এইটাই স্বাভাবিক এবং কাম্য মনে হচ্ছে ...
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

এনকিদু এর ছবি

বিজয় দিবসকে উৎসব হিসেবে দেখতেই আমি বেশি পছন্দ করব ।

তবে মাইক বাদ দিয়ে খোলা গলায় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার প্রস্তাবে আমি সহমত ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বেমক্কা সময়ে, বেমক্কা জায়গায় জাতীয় সংগীত বাজানো ঠিক না। সম্মান জানানোর একটা পথ আছে। যেখানে সেখানে যখন তখন জাতীয় সংগীত বাজিয়ে জাতীয় সংগীতকে সম্মান না বরং অপমানই করা হয়!

আর বরাহশাবকরা আপনাদেরই শহরে, আপনাদেরই চোখের সামনে কী করে মিছিল দেয়? পলিটিশিয়ান পুঙ্গির পুতেরা কি চায়া চায়া দেখে নাকি মজা লয়! মাঁদার গাছের ডাইল দিয়া পিটাইতে ইচ্ছা পুঙ্গির পুতেগো পাছার কাপড় তুইলা।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

সুজন চৌধুরী এর ছবি

স্টিকারের গল্প শুনে ভালো লাগলো! এর স্টক অশেষ হোক।
রাজাকারের বাড়ির দেয়ালেও সাটানো থাকুক!
ওরা যেরকম দেশপ্রেমিক হয়ে উঠছে ! তাতে মনে হয় যে কোন সময় ওরাও এই স্টিকার বিলাবে আর বলবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই!


লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ

গৌরীশ রায় [অতিথি] এর ছবি

সহজ উত্তর --- দাঁড়িয়ে যেতে হবে ।
তুই আমি আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম ।
খুব বেশি দিন আগের কথা কী? বছর বারো আগে ...

ভাল থাকিস ।

হিমু এর ছবি

স্কুলে নয় বছর জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছি। দুই হেডমাস্টারই ভয়ঙ্কর রকমের ডিসিপ্লিনারিয়ান ছিলেন, জাতীয় পতাকাকে সম্মান দেখানো (স্যালুট) আর জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় কয়েকশো ছাত্রের একজনের মধ্যেও সামান্য উশখুশ ভাব দেখলে গানের পর আলাদা করে টেনে গরুর মতো পিটাতেন। এই জিনিসটা আমার রক্তে ঢুকে গেছে, জাতীয় সঙ্গীত বাজলে দাঁড়িয়ে চুপ করে যাই।

আর বহু শিক্ষিত আধুনিক মানুষ দেখেছি, জাতীয় সঙ্গীত বা বিউগলের শব্দ শুনলে মুখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি নিয়ে বসে থাকে। ইচ্ছা করে পুটকিতে লাত্থি মেরে ফেলে দেই। এদের শিক্ষার জন্য একটা চারানা পয়সা দাম দিতে আমি রাজি না।

জাতীয় সঙ্গীত যখন তখন যেখানে সেখানে যে সে গাওয়ার জিনিস কি না, এ নিয়ে একটা তর্ক উঠতে পারে। আমি এটাকে গাম্ভীর্যের সাথে গ্রহণ করার পক্ষে। এই গানটার জন্যে আমাদের বহু বছরের বঞ্চনা সহ্য করতে হয়েছে, এবং তিন মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। আমাকে এক বড় ভাই বলেছিলেন, তুমি এই গানটা গাওয়ার সময় মনে করবে, একাত্তর সালে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁরা তোমার সামনে দাঁড়ানো এই গান শুনতে। আমি সে উপদেশ মনে রেখেছি।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

রানা মেহের এর ছবি

বিজয় দিবসতো উতসবেরই দিন, তাই নয় কি?

জাতীয় সঙ্গীত যারা বাজান তাদের একটু খেয়াল রাখা উচিত আশপাশের ব্যাপারে। একে যখন তখন বাজিয়ে এর গাম্ভীর্য নষ্ট করা হয়
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

বিশ্ববিদ্যাল্য় প্রথম বর্ষে ছেলেমেয়েদের বিশাল দল ঘুরে বেরাতাম। শুধুই আড্ডা আর বিভিন্ন জায়গা দেখা। তখন সপ্তপর্ণা নামে একটা খেলা চালু ছিল, এখনকার প্রজন্ম এটা খেলে কিনা জানি না। একটা গানের কোনো একটি শব্দের শেষ অক্ষর মিলিয়ে নতুন একটা গান শুরু করা। একদিন আমরা সেই খেলাটা খেলব ঠিক করলাম। দুই দলে প্রায় ২০ জন করে ছিল, সবাই ১৯/২০ বছর বয়সের। কাজেই বুঝতে পারছেন কতটা হট্টগোল হতে পারে। আমাদের দল একদম প্রথম গানটা শুরু করবে। দলের একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে গাওয়া শুরু করল, " আমার সোনার বাংলা..."। সাথে সাথে সবাই চুপ করে দাড়িয়ে পরল। সমস্ত কোলাহল কয়েক মূহুর্তের জন্য থেমে গেল। পাশ দিয়ে দুই একজন সিনিয়র ভাই যাচ্ছিল, তারাও দাড়াল (অবশ্য সেটা গানের জন্য নাকি নতুন আসা মেয়েদের দেখতে, সেটা আমি বলতে পারব না)। এখানে সবার কথাতে সেই দিনটার কথা মনে পরে গেল। (কেউ কিছু মনে করবেন না, খুবই সাধারণ কথা, তাও লিখলাম)

.........লাবন্য......

নজমুল আলবাব এর ছবি

বিজয় মানেই উৎসব। এটা আমিও জানি। উৎসবের থাকবে নানান রঙ, তাও মানি। কিন্ত আমাদের বিজয়তো রক্তস্নাতো। নয় মাসের নির্যাতন। লাখো শহীদ, নারীর হাহাকার এসবতো বিজয়ের সাথে জড়িয়ে আছে। সেসব কি ভুলে যাওয়া সম্ভব না উচিত হবে? আমি সে কথাই বলতে চেয়েছি। আর কিছু না।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বিজয় দিবস ও অন্যান্য জাতীয় দিবসে মাইকে হুটহাট করে জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর ব্যাপারে একটা অনুশাসন থাকা উচিত। জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হলে সবাই দাঁড়িয়ে, মাইক বন্ধ করে, খালি গলায়ই গাওয়া উচিত। মনে রাখা উচিত এটা নিছক একটা গান নয়।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হাসিব এর ছবি

চিপা দিয়ে আরেকটা বিষয় যোগ করি । দেশে থাকতে মার্চের ৭ তারিখ আমি পারলে বাসার সব জানালা এয়ার টাইট করে বন্ধ করে রাখতাম । মাইকে একটা শব্দও আলাদা করে স্পষ্ট করে বোঝা যায় না এরকম অকথ্য রেকর্ডিঙে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে বিরক্তি ছাড়া আর কিছু উতপাদন হতো না ।

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

বাবাই ইউনিভার্সিটিতে গেছে শুনে ভার্সিটির কথা মনে পড়ে গেল। জানি না এবার কেমন অনুষ্ঠান হলো শাহজালাল ভার্সিটিতে। এক ছোট ভাই যে এখন শিক্ষক হিসেবে ডিপার্টমেন্টে যোগ দিয়েছে জানালো পুরো ভার্সিটিতে নাকি বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোকসজ্জা করা হয়েছে --অনেকটা বিয়েবাড়ির মত--শুনে অনেক মজা লাগল।

আমাদের ভার্সিটির শহীদ মিনারটা অনেক সুন্দর--১০০ টির মত সিঁড়ি ভেঙে একটা টিলার উপরে উঠতে হয়--তার উপর ছিমছাম শহীদ মিনার। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে একটি স্মৃতিসৌধ হওয়ার প্ল্যান পাশ হয়ে আছে সেই কবে থেকে। কিন্তু গত জোট সরকারের সময় ডানপন্থি কুলাঙ্গার শিক্ষককুল আর প্রশাসন সেটা হতে দেয় নাই। তাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস --সব অনুষ্ঠানেই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়(ভাগ্যিস শহীদ মিনারটা আগেই হয়ে গিয়েছিল--না হলে হয়ত এটাও হতে দিত না কুত্তার দল) ।

ফেসবুকে দেখলাম এবার সবাই মিলে যে জায়গায় স্মৃতিসৌধ হওয়ার কথা সেখানে শোলা আর কাগজ দিয়ে স্থাপত্য বানিয়ে সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে । আশা রাখলাম আগামীবার সত্যিকারের স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাবে।

অপু ভাই , পোস্ট যথারীতি ভালো লাগল। বিজয় দিবসের আনন্দমুখর পরিবেশে আমি কোনো সমস্যা দেখি না। তবে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বছর একটি সংগঠনের বিজয় দিবসের গানের অনুষ্ঠানে আমি দেশাত্ববোধক গান শোনার জন্য যেয়ে হতাশ হয়েছিলাম। কেন জানি ওরা দেশাত্ববোধক গান কম গাইছিল। আমার মনে হয়েছিল শুধু দেশাত্ববোধক গান হলেই ওইদিনের সাথে সবচেয়ে বেশি মানাত।

আর হঠা্ত্ করে জাতীয় সংগীত চলে এলে আমি এখনও একটু কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাই।ওইদিন আমি আর আমার স্ত্রী মিলে ইউটিউবে তারেক মাসুদের 'মুক্তির গান' দেখার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্যাম্পে সবাই মিলে এক সাথে জাতীয় সংগীত গাওয়ার দৃশ্যে দুইজন মিলে কান্নাকাটি করেছি ঠিকই-- কিন্তু উঠে দাঁড়িয়েছি বলে মনে পড়ে না। আমার মনে হচ্ছে জাতীয় সংগীত মাইকে না গাওয়াই হয়ত ভালো।

রণদীপম বসু এর ছবি

সিলেটের কী চমৎকার শহীদ মিনার ! তবে পরিসরটা সত্যিই ছোট হয়ে গেছে।

auto

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

দ্রোহী এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

দৃশা এর ছবি

আজ থেকে ৩৯ বছর আগের এইদিনে তোলা কিছু ছবি আর ভিডিও টিভিতে দেখেছিলাম। মানুষগুলো বুক চিতিয়ে মুখে হাসি নিয়ে রাস্তায় মাঠে ময়দানে ছাদে পতাকা হাতে ছুটে বেড়াচ্ছেন। একজন আর একজনকে জড়িয়ে ধরছেন। চোখে অশ্রু, মুখে হাসি। বিজয়ের হাসি, স্বজন হারানোর পরও চোখে অশ্রুসিক্ত হাসি। তবে আমাদের মুখে কেন হাসি থাকবে না? আমাদেরও বুক চিতিয়ে মুখে বিজয়ীর হাসি নিয়ে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সাথে বিজয় দিবস পালন করা উচিৎ (আমার মতে)।

ধুমধাম যখন তখন জাতীয় সঙ্গীত যেখানে সেখানে গাওয়াটা বা বাজানোটা ভাল পাই না। আবার এমন অনেক সময় আছে যখন বাজানো দরকার কিন্তু বাজানো হয় না। সবই তাজ্জবের খোলাছাপিঠা !
লেখা আর বাবাই দু'টাই ভাল।

দৃশা

পলাশ দত্ত এর ছবি

বিজয় দিবসটা আসলে সময়ের সাথে সাথে উত্সবের দিনেই পরিণত হবে। কারণটা তুমি নিজের লেখায় বলছো আলবাব :

দশ-বারো বছর বয়েসে আমরা যখন রাস্তায় নামতে শুরু করেছি তখনও বিজয়ের সাথে দগদগে হয়ে থাকতো স্বজন হারানোর ব্যাথা। উনচল্লিশ বছর পরে সেই বেদনাবোধ সম্ভবত আর নাই। আমার পরিবারে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এমন দিনগুলোতে তাদেরকে প্রায়ই হারিয়ে যাওয়া সহযোদ্ধা বা শহীদ স্বজনের কথা মনে করতে দেখেছি। এখন আর সেটা হয় না। দিনে দিনে বেদনাটুকু ঝরে পড়েছে, আনন্দটাই স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে।

আর জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর বিষয়টায় একটু সতর্ক থাকা উচিত।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমি একসময় প্রচুর বাংলা সিনেমা দেখতাম। এখনও দেখতে চাই, কিন্তু সময়াভাবে হয় না।
তো সিনেমা হলে জাতীয় সঙ্গীতের চার লাইন বাজানোর রীতি, সঙ্গে পতাকার ভিজুয়াল। আমাদের দর্শকেরা জাতীয় পতাকা আর গান শুরু হইলে কেউ একবার দাঁড়ায়ে হাত নেড়ে বসে পড়ে। কেউবা দাঁড়ায় না, বসে থেকেই হাত নাড়ে, আবার কেউ কিছুই করে না।
এমন বহু সিনেমায় দেখা গেছে আমি একলা দাঁড়ায়ে আছি কেবল। আশেপাশের মানুষেরা আমারে দেখে হেসেছে বোকা বলে। তাতে আমার গায়ে লাগছে কেবল গর্বেরই বাতাস।

একটা কথা আমি কোনোভাবেই বুঝি না, যে পতাকার জন্য আর যে গানের জন্য লাখ লাখ লোক নিজের জীবন বিসর্জন দিতে পারছে, আমরা কোন বালেশ্বর চেট হয়া গেছি যে সোজা হয়া খাড়াইতে পারি না? মেরুদণ্ড নাই?

এইসব বালের কথার তীব্র বিরোধীতা করি। জাতীয় সঙ্গীত যখন খুশি তখন বাজবে, আমরা তারে সম্মান করবো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মামুন হক এর ছবি

আমার ছোটবেলায় ,৮০'র দশকের গোড়ার দিকে,সিনেমা হলে জাতীয় সঙ্গীতের সময় কাউকে বসে থাকতে দেখেছি বলে মনে পড়েনা। পর্দায় জাতীয় পতাকার ছবি ভেসে ওঠা মাত্রই সবাই সটান দাঁড়িয়ে যেতেন। সব হারিয়ে যাচ্ছে কালের স্রোতে...

রণদীপম বসু এর ছবি

এটাকে 'কালের স্রোত' বলা যাবে না মামুন ভাই। হয়তো বলতে হবে 'আকালের স্রোতে' !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।