এখানে, এই সবুজ গ্রামের পাশে যে নদী বয়ে গেছে, সেই নদীর পাড়, শান্ত মাঠ, সবই তার চেনা। তিনি ছানিপড়া চোখে সেই নদীর পাশ দিয়ে অবলীলায় হাঁটতে পারেন। নদীর সাথে লাগোয়া মাঠ, সেই মাঠের এক পাশে দাড়িয়ে থাকা মেন্ডা গাছ, সব তার মুখস্থ। তিনি তার অভ্যস্থ পায়ে তরতর করে হেঁটে মেন্ডা গাছটার নিচে এসে দাঁড়াতে পারেন। রোজ বিকালে সেখানে তাকে দাঁড়াতে হয়। অভ্যাস। তার শরীর নদীর বাতাসে জুড়িয়ে যায়। তার মখমলের মতো সাদা দাড়ি বাতাসে উড়ে। ছানি পড়া চোখে তিনি অনুভব করেন ঠিক সামনে, চোখেন সীমানায় দাড়িয়ে আছে খাসিয়া পাহাড়, পাহাড়ের শরীর চিড়ে নেমে আসছে পাংথুমাইর ঝরণা। এই ঝরণায় জোয়ান বয়েসে হরদম গিয়েছেন তিনি। এখন আর যাওয়ার উপায় নেই। এলার্ট বলে এপার-ওপার দুপার থেকেই চিৎকার আসে, থেমে যেতে হয়। তিনি অনুভব করেন, দেখতে পান তার ডান পাশে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে জাফলং পাহাড়, কত অবাধ যাতায়াত ছিলো এই সবুজে, এখন সব অন্যের, কোন অধিকার নেই আর...
আজও হাঁটতে তার কষ্ট হয় না। তিনি সামনে একা হাঁটেন। তার হাতের লাঠিটা মাটিতে লাগে কি লাগে না, তিনি তরতর করে হাঁটেন। পেছন পেছন যারা আসে তাদের কথা তিনি বুঝেন না। বুঝবার দরকারও নেই। শুধু আজির উদ্দিন চেয়ারম্যান এর অনুরোধ তার কানে আসে। পাশাপাশি হাঁটছে সে, আর বলছে, ‘চাচা খইদেউকা, ই বয়েসো আপনার উপরে জুলুম ওউক ইতা আমার বালা লাগের না। আপনার হুরু পুয়া কই গেছে কইদেউকা, আপনার দায়িত্ব আমার। কেউ আপনারে কিচ্ছু খরতোনায়...’ এসব কথা শোনার কেনো মানে নেই। তিনি শোনেনওনা। তিনি তার প্রিয় মাঠ পেরিয়ে, মেন্ডা গাছটার নিচে দাঁড়ান, দাড়িয়েই থাকেন... তার ঝাপসা চোখের সামনে পিয়াইনের স্বচ্ছ জল বয়ে চলে, তার চোখের সামনে ঝর-ঝর করে ঝরতে থাকে খাসিয়া পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা ঝরনার জল। পচানব্বই বছরের নরোম শরীর পিয়াইনের পানিতে ঝরে পড়ার আগে তার বুকে টকটকে লাল একটা পতাকা জেগে উঠে...
মন্তব্য
অসহ্য লাগে সবকিছু
কালের সাক্ষী হয়ে এখনও বেঁচে আছি।
এত অসহ্য একটা অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না!!! আজ সারা দিনে বলার মত একটা কথা ও খুঁজে পাচ্ছি না। যা ই বলতে যাই, শুধু গালিই বের হয়ে আসে মুখ দিয়ে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হতাশ লাগে খুব।
এরকম আরও কত-শতসহস্র ঘটনা! তবু এই বাংলার মানুষ নতি স্বীকার করেনি, কোথায় গেল সেই সর্বংসহা চেতনার স্রোত!
আমাদের প্রত্যেকের বুকে এই দগদগে ক্ষত,
যাদের ধমনীতে শহীদের শোণিত-স্রোত।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নতুন মন্তব্য করুন