জানি, নিশ্চিত করেই জানি এখানেই থেমে যাবে সবকিছু। কিচ্ছু হবে না। কিচ্ছু হয়না এখানে। এই অন্ধকারে, বদ্ধ আবহে নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো অবশিষ্ট থাকবে না আর কোনো বিশুদ্ধ বাতাস। প্রতিবার কিছু বোকা মানুষ তড়পাবে, কাঁদবে, মুষ্টবিদ্ধ হাত উপরে তুলে প্রতিবাদ করবে... তারপর সেই যুথবদ্ধ কণ্ঠের মাঝ থেকে সবচেয়ে তীব্র কণ্ঠটাকেই নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে।
অমোঘ কোনো গাণিতিক নিয়মের মতো। রক্তপিপাসু মধ্যযুগ বারবার আঘাত হানবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, মতিহারে। শত্রুর ঠিকানা জানবে মানুষ। চিনবে শত্রুকে। তারপরও সেই শত্রু থেকে যাবে অধরা। নিয়মিত তার কাজ করে যাবে, রাষ্ট্র তার কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারবে না।
২০০৪-এর ২৭ ফেব্রুয়ারির সাথে ২০১৫'র ২৬ ফেব্রুয়ারির কোনো পার্থক্য নেই। ২০১৩’র ১৫ ফেব্রুয়ারির সাথে একাকার হয়ে আছে ২০০৪-এর ২৪ ডিসেম্বর। প্রতিটি ঘটনার একই কায়দা। খুন হয়ে যান হুমায়ুন আজাদ, অধ্যাপক ইউনুস, রাজীব হায়দার, অধ্যাপক শফিউল, অঞ্জলী দেবীরা। পত্রিকা, উড়ো চিঠি আর ভার্চুয়াল পৃষ্ঠায় তালিকা টানিয়ে আমার ভাই-বন্ধুর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়। সেই তালিকা ধরে খুন হই আমরা। তবু উল্টো পক্ষের কোনো তালিকা হয় না। কেউ ধরা পড়ে না। কেউ কেউ ধরা পড়ে বুক চিতিয়ে কসাইবৃত্তির কথা বলেও থেকে যায় বহাল তবিয়তে। আমাদের লেখা বই নামিয়ে দেওয়া হয় দোকানের তাক থেকে। বইয়ের দোকান বন্ধ করে দেয় বাংলা একাডেমী। ফারাবীদের কথায় ওঠে-বসে বাংলাদেশ। ফারাবীর জন্য ৫৭ ধারা নাই, রাসেল পারভেজদের জন্য আছে।
আমাদের বহুল পঠিত পত্রিকা প্রথম আলো পাকিস্তানকে ভালোবাসে। আমাদের চিন্তকেরা দুর্বৃত্ত ফরহাদ মজহারকে দার্শনিকের আসনে বসিয়ে পূজো করে। বাতিল হয়ে যাওয়া নষ্ট আল মাহমুদ তাদের প্রিয়তম পদ্যলেখক।
সঙ্কুচিত হয়ে আসছে বাঙালির চিন্তার ক্ষেত্র। দেশে দেশে গড়ে ওঠা কালো পতাকা আর মুখোশের মুখ ঘন হয়ে উঠছে আমাদের জনপদে। আমরা পেছনে হাঁটছি। আমরা হাঁটছি মধ্যযুগের পথে। আমাদের কোনো অভিজিৎ চাইনা। আমাদের দরকার নেই কোনো হুমায়ুন আজাদের। মুক্তবিশ্বে এখন থেকে আমাদের পরিচয় হয়ে ভেসে উঠবে রক্তাক্ত হুমায়ুন আজাদের ছবি। বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে অভিজিৎ-এর লাশ। কসাইদের করতলে নিজেদের সঁপে দিলাম।
মন্তব্য
কসাইদের করতলে নিজেদের সপে দিলাম।-
নজমুল ভাই, আমি বলি যে, আমরা আর নিজেদের সঁপে দেব না। আমরা এবার কালো ব্যাজ পরবো না। আমরা এবার চিৎকার করবো। ভীষণ ভয়ংকর গগনবিদারী চিৎকার। এবার এক হতে হবে। রাজনৈতিক, দার্শনিক সব ধরণের দ্বন্দ্বকে পাশ রেখে মৌলবাদ আর এমন হত্যার বিরুৃদ্ধে এক হতে হবে। শুধু অনলাইনে নয় আরো কিছু আরো কিছু। বিচার চেয়ে নয়, বিচার আদায় করতে হবে। প্রশাসনে যেই থাকুক বোঝাতে হবে, ধর্মবাদীদের তোয়াক্কা করতে হলে, আমাদেরও করতে হবে। আমরা দুর্বল না। সান্ত্বনা পুরষ্কার আমরা চাই না।
স্বয়ম
.....................
অভিজিৎদা ও বন্যাপার রক্তাক্ত দেহ বাংলাদেশের যুক্তি আন্দোলনের মৃত্যু ঘটাবে না, বরং যে স্ফুলিঙ্গ তারা ছড়িয়ে দিয়েছেন, তা চিরদিন বহন করে যাবে এ দেশের মুক্তমনা ও মুক্ত বুদ্ধির মানুষেরা! আসলে মুক্তচিন্তাকে যতই আঘাত করা হবে, ততই তার শক্তি সম্প্রসারিত হবে!
অভিজিৎদার ছিটকে পড়া মগজ, আঙ্গুল বা চশমা দেখে উল্লসিত হতে পারে মৌলবাদী প্রেতাত্বারা! কিন্তু আসল বিষয় তো পড়ে রয়েছে তার বইয়ে, এ পর্যন্ত যে কটা লিখেছেন, তাতেই। আর ঐসব বইকে তো আর হত্যা করা সম্ভব না।
আমাদের দেশটা আসলে কসাইদেরই দেশ
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
আমরা একজোট হয়ে প্রতিবাদ করবো -
____________________________
কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না ভাই। মনটা এত খারাপ হয়ে আছে!
প্রথম আলু, শালা এক নম্বর বদমাইশ! জারজের বাচ্চা ! ধর্মকে পুজি করে পাকিস্থানি বন্দনা আর আরো বদমাইশ তো তারা যারা প্রথম আলু পড়ে।।
----------------
রাধাকান্ত
কিছু বলার নাই। সব কথাই বাহুল্য মনে হয়।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
নতুন মন্তব্য করুন