ধর্মকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দেয়া উপমহাদেশীয় মুসলমানরা ভেবেছিলেন মুসলমানদের কথিত হারানো গৌরব আবার বুঝি ফিরে আসবে সাদ্দামের হাত ধরে! সম্ভবত আরবেও এরকম একটি ধারণা ছিলো। তারা আমাদের মতো হয়তো মুসলমান কেন্দ্রিক চিন্তা করতো না। সাদ্দামের মাধ্যমে আরব পূণর্জাগরণের একটা প্রচ্ছন্ন স্বপ্ন ছিলো আম আরবীয়দের। আমাদের মসজিদে তবলিগ করতে আসা কোন এক আরবদেশীয় তরুণ ভাঙা ভাঙা বাংলাতে সেই স্বপ্নের কথা আমাদের বলেছিলেন। যতটা মনে করতে পারি, তিনি একটিবারের জন্যও মুসলমানদের কথা বলেননি। বার বার বলছিলেন আরবের কথা। বাংলাদেশেই ডাক্তারি পড়তে থাকা সেই আরব বাগদাদের প্রাচীন সভ্যতার কথা বলেছিলেন, বাদশাহ হারুনুর রশিদের গল্পের ছলে যার অনেকটাই আমরা জানতাম। যতটা জানতে পেরেছি, সাদ্দাম শব্দটার অর্থ হলো যে বেশি বেশি আঘাত করে! অবশ্য এটা কিছুই না, আমরা হিটলার, ভুট্টো এসব নাম রাখতেও বেশ আগ্রহী!
ধুরন্ধর সাদ্দাম দেশের বাইরে যেতেন খুব কম। সেসময় সেটা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেলো। তার হয়ে জাতিসংঘে গরম গরম বক্তব্য দিয়ে তখন সামনে চলে এলেন তারিক আজিজ। তখনকার ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যুদ্ধ নয় শান্তি চাই টাইপ বাণী আওড়ে যেসব ধর্মপ্রাণ সাদ্দাম বিষয়ে মিউ মিউ করতেন, ভাব নিতেন তারা এরকম যুদ্ধবাজকে পছন্দ করেন না, তারা নৃশংস সাদ্দামকে পাশে ঠেলে দিয়ে তারিক আজিজকে নিয়ে মেতে উঠলেন। দিনে দিনে মুসলিম সমাজে তারিক আজিজ সুশীল ভাবমূর্তি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেন।
তারিক আজিজকে প্রিয় তালিকাতে স্থান দেয়াদের মন ভেঙে খানখান হয়ে গিয়েছিলো কিছুদিন পরেই। যখন আবিষ্কৃত হলো, এতো চমৎকার একটি নাম, গৌরবময় স্পেন বিজয়ের মহান সেনাপতির নামে যার নাম, সেই তারিক আজিজ আসলে মুসলিম নয়! তিনি খ্রিষ্টান। খ্রিষ্টান হবার আগে তিনি একজন গর্বিত আরব, তাই তার নামটাও আরবিতেই হয়েছে।
প্রথম ইরাক যুদ্ধ যখন শেষ হলো। স্বাধীন কুয়েতে গেলেন তখনকার মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াকার বুশ। কুয়েতের শেখ সাবা আরবিয় কায়দায় বুশের গালে চুম্মা দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানালেন। বুশকে দেয়া হলো ব্যাপক সম্মান। কুয়েতের নাগরিকত্ব দেওয়া হলো। বুশকে এজন্য একটি আরবিয় নামও দেওয়া হলো, আব্দুল্লাহ।
কুরাইশরা যখন ক্বাবা’র সংস্কার করেন, তাদের কাছে পুরো ঘর নির্মাণের মতো টাকা ছিলো না। ক্বাবার মূল সীমানা চিহ্নিত করে অপেক্ষাকৃত ছোট মাপের ঘর তৈরি হয়। বাড়তি যে অংশটা রয়ে গেলো, সেটুকুকে হাতিম বলা হয়। মুসলমানদের কাছে খুবই সম্মানিত এই অংশ। মূল ক্বাবায় রাজা-বাদশাহ ছাড়াতো কেউ প্রবেশ করতে পারেন না। সাধারণ মানুষ এই হাতিমে নামাজ আদায় করেন। হাতিম মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি প্রচলিত নাম। আমাদের সিলেটে একজন আওলিয়া ছিলেন, হাতিম আলী। বিশাল মাজার আছে এখনও। উনার নামে স্কুল আছে, একটা পাড়ার নাম হাতিমবাগ। দাতা হাতিম তায়িতো প্রবল জনপ্রিয় এক চরিত্র। আরবের এই দানশীল ব্যক্তিকে সম্মান করা হয়। তায়ি গোত্রের নেতা এই মানুষটি কবিও ছিলেন। আরব্য রজনীর গল্পেও আছে হাতিমের কথা। ইনি খ্রিষ্টান ছিলেন।
মহা নবীর বড় দুঃখগুলোর একটি ছিলো প্রিয় চাচা আবু তালিবের ইসলাম গ্রহণ না করা। তিনি পৌত্তলিক হিসাবেই মৃত্যুবরণ করেন। আমার দুঃসম্পর্কের এক বন্ধুর নাম ছিলো তালেব। ক্লাস নাইনে রেজিস্ট্রেশনের সময় সেই নামকে তালিব বানিয়ে দিলেন ধর্মশিক্ষা স্যার। বললেন, নবীর চাচার নাম, অশুদ্ধ করে কেনো লিখো? আমরা এরপরেও ওকে তালেব বলেই ডাকতাম।
সিলেটে পীর আওলিয়াদের ছড়াছড়ি। এক শাহজালালের সাথেই এসেছেন ৩৬০ জন। বেশিরভাগেরই আরবি নাম। কিন্তু কাজল শাহ, সুন্দর শাহ কিংবা শাহ পরাণের নাম নিয়ে খটকা লাগে। ইয়েমেনে এই নাম কেমন করে গেলো? বিশেষ করে কাজল নামের খাঁটি ‘মালাউনি’ নাম! সুন্দর, পরাণ এসবও-তো বাংলা নাম, যেটাকে হিন্দুয়ানী বলতেই লোকজনে পছন্দ করে। আরবি ভাষা-সাহিত্য নিয়ে পড়ালেখা করা একজন শাহ পরাণের নামের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। এটা নাকি পরাণ নয়। উনার নাম ছিলো ফারহান বা ফরহান। সিলেটী বাংলার প্রভাবে ফরহান একসময় ফরাণ এবং পরে পরাণ হয়ে যায়। (এটা হওয়া সম্ভব। শাহ পরাণ সিলেটের যে দিকটায় আছেন, মানে শহর সিলেটের পূর্বদিক। এই দিকের মানুষ নাম বিতলানোতে উস্তাদ। আমার জন্ম এর পাশাপাশি এক এলাকায়, সেই গ্রামে সিরাজ নামের এক লোককে সিরাই বলা হতো। একজনের নাম রুবেল, রু উচ্চারণের পর হালকা একটু থেমে বাকিটা বলার যে স্টাইল... আর কোথাও সেটা শুনিনি।) প্রথমে ভাষাতাত্বিক উত্তর ভেবেছিলাম। উনি বললেন তার বলাটাই সত্যি। যেহেতু ইনি শাহজালালের ভাগ্নে ছিলেন, তাই উনার নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। যেমন নাসিরুদ্দিনের পরিচয় পুরোটাই পাওয়া যায়। বাকি অনেকেরই সেভাবে পাওয়া যায় না। তাই কাজল বা সুন্দর শাহর আসল নামগুলো আর জানা হয় না। অবশ্য এমনও হতে পারে, এরা আদতে ভারতীয়। সিলেটে আসার পথে কোন একসময় শাহজালালের সাথে যোগ দিয়েছিলেন। আরবের শাহজালাল তাদের নাম বদলানোর প্রয়োজন মনে করেননি। যেমন করে মহানবীও এসব নিয়ে মাথা ঘামাননি। তাই মক্কা বিজয়ের পরে কুখ্যাত আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহন করলেও তার নাম বদলানো হয়নি। নামটাও খারাপ কিছু না। আমাদের কলেজে শিবিরের এক নেতার নাম ছিলো সুফিয়ান। ইসলামের সৈনিক নিশ্চয় খারাপ নাম হলে সেটা বদলে ফেলতো। আমার আপন মামার নাম একেবারে খাপে খাপে আবু সুফিয়ান। উনারে মাঝে মাঝে সুফিয়ানের বাপ বলি আমরা। তিনি হাসেন। অবশ্য আমার সব মামা কারো না কারো বাপ হন। সবার নামের আগে একটা করে আবু লাগানো!
আবু’র কথা আসাতে মনে পড়লো ইবনের কথা। ইবনে মিজান নামের একজন চলচ্চিত্র পরিচালক ছিলেন। তখন রেডিওতে নাজমুল হোসেইন আর গাজী মাজহারুল আনোয়ার সিনেমার বিজ্ঞাপন করতেন। তারা গমগমে গলায় বলতে ইবনে মিজানের সম্পূর্ণ রঙ্গিন সিনেমা... সেটা ইকো করতো। ধুন্ধুমার অবস্থা। আমাদের ক্লাসের মিজান সেসব শুনে তার নামের আগে একটা ইবনে লাগিয়ে নিলো! হাফিজুর স্যার ওরে জিজ্ঞেস করলেন, ওই, তোর বাফর নাম কিতা? সে বলল আব্দুল কুদ্দুস। স্যার সবার খাতা দেখা শেষ করে ওর খাতাটা তুলে নিয়ে বললেন, তোরে যদি আল্লায় ছেলের বাপ বানায়, তাইলে সেই ছেলের নাম হবে ইবনে মিজান, মানে মিজানের পুত্র। কিন্তু তুই হবি ইবনে কুদ্দুস... স্যার এরপরে আর কি বলছেন মনে নাই, আমরা ব্যাপক বিক্রমে মিজানরে এরপর থেকে চান্স পেলেই ইবনে কুদ্দুস ডাকতাম।
ইবনে শব্দটার মাঝে মুসলমান গন্ধ নিয়া পুলকিত হবার কিছু নাই। এটা আরবিয় রীতি। তারা অমুকের পুলা তমুক বলে পরিচিত হতে এবং দিতে পছন্দ করে। খালিদ বিন ওয়ালিদ উহুদের যুদ্ধে কুরাইশদের হয়ে মুসলমানদের কি মাইরটাইনা দিলেন। পরে মুসলমান হয়ে সেই খালিদ বিন ওয়ালিদই রয়ে গেলেন তিনি। নাজরানের খ্রিস্টানদের সাথে মহানবী যে চুক্তি করেছিলেন তাতে উনার নাম লেখা ছিলো মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আর বিপক্ষের নাম ছিলো সাইদ ইবনে হারিত ইবনে ক্বাব। আরবদেশে গিয়ে উমর কিংবা ওসমান বললে কেউ চিনবে না। উমর বিন খাত্তাব আর ওসমান বিন আফ্ফান বলতে হবে। আলীর নামের সাথে উনার পৌত্তলিক পিতা আবু তালিবের নাম জুড়ে দেয়া থাকে সবসময়।
আমার নিজের একটা ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি টাইপ নাম ছিলো। বৃত্ত ভরাটের ঝামেলা আর পরে লেখক জশোন্মুখতায় সেসব কালের গহ্বরে হারিয়ে গিয়েছে। আম্মার এক চাচাতো ভাইয়ের নামও লেখক হবার ফেরে পড়ে হারিয়ে যায়। তিনি পরে সাংবাদিক হন। প্রেসক্লাবের আড্ডায় উনারে তার হারানো নাম বলতে বললাম, অনেক কসরত করেও সেটা মনে করতে না পেরে বললেন, দুঃখজনক!
পাশের বাড়ির 'নাজমার'মা' চাচীরে আমাদের ছেলেরা 'নাজমার'মা' দাদী ডাকে। আম্মা ডাকেন 'নাজমার'মা'... উনার নামটা জানা হলো না কোনদিন!
মন্তব্য
লেখা জম্পেশ, ৫ তারা।
তারিক আজিজ নামটা আমি অ্যান্টিবায়োটিকের মত ব্যবহার করি (নামের মধ্যে আরবি থাকা/ মুসলিম নাম এসব নিয়ে যাদের বেশি মাথাব্যথা তাদের উপর)। সাথে আরেকডোজ দেই, মেঘওয়াতি সুকর্নপুত্রি আর সিসিলো বামবাং।
শুভেচ্ছা
আমার স্টকেও আরো ছিলো। এই বিষয়ে বহুবছর ধরে সাধনা করে চলেছি। কিন্তু সব লিখলে কল্লা ঝামেলায় পড়ে যেতে পারে।
মেঘবতীকে চিনলাম। বামবাং ভাইয়াটা কে?
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
একটু ভুল হয়েছে। সিসিলো না, সুসিলো হবে।
পুরো নাম সুসিলো বামবাং যুধানো (সুসিলো অর্থ ভ্দ্র/সুশীল! ; যুধানো এসেছে যোদ্ধা থেকে)।
নামটা জাভানিজ।
বামবাং ভাইয়া মেঘাওয়াতি/মেঘবতীর পর দুই মেয়াদে ১০ বছর (২০০৪-২০১৪) ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
https://en.wikipedia.org/wiki/Susilo_Bambang_Yudhoyono
শুভেচ্ছা
এইবার বুঝলাম।
বিখ্যাত ক্রিকেটার শিব নারায়ন চন্দ্র পালকে চিনেন?
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
লেখাটা অসাধারণ হইছে। ম্যালাকিছু জানলাম।
আমাদের এই আরবী নামের ফেটিসটা ভালো লাগে না। বাংলায় কত সুন্দর সব নাম সম্ভব! মজার ব্যাপার হলো আমরা যেভাবে আরবী নাম রাখি, আরবদের নাম সেরকম না। তাই কোথাও নামের তালিকা দেখলে আরবী নাম হলেও কোনটা বংলাদেশী সেইটা সহজেই অনুমান করা যায়।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
মুহাম্মদের লগে আহমদ লাগানো নাম আমাদের ছাড়া আর কারো হয় না।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ভালো লেগেছে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যবাদ
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
খালি আঙ্গুল উচা করে কেটে পড়লে চল্পে? পপ্পন খাই দেখেন না?
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
পপ্পনে ডিস্টাপ কল্লামনা আরকি।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
সুন্দর লেখা।
দেবদ্যুতি
ধন্যবাদ
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আমার বাচ্চাদের নাম রাখবার সুযোগ আমি পাইনি। বাবার ইমোশনের মূল্য দিতে যেয়ে বাবার ঠিক করে দেয়া নামই আমার বাচ্চাদের জন্য রেখেছি। বাবা মানে আমার শ্বশুর পুরো এগারটা দিন ছেলের সাথে পালা করে হাসপাতালের এনআইসিইউ’র বারান্দায় নির্ঘুম রাত আর ক্লান্তিহীন দিন কাটিয়েছেন তাই তিনি যখন নাম রাখলেন আমি কিছু বলতে পারিনি। আমার মেয়ের বেলায়ও প্রায় একই অবস্থা। মনের মাঝে কোথায় যেন মাঝে মাঝে খচখচ করে। আবার বাবা যখন নাতি-নাতনির নাম রাখার গল্পটা খুব তৃপ্তি নিয়ে করেন তখন তার ছেলেমানুষি দেখে সব ভুলে যাই।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
আমার নাম রাখার সুজোগ যেমন আমার বাপ মা পান নাই, আমিও তেমন নিজের ছেলের নাম রাখতে পারিনি। কাটাকাটি।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নামাবলীর নানারুপ নামকরণের নামচা খুব ভালো লেগেছে। ইবনে আর আবু -র ব্যাখ্যাটা অনেক উপভোগ করেছি। আমাদের দেশে এদুটোর অর্থ না বুঝে ব্যবহারের উদাহরণ খুব কাছ থেকে দেখেছি ।
ক্লাসে এক মেয়ের নাম ছিলো নূর জান্নাত,সৌদি ফেরত বাংলা স্যার একদিন বললেন, “এই তোর নাম দিয়া তো কুন্তা বুজা যায়না, আলো-বেহেশত্। ইতা কিতা। তোর নাম লেখবে নূর-এ-জান্নাত মানে বেহেশত-র আলো।”
এভাবে ওর নামটা বদলে গিয়েছিলো।
Jaraahzabin
কুন্তা বুঝার দর্কার নাইতো, আরবি শব্দ ওইলেউ ওয়। আমার এখ তালৈর নাম মোহাম্মদ কেয়ামত। এবলা ঠেলা বুঝইন।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আমেরিকায় আসার পরে যেই কতিপয় আরবের সাথে পরিচয় হয়েছে তাদের অনেকেই অবাক হয়েছে মেয়ে হওয়ার পরে কেন আমি নাম পাল্টায়ে আবু আনুভা নাম নেই নাই! আমাদের দেশে অনেকেই ধারণা করে, আরবী নাম রাখা মনে হয় সওয়াবের ব্যাপার, তবে সময় এবং চিন্তা-ভাবনা পাল্টাচ্ছে, বাংলা নাম জনপ্রিয় হচ্ছে।
এদিকে না জেনে সুলেমানি আবেগে আরবী নাম রাখার কিছু সমস্যাও আছে। সেই সমস্যায় পরেছিলেন পাকিস্তানের সৌদি রাষ্ট্রদূত আকবর জিব, যার নামের আরবী অর্থ "সবচেয়ে বড় শিশ্ন" হওয়ার কারণে সৌদি সরকার তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে আর গ্রহণ ই করেনাই! [১]
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
আপনারে এখন থেকে আবু আনুভাই ডাকুম!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
কিন্তু আবু আনুভা ভাই, এইখানে একটা বিষয় আছে। সব আবু সম্ভবত আব্বা না। আবু বকরেরতো বকর নামের কোন ছেলে নাই। আবার আবু তালিবেরওতো তালিব নামের পুত্রের দেখা পাই না!
আমার দোস্ত আছে, জামাল নাম। জিন্দেগি কাটায়া দিলো উস্ট্র নাম শোনে শোনে।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ঠিকাছে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
কল্লার ডরে হাত খোলে কিবোর্ড চালানো গেলোনা।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
বাংলাদেশে যে নামটা সবচে' বেশি সংখ্যক মানুষের আছে সেটা আরবীতে محمد , বাংলায় এটাকে আমরা কী বলি/লিখি?
১. মোঃ
২. মোহাঃ
৩. মোহাং
৪. এম
৫. এমডি
৬. মোহাম্মদ
৭. মুহাম্মাদ
৮. মুহম্মদ
৯. মহম্মদ
১০. মহামেদ
একই নামকে বাংলাদেশের লোকজন ইংলিশে লেখার সময় কী লেখে?
1. Md.
2. MD.
3. M.
4. Mohammed
5. Mohammod
6. Muhammad
7. Mohd.
8. Mohamed
বাংলা এবং ইংলিশে আরো ভ্যারাইটি থাকতে পারে, তবে এগুলোই বহুল ব্যবহৃত। দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশী মুসলিমরা তাদের কাছে সবচে' সম্মানীয় জন, যার নামে নিজেদের নাম রাখে, সেই রাসুল (দঃ)-এর নামটি তারা বাংলা বা ইংলিশে সঠিকভাবে লিখতে বা উচ্চারণ করতে অক্ষম। এই লোকগুলি যখন নামের হিন্দুত্ব বা মুসলমানীত্ব নিয়ে বিদ্যা জাহির করে তখন করুণা হয়।
আরবী ভাষায় কোন শব্দের আদ্যবর্ণ স্বরচিহ্ন ছাড়া হতে পারে না। অথচ আমরা সততই রহমান, রহিম বলে/লিখে থাকি। আরবী স্বরচিহ্ন তিনটি - ফাত্হা (যবর) = া, কাস্রা (যের) = ি ও দাম্মাহ্ (পেশ) = ু। অথচ আমরা আরবী শব্দে সততই ি-কারের বদলে ে-কার বলে/লিখে থাকি। মাখরাজ, ইদগাম, গুন্নাহ্-এর জটিলতাতে আর গেলাম না।
আমার এক সহকর্মীর কন্যার নাম ছিল সাদিয়া বিনতে জেনিফার। আমি তাকে বললাম, আপনার বা আপনার স্ত্রীর নামতো জেনিফার নয় তাহলে মেয়ের নাম 'বিনতে জেনিফার' হয় কী করে? তিনি খুব মনোক্ষুণ্ন হলেন এবং আমাকে বললেন যে, নামটা তার পিতা রেখেছেন এবং তিনি ভালো করে অর্থ জেনে বুঝেই রেখেছেন। এমন ভুরি ভুরি উদাহরণ দেয়া যাবে।
ভুল অর্থের, ভুল বানানের, ভুল উচ্চারণের নাম চারপাশে এতো বেশি যে বলার মতো না। কেউ কেউ বলেন নামের বানানে ভুল নেই। কিন্তু তারা এটা ভাবে না যে, ইংলিশে John-কে কখনোই Jhon বা Jon বা Gon বা Zon লেখা যাবে না।
আমি বাংলা, ইংলিশ, আরবী, ফারসী কোন ভাষাতে নাম রাখাতেই সমস্যা দেখি না। তবে নামটা যে ভাষার তার বানান, উচ্চারণ সেই ভাষানুগ না হলে এটা একটা অর্থহীন জিনিসে পরিণত হয়। মানুষ যেহেতু সাধারণত নিজে নিজের নাম রাখতে পারে না, তাই একজন শিশুকে একটা অর্থহীন বা ভুল বা বিকৃত নাম দিয়ে তার দায় সারাজীবন বহন করতে বাধ্য করানোটা সঙ্গত বলে মনে হয় না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
পাণ্ডবদা, আপনি মন্তব্য না করলে ব্লগগুলো নিষ্প্রাণ থেকে যায়। আল শব্দটা নিয়ে লিখতে চাইছিলাম। আরও অনেক কিছুই বলতে চাইছিলাম। মুসার ভাই এরন আর জেরুজালেমের জ্যাকবের কথাও মনে পড়েছে। বল্লাম না।
আমি নিজে মোহাম্মদ লিখতাম। আব্বা লিখতেন মোঃ। আমার ছেলের পাসপোর্ট আসার পর অবাক হয়ে দেখলাম সেখানে একটা এমডি লাগিয়ে দিয়েছে এরা নিজ দায়িত্বে! কিছু করার সময় নাই তখন আর। ৫ বছর ছেলেটারে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়েই কাটাতে হবে।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আমারটা বাদ পড়সে। আমি লিখি muhammed.
আরেকটা জিনিস যোগ করতে ভুলে গেছি। ইংরেজিতে অনেকের নামের প্রথমাংশ হল MD
মিডলনেম সংক্ষেপ করার রীতি আছে, কিন্তু প্রথমাংশটা সংক্ষেপ করাটা কিছুট বিচিত্র ঠেকে বিদেশিদের কাছে।
পাশাপাশি অনেকে অবাক হয় যে, ভাওয়েল ছাড়া নাম কিভাবে উচ্চারণ করব? আবার অনেকে শুধায়, ডাক্তার নাকি?
শুভেচ্ছা
পাণ্ডবদা এটা নিয়ে বল্লেন উপরে।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
দারুণ লেখা।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নাম রাখার ব্যাপারে আরব দেশ বা পশ্চিমা দেশ কিংবা পুবের দেশগুলাতে একটা সংস্কৃতি বা রীতি আছে। বাপের নাম বা বংশের নাম যেটাই হোক। কিন্তু আমাদের দেশে পুরোটাই হুজুগের ব্যাপার মনে হয়। হুজুগে পড়ে বাঙালী নারী হিজাব পরে, আরবী নামেও সেই হুজুগ।
আরেকটা হুজুগ হলো বাপ যদি বিখ্যাত কিছু হয় তার নাম সাথে সাথে চলতে থাকবে তিন পুরুষ ধরে, এমনকি সে রাজাকার হলেও। যেমন আমাদের ফকা চৌ> সাকা চৌ>ফাকা চৌ......... এই মহান 'কা চৌ' কেয়ামত তক চলতেই থাকবে মনে হচ্ছে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
বিয়ের পড়ায় যে কাজী, সেরকম এক কাজীর বাড়ির নাম কাজী ভিলা, তার পুলা মাইয়া সক্কলের নামের লগে চদ্রী-সৈয়দের মতো কাজী লাগায়া নিছে।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আপনার এই বোলগের নামটাতেই হিন্দুয়ানি গন্ধ আছে, হালাল নাম দ্যান
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আল নামাউন দিলে চলবো?
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ভালো লাগলো লেখাটা, বরাবরের মতোই। তবে আরব্য যেই সকল অঞ্চল ফরাসী ঔপনিবেশ ছিলো, সেখানে এখনও অনেক মুসলমানের নাম ফরাসী ভাষায় হতে দেখা যায়।
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
হ, বাবাইর নাম রওনক। এটা আরবী না।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
প্রাসঙ্গিক আরেকটা ঘটনা মনে পড়ল। একবার এক বিদেশি মহিলার সাথে আলাপ হচ্ছিল। সে বলল, আমি জানি তুমি ফ্যামিলির সবাইকে চেন। কিন্তু তোমাদের লাস্ট নেম আলাদা হলে বাইরের মানুষ কি করে বুঝবে একই পরিবারের সবাই?
ভাগ্য ভালো যে সেই মুহূর্তেই যুতসই জবাবটা মনে এসেছিল: "আবার তোমাদের অনেকেরই লাস্ট নেম এক হয়ে যায়, যদিও এক পরিবারের না তারা। অনেক অফিসেই অনেকগুলো হ্যারিস, বার্গ, স্মিথ, লাস্ট নেম দেখে আমি জামাই-বউ মনে করে ভুল করতাম। "
তারাতো টুপ করে গামাইর নাম বউয়ের নামে জুড়ে দেয়। আমার বউয়ের নামে গামাইর নাম নাই দেখে খালি জিগায়, ক্যান নাই, ক্যান নাই... মরজ্বালা টাইপ অবস্থা।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
অনেক তথ্যবহুল লেখা। ধরনটা মজা লাগল। জানা হলো বেশ কিছু তথ্য। আমার নিজের পছন্দ বাংলা নাম। তা সে লোকে যতই হিন্দুয়ানী বলুক না কেন।
নতুন মন্তব্য করুন