বাপ হওনের একটা সহজ পদ্ধতি আমার আছে। শিশুদের সাথে যেকোনভাবে দ্রুত খাতির করে ফেলতে পারি। (ইদানিং এটা করতে সমস্যা হচ্ছে, শরীরটা বাচ্চা হাতির মতো যবে থেকে হতে শুরু করেছে, শিশুরা ততো দুরে সরে যাচ্ছে, শিশুরা সম্ভবত দুর থেকেই হাতি দেখতে ভালোবাসে, কাছে আসে না।) তো খাতির হবার পর গল্প শুরু হয়। আমরা একে অপরের নাম জিজ্ঞেস করি, আর এই নাম জানাজানির সময়ই আমি বাবা বনে যাই! ৯ মাস ১০ মাস না, মাত্র ৯/১০ মিনিটে।
: নাম কি?
: মাটি
: বাহ সুন্দর নাম
: তোমার নাম কি?
: আমার নাম বাবা
: বাবা!
: হ্যা আমার নাম বাবা
: ...
: আসলেই আমার নাম বাবা
: তুমারে বাবা কাকু বলবো?
: নাহ্, কাকু বলার দরকার কি? তুমি আমারে নাম ধরেই ডাকো
: !!!
: হ্যা, তুমি আমারে বাবা বলবে, আমি বলবো মাটি
এর পর অনেকক্ষন আমার আর মাটির গল্প চলতে থাকলো। মাটি তার ছোট ছোট বই দেখায়, পুতুল দেখায়, গল্প করে, কুট কুট করে করা সেসব গল্পের লাইনে লাইনে সে বাবা ডাকে। সম্ভবত এত বড় একটা লোককে নাম ধরে ডাকার মজাটা নিতে চায়। মাটির তখন সাড়ে ৩ বছর বয়েস সম্ভবত। পাশের ঘর থেকে পলাশ (পলাশ দত্ত, মাটির বাবা, আমার বন্ধু) সেটা খেয়াল করে। তার ঘুম ভেঙে যায় কটাশ করে। হিড়িম্বার মতো খিকড়ানো চুলে দরজায় এসে দাড়ায়, এই তুই আমার মেয়েরে কি শিখাইছস? আমি উদাস হয়ে জানালার বাইরে তাকাই... পলাশ রেগে-মেগে বলে, হারামজাদা তোরে আইজ খাইছি...
নজরুল ইসলাম, মানে নজুভাই তেমন না। তাই নিধির সাথে সেই পদ্ধতিটা কাজে লাগালে তিনি রাগ করেন না। কিন্তু বিপদে পড়ে নুপুর বেগম। নিধি যখন বলে, ওই বাবাটা খুব বোকা, কিচ্ছু চিনে না... অবাক হবারও চান্স পাওয়া যায় না তখন।
জোর করেও বাপ ডাকাই মাঝে মাঝে! তুলির অফিসের এনাম ভাই এর মেয়েরে বলি, এই মেয়ে, বাপ ডাক, নয়তো তোর আব্বুর পেট ফাটায়া দেবো। সে ভয় ভয় চোখে একবার নিজের বাপরে দেখে আরেকবার দেখে হুমকিবাপরে। এনামভাই তারে বুঝায়, ডাকো মা, বাবা ডাকো। নয়তো আব্বুরে মারবে... সে বাবা বলে, সেটা শুনে বাকিরা হেসে উঠলে সেও কস্ট করে হাসে। কিন্তু বাবাই একদম খুশি হয় না। সে ঠোট ফুলাতে থাকে!
লুবাবা আমার তালতো বোনের মেয়ে। ইটালিতে ওর জন্ম। ৫ বছর পর্যন্ত সেখানেই ছিলো। বাবাই আর ও সমবয়েসি। দেশে আসার পর বাড়ির অন্য দুই পিচ্চির দেখাদেখি সেও বাবা ডাকতে শুরু করলো। আহা, না চাইতেই বৃষ্টির মতো বিষয়। ওর মা’তো গেলো ক্ষেপে, সে আমারে বলে, ওই বদ, তুই আমার মেয়েরে বাবা ডাক শিখাইলি ক্যান। আমি বলি তুমি না চিনলেও সে ঠিকই চিনতে পারে।
আব্বারও অনেকগুলো ছেলে-মেয়ে ছিলো। মানে অফিসিয়ালি আমার আর দাদাভাই এর বাইরে। ধরে-বেধে-ঘুষ দিয়ে নানা কায়দায় আব্বা তার পুত্র-কন্যার সংখ্যা বাড়াতেন। এর মাঝে সবচে ছ্যাচড়া ছিলো ডালিম নামের একটা ছেলে। সে ডাক টিকিটের লোভে অ্যব্বা অ্যব্বা ডেকে পাড়া মাথায় তুলে ফেলতো। আমি তখন খুবই ছোট, গাব্দা গোব্দা নিরিহ। ডালিমরে দেখতে পারতাম না আব্বার উপর ভাগ বাসাবার জন্য, কিন্তু কিছু করার ছিলো না। শুধু আব্বার সাথে অভিমান করা ছাড়া। কিন্তু দাদাভাইর সেসব ছিলো না। ডালিমের মতো ছ্যাচড়ারে চান্স পেলেই সে আচ্ছা করে প্যাদাতো। যদিও ছ্যাচড়া ডালিমের মধ্যে বিড়ালভাব ছিলো প্রবল। বিড়াল যেমন ব্যথার যায়গা জিহ্বা দিয়ে চেটে-চুটে মারের কথা ভুলে যায়, সেও তেমন। আগের বিকালে মার খেলো, পরের সকালেই দেখা গেলো আব্বার চেয়ারের পাশে দাড়িয়ে অ্যব্বা অ্যব্বা ডেকে নতুন কোন ডাক টিকিট নিয়ে খুশি মনে বাড়ি যাচ্ছে।
দাদাভাইর মারে কাজ না হলেও আমারটা খুবই কার্যকর হতো। মানে যখন থেকে আমি গুন্ডামি শিখে ফেল্লাম, তখন থেকে আব্বার আলগা সন্তানলাভ প্রায় বন্ধ হয়ে গেলো। সুব্রত নামের একটা ছুকড়ারে খুব করে পেদাইছিলাম একবার। আমার কয়েক হালি মামাতো ভাই-বোন আব্বারে আব্বু ডাকতে শুরু করলো। কি যন্ত্রনা। কিছু বলতে পারি না। আবার সহ্যও করতে পারি না। দু-একবার হালকা ধুলাই দিয়েছি, যেমন কান ধরে উঠবস করানো। কাজ হয়নি। সাইকেল দিয়ে দুরে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, চকলেট খাওয়ানোর মতো অনৈতিক কাজ দিয়েও এদের সামলানো যায়নি। এরা এখনও আব্বাকে আব্বু ডাকে। সম্ভবত আব্বার কাছ থেকেই বাবা হবার এই গুনটা আমি পাইছি।
এইসব বাবা ডাকাডাকিতে বাবাই অবশ্য অভিমান করে, কিন্তু সেটা সামাল দেওয়া যায়। কিন্তু আবির, মানে আমার ভাতিজা বেশ এটাকিং মোডের জিনিস। বাবাই মাঝে মাঝে এরে কাজে লাগায়। যেমন লুবাবার সাথে ঝগড়া হলেই, আবির ‘থ’ এর উপর বিশাল চাপ দিয়ে থাবড়া মেরে সব দাত ফেলে দেবার হুমকি দিয়ে বলবে, আমাদের বাবাকে বাবা ডাকলে একটা দাতও থাকবে না। এর বাইরে আমাকে বাবা ডাকতে পারে এমন শিশুদের বিষয়েও সে নির্দয়। বাবাইকে বলে দিয়েছে, কেউ যদি বাবারে বাবা ডাকে, সেইটারে সে থাবড়া দিয়ে বসায়া দিবে একদম!!!
আমার ছোট মামার ছেলে, বাবাইর বছর খানেকের ছোট হবে। একই গ্রামে থাকি। দু বাড়ির মাঝখানে ছোট একটা টিলার আড়াল। সরাদিনই এ বাড়ির পিচ্চিরা ও বাড়ি, ও বাড়ির পিচ্চিরা এ বাড়ি ঘুরে। আমাদের বাড়ির রাস্তাটা পাকা। বাচ্চারা সুপারির খোলে বসে ছড়-ছড় করে সেখান দিয়ে নেমে যায়, খেলে। ইদানিং দুই চাকার স্কুটি নিয়েও দৌড় হয়। সেদিন শুনলাম মামাতো ভাইটা বাবাইকে বাবা-বাবা ডেকে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে! ঘটনা জানতে গিয়ে দেখি বিরাট রাজনীতি। স্কুটি করে বাড়ি থেকে রাস্তা পর্যন্ত নামতে দেবে, এই শর্তে আমার পুত্রসাহেব ওরে বাবা ডাকতে বাধ্য করেছেন...
শালার ছিটগ্রস্থ পরিবার দেখি, সবকয়টায় বাপ হইতে চায় খালি
মন্তব্য
কিছু কওনের নাই
[একটা অন্য কথা জিজ্ঞেস করতে পারি? সিমন কেমন আছেন? অনেককাল কোন আপডেট নাই। ওনারে বইলেন অনেক দূরে একটা বুড়া মানুষ, তারে উনি চেনেন না, তার কোন প্রার্থনা নাই, শুধু ইচ্ছা আছে, তার ভাল খবর শোনার অপেক্ষায় থাকে।]
- একলহমা
সিমন আস্তে আস্তে ফর্মে ফিরতেছে। সে সচলে, ফেসবুকে ঢুকে। নিয়ম করে ফোন দেয়। আপনার এই কমেন্টটা দেখবে সে। উত্তর দিতে হয়তো পারবে না। তবে একদিন দেবে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
বাবা পরিবার
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
হ
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
দুর্দান্তিস
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
ধন্যবাদ
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আমার বউকে আলবাব গার্লফ্রেন্ড বানায়ে নিছে, বাচ্চাকে 'বাবা' ডাকতে শিখায়ে দিছে।
এই সংসারে আমি এখন হাকুল্যা হয়ে গেছি।
অপু অর্থাৎ এই পোস্টের লেখক নজমুল আলবাব আমার ক্ষুদ্র পরিবারেরই সদস্য...
আর কি বলার আছে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ নজুভাই
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আপনার কায়দাটা দারুণ লেখাটা সেইরাম মজারু হইছে
ধন্যবাদ
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
মতিকন্ঠের ভাষায়, বাবা হওনের 'কায়দাটা কী?' দেখছোনি কারবার
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
হ, দেখছোনি কারবার
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
এক্কেবারে - বাবাস্টিক, মানে বোম্বাস্টিক। জটিল লাগলো।
শেষে এসে বাবাইয়ের কীর্তিতে আরো মজা পেলাম। আজকালকার ছেলেপেলেরা কত এডভান্স, দেখেছেন?
বিরচিত সকল বাবা এবং তাদের পুত্রদের জন্য শুভকামনা।
ধন্যবাদ
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
অফিসে বসে পড়তে পড়তে দাঁত বের হয় গেছিল , কলিগ কেমন বাঁকা চোখে তাকায় । আপনার পুত্র উতরাধিকারসুত্রে বাবা হওয়ার আগ্রহ পেয়েছে ,পুরাই বাবাময় পরিবার
ইসরাত
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আমার অবশ্য মাথায় অন্য একটা চিন্তা আসলো।
বাবা হওয়া নিয়া হঠাৎ গল্প লাগাইলেন কেন?
অলমিতি বিস্তারেণ
বদ চিন্তা না করো বাবুটা
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আমার কিছু কুশ্চেন ছিলো, অপু বাবা।
বলো সুমি মা
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নিকের শেষে একটা আ-কার জুড়ে দিন, ল্যাঠা চুকে যায়
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ব্যাপক প্রস্তাব!
পিচ্চিগুলার সাথে আমার-ও খুবই দ্রুত বন্ধুত্ব হয়, আমি তাদের বন্ধু; কতগুলা পিচ্চি যে আমাকে ‘বন্ধু’ বলে ডাকতো, বড় হয়ে লজ্জা পায়। আমি ভাব দেখাই যে আমি-ও তাদের মত ছোট, মাঝে মাঝে এরা খুব অবাক হয়ে জানতে চায়, ‘কিন্তু তুমি-তো ছোট না, এত্ত এত্ত লম্বা!’ আমি বলি, একটা ভুত (ছেলেদের বেলায়)/ পরি(মেয়ে শিশুদের বেলায়) এসে আমাকে টেনে লম্বা করে দিয়ে গেছে, তারপর একদম সহজ হয়ে যায় সবকিছু। বেশিরভাগ পোলাপানের ভুতের ভয় থাকে না, থাকলেও সেই ভয় কাটিয়ে দেয়ার-ও একটা তরিকা এটা।
একবার শুধু এক পিচ্চি আমার দিকে বহুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর বলল, ‘ তুমি তাহলে এখানে ক্যান, গাছে যেয়ে বসে থাক, ভুতগুলো সব গাছে থাকে, মা আমাকে বলেছে!’
কেবলমাত্র শিশু’দের সাথে সময় কাটালে পৃথিবী মহৎ মনে হয়!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
লম্বার হিসাবে ভুত হিসাবে আপ্নে খ্রাপ হবেন না
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
তাইলে দুইটা ব এর আগের ল এর উপর একটা ই-কারও বসিয়ে দিই?
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ভাগ্যিস এই লেখাটার খোঁজ পাইছিলাম, আজকে সারাটা দুপুর ভরে গেল
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
দারুণ মজার একটা লেখা এতদিন কেন যেন চোখেই দেখি নি ভাল্লাগছে ভাইয়া।
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
পাঠপ্রতিক্রিয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ নীড় সন্ধানী ও মেঘা।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
বহু সময় বাদে সত্যিকারের অর্থেই কোন লেখা পড়ে মন ভালো হয়ে গেছিল। প্রথম দিনই পড়ছিলাম লেখাটা
ভীষণ ভীষণ ভাল্লাগছে অপুআলিবাবাদাদা
ডাকঘর | ছবিঘর
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ও মিয়াভাই, আপনের নয়া লেখায় করা কমেন্ট ভুইলা যান। এইরকম জিনিসপত্র হইলে লেখালেখি বন্ধ করার দরকার নাই চলুক চলুক!
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
জরিমানা দেও আগে
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নতুন মন্তব্য করুন