সংসারি মানুষরা সব স্বার্থপর হয়। খুব খুব স্বার্থপর...

নজমুল আলবাব এর ছবি
লিখেছেন নজমুল আলবাব (তারিখ: শনি, ২৫/০৮/২০০৭ - ৯:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মঙ্গলবার সন্ধায় যখন ভাবি বলেন, তুলি চল ঢাকা থেকে ঘুরে আসি। আমি সামনে বসা। ভাবছি, আর মানুষ পায়নি... শেষ করতে পারিনি সেই ভাবনা, আমাকে অবাক করে রাজি হয়ে যায়! সে যাবে... এমনকি আমি যাব এই ঘোষনাটাও দিয়ে দেয়! প্রচণ্ড ঘরকুনো তুলির এই আচরনে বেশ মজাই পাই। জিজ্ঞেস করি, কিভাবে? ছুটি নিলেনা... আমারওতো ছুটি নিতে হবে। বেশ একটা ঝামটা খেলাম। তারটা সে সামলাবে। আমার যেহেতু ছুটি নাই তাই অফিসে এমন ব্যবস্থা করি যাতে ফোন দিয়ে কাজ সারা যায়!

সন্ধায় অফিসে চলে আসি। তাদের পরিকল্পনা আর আমার জানা হয়না। মধ্যরাতের আগে আগে ঘরে ফিরে দেখি ব্যাগ গোছানো শেষ। আমাকে জানানো হল, আমার কাপড়ও ঢোকানো হয়েছে সেই ব্যাগে! কি পাগলামি বলে উড়িয়ে দিতে চাই। মান অভিমানের গন্ধ পেয়ে কথা বাড়াইনা। আর খুব ভেতরে, মনের ভেতরে একটা লোভও হয়। কতদিন ছুটি কাটাইনা। এতদিনেও ছেলেটাকে নিয়ে কোথাও বেড়ানো হলনা।

বুধবার ভোরে ছেলে আমাকে ডাক দেয়, বাবা উঠ... আমরা ঢাকাত যাই... সেজ ভাইয়ায় গাড়ি আনছে... ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলি, তুমি যাও বাবা। বিকালে আসব আমি। সে বায়না ধরে, না এখন... আমি তাকে মানাতে পারিনা। আম্মা আসেন। বলেন, দাদু চল আমরা যাই। বাবা বিকালে আসবে। ছেলে আমার কি বুঝে জানিনা। তবে আমাকে আর ডাকেনা।

বৃষ্টির মাঝে দাদার কোলে চড়ে মাইক্রোতে চড়ে বসে বাবাই। আম্মা তার দুই বউ আর দুই নাতি নিয়ে ঢাকা রওয়ানা দেন। দশটার দিকে অফিসে চলে আসি। ম্যানেজার সাহেবকে খবর দিই। এই সময়টায় উনি ঘুমে থাকেন। ভোরে পত্রিকা বাজরে দিয়ে ঘুমাতে যান। তবুও ডাকি। খবর পেয়ে দ্রুত আসেন। বলি স্বপন সাহেব আমার ছেলেটাতো ঢাকায় চলে গেছে। এবার আমাকে যেতে হবে। আপনি অফিসটা একটু সমঝে নেন। আমি মামাকে বলে যাব। ( মামা= ইকবাল সিদ্দিকী, আমাদের উপদেষ্টা সম্পাদক।) কথা বলতে বলতে টিভি ছাড়ি। সি এস বি নিউজে যাই। ওমা একি। ঢাকাযে রণত্রে। দ্রুত কম্পিউটার অন করেই বিডি নিউজ, ব্লগ সবকটা উইন্ডো খুলে দেই... সবখানে একি খবর। খবরের মানুষ। এসবে কখনই ঘাবড়াইনা। বরং একটা উল্লাসই খেলা করে মনের ভেতর বুঝিবা। নিউজের গন্ধে এমনটা মনেহয় অনেকেরই হয়। কিন্তু আজ কেমন ঘাবড়ে গেলাম। ফোন করি ভাবির ফোনে। তুলিকে এসব বলা ঠিক হবেনা। ঘাবড়ে যাবে। তারা তখন উজানভাটি পাড়ি দিচ্ছেন। জিমেইলে পিয়াল ভাই যেসব কথা বলেছিলেন সেটুকু পাচার করি। তাদেরকে টঙ্গি দিয়ে শহরে ঢুকার কথা বলি। যদিও সেই রাস্তাটা কতটা নিরাপদ সেটা জানিনা। তবু আন্দাজে ধরি। কারন খবরতো সব শহরের।

এরিমাঝে সিলেটের খবরও আসতে শুরু করেছে। শাবিতে মিছিল। আমি বেশি পাত্তা দিইনা। এমসি কলেজের খবরটা জরুরি। সিলেটে কিছু হলে সেখানেই হবে। মদনকেও হিসাবে ধরি। একটু পরেই খবর আসে। এমসি কলেজে মিছিল চলছে। কিন্তু র‌্যাব-৯ হেডকোয়ার্টার কলেজের খুব পাশে থাকায় ছাত্ররা বেশি সুবিধা করতে পারেনি। খুব দ্রুত তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। নিজের কাজগুলো খুব দ্রুত সামলে নিই। এই প্রথম পেশার প্রতি টানহীন হয়ে পড়ে নজমুল আলবাব... বার বার মনে হতে থাকে, আহা ছেলেটা এভাবে বল্ল, কেন গেলামনা সাথে। সেইতো বিকালে যাব, তবে কেন কয়েক ঘন্টা আগেই গেলামনা... মুহুর্ত যায়না আমি ফোন করি। এখন কোথায়? উত্তর শুনে মনে হয় মাইক্রোর ড্রাইভার হারামজাদাকে জোরে একটা থাপ্পড় দেয়া দরকার। সে এমন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চালায় কেন... ভাবি আমাকে শান্তনা দেন। নিশ্চিন্ত থাকতে বলেন। তুলি আমাকে আবারও অবাক করে বলে, আমি যেন চিন্তা না করে বিকালে বাসে উঠার ব্যবস্থা করি। আগে আগে টিকেট না কাটলে ভাল যায়গায় সিট পাবনা এটাও মনে করিয়ে দেয়।

ওরা ঠিক মতো দুপুরের পরেই মীরপুরে পৌছে যায়। ঘরে ঢুকেই আম্মা ফোন করেন। আর চিন্তা করনা।

ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকি। জরুরি কাজ গুলো স্বপন সাহেব বুঝে নেন। টিকিটের জন্য বাসের কাউন্টারে ফোনটাও তিনি করেন।

টিভি চলছে। খবর দেখছি... কেমন একটা দুলোনি টের পাই রক্তে... কিন্তু সেই দুলোনিটা বেশিন আমাতে স্থায়ি হয়না। কারন আমি জেনে যাই অনির্দিষ্টকালের কার্ফিউ জারি করেছেন ‘সরকার বাহাদুর’! আমি বুঝে যাই বাবাইটা আমার একাই কাটাবে ঢাকায় বন্দি জীবন। এবারও তুলির বেড়ানো হলনা... বিকাল পাচটার দিকে ফোন করি। দেখা যায়না তবে অনুভব করি তুলি কাদছে... তবে সে কান্নায় যতটানা কষ্ট তারচে অনেক বেশি ক্ষোভ... বাবাই আমায় বলে বাবা তুমি আওনা খেনে... আমার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে... বলি, বাবা তুমি ভাইয়াকে নিয়ে ঢাকার নানার সাথে বেড়াতে যেও। ছেলে আমার আর কিছু বলেনা, বলতে পারেনা... ধাতব শব্দ বাজে খুব হালকা সুরে... লাইনটা কেটে যায়... আমি আবারও ফোন করার চেস্টা করি, পারিনা। অনেক্ষন লেগে যায় আমার, মোবাইলের নেট বন্ধ এই কথাটা বুঝতে...


মন্তব্য

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

উপলব্ধিটার সাথে শতভাগ একমত।

কেউ একজন এর ছবি

আচ্ছা, আলবাব ভাই, এইসব কো-ইনসিডেন্স সব একসাথে ঘটে কেনো, বলেন তো?
বাচ্চা-ভাবি ঢাকা গেলো, সেই সময়েই এইসব।

আমার বাবার অসুস্থতা বাড়লো একেবারে কার্ফ্যুর সময়েই ভর দুপুরে। অ্যাম্বুলেন্সও নাকি পাওয়া যায়নি, ডাক্তারও না। বাইরের মোড়ে টহল গাড়ি।
ভাইটা পাগলের মতো নাকি কান্নাকাটি করে আর কী করবে ভেবে পায়না, অথচ ওকেই সবকিছু করতে হবে। কষ্ট পেয়ে অসুখ এখন অনেক খারাপ।
বেঁচে যে আছে বাপটা - সেই যা।

(আমি এই সাগরের পারে ঠান্ডা ঘরে বসে, চাকুরি খোঁজার ধান্দা করি আর অপরাধবোধে ভুগি। এইসব দুঃখ আর ভাল্লাগেনা।)

সুমন চৌধুরী এর ছবি


.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

আনোয়ার স্যার, হারুন স্যাররে আর্মি নিয়ে পিটাচ্ছে। তারা নাকি ছাত্রদের উস্কানি দিয়েছেন।
এতটা বত্সর ইউনিভার্সিটিতে পড়লাম, স্যাররা কীভাবে উস্কানি দেয় বুঝলাম না। সবসময় দেখলাম আমরা কিছু শুরু করলে স্যাররা থামাইতে আসে।
হায় ফখরুদ্দীন। হায় মঈনুদ্দীন।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

নজমুল আলবাব এর ছবি

ইশতিয়াক ভাই, বদ্দাকে ধন্যবাদ।

আনোয়ার স্যার তবু এমন পরিস্থিতিতে আগে পড়েছেন। হারুন স্যার! টিভিতে দেখাল আজকে। চেহারায় কোন পরিবর্তন নাই। পায়ের দিকটা দেখলে বুঝা যেত। এই সেদিন আমি দেখেছি... মাঝে মাঝে অবাক হই, এই অসাধারন টেকনিক এরা পেল কোথায়? ভেতরে ভেতরে সব শেষ করে দেয় কিন্তু খোলসটা একেবারে অবিকৃত! অন্তত কয়েক ঘন্টার জন্য...

অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলি, এপ্রিলের ৭ তারিখ নূর ভাইকে তুলে নিয়েছিল। এখনও তার বাম প ফুলে আছে। ডান পাও টেনে টেনে হাটেন...

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

হুম ... এমনই হয় ...

ঝরাপাতা এর ছবি

যে কোনভাবে সাধারণ মানুষের ক্ষোভকে এবার রাজনৈতিক মোড়কে উপস্থাপন করতে হবে। সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে, এটা তৃতীয় পক্ষের উস্কানিতে হয়েছে।

বেকুবের দল, পাবলিক এখন আর বসে বসে আঙুল চোষে না।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

কেমিকেল আলী এর ছবি

হুমম

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কি আর বলবো বলো?
আহমেদ নূরকে ছাড়লোনা এখনো ।

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সৌরভ এর ছবি

আলবাব ভাই, গোপন কথা বলে যাই একটা, বাহিনীতে যেন না শোনে।
"কেউ একজন" এর নামে সব কমেন্ট আমার করা।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

দৃশা এর ছবি

জল্পাই মামুগোরে খবর দিতে গেলাম....সৌরভের নাম সবাই দেখব নেক্সট টাইম পেপারে...
ফলেন পাতা ভাইজান ওরা আসলেই বেকুব নাকি প্রয়োজনের থেইকাও বেশী চালাক বুঝা যাইব আর কিছুদিন পর। আপাতত আসেন তাগোরে মনের সুখ মিটাইয়া গাইল্লাই।
নাজমুল কাক্কু অল্প-বেশী স্বার্থপর হওয়া ভাল...সবাই রুমী,আযাদ,ভাগাত সিং,চন্দ্রশেখের আযাদ হয় না...তয় হ এরা সবাই ছিল কমন পিপল আমগো সবার মত...তো কে জানে হয়ত ডাক আসলে আমরাও খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসব আর একবার।

দৃশা

নজমুল আলবাব এর ছবি

সৌরভ একেবারে ঠিক বলছ। এমন সময়গুলোতেই যত সমস্যা নাজেল হয়। ৯৬ এ চলছে অসহযোগ এরি মাঝে আমার নানা মারা গেলেন। এম্বুলেন্স নাই, গাড়ি নাই। তার উপর আবার আত্মিয় স্বজনদের খবর দেয়া। কিছুই ঠিকমত করা যায়নি। ১১ বছর হয়ে গেল কিন্তু সেদিন যারা খবর পায়নি তারা এখনও আমাদের ক্ষমা করেনি।

ঝরা, এই ভাবনাটা আমাদের মত সাধারণ মানুষের মাঝে আসে, ওদের আসেনা কেন?

না মামু এখনও আছেন জেলে...@ মোরশেদ

দৃশার কথা যদি ঠিক ঠিক ফলে যায় তবেতো দেশ উল্টে যাবেরে!

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

রানা মেহের এর ছবি

আমারো অনেক সময় লেগেছিলো
মোবাইল নেটওয়ারক বন্ধ এটা বুঝতে

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

আরিফ জেবতিক এর ছবি

তাও তো আপনারা বুঝতে পেরেছেন।
আমি জেলের বাইরে আছি না ভেতরে আছি সেটাই বুঝতে পারছি না গত এক সপ্তাহ ধরে।:)

-----------------------------------
ঢাকার ভূমে ফিরেছে একাত্তর/প্রস্তুতি নে,সময় হলো তোর..

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সংসার লোভী মানুষরা আরো বেশী স্বার্থপর, তাই এরকম লেখা পড়তে কিংবা কমেন্ট করতে দেরী হয়ে যায়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।