খুব কাছের মানুষজন বিদেশে থাকেন। সিলেটি হিসাবে বিলাতে থাকেন বড় একটা অংশ। এর বাইরে মধ্যপ্রাচ্যে। যারাই যেখানে থাকুন, বিলাতের নতুন প্রজন্ম ছাড়া প্রায় সবাই শ্রমিক। কারখানা-রেস্টুরেন্ট হয়ে সেখানকার প্রজন্ম মোটামুটি একটা স্থির অবস্থানে পৌঁছেছেন। কিন্তু যারা মধ্যপ্রাচ্যে আছেন, তাদের কষ্টের জীবন।
খুব কাছে থেকে সেইসব মানুষদের দেখেছি। কঠিন, কঠোর পরিশ্রম করা একেকটা প্রিয় মুখ আমার। তাঁদের চিঠির ভেতরের দীর্ঘশ্বাস, তাঁদের বাড়ি ফেরার আকুতি, দীর্ঘ বছর কষ্টের কাজ করে বিধ্বস্ত শরীর এবং মন নিয়ে ফিরে আসা সেইসব মানুষকে নিয়েই আমাদের পরিবার। এই জীবনের কথা, কষ্টের কথা জানা ছিলো। একটা ধারণা তৈরি হয়েছিলো গল্প শুনে, পত্রিকা বা টিভি দেখে। কিন্তু সেই জানা আর গল্প যে কিছুই না। বাস্তব যে আরো কঠিন, কঠোর সেটা জেনেছি অনেক পরে।
বাহরাইনের মানামা বিমানবন্দরের ভেতর নির্মাণকাজ চলছিলো। সবকিছু উল্টাপাল্টা অগোছালো হয়ে আছে। মধ্যরাত। আম্মা চা-কফি কিছু একটা চাইলেন। কোথায় পাবো সেটা বুঝতে পারছি না। কোনো সাইন নেই, কাউকে জিজ্ঞেস করবো সেটাও পাচ্ছি না। হঠাৎ একজন ছোটখাটো মানুষ সামনে এলেন। হাতে মেঝে পরিষ্কার করার সরঞ্জাম। দেশি সম্বোধন করে আধা আঞ্চলিক উচ্চারণে তিনি বললেন, কোনো সাহায্য লাগবে কি না। সেই প্রথম গরিব বাংলাদেশ আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। দেশি, ছোট্ট একটা শব্দ। কথিত শহুরে মানুষের জন্য আনস্মার্ট হয়তবা। কিন্তু বুকে টোকা দিলো। পরের প্রায় মাসাধিককাল এই শব্দটা ঘুরেফিরে শুনেছি। আপ্লুত হয়েছি, বেদনায় নীল হয়েছি, আক্রান্ত হয়েছি তীব্র লজ্জায়।
বড় বিপণীবিতানের মেঝে মোছা, ডাস্টবিন পরিস্কার করা কিংবা অন্য যেকোনো কাজ, যাকে শিক্ষিত প্রবাসীরা অড জব বলেন, সেটা দেশের বিশাল সংখ্যক মানুষই করেন। বাড়িতে, অফিসে, রাস্তায়। রিকশা নামের পাশবিক একটা যানবাহনে চড়ে আমরা অভ্যস্ত। আলাদা কোনো ভাবনা তৈরি করে না। কিন্তু মধ্যরাতের সেই দেশি ভাই আমাকে কাতর করেন। যদিও এর ঘণ্টাকয়েকের মাঝেই তাকে অনেক বেশি ভাগ্যবান বলে মনে হয়েছে আমার। সপ্তা পেরুবার আগেই মনে হয়েছে তিনিই প্রবাসে সবচেয়ে ভালো থাকাদের একজন। ততদিনে আমি দেখে ফেলেছি হলুদ কাপড় পরা সৌদি আরবের বলদিয়া বা পৌর কর্তৃপক্ষের কর্মীদের। যাদের সবচে বড় অংশ আমারই ভাই, বন্ধু, পরিজন।
সব মানুষের কিছু অক্ষমতা থাকে। বেদনাকে বোনের মতো যদিও ভালোবাসি, সাথে রাখি বন্ধুর মতো। কিন্তু সবকিছু বর্ণনা করার ক্ষমতা আমার নাই। আমার দেশকে পরিশ্রমে নুয়ে পড়তে দেখেছি মধ্যপ্রাচ্যের তীব্র গরমে, সৌদি আরবের বর্বরদের নির্যাতনে কাতর বাংলাদেশকে দেখেছি সেখানে। মক্কায় একে সত্তুর নেকি মেলার গল্প জানি। তার হিসাব আমি রাখি না। রাখা হয় না। কিন্তু তার পথে ও প্রান্তরে ছড়ানো ছিটানো দেখি খাবারের স্তূপ। যাতে আমার ভায়ের শ্রম লেগে আছে, লেগে আছে তার রক্ত। আনোয়ার নামের এক পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সাথে পরিচয় হয়। প্রায় প্রতি বিকালে দেখা হয়েছে। খাবার ভাগ করে খেয়েছি। কখনোই মনে হয়নি, মধ্যবিত্তসুলভ এসব খাবার তিনি নিয়মিত খেতে পারেন।
হোটেলের বেয়ারা ছিলেন একজন। আলাউদ্দিন ভাই। সুনামগঞ্জে বাড়ি। ভয়ঙ্কর সব গল্প করতেন। অবলীলায় বলে যাওয়া সেসব গল্প শুনে আম্মার সে কী কান্না। ফেসবুকে-ইউটিউবে সৌদি শেখদের হাতে নির্যাতনের যেসব ভিডিও মাঝেমাঝে দেখতে পাই আমরা, সেইসকল গল্প। কী অমানবিক-পাশবিক সেইসব ঘটনা। মানুষ হিসাবে নিজেরে বড় ক্ষুদ্র, তুচ্ছ মনে হতো তখন। কান্না পেতো দেশের জন্য।
ঢাকার বস্তি দেখে অভ্যস্ত চোখ। তবু শিউরে উঠেছি শ্রমিকদের থাকার জায়গা দেখে। বস্তিতে যেকোনো সময়, যে কেউ ঢুকতে পারে। থাকতে পারে। এই স্বাধীনতাটুকুও নাই সেখানে। রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে সেখানে যাবার জন্য। লম্বা লম্বা শেড। একেকটা রুমে তিনতলা খাট পাতা রয়েছে ৪টা করে। মাঝখানে হয়ত কোনোমতে দুটো টি-টেবিল রাখার মতো জায়গা আছে। আশেপাশের রুম থেকে দেশি কুটুমের সাথে বুক মেলাতে আসে একেকটা বাংলাদেশ। আমি নুয়ে পড়ি, লজ্জিত হই, অক্ষমতায় কুঁকড়ে যাই। বাটি ভরে একেকজন একেকটা তরকারি নিয়ে আসেন। মোটা চালের ভাত বলে নয়, বেদনায় ভারী হয়ে সেই খাবার আমার গলায় দলা পাকায়... রাতে ফিরে এলে আম্মা জিজ্ঞেস করেন, কী দেখে এলে? উত্তর দিতে পারি না। নবী হোসেনের কণ্ঠ কানে লেগে আছে, ভাই, বাড়িত গিয়া এইসব গল্প বইলেন না। আম্মায় কষ্ট পাইবো...
পারভীনের গান শুনতে গিয়ে যতটা মজা লাগে, গানের শেষে তার বলা কথায় সেইসব ধুয়ে মুছে যায়। ৩ বছর আগের সেই হুহু করা সময়টা ফিরে আসে আবার। পারভীন বলেন, তিনি সৌদি আরবে থাকেন। তার গান গাওয়ার বড় শখ ছিলো। পরিবার সামলাতে গিয়ে সেই শখ ডানা মেলেনি। কাজ করে অবসর সময়ে তাই গান গেয়ে ফেসবুকে দেন। আট বছর ধরে তিনি দেশে আসেননি। মন খারাপ হলে গান করেন। যারা তার গান শুনেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান... তার কোনো ক্ষতি যাতে কেউ না করেন সেই নিবেদন করেন। সহজসরল তার বাক্যগঠন। শহুরেদের জন্য একটু ভদ্রস্থ করতে গিয়ে সেই ভাষা হয়ত কিছুটা হাস্যকর হয়ে উঠে। নীল সামিয়ানার নিচে বসে তিনি গাইছেন, কথা বলছেন। খেয়াল করে দেখি সেটা সামিয়ানা নয়, শাড়ি। দোতলা খাটের রেলিংয়ে শাড়ি বেঁধে তার নিচে বসে গাইছেন। এ কোনো আয়োজন নয়। খাটের কোনায় জমে থাকা পুঁটলিটা, মেলে দেয়া কাপড়টা আড়াল করেছেন এই শাড়ি দিয়ে। আমি দেখে এসেছি তার ঘরে এই খাট ছাড়া, খাটের মাপের বাইরে আর কোনো নিজের জায়গা নেই নিজের জন্য। সিথানে মূল্যবান যা কিছু, হয়ত দুটো টাকা, কিছু গহনা, সেসবের পোঁটলা। গাট্টি বানিয়ে কাপড়চোপড় রেখেছেন পায়ের কাছে... সবই আমার দেখা...
শেষাংশ
উপরের লেখাটুকুন গান শোনার পরপর লিখেছিলাম, আগাতে পারিনি। এসব লেখার জন্য যে শক্ত মন দরকার, কলমের যে জোর দরকার, তার কোনটাই আমার নাই। এটা ব্লগে দেবারও কোনো ইচ্ছা ছিলো না। আজ হঠাৎ করে দেখি তৃষিয়া ইউটিউব থেকে উনার গান আবার শেয়ার করেছে। পারভীনের সাথে আলাপ করতে চাচ্ছে। তাকে ফেসবুক লিংক দিতে গিয়ে আর খুঁজে পাই না। মনে হলো, তিনি আর ফেসবুকে নেই। বাঙ্গাল ফেসবুকারদের মাঝে টিকে থাকা হয়ত সম্ভবও হয়নি। পরে দেখলাম, উনি ফেসবুকে আছেন। তার যে গানের লিংকটা কপি করে রেখেছিলাম, সেটা কোনো কারণে হয়তো মুছে দিয়েছেন। তাই পাচ্ছিলাম না। আধা ঘণ্টা পরে, এখন ডেস্কটপ থেকে সার্চ দিয়ে পেলাম। সম্ভবত আমার ল্যাপটপে কোনো সমস্যার কারণে সার্চ করে পাইনি।
আপনি ভালো থাকবেন পারভীন। ক্ষমা করবেন আমাদের।
মন্তব্য
ঠিকাছে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এই ভদ্রমহিলার গান নিয়ে সুশিক্ষিত ফেইসবুক সেলেব্রিটিরা যা করলো,
উনি জানতে পারলে হয়তো আর গান গাইতেন না।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
পারভিনের গানের শেষের কথাগুলা শুনে মনটা হুহু করে উঠেছিল। অনেক প্রতিকূল পরিবেশে নিজের শখের জন্যে তার যে আকুতি সেটা এই সুবিধাপ্রাপ্ত আমার মনের মধ্যে এসে বিঁধল যেন। নিজের ক্ষুদ্রতা নিয়ে নিরন্তর অজুহাত খুঁজে যাওয়া আমরা কেবল পারভিনদের নিয়ে বৈঠকি রসিকতাই করে গেলাম। মাঝে খেয়াল করতে ভুলে গেলাম নিজেও কবে এক ঘরছাড়া, শেকড়ছাড়ায় পরিণত হচ্ছি।
ধন্যবাদ আলবাব ভাই।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
সহমত
facebook
আমরা খুব নিষ্ঠুর রসিকতা করি।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নুয়ে পড়া শ্রমিকের শ্রমে ঘামে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। গ্রীসের সীমান্তে মাফিয়াদের গুলিতে খুন হওয়া লোকটাও আমার ভাই। অথচ কি তাচ্ছিল্যভরে লন্ডনিদের বাসন মাজা আর আলু-পেয়াজ কাটার কথা, ইতালির লোকদের পণ্য হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয় দেশে !
ফেবুতে আমার যাতায়াত একেবারেই কম। আপনার এ লেখার লিঙ্ক থেকেই পারভীন-এর গান শুনে আসলাম। ওনার গানের গলা ভালো লেগেছে। তবে সেটা বড় কথা নয়। ওনার উচ্চারণ মজাদার। সেটাও কোন বড় কথা নয়। গানের শেষে ওনার কথাগুলি আমার কেমন লাগত, যদি আপনার লেখাটি পড়া না থাকত, সে আমার আর জানার কোন উপায় নেই। কিন্তু সেটাও বড় কথা নয়। তবে? বড় কথাটা - আপনার লেখার উপস্থাপনা অন্তে ওনার গান শোনা, নাকি বলব আপনার লেখার সাথে ওনার গানের যুগলবন্দী - অসাধারণ মনকাড়া, ভালোলাগায় ভরিয়ে দেয়া। ভালো থাকুন পারভিনরা, চলতে থাকুক প্রত্যক্ষে-পরোক্ষে ওঁদের সাথে আপনার পথচলা।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আপনি ভালো থাকবেন পারভিন।
তুমিও ভালো থেকো বাউল।
...........................
Every Picture Tells a Story
ভালো থাকুন পারভিনরা।
দেবদ্যুতি
গানটা দেখেছি। তা নিয়ে সভ্য লোকদের অসভ্যতা দেখেছি আরও বেশি...
- ভোরের বৃশ্চিক।
বেদনাকে বোনের মতো যদিও ভালোবাসি, সাথে রাখি বন্ধুর মতো।
পোড়া দেশ’টা টিকে আছে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো টাকায়, তাদের প্রতি রাষ্ট্র যতদূর সম্ভব নির্মম, সদয় ঋণ খেলাপিদের প্রতি!
আপনি ভাল থাকবেন।
বিমান বন্দরে উনাদের সাথে যা যা করা হয়, উফ
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
পারভীনের চটকদার ছবি ফেসবুকে অনেকবার ঘুরতে ফিরতে দেখেছি। এ নিয়ে ট্রলিং দেখেছি। অনলাইন বুলিইং দেখতে দেখতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে এড়িয়ে যাওয়ার অভ্যাশবশত আগ্রহ প্রকাশ করিনি। গতকার এক প্রিয় বন্ধুর টাইমলাইনে দেখে ভিডিওটায় ক্লিক করলাম। মন খারাপ হয়ে গেল ভীষণ। পারভীনের সাজসজ্জা চড়া, গান রগরগে। কিন্তু তার আন্তরিকতা নিখাদ। অন্যরা কী দেখল জানি না, আমি পারভীনের অসহায়ত্ব, তার আকুলতা দেখে বিপন্ন বোধ করতে থাকি। সে শিল্পী হতে চায়। জীবনের তাড়নায় মধ্যপ্রাচ্যে পড়ে আছে। সেখান থেকে নিজের সবটুকু সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে গান পোস্ট করছে। সেটা নিয়ে তামশা করছে মানুষ। কত নিষ্ঠুর আমরা! ভিডিওটা দেখার পরে পারভীনকে নিয়ে লেখার কথা আমার মাথায় ঘুরছিলো। ভালো হলো আপনি লিখলেন। এত সুন্দর করে লিখতে পারতাম না আমি।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
তোমার লেখাটাও লিখো।
তুমি শেয়ার না দিলে হয়তো লিখতামই না। মধ্যপ্রাচ্যের কথা ভাবলেই আমি অসুস্থ বোধ করি। আমার ভেতরে যা আছে তা থেকে হয়তো ১০ ভাগ লিখতে পেরেছি।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
গানটা আগে চোখে পড়ে নি, বুনোহাঁসের পোস্টেই প্রথম জানলাম। গানটা শুনে মন ভালো হয়ে গেল, গানের গলা অনেক সুন্দর। শেষের কথাগুলো শুনে আবার মনটা খারাপ হয়ে গেল। এখানে হাসাহাসি করার কি আছে সেটা বুঝতে পারলাম না।
পারভীন যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন। মনের আনন্দে গান করুন, ছুটি পেয়ে দেশে আসুন পরিবারের কাছে।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
ফেবুতে গানটি শুনেছিলাম, মেয়েটির কণ্ঠের দৃঢ়তা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। ওর সাহসের বিন্দুমাত্র আমাদের অনেকের নেই। সত্যিই বলেছেন,
সেটা নিয়ে আমরা অনেকেই উপহাস করতে ভালবাসি, আমরা জাহির করতে চাই আমি তোমার চেয়ে সেরা। আপনার লেখাটি মন ছুঁয়ে গেল। ভাল থাকুক পারভীন। মনের আনন্দে মন খুলে গান করুক।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
আগে শুনিনি গানটা। আপনার পোস্ট পড়ে গানটা শুনতে গেলাম। শুনলাম সেই অমানবিক জীবনযাত্রার কথা ভাবতে ভাবতেই। আপনি যে মমতা দিয়ে লেখাটা লিখেছেন সম্ভবত সেই কারণেই পারভিনের গানের কথাগুলোর প্রতিটি বাক্যে বেদনার স্পর্শ পেয়েছি। আবার যদি কোন বন্ধু ব্যাঙ্গ করে কিছু লিখে লিংকটা আমাকে দিত, তখন আমিও হয়তো মেয়েটিকে ব্যাঙ্গের চোখে দেখতাম। আমরা খুব অমানবিক হয়ে গেছি। আজকাল আমরা অনেকেই এরকম তৃতীয় পক্ষ প্রভাবিত যান্ত্রিক জীবনযাপন করি।
পারভিনরা একদিন দেশে ফিরে এসে কাংখিত জীবনযাপন করুক। আপাতত এই কামনা।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ফেসবুকে মানুষকে পচানো একটা ট্রেডিশন এখন । এখানে অনন্ত জলিল , আনিসুল হক সহ সাধারণ মানুষ যাদের প্রফাইল পিকচার হয়তো আনারী ভাবে ফটোশপ করা , এবং পারভীন আপুর মত মানুষদেরকে নিয়ে মজা করা হয় । ধরুন পারভীন যদি আজকে প্রবাসী শ্রমজীবী না হতেন তার প্রতি আমাদের এই সহানুভুতি থাকত ?
আপনার ভাবনাটা ঠিক আছে। কিন্তু আনিসুল হক বা অনন্ত জলিলরে এই কাতারে আনবেন না। সেই হিসাব ভিন্ন।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ভাল থাকুন পারভীন
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
গানটা আমার ভাল লেগেছে। গানের শেষের কথাগুলোর আগেই পারভীনের গল্পটা যেন ভেসে উঠেছিলো তার কণ্ঠে। এ নিয়ে ফেসবুকে ট্রলিং দেখে আসলেই বমি এসেছে। আপনার এই কথাগুলোই ভাবছিলাম যেন। কী ভেবে পরে আর লেখা হয়নি।
আশাকরি অনলাইন বুলি-ইং এর শিকার হয়ে পারভীন থেমে যাবে না।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
মনটা খারাপ কইরা দিলেন, বুকের মধ্যে কী জানি খালি হইয়া গেল।
এই অমানুষের বাচ্চাগো ভীরে অনেক কষ্টে আমরা শ্বাস নেই অপু ভাই, ভাল্লাগে না
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
মাস খানেক আগে দেখেছিলাম, প্রচণ্ড মন খারাপ হয়েছিলো।
সচলায়তনের পক্ষ থেকে পারভিনের একটা সাক্ষাৎকার নেয়া যায় না?
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
একটা সাক্ষাৎকার নেয়া যায়। যদি তিনি রাজি হন। তবে আমি তারে ডিস্টার্ব করার পক্ষে না।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
গানটা এখনো শুনিনি। শুনবো এখন হয়তো, নয়তো পরে আরো। কিন্তু আপনার লেখা ----- কিছু বলার আছে কি? নেই। এটা আমাদের স্বভাব। মন বিকল ছিল, আজ সচলে ঢুকে আরো বিকল হয়ে যাচ্ছি কেবল।
স্বয়ম
গানটা এবং তাঁর কথাগুলো শুনলাম। আপনার লেখাটা পড়ে দৃষ্টিভঙ্গি পালটে যাবার কারণে উপলব্ধির জায়গাটিতে বেশ নাড়া দিয়ে গেল।
লেখাটা না পড়লে হয়তো পুরো গানটা শোনার আগ্রহই হতোনা।
কতটুকু, একেবারেই কতটুকু জানি আমরা!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ছুঁয়ে যাওয়া লেখা
------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।
মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করা মানুষদের কথা শুনলে এতো খারাপ লাগে। কতযে কস্ট করেন তারা। সেই কবেকার জাহাজী জীবন থেকে বাংলাদেশের মানুষ এই দেশ থেকে সেই দেশে শ্রম বিক্রি করে চলেছেন। আমাদের উচিত তাদের সম্মান জানানো। কিন্তু সেটা হয়ে উঠে না।
১৯ শতকে জাহাজে কাজ করা লস্করদের জীবন নিয়ে একটা মঞ্চ নাটকে কাজ করার সুজোগ পেয়েছিলাম, বঞ্চনা আর বঞ্চনা। এই একুশ শতকের মধ্যপ্রাচ্যের নির্মাণ শ্রমিকদেরও সেই বঞ্চনারই জীবন। মুক্তি নাই, মুক্তি মিলবেনা বুঝিবা।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
দেশের বাইরে থাকলেও দেশী কর্মজীবি শ্রেণীর সঙ্গে সেভাবে ওঠাবসা হয়না। এড়িয়েই চলি বলতে গেলে তাদেরকে। শিক্ষা নেই, সামাজিক আচরণে অস্বস্তিকর, কথা বলে শান্তি পাওয়া যায় না! কিন্তু এরাই দেশটাকে টাকা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে, সেইটা কখনো ভুলে যাই না। ভুলে যাওয়ার জন্য যতোটা বেইমান হওয়া লাগে, ততটা হইতে পারিনি এখনো!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
--------
কাইয়ুম
নাজমুল ভাই,
আপনি তো দেশের ভদ্র শিক্ষিত সমাজের কথা বললেন, আসেন বাইরের পাব্লিকরা কি করেন সেইটা বলি, বিদেশে খুব অল্পবয়সে পড়াশোনার করার জন্য আসা, যখন একা ছিলাম তখন কমিউনিটিতে সেরকম মেশা হতো না, কালে ভদ্রে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত খেতে যেতাম। আরেক টু যখন বেশি মেশা শুরু করলাম, তখন দেখলাম, চৌধুরি সাহেবদের আচরণ। কোন কোন চৌধুরি সাহেব তো পারলে, ওরে কে কোথায় আছিস…………. টাইপের আচরণ করেন, কোন অড জব করা লোকজনদের সাথে কথা বলার সময়। নিজেকে অনেকেই মনে করেন, মহারানীর পাঠানো উপমহাদেশে রাজদূত।
আমার মতে, বিদেশে আসার পর এই চৌধুরি সাহেবরা এক রকম মানসিক সমস্যায় ভোগেন। আমেরিকার কথা জানি না, কিন্তু ইউরোপের দেশগুলোতে এক রকম অর্থনৈতিক কাঠামো বজায় থাকায়, চৌধুরি সাহেবরা নিজেদের শান শওকত দেখাতে পারেন না , যেমনটা তারা দেখান দেশে বসে। সেটার জালা মেটান যখন দেশি শ্রমজীবী কোন মানুষকে দেখেন আর তাকে কটাক্ষ করে ।
মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে এইটা নিয়ে লিখি, বিদেশে দ্যা গ্রেট চৌধুরিনামা
........................................................
গোল্ড ফিসের মেমোরি থেকে মুক্তি পেতে চাই
শুধু আমি না, আমার সাথে পুরো জাতি
নতুন মন্তব্য করুন