নো ইঞ্জিনিয়ারিং ওনলি ফুটবল

অদ্রোহ এর ছবি
লিখেছেন অদ্রোহ [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ১৫/০৯/২০১০ - ৭:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.

খোমাখাতায় নটঘট করতে করতে হঠাৎ একটা বিটকেলে গ্রুপ চোখে পরল, "নো ইঞ্জিনিয়ারিং ওনলি ফুটবল" , ভাবলাম, এ আবার কেমনতরো গ্রুপ রে বাবা। বলতেই হবে, ঢুঁ মারতেই মনটা আনচান করে উঠল, আরে এ যে আমাদের মত পথ ভুলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চলে আসা ফুটবল ফ্যানাটিকদের জন্যই। দেরি না করে চটজলদি জয়েন করে ফেললাম। আর সবকিছু একপাশে থাক, কিন্তু ফুটবল না হলে আমাদের যে একেবারেই চলেনা!
২.

টানা তিন তিনটি ক্লাস শেষ করে আমরা তখন হেদিয়ে পড়েছি, কেউ কেউ কড়া করে একদফা ঘুম দিয়ে দিয়েছে অলরেডি। কে যেন এর মাঝে বেমক্কা বলে উঠল, ওই পোলাপান, বাইরে তো বৃষ্টি পড়তাসে, চল মামা মাঠে। কেউ কেউ পরের পিরিওডের জাঁদরেল স্যারের ক্লাসের ফিকির তুলে দোনোমোনার ভাব দেখাচ্ছিল, কিন্তু পাগলকে সাঁকো নাড়াতে নিষেধ করলে আখেরে কী হয় সেটা তো জানেনই। আর যায় কোথা, সবাই এক ছুট মাঠে। এর মাঝে কেউ আবার শর্টস আনতে হলে ছোটাছোটি করে, কেউ আবার শর্টসের তো বটেই, এক্সট্যাসির বাহারি শার্টেরও নিকুচি করে মাঠে নেমে পড়ে। কাদাভরা মাঠে শেষমেশ হাস্যকর একটা খেলা হয় বটে, কিন্তু তার পরোয়া করে কে? কেউ কেউ আবার বেনসন-গোল্ডলিফের বদৌলতে নিজের ফুসফুসের বারোটা বাজিয়ে সারমেয়র মত জিভ বের করে হাঁপাতে থাকে, আবার কেউ গোলের সামনে বাংলা সিনেমার নায়ক-নায়িকার দূরত্বে থেকেও লুকা টনির দক্ষতায় নির্বিবাদে বলটা বাইরে পাঠিয়ে দেয় আর কপট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, মামা, এই মৌসুমে ফর্ম নাইক্কা; দেখিস ! পরের বার ঠিকই গোল দিমু। আমরা মুচকি হাসি, আর কিছু বলার ফুরসত পাইনা, একটু পরেই সেশনাল , এখনো টপ শীট লেখা হয়নি, দৌড়, দৌড়...

৩.

"ওই ফারুক ভাই, একটা বেনসন আর ডিউ"- হাঁক মেরে বলে তমালভাই আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, মিয়া কীসব বালছাল টিম সাপোর্ট কর- একটা প্লেয়ারও কিনতে পারলানা এই সিজনে। ওই বুইড়া স্কোলস আর গিগসরে দিয়া আর কয়দিন। তোমগো ফার্গুসনের খেল খতম, এক পাও দিয়া রাখসে কবরে- অর টাইম শেষ।

আমিও পাল্টা জবাব দিতে ছাড়িনা- ধুর মিয়া। ওইসব চেলসি-টেলসির বেইল নাই। এত টাগ অফ ওয়ারের পরও নেইমারকে কিনতেও পারলেননা, আবার কথা বলেন । কার্ভালহোর রিপ্লেসমেন্ট কে হবে দেখা যাবে নে, আর টেরি তো ভাই ওয়ার্ল্ডকাপে যা দেখাইলো, এখন ওর উচিত আগে ওয়েইন ব্রিজের হাত পা ধরে মাফ চাওয়া। অন্যের বউ পটিয়ে আর কইদিন।

স্পর্শকাতর স্থানে খোঁচা দেওয়ায় এবার তমাল ভাই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন- ওই, টেরির পার্সোনাল অ্যাফেয়ার্স নিয়া কথা কইবানা, তোমাদের এককালের পেয়ারের রোনালদো কি নিজে কম লুইচ্চা নাকি? হালায় পোলা জন্ম দিসে, এখন মার কোন খবর নাই।

ওদিকে মারুফ সশব্দে হেসে উঠলে তমাল ভাই আরো খেঁকিয়ে ওঠে- ওই মিয়া, তুমি হাসো ক্যান। এইটা হল ক্ল্যাশ অব দ্য টাইটান্স। তোমগো ফকিরেরপুল সাপোর্টাররা এখানে আউট অফ সিলেবাস।জো কোল নাকি ওদের নয়া মেসি, শুইনা হাসমু না কানমু।

মারুফের মুখ আমসি হয়ে যায়, তবে জবাব দিতে সে কিছুমাত্র কসুর করেনা- হ, প্রিমিয়ার লিগের সবচে সাকসেসফুল দল কিন্তু আমরা। দুদিনের বৈরাগী, ভাতরে কয় অন্ন।

এভাবেই একের পর এক বেনসন ধোঁয়া হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়, আর একটু পর পর ডাক পড়ে- কালীদা, এদিকে এক কাপ চা। আর ফুটবলাড্ডা আরো জম্পেশ হতে থাকে, নিমিষের মধ্যে প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরে আলোচনা চলতে থাকে। ওদিকে একটু পর আবির হল্লা করে - বস, দ্রগবা গোল দিসে।

তমাল ভাই তার জন্ডিসাক্রান্ত হলদে দাঁতের পাটি বিকশিত করে বলে- ল মিয়া, যাই, খেলা শুরু হইয়া গেসে। আমার মুখ তেতো হয়ে যায়, মনে মনে চেলসির সাপোর্টারদের পিন্ডি চটকাতে চটকাতে আমি কমনরুমের দিকে এগোতে থাকি।

৪.

ঈদ মৌসুমে আড্ডাটা বেশ ভাল জমে। সব পুরনো বন্ধুদের সাথে মোলাকাত,কথাবার্তা এদিক ওদিক গড়িয়ে শেষ পর্যন্ত আড্ডার টপিক ওই একটাই, ফুটবল। প্রীতি ম্যাচে স্পেনের সাথে আর্জেন্টিনার একপেশে জয়ের পর একদফা ম্যারাডোনাকে কষে গালাগাল করা হয়, সবাইকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত দেয়, নাহ! বাতিস্তা কোচ হিসেবে বোধহয় টিকেই গেল। জানেত্তি- ক্যাম্বিয়াসোকে না নেওয়াটা কত বড় ট্যাকটিকাল ভুল ছিল সেই পুরনো লেবুও এই ফাঁকে দস্তুরমত চটকানো হয়ে যায়। কেউ মরিনহোকে জাদুকর বলে সাব্যস্ত করে, আর বাকিরা (পড়তে হবে বার্সার সাপোর্টাররা ) রিয়ালের সংশ্রবে মরিনহোর খেল খতম- এমন ঘোষণাও দিয়ে বসে। সব মিলিয়ে ঈদ পরবর্তী আড্ডাটা অবধারিতভাবে একটি ফুটবলাড্ডায় পর্যবসিত হয়, খড়গ হাতে সমানে রাজা উজির নিধন করে চলি আমরা।

৫.

খোমাখাতা থেকে গ্রুপের শেষ লাইনকটি কিঞ্চিত পরিমার্জন করে বলা যায়- আসলেই, হলে এখন পেল্লায় প্লাজমা টিভি এসে পড়েছে, গোল বিন্দু কম , লাইভস্কোরে আমরা এখন বুঁদ হয়ে থাকি, ম্যাচের পর খোমাখাতায় একেকজন কাগুজে বাঘের হুংকার ছাড়ি, কিন্তু একসাথে খেলা দেখা, ক্যান্টিনে ফুটবল নিয়ে তক্কো থেমে থাকেনা। শেষ পর্যন্ত আমরা কিন্তু একই পথেরই পথিক, এই চর্মগোলকের সাথেই আমাদের নিত্য বসবাস, সে মাঠেই হোক, খোমাখাতায় হোক, বা কমনরুমে।


মন্তব্য

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

বলখেলা ভাল্লাগলো চলুক
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

অদ্রোহ এর ছবি

সিমন ভাই কোন পজিশনে খ্যালেন ? হাসি

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

গ্যালারি
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

অদ্রোহ এর ছবি

দেঁতো হাসি

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

তুহিন [অতিথি] এর ছবি

ভাল লিখছ মিয়া। কিন্তু তুমি দেখি আমার আর্সেনালরে পাত্তাই দিলে না।সত্যিই ওই বুইড়া স্কোলস আর গিগসরে দিয়া আর কয়দিন। গতকালের খেলার খবর জানো ত।

অদ্রোহ এর ছবি

আরে তুহিন ভাই নাকি!!!!
আর্সেনালের কথা মাথায় ছিলনা, তয় আপ্নেরা এখন চ্রম ফর্মে। এইটা মানি।
গতকালের খেলার খবর জানিই, এই দিন দিন না...

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

বোহেমিয়ান এর ছবি

আমি হইলাম মৌসুমী ফুটবল দর্শক! ফুটবল না হইলেও চলে!

আগে চায়ের কাপে ঝড় উঠত, এখন স্ট্যাটাসে স্ট্যাটাসে ঝড় দেখি!
_________________________________________

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

অদ্রোহ এর ছবি

ওইসব "মৌসুমী" দর্শকের দিন আর নাই,"শাবনূর" দর্শক হয়া যান ,আখেরে ফায়দা দিবে।

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

জুনেব [অতিথি] এর ছবি

অদ্রোহ ভাই আর কয়দিন এইসব বুড়া খেলোয়ারের উপর ভরসা করবেন?
CL কি টিমটাই না নামাইলা আপনাগো বুড়া। তারচেয়ে দেশান্তর হইয়া মাদ্রিদের পতাকাতলে চইলা আসেন আখেরে ফায়দা হবে।কালকের খেলা দেখসেন গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি

অদ্রোহ এর ছবি

হাতি গর্তে পড়লে সবাই লাথি মারে , ব্যাপারনা।
আর একটা মজার জিনিস হল, মরিনহোর আমলে রিয়ালের জালে এখনো বল ঢুকেনাই। দেখা যাক, খেল তো সবে শুরু।

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

কেউ মরিনহোকে জাদুকর বলে সাব্যস্ত করে, আর বাকিরা (পড়তে হবে বার্সার সাপোর্টাররা ) রিয়ালের সংশ্রবে মরিনহোর খেল খতম- এমন ঘোষণাও দিয়ে বসে।

এইসব আবাল কথাবার্তার জন্যে তোরে মাইনাস... দেঁতো হাসি

এই জাতীয় কথাবার্তা কেবল মোস্তাফিজ টাইপের সাপোর্টারগুলাই কৈবো। বার্সা সমর্থক হয়েও আমি মোটামুটি নিশ্চিত লা লীগা টাইটেল এবার মরিনহোর। তবে এইবারো বার্সার খেলা দেখে আরাম পাচ্ছি, এক্সেপ্ট মাস্কেরানো- অবশ্যি, সেইটাই আসল চাওয়া... সিজিপিএ আর শিরোপা-এসব ভ্রান্ত ধারণা...

_________________________________________

সেরিওজা

অদ্রোহ এর ছবি

এইবার তরে একটা গপ্পো শোনাই। তখন ম্যানইউ-বার্সার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের গাএ, আমাদের এক দোস্ত বলে, সে নাকি বার্সার সাপোর্টার। আমি কইলাম ,বল বার্সা কোন দেশের ,ইতালি না জার্মানী ? সে গালে হাত দিয়া কয়, ইতালি?

মোস্তাফিজ সাপোর্টার সব দলেই আছে, খুউউপ খিয়াল কইরা চোখ টিপি

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এইটাই তো কৈলাম। মরিনহো যাওয়ার পর রিয়ালের ভরাডুবি হৈবো, এই কথা- হোক বার্সার- কেবল মোস্তাফিজ সাপোর্টারেরাই কইতে পারে... অরা দুধভাত, অগো কথায় রাগ করিস্না...

_________________________________________

সেরিওজা

অদ্রোহ এর ছবি

হ।

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি যদিও রিয়ালের সাপোর্টার না তারপরও বলছি...মরিনহোর মত কোচ আসবে যাবে কিন্তু রিয়াল ঠিকই রিয়ালই থাকবে....আরে ফুটবলতো আমাদের ধ্যানে জ্ঞানে মিশে আছে...কিভাবে সরাবি এটাকে....

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।