রাঙ্গামাটির মাটি লাল রঙের কিনা জানিনা,বান্দরবানে বাঁদরদের বান ডাকে সেটাও হলফ করে বলা যাবেনা,কিন্তু খাগড়াছড়িতে যে নল-খাগড়া এন্তার দেখা যায়,সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। মেলা আগে নাকি খাগড়াছড়ির বুক চিরে বয়ে যাওয়া চেঙ্গি নদির দুপাশে ঘন নল-খাগড়ার বন ছিল, আর সেই থেকেই নাকি খাগড়াছড়ি নামটা কল্কে পেয়েছে। পাহাড়ি ঝর্নার জল জমা হলে পরে তাকে বলা যায় ছড়ি,এমন ছড়ি খাগড়াছড়িতে মিললেও মিলতে পারে বৈকি। যাকগে, ওসব জ্ঞানগর্ভ আলাপ থাক, বলছিলাম খাগড়াছড়ি ভ্রমণের কথা। সফরটা আদপেই একেবারে ঝটিকাগোছের ছিল, বলা যায় অনেকটা দুম করেই আমরা এক ঘনঘোর বর্ষার দিনে বেরিয়ে পড়েছিলাম খাগড়াছড়ির পানে।
তখন বেমক্কা মিলে যাওয়া একটি ছুটিতে বন্ধুরা সব চাঁটগায়। হাতে অফুরন্ত অবসর,বেলা করে ঘুম থেকে উঠে, বিকেলে ফুটবলে কষে লাথি হাঁকিয়ে আর রাত্তিরে রাজা-উজির মেরেই দিন গুজরান করছিলাম। হঠাৎ মাথায় ভূত চাপল কোথাও ঢুঁ মেরে আসার। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত হল খাগড়াছড়িই যাওয়াই সই, ওদিকটায় একদমই ঢুঁ মারা হয়নি। পরদিন ভোরবেলা রওনা দেওয়ার কথা , কিন্তু আমরা একেকজন কুঁড়ের বাদশা, বেশ অনেকটা সময় বিছানায় ওপাশ এপাশ করে, বিকট স্বরে বাজতে থাকা অ্যালার্মঘড়িকে কড়কে দিয়ে যখন আমরা চোখ ডলতে ডলতে বাস-স্টেশনে এসে পড়লাম , তখন ঘড়ির কাঁটা নটা ছুঁই ছুঁই। তবে আকাশের গোমড়ামুখো সুরত দেখে মনটা দমে গেল, তার ওপর বাঁধল নতুন বিপত্তি। শুনলাম খাগড়াছড়িগামী একমাত্র বিরতিহীন বাসটাকে আমরা অল্পের জন্য মিস করেছি। ওদিকে টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে, আর লোকাল বাসের হেলপাররা অক্লান্তভাবে কর্ণপ্রদেশে "আঁইয়ুন, আঁইউন, বাস ছাড়ি যারগই" বলে হাঁকডাক শুরু করে দিয়েছে। কী আর করা, কা তব কান্তা বলে শেষমেশ ওই লোকাল বাসই ভরসা। আর সিটটাও পড়েছে একেবারে বেকায়দা জায়গায়, সামনের রাস্তায় ঝাঁকুনির কথা ভেবে তখন থেকেই আমাদের মধ্যে দুর্বলচিত্তদের মুখ পাংশুটে হয়ে গেল। ওদিকে তখন বৃষ্টি বেশ ভালভাবে জেঁকে বসেছে, তবে ফটিকছড়ি পেরুনোর পর চারপাশের প্রকৃতি বদলে যেতে লাগল। বর্ষার সবুজে ছাওয়া সদ্যস্নাত বন দেখে মনে হল এক্ষুনি বাস থামিয়ে নেমে পড়ি। এভাবে একে একে বিভিন্ন এলাকা ছাড়িয়ে মানিকছড়ি এসে পৌঁছুলাম। এরপর পথ রীতিমত শ্বাসরোধকরা, বারবার পাক খেয়ে উপরে উঠে গেছে, কখনোবা এঁকেবেঁকে নিচে নেমে গেছে ।এরমক খাড়া নিচের দিকে নেমে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝেই কানের দুপাশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। আগেই বিভিন্ন "শুভানুধ্যায়ীরা" বাঁকা হাসি হেসে বলেছিল, রাস্তা তো খুব একটা সুবিধের নয় হে, ওসব রাস্তায় হামেশাই দুর্ঘটনা ঘটে। আমরাও তখন তুড়ি মেরে বলেছিলাম, আরে ছোহ! এসবের থোড়াই কেয়ার করি, এ আর এমন কি ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে পরে মনে হয়েছিল, আমরা না হয় পেছনের সিটে উটপাখির মত মাথা গুঁজে চোখটোখ বন্ধ করে দিব্যি থাকতে পারি, তবে এসব হতচ্ছাড়া পথে গাড়ি হাঁকানোর জন্য ড্রাইভার ব্যাটাদের এলেমদার হতে হয় বৈকি, একটু অসাবধান হলেই একেবারে খাদে পড়ে পঞ্চত্বপ্রাপ্তি নিশ্চিত। এসব করতে করতে হঠাত চোখ কচলে দেখলাম ,আরে ওই তো বড় বড় করে লেখা "আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র"। তবে লটবহর নিয়ে আমরা সে যাত্রায় আর নামলামনা, সামনের পর্যটন মোটেলেই আস্তানা গাড়বো বলে মনস্থ করা হল। সেখানে গিয়ে দেখি পুরো মোটেল খা খা করছে, আর একজন লোক কাউন্টারে বসে জাদু হ্যায় নাশা হ্যায় না কি জানি একটা হিন্দি গানে মশগুল। বারকয়েক গলা খাঁকারি দেওয়ার পর তার মর্জি হল, আমরা যথাসম্ভব বিনীত স্বরে বললাম, আমাদের থাকার বন্দোবস্ত দরকার, তবে তার আগে পেটপূজো না করলেই নয়। ওদিকে রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখি সেখানেও গুটিকয়েক মাছি ভনভন করছে, ইনফ্যাক্ট মাছি মারার মত লোকও নেই। অনেক হাঁকডাকের পর কে জানি এসে জানাল, খাবারের কিঞ্চিত দিরং আছে। এহেন পৈশাচিক ভ্রমণের পর এই নির্মম স্তোকে আমাদের কেউ কেউ হল অগ্নি, আর বাকিরা শর্মা। সাথে সাথে প্ল্যান চেঞ্জড, এখন শহরে যাওয়াই সই। বাইরে এসে অবশ্য খিঁচড়ে থাকা মেজাজটা কিছুটা শান্ত হল, পাশ দিয়ে দেখলাম বেশ সুন্দর একটা নদী, নামটা অবশ্য বিতিকিচ্ছিরি কিসিমের-চেঙ্গি। ওখান থেকে ব্যাটারিচালিত শম্বুকগতির টমটমে করে শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা।
উঁকিঝুঁকি মারতে থাকা নদী
খাগড়াছড়ি শহরটা একেবারেই ছোট, আর তাই খুঁজেপেতে একটা চলনসই গোছের হোটেলে উঠে আমরা একটা জবরদস্ত উদরপূর্তি করলাম। তারপর খানিক গড়িয়ে যখন শহরটা ঢুঁ মারতে বের হলাম, তখন দুপুর গড়িয়ে গেল বলে। বর্ষার দিন,মেঘের ফাঁকে ফাঁকে সূর্য মাঝেমাঝেই ঘাই মেরে যাচ্ছে। তবে ভাগ্যদেবী এযাত্রায় সহায় হলেন , উটকো বৃষ্টি বাগড়া দিলে সেদিনকার প্লেন কেঁচে গন্ডুষ হয়ে যেত। ততক্ষণে বেলা বয়ে গেছে, তাই আলুটিলা প্রজেক্টে সেদিনকার মত ইস্তফা দিয়ে সাব্যস্ত হল এরপরের গন্তব্য শহরের ঠিক বাইরের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। জায়গাটা ছিমছাম, পরিপাটি করে সাজানো। বেশ কজায়গায় দেখলাম লোভনীয় পেয়ারা-কামরাঙ্গা-আমড়ার গাছ। বড় বড় করে লেখা, "ফল পাড়তে বারণ করা হল- আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ"। কিন্তু আমাদের মত বিটকেলেদের কাছে ব্যাপারটা হয়ে গেল পাগলকে সাঁকো নাড়াতে নিষেধ করার মত।
ঐ কেন্দ্রের ভেতরেই আবার ছবির মত সুন্দর কিছু জলাধার। সকালের বৃষ্টিতে পুরো পথ ভিজে কাদাটে হয়ে আছে- এর মাঝে রয়েসয়ে পথ চলতে হচ্ছিল। কিছুক্ষণ থেকেই কী একটা বোঁটকা গন্ধ নাকে আসছিল- ব্যাপারটা তলিয়ে দেখতে গিয়ে বুঝলাম পুকুরপাড়ের কাঁঠাল গাছের নিচে কাঁঠাল পচে অমন বিদঘুটে গন্ধ ছড়িয়েছে। ভাত ছড়ালে যে কখনো সখনো কাকের অভাব হয় সেটাও বুঝলাম।ওদিকে টলটলে পানি দেখে আমাদের কারো কারো গা কুটকুট করতে লাগল, ওদিকে পড়ন্ত বেলার রোদও বেখাপ্পাভাবে চড়ে বসেছে, জলকেলি করার জন্য নিঃসন্দেহে প্রশস্ত সময়। তবে আমাদের সবাই পরিপাটি বস্ত্রাচ্ছাদিত হওয়ায় সেদিনকার মত এ প্রস্তাব মুলতবি রাখতে হল।
মন্তব্য
ইস, সাথে নিলেন না যে?
ল্যাহা ভালা হইসে।
মার্কিন মুলুক থেইকা আসলে আওয়াজ দিয়েন
--------------------------------------------
আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
বাহ, ব্রেশ ব্রেশ...
তুই কি পুরো সিরিজ শেষ করে রেখে একের পর এক নামাতে চাস?? নাকি পার্ট পার্ট লিখেই ছাড়বি ??
_________________________________________
সেরিওজা
দেখি কী করা যায়, ডিপেন্ডস অন মুড
--------------------------------------------
আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
ঐ মিয়া খুব যে ঝাড়ি লইলেন আগেরদিন, লেখা বাইর হয় না, হেন তেন কতকিছু, দারুণ ঝরঝরে লেখা আর পাংখা ছবি, পড়ে দেখে ব্যাপক ভালু পাইছি! যাইতে মন চায় আপনার উলু খাগরার বনে, অবশ্যই আপনার সাথে না
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
ঐ কইলামনা একটা ফ্লো আসে, তখনই তো কেল্লাফতে। তো যান, মনের মানুষ নিয়া ঘুইরা আসেন উলুখাগড়ার বনে...
--------------------------------------------
আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
যাইতে মঞ্চায়
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমি যেকোন টাইমে একপায়ে খাড়া, খালি আওয়াজ দিবেন...
--------------------------------------------
আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
ভাল হইছে। ইস্ যদি যাইতে ...................
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া...
--------------------------------------------
আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
আরেহ, দুর্দান্ত!
তো এরপর?
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
এরপর আপাতত একটা শীতনিদ্রা
--------------------------------------------
আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
আরেহ বাহ! লেখার স্টাইলটা দারুণ লাগলো।
খাগড়াছড়ি যাই নি এখনো। বান্দরবনের পাহাড় দেখেই মাথা ঘুরে গেছে। কী দুর্দান্তিস ব্যাপার স্যাপার!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
বান্দরবান গেলে বেড়াল তো আদ্দেক মেরেই ফেলেছেন, খাগড়াছড়ি গিয়ে বাকিটাও তাড়াতাড়িই মেরে ফেলবেন বৈকি।
--------------------------------------------
আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
নতুন মন্তব্য করুন