একটি আবিলতা ঘিরে রাখে প্রায়ই আমাকে- সেটা হলো কোন পর্ব বা অপর্ব কেন্দ্রিক মিলন অনুষ্ঠান। 'চল যাই ঘুরে আসি', 'চল বসে আড্ডা বাজি করি', ‘স্মরণিকা-দেয়ালিকা তৈরী করি’ অথবা ‘মঞ্চ নিয়ে খেলা করি’। আমার সেই বিহঙ্গ মন প্রায়ই ছুটে যায় এমন প্রাণ উজাড় করা আহ্বানে।
গত দিন কয়েক আগে রাতে কানে এল অবসর পাঠ চক্র তাদের বর্ষ বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। একটু ভিন্নতা আর ব্যতিক্রম আয়োজন। আড়ম্বর আছে কিন্তু সেই ছুঁয়ে থাকার মধ্যে অন্য সুর। আমার দেশকে একটি ভালোবাসা উপহার দেয়া। তাদের একতা সত্যি গ্রহণীয় আমি প্রায় অনেক অনুষ্ঠানের সাথী হয়েছি অবসরের- বিগত বছর দশেকে। আয়োজনের সম্মিলন খুবই স্বতস্ফুর্ত এবং হৃদয়গ্রাহী, কারণ অনুষ্ঠানে ঐ পাড়ার সবাই তাদের সাধ্য মত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। বর্ষ বরণ অনুষ্ঠান ১৪১৬ এবারে অবসর আয়োজন করেছে 'সপ্তম আশ্চর্য্য নির্বাচনের ই-ভোটিং'। ইউনিভার্সাল এর কর্ণ ধার এর উদ্বোধন করবেন। অবসর পাঠ চক্র, চকপৈলানপুর পাবনা আমার বাড়ী থেকে প্রায় আড়াই কিলো দূরে। সিঙ্গা কেন্দ্রিক অনুষ্ঠান গুলোয় থাকা হয় না কখনই কারণ যখন উদ্যোগ নেয় হয় তার আগেই আমি অন্য পর্বাঙ্গে যুক্ত হই বা কথা দেই।
আজ সকালে হঠাৎ আমার বন্ধুর উৎফুল্ল হাক- অভি.............তারপর আবারও।
বেড়িয়ে দেখি বাবুর সাথে পাড়ার ছোট তিনটি ভাই। কিরে কেমন আছি? কুশল বিনিময় তারপর.....
আরে বর্ষ বরণ অনুষ্ঠান হবে তোর উপস্থিতি চাই।
কিছুটা সচকিত হলাম। কারণ আমি পাড়া ব্যতিত অনুষ্ঠানের উপস্থাপকের ভূমিকায়ই বেশি অনুষ্ঠান করেছি; আমার সাথিরাও সংগঠন কেন্দ্রিক অনুষ্ঠান করত যা পাড়া নয় শুধু জেলা কেন্দ্রিক হয়ে উঠত। তাই যেখানে মনের টান অনুভব করি আর আমার ভালোবাসার সখ্যতা সেখানে মন প্রাণ ঢেলে দিয়ে এগিয়ে যাই মিলন আয়োজনে-তারা শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় পূর্ন করে প্রাপ্তি।
মঞ্চহীন ভাবেও গত ১৪১৪ কেটেছে টিএসসি কেন্দ্রিক আড্ডা বেলায় সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি।
ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক অনুষ্ঠান করতাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক অনুষ্ঠান আয়োজন সেতো শুধু ঢাকের বাড়ির অপেক্ষা মাত্র। উদীচি আর পাবনা কেন্দ্রিক সম গোত্রিয় সংগঠনগুলোতে নিজের মতো করে প্রায়ই অনুষ্ঠান করেছি।
কিন্তু পাড়ার অনুষ্ঠান সেখানে উপস্থিত হয়ে উঠা হয় নাই সময় আর অন্য সব কিছুকে সম্বনয় করে। গতবার আগের বার ঈদ পূনমির্লনী অনুষ্ঠানেও সাড়া দিতে পারিনি পাড়ায় কারণ অনেক আগেই ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম অবসরের আয়োজনে। এবার একটু ভিন্নতা উপভোগ করব। কারণ অবসরের অনুষ্ঠান হবে সকাল বেলা। আজ দশটার দিকে উদ্বোধকের হাতে কার্ড তুলে দিয়ে আসল জুলফিকার কবিরাজ; সঙ্গে সঙ্গী হয়েছিলাম ক্ষণে। আর আমার পাড়ার অনুষ্ঠান সন্ধ্যায়। নয়টা সময় পাবনায় একটা জাতীয় অনুষ্ঠান হবে স্কয়ারের সৌজন্যে এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে।
এডওয়ার্ড কলেজের মহুয়া তলা আর লিচুতলা; সর্বপরি এডওয়ার্ড কলেজের মাঠ আর নববর্ষ আমাদের কয়েক জন আয়োজকের মনে এখনও স্মৃতি নাড়ানিয়া হয়ে আছে।
রমনার বটমূলে নববষের অনুষ্ঠানে যেবার বোমা হামলা হল; সেবার সম্যক অংশগ্রহণ ছিল তিনটি অনুষ্ঠানের- একটি এডওয়ার্ডে মহুয়া তলায় সকাল ৭:৩০মিনিটে অন্যটি এডওয়ার্ডে লিচুতলায় উদীচি এডওয়ার্ড শাখার আয়োজনে পাবনা কেন্দ্রের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে অনুষ্ঠান সর্বশেষটি ষ্টেডিয়ামের সামনের চত্বরে বিকাল বেলায়। কিন্তু সকালের অনুষ্ঠান প্রায় স্থগিত করেই আমরা সম্বলিতভাবে বেড়িয়ে পড়ি প্রতিবাদ র্যালিতে সম্ভবতঃ শোক বিহ্বল প্রতিবাদ ছিল ওটাই প্রথম- ওই বোমা হামলার প্রতিবাদের। কারণ যারা ঢাকা বা তার আশেপাশে ছিল তারা ছিল সাহায্যে ব্যস্ত অথবা তথ্য জানতে ব্যস্ত। আমাদের অনুষ্ঠানে মাইক কখন উঠে গেছে রিক্সার সামনে আর আমরা মহুয়া তলা আর লিচুতলা ভুলে এ হামিদ রোড জুড়ে নববষের প্রথম সকালে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে হীন হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছি।
আমাদের প্রতিবাদে সাড়া মিলেছিল পাবনাবাসীর; এমন কি যারা তখনও কেউ কেউ খবরটিই জানেনি। আমাদের বিকালের অনুষ্ঠানের অংগ কিছু কমিয়ে জমায়েত হয়েছিলাম পুলিশ বেষ্টিত ষ্টেডিয়াম চত্বরের মঞ্চে। প্রতিবাদ আর ধিক্কার উচ্চারণ করেছিল অনুষ্ঠানের সবাই গানে-কথায়-কবিতায় সেই সব বাঙ্গালীয়ানা বিবর্জিত সত্তায় উদ্ভাসিত কাপুরুষদের বিরুদ্ধে।
অনেক দিবস আসে আর যায়। কিন্তু নববর্ষ অন্য রকম আনন্দ অন্য রকম অনুভূতি আর জীবন জুড়ে লেগে থাকা অন্য রকম স্মৃতি সম্ভার সেই ছোট্টবেলা থেকেই ব্যতয় আজও হয়নি-প্রভাত ফেরীর সুর যেমন মন আড়ষ্ট করে শহীদ শ্রদ্ধায় আর আমাকে খুব বেশী যেটি টানে সবাঙ্গিন অনুষ্ঠান মালায় সেটি শুভ নববর্ষ-ঘরে ও বাহিরে একই দ্যোতনা প্রাণে প্রাণে।
অনেকে দূরে বসে উপভোগ করবেন এডওয়ার্ডের নববষের অনুষ্ঠান টিভি কর্তৃপক্ষ উচ্চারণ করছে এনটিভি’তে সকাল ৯টায় সরাসরি এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠ থেকে শুভনববষের টিভি সকালে আপনাদের আমন্ত্রণ আর যদি চান দেখতে বাঙলা খেলা আর প্রাণ উজাড় করে বাংলাকে ভালোবাসার স্রোত তবে অবশ্যই অবসর পাঠ চক্রে আহ্বান ১৪১৬’র প্রথম সকালে।
বোধ জাগ্রত হোক 'সত্তা সবার ভিন্ন' কিন্তু আমরা বাঙ্গালী আর আমাদের ঐতিহ্য একান্ত সক্রিয় ভিন্নতায় প্রকাশমান-বিশ্বায়ন এই সক্রিয়তাকে স্বাগত জানায়। 'শুভ নববর্ষ' এই শব্দ জাতীয়তা থেকে আন্তর্জাতিকতা প্রাপ্ত হোক আমাদের জীবন চলায় সক্রিয়ময়তায় সচেতন সম্বেগে।
শুভ নববর্ষ..................১৪১৬.......................নব আনন্দে জাগো।
মন্তব্য
শুভ নববর্ষ আপনাকেই ! এবার/আজ নিশ্চয়ই অনেক মজা করবেন/করছেন।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
শুভ নববর্ষ।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
নতুন মন্তব্য করুন