:: গিয়াস উদ্দিনের পতাকা পুরাণ ::

নজমুল আলবাব এর ছবি
লিখেছেন নজমুল আলবাব (তারিখ: বিষ্যুদ, ২১/০৬/২০০৭ - ৯:৩৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গিয়াস উদ্দিনের শখটা অনেক দিনের। বুকের মধ্যে যত্নে লালন পালন করতে করতে পুষ্ট শখ কখনও পুরন হবে কিনা এই নিশ্চয়তা না থাকলেও গিয়াস উদ্দিন স্বপ্ন দেখার হাল ছাড়েনি। সে স্বপ্ন দেখেই যায়। শখ পুরনের স্বপ্ন।
মানুষের সকল ইচ্ছা পূর্ন হয়না। তবু মানুষ নতুন নতুন ইচ্ছা নিয়ে মেতে উঠে। অনেকেই পুরনো শখ ভুলে যায়। কিন্তু গিয়াস উদ্দিন ভুলেনা। যতদিন যায় শখ বাড়তে থাকে, তাতে চেকনাই লাগে। শখের জেল্লা বাড়ে। শখ পুরনের ফন্দি ফিকির আবিস্কারে ব্যয় হয় গিয়াস উদ্দিন রোজকার কিছুটা সময়। কিন্তু সফল লভেদী বুদ্ধি আবিস্কার করা হয়ে উঠেনা।
অবশেষে এল বুদ্ধি। শানদার এক বুদ্ধি। যখনই এই বুদ্ধিটা মাথায় আসল তখনই শুরু হল সমস্যা। নিজের মাথার চুল নিজেই ছেড়া শুরু করল গিয়াস উদ্দিন। এই ব্যপারটা এতদিন ধরে ঘটছে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে আর তার মাথায় কিনা এতদিন পরে আসল! নিজেকে সে কুৎসিত ভাষায় গালি দিতে লাগল।

একসময় গিয়াস উদ্দিনের মাথা ঠান্ডা হল। সে তার শখ, তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করতে বসল। কিন্তু সেটা মোটেই সহজ নয়। দিব্য চোখে নিজের স্বপ্নের রুপায়ন দেখে তার মনের ডুগডুগি অবিরাম বাজতে থাকায় মন ও মগজকে পুরুপুরি শিতল করা যায়না। অবশেষে অনেক চেষ্টায় গিয়াস উদ্দিন তার কর্মপর্যায় নির্দিষ্ট করতে সম হল।

১৯৯৯ সালের পহেলা মে। সকাল দশটা। গিয়াস উদ্দিন তার বাড়ির সামনে সাত হাত লম্বা, আড়াই হাত পেট মোটা লাল একটা ব্যানার টাঙ্গালো যাতে সাদা হরফে লেখা “বিশ্বকাপে বঙ্গশার্দুল”। মানুষজন এই ব্যানার দেখে পুলক অনুভব করল। বস্তুত: বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ খেলছে, দেশের প্রতিটি মানুষ এই কথা জানে। এবং এজন্য সবসময় মনে আনন্দ অনুভব করে। তার উপর গিয়াস উদ্দিনের এই ব্যানার সবার কাছে আরামদায়ক নিঃশ্বাসের মত মনে হল। সেদিন বিকেলেই হাবিব আলী বাড়ির ছাদে বাংলাদেশের একটি পতাকাও উড়িয়ে দিল। মানুষের প্রিত অনুভব এতে আরও বেড়ে গেল। কিন্তু সেটা বিশ্বকাপ শুরুর দ্বিতিয় দিন পর্যন্ত! কারন তৃতীয় দিনেই অর্থাৎ ষোল মে সকালে গিয়াস উদ্দিন তার দীর্ঘ দিন লালিত শখ পুরন করে ফেল্ল!

সেদিন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং পাকিস্তানের খেলা। এই সুজুগে গিয়াস উদ্দিন তার পেয়ারা পাকিস্তানের পতাকা বাংলাদেশের পতাকার ঠিক পাশেই উড়িয়ে দিল। বিদেশী পতাকা উড়ানোতে উস্তাদ মানুষের জন্য এই ঘটনা তেমন বিকারের নয়। কিন্তু এখানে এটি দৃষ্টি আকর্ষন করল। কারণ পাকিস্তানের পতাকার পাশে বাংলাদেশের পতাকা! তাও আবার প্রায় একহাত ওপরে থাকা পাকিস্তানী পতাকাটা দৃষ্টিকটুই ঠেকছিল।

গিয়াস উদ্দিন পাকিস্তানী পতাকা ওড়ানোর পরেই প্রস্তুতি নিয়েছিল যেকোন রকম পরিস্তিতি মোতাবেলার। কিন্তু অবাক হয়ে গেল সে! পতাকার ব্যাপারে কথা বলার জন্য কেউ এলনা! দু’দিন পার হল, কেউ আসেনা। গিয়াস উদ্দিন আবারও নিজেকে গালমন্দ করে। কেন সে এতদিন ভয় পেল! কেন ওড়ালোনা পেয়ারা পাকিস্তানের পতাকা!

বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে বেশ ক’দিন হয়ে গেল। বর্ষার বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে বাজে রঙে লেখা বিশ্বকাপে বঙ্গশার্দুল ব্যানার। বাংলাদেশের পতাকাও উড়ছে শোচনীয় অবস্থায়। আর কী আশ্চর্য পাকিস্তানী পতাকাটা এখনও টিকে আছে সকল সজিবতা নিয়ে! গিয়াস উদ্দিন এখন প্রায়ই উদাস হয়ে যায়। তার চেহারায় লেপ্টে থাকে বিষাদ। কিন্তু সেটা খুব বেশি সময়ের জন্য নয়। বিষাদমাখা মুখটায় হাসি ফুটে উঠে। গিয়াস উদ্দিন অপার্থিব এক ভালোলাগায় নতজানু হয় চাঁদতারা খচিত পতাকার সামনে।

এই গল্পটা লিখেছিলাম ১৯৯৯ সালে। ছাপা হয়েছিল প্র.আ. বন্ধুসভায়। আরও অনেক লেখার মত এটিও হারিয়ে গিয়েছিল। পরশু রাতে পুরনো কাগজের স্তুপ থেকে এর মূল কপি বেরিয়ে আসে। পড়ে মনে হল এখনও এই গল্পের দিন শেষ হয়ে যায়নি। কিছুটা বদলে দিয়ে দিলাম। এখানে প্রথমে পোস্ট করেছিলাম হাবিব আলীর পতাকাপূরান নামে। পরে আনোয়ার সাদাত শিমুল মূল নামটা মনে করিয়ে দেয়ায় শোধরানো হল।


মন্তব্য

নজমুল আলবাব এর ছবি

মডুমামু এইখানে ফাকিস্তানী ফেলেগটা লাগায়া দিবেন নাকী?

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

দারুণ!!!!!!!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নজমুল আলবাব এর ছবি

ধইন্যাপাতা

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

গল্পটা কি সামহোয়্যারইনে দিয়েছিলেন? আগে পড়েছি কোথাও। তবে পড়ার মজা নোতুনের মত ঝকঝকে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নজমুল আলবাব এর ছবি

নাহ। নিচেতো এই গল্পের বেক হিস্ট্রি বলছি। ১৯৯৯ সালে ছাপা হওয়ার পর এর কথা মনেই ছিলনা। তবে সচলে দেয়ার পর সামহোয়ারে দিছি। @ বলাই

ধুসর গোধূলি এর ছবি

ফটুক ছাড়াই ঠিকাছে নজমুল ভাই। চেনা বামনের পৈতার কী দরকার? লেখাই চিনিয়ে দেয় মূল বক্তব্য। হাবিব আলীদেরকে টেনে টেনে সামনে আনাহোক আরও, আরও বেশী করে চিনিয়ে দেয়া হোক এদের।
_________________________________
<স্বাক্ষর দিমুনা, পরে জমিজমা সব লেইখা লইলে!>

নজমুল আলবাব এর ছবি

এই গল্প লেখার আগে টান দিছিলাম। তখনতো মেন্দামাইরা যাইনাই। আগে টান দিছি তারপরে গল্পাইছি। ৯৯ এর বিশ্বকাপের কথা মনে নাই? পতাকা নিয়া কি হইছিল মনে আছে?

ঝরাপাতা এর ছবি

পাকমন পেয়ার। ভালো লেগেছে।
_______________________________________
পোড়াতে পোড়াতে ছাই, ওড়াতে ওড়াতে চলে যাই . . .


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

কনফুসিয়াস এর ছবি

খুব সুন্দর গল্প।
শিমুল বেশ কিছুদিন আগে এরকম কনসেপ্ট নিয়ে একটা গল্প লিখেছিলেন মনে আছে, ওটাও অসম্ভব ভাল হয়েছিলো।
-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সৌরভ এর ছবি

অসম্ভব ভালো!

------ooo0------
বিবর্ণ আকাশ এবং আমি ...


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নজমুল আলবাব এর ছবি

ঝরা, কনফু এবং সৌরভ ধন্যবাদ আপনাদের। শিমুলেন গল্প পড়েছি। অসাধারন। সেই তুলনায় এইটা নিতান্তই কাচা হাতের কাজ।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

মূল লেখাটা ঝাপসা ঝাপসা মনে পড়ছে। এখন কতটুকু এডিট করেছেন ধরতে পারছি না। ভুল না বললে, আপনার ঐ লেখাটা ছিল - 'গিয়াসউদ্দীনের পতাকাপূরণ" অথবা "গাউসুলের পতাকাপূরণ" শিরোনামে।
কোনটা কাঁচা হাত, পাঁকা হাত - তা তো অনেক আগেই প্রমাণিত। স্যালুট , লেখাটির জন্য।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

শিমুল লেখো না ক্যা ???
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

বদ্দা, কার জানি বদ্দোয়াহ লাগছে।
লেখার কিছু পাইতাছি না।
একটু পানি পড়া পাঠায়ে দিয়েন।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কচি হাতের কলম থেকে হাসি

সেতু ভাই'রা কি ইন্টারনেট ব্যাবহার করেনা? কিংবা দীন? লীলেন মিয়ার খবর কি?

এদের কে এখানে পেলে ভালো লাগতো
--------------------------
আমি সত্য না হইলে গুরু সত্য কোনকালে?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নজমুল আলবাব এর ছবি

সেতু ভাই আমার এখানে এলে মাঝেমাঝে দেখে। লীলেন ভাইতো পুরানা টেক পাপি। কিন্তু এখন সে নাটক বানানোতে ব্যস্ত! দীন ভাইয়ের লগে এইসব নিয়া আলাপ হয়নি।

নজমুল আলবাব এর ছবি

ঠিক শিমুল। গিয়াস উদ্দিন ছিল নাম। আমি আসলে পুরাটাই ভুলে গিয়েছিলাম। আপনি বলার পর মনে হল। তখন ইচ্ছা করেই মতি, গিয়াস এইসব নাম দিতাম ভিলেনগুলার। গিয়াস ভাই কখনই সেইসব নাম কাটেন নাই।

* শিমুল বলে দেয়ার পর মূল নামটা প্রতিস্থাপন করা হল।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হা হা।
আমিও সেরকম ভাবছিলাম। গিয়াসের সাথে গাউসুল মনে পড়ার কারণ হলো, গাউসুল ইসলাম পিয়াস কিংবা এরকম নামে আরেকজন লিখতেন রেগুলার।
ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।